#চাঁদোয়া_মহল
পর্বঃ২৯
#অত্রি_আকাঙ্ক্ষা
(১৮+ সতর্কতা)
দুর্গম দীর্ঘ রজনী।আম গাছের উঁচু ডালে বসে থাকা নিশিবকের অন্তর্নিহিত ওয়াক…ওয়াক ডাক দেহের লোম জাগিয়ে দিচ্ছে।মন্দ চিন্তায় হৃদয় ব্যাকুল।শরীর নাড়ানোর কোনো উপায় নেই!চন্দ্ররেখার দম আঁটকে আসছে।শারাফের বলিষ্ঠ দেহের নিচে চাপা পড়ে আছে সে।ক্ষণে ক্ষণে এলোপাথাড়ি চুমু বর্ষণ!অনুরাগের সিক্ততার অনুভূতিতে ভেসে যাচ্ছে নরম কায়া।সৌষ্ঠব পৃষ্ঠে রমণীর নখরের চিহ্ন যেন প্রণয় প্রতীক!আবছা আলোয় সম্মুখে থাকা সুপুরুষটির অদৃষ্টে লেগে থাকা স্বেদজল চিকচিক করছে।চন্দ্ররেখার কপালে প্রগাঢ় আশ্লেষে ওষ্ঠ স্পর্শ করলো শারাফ।
-“বলুন না!কি হয়েছে?এমন কেন করছেন?কিসের এতো কাতরতা?আমার যে ভীষণ ভয় করছে।”
শারাফের মুখের উজ্জ্বলতা নিভে গেল।ঘোর লাগা জ্বলজ্বলে নয়ন জোড়াতে আঁধার নেমে এলো।কিঞ্চিৎ ভাবুক মনে হলো তাকে।কোমলাঙ্গ থেকে সরে কুশনে মাথা রাখলো।বা’হাত চন্দ্ররেখার মসৃণ জঠরে।
-“আপনাকে আর ফুপু মাকে কিছুদিনের জন্য একা ছেড়ে দিলে কেমন হয়?”
প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন!রেখার বুকে হাহাকার।চোখ ছলছল করে উঠলো।সেদিন শপিংমলে শারাফকে সে একই কথা বলেছিলো।বলেছি তাকে আর তার মাকে যেন কিছুদিনের জন্য মুক্তি দেয়।কিন্তু সেটা তো রাগের মুখের কথা!সেজন্য রেখা ক্ষমাও চেয়েছে। এই মূহুর্তে শারাফ আগের কথা কি করে টেনে আনতে পারলো?সেদিন সুধা মির্জা আর শারাফ মিলে একটি পোশাকের জন্য হুলুস্থুল কান্ড বাঁধিয়ে দিয়েছিলো।চন্দ্ররেখার এক কথা মায়ের না হয় বয়স হয়েছে!তাই বলে শারাফের ও কি এমন জেদ ধরা সাজে?রেখা নিঃশব্দে কিছু সময় কাঁদলো।শারাফ পলকবিহীন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো।দৃষ্টিতে কি বিষন্ন মুগ্ধতা!
-“আপনি অনেক বদলে গেছেন।”
চন্দ্ররেখার কান্না হয়ত শারাফকে স্পর্শ করতে পারলো।রুক্ষ দু’হাতে মসৃণ বদন খানা তুলে ধরলো।মিনিট পাঁচেক অতিবাহিত হয়ে গেছে।গভীর মনোনয়নে শীতল চোখজোড়া যেন সবটা মুখস্থ করে নিলো শারাফ।অতঃপর রেখার ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিলো। ফিসফিস করে বলল,
-“আমার শত অন্যায়,অজস্র পাপ,অগণিত পরিবর্তন সবটাই আপনার নিমিত্তে।শুধু খেয়াল রাখবেন,আপনার পাঁজরে লেখা আমার নামের কোনো অবস্থান্তর যেন না হয়।”
শারাফের কথা পৃষ্ঠে রেখা এবার কোনো প্রশ্ন করলো না।ননদদের বিদায় দেওয়ার পর থেকেই সে শারাফের পিছু পিছু ঘুরছে।একই প্রশ্ন বারবার করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।অথচ শারাফ নির্লিপ্ত।স্পষ্টত!শারাফ কোনো উত্তর দিবে না।রেখা হতাশার শ্বাস ছাড়লো।অর্ধাঙ্গে নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো।উন্মুক্ত চওড়া বুকের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিলো।শারাফ রেখাকে শক্ত করে চেপে ধরলো।এক দৃষ্টিতে ফলস সিলিং এর দিকে তাকিয়ে রইল।চোখের সাদা অংশ লালচে হয়ে এলো।জাগতিক সবকিছু অলক্ষ্যে টুপ করে এক ফোঁটা নোনতা পানি গড়িয়ে পড়লো।
