গ্যাংস্টার লাভ -২ পর্ব -১৮ ও শেষ পর্ব

#গ্যাংস্টার_লাভ (সিজন2)
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_১৭+১৮||

আফরান আর রিহা একটা পার্কে বসে আছে।রিহা কান্না করছে আর আফরান রিহাকে সামলাচ্ছে।রিহা কান্না থামিয়ে বলে

_” আফরান তুমি আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো।আমি থাকতে চাই না ওই গুন্ডার সাথে আর না নিজের ফেক বাবার সাথে।তুমি আমাকে অনেক দূরে নিয়ে যাও প্লীজ ।

আফরান রিহাকে নিজের বুকে এনে মাথা হাত বুলিয়ে বলে

_” যাবো ।তুমি যা বলবে তাই হবে ।আজকে নিয়ে যাবো ।কেউ খুঁজে পাবে না আমাদের কেউ না

রিহা মুখ তুলে আফরানের দিকে তাকিয়ে বলে

_” সত্যি ? তুমি সত্যি আমাকে অনেক দূরে নিয়ে যাবে ?

আফরান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় ।রিহা খুশিতে জড়িয়ে ধরে ।

দূর থেকে একজন এইসব দেখে জ্বলছে।নিজের হাত মুঠো করে গাছে জোড়ে আঘাত করে।তবুও যেনো তার রাগ কমছে না ।জোড়ে জোড়ে দুইবার নিশ্বাস নিয়ে বলে

_” খুব প্রেম জাগছে তাই না ? দেখাচ্ছি মজা

রেহান গাছের আড়াল থেকে চলে যায় ।

এদিকে আফরান যেনো আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছে ।আজ রিহা নিজে থেকে আফরানের কাছে ধরা দিয়েছে ।

রিহা আফরান কে ছেড়ে বলে

_” তাহলে আমরা কখন যাবো ?

আফরান কিছুটা ভেবে বলে

_” তুমি আজ রাতে আমার একটা বন্ধুর বাসায় থাকবে ।আমি ওখানেই থাকবো কাল সকালে দুইজন এক সাথে আমেরিকা চলে যাবো ।

রিহা চিন্তিত হয়ে বলে

_” আমি আমার কিছু আনিনি।এখন আবার ওই বাড়ি গিয়ে আনতে হবে ।

আফরান মাথায় হাত বুলিয়ে বলে

_” চিন্তা করো না কিছু হবে না।তুমি গিয়ে নিয়ে আসো।আমি আমার কাজগুলো করেনি ।

রিহা মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে চলে যায়।

রিহা যেতেই আফরান হাত মুঠ করে ইয়েস ইয়েস করে।

_” ফাইনালি রিহা আমার হতে যাচ্ছে ।আর কিছু সময়ের অপেক্ষা কিন্তু আব্বু।উফফ যে নিজের স্ত্রীর সাথে প্রতারণা করতে পারে সে সম্পটি পেলে আমায় ধোঁকা দেবে না কি গ্যারান্টি আছে ।রিহা ও আমার ওর সম্পত্তি ও আমার ।

কথাটা বলে আফরান শিস বাজাতে বাজাতে চলে যায়।আফরান যেতেই রেহান রিহা আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে।

রিহা ভ্রু নাচিয়ে বলে

_” কি কেমন দিলাম ?

রেহান কোমরে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে ।রিহা রেহানের এমন কাজে হাসি দিয়ে বলে

_” আরে ওমন করে তাকানোর কি আছে আমি তো just সন্দেহ না হয় সেই জন্যই।

রেহান তবুও তাকিয়ে আছে দেখে রিহা রেহানের গালে ভালোবাসা দিয়ে বলে

_” আমি তো এই #গ্যাংস্টারের প্রেমে পড়েছি ।অন্য কারোর না ।সব নো টেনশন ।এখন পরে কি করতে হবে সেটা বলুন

রেহান রিহার মত রিহার গালে ভালোবাসা দিয়ে বলে

_” কি কি বললে ?

রিহা ভাব নিয়ে বলে

_” বেশি কিছু না বলেছি আপনি অন্য কারোর সাথে রিলেশনে আছেন আর ওই লোকটা আমার আব্বু না সেটা জেনে গিয়েছি ।বিশ্বাস করেন আমার এই কথা শুনে ওর মুখ দেখার মত ছিল ।কত বড় ড্রামাবাজ নিজের বাপের নামে কত কত মিথ্যা বললো।ভেবেছি আমি মনে হয় জানিনা যে

রিহা কে বলতে না দিয়ে রেহান বলে

_” আফজাল সাহেবের মুখোশ পড়ে যে আছে সে লিয়ন খান ।রিমা খানের খালাতো ভাই।আর আফরান লিয়ন খান আর লিমা (রিহার খালামণি ) খান এর সন্তান ।লিয়ন খান সেই লোক যার সাথে রিহার আম্মুর বিয়ে হবার কথা ছিলো ।

