#গ্যাংস্টার_লাভ (সিজন 2)
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_৯||
সকালে রিহা পিটপিট করে চোখ খুলে কপালে ভারি কিছু অনুভব করে।শরীরটা অনেকটা দুর্বল লাগছে কপালে হাত দিয়ে দেখে কাপড় শুকিয়ে গেছে।রিহা অনেকটা অবাক হয়ে আশেপাশে রেহান কে খুঁজছে।
রেহান রিহার মাথার দিকে আধশোয়া হয়ে শুয়ে আছে ।রিহা কিছু বুঝতে পারছে না। আস্তে আস্তে উঠে বসতে গেলে রেহান জেগে যায়।
ঘুমঘুম চোখে রিহার দিকে তাকিয়ে কপালে হাত দিয়ে বলে
_” দেখি তোমার জ্বর কেমন আছে? হুম জ্বর কমছে।
রিহা অবাক হয়ে বলে
_” কার জ্বর আসছিল?
রেহান প্রতিউত্তর না দিয়ে রিহাকে নিজের কাছে টেনে ঘুমঘুম কণ্ঠে বলে
_” আশেপাশে তো কাউকে দেখছি না তাহলে নিশ্চয় তুমি।কাল যে এত গোসল করলে তার ফলস্বরূপ আমার ঘুম হারাম হলো।কি কারণে ওতো গোসল করতে গেলে ? নিজের শরীরের একটু খেয়াল না রাখলে কি অন্য কেউ রেখে দেবে
রিহা ফট করে বলে
_”কেনো আপনি রাখবেন।আপনি থাকতে আমায় কেনো কষ্ট করতে হবে।
রেহান মুচকি আসলো।রিহা যে ওর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে এতে কোনো সন্দেহ নেই ।
রিহা রেহানকে হাসতে দেখে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে
_” কাল কি হয়েছিল? আমি তো ঘুম পড়ছিলাম তাহলে !
রেহান টেবিলের উপর থেকে থার্মোমিটার বের করে রিহার মুখের ভিতর দিয়ে বলে
_”কাল রাতে তোমার অনেক জ্বর আসছিল।ঠান্ডা তো লাগছিল রাতে আবার কাপুনী দিয়ে জ্বর।জলপট্টি দিয়েও কমছিল না।
রিহা মুখ দিয়ে শুধু উমমমম উমমম শব্দ করছে রেহান মুখ থেকে থার্মোমিটার বের করে দেখে ১০০°
রিহা সন্দেহজনিত চোখে রেহানের দিকে তাকিয়ে আছে।রেহান ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে কি
রিহা রেহানের চুল টেনে বলে
_” আমার জ্বর আসছে আর আমি বুঝতে পারলাম না। আমায় দেখে কি পাগল মনে হয়? নাকি লিখা আছে রিহা পাগল
রেহান রিহাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে
_” সারারাত ঘুমাতে পারিনি। এখন প্লীজ ঘুমাতে দাও।আর হ্যা আজ ভার্সিটিতে যাওয়ার দরকার নেই!কেমন?
রিহার আফরানের কথা মাথায় ছিল এখন মনে পড়ায় মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
রেহান রিহাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে এমন সময় বাঁধন এসে দরজা ধাক্কা দেয়।
রিহা রেহানকে ছাড়াতে চাইছে কিন্তু রেহান এত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে উঠার কোনো উপায় নেই।
রিহা নিজের মাথা নিচু করে রেহানের কপালে একটা চুমু দিয়ে কামড় বসিয়ে দেয়।
রেহান মৃদ চিৎকার করে চোখ মেলে তাকায় রিহা মুখ টিপে হাসছে ।
রেহান কিছু বলতে যাবে তার আগেই বাঁধন দরজার ওপাড় থেকে বলে
_” রেহান আজ যে একটা মিটিং আছে।সেটা কি তোর মাথায় আছে ? এতদিন ধরে যেটার জন্য কষ্ট করলি লাস্ট টাইমে নষ্ট করবি তাড়াতাড়ি উঠ।
বাঁধন যেতেই রেহান রিহার দিকে তাকিয়ে বলে
_” তোমাকে পরে দেখছি জানু ।এখনো তো সারারাত বাকি
রিহা নাক মুখ কুচকে বলে
_” ছি! আপনি কত ফাজিল।ইসস লজ্জা সরম সব খেয়ে বসে আছেন ।
রেহান হালকা হেসে বলে
_” লজ্জা সরম করলে কি তোমার চলবে ?