——
ফোনের ভাইব্রেশনে রেখার ঘুম ভেঙে গেল।মায়ের ফোন দেখে তেমন চমকালো না।ছোট্ট একটা ম্যাসেজ পাঠালো।হোম স্ক্রিনে সময় দেখে নিলো।তিনটা বাজতে দশ মিনিট বাকি।উঠে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এলো।ঘুমন্ত শারাফের ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে একবার ভাবলো, ডাকবে কি?পর মূহুর্তে ভাবলো,দরকার নেই।এমনিতেও মায়ের সাথে শারাফের সম্পর্কটা কেমন যেন ছাড়া ছাড়া।এতো রাতে বাহিরে যাচ্ছে জানলে নির্ঘাত রেগে যাবে।ফিরে এসে না হয় বুঝানো যাবে।এছাড়া মানুষটার শরীরের ওপরে বিগত চারদিন বহু ধকল গিয়েছে।বাড়ির সবার বড় হওয়ায় বিয়ের সমস্ত দায়িত্ব শারাফ আর চন্দ্ররেখার উপরেই ছিলো।রেখা বিছানার দিকে এগিয়ে গেল।শারাফের কপাল বরাবর ঝুঁকলো।তপ্ত ওষ্ঠ ছোঁয়ালো।
———–
শৈত্য প্রবাহের দরুণ রাস্তা কুয়াশায় ঢেকে আছে।গাড়ি চালাচ্ছে রনি।কোনদিকে যাচ্ছে বোঝার উপায় নেই!ইউসুফকে রেখা তার বাবার কাছে রেখে এসেছে,,দেখাশোনা করার জন্য।সুধা মির্জা বেশ উৎফুল্ল।একটু পর পর মাথা ঝাঁকাচ্ছেন।বিড়বিড় করছেন আর অল্প অল্প হাঁসছেন।রেখার দৃষ্টি জানালার বাহিরে।বিশ মিনিটের মাথায় গাড়ি গন্তব্যে পৌঁছতে মা মেয়ে দু’জনই নেমে এলো। গাড়ির বাহিরে পা রাখতে রেখার সারা শরীর শিরশির করে উঠলো।পশম দাঁড়িয়ে গেল।ভুলটা কোথায় বুঝতে পারলো!সুতি সেলোয়ার স্যুটের ওপর পাতলা শাল জড়ানো একদম ঠিক হয় নি।আরো ভারী কিছু নেওয়া দরকার ছিলো!নিজেকে বকতে বকতে সামনের দিকে তাকালো।কুহেলিকা ভেদ করে চওড়া গলি নজরে এলো।রেখা কেঁপে উঠলো।দু’কদম পিছু হটে গেল সে। কয়েক মাস আগের সেই গোডাউন!সেই চিৎকার।আহাজারি।হ্যালুসিনেশন!গোডাউনের বাহিরে পাঁচ ছয় জন লোক দাঁড়িয়ে আছে।রেখা কিছুটা অবাক হলো।এদেরকে সে আগেও দেখেছে।এখানকার স্টাফ এরা।কিন্তু এতোরাতে এখানে কি করছে তারা?বিগত তিন মাস মির্জা ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করলোও।রেখা এদিকে কখনো পা মাড়ায় নি।এ জায়গায় কথা ভাবলেই তা গা কেমন ছমছম করে উঠতো।কিন্তু তারা আজকে এখানে এসেছে কেন?এবার রেখার কিছুটা ভয় হতে লাগলো।সুধা মির্জা মেয়ের দ্বিধা বুঝতে পেরে এগিয়ে এসে হাত শক্ত করে চেপে ধরলেন।যে করেই হোক রেখাকে সবটা বোঝাতেই হবে!উভয়েই পা বাড়ালেন গোডাউনের দিকে।রেখা আওয়াজ করার কোনো সুযোগ পেলো না।সেই দেয়াল!মারকিউরির পরিত্যক্ত গোডাউন!প্লাসটার ক্ষয়ে যাওয়া দেয়ালের নির্দিষ্ট একটি ইটের মাঝে হাত রাখলেন সুধা মির্জা। সাথে সাথে দেয়ালটি এক পাশে সরে গেল।হালকা ভ্যাপসা,সেই সাথে ঝাঁঝালো একটা গন্ধ নাকে ধাক্কা মারলো।রেখা সাথে সাথে চোখ বুঝে নিলো।শরীর শক্ত হয়ে এলো।নড়াচড়ার শক্তি পাচ্ছে না সে।
-“আমি যাবো না।”
সুধা মির্জা জানতেই এমনই কিছু একটা হবে। আলতো করে রেখার থুঁতনি ধরে মুখ উপরে তুললেন।ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বললেন,
-“ওয়াদা করেছিলে তুমি।ভুলে গেলে?মায়ের কথা শুনবে না?”
