ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব -২৬+২৭

#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-২৬

মিহি বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে শেহরোজকে আঁকড়ে ধরে শুয়ে ঘুমিয়ে পরলো।

ঈশান বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে। কিছুতেই ঘুম আসছে না। বারবার মিহির জড়িয়ে ধরার দৃশ্যটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ঈশান শোয়া থেকে উঠে পরলো। সোজা কিচেনে এসে একটা স্ট্রং কফি বানিয়ে নিয়ে হল রুমে বসলো। কফির মগটা পাশের টেবিলে রাখলো। ধোঁয়া উঠা কফির দিকে তাকাতেই চোখ পরলো দেয়ালে টাঙানো ঈশান আর মিহির কাপল পিকের দিকে। সেদিন এই পিকটা তুলেছিলো। ছবিটির দিকে অপলক তাকিয়ে থেকে বলে, বাস্তব আর কল্পনার মাঝে এক বিশাল ফারাক। সাথে সাথে নিজের মাথায় গাট্টা মেরে বলে, এসব উল্টো পাল্টা চিন্তা বাদদে। সে তোর কলিগের ওয়াইফ। কফিটা শেষ করে সোজা চলে গেলো। মিহিদের বাসায়। স্টোর রুমের দরজা খুলে ভেতর প্রবেশ করলো। বেশ দক্ষতার সাথে খুঁজে বের করলো গোপন দরজা কিন্তু দরজা খুলবে কি করে? এসব ভাবছে।আশ্চর্যের বিষয় হলো দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। ঈশান কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে সামনে অগ্রসর হলো নিজের ফোনের ফ্লাসে দু’জন মানুষকে চেয়ারে হাত পা বাধা অবস্থায় দেখতে পেলো। ঈশান দ্রুত তাদের সামনে এসে ডাকতে লাগলো।মেয়েটা পিটপিট করে চোখ খুললো,ঈশান স্পষ্ট স্বরে বললো আর ইউ ওকে?

সুমু অস্পষ্ট স্বরে বললো পানি।ঈশান আশেপাশে কোথাও পানি দেখতে পেলো না।ঈশান সুমুর বাঁধন খুলে দিয়ে বলে, একটু অপেক্ষা করুণ আমাদের আগে এখান থেকে বেড় হতে হবে।

ঈশান ফাহিনকে ডাকতে লাগলো। বেশ কিছু সময় পর ফাহিন চোখ মেলে তাকালো। ঈশান সুমু,আর ফাহিনকে নিয়ে বেড় হয়ে আসলো।তখন রাত শেষ হয়ে ভোর শুরু হয়েছে। ঈশান নিজের ভাড়া বাসায় নিয়ে গেলো। ফাহিন আর সুমুকে। দু’জনকে রেস্ট নিতে বলে। খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়ে। বাহির থেকে তালা দিয়ে চলে গেলো।

মিহি তখনো গভীর ঘুমে।
ঈশান বাসায় ফিরে নিজের রুমে যেয়ে শুয়ে পরলো।

মিহি ঘুম থেকে উঠে নিজে ফ্রেশ হয়ে শেহরোজকে ফ্রেশ করালো। শেহরোজকে কোলে নিয়ে কিচেনে আসলো। কিন্তু এক হাতে কি করে নাস্তা বানাবে। কিচেনে দাঁড়িয়ে সেই চিন্তা করছিলো। পেছন থেকে ঈশানের কন্ঠ শুনে সেদিকে তাকালো।

ঈশান মিষ্টি হেসে বলে,গুড মর্নিং মিসেস মাহমুদ।

মিহি অবাক হয়ে বলে, বপারেহহহ ভূতের মুখে রাম নাম!

ঈশান শেহরোজকে কোলে নিয়ে বলে,আপনি আমাকে কপি করছেন কেনো?

-একটু ট্রাই করলাম।

ঈশান শেজরোজকে নিয়ে বসার ঘরে চলে যাওয়ার আগে বলে গেলো,এই যে, মিসেস মাহমুদ আমার জন্য আজকে লুচি আর আলু পোস্ত করবেন। পারেন তো নাকি?

