চন্দ্রপুকুর পর্ব -৪৪+৪৫#চন্দ্রপুকুর
||৪৬তম পর্ব||
– ঈপ্সিতা শিকদার
নীলকণ্ঠ দাসের উপর নজর আবদ্ধ তালহার। তাঁর প্রতিটি কর্মই সে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। যদিও অস্বাভাবিক সচ্ছলতা ব্যতীত অন্য কিছুতেই অস্বাভাবিকতা বোধ হয়নি তার।
দু’ঠোঁটের ফাঁকে বিড়ি গুঁজে আজও শস্যক্ষেতের ঝোপঝাড়ের আড়ালে লুকিয়ে বসে আছে। যোহরের আজান শোনা যাচ্ছে, উঠে দাঁড়াতে নিবে তখনই সে খেয়াল করে এই ভরা দুপুরের নীলকণ্ঠ দাস তৈরি হয়ে বের হচ্ছেন।
অবাক সে। কেমন যেন ঘাপলা ঘাপলা গন্ধ পাচ্ছে তাই সব চিন্তা বাদ দিয়ে তার পিছু নয়।
নীলকণ্ঠ দাস আজ বেশ আনন্দিত। এখন রোজ রোজ হাতভর্তি বাজার করে আনেন। মেয়েটা বড়ো হচ্ছে কিছু স্বর্ণের গহনা বানানোর প্রয়োজন তাঁর বিবাহের জন্য। আজ সেজন্য এখনকার থেকে অতিরিক্ত অর্থের দাবী করবেন চিন্তা করে এসেছেন।
পথিমধ্যে হুট করে তাঁর মনে হলো কেউ পিছন পিছন আসছে। দ্রুতো পিছন ঘুরেন তিনি।
তাৎক্ষণাৎ লুকিয়ে পড়ে শাহাজাদি জান্নাতুলের খাঁস গুপ্তচর তালহা। এদিকে মধ্যবয়স্ক পুরুষটি এদিক-ওদিক তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন।
নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে বিড়বিড়ান,
“আমার মনের ভুল হইবো। কোথাও তো কেউ নাই। দ্রুতো চলি নাহলে ঐ লোক আমারে না পেয়ে বিনা কথাতেই চইলা যাইবো। এমনেও ম্যালা দেরি হইয়া গেসে।”
আর কোনো দিকে না তাকিয়ে দ্রুতো গতিতে চলতে শুরু করেন। তালহা তো তাঁর সাথে তালে তাল মিলিয়ে হাঁটছেই।
জঙ্গলে প্রবেশ করেন যামিনীর মামা। জঙ্গলের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে একটি পুকুরের তীরে বৌদ্ধমন্দির আছে, ঠিক মন্দির নয়, ধ্বংসাবশেষ বলাই শ্রেয়। সেখানেই যেয়ে স্থির হন তিনি।
কিছুটা দূরে একটি ভাঙা দেয়ালের আড়ালে দাঁড়িয়ে যায় তালহা। এক মুহূর্ত পেড়িয়ে গেলেই বেরিয়ে আসে ঘাড় ডানে-বামে ঘুরাতে ঘুরাতে এক আগুন্তক। হয়তো আশেপাশে পর্যবেক্ষণ করে নিচ্ছে প্রথমে খালি চোখে। কালো মোটা কাপড়ের বিশাল চাদরে আবৃত মানুষটি।
“কী অবস্থা? কেউ এসেছিল খোঁজ-খবর নিতে বেগম চন্দ্রমল্লিকার তথা তোমার ভাগ্নি যামিনীর বিষয়ে?”