রিহা রেহানের হাত ধরে বলে

_” আমার আব্বুকে পেয়ে যাবো তো ? বলুন না

রেহান চোখ দিয়ে আশ্বাস দিয়ে বলে

_” ঠিক পাবো ।এখন বাকি কাজটা করতে হবে আর সেটা আজ রাতেই ।চলো

রিহা রেহানের হাত ধরে পার্ক থেকে বেরিয়ে যায় ।

সন্ধ্যায় রিহা আফরানের দেওয়া ঠিকানায় এসে হাজির ।৬তলা বিল্ডিং এর ২০১ নাম্বার ফ্ল্যাট।

রিহা অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে ।আফরান ফোন করছিলো সে আসছে ।রিহা নিজেকে স্থির রেখে ৩বার নিশ্বাস নেয়।

কিছুক্ষণ পর কলিংবেল বেজে উঠে ।রিহা দরজা খুলে দিতেই দেখে আফরান দাড়িয়ে আছে ।রিহা মিষ্টি হাসি দেয়।

আফরান ও হাসি দিয়ে বলে

_” কোনো সমস্যা হয়নি তো ?

রিহা মাথা নাড়িয়ে না বোঝায় ।আফরান সোফায় বসতে বসতে বলে

_” কিছুক্ষণ পর আমায় যেতে হবে নাহলে তোমার ফেল আব্বু সন্দেহ করবে ।সকালে ভোরবেলায় চলে আসবো তুমি তৈরি হয়ে থেকো।

রিহা আফরানের পাশে বসে বলে

_” আমরা কি এই চিল করতে পারি না ।যেমন ধরো হালকা ড্রিংক আর মুভি ।

আফরান রিহার গালে হাত দিয়ে বলে

_” আমার জান চেয়েছে আর আমি শুনবো না ।ওকে নিয়ে এসো ।

রিহা রান্না ঘর থেকে ড্রিংকের বোতল (কোকাকোলা) আর খাবার নিয়ে টেবিলে রাখে ।

একটা হরর মুভির অন করে দুইজন খেতে থাকে ।

রিহা আফরান কে কথার জালে ফাঁসিয়ে এটা সেটা জিজ্ঞেস করছে ।

বেশকিছুক্ষণ পর আফরান মাথায় হাত দিয়ে চেপে ধরে সব কিছু ঝাপসা লাগছে।

আফরান জিজ্ঞেস করে

_” কে এসেছে ?

_” কেউ না ।আচ্ছা তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো ?

আফরান হেসে বলে

_” নিজের জীবনের থেকেও বেশি ।তোমার জন্য জীবন ও দিতে পারি ।

রিহা টিভি অফ করে বলে

_” জীবন দিতে হবে না শুধু কিছু প্রশ্নের উত্তর দাও ।

আফরান ঢুলতে ঢুলতে বলে

_” হুম করো করো।আমি তো তোমারই । যত ইচ্ছা প্রশ্ন করো ।

রিহা জিন্সের পকেট থেকে ওষুধ বের করে আফরানের গ্লাসে দিয়ে বলে

_” তোমার আব্বু আম্মুর নাম কি ? তারা কোথায় থাকে ?

আফরান রিহার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে ।রিহা ঘাবড়ে যায় ।রিহাকে অবাক করে দিয়ে আফরান হাসতে হাসতে বলে

_” আমার আব্বু আর আম্মু তোমাদের আত্মীয় হয় রিহা।তুমি হয়তো জানো না আমি তোমার ছোট খালার ছেলে । যে লোকটা তোমার আব্বু সেজে আছে সে আমার আব্বু।লিয়ন খান ।তোমার আব্বুর সম্পদের উপর আমার আব্বু কু নজর ছিল তাই তোমার আব্বু সেজে এত বছর ছিল কারণ তোমার আব্বু সব কিছু তোমার নামে করলেও সেই গুলো তোমার স্বামী পাবে ।এইজন্য তো এতবছর তোমাকে বাঁচিয়ে রাখা ।জানো তো আমার আব্বু খুব খারাপ মানুষ আমার আম্মুকে বন্দী করে রেখেছে আর আমাকে বিদেশ পাঠিয়ে দিয়েছিল। ছোট বেলায় যখন তোমাকে দেখেছিলাম তখন তোমাকে পুতুলের মত লাগতো ।তখন থেকে ঠিক করে নিয়েছিলাম এই পুতুলটা আমার চাই।

রিহা কান্না করতে করতে বলে

_” তোমার আব্বু এইসব কেনো করছে ? কিসের কম ছিল তোমাদের ? আমার নানা তার সব কিছু তোমাদের দিয়েছিল তারপরও আমার আব্বুর সম্পদে উপর কেনো লোভ লাগলো? আমার আব্বুকে কোথায় রেখেছে ? বলো আফরান বলো

মৃদু চিৎকার করে কথাটা বলে রিহা ।রাগে ওর শরীর কাপছে ।আফরান মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে বসছে ।রিহা আফরানের ঝাকিয়ে বলে

_” বলো আমার আব্বু কোথায় ? বলো

_” আমি জানি

কথাটা সম্পূর্ণ করার আগেই কলিংবেল বেজে উঠে।রিহা চোখের পানি মুছে দরজা খুলতে খুলতে বলে

_” রেহান তুমি এখন আসলে কেনো ? ও সব

বাকিটা বলার আগেই সামনে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়। রিহা অবাক হয়ে বলে

_” আপনি ?