– মিহি বলে,আপনি অপেক্ষা করুন জাঁহাপনা এই অধম আপনার খেদমতে হাজির।

দু’জনেই হেসে দিলো।

______________________________________________
মোর্শেদ চৌধুরী পায়ের উপর পা তুলে সোফায় আয়েশ করে বসে টেবিলের উপর থেকে পত্রিকা তুলে ধরতেই প্রথম পৃষ্টায়। ব্রেকিং নিউজ দেখে হাত থেকে পত্রিকা পরে যায়। পত্রিকার পাতায় বড় বড় করে লেখা। কতকাল রাতেই সনামধন্য ডক্টর শফিকে কেউ হ*ত্যা করেছে।বিস্তারিত জানতে তিন নাম্বার পৃষ্ঠায় চোখ রাখুন।

মোর্শেদ চৌধুরী একজনকে ডাকলেন।কর্কশ কন্ঠে বললেন, আমি ডিটেইলস জানতে চাই।

– জ্বি স্যার আমি সব খবর জেনে আপনাকে জানাচ্ছি।

নুহাস একটা দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ফ্লোরে বসে আছে।বারবার চোখের সামনে ডক্টর শফিকের মৃ*ত দেহ চোখের সামনে ভেসে উঠছে। সমস্ত প্রমান সামনে রেখে কেউ কি ভাবে এটা করতে পারে?

নুহাস উঠে ওয়াশরুমে যেয়ে চোখে মুখে পানি দিলো। ড্রয়ার থেকে ইনজেকশন পকেটে নিয়ে বের হয়ে গেলো আয়রার কাছে।

এই কয়দিনেই আয়রার চেহারা কেমন ফিকে পরে গেছে। চোখের নিচে মনে হচ্ছে কেউ কালী লেপ্টে দিয়েছে। দু’দিনের রিমান্ড শেষে আয়রাকে সেলে রাখা হয়েছে। নুহাস আয়রার জন্য সাক্ষাৎ রুমে অপেক্ষা করছে।

আয়রার নুহাসকে দেখেই নুহাসকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়। মানুষ যতই খারাপ হোক প্রতিটি মানুষের হৃদয় কোমল। কেউ তা প্রকাশ করে আর কেউ তা আড়াল করে। আয়রার এই অবস্থা দেখে নুহাসও আয়রাকে জড়িয়ে নিলো। আয়রা কান্না থামিয়ে ভারাক্রান্ত স্বরে বলে,আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো।

নুহাস ইমোশনাল হয়ে পরে। কিন্তু পরক্ষণেই মনে পরে আয়রাকে বাঁচিয়ে রাখলে তার বিপদ বাড়বে।তাই পকেট থেকে ইনজেকশন বেড় করে কাঁপা কাঁপা হাতে আয়রার ঘাড়ের দিকে নিয়ে যায়। যেই পুশ করবে ঠিক সেসময় আয়রা নুহাসের হাত ধরে নেয়।

আয়রা তাচ্ছিল্য হেসে বলে,সহকারী হিসেবে না হোক নিজের ওয়াইফ হিসেবে তো আমার প্রতি দয়া দেখাতে পারতে?

নুহাস আয়রার মুখ চেপে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,একদম বাজে কথা বলবে না। এই কথা কাউকে বলা নিষেধ সেই শর্তে তোমাকে বিয়ে করেছিলাম। যাও তোমার কোন ক্ষতি আমি করবো না। আবার সাহায্যও করবো না।যেই ফাইল গুলো আমার থেকে লুকিয়ে রেখেছো সেগুলো কোথায়?

নুহাস আয়রার মুখ ছেড়ে দিতেই আয়রা জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিয়ে বলে,সেগুলো ঈশান মুখার্জির কাছে।

নুহাস অবাক হয়ে বলে,ঈশান মুখার্জি মানে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি! সে বাংলাদেশে আসলো,কি করে? আর কবেই বা আসলো?

– আয়রা নুহাসকে উদ্দেশ্য করে বলে,তুমি চলে যাও তোমাদের বিষয়ে আমি মুখ খুলবো না।তবে মনে রেখো পাপ কাউকে ছাড়ে না। তোমাদেরকেও ছাড়বেনা।শাফিনের কাজ ঈশান মুখার্জি করবে।তোমাদের সবার খেল খতম।

নুহাস হন্তদন্ত হয়ে বেড় হয়ে সোজা চলে আসলো, রমিজ রাজের বাসায়। রমিজ রাজ নি*কো*টিন ধোঁয়া ছাড়তে ব্যস্ত।

নুহাস বলে,আপনার কাছে কি কোন খবর নেই? আপনি কি ডক্টর শফিকের মৃত্যুর খবর শুনেননি?