“হ্যাঁ, এসেছিল তো এক লোক। অনেক অর্থও দেওয়ার প্রলোভনও দেখিয়েছিল, কিন্তু আমি এক চুলও নড়িনি আমার ওয়াদা হতে। আপনারা যেমন বলেছিলেন তেমনই বলেছি।”
“সঠিক কাজ করেছো নীলকণ্ঠ। এই পোটলিতে তোমার জন্য নির্ধারিত অর্থ আছে। উপভোগ করো।”
হাস্যোজ্জ্বল মুখে হাতে নিলেন অর্থের থলিটি তিনি। ইতস্ততভাবে তাকালেন সামনের ব্যক্তিটির দিকে।
খাণিক খোশামুদি করে বললেন,
“আসলে আমি কিছু বলতে চাচ্ছিলাম। কর্ত্রী তো বুঝদার মানুষ, তিনি নিশ্চয়ই বুঝবেন। আমার কন্যা যেন দেবি লক্ষ্মী, এমন লক্ষ্মীমন্ত কন্যার ভালো ঘরে বিবাহও দিতে হবে। পণ দেওয়ার জন্য কিছু অর্থ এবং অলংকারও তো ক্রয় করা প্রয়োজন। তাই বলছিলাম…”
মানুষটির চোখে চোখ পড়তেই মুখের বুলি বন্ধ হয়ে যায়। জোরপূর্বক হাসেন শুধু।
এদিকে তালহা উৎসুক চোখে তাকিয়ে যদি একদফা দর্শন পায় এই আগুন্তকের। তার দোয়া যেন কবুল হয় আল্লাহর দরবারে।
এক দমকা হাওয়ায় চাদর পড়ে যায় আগুন্তকের মাথা হতে। এবার সূর্যের আলোয় স্বচ্ছ ভাবে দেখা যায় মানুষটিকে।
“কাসেম মইন্না!”
আনমনেই মৃদু কণ্ঠ নামটি উচ্চারণ করে সে। বস্তুত, উপস্থিত মানুষটিকে চিনে সে।
মধ্যবয়স্ক কাসেম মইন্না নবাববাড়ির পুরাতন দাস, প্রায় বহু বছর ধরে অবসরপ্রাপ্ত সে। এ বিষয়ে গোটা গ্রামই জ্ঞাত। যে বাড়ির নুন খেয়েছে সে বাড়ির সাথেই বেইমানি করছে ভাবতেই মনে মনে ক্রুব্ধ হয় তালহা।
“না, না, এ বিষয়ে আমি বেগমের সাথে কথা বলতে পারব না। আগামীকাল বা পরশু বেগম আসছেন বড়ো বাজারে। আমি খবর পাঠাবো তোমায়, তুমিই এসে বোঝা-পড়াটা করে নিয়ো।”
“যথা আজ্ঞা বাবু।”
উভয় পক্ষ নিজেদের আলাপ সমাওত করে স্থান ত্যাগ করে। বেড়িয়ে আসে এবার তালহাও।
ভাবে,
– এবার শুধু কাসেম মইন্নার উপর নজর রাখলেই আসল দোষীর দেখা পাওয়া যাবে। কিন্তু কাসেম যে ‘বেগম’, ‘বেগম’ বলছে তার মানে কি এসবের পিছনে বেগম নূর বাহার বা বেগম লুৎফুন্নেসা!
___
বেলা দুপুর, কাল গভীর রাত্রি হতে পেটে দানাপানি যায়নি যামিনীর। কী খাবে? কী পান করবে? কিছুই যেন রুচিতে ধরছে না। সব জায়গায় সন্দেহ, যেন ষড়যন্ত্রের গন্ধ ছড়িয়ে আছে।
দিলরুবা ও মোহিনী প্রিয় বেগমের এমন দশা মেনে নিতে অক্ষম। তাই তো শত ধমকের পরও এগিয়ে আসে তার নিকট।
“বেগম, এভাবে উদাস হয়ে বসে থাকবেন না। কিছু তো আহার করুন। আপনার পছন্দের খাদ্য এনেছি। আর কিছু না হোক শরবতটাই পান করুন”
রমণী সরিয়ে দেয় তা। বেশ কষ্টকর এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে। তা এবার শুনানোর পালা।
“রোহিণী মৃত্যুর আগমুহূর্তে যা বলেছে তা তোমরাও শুনেছো, আমিও শুনেছি। এরপর তোমাদের উপর আমার বিশ্বাসের ইমারত নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে। আমার ব্যক্তিগত সেবায় তোমরা এখনও নিয়োজিত থাকবে।
তবে আমার আহার করা, পান করা সহ যা যা আমার এমন দশার কারণ হতে পারে বলে সন্দেহ বোধ করছি। তাতে তোমার থাকবে না। আর হ্যাঁ, নতুন কোনো দাসীও আমি আমার সেবায় নিচ্ছি না।”
দিলরুবা ও মোহিনী একে অপরের পানে তাকায়। মাথা ঝুঁকিয়ে ফেলে তারা।
“কিন্তু বেগম আপনি নতুন দাসী না নিলে আপনার এসব ব্যক্তিগত কাজ কে করবে?”