লিয়ন খান পকেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে ।মুখে তার বাকা হাসি ।রিহার চেনা মানুষটার মুখে এই অচেনা হাসি মেনে নিতে পারছে না ।

লিয়ন খান পকেট থেকে হাত বের করে বলে

_” তাহলে আমি ঠিক ধরেছিলাম ।তোমরা সব জেনে গিয়েছ।কি ভেবেছো আমার গ্রামের বাড়ি গিয়ে আমার খোজ নিবে আর আমি জানতে পারবো না ।তুমি আর রেহান যে আমার গ্রামের বাসায় গিয়েছ সেটা সেদিন জানতে পেরেছিলাম ।আমার ছেলের স্কুল সার্টিফিকেট নিয়ে এটা ত জেনেছো আমি আফরান এর আব্বু।কিন্তু বাকি কথা কি জানো ?

কথাগুলো বলতে বলতে লিয়ন খান রুমের ভিতরে আসে ।রিহা আস্তে আস্তে পিছিয়ে যেতে থাকে।

_” হ্যাঁ আমি সব করেছি ।কারণ কি জানিস তোর মা।তোর মা কে আমি কম ভালোবাসিনি কিন্তু তোর মা কি করলো বিয়ে আসরে আমাকে সবার সাথে অপমান করল।লজ্জায় আমি গ্রামে মুখ দেখাতে পারছিলাম না।কত খুঁজেছি তোর মা কে ।একদিন তোকে আর তোর আব্বুকে খুঁজে পেলাম জানতে পারলাম তোর মা মারা গিয়েছে ।তুই দেখতে তোর মায়ের মত ।প্রতিশোধের নেশায় জাগলো ।ভেবেছিলাম তোকে আফরানের সাথে বিয়ে দিয়ে মেরে ফেলবো ।তোর আব্বুর কাছে পস্তাব দিতেই সে বলে রেহানের সাথে নাকি তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে।আবার হেরে যাবো ভেবে মেরে ফেললাম তোর আব্বুকে আর তোর আব্বুর জায়গা আমি নিলাম।তখন তুই অসুস্থ্য ছিলি তাই কিছু মনে নেই ।সব সম্পত্তি নিজের নামে করতে গিয়ে দেখি তোর আব্বু সব কিছুর তোর আর তোর স্বামীর নামে করেছে ।বিয়ের আগে যদি তোর কিছু হয় তাহলে সব অনাথ আশ্রমে যাবে ।সেইজন্য এত বছর তোকে পুশে রাখা।সব ঠিক চলছিল কিন্তু আবার চলে আসলো রেহান ।তোর আব্বুকে মারার দুই বছর পর রেহানের আব্বু আসে খোজ নিতে।আমাকে দেখে পুলিশের ভয় দেখায়।ওকে ও রাস্তায় অ্যাকসিডেন্ট করিয়ে মারতে হয়।বেচারা অন্যের জন্য জীবন দিলো বলেছিলাম আমার পথে না আসতে। রেহানকে অনেকবার মারার চেষ্টা করি তারপর প্ল্যান করে রেহানের নামে তোর কানে বিষ দিতে থাকি ।সফল ও হয়ে যেতাম কিন্তু মাঝখানে আমার এই গাধা ছেলে

কথাটা বলতে বলতে আফরানের কাছে যায় ।আফরান বেহুঁশ হয়ে আছে। আফরানের গালে চর মেরে বলে

_” বলেছিলাম মেয়েদের নেশা বাদ দিতে ।তোর জন্য আমার সব প্ল্যান নষ্ট হলো ।ইচ্ছা করছে ওদের মত তোকেও উপরে পাঠিয়ে দি কিন্তু কি করবো একটা ছেলে আমার ।

আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই মাথায় হাত দিয়ে ফ্লোরে পড়ে যায় ।রিহা ফুলদানি হাতে দাড়িয়ে আছে ।রাগে রিহার চোখ লাল হয়ে আছে শরীর কাপছে ।

_” আমার আব্বুকে মেরে ফেললি।কেনো কেনো ? তোর মত অমানুষের সাথে থাকবে না বলে তো আম্মু চলে আসছিল । কেড়ে নিলি তুই আমার আব্বুকে ।আমার খালা মনিকে দিনের পর দিন কষ্ট দিলি ।তোকে তো আব্বু বলে ডাকতাম সেই তুই।তোর মত জানোয়ারের বেচে থাকার অধিকার নেই।

লিয়ন খান মাথায় হাত দিয়ে বলে

_” রিহা মা।আমি কি তোকে ভালোবাসিনি বল।এতদিন তোকে বড়ো করেছি এই দিন দেখার জন্য ।একটাবার আমার কথা শোন ।কাছে আয় মা