রেখার চোখ খুললো।এমন মায়াময় স্বর উপেক্ষা করার শক্তি তার ভেতরে একদমই নেই।সম্মোহনী মানুষের ন্যায় মাথা নাড়ালো।ধীরে বলল,
-“শুনবো।”
ভেতরে প্রবেশ করতেই ভাঙাচোরা দেয়ালটি ভেতর থেকে সাথে সাথে বন্ধ হয়ে গেল।ঘুটঘুটে আঁধার।সেকেন্ড পের হতেই পাঁচ ছয়টি লাইট অটোমেটিক জ্বলে উঠলো।সবকিছু দিনের আলোর মতো ফকফকা।কয়েকজনের মৃদু গোঙানির আওয়াজ কানে ভেসে আসলো।রেখার এতো সময় চোখ বন্ধ রেখেছিলো।গোঙানির আওয়াজ কানে পৌঁছতেই সে ফট করে চোখ মেললো।সম্মুখের দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইল।বাহিরে থেকে ছোট মনে হলেও, ভেতর থেকে দ্বিগুণ বড়।হলরুমের ন্যায় বিস্তৃত।অনেকটা ল্যাবের মতো।মাঝে হাঁটার রাস্তা।একপাশে সারি সারি ছোট ছোট সেল।কয়েদিদের জেলের ভেতর যেমন সেলে রাখা হয় ঠিক তেমন দশ বারোটা সেল।পার্থক্য সেলগুলো আকারে কিছুটা ছোট।সেখান থেকে গোঙানির আওয়াজ বেরিয়ে আসছে।বিপরীত পাশে বিশাল বড় একটা টেবিল।তার ওপর বিভিন্ন ধরনের কাচের বোতল ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।কিছু বোতলের ওপর বিপদজনক ও দাহ্য চিহ্ন আঁকা।রেখা বুঝতে পারলো এগুলো বিষাক্ত ক্যামিকেল।কিছুটা একটা হতে চলেছে এই ভেবে,নিজেকে মানসিক ভাবে তৈরি করে নিলো।কাঁপা কাঁপা পায়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেল।মিনিট দুই এক সময় লাগলো।প্রথম সেলের সামনে দাঁড়াতেই তার শিরদাঁড়ায় অদ্ভুত শীতলতা গ্রাস করলো।গলা শুকিয়ে গেলো।নাকের ভেতর বোটকা গন্ধ প্রবেশ করতে গা গুলিয়ে উঠলো।ভেতরর আবছা আলোয় দু কোণায় দুটো ছোট খাট নজরে এলো।কোণায় ছোট দু’জন লোক খাটের ওপরে শুয়ে কাতরাচ্ছে।দু’টি বিছানার মাঝে ছোট টয়লেট।মূলত সেই বিশ্রি গন্ধটা সেখান থেকেই আসছে।রেখার বমি এসে গেল।দুজনের এক হাত দেয়ালের সাথে বাঁধা।শরীরের জায়গায় জায়গায় চামড়া খসে গেছে।ত্বক ফ্যাকাশে।পরনে ধূলা মলিন সাদা পোশাক।চন্দ্ররেখার হৃদ স্পন্দন বেড়ে গেলো।মুখ রক্তশূণ্য হয়ে গেল।সে ছিটকে দূরে সরে গেল।আশেপাশে তাকাল।সুধা মির্জা টেবিলের পাশে থাকা চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছেন।এক দৃষ্টিতে রেখার দিকে তাকিয়ে আছেন।রেখা ঢোক গিলে গলা ভিজিয়ে নিলো।এখানে কি হচ্ছে!বা এরা কারা!!বাহির থেকে ভাঙা হলেও ভেতরে এমন উন্নত কেন?এদের কেনই বা আঁটকে রাখা হয়েছে!রেখা কোনো ধরনের কোনো প্রশ্ন করলো।তার ব্রেন যেন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। ভয়ের জায়গায় মনে একগাদা কৌতুহল জন্ম দিয়েছে।দুরুদুরু বুক নিয়ে সামনের সেলের দিকে এগিয়ে গেল।আগের তুলনায় এই সেলটা কিছুটা বড় সেখানে তিনজন পুরুষ। তাদেরও একই অবস্থা।ময়লা রোগাটে শরীর!রেখা কারো বয়সই অনুমান করতে পারলো না।এদের মধ্যে একজন উঠে বসলো।উন্মাদের মতো মাথা ঝাঁকালো!