#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-২৪
মোর্শেদ চৌধুরী বাংলাদেশ এসেছেন মাস খানেক আগে। নিজের বিলাসবহুল বাড়ির বেলকনির দোলনায় বসে, পায়ের উপর পা তুলে ধোঁয়া উঠা কফিতে চুমুক দিয়ে দাঁত বের করে হেসে বলে,মোর্শেদ চৌধুরীকে খুঁজে বের করা এতো সহজ নয়। একজন গার্ড এসে বলে স্যার আপনার সাথে একজন দেখা করতে চায়।
– তাকে ওয়েটিং রুমে বসতে বলো। আমি আসছি।
______________________________________________
লিরা আর উদয় বসে আছে মুখোমুখি। আজ নিরবতা ভেঙে উদয় বললো,আপনিও আমাকে বের করতে ব্যার্থ?
– না মিস্টার উদয়। উদয়ের সামনে কিছু কাগজ বাড়িয়ে দিয়ে বলে বুধবার আপনার জামিন মনজুর হবে।
– তা এই অসাধ্য সাধন কি ভাবে করলেন?
– নিজের মানুষের জন্য মানুষ কত কিছু করে এটা তো সামন্য জামিন।
– নিজের মানুষ মানে?
– সব কথার মানে খুঁজতে নেই। মানে ছাড়াও অনেক কথা থাকে। যাকগে সেসব কথা ছাড়ুন। আচ্ছা শাফিন স্যারের বাবার কোন ছবি আপনার কাছে আছে?
– না ছবি নেই।
– কখন তাকে দেখেছেন?
– একবার দেখেছিলাম। তবে তখন সে মাস্ক পড়া ছিলো।
– আপনার সাথে তার এতো কিসের কথা হতো?
– আমার কাছ থেকে শাফিনের খোঁজ নিতো।
– আপনার কাছ থেকে কেন?শাফিনের স্যারের খোঁজ তার কাছ থেকে কেন নিতেননা?
– এই আপনি এমন গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের মতো প্রশ্ন করেছেন কেন?
– কারণ আমি একজন গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা। তাই ঠিকঠাক উত্তর দিন।
– সঠিক জানিনা। শুধু জানি ওদের বাপ ছেলের মধ্যে সম্পর্ক ভালো ছিলো না। শাফিন ওর বাবার সাথে সেরকম যোগাযোগ রাখতো না। তবে ওর বাবা প্রতি মাসে ওকে মোটা অংকের টাকা দিতো হাত খরচ হিসেবে।
– তাতে আপনার কি লাভ।
– তিনি আমাকে প্রতি মাসে বেতন দিতো।
– তার ফোন নাম্বার বা এড্রেস কিছু আছে?
– তার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার আছে আমার মোবাইলে।
– সেটা তো বন্ধ।
– তাহলে জানিনা।
লিরা উঠে চলে যেতে নিলো। উদয় ডেকে বলে,আপনাকে আগে কোথাও দেখেছি?
– জীবন বড়ই অদ্ভুত চোখের সামনে থেকেও অনেক কিছু ধোঁয়াসা। আর কিছু না বলে চলে গেলো।
উদয় বোকার মতো তাকিয়ে আছে লিরার দিকে। কি বলে গেলো মেয়াটা?
______________________________________________
নুহাস রমিজ রাজের অফিসে বসে আছে। মাথা তার নিচের দিকে।
রমিজ রাজ বললো,এভাবে মাথা নিচু করে রাখলে কি সমস্যার সমাধান হবে?মাথা উঠিয়ে ভাবো কি করা যায়। আগামীকাল আদালতে উঠবে কেস। যদি আয়রাকে রিমান্ডে দেয়! তাহলে তো আমরা শেষ।
– আপনি কিছু করুন আপনি একজন ডিসি।
– এখানেই তো সমস্যা চাইলেও সব করতে পারবো না। তবে সহযোগীতা করতে পারবো। তুমি কাজ করবে।
– সেটা কি রকম।
– আয়রাকে কোন ভাবে একটা ইনজেকশন পুশ করে প্যারালাইস করে দাও।
– পুলিশি হেফাজতে সেটা কি করে সম্ভব!