রিহা চিৎকার করে বলে

_” না ।আপনি আমাকে ভালোবাসেনি ।আপনি আপনার লাভের জন্য আমাকে পেলেছেন।সবার আব্বুর ঘুরতে নিয়ে যেত কিন্তু আপনি ঠিক ভাবে কথা বলতেন না।এত টাকা থাকা সর্তেও আমাকে সরকারি স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন।ভালো রেজাল্ট করে যখন আপনার সামনে আসতাম আপনি মুখ ফিরিয়ে নিতেন ।কখনো ভালো ড্রেস কিনে দিয়েছেন ।আমার সব থেকেও কিছু ছিল না।আজ বুঝছি কেনো এমন করতেন।আমি তো আপনার নিজের সন্তান না।ছি মানুষ এত নিচে নামতে পারে সেটা আপনাকে না দেখলে জানতে পারতাম না।

লিয়ন খানের আর্তনাদে রিহা কেপে উঠে ।এতোদিনের মায়া কি এত সহজে যায়।রিহা কাপতে কাপতে এগিয়ে এসে যেই ধরতে যাবে তার আগেই লিয়ন খান রিহার মাথায় নিচে থাকা ফুলদানি দিয়ে বারি মারে।

রিহা মাথায় হাত দিয়ে মেঝেতে বসে পড়ে। লিয়ন খান উঠে দাড়িয়ে বলে

_” এত বছরের প্ল্যান এত সহজে নষ্ট হতে দেবো।সম্পদ না পাই কিন্তু প্রতিশোধ তো নিতে পারবো ।

রিহা বুঝার চেষ্টা করছে কি করতে যাচ্ছে লিয়ন খান টেবিলের উপর রাখা ফলের উপর চাকু হাতে নিয়ে বাকা হাসে।

রিহা কোনো মতে উঠে দৌড়ে ঘরের দিকে যেতে গেলে লিয়ন খান রিহার চুলের মুঠি ধরে ।

_” কোথায় পালাচ্ছিস ? তোকে কষ্ট দিয়ে মনে হচ্ছে তোকে না রিমা কে কষ্ট দিচ্ছি ।যেভাবে রিমা আমায় অপমান করেছিলে ঠিক সেইভাবে তোকে অপমান করতে পারলে শান্তি লাগতো ।

রিহা ব্যাথায় কুকড়ে উঠছে ।কোনো মতে লিয়ন খান কে লাথি মেরে রুমের ভিতর ঢুকে পড়ে।অর্ধেক দরজা খুলা ।রিহা নিজের শক্তি লাগিয়ে ও দরজা আটকাতে পারছে না।মনে মনে রেহান কে ডাকছে ।

হটাৎ রিহার মনে পড়ে রেহান ওর সেফটির জন্য গান দিয়েছিল ।রিহা দরজা দেয়। লিয়ন খান বাকা হাসে।

রিহা নিজের নিজের পিছন থেকে গান বের করে সামনে ধরে।লিয়ন খান ঘাবড়ে যায়

_” দেখ মা।আমি তোর জন্মদাতা না হলেও আমি তোর পালিত বাবা ।এমন করিস না ।আমাকে ছেড়ে দে।

রিহা গান পয়েন্ট চাপ দিতেই বিকট শব্দে ফ্ল্যাট কেপে উঠে । রিহা অবাক হয়ে ফ্লোরে তাকিয়ে আছে ।
#গ্যাংস্টার_লাভ (সিজন 2)
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||লাস্ট_পার্ট||

রিহা পিটপিট করে তাকিয়ে নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করে ।পাশে রেহান একহাত দিয়ে জড়িয়ে শুয়ে আছে।রিহা রেহানকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে দেখে রেহানের এখানে শুয়ে থাকতে অনেকটা অসুবিধা হচ্ছে ।

রিহা অপর পাশে সরে আসতে গেলে হাতে টান অনুভব করে । অস্তে করে আহহ শব্দ বের করতেই রেহান জেগে যায় ।রিহার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে

_” তুমি ঠিক আছো ? কোথায় ব্যাথা করছে ?আমায় বলো!

রিহার হাত উচু করে রেহানের গালে আলতো স্পর্শ করতেই চোখ যায় রেহানের ডান হাতে ব্যান্ডেজের দিকে।

রিহা ডুকতে কান্না করে ।রেহান অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে কি হইছে ? কিন্তু রিহা একাধারে কান্না করতেই যাচ্ছে ।কান্না করতে করতে কাশি উঠে আসে রেহান উপায় না পেয়ে জোড়ে ধমক দেয় ।

রেহানের ধমকে রিহা চুপ মেরে গেলেও নিশব্দে কান্না করে ।রেহান এক হাত দিয়ে রিহার চোখের পানি মুছতে মুছতে বলে

_” কি হইছে ? এমন কান্না করছো কেনো? জানোনা তোমার চোখে আমি কান্না নয় দুষ্টামি দেখতে পছন্দ করি ।আর কান্না করবে না ।

রিহা উচু হয়ে রেহানকে জড়িয়ে ধরে বলে

_” i am sorry! আমি আপনাকে মারতে চাইনি ।বিশ্বাস করুন।আমি বুঝতে পারিনি কিভাবে হলো । আপনার খুব লেগেছে তাই না আমায় ক্ষমা করে দিন চাইলে আমাকে মারতে পারেন আমি

রিহা আর কিছু বলতে পারলো না কপালে রেহানের ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে চুপ হয়ে যায় । রেহান পরপর দুইটা ভালোবাসা দিয়ে কানের কাছে ফিসফিয়ে বলে

_” আমি জানি আমার রিহা আমাকে ইচ্ছা করে মারতে পারে না । আর যদি শাস্তি পেতে চাও তাহলে তোমার জন্য শাস্তি রেডী আছে ।সেই শাস্তি আমি দেবো না । অন্য কেউ দেবে ।

রিহা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে

_” মানে?