– আহা রিলাক্স। এতো টেনশন কেন নিচ্ছেন।আমরা কারা আইনের লোক। এখন আমরা খুব আনন্দিত এমন একজন মানুষ খু*ন হওয়ায়। তবে খু*ন*টা যেই করে থাকুক তাকে খুঁজে শাস্তি দিতে হবে।কারণ সে কেন আইন নিজের হাতে তুলে নিলো।

– ঈশান মুখার্জি নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই। সে বর্তমানে কোথায় আছে জানেন?

বাংলাদেশে আছে রাষ্ট্রীয় মেহমান হিসেবে আছে কোয়ার্টারে। সাথে তার সুন্দরী স্ত্রী ও এসেছে।

নুহাস হাত তালি দিয়ে বলে বাহহ বহহহহ এতো কিছু জানার পরেও হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন?

– বিপদে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হয়। এখন মাথা গরম করা মানেই নিজের পায়ে নিজে কু*ড়ো*ল মা*রা।ঈশান মুখার্জি স্ত্রী ইরাবতী। তার ছেলে নীলাদ্রি। আমি তাদের উপর আগেই এটাক করিয়েছিলাম। কিন্তু শা*লা বেঁচে গেছে। ( রমিজ রাজ মিহির কথাটা চেপে গেলেন নুহাসের কাছ থেকে)

– কিন্তু ডক্টর শফিকের মৃত্যুতে পুরো সব হিলে পরেছে। মিডিয়া সাংবাদিক।আর এখন তো তদন্ত শুরু হবে। তার সব অর্থ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

– তার জন্য তুমি প্যারা নিচ্ছো কেন? খু*ন*টা কি তুমি করেছো? করোনি তাহলে ভয় শুধু ধরা পরার এতো সহজ না। যাও তুমি নিজে প্রেস কনফারেন্স করো। নিজে দ্বায়িত্ব নিয়ে নাও এই কেসের। তারপর রিলাক্স করো। বাকিটা আমি দেখছি।

নুহাস পকেট থেকে রুমাল বের করে কপালের ঘাম মুছে নিয়ে বলে,আপনি ঈশান মুখার্জিকে যতটা সহজ ভাবছেন ততটা সহজ কিন্তু নয়। সে কোন উদ্দেশ্য ছাড়া এখানে এসেছে সেটা আমি মানতে পারছিনা।

– তোমাকে সে সব নিয়ে ভাবতে হবে না। ঈশান মুখার্জির জন্য আমি যথেষ্ট। তোমাকে যেটা বলা হয়েছে সেটা করো।

______________________________________________
শাফিন ছদ্ম বেশে খোঁজ করছে মিহির। অনেক চেষ্টা করেও কোন খোঁজ পেলো না। পার্কের একটা বেঞ্চে বসে ছক কষতে থাকলো আগামী প্লানের। হঠাৎ শাফিন পায়ের কাছে কিছু কৃষ্ণচুড়া ফুল পরলো উপর থেকে। চোখ তুলে উপরে তাকালো উপরের দিকে মাথার উপর ফুলে ফুলে লাল আভা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচুড়া।দৃষ্টি ফিরিয়ে হাত বাড়িয়ে ফুলগুলো হাতে নিলো।মনে পরে গেলো ক্যাম্পাসে মিহির সাথে কাটানো কিছু মধুর মূহুর্তের কথা।যেনো চোখের সামনে ভেসে উঠলো সেই দৃশ্য।

ওই এভাবে বোকার মতো তাকিয়ে কি দেখছো।
শাফিন হেসে বলে, আমার বোকা পাখিকে দেখছি। এই দুপুর বেলা রোদের মধ্যে তুমি এই ফুল কেন কুড়াচ্ছ?

মিহি হাত ভর্তি ফুল শাফিনের সামনে ধরে বলে,এক মিনিট অপেক্ষা করুন এক্ষুনি বলছি। মিহি ফুলগুলো শাফিনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজের মাথা থেকে হিজাব খুলে নিলো। এই যে এবার ফুলগুলো একটা, একটা করে আমার বেনির মাঝে গেঁথে দিন তো।
শাফিন যত্ন নিয়ে গেঁথে দিয়ে বলে,আমার ফুলের সৌন্দর্যের কাছে তোমার ফুলের সৌন্দর্য ফিকে পরে গেছে।
মিহি শাফিনের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে, আপনার ফুল মানে?