আলতো হাসে জমিদার গিন্নি। সে হাসিতে তাচ্ছিল্য নেই, আছে দম্ভ।
“আমি কোনো রাজবংশে জন্ম নেওয়া কোনো রাজকন্যা নই, খেটে খাওয়া গাঁয়ের কন্যা আমি। পরের জন্যও এর হতে অধিক কাজ করেছি, এ সামান্য কাজ নিজে করে খাওয়া আমার জন্য অতি কষ্টকর কিছু নয়। আর হলেও তোমাদের সেসব ভাবা লাগবে না। তোমরা এখন বিদায় হও, তা-ই যথেষ্ট।”
আদেশ অনুযায়ী সালাম জানিয়ে বিদায় দেয় দুই বাঁদী। দু’জনের মুখশ্রীই বিবর্ণ। যদিও এর যথাযথ কারণটা অস্পষ্ট।
কারণ মনিবের অবিশ্বাস করার উদ্দেশ্যে কোনো দুঃখ বা হতাশা তো তাদের আঁখিতে দর্শন করা যাচ্ছে না।
তারা বের হলে যামিনীও পালঙ্ক হতে উঠে দাঁড়ায়। বরং, ক্রোধ আর আক্ষেপ তাদের মাঝে। যেন কোনো কার্য অপূর্ণ রেখে ফেলেছে তারা।
ভাবনার রাজ্যে ডুবে থাকার সময় এখন নেই। লড়তে হবে এই মহলের সবার সাথে, নিজেকে এবং নিজের অস্তিত্বকে বাঁচাতে হলে তা-ই করতে হবে।
সর্বপ্রথম তার খাবার খাওয়া প্রয়োজন। সে নিজেই আজ থেকে নিজের রান্না পৃথক ভাবে করবে। আর৷ জলটাও নিজেই কূপ হতে আনবে। এই ভেবেই রান্নাঘরের দিকে অগ্রসর হয় সে।
___
কাসেম মইন্নার চিঠি পেয়ে ডাকঘরে এসেছেন ভয়ংকর ছলনাময়ী নারীটি। চোখ-মুখ তাঁর কুঁচকে গিয়েছে বিতৃষ্ণায়।
আপন মনেই বলে উঠেন তিনি,
“এভাবে একেক জায়গায় পয়সা ঢালতে থাকলে তো আমার নিজস্ব ধন-সম্পদও সব ফুড়িয়ে যাবে। ঐ হারামজাদার অর্থ খানাও তো শেষ হওয়ার পথে। কিন্তু এতোবার অর্থ চাইলেও তো সন্দেহ করবে।”
কী একটা ভেবেই তিনি টেলিফোনে কল লাগান সুদূর শহরে বসবাসরত পুরুষটিকে। অপরপাশ হতে কল রিসিভ হয়।
গম্ভীর কণ্ঠে পরিচিত মানুষটি প্রশ্ন করে,
“কী অবস্থা তোমার? ওখানে সবকিছু ঠিক-ঠাক মতো চলছে তো?”
“তা আর চলছে কোথায়? ভৃত্যরা অধিক মূল্য দাবি করছে আমাদের হয়ে কাজ করতে। এতো অর্থের ব্যবস্থা কোথা হতে করব? হয়তো তোমার আর আমার হৃদয়ে প্রতিশোধের জ্বলন্ত আগুন আমাদেরই ছারখার করবে। ছুঁতে পারবে না এই নবাববংশকে, ধ্বংস আমরাই হবো।”
তাঁর আক্ষেপসূচক কথায় ভড়কে যান মানুষটি। যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না এমন উক্তি।
ধমকে সুরে শুধান,
“না, এ কিছুতেই সম্ভব নয়। যারা আমাকে, আমার ভালোবাসাকে আর আমার মৃত ভ্রাতাকে জ্বালিয়েছে তাদের মিথ্যে দম্ভের জন্য, তারা কখনোই শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে না।
আমি আরমান শাহ তা করতে দিব না। আমি অর্থের ব্যবস্থা করে পাঠাচ্ছি। তুমি চিন্তা কোরো না মোর্শেদা। তুমি শুধু পরিকল্পনা মোতাবেক যেন সবকিছু সম্পন্ন হয় সেই ব্যবস্থা করো।”
“যথা আজ্ঞা আমার শাহ।”
এখানেই কথা শেষ হয় তাঁদের। মোর্শেদা খাতুন বিদ্রূপাত্মক হাসি দেয়।
“আরমান শাহ, পরিকল্পনা তোমাদের নয়, আমার পূরণ হতে যাচ্ছে। যেই প্রতিশোধের অনলে আমি এতো কাল ধরে পুড়ে গুমরে মরছি, সেই অনলে সর্বস্বান্ত হবে এই নবাববাড়ি।
তবে হ্যাঁ, অনেক অপেক্ষা করা হয়েছে এবার শেষ চাল দেওয়ার পালা এসে গিয়েছে। আমি আর অপেক্ষা করতে পারবো না। আর আরমান শাহ তুমি?