– আমরাই রক্ষক আর আমরাই ভক্ষক। বুঝতে পেরেছো।
– সেসব তো ঠিক আছে কিন্তু ওকে রেখেছে অন্য সেলে। আমাদের সেলে থাকলে না হয় কাজটা করা যেতো।
– এখনো করা যাবে।ওই থানার ওসির সাথে যোগাযোগ করো। টাকা থাকলে সব হবে।
– ওকে স্যার আমি ব্যবস্থা করছি।
– ভুলেও কোথাও আমার নাম নেবে না।
নুহাস চলে গেলো। রমিজ রাজ মনে মনে বলছে, মেয়েটা দেখতে সুন্দরী ছিলো তবে কপাল খারাপ।
আয়রা জেলের চৌদ্দ শিকের মধ্যে বন্দী। এতোদিন কতজনকে এখানে বন্দী করেছে। কখনো ভাবেনি সেখানে নিজেকেও আসতে হবে!এক পাশে বসে পরলো আয়রা।একজন মহিলা উঠে এসে বলে,দেখলি তো আল্লাহর বিচার আছে। বিনা দোষে আমারে এই চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী করে রেখেছিলি। আজ নিজেও বন্দী।
আয়রা মহিলাটার চেহারার দিকে ভালো করে দৃষ্টি দিয়ে দেখলো। প্রায় চাররমাস আগেই এনাকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। আয়রা বললো দোষ ছিলো আপনার তাই আপনাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
– দোষ আমাদের কপালেই সব দোষ। পেটের দায়ে চুরি করলে সেটা কিসের দোষ। আর আমি সামান্য চুরি করেছিলাম ওই ব্যাগে কি ছিলো তা তো জানতাম না। ব্যাগ রেখে আমাকে ছেড়ে দিতে পারতি। এবার দেখ চৌদ্দ শিকের ভেতরে থাকতে কত মজা।ছারপোকার কামড়। আর মশার আদর পেলে বুঝবি।
আয়রা অপেক্ষায় আছে নুহাসের। আয়রা ভাবছে নুহাস অন্তত তার জন্য কিছু করবে।হাঁটুতে মুখ গুঁজে দিলো। নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। যেই পোশাকের জোড়ে এতো দাপট দেখিয়েছিলো সেই পোশাক খুলে নেয়া হয়েছে।মূহুর্তেই সব ক্ষমতা সব অহংকার ধুলোয় মিশে গেছে।
______________________________________________
মিহি রেডি হচ্ছে বেগুনি রঙের সুতি শাড়ি হাত ভর্তি চুড়ি। একদম সনাতন ধর্মের নতুন বৌদের মতো সাজ। চোখে লেন্স লাগিয়ে বাহিরে আসতেই দেখে ঈশান একটা বেগুনি রঙের পাঞ্জাবি পড়া। মিহি কিছু বলার আগেই ঈশান বলে,সবাই যাতে আমাদের রিয়েল কাপল ভাবে তাই মাচিং করা। বাইদা ওয়ে আপনাকে কিন্তু দারুণ লাগছে।কথাটা শেষ করতেই মিহির দিকে
তাকিয়ে দেখে মিহি রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঈশানের দিকে।
ঈশান পাঞ্জাবির উপর দিয়ে বুকে ফুঁ দিয়ে বলে, এমন ভাবে তাকিয়ে আছেন, মনে হচ্ছে গিলে নেবেন দৃষ্টি দিয়ে।
– আপনি কি একটুও ভালো কথা বলতে পারেন না।সব সময় বকরবকর করতেই থাকেন।
– কথা তো কথাই বকর বকর আবার কি?আমার ভালো কথা কারো কাছে ভালো না লাগলে আমার কি করার আছে।
– আপনি যাবেন? নাকি এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অযথা কথা বাড়াবেন।
জো হুকুম মহারানী ভিক্টোরিয়া। আপনি যা বলবেন এই অধম তাই করবে। চলুন।
মিহি আর ঈশান হেঁটে যাচ্ছে প্রায় দশ মিনিট হাঁটার পর মিহি বললো,কি হলো আমরা এভাবে হেঁটেই যাচ্ছি কেন?
– সামনের মোড় পার হয়ে তারপর গাড়ীতে উঠবো। আচ্ছা শাফিনকে আপনার কখনো সন্দেহ হয়নি?
