চাদোঁয়া মহল পর্ব -৩৩ ও শেষ

#চাঁদোয়া_মহল
পর্বঃ৩৩(শেষ পর্ব)
#অত্রি_আকাঙ্ক্ষা
পুলিশ স্টেশনের ওয়েটিং রুমে বসে আছেন হামিদ মির্জা ও মোহিনী মির্জা।তাদের সাথে আরিফও উপস্থিত। এখানে এসেছেন ইতিমধ্যে দু’ঘন্টা হয়ে গেছে।মোহিনী মির্জা ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদছেন।ছেলের চিন্তায় তিনি দিশেহারা।এদিকে ওপরে ওপরে নিজেকে কঠিন রাখলেও,ভেতরে ভেতরে হামিদ মির্জা ভীষণ অস্থির হয়ে আছেন।একটি মাত্র ছেলে তার! বোনের কথামতো অল্প বয়সেই ছেলেকে দেশের বাহিরে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।সেই থেকে তাদের মাঝে দূরত্ব!আট দশটা সন্তানের মতো শারাফ কখনোই মুখ ফুটে তার সাথে কথা বলে নি।নিজের মতো নিজেকে গড়ে তুলেছেন।হামিদ মির্জা খুব ভালো করেই জানেন।আর যাই হোক,তার ছেলে অন্তত কাউকে খুন করতে পারে না।কিছু জিনিস আছে,যা তাদের অদেখা!ভাবলেন বোনকে একবার ফোন দিবেন।সাব ইন্সপেক্টর আকরাম তাকে বার বার আশ্বাস দিচ্ছে।শারাফ বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি।জানাজানি হওয়ার কারণে তাকে এক মাসের মতো কারাগারে থাকতে হবে।এর মধ্যে একটা প্লাস পয়েন্ট হলো, ভিকটিমের পরিবার থেকে এখন পর্যন্ত কেউ মামলা করে নি।হামিদ মির্জা ফোন বেজে উঠলো।হাফিজ মির্জার কল!বেশ বিরক্ত হয়েই ফোন রিসিভ করলেন।

-হ্যালো!

কিছু সময় নিরবতা।পুরো কথা শোনার আগের হামিদ মির্জার হাত থেকে ফোন পড়ে গেল।একসাথে এতো বিপদ!ধপ করে বসে পড়লেন তিনি।স্বামীর শুকনো হতভম্ব মুখের দিকে তাকিয়ে মোহিনী মির্জার বুক কেঁপে উঠলো।

———–

খরস্রোতা নদীর বুকে জনমানবহীন এক চর।গাছগাছালির অন্ত নেই।যেদিকে দু’চোখ যায় পানি আর পানি।চরের এক কিনারা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে রেখা।একটু এদিক সেদিক হলে সোজা পানিতে!পা জোড়া আঁটকে আছে তার।পিছু হটাবার বল পাচ্ছে না।ভীতসন্ত্রস্ত ফ্যাকাশে মুখ!মৃদু স্বরে ডেকে উঠলো,

-“বাবা!শারাফ!”

না!কোথাও কেউ নেই!জেগে ওঠা চর একটু একটু করে পানির তলে হারিয়ে যাচ্ছে।তীরের খোঁজে চারপাশে তাকাচ্ছে রেখা।নিজেকে ভীষণ একা মনে হচ্ছে।মূহুর্তে ধূসর বর্ণের আকাশে আলোর ঝলকানি খেলে গেল।নদীর বুকে ফুঁড়ে ঝড়ো হাওয়া ধেঁয়ে আসছে।পা ফসকে স্রোতস্বিনীর উত্তাল সলিলে আঁছড়ে পড়লো চন্দ্ররেখা।তলিয়ে যেতে লাগলো গভীর থেকে আরো গভীরে।নাক মুখ দিয়ে দূর্গন্ধ যুক্ত পানি ঢুকছে। দম আঁটকে আসছে।নিভু নিভু চোখ জোড়া খুলে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা! আচমকা বলিষ্ঠ একজোড়া হাত রেখা দিকে এগিয়ে এগিয়ে এলো।রেখা আঁকড়ে ধরতে চাইলো।ততোক্ষণে বেশ দেরি হয়ে গেল।হাত দুটো আস্তে আস্তে দূরে চলে যাচ্ছে।পানির অতলে মিইয়ে যেতেই রেখার ঘুম ভেঙে গেল।ধড়ফড়িয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো। আশেপাশে তাকিয়ে নিজের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করলো।চিরচেনা সেই কক্ষ!আনাচে-কানাচে পৌষের মৃদু হাওয়া হুড়োহুড়ি করেছে।কামরা জুড়ে পুরুষালী গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে।কিছু আবছা আবছা স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠতেই, রেখার হৃৎপিন্ডের গতিবেগ বেড়ে গেল।নিজেকে পাগল পাগল লাগছে!ছলছল নয়নে এদিক ওদিক তাকিয়ে বালিশের পাশে অযত্নে পড়ে থাকা মোবাইল হাতে তুলে নিলো।পাওয়ার বাটন অন করতে,স্ক্রিনে দুটো ম্যাসেজ ভেসে উঠলো।চিরচেনা নাম্বার থেকে সকাল ছয়টা দিকে ম্যাসেজ দু’টো এসেছে।কাল রাতে ভুলবশত ফোন রেখেই চলে গিয়েছিলো।নিজের ভুলের কারণে,রেখার নিজের বা’গালে কষে চড় মারলো।কাঁপা কাপা হাতে ম্যাসেজ ওপেন করলো।চোখ থেকে টপটপ পানি পড়ছে।