নিজের শরীরে এক হাতে এলোমেলো চড় মারতে লাগলো।রেখা পিছিয়ে গেল।চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিলো।তৃতীয় সেলের কাছে এলো।দুজন মহিলা এর মধ্যে একজনকে রেখা চিনতে পারলো।এই মহিলার স্বামীকে প্রথম দিন আঘাত করেছিলো।মহিলার নাক ও ঠোঁটের মাঝামাঝি জায়গায় বেশখানিকটা চামড়া উঠে সাদা অংশ দেখা যাচ্ছে।হাতে পায়ে অজস্র ঘা!জামা বুকের পাশ থেকে ছিড়ে গেছে!পেটে গোল গোল লাল গুটি!মলিন পায়জামা ময়লা বিছানার এক কোণায় পড়ে আছে।স্পর্শকাতর স্থান দৃশ্যমান।
আচমকা রেখা উল্টো দিকে ছুটতে শুরু করলো।বাকি কারাগার গুলো দেখার প্রয়োজন মনে করলো না।যে করেই হোক তাকে বের হতে হবে!গোডাউনের বন্ধ দেয়ালের কাছে যেয়ে ধাক্কাতে লাগলো।হাতড়ে হাতড়ে বের হওয়ার রাস্তা খুঁজছে সে।ভীষণ অসহায় লাগছে!শারাফ কেমন আসছে না!রাস্তা খুঁজে না পেয়ে এক পর্যায়ে কেঁদে দিলো সে।দেয়াল ঘেঁষে মেঝেতে বসে পড়লো।হাঁটুর উপর মুখ গুঁজে রইলো।ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলো।সুধা মির্জা নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে সবকিছু অবলোকন করলেন।বেশ কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিকভাবে উঠে দাঁড়ালেন।চন্দ্ররেখার সামনে যেয়ে হাঁটুর উপর ভর দিয়ে বসলেন।মাথার চুলে ধীরে ধীরে হাত বুলিয়ে দিলেন।রেখা কেঁপে উঠলো। সুধা মির্জা হুট করে বাহু ধরে রেখাকে টেনে তুললেন।জোরে টেনে তোলায় রেখা বাহুতে ভীষণ ব্যথা পেল।মুখ থেকে অস্ফুট শব্দ বের হলো!সুধা মির্জা রহস্যজনক ভাবে হাসলেন।রেখার কষ্টে যেন তিনি আনন্দ পেলেন।আবার কি মনে করে আগুন চোখে হিসহিসিয়ে বললেন,
-“এতোটুকুতেই ভয় পেয়ে গেলে?একটু পর যখন সবটা খোলাসা হবে তখন কি করবে তুমি?আমার মেয়ে তুমি।নিধি মির্জার মেয়ে!এতো সহজে ভেঙে পড়ে না, সোনা।”
চন্দ্ররেখার বড়ো বড়ো চোখে তাকিয়ে রইল।তার মা এমন অপ্রকৃতস্থের ন্যায় আচরণ করছে কেন!এতো অস্বাভাবিক পরিবর্তন!ভয়ের মাত্রা বেড়ে গেলো।রেখা কিছু বলতে পারলো না।তার গলায় কাছে কান্নারা দলা পাকিয়ে আছে!একটা দৃশ্য চোখে পড়তেই স্তব্ধ হয়ে গেলো।গোডাউনের শেষ প্রান্তের একটি দেয়াল অল্প একটু সরে গেল।সেখানে থেকে বজলু বের হয়ে এলো!পিছনে একজন বিধ্বস্ত নারী!যার দু’হাত দড়ি দিয়ে বাঁধা।দড়ির এক প্রান্ত বজলুর হাতে।এলোমেলো চুল মহিলাটির মুখের এক পাশ ঢেকে রেখেছে।গায়ের জামাটাও বেশ ময়লা।তারা যতোই কাছে আসতে লাগলো,রেখার হৃদয়ের স্পন্দনের গতি বেড়ে গেলো।সে নিজেকে ছুটানোর চেষ্টা করলো।সুধা মির্জা তার বাহু শক্ত করে আঁকড়ে ধরে আছে।টেনে নিয়ে মহিলাটির সামনে রেখাকে দাঁড় করালেন।ডান হাতের তর্জনী মহিলার দিকে তাঁক করে চিৎকার করে বললেন,
-“এই যে দেখছো একে?চিনেছো এই বেইমানকে?তুমি কি করে চিনবে।তুমি চিনবে কেবল আমাকে!তোমার মাকে।তাই না বলো?”