প্রশ্নটা শুনে মিহির পা থমকে যায়। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,আমার জীবনে শাফিন ছিলো পূর্নিমার চাঁদের মতো। হুট করে আমার জীবনে এসে জীবনটাকে রঙিন করে দিয়েছিল। কখন আমার মুখ থেকে উঁফ শব্দ বের হতে দেয়নি। বিয়ের পর ওর পরিবর্তনে আমি কষ্ট পেতাম তবে সন্দেহ আসতো না। ও ছিলো সচ্ছ কাঁচের মতো। আমি ভাবতাম বাব,মা ছিলো না একা বড় হয়েছে তাই বিগড়ে গেছে আমার ভালোবসা দিয়ে ওকে ঠিক আগলে নেবো। কথা বলছে আর হাঁটছে এমন সময় কারো সাথে ধাক্কা লেগে নিচে পরে যায়। শাফিনের বুকের উপর মিহি। আবছা আলোয় মিহির অস্পষ্ট চেহারা। শাফিনের হৃদযন্ত্র হঠাৎ মনে হয় বন্ধ হয়ে গেলো এমন অনূভুতি হচ্ছে।
মিহির কেমন অদ্ভুত অনূভুতি হচ্ছে। আবছা আলোয় লোকটার চেহারা দেখার বৃথা চেষ্টা করছে। এমন সময় ঈশান মিহির হাত টেনে উঠিয়ে বলে, তুমি ঠিক আছো পারু?
দেখে হাঁটতে পারো না।
শাফিন উঠে দাঁড়ালো। শরির থেকে ধুলো ছাড়িয়ে এক শ্বাসে সরি বলে, হাঁটা ধরলো।
সরি শব্দটা মিহির কানে প্রতিধ্বনি তুলছে বারংবার। মিহি নিজের বুকে হাত রেখে বলে শাফিন।
ততক্ষণে শাফিন চলে গেছে। ঈশান বলে শাফিন। কোথায় শাফিন। মিহি শাফিন যেদিকে গেছে সেদিকে ছুটে যাচ্ছে। কিছু দূর যেতেই নিজের হাতে বাঁধা পেয়ে পিছু ফিরে বলে, হাত ছাড়ুন।
– কি পাগলামি শুরু করেছেন? শাফিন কোথা থেকে আসবে?
– শাফিন আসবে না এসেছিলো। ওই লোকটা শাফিন ছিলো। আমার শাফিন। আপনি প্লিজ ওকে খুঁজে নিয়ে আসুন প্লিজ।মিহির চোখের পানি দেখে ঈশান বলে, রিলাক্স মিস মিহি। শান্ত হোন। যদি ওই লোকটা সত্যি শাফিন হয়ে থাকে তাহলে আমি কথা দিচ্ছি তাকে খুঁজে বের করবো। আর এমনও তো হতে পারে লোকটা শাফিন নয়।
– না হতে পারে না। ওই শাফিন। আপনি আমার কথা বিশ্বাস কেন করছেন না।
– আচ্ছা বিশ্বাস করলাম এবার চলুন দিনের বেলায় খোঁজ করবো।
ঈশান গাড়ীতে বসে মিহির দিকে টিস্যু আর পানির বোতল এগিয়ে দিলো।
মিহি টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে। কিছু পানি পান করলো। ঈশান কে উদ্দেশ্য করে বললো,আপনি কোনদিন কাউকে ভালোবাসেননি?
– হঠাৎ এই প্রশ্ন?
– ভালোবাসলে বুঝতেন ভালোবাসা কি জিনিস।
জানেন…
“পৃথিবীতে ভালোবাসার মতো অন্যায় আর দ্বিতীয়টি নেই।এই অন্যায়ের শাস্তি মানসিক যন্ত্রণা।
না কাউকে দেখানো যায়,না নিজেকে বোঝানো যায়।
ঈশান, মিহির কথা শুনে বলে,বাপরেহহ এতো কঠিন কথা আমার মতো বাচ্চা ছেলের মাথায় ঢুকবে না।
মিহি ঈশানকে উদ্দেশ্য করে বলে,আপনি বাচ্চা ছেলে!
– ওই আরকি প্রেমে, ভালোবাসার দিক থেকে বাচ্চা।
মিহি ঈশানের কথা শুনে হেসে বলে, আপনি পারেন ও বটে সিরিয়াস মূহুর্তে হাসিয়ে দিলেন।
– যাক আমার জীবনে স্বার্থকতা আপনার মলিন মুখে হাসি ফুটাতে পারলমা, পারু।
– আপনি আমাকে পারু কেন বলছেন?