আমার ফুল মানে এই যে আমার সামনে দাঁড়ানো আমার বোকা ফুল।

মিহি মৃদু হেসে বলে,এবার ঝটপট দুই ফুলের ছবি তুলে দেন দেখি।

শাফিন মিহির ছবি তুলে দিয়ে মিহিকে বলে এবার হিজাব পরে নাও জান।

-ইশশ এতো সুন্দর করে চুল সাজিয়ে আবার হিজাব

শাফিন মিহির মাথায় ওড়না টেনে দিয়ে বলে এই সৌন্দর্য শুধু আমি উপভোগ করবো। আর কারো দৃষ্টি পড়তে দেবো না। হালকা বাতাসে আরো কিছু ফুল শাফিনের শরীরে পরতেই শাফিনের হুঁশ ফিরে। এতোক্ষণ যেনো জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছিল।কিছু ফুল পকেটে পুরে নিয়ে আন মনে বলে, তোমাকে কোথায় খুঁজবো বোকা ফুল।

#চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব -২৭

মিহি নাস্তা নিয়ে এসে ঈশানের টেবিলে রাখলো। ঈশানের কাছে যেয়ে দেখে ঈশান গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু ভাবছে। মিহি বললো,এই যে, মিস্টার মুখার্জি আপনার নান্তা রেডি।

ঈশান বলে উঠলো,আপনার সেদিন কেনো মনে হয়ে ছিলো! ওই লোকটা শাফিন মাহমুদ ছিলো?

-ওর কন্ঠ। শাফিন কখনো কারো কাছে ক্ষমা চাইতো না।আমরা যেমন কথায় কথায় সস্তা সরি বলি, ও বলতো না। তবে ওর যদি মনে হতো ও সত্যি ভুল করছে তখন সরি বলতো তাও খুব চাপা স্বরে মনে হয় কেউ ওকে ফোর্স করে সরি বলাচ্ছে। ওর স্পর্শে আমার কেমন একটা অনূভুতি হচ্ছিলো। তাই ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। আর আপনি যখন আমার সাথে কথা বলছিলেন ও যাস্ট সরি বলে চলে গেলো।ওর কন্ঠ শুনে মূহুর্তেই আমি জ্ঞান শুন্য হয়ে পরি বারবার কানে ওই সরিটা বাজতে থাকে।বেখেয়ালী হয়ে পরি। খেয়াল আসতে আসতে ও হাওয়া।

– আপনি শিউর ওই লোকটা মিস্টার মাহমুই ছিলো?

– হুম ওই আমার শাফিন ছিলো এতে কোন সন্দেহ নেই।

ঈশান টিভি অন করে বলে,তাহলে এই খু*ন টা মিস্টার মাহমুদ করেছেন।

একজন সংবাদ পাঠিকা সংবাদ পাঠ করছেন। আজকের শীর্ষ সংবাদ গুলোর মধ্যে আছে,নিজ বাসায় খু*ন হলেন সনামধন্য ডক্টর শফিক সারোয়ার। কে বা কারা এই হ*ত্যা কাণ্ডের সাথে জড়িত সে বিষয় স্পষ্ট কিছু জানা যাইনি। ধারণা করা হচ্ছে ব্যক্তিগত শত্রুতার জেড় ধরেই এই হ*ত্যা কান্ড। তবে তার মৃ*ত্যু*র পর তার বিরুদ্ধে উঠে এসেছে ভয়াবহ তথ্য। প্রথমিক ভাবে জানা যায়। ডক্টর শফিক স্মা*গ*লা*রদের সাথে জড়িত ছিলেন। তার হাত ছিলো মাফিয়া গ্রুপের সাথে। সে বিষয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। তার সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার সাথে সাথে তার পরিবারের লোকদেরকে রাখা হয়েছে পুলিশি হেফাজতে।
মিহি মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো। ঈশান টিভি অফ করে দিয়ে বলে,মিসেস মাহমুদ আর ইউ ওকে?

মিহি বলে,একমাত্র ডক্টর শফিক জানতেন আমার শেহরোজের কথা। শেহরোজ আসার খবর আমি শাফিনের কাছ থেকে লুকিয়েছিলাম।

– এতো বড় একটা কথা কেন লুকিয়েছেন?