তুমি তো জ্ঞাতই নয় তোমার দেওয়া অর্থ তোমারই অতি আপন ব্যক্তির অমঙ্গলের জন্য ব্যবহার হতে চলেছে। ঐ যামিনীকে আমি ছাড়ছি না, যেমন ছাড়িনি তার মাতাকে।
কতো সখ ছিল চাষার মেয়ে হয়ে মহলের বেগম হওয়ার। একদম মিটিয়ে দিয়েছি তা। কন্যাও তার ব্যতিক্রমধর্মী হয়নি। তবে এতে আমার আক্ষেপ নেই, আমার খেলার গুটিই যে সে এখন।”
হো হো করে হেসে উঠেন মোর্শেদা খাতুন। গায়ে বিশালাকার চাদরটি পরে নিজেকে ভালোভাবে আড়াল করে বেরিয়ে যান। পোস্টমাস্টারের হাতে বেশ কিছু অর্থ ধরিয়ে দিতে ভুল করেন না উপহার স্বরূপ।
তিনি নজরের বাহিরে চলে গেলে আড়াল হতে বেরিয়ে আসে এসপি সাহেব। মশার কামড়ে তার দুর্দশা হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। এই আঁধার শীতল রাত্রিতেও এই নবাববাড়ির গোলামি হতে স্বস্তি কোথায় তাঁর?
জনগণের দেওয়া পুলিশের চাকরিতেও ফাঁকি দেওয়া যায়, তবে নবাব বাড়ির কাজে খাণিক উদাসীনতার অর্থই যমরাজকে নিজ মুখে আগমনের আহবান জানানো।
“যাই, এবার বাড়ি ফিরি। বহুত কামড় খেলাম মশার, আর কতো! কাল সকাল হলে বাবুকে খবর দিব নে এই নারীর।”
মেঠোপথ হয়ে বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করেন তিনি। ভোর হলে আবার কাজে বের হতে হবে।
___
মেহমাদ শাহ তাঁর গোপন কক্ষে গোপন আলোচনা সভায় বসেছে মিনার সহ নিজের অতি বিশেষ কিছু সেবকদের নিয়ে।
“রোহিণীর মোকদ্দমার ফয়সালা আমার চাই। আমি বোধগম্য করতে পারছি না এতো এতো প্রহরী, দেহরক্ষীদের মাঝে কীভাবে আমার অন্দরমহলে আমার অধীনস্থ কোনো দাসীর উপর হামলা হতে পারে? খুবই আশ্চর্যজনক এবং দুঃখজনক!”
“জমিদার নবাব শাহ, আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করছি সকলের অন্তরালে তদন্ত চলমান রাখার। তবে কোনো চিহ্ন পাচ্ছি না দোষীর।”
“অহেতুক কথা বোলো না তোমরা। আমার অন্দরমহলে এতো কঠোর সুরক্ষা ব্যবস্থা, তাও কেউ দেখেনি তা হতে পারে না। বরং, কেউ মুখ খুলছে না। চুক্তি, অর্থ, শাস্তি যেভাবেই হোক আমার দোষীকে চাই। তোমাদের নিকট সময় শুধু জনাব আরহান করিমের যাওয়া অবধি। এখন তোমরা যেতো পারো।”
“বিদায় জমিদার নবাব শাহ।”
মেহমাদ শাহ উঠে দাঁড়ায়, মিটমিট করে হাসছে সে। মিনার সন্দিহান দৃষ্টিতে একপলক তাকিয়ে আবার নজর নামিয়ে ফেলে।
“আমি জ্ঞাত আমার মিনার, তুমি কিছু বলতে চাও। দ্বিধা না করে বলে ফেলো।”
“জমিদার বাবু, আপনি তো এই তদন্ত জনাব হকিংস শেরপুর ত্যাগ করার পরও করতে পারতেন। তবে এখনই ক্যানো করছেন?”