আমার একান্ত চন্দ্রপ্সরা,
“আজকে একটু বেশি বেশি কাঁদবেন…কেমন?আমি দেখতে না পেলেও,ঠিকঠাক অনুভব করতে পারবো।আপনি কাঁদলে আজকাল আমার কেন যেনো কষ্ট হয় না।ভেতরটা সুখ সুখ লাগে।আপনার মনে আমার জন্য অগাধ ভালোবাসা আছে।সেই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আপনার চোখে নোনতা পানিকে আমি বহু আগে গ্রহণ করে নিয়েছি।ইতিমধ্যে অনেক কিছুই জেনেছেন হয়তো?এখন যেই কথাগুলো বলবো, এগুলো সরাসরিও বলা যেতো।কিন্তু আপনাকে সামনে রেখে…..আমার জন্য একেবারেই অসম্ভব।ছোট থেকেই দেখতাম ফুপুমা সবার সাথে খুব কঠোর আচরণ করত।এরপর আড়ালে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদত।তার মধ্যে এক ধরনের অনুশোচনা কাজ করত।আমাকে দূরে দূরে ঠেলে দিলেও আমি তার কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করতাম।তখন আমার চোখে তিনি একজন মহীয়সী নারী!দূরদর্শীতা!সংগ্রামী!
আমার তখন পনেরো বছর।প্রায় দেখতাম বিড়বিড় করে কারো সাথে কথা বলতেন তিনি।অথচ সেখানে কেউ নেই।কখনো বা জোরে জোরে হাঁসতেন,কখনো বা কাঁদতেন,কখনো বা মনে প্রাণে কল্পনার মানুষটিকে ডিফেন্ড করার চেষ্টা করতেন।সবার সাথে তার আকাশ পাতাল দূরত্ব! ফুপুমাকে সকলে ভয় পেলেও আমি ভয় পেতাম না। শ্রদ্ধা করতাম!এখনো করি।তার সাথে প্রায় সময় অফিস যাওয়া বায়না ধরতাম।নিত্যদিনের মতো সেদিনও আমি তার সাথে ছিলাম।আমাকে সাথে নিয়েই ফুপুমা সেই ভাঙা গোডাউনে প্রবেশ করলো।দেখলাম বজলু এক লোককে বেঁধে রেখেছে।তাদের কথাবার্তায় বুঝতে পারলাম,লোকটি বাসে থাকা মেয়েদের সাথে অসভ্যতামি করে।ফুপুুমা আচমকা একটা হাতুড়ি দিয়ে লোকটির হাতের আঙুলে আঘাত করলো।লোকটি চিৎকার দেয়ালে প্রতিধ্বনিত্ব হতে লাগলো।ফুপুমা নিজেও ভয় পেয়ে গেলেন।দু’হাতে মুখ চেপে কেঁদে উঠলেন।এক প্রকার ঘোরের মাঝে তিনি এ কাজটি করে বসেন।হুশ আসতে ভুল বুঝতে পারেন। অতপর দেয়ালের দিকে তাকিয়ে হাত জোড় করে বলতে লাগলেন,

-“বাবা!আমি আর কাঁদবো না।আমি পারবো,বাবা।আরেকটা সুযোগ দেও?তুমি যেও না প্লিজ।”

আমি বাড়ির সবাইকে সেই ঘটনা বলতে চাইলাম।ফুপুমা বাঁধা দিলেন।বাবা আর চাচা বেশির ভাগ সময় শহরেই থাকতেন।তাদের এসব বিষয়ে তেমন মাথা ব্যথা ছিলো না।সেদিনের পর থেকে ফুপুুমায়ের মধ্যে একটা সাহস এসে গেলো।কেউ কোনো অন্যায় করলে তাদের চুপিসারে সেই গোডাউনে নিয়ে আসতেন।সপ্তাহ খানেক আঁটকে রেখে টর্চার করতেন।আমাদের প্রতিপত্তির জন্য সেসব মানুষ সহজে মুখ খুলতো না।এছাড়া বিনা দোষে তারা কেউ শাস্তিও পেতো না।এর মধ্যে তিন বছর কেটে যায়।আঠারো বছর বয়স আমার!সবই বুঝতে পারতাম।ফুপুমা যে মানসিকভাবে অসুস্থ সেটা আমি চট করেই বুঝতে পারলাম।তাকে নিয়ে ডাক্তারেরর কথা বললে, তিনি বেঁকে বসেন।তার ধারণা আমি তার কাজে বাগড়া দিচ্ছি।আমাকে সেই বছর দেশের বাহিরে পাঠিয়ে দেওয়া হলো।তখন আরিফ মা-বাবা হারা!ফুপুমা আরিফকে নিয়ে এলেন চাঁদোয়া মহলে।দেশের বাহিরে থেকেও আরিফের মাধ্যমে সবখবর পেতাম।বাবা,চাচাকে দুএকবার বলার চেষ্টাও করলাম।তারা আমার কথা শুনলো না।ছোট মনে করে এড়িয়ে গেল।মনের মাঝে অভিমান পুষে দশ বছর দেশের বাহিরে কাটিয়ে দিলাম। দেশের এসে সবকিছু জেনেও না জানার ভান করে থাকলাম।ফুপুমাকে ইচ্ছে করে প্রশ্ন করতাম,যাতে তিনি নিজের মানসিক অবস্থার বিষয়টি স্বীকার করেন।কিন্তু বরাবরের মতোই ব্যর্থ হতাম।দু’মাস আগে ফুপুমায়ের মানসিক রোগের বিষয়টি ডাক্তার