রেহান হাসতে হাসতে উঠে ল্যাপটপ নিয়ে বাইরে যায়।রিহা উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়।
বাইরে উকি দিতে দেখে বাধন,রেহান কাজ করছে ।রিহা লামিয়ার রুমে গিয়ে দেখে লামিয়া ঘুমাচ্ছে।
_” আল্লাহ গো।এই মেয়েকে নিয়ে আমি কই যাবো? এতো ঘুমায় কেনো? এই মাইয়া উঠ।
রিহা লামিয়াকে ধরে টানছে।লামিয়া ঘুমের ঘোরে বলে
_” জান প্লীজ কাল রাতে ঘুমাতে দাওনি।এখন সকাল সকাল শুরু করো না প্লীজ।
রিহা মুখ টিপে হেসে বলে
_”ও বিবাহিত মহিলা আমি আপনার জান না ।এখন উঠুন ।কুত্তি উঠ
লামিয়া চোখ ডলতে ডলতে রিহাকে বলে
_” এত সকালে উঠে কি করবি ? বাইরে কি ঠান্ডা দেখছিস ঘুমা।
রিহা একবার বাইরে তো একবার লামিয়ার দিকে তাকাচ্ছে
_” হ্যাঁ ঠিক বলেছিস।এত সকালে উঠার দরকার নেই ।আমিও শুয়ে পড়ি
লামিয়া হাত বাড়াতে রিহা লামিয়ার পাশে শুয়ে পড়ে।
_______________________________
আজ ৩দিন পর রিহা ভার্সিটিতে যাচ্ছে ।এক তিনদিন রিহা রেহানকে জ্বালিয়ে ছাড়ছে যেখানে যায় রিহা ও পিছন পিছন গিয়ে বকবক করতো।রেহান খুব এনজয় করছে রিহার এই ব্যবহারগুলো।
ভার্সিটিতে এসেই রিহা স্কুটি রেখে ভিতরে যেতে যেতে রেহানের ফোন।রিহা ধরে কিছু বলার আগেই রেহানের জ্ঞান শুরু
_” আজ লামিয়া যাচ্ছে না তাই সাবধানে থাকবা।বেশি লাফালাফি করতে যেয়ো না।ওকে? ভার্সিটি থেকে সোজা বাসায় যাবা এদিন সেদিন ঘুরতে চলে যেয়ো না
রিহার এখন রাগ হচ্ছে।নিজের রাগটাকে দমিয়ে রেখে বলে
_” এই জন্য সিনিয়দের সাথে বিয়ে করতে নেই। কিছু পারুক আর না পারুক জ্ঞান ভালো দিতে পারে । মানে আমি বুঝলাম না আমি কি বাচ্চা? এত ওভার ক্যারিং মাঝে মাঝে বিরক্তিকর লাগে।
রিহা রেহানের সাথে ঝগড়া করতে করতে যাচ্ছে হটাৎ কারোর সাথে ধাক্কা লাগে।
রিহা কিছু বলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছিলো কিন্তু মানুষটাকে দেখে মেজাজ আরো গরম হয়ে যায়।
রিহা ফালানো ফোনটা হাতে নিয়ে ছোট করে বলে
_” আমি পরে ফোন দিচ্ছি ।
রিহা ফোন রাখতেই আফরান হেসে বলে
_” হাসব্যান্ড বুঝি ? একদম চোখে হারায় ।
রিহা কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যেতে গেলে আফরান পিছন ডাকে।
_” রিহা! এই দুইদিনে এতোটা বদলে গেলে কি করে ? কি ভুল ছিল আপনার ভালোবাসায়
রিহা আফরানের চোখে চোখ রেখে বলে
_”ভালোবাসা কোথায় দেখলে ?আপনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক ছিল কিন্তু আপনাকে কখনো দেখিনি আর না সেইভাবে কথা বলছি।তাহলে ভালোবাসা আসলো কোথা থেকে ? আর ভুল হয়ে গেছে এখন তো সরি বললে ও কিছু হবে না তবুও নিজের সন্তুষ্টির জন্য বলছি সরি।পারলে মাপ করে দিবেন ।
রিহা আর কোনো কথা না শুনে সোজা নিজের ক্লাস রুমের দিকে যায় ।