– তখন আমাদের সম্পর্ক ঠিকঠাক যাচ্ছিলো না। আর আমি চাইনি একটা অসুস্থ পরিবেশে আমার সন্তানকে পৃথিবীতে আনতে। তাই ডিভোর্স দিয়ে অন্য কোন জেলায় চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম।

ঈশান বলে,আপনাদের মেয়েদের এই এক সমস্যা ওভারথিংকিং করা। মানলাম আপনাদের ঝগড়া হতো ঝামেলা হতো তাই বলে, তার সন্তান আসার খবর তাকে জানাবেন না!আর সে যতই এসব করুক তার আড়ালে আপনার প্রতি তার ভালোবাসা দেখতে পাননি?

– আপনি আমার জায়গায় থাকলে বুঝতেন। একজন মা*তা*ল নে*শা*খো*রে*র সাথে কি করে কথা বলতাম।

– হোয়াট?

– প্রতিদিন রাতে দশ-টায় বেড় হতো আর শেষ রাতের দিকে মাতালের মতো বাসায় ফিরতো। মাঝে মাঝে আমার গায়ে হাত তুলতো। তাহলে আমি কি করে ভাববো এতোকিছুে?

– ওয়েট দিছ পয়েন্ট। আপনার গায়ে হাত তুলতো মানে।

– হুম আমাকে মা*র*ধ*র করতো প্রায়ই। তাও আবার আমার বাসার কাছের লোকের সামনে।

-ওই কাজের মেয়ের ঠিকানা জানা আছে?

– তখনতো সালমা একটা কলোনিতে থাকতো।

– এবার প্রথম কাজ শাফিন মাহমুদকে খুঁজে বের করা। আসুন নাস্তা করেনেই।

– শেহরোজকে আমার কাছে দিয়ে, আপনি খেয়েনিন। শেহরোজ টুকটুক করে তাকিয়ে আছে ঈশানের দিকে।

ঈশান শেহরোজের কপালে চুমু খেয়ে বলে,আবার বাবাটাহ বড় হয়ে আমার চেয়ে বড় অফিসার হবে।তাইনা বাবা।

কে জানে ছোট্ট শেহরোজ কি বুঝলো কিন্তু সে হাসছে। কি নিষ্পাপ মন মুগ্ধকর সে হাসি।

মিহি ঈশানকে কোলে নিয়ে বলে,এই ভুল দ্বিতীয় বার হবেনা মিস্টার মুখার্জি। আমার ছেলেকে আমি এসব লাইনে কখনো যেতে দেবো না।

– বাপরেহহহ আপনার দ্বারাই সম্ভব ছোট ছোট কথাকে সিরিয়াসলি নেয়া।

– এবার বাজে কথা রাখনু আর খাবার খেয়েনিন

______________________________________________
শাফিন নিজের বাসায় চলে এসেছে ছদ্ম বেশে। কেউ সন্দেহ করছে না কারণ প্রায় এখানে তদন্ত কমিটির মানুষজনের আসা যাওয়া হয়। শাফিন বাসায় প্রবেশ করে দরজা লক করে দিলো।বুকের ভেতর কেমন হাহাকার করছে। এই বাসায় কথ স্মৃতি জড়িয়ে আছে।

নিজের বেড রুমে আসলো দেখে বোঝাই যাচ্ছে এখানে কেউ চিরুনি তল্লাশি দিয়েছে।চোখে পড়লো আয়রা আর শাফিনের কাপল পিকে। শাফিন রেগে সেটা ভেঙ্গে ফেললো। মিহির আর নিজের পিক খুঁজলো কিন্তু একটাও পেলো না। চলে আসলো স্টোর রুমে সেখান থেকে গোপন রুমে কিন্তু এখানেও কিছু পাওয়ার আশা নেই। চলে আসবে এমন সময় পায়ের কাছে মিহির লকেট দেখতে পেলো হাত বাড়িয়ে লকেটটা উঠিয়ে নিলো। মনে মনে বললো তারমানে আমার বোকা ফুল আমার কাছাকাছি কোথাও আছে! খুশিতে চোখ চিক চিক করে উঠলো। রুমে বসে আজকের প্লানিংয়ের ছক কষে নিলো। বাসা থেকে বেড় হলো না। একেবারে রাতে বের হবে। তাই সোফা পরিস্কার করে সেখানে শুয়ে পরলো।

আজ উদয়ের জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। লিরা উদয়কে নিয়ে আসছে।উদয় বললো,আমি কি জানতে পারি আমার প্রতি এতোটা দয়াশীলা হওয়ার কারণ?
– প্রথম কারণ আপনি নিজের মানুষ। দ্বিতীয় কারণ আপনাকে প্রয়োজন।

উদয় হেসে বলে, শুনেছি ছেলেরা ফ্লাটিং করতে পারে তবে আজ দেখছি মেয়েরাও কম না। তিনবারের সাক্ষাতে নিজের মানুষ। বলেই হেসে দিলো।

– লিরা বললো, আপনি হয়তো আমাকে চিনতে পারেননি।আমি লিপিকা সরদার।

– উদয় চোখ বড় করে বলে, লিপিকা!

