“চাঁদ হয়ে রবো”
~খাদিজা বিনতে হক
পর্ব-১১
নীল রঙের স্যলোয়ার সুট পরে তৈরি হয়ে নিলো।
হাতে এক গাধা নিল রেশমি চূড়ী।
বিবাহিত জিবনের অবাক ময় দিন এটা।
তুষারের সঙ্গে ঘুরতে যাবে।তুষার অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে।এমন ভাবে প্রথম দেখছে।এটাও অবাক করা মূহূর্ত।
ও একটু রাগ করেছে।তৈরি হতে এতো সময় কিভাবে লাগে।
পৌষী বাড়ীর সব কাজ শেষ করে তবেই।তৈরি হয়েছে।একথা শুনলে ও হয়তো আরো রাগ করতো অথবা কোনো রিয়্যাক্ট করতো না।
,
তুষারের বাইকে করে ওরা বেরিয়ে পরলো।
সব কিছু অবাক করা হলেও আজ ও খুশি।
রাস্তার বিকটময় জ্যাম ঠেলে ওরা পৌছালো ওদের গন্তব্য।
শান্ত শিষ্ট্য নদীর পারে।পৌছাতে মাগরিবের আজান দিয়ে দিলো।আকাশ লাল নীল বেগুনি হয়ে।কালো হতে শুরু করেছে।পূর্ণীমার গোল চাঁদটা নদীর মাঝ বরাবর আলো দিচ্ছে।
অনেকে তার ছবি তুলছে মোবাইলে তুষার ও ফট করে একটা ছবি তুললো।
চাঁদের পাশে।তার।চাঁদনীর।পৌষী খেয়াল নেই কোনো দিকে।স্তব্ধ হয় চাঁদ মেঘের খেলা দেখছে।
শীতল বাতাস ছুয়ে দিয়ে যাচ্ছে ওর শরীর।
কালো মেঘ ধেয়ে এসে এক পশলা বৃষ্টি দিয়ে ভিজিয়ে দিলো তুষার দৌড়ে পাশে দোকানে দাড়ালো পৌষী গেলো না।
অনেক দিন পরে এমন বৃষ্টিতে ভিজচ্ছে সে।
দু হাতে মেলে ধরে বৃষ্টি ফোটা গায়ে মাখছে।
পাঁচ মিনিটের বৃষ্টি।ওকে ভিজিয়ে টৈটুম্বর করে দিলো।তুষার দূরে দারিয়ে দেখছে।
বৃষ্টিতে শেষ হতে দোকানিরা নিজেদের গুটিয়ে নেওয়া।জিনিস আবার আগের মতো করে সাজিয়ে নিয়োছে।
,
তুষার ওকে বলল।
“ঠাণ্ডা লাগবে আমরা বাড়ী ফিরে যাই”
পৌষী ঠোট উলটে বাচ্চাদের মতো করে বলল।
“লাগবে না।আর কিছুখন থাকি।আমার যেতে ইচ্ছা করছে না”
ওর আবদার শুনে তুষার না করলো না।নদীর পাসে বসলো।
,
বৃষ্টিতে কাপড় ভিজে গেলো।কিছুক্ষণের মধ্যে সুকিয়ে ও গেলো।বাতাসে।এতো।শিতল হাওয়া নদীর ধারে কেনো থাকে।পৌষী আনমনে বলল।
,
আমি একটা বাড়ী করবো।নদীর ধারে।
শীতল হাওয়ায় রবো তোমার আমার বাহু ডোরে।
আমার সত্যি সত্যি বাড়ী হবে।
তোমার মতো সুন্দর এক শশী হবে।
জোৎষ্মা দিবে রাত দুপুরে।
আমার কাছে পালতোলা এক নৌকা হবে।
ভাসান দিব মাঝ নদীতে।
,
তুষার পৌষীকে বলল
“নৌকা চরবে?”