_” আজব লোক।বিয়ে ঠিক হয়ে ছিল।বিয়ে তো হয়নি তাহলে এখনো কেনো এতো দরদ।এখন ক্লাস শুরু হবে সবাই ক্লাসে আর উনি বাইরে ।কে যে একে টিচার বানিয়েছিল।আব্বু তো বলেছিল উনি বিদেশ থাকে তাহলে প্রফেসর হলো কি করে আজব।মাঝে মাঝে মনে হয় আমার আব্বু আমার বড়ো শত্রু উফফ।
রিহা বিড়বিড় করতে করতে ক্লাসে বসে।
ক্লাস শেষে রিহা স্কুটি নিয়ে বের হবে দেখে আফরান দাড়িয়ে আছে ।রিহা দেখেও না দেখার ভান করে চলে যায়।
মাঝ রাস্তায় হটাৎ রিহার একটা জিনিসের কথা মনে পড়ে। স্কুটি থামিয়ে দুকানে গিয়ে কিনে আবার আসে। মনে মনে ডেভিল স্মাইল দিচ্ছে ।
_” আব তেরা কেয়া হোগা কালিয়া থুক্কু রেহান ।
রিহা নিজের স্কুটি তে উঠতে যাবে হটাৎ কিছু লোক রিহার সামনে এসে কিছু বলার আগেই তুলে নিয়ে যায়।রিহা ছটপট করছে কিন্তু কোনো লাভ হলো না ।
কিছুক্ষণের মধ্যে রিহা সাইন্স হারিয়ে ফেলে।
রেহান ওর আম্মুর সাথে কথা বলছে।মূলত ওর আম্মু বলছে আর রেহান মুচকি মুচকি হাসছে ।
রেহান হটাৎ বলে
_” আম্মু আমি তোমার সাথে পরে কথা বলছি রিহার ভার্সিটি ছুটির সময় হয়ে গিয়েছে ।
রেহানের আম্মু ছোট করে আচ্ছা বলে রেখে দেয়।রেহান ফোন হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ ভেবে রিহাকে ফোন দেয় কিন্তু রিহার নাম্বার বন্ধ।রেহান অনেকবার ফোন দেয় তবুও বন্ধ
_” উফফ এই মেয়েটা নিশ্চয় চার্জ দিতে ভুলে গিয়েছে।অপদার্থ !
রেহান নিজের মিটিংয়ে যায়।
বিকালে দিকে রেহান বাড়ি ফিরতেই লামিয়া বলে রিহা বাড়ি আসেনি।
বাঁধন গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় এদিকে রেহান আর লামিয়া তো টেনশনে মরে যাচ্ছে।
রেহান লামিয়া কে বলে
_”রিহা বাড়ি আসেনি সেটা তুমি আমাকে আগে জানাবে তো ? ওর যদি কোনো বিপদ হয়। এই মেয়েটা কি আমাকে শান্তিতে থাকতে দেবে না
রেহান বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবে তখনই বাঁধনের ফোন আসে ।
রেহান অস্থির কণ্ঠে কিছু বলতে যাবে তার আগেই বাঁধন বলে
_” রিহার তো আজ দুইটা ক্লাস করেই বেরিয়ে গিয়েছিল। এখানে আশে পাশে কারোর কাছ থেকে কিছু জানতে পারলাম না। তুই লামিয়ার কাছ থেকে রিহার সব ফ্রেন্ডের নাম্বার নে
বাঁধন কল কেটে দেয় রেহান লামিয়ার থেকে রিহার বান্ধুবিদের নাম্বার নিয়ে ফোন করতে থাকে।
এক ঘন্টা পর বাঁধন বাসায় বসে আছে লামিয়া তো কান্না করে দিয়েছে ।
রেহানের অবস্থা ও ভালো না । হটাৎ রেহান দাড়িয়ে বলে
_” এভাবে বসে থাকলে হবে না।আমাকে আমার রিহাকে খুজে বের করতে হবে ।হয়তো কোনো বিপদে পড়েছিস
বাঁধন রেহানের কাধে হাত দিয়ে বলে
_” অপেক্ষা কর।রিহার যাতায়াতের রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ দেখছি ।কিছু তো বের হবেই।
রেহান উত্তেজিত হয়ে বলে
_” আমার কাছে সময় নেই।তুই দেখ পরে আমাকে বলিস ।আমি গেলাম
রেহান বের হতেই কলিংবেল বেজে উঠে।দরজা খুলে অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে রেহান অবাক হয়।
চলবে
(।)