– ক্যারেক্টারে ঢুকে গেছি তাই।
শাফিন বাসায় এসে খাবারের প্যাকেট গুলো রেখে ওয়াশরুমে ঢুকলো। কেন অস্থির লাগছে। বারবার মনে হচ্ছে মেয়েটা মিহি ছিলো। কিন্তু……
#চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব -২৫
শাওয়ারের নিচে ঘন্টা খানিক সময় বসে রইলো। তারপর বেড় হয়ে চেঞ্জ করে নিলো। দীর্ঘ সময় শাওয়ার নেয়ার কারনে শাফিনের চোখ লাল হয়ে গেছে।
এরিকা শাফিনের উদ্দেশ্য বললো,আপনি ঠিক আছেন মিস্টার মাহমুদ?
– হ্যাঁ আমি ঠিক আছি।
খাবারের প্যাকেট থেকে খাবার বের করে খেয়ে নিলো। রাত তখন বারোটা ছাড়িয়েছে। শাফিন এরিকাকে বললো আমি ছাড়া অন্য কেউ আসলে দরজা খুলবে না।
– আপনি এতো রাতে কোথায় যাচ্ছেন?
– আমার চিন্তা করে লাভ নেই এই অগোছালো কাজ গুলো না গোছানো অব্দি আমার শান্তি নেই। বলেই বের হয়ে গেলো।
এরিকা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।তবে এটা ভেবেই তার কেমন ভয় করছে, এই বাড়িতে সে একা। বাড়িটা শহর থেকে একটু দূরে। ফার্ম হাউস চারপাশে গাছপালা দিয়ে ভরা। এরিকা কোনমতে নিজের রুমে যেয়ে শুয়ে পরলো।
______________________________________________
একটা বছর পর নিজের বাড়িতে পা রেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পরে মিহি ঘরের যেদিকে তাকাচ্ছে, মনে হচ্ছে নিজের আর শাফিনের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছে। মিহি ছুটে ডাইনিং টেবিলের সামনে আসলো। শেষবার শাফিন যেই চেয়ারে বসে খাবার খেয়েছিলো হাত দিয়ে সেটি ছুঁয়ে দিলো। চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পরছে।
ঈশান একটু দূরে দাঁড়িয়ে এসব দেখছে। মিহির চোখে জল দেখে বলে,আপনাদের কাঁদতে কোন কষ্ট হয় না।
মিহি ভ্রু কুঁচকে তাকালো ঈশানের দিকে।
– না মানে যখন তখন ফেস ফেঁস করে কেঁদে দেন। বুঝলাম আপনাদের মন তুলার মতো নরম না থুরি হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো নরম। তাই বলে যখন তখন শুরু হয়ে যাবেন। জীবনে সিরিয়াস বলতে কিছু নেই।
– কি বোঝাতে চাইছেন?
– এতো কাঠখড় পু*ড়ি*য়ে এখানে এসেছি কোথায় নিজেদের কাজ করবো। তা-না উল্টো ইমোশনাল হয়ে কান্নাকাটি করছেন!
– আপনি প্রফেশনাল তাই আপনার কোন ইমোশন নাই। এই ফ্লাটের প্রতিটি কোনায় কোনায় রয়েছে আমার ভালোবাসার স্মৃতি।
– এক কাজ করুন আজকে আপনি এখানে থাকুন। এখানে থেকে স্মৃতিচারণ করুন। স্মৃতিচারণ শেষ হলে আমাকে ডেকে নিয়েন।
– বাজে কথা বন্ধ করুন আর চলুন।
মিহি আর ঈশান বেড রুমে আসলো বেডরুম তন্নতন্ন করে খুঁজেও কিছু পেলো না। মিহি বলল,কেউ হয়তো এসব আগেই সরিয়ে নিয়েছে। এসব খোঁজাখুঁজির মধ্যে মিহির চোখ গেলো দেয়ালে টাঙানো শাফিন আর আয়রার কাপল পিকের দিকে। মিহি ঈশানকে বলে,এগুলো সব এডিট করা নাকি রিয়েল?ঈশান মিহিকে উদ্দেশ্য করে বলে,এরচেয়ে অনেক ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে। আর আপনি এই পিক নিয়ে পরে আছেন। কবি ঠিকি বলেছিলেন সুন্দরী মেয়ারা থাকে নির্বোধ, বোকা। এদের বুদ্ধি বলতে কিছু থাকে না।
– একদম বাজে কথা বলবেন না। কোন কবি বলেছে এসব?