রেহান চোখ টিপ মেরে বলে

_” মানেটা পরে বুঝিয়ে দেবো । কংগ্রাচুলেশন মিসেস রেহান আপনার প্রমোশন হয়েছে ।

কথাটা বলে রেহান উঠে পড়ে । পাশের টেবিলে নিজের শার্ট হাতে নিয়ে পড়তে থাকে । রিহা ভ্রু কুচকে রেহানের কাজ দেখছে ।

_” গুলি কি আপনার হাতে লাগছে নাকি মাথায় ?

রিহা এমন প্রশ্নে রেহান বাকা হাসি দিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায় । রেহানের এভাবে উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে যাওয়াতে রিহার অনেক কষ্ট হয় ।

_” ইসস সেই সময় যদি চোখ বন্ধ না করতাম তাহলে এমন কিছু হতো না । রেহান মনে হয় আমার উপর রেগে আছে । আমি তো ইচ্ছা করে

রিহা আবার নিশব্দে কান্না করতে থাকে ।

ফ্ল্যাশব্যাক

রিহা গান হাতে নিয়ে টিগার যেই চাপবে কিন্তু রিহার অনেক হাত কাপছে । গান , ছুরি এইসব চালানোর অভ্যাস নেই ।কিন্তু আজ নিজেকে রক্ষা করতেই হবে ।

রিহা চোখ বন্ধ করে গুলি করে চোখ মেলে তাকাতেই দেখে রেহান ফ্লোরে পড়ে আছে । রিহা অবাক হয়ে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে ।

লিয়ন খান অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে এদিকে রিহার মধ্যে কোনো ফিলিং নেই । রিহা যেনো স্তব্ধ হয়ে গেছে ।

লিয়ন খান পাগলের মত হাসছে ।রিহা নিজের হুস ফিরলে ছুটে যায় রেহানের কাছে । রেহানের এখনো সেন্স আছে ।

_” রেহান প্লীজ কথা বলুন । আমি ইচ্ছা করে করিনি ।প্লীজ উঠুন না

লিয়ন খান ছুরি দিয়ে রিহাকে আঘাত করতে যাবে তার আগে লিয়ন খানের হাতে গুলি লাগে ।

রিহা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে একটা লোক ফরমাল ড্রেসে হাতে বন্দুক নিয়ে দাড়িয়ে আছে । পাশে দুইজন পুলিশ।

রিহার এখন এইসব ভাবার সময় নেই ।রিহা কান্না করতে করতে বলে

_” প্লীজ আমার রেহান কে কেউ বাঁচান ।

লোকটা পুলিশের ইশারা করে রেহানের কাছে আসে । রেহানকে তুলতে তুলতে বলে

_” ভাবী আপনি চিন্তা করবেন না ।রেহানের কিছু হবে না ।আমি আয়াস ।রেহানের বন্ধু ।

রেহানকে হসপিটালে নেওয়া হয় । যেহেতু আয়াস পুলিশ অফিসার তাই কোনো ঝামেলা ছাড়া রেহানকে ভর্তি করা হয় ।

কিছুক্ষণের মধ্যে রেহানকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় ।রেহানের আম্মুকে জানানো হয় । রিহা কান্না করেই যাচ্ছে বার বার নিজেকে দোষী ভাবছে ।

মাইশা চৌধুরি আর আয়াস মিলে রিহা কে সামলাতে পারছে না । মাইশা চৌধুরি ছেলের এই অবস্থা দেখে অনেকটা ভেঙ্গে পড়ে আবার রিহার এই অবস্থা মাইশা চৌধুরী রিহার গালে চর বসিয়ে দিতেই রিহা অজ্ঞান হয়ে যায় ।

রিহাকে এডমিড করানো হয় ।

বর্তমানে

রিহার আকাশ পাতাল ভাবছে তখনই মাইশা চৌধুরী আসে ।রিহার পাশে বসে গালে হাত দিয়ে বলে

_” আমাকে মাপ করে দে ।তোর এইসময়ে আমি তোর গায়ে হাত দিয়েছি ।

রিহা মাইশা চৌধুরীর হাত ধরে বলে

_” মামনি ওভাবে বলছো কেনো ? আমি তো তোমার মেয়ে । আর মায়েদের অধিকার আছে ।

একজন নার্স এসে রিহার হাতের সিলাইন খুলে দিতেই রিহা চটপট মাইশা চৌধুরীর কোল দখল করে নেয়। মাইশা চৌধুরী হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর রিহা ভাবছে কি করে রেহানের রাগ ভাঙাবে ।