সুধা মির্জার শেষ কথাটি কেমন বাচ্চাদের মতো শোনা গেল।চন্দ্ররেখা ভয়ে আড়ষ্ট!কেঁপে কেঁপে শুধু মাথা নাড়ালো।বজলু একেবারেই নির্বিকার।যেন সে কিছুই দেখছে না।বজলুর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নারীটি ধপ করে নিচে বসে পড়লো।
রেখার চোখ থেকে নোনতা পানির ধারা টপটপ করে গড়িয়ে পড়ছে।চন্দ্ররেখার সম্মতি দেখে সুধা মির্জা অনেকটা শান্ত হয়ে এলেন।রেখাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে যেয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন। নিজের মুখে হাত বোলালেন।মৃদুস্বরে নিজেকে কিছু বললেন।তারপর রেখার কাছে এসে ফিসফিস করে বললেন,
-“কাউকে বলবে না কিন্তু?কাউকে না।সুধার কথা কাউকে বলবে না।”
চন্দ্ররেখা বুঝতে পারলো না।তাই জিজ্ঞাসাসূচক চোখে তাকিয়ে রইল কেবল।
-“বুঝো নি,তাই তো!আচ্ছা আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি।এ হলো সুধা!পাগল সুধা আর আমি হলাম নিধি।সকলের কাছে আমি সুধা,এ নিধি।”
হু হা শব্দ করে ভয়ংকর ভাবে হেঁসে উঠলেন সুধা মির্জা উরফে নিধি।তারপর ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি নিয়ে বিড়বিড় করে বললেন
-“পাগল!পাগল!পঁচিশ বছরে এমন খেলা খেলেছি,সত্যিটা কেউই ধরতে পারে নি।কপালের গর্ত লেজার করে ঢেকে ফেলেছি।সবাই বোকা।”
চন্দ্ররেখার সামনে থাকা বোধহীন মানবীটির দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।হবহু একই আকৃতির দুজন নারী!দুজনই চন্দ্ররেখার মা!রেখার মনে হলো তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে।চোখের জল থেমে গেছে।পুরো জীবন বৃথা মনে হলো!গত কয়েকমাসে যাকে মা বলে চিনে এসেছে,যাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভালোবেসে,ভরসা করেছে সে নিজেকে এভাবে আড়াল করে গেল।এতো এতো মিথ্যা?এতো রহস্যের বেড়াজালে রেখার দমবন্ধ হয়ে আসতে লাগলো।এর মানে সেদিন তার নানী নিধি বলতে,সুধা মির্জাকে বুঝিয়েছে?কিন্তু চন্দ্ররেখা কার সন্তান?কার পেটে তার জন্ম!সুধা নাকি নিধি!!আর এই মানুষগুলোই বা কারা?চন্দ্ররেখা দু’হাতে চোখ মুছে নিলো।নিজের মনে সাহস জাগালো।সবটা জানতে হলে আগে তার কথিত মাকে শান্ত করতে হবে।সুধা উরফে নিধি মির্জার ডান হাত গভীরভাবে জড়িয়ে ধরলো রেখা।আগুন ঝরা রূপ রেখার হিমশীতল হাতে ছোঁয়ায় যেন ঠান্ডা হয়ে এলো!
-“আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবে মা?আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।তুমি আমাকে একবার বুঝি বলো!আমি সবকিছু করে দিবো।”
রেখার নমনীয়তা তার মাকে হয়ত স্পর্শ করলো!বাচ্চাদের মতো মাথা নাড়ালেন নিধি মির্জা। ক্ষীণ কন্ঠে বললেন,
-“সব বলবো!সব।আমাকে ভুল বুঝবে না বলো?আমার সাথে থাকবে!আমাকে ছেড়ে যাবে না তো?সুধার কাছে তো একদমই যাবে না?”
চন্দ্ররেখা কান্না চেপে মৃদু হাঁসলো।তার মাকে আশ্বস্ত করলো।
চলবে
আপনারা গল্প পড়েন কিন্তু রিয়েক্ট করেন না।ভালো লাগে কি লাগে না,সেটাও বলেন না!আমি কি লিখা অফ করে দিবো?😔