– সেটাও আমাকে বলে দিতে হবে খুঁজে বের করুন। এখন একটা কথা বলুন আপনাদের বাসায় কোন গোপন রুম আছে?
– না নেই।
– আপনি শিউর নেই?
– না নেই। থাকলে তো আমি জানতাম নাকি?
ঈশান বিড়বিড় করে বলে কচু জানতেন। নিজের হ্যাসবেন্ড এতো বড় একজন অফিসার ছিলো সেটা জানতো না আর সে নাকি জানবে গোপন রুমের কথা!
– এই আপনি ধিরে ধিরে আমাকে গালি দিচ্ছেন কেন?
– একটাও বাড়তি কথা বলবেন না। বলুন স্টোর রুম কোথায়?
স্টোর রুমের কথা শুনেই মিহি ঈশানের হাত আঁকড়ে ধরলো। মিহির চোখে মুখে ভয়ের চাপ ফুটে উঠলো।
ঈশান মিহির হাতের উপর হাত রেখে বলে,মিসেস মাহমুদ আর ইউ ওকে?
– আমি যাবো না স্টোর রুমে।
– প্লিজ রিলাক্স মিস। আমি তো আছি।
– না যাবো না ওইখানে ইঁদুর আর তেলাপোকা আছে।
মিহির কথা শুনে ঈশান হাসতে হাসতে বলে,সিরিয়াসলি! আপনি ইঁদুর আর তেলাপোকার ভয়ে যেতে চাইছেন না।
– একদম হাসবেন না আমার বাজে অভিজ্ঞতা আছে এদের নিয়ে।
– আচ্ছা হাসবো না তবে চলুন আমি কথা দিচ্ছি আপনার কিছু হবে না।
মিহি ঈশানের সাথে গেলো। তবে ঈশানের হাত আঁকড়ে ধরে আছে ছাড়ছে না। অনেক খোঁজখুঁজি করে তেমন কিছু পেলো না। কিন্তু হঠাৎ কেমন যেনো শব্দ আসতে লাগলো। শব্দ শুনে মিহি চিৎকার দিয়ে ঈশানকে ধরে বলে, ভূত, ভূত।
______________________________________________
ডক্টর শফিক সবে মাত্র ড্রিংক করা শুরু করেছে। এটা তার প্রতিদিনের কাজ। রাতভর গলা ডুবিয়ে নে*শা করা। আর মেয়েদের নিয়ে ফূর্তি করা।এই বয়সে তার মতো সনামধন্য একজন ডক্টর রাতের আধারে এসব করতে পারে! দিনের আলোতে-তা কল্পনাতীত।
শাফিন একটা কালো হুডি পরা। চেহারা কালো মাস্ককে আবৃত। পাচিল টপকে এসে হাজির হলো ডক্টর শফিকের বাসায়। মেইন ডোর খুলে ( সব রকম তালা খোলার একটা যন্ত্র আছে শাফিনের কাছে। তাই কাজটা সহজ হলো। মেইন গেটও খুলতে পারতো,তবে দারোয়ানের জন্য পাঁচিল টপকে এসেছে) সোজা চলে গেলে শফিকেরে স্টাডি রুমে শফিক তখন মোটামুটি নে*শা*য় বুদ।শাফিন এসে ডক্টর শফিকের পাশে বসলো।
ডক্টর শফিক ভূত দেখার মতো চমকে যেয়ে বলে,শা*লা ম*রে যেয়েও শান্তি দিলিনা। তাও ভূত হয়ে ঘুরে বেড়াস।
– শাফিন বলে, তোদের মতো মুখোশ ধারী শয়তানদের শাস্তি না দিয়ে ম*রে*ও শান্তি নেই। তাই ভূত হয়ে চলে আসলাম।
ডক্টর শফিক চোখ কঁচলে বলে,কিরে ভূত আবার কথা বলছে!
– এবার বল ওই এম,কে কে? তার সাথে তোর সম্পর্ক কি?