আজ দুইদিন হলো রিহা বাসায় আসছে ।বাসায় বলতে রেহানের আম্মু যেখানে থাকে সেখানে । রিহা অনেকবার মাপ চেয়েছে কিন্তু রেহান কথা এড়িয়ে গেছে ।আজ দুইদিন রেহান খুব ব্যাস্ত তবুও রিহার যত্ন নিতে ভুল করছে না । রিহা এখন নিজের মতো হাঁটতে পারে না ।কোনো জায়গায় গেলে হয় রেহান নয়তো মাইশা চৌধুরি থাকে ।রিহার মনে হচ্ছে সে দুই বছরের বাচ্চা কোথাও গেলে হারিয়ে যাবে ।

রিহা গল্পের বই পড়ছে এমন হয় রিহার গা গুলিয়ে আসছে দৌড়ে বাথরুমে গিয়ে হরহর করে বমি করে ।এটা নতুন কিছু না আজ কয়দিন রিহার শরীর ভালো যাচ্ছে না ।অনেকবার ডক্টর দেখিয়েছে কিন্তু রেহান বলছে না কি হয়েছে । রিহা আর প্রশ্ন করেনি এমনি তে সেদিনের ঘটনার জন্য নিজেকে দোষী মনে করছে ।

ফ্রেশ হয়ে বিছনায় গা এলিয়ে দেয়। এই শীতকালে রিহা ঘামছে । কোনো রকম এসি অন করতেই রেহান এসে বন্ধ করে দেয় ।রিহা চোখ মেলে একবার দেখে আস্তে করে বলে

_” এসি অফ করলেন কেনো ? প্লীজ দেন ।

রেহান হাত মুখ ধুয়ে রিহার পাশে বসে । রিহা মাথা উচু করে রেহানের কোলে রাখে ।

কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে

_” আপনি এখনো আমার উপর রেগে আছেন ? প্লীজ মাপ করে দিন ।আমার শরীর না ভালো লাগছে । বলেন না ডক্টর কি বলছে ? কোনো কঠিন রোগ ? আমি কি আর

কথাটা শেষ করতে পারলো না গলায় আটকে আসছে । রেহান রিহাকে উঠিয়ে বলে তৈরি হয়ে নাও ।আমরা বের হবো ।

রিহা খুশি হয়ে যায় ।খুশিতে রেহানকে জড়িয়ে ধরতে গেলে রেহান উঠে আলমারি থেকে ড্রেস দেখতে থাকে । রিহার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।

অশ্রুমাখা চোখে রেহানকে পর্যবেক্ষণ করছে। রেহান বেশ মনোযোগ দিয়ে কিছু খুঁজছে ।বেশ কিছুক্ষণ পর একটা ড্রেস রিহার সামনে রেখে বলে

_” এটা পড়ে নিচে আসো । আমি অপেক্ষা করছি ।

রিহার উত্তরের আসা না করে বেরিয়ে যায়।রেহান যেতেই রিহার ড্রেসটা নিয়ে ওয়াশরুমে যায় ।

___________________________________

বেশ কিছুক্ষণ ধরে রিহার বসে আছে ।রেহানের আসার কোনো নাম নেই । রেহান রিহাকে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে আসে ।রিহাকে বসতে বলে রেহান একটু বাইরে যায় । রিহার রেহানের এইসব কাজ অসহ্য লাগছে ।

অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়ে আগমন ঘটে কাঙ্খিত ব্যক্তির । রিহা বিরক্তি মুখ নিয়ে বলে

_” যদি আমাকে একা রেখে যেতে হয় তাহলে নিয়ে আসার কি দরকার ? বাড়ি রেখে আসলে তো হতো ।

কিছুটা বিরক্ত কিছুটা অভিমান নিয়ে কথাটা বলে রিহা ।রেহান প্রতিউত্তরে শুধু হালকা হেসে রিহার পিছনে দাড়ায় । রিহা কিছু বলতে যাবে তার আগেই রেহান রিহার চোখ একটা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয় ।

_” আরে কি করছেন ? আমি

রেহান চুপ থাকতে বলে রিহার হাত ধরে নিয়ে যেতে থাকে । রিহা বারবার জিজ্ঞেস করছে ‘এমন করেছে কেনো ? প্রতিউত্তরে রেহান শুধু অপেক্ষা করতে বলে।

বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর হটাৎ রেহান রিহাকে কোলে তুলে নেয় । রিহার রেহানের গলা জড়িয়ে ধরে । কোনো কিছু তার বোধগম্য নয় ।

রেহান রিহাকে নামিয়ে দিয়ে চোখের বাঁধন খুলে দিতেই ।রিহা ঝাপসা চোখে সামনে তাকিয়ে দেখে ওরা কোনো নদীর ধারে কাছে ।

রেহান কাউন্ট করছে

_” 1,2,3 হ্যাপি নিউ ইয়ার মাই লাভলি ওয়াইফ ।

রিহা বিস্মিত চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে বাজি ফুটিয়ে happy New Year লিখা ।

রেহান রিহার হাত ধরে সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলে

_” অতীতে আমরা অনেক ভুল করেছি ।অনেক পাপ করেছি ।চলো আজ প্রমিজ করি।আমরা নতুন একটা জীবন শুরু করবো যেখানে থাকবে আমাদের ভালোবাসা আর ভালোবাসা । এই বিশেষ দিনে আমি আমার স্ত্রী আর সন্তানের সাথে কিছু স্পেশাল মুহুর্ত কাটাতে চাই । বলো না আজ থেকে তুই আমার একান্তই আমার হয়ে থাকবে ।যে তুমি শুধু ইহকালে না পরকালেও পাবো ।