বিড়ালছানার ন্যায় মিনমিন করে প্রশ্ন করলো মিনার। শব্দ করে হেসে উঠে মেহমাদ। তার এই ভৃত্যকে প্রায় কৈশোর হতে চেনে সে, ছেলেটা বড্ড বেশিই কৌতূহলী। কোনো প্রশ্ন মস্তিষ্কে আসলে তা না জানা অবধি যেন শান্তি নেই তরুণটির।
“একটুও কৌতূহল ধরে রাখার ক্ষমতা নেই তোমার মিনার। আমার বেগম আমার চন্দ্রমল্লিকা আমার উপর অভিমান করেছে, তাকে উপহার স্বরূপ আমি ঐ দোষীর গর্দান তার চরণতলে অপর্ণ করতে চাই। আমার সোনার হরিণীটি কতো কাল ধরে উদাস আমার মন থমকে যায় তার এমন চেহারা দেখে। আমি এবার তাকে পূর্ণরূপে স্বস্তি দিতে চাই।”
“ভুল-ত্রুটি মার্জনা করবেন বাবু। তাহলে আপনি বেগমকে জানাচ্ছেন না ক্যানো যে আপনি তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন আড়ালে? আবার শাহাজাদিকে যে আপনার স্ত্রী তথা বেগম হিসেবে পরিচিত করছেন না, বরং বেগম চন্দ্রমল্লিকার বেশধারী সে তাও তো জানাচ্ছেন না।”
“এটা তার শাস্তি। আমার হতে তথ্য আড়াল করার শাস্তি। তার গর্ভধারণে সমস্যা হচ্ছে এ সত্য আমার থেকে বছরের পর বছর আড়াল করেছে। তুমি তো দেখেছোই মিনার, তার জন্য কতো বড়ো সমস্যা দাঁড় হয়ে গিয়েছে। কতো বড়ো! দাদীজান আমার বিবাহ… তা তো আমি করছি না, কোনোক্রমেই না।
তবে সে পূর্বে আমাকে জানালে আমি শহুরে বা বিদেশে নিয়ে যেতে পারতাম তাকে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে। অন্যকোনো ব্যবস্থাও নেওয়া যেতো, কারো কর্ণগোচর হতো না। এখন তো দাদীজানই জ্ঞাত। আমাকে বিশ্বাস না করার জন্য এই শাস্তি তার প্রাপ্য, যাতে ভবিষ্যতে এমন ত্রুটি তার দ্বারা না সম্পাদন হয়।”
“তবে জমিদার বাবু, এতো ঝামেলা-জঞ্জালে বেগম যদি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। আপনার বিপরীতে বা বিরুদ্ধে চলে যায়।”
কঠোর চাহনি নিক্ষেপ করে জমিদার মেহমাদ শাহ নিজের ভৃত্যের দিকে।
“আমার চন্দ্রমল্লিকা কখনও আমার বিরোধিতা করবে না, স্বপনেও না। আমায় জীবনের চেয়েও অধিক ভালোবাসে সে। তাছাড়া আমি আম্মাজানকে বলে দিয়েছি তার আশেপাশে থাকতে। এখন তুমি বের হও তোমার নজরের সামনে হতে!”
ভয়ে ভয়ে দ্রুতো বের হয়ে যায় মিনার। তার মুখ সর্বদাই একটু অধিক চলে।
মেহমাদ শাহ আরেকদফা ভাবে মিনারের কথা। পরক্ষণেই নিজের আত্মবিশ্বাসের দরুন ত্যাগ করে এই ভাবনা। না জানি তার এই আত্মবিশ্বাস, অত্যাধিক আত্মবিশ্বাসে না পরিণত হয় ভবিষ্যতে ঘটতে যাওয়া পরিস্থিতির সাপেক্ষে।
___
মহল হতে প্রায় দশ মিনিটের দূরত্ব কূপ খনন করা। সেখান হতেই নবাব বাড়ির উদ্দেশ্যে জল আসে। বর্তমানে আলখাল্লা, হিজাব, নিকাব পরিধান করে কলস নিয়ে গ্রামীণ নারীদের সেদিকে যেতেই রওনা হচ্ছে যামিনী।
চলবে…