– হুম লিপিকা।

– কিন্তু কি ভাবে হতে পারে? চোহারায় এতো অমিল!

– আপনার দেয়া আঘাত সহ্য করতে না পেরে ছাদ থেকে লা*ফ দিয়েছিলাম। দুর্ভাগ্য বেঁচে গেছি। তারপর প্লাস্টিকে সার্জারী করিয়ে চেহারায় পরিবর্তন আনিয়েছি। দেশ ত্যাগ করেছি।

– আমি দুঃখিত তখন আমি অন্য কাউকে ভালোবাসতাম।

– এখন বাসেন না?

– ভালোবাসা হলো মরণ ব্যাধি রোগ। একবার এই রোগে আক্রান্ত হলে তা থেকে আর মুক্তি নেই। আমি যাকে ভালোবেসেছি সে অন্য কাউকে ভালোবেসে সুখে আছে। এতেই আমি আনন্দিত। ভালোবাসি মানেই শরীর ছোঁয়ার আকাঙ্খা না। আত্মার তৃপ্তি। আমি তাকে ভালোবেসে মানুষিক শান্তি পাই।

– ঠিক বলেছেন তবে কেউ ভালোবাসলে বিনিময়ে তাকে ভালোবাসা না দিতে পারলেও অবহেলা করা নিশ্চয়ই উচিৎ নয়। সেদিন যদি মা*রা যেতাম তবে আপনার দুঃখিত হওয়া আমার কোন কাজে আসতো না। ভালোবাসা কাটা যুক্ত এটা যেনেই আমরা তা বরণ করি। এর এক পিঠে যেমন শান্তি অন্য পিটে তেমন বিরহ। আপনার দোষ দেবো না। কারণ প্রকাশিত ভালোবাসা সব সময় অবহেলিত।

তবে এখন সেসব অতীত। আপনি হয়তো জানেন না। শাফিন মাহমুদ আর নেই। আর সেই কেসের ইনভেস্টিগেশনের জন্য আপনাকে রিহা করা হয়েছে।

উদয় বলে নেই মানে!

– বাসায় চলুন বাকি কথা স্যারের থেকে জেনে নেবেন।

পূর্বে দিকে উদিত হওয়া সূর্যটা ধীরে ধেীরে পশ্চিমে অস্ত যাচ্ছে। সাথে সাথে আলোকিত শহরটা একটু একটু করে অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে। রাত উপভোগ করে না।এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে রাত কারো জন্য উজ্জ্বল পূর্নিমার চাঁদ তো কারো জন্য বিষাদের কালো ছায়া।

রাতের ন’টা ছাড়িয়ে গেছে শাফিন নিজেকে প্রস্তুত করে নিচ্ছে আজকের মিশনের জন্য।

নিজের রুম থেকে বের হবে ঠিক সে সময় কারো উপস্থিত টের পেলো ফ্লাটে। সব লাইট অফ করা। ঘুটঘুটে অন্ধকারে কেউ ফ্লাশ লাইটের মৃদু আলোতে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। শাফিন নিজেকে প্রস্তুত করে নিলো আক্রমণ করার জন্য। কেউ একজন আস্তে আস্তে এদিকেই অগ্রসর হচ্ছে।

হঠাৎ ফ্লাশ বন্ধ হয়ে গেলো। শাফিন একটু সামনে এগিয়ে আসতেই কারো সাথে ধাক্কা লাগলো। শাফিন অন্ধকারে নিজের বাহুতে আগলে নিলো। ধরতেই বুঝে গেছে এটা একটা মেয়ে। শাফিনের এক হাত রমনীর কোমড়ে। অপর হাত পিঠে। অন্ধকার আর নিরবতা ভেদ করে একে অপরের নিশ্বাসের শব্দ শুনতে লাগলো। শাফিন রমনীকে কোন কথা বলতে না দিয়েই অধরে অধর মিলিয়ে দিলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here