হবে কি আমার সুখ দুঃখের সঙ্গী । তুমি শুধু আমার wife না আমার সন্তানের জান্নাত ও ।

রিহা অবাক হয়ে রেহানের কথা শুনছে ।অজান্তে নিজের এক হাত পেটে রাখে ।রিহার হাতের দিকে তাকিয়ে রেহান রিহার হাতের উপর হাত রেখে চোখ দিয়ে হ্যাঁ বুঝায় ।

রিহা যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না । চোখ দিয়ে আপনাআপনি পানি গড়িয়ে পড়ে ।

_” রেহান এটা কি সত্যি ? আমি বিশ্বাস করতে পারছি না ।কয়টা দিন থেকে আমি কেমন অদ্ভুত অনুভব করছি কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না ।আমি আম্মু হবো ।রেহান তুমি বাবা হবে

রেহান রিহাকে উঠিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে বলে

_” হ্যাঁ মহারানী আপনি আম্মু হতে যাচ্ছেন । একটা পিচ্ছি আরেকটা পিচ্ছি কে জন্ম দিবেন । আমার টেনশনে তো এটাও বুঝতে পারছিলেন না । ইউ নো হোয়াট খবরটা শুনার পর আমি সব থেকে খুশি হয়েছিলাম ।হসপিটালের সবাইকে মিষ্টি খাইয়েছিলাম । ইচ্ছা তো করছিলো

রিহা অভিমানী কণ্ঠে বলে

_” হ্ন শুধু আমাকে জানালেন না ।

রেহান রিহাকে নামিয়ে রিহাকে জড়িয়ে ধরে বলে

_” পাগলী ! দেখতে চেয়েছিলাম তুমি কেমন করো ।আর একটা বিশেষ দিনে তোমাকে জানালাম ।অবশ্য জানানোর কথা তোমার কিন্তু তুমি তো বুঝতে পারলে না ।

রিহা রেহানের বুকে মাথা দিয়ে বলে

_” বুঝলাম কিন্তু বছরের প্রথম দিনে আমার গিফট কই ?

রেহান বাকা হেসে বলে

_” আমি আছি কি করতে ? আমি তো তোমার গিফট ।

রিহা ঘুষি মেরে বলে

_” উহু ।আপনাকে তো চাই কিন্তু আমার অন্য গিফট চাই ।আমি চাই কাল বছরের প্রথম দিনে কিছু গরিবদের খাওয়াতে । উদ্দেশ্য আমাদের নতুন জীবনের শুরু আর আমাদের সন্তানের জন্য ।

রেহান দুই গালে হাত রেখে বলে

_” আমার বাচ্চার আম্মু যখন বলছে তখন তো করতেই হবে । এখন বাসায় চলো ।

রিহা মন খারাপ করে বলে

_” এক্ষুনি ? মাত্র না আসলাম !

রেহান মুচকি হেসে বলে

_” রাত হইছে তো ।এতক্ষণ বাসার বাইরে থাকা ঠিক না ।

রিহা জেদ ধরে ।শেষে রেহান উপায় না পেয়ে রিহাকে নিয়ে পাশে বালুর উপর বসে।এক হাত দিয়ে রিহাকে জড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ।

প্রিয় মানুষটার সাথে আকাশ দেখতে পারার আনন্দ আলাদা ।

৬ বছর পর

রিহা রেডী হচ্ছে তখনই কেউ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ।

রিহা আয়নায় তাকিয়ে বলে

_” এখনো অভ্যাস বদলালো না । এক বাচ্চার আব্বু হয়ে গেলেন এখনো ?

রেহান গলায় ছোট চুমু খেয়ে বলে

_” কি করবো বলো আমার বউ যে দিন দিন আরো সুন্দর হয়ে যাচ্ছে । শুধু ভালোবাসতে ইচ্ছা করে ।

রিহা হেসে বলে

_” রাইসা এসে পড়বে ছাড়ুন !

রেহান গলায় কামড় দিয়ে ছেড়ে দেয় । রিহা গলায় হাত দিয়ে কটমট করে তাকায় ।

একটুপর ৫বছরের একটা মেয়ে গুনগুন করতে করতে রিহার রুমে আসে । রিহা রেডী হতে হতে বলে

_” রাইসা তাড়াতাড়ি করো ।আজ তোমার স্কুলের প্রথম দিন । লেট করা যাবে না ।

জি হ্যাঁ রাইসা রেহান আর রিহার রাজকন্যা । খুব শান্ত । রিহার মত ওতো দুষ্ট না ।সারাদিন গুনগুন করে গান গাইবে । এই বয়সে মেয়ে গান পাগল । দেখতে দেখতে ৬বছর চলে গিয়েছে ।লিয়ন খান ৫ বছর আগেই মারা গিয়েছে ।রিহা লিয়ন খানকে জেল থেকে ছাড়িয়ে নিজের সম্পত্তি দিয়ে দেয় ।