– ডক্টর শফিক হেসে বলে,আরে ভূত তুই জানিস না এম কে, কে!এম,কে, মাফিয়া ডন। আর সম্পর্কের কথা বলছিস এতো বিলাসিতা কোথা থেকে আসে বল!এসব তো আমার অবৈধ, কালো ধান্দা।
শাফিন জগ ভর্তি পানি ডক্টর শফিকের মুখে ঢেলে দিলো। সামনে থাকা লেবুর টক নিয়ে জোড় করে শফিকে খাইয়ে দিলো।
কিছু সময়ের মধ্যেই ডক্টর শফিকের নে*শা কেটে গেলো। সামনে শাফিনকে দেখে আত্মা শুকিয়ে গেলো।
ভয়ে ভয়ে বললো আমাকে ক্ষামা করে দাও।
– শাফিন নিজের পকেট থেকে একটা ব*ন্ধু*ক বেড় করে ডক্টর শফিকের সামনে রাখলো। শান্ত কন্ঠে বললো,আমার এম,কের সব ডিটেইলস চাই।
– তার কোন ডিটেইলস নাই। একেক সময় একেক ভাবে ডিল করে। সত্যি বলছি।
– শেষবার কবে কথা হয়েছে?
– আজ রাতেই বলেছে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে একটা বড় চালান প্রবেশ করবে। সেটার বিষয়ে কথা হয়েছে।
শাফিন ডক্টর শফিকের ফোন নিয়ে সেখান থেকে কিছু ডিটেইলস সংগ্রহ করে নিলো। অতঃপর ডক্টর শফিকে উদ্দেশ্য করে বললো,তোকে বাঁচিয়ে রাখা মানে একটা নর্দমার কিটকে দ্বিতীয় বার সুযোগ দেয়া। সো গুড বায়। বলেই সোজা মাথায় স্যু*ট করে দিলো।মূহুর্তে ফ্লোরে লুটিয়ে পরলো ডক্টর শফিক। শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার আগে বলে,আমাকে মে*রে ভুল করলি। তোর বউ আর….
শফিন ডক্টর শফিকে ধরে বলে আর কি? বল আর কি? ততক্ষণে ডক্টর শফিক শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে।
শাফিন নিজেকে সামলে সব প্রমাণ বিলুপ্ত করে চলে গেলো।
বাসায় ফিরতে ফিরতে ভোর চারটে। বাসায় ফিরে হাত মুখ ধুয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। চোখ বন্ধ করে ভাবছে, তোমাকে আমি কোথায় খুঁজবো? তুমি কেমন আছো? তোমার কোন ইচ্ছে আমি পূরণ করতে পারলাম না। তোমার কত সখ ছিলো ঘর বাঁধিবে আমার সনে। কিন্তু সব এলোমেলো হয়ে গেলো। শাফিনের চোখ দু’টোতে অশ্রু টলমল করছে।
______________________________________________
ঈশান কি বলবে বুঝতে পারছে না। মিহির এতোটা কাছে এসে সে কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। এ কেমন অনূভুতি?এ অনূভুতির সাথে ঈশান পরিচিত নয়। নিজেকে শান্ত করে বলে, আপনি আমাকে এভাবে কেন ধরে আছেন?
ঈশানের কথা শুনে সাথে সাথে মিহি ঈমানকে ছেড়ে দিলো। লজ্জায় আর ঈশানের দিকে তাকাতে পারছে না।
ঈশান পরিবেশ স্বাভাবিক করতে বলে,আপনার মতো সুন্দরী মেয়ে এভাবে কাছে আসলে প্রেমে পরে যাওয়ার রিস্ক আছে। যেটা ঈশানের ডায়রিতে নিষিদ্ধ।
মিহি চুপ করে রইলো, লজ্জা আর ভয় উভয় এসে যেনো তাকে জাপ্টে ধরেছে।
রাতের নীরবতা ভেদ করে আওয়াজ যেনো আরো স্পষ্ট হলো। মিহি কিছু বলবে তার আগেই ঈশান মিহিকে ইশারায় চুপ থাকতে বলে, নিজের রুমাল বেড় করে মিহির মুখ চেপে রেখে। শোনার চেষ্টা করছে কিসের আওয়াজ। কিছুক্ষণ চুপ থাকতেই বুঝতে পারলো। কোন মানুষের আওয়াজ। ঈশান নিজের হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিলো। মিহির মুখ ছেড়ে দিয়ে বলে,তাড়াতাড়ি চলুন শেহরোজের ঘুম ভাঙ্গার সময় হয়ে গেছে। মিহি কিছু বলবে তার আগেই ঈশান বলে, যা বলার বাসায় যেয়ে বলবেন।
#চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