পৌষী হাসার চেষ্টা করে বলল
“না আমার প্রচুর ভয় হয়।ছোটো বেলা একবার পানিতে পরে গিয়েছিলাম।তখন থেকে।তাই সাঁতার ও শিখিনি”
তুষার বাঁকা দৃষ্টি ফেলে তাকালে ওর দিকে।
মনে হয় বিস্ফোরিত হয়েছে।পোষীর এমন কথায়।
পৌষীর কি করার ছিলো যানে না।
তুষারের চোখে চোখ মিলিয়ে বলল।
“আপনি চাইলে আমি আমি আপনাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে যেতে পারি”
তুষার হাসলো।
“তেমার আমার জন্য কিছুই করতে হবে না।বরঞ্চো আমরা নদীর পার ঘেসে হাটি”
পৌষীর একদম হাটতে ইচ্ছা করছে না যদি আকাশের চাঁদটা হারিয়ে যায়।পরোক্ষনে মনে পরলো।একটু আগে না করাতে অনেকটা আহত হয়েছে।এবার আর না করলো না।
,
তুষারের তর্জনীতে নিজের তর্জনী স্পর্শ করে হাটছি।মৃধু কেপে উঠলাম।কম্পনটা যেনো হৃদয় থেকে শুরু করে পুরু শরীরে ছরিয়ে পরেছে।
বিষাক্ত বিষের মতো।
প্রথম হাত ধটে হাটা।আবস্সো তুষার নিজ থেকে আমার হাত ধরেছে।
কতটা পথ হাটলাম।জানি না।আমার দৃষ্টি।
আকাশের চাঁদের দিকে।কতো কবি সাহিত্যিক এর প্রেমে।পরে আমি ও পরলাম আন মনে।
,
ফুচকা খাচ্ছে।পৌষী।এক দৃষ্টিতে দেখছে ও।
এই যে প্রথম বার ওকে এমন ভাবে না।আগেও দেখেছে।মনের আস মিটিয়ে দেখেছে।
কিন্তু আছে না কোনো জিনিস শেষ হয়েও শেষ হওয়ার নয়।
কিছু পুরোনো জিনিস, পুরোনো হয়েও,পুরোনো নয়।
যে মুগ্ধতা ছরায় শুরু থেজে শেষ পর্যন্ত।
তেমন ও যতবার দেখবে এই দেখার শেষ হবে না।
এমন একটা মেয়ে পৌষী।
,
ফুচকা শেষ করে উঠলো।
তুষার ওর জন্য আরো এক প্লেট ঝাল ঝাল ফুচকা আনবে।সাথে টাকা দিয়ে আসবে তাই লেট হচ্ছে।
একা দাড়ীয়ে পাশে দু কদম হেটে দাড়ালো।
একটু সামনে একদল ছেলে বসে গান গাইছে।ওদের সাথে একটা মেয়েও।
পৌষী এগিয়ে হেলো।হঠাৎ হাত খোপা করা চুল গুলো খুলে গেলো।সেটা ঠিক না করেই।ও গানের আসোরে দাড়ালো একটা ছেলে গান গাইছে।
,
হাসতে দেখো গাইতে দেখো,,
অনেক কথায় মুখোর আমায় দেখো,,
দেখোনা কেউ হাসির শেষে নীরবতা,,
বোঝে না কেউ তো চিনলো,,
বোঝে না আমার ব্যথা,,
চেনার মতো কেউ চিনলো না,,
এই আমাকে,,
,
এতো সুন্দর কন্ঠ ও হয়তো বা জিবনেও শুনেনি।
,
হাসতে দেখো গাইতে দেখো,,
অনেক কথায় মুখোর আমায় দেখো,,
দেখোনা কেউ হাসির শেষে নীরবতা,,
,
দু হাতে তালি বাজিয়ে বললো বাহ বেশ ভালো গান তো আপনি।ওখানে উপস্থিত সব ছেলেরা অবাক হয়ে দেখছে।ছোটো খাটো এক হুরপুরের বিদ্যাধর।
অথবা কোনো পরী বা জিনের বাচ্চা।নীল রঙের জামা না পরে সাদা পরলে আরো মানাতো।
যেই ছেলেটা গান গেয়েছ লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো।
,
পোষী চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল।
“ওই গানটা গান না প্লিজ।”
ছেলেগুলো দের মধ্যে একজন বলল
“কোন গানটা”
“রুপালি গিটার”
ওদের মধ্যে বসা মেয়েটা বলল
“ওকে গাইবে আগে বলো তোমার নাম কি”
“আমার নাম নিশি।
নিশি মানে শিশি।
ভালবাসি শশী।”
সবাই হাসলো তবে ওদের মধ্যে একজনে অবস্থা খুবই খারাপ করে দিয়েছে ও সে হলো যে গাইছিলো।সে প্রথমে গানটা ধরেছিলো পৌষীকে দেখেই।
“এবার তো গান”
“তোমার নাম।আর নামের সারাংশ সব শুনলাম আমাদের সাথে পরিচয় হবে না।”
“না”
সরাসরি না করায় সবাই অবাক হলেও একজন খারাপ ভাবে আহতো হয়েছে।
“কেনো”
“আমার তো ডাল ব্রেন।ফর্মালিটি দেখাতে গিয়ে আপনাদের নাম শুনলাম তাবে লাভ কি।সেই তো ভুলেই যাবো”