সব আঘাতের প্রতিশোধ নিতে নেই।
কিছু আঘাতের বিচার আল্লাহর তায়ালার উপর ছেড়ে দিতে হয় ।

(নুসরাত জাহান অংকুর)

কথায় বলে পাপ বাপকে ও ছাড়ে না ।যেন থেকে বের হবার কিছু মাস পর লিয়ন খানের ক্যান্সার ধরা পড়ে । হাজার হাজার টাকা খরচ করেও নিজেকে বাঁচাতে পারেনি । আফরান বর্তমানে ওর মা কে নিয়ে বিদেশে থাকে । নিজের বাবার এত কু উদ্দেশ্য ওর জানা ছিল না ।রিহাকে ভালোবেসে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল । নিজের ভুলটা বুঝতে পেরে এখন সুখে শান্তিতে আছে ।

রিহা ,রেহান রাইসা কে স্কুলে দিয়ে এয়ারপোর্টে যায় । এয়ারপোর্টের কাছে আসতেই দুইজনের দেখা মিলে । রিহা দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে ।

_” কেমন আছিস লামি? তোকে অনেক অনেক মিস করছিলাম।

লামিয়া ও রিহাকে জড়িয়ে ধরে ।

_” আমি অনেক ভালো আছি । তোদের ও মিস করছিলাম সাথে আমাদের নতুন সদস্যের ।

রেহান গাড়ি রেখে বাঁধনের কাছে যায় ।

_” ওয়েলকাম ব্যাক মাই ব্রাদার ।

রিহা লামিয়া কে ছেড়ে বাঁধনের কাছে গিয়ে বলে

_” কেমন আছেন ভাইয়া ?

বাঁধন মুচকি হেসে হ্যাঁ জবাব দেয় । রেহান রিহা ওদের নিজে বাসায় উদ্দেশ্যে রওনা দেয় । গাড়িতে রিহা আর লামিয়া ওদের গল্প জুড়ে দিয়েছে । দুইজনকে দেখে মনে হচ্ছে এতদিন সব কথা জমিয়ে রেখেছিল আজ সব বস্তা খুলে বসছে ।

আজ রেহানের বাড়িতে অনেক আয়োজন । ৬বছর পর বাঁধন সুস্থ্য হয়ে ফিরে আসছে ।রিহা আজও নিজেকে দোষী ভাবে ।

রাতে রিহা রাইসা কে কোলে নিজে গল্প শুনাচ্ছে। রিহার প্রতিদিনের রুটিনে মধ্যে এটা পড়ে । গল্প না শুনালে রাইসার ঘুম আসে না ।রিহার খুব বিরক্ত লাগে তবুও কিছু বলতে পারে না রেহান আর মাইশা চৌধুরীর জন্য ।

রাইসার নিশ্বাস ভারি হয়ে আসতেই রিহা কোলে তুলে বিছনায় শুয়ে দেয় ।

একটুপর রেহান আসে । রিহা এক পলক তাকিয়ে বলে

_” কিহলো চলে আসলে যে ? আমি তো ভাবলাম আজ আপনি বাঁধন ভাইয়ার সাথে থাকবেন ।

রেহান রিহাকে নিজের সাথে মিশিয়ে বলে

_” বাঁধনের সাথে থাকলে আপনাকে আদর কে করবে ? আমার আদর ছাড়া তো আপনার ঘুম আসে না ।

রিহা রেহানের গলা জড়িয়ে ধরে বলে

_” জানেন লামির জন্য আমার অনেক কষ্ট হয় । বাঁধন ভাইয়া সুস্থ্য থাকলে এতদিন ওদের একটা বেবি থাকতো । নিজের উপর মাঝে মাঝে খুব রাগ হয় আমার জন্য

রেহান বাকিটা বলতে দেয় না । রাইসার দিকে ইশারা করে বলে

_” তোমার কাছে এত সুন্দর একটা মেয়ে আছে ।ভালো স্বামী ভালো পরিবার আছে ।তাহলে কেনো তুমি পুরানো কথা ভেবে বর্তমানকে নষ্ট করবে । যা হয়েছে ভুলে যাও আর যা পেয়েছো তাতেই আলহামদুলিল্লাহ করো । তোমার ভাগ্যে যা আছে বাইরে দেখো অনেকের এইসব স্বপ্ন । আগের কথা ভুলে যাও। কেউ তো তোমাকে কিছু বলছে না ।

রেহান রিহাকে কোলে তুলে বিছানায় শুয়ে দেয় ।রাইসার ডান পাশে রিহা বাম পাশে রেহান । দুইজন একসাথে তাদের রাজকন্যার কপালে চুমু দিলে রাইসা ঘুমের মধ্যে না না করে।

রিহা হেসে দেয় ।রেহান উচু হয়ে রিহার কপালে চুমু দিয়ে বলে

_” আমার জীবনের সব পূর্ণতা এখানেই । ভালোবাসি

রিহার মুচকি হেসে “ভালোবাসি” বলে

বেচে থাকুক এমন হাজারো ভালোবাসা । নতুন বছরেও আমি সিঙ্গেল ।এমন কপালে যেনো কারোর না হয় ।তবে আমার মত কপাল ও অনেকের স্বপ্ন ।

___________________সমাপ্ত______________

( )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here