সবা ই হোহো করে হেসে দিলো।ওখানে মনে হচ্ছে ছোটো খাটো একটা পার্টি হচ্ছে।
তবে সবার হাসির সাথে একজন তাল মিলাতে পারলো না।সে চুপ করে বসে রইলো।
“ওকে মজা নিতে হবে না।আমি একজনার নাম শুনবো সে হলো যে গান গেয়েছিলো।”
“আমার নাম রেশ”
পৌষী হাসি তে গদগদ হয়ে রেশের গাল টেনে বলল।
“ও আমি শিশি।”
রেশের আনুন্দীত হয়ে।নিঃসপলক তাকিয়ে রইলো।পাশের মেয়েটা খোচা দিয়ে বলল।
“ফর্মালিটি হইলে গান গা”
গিটারের টুং টাং শব্দে গান শুরু হলো ।
রেশ আর পাশে একটা ছেলে।দুজনে মিলে গিটারে সুর তুলছে।
,
এই রুপালী গিটার ফেলে, একদিন
চলে যাবো দূরে, বহু দূরে।
সেদিন চোখের অশ্রু তুমি রেখো,
গোপন করে।
,
পোষী রেশের হাত ধরে বললো।
“আপনি খুব ভালো গান”
,
রেশ মুচকি হাসলো।ওর প্রথম কাউকে দেখে নিজের সম্মতি হারিয়েছে।কেনো জানে না।
আবার হাসছেও কেনো জানে না।তবে হাসতে ভালো লাগছে।এর সাথে কথা বলে।
,
অদভুত ভাবে তাকিয়ে রেশ।চোখের মাতাল করা চউনি।পোষী চোখ ফিরিয়ে নিলো।
অন্য সকলের সাথে অড্ডায় মত্তো।
ও জানে না এই চাউনিতে চোখ মেলালে ওর সর্বনাশ আছে।তবুও এক বার তাকালো।
রেশ তাকিয়ে হা হয়ে দেখছে।হয় তো সে তার এতদিনের উপবাস ভঙ্গের লোক পেয়েছে।
,
তুষার চারো দিকে খুজচ্ছে।
মেয়েটা কিছুই চেনে না হারিয়ে গেলো নাতো।
দুঃশ্চিন্তার দানা মিলছে ওর মনের মধ্যে।
সামনে এগিয়ে যেতেই পোষীকে দেখলো।
এতো হাসি কখনও ওর মুখে দেখেনি ও।
তুষারের সঙ্গেও এমন করে কোনো দিন হাসেনি।
ছেলেদের সাথে দেখে ওর গা জলে যাচ্ছে।
,
“তুমি কোন ক্লাসে পরো”
পৌষী পাশে মেয়েটা প্রশ্নে কিছুখন তাকিয়ে থেকে হাসার চেষ্টা করলো।এমন ভাবে যে ওর হাসি এই শব্দটায় বিলিন হয়ে গেছে।তারপরও শুনো হাসি দিয়ে বলল।
“আমি পড়ি না।”
সকলে হাসি দিয়ে মজা ভেবে উরিয়ে দিয়ে অন্য সকল আড্ডা দিচ্ছে।
,
তুষারের ডাক ওর কানে পোছায়নি।
তাই পিছনে দাড়ীয়ি হালকা হাত রাখলো ওর কাধে।মৃধূ কেপে পিছনে ফিরে হাসি দিলো।
হাসির মানে ও বুজিয়েছে।
সরি।আমার ভুল হয়ে গেছে।
তুষারের লাল লাল চোখ গুলো বলছে।
সরি।মাই ফুট।
,
তুষার বলল,
“পৌষী চলো আমাদের লেট হয়ে গেছে”
মোটা ফ্রেমের চশমা পরা ছেলেটা বলল।
“তোমার নাম পৌষী।মিথ্যা বলেছো”
পৌষী হেসে বলল
“মজা করেছি।সরি আমি পৌষী।তাতে কি?
পৌষী ও তো শিশি”
,
তুষার আর একটা কথাও বলতে না দিয়ে।
পৌষীর হাত টানতে টানতে নিয়ে গেলো।
তুষার এতো শক্ত করে ওর হাত চেপে ধরেছে যে।
ওর হাতের রেশমি চুড়ী গুলো ভেঙে হাতের মধ্যে ঢুকে রক্তাক্ত হচ্ছে।সে দিকে কোনো হুস নেই।
ব্যথায় কয়েক বার পৌষী ওকে বলল।
আমার ব্যথা হচ্ছে ছাড়ুন।
তুষার হাত ছেরে দিয়ে চাপা গলায়।দাঁতে দাঁত চেপে বলল
“আমার টাচে ব্যথা ফিল হয় না।ওই রাস্তার ছেলেদর টাচ এঞ্জয় করো”
বাইকে বসিয়ে দিলো পুরো রাস্তায় একটা কথাও বলেনি পৌষীর সাথে।উলটো।পৌষী ওর কাধে হাত রাখতে সরিয়ে বলল।
“তোর ওই নোংরা হাত দিয়ে আমাকে টাচ করবি না”
পৌষী কোনো মতে শক্ত হয়ে বসে।
চোখ দিয়ে গল গল করে পানি পরছে।
স্প্রিড ব্রেকারের উপর দিয়ে যাওয়ার সময়।
বাধ্য হয়ে ওর কাধে হাত রাখলো।হাত সরিয়ে দিলো বার বার।
মেয়েটা যে বাইকে উঠতে ভয় পায়।বাই স্ট্রাট এর সাথে সাথে তুষারকে খামচে ধরে জেনেও একবার ও টাচ করতে দিলো না।তুষারের রাগ উঠেছে চরম পর্যায়।
,
,
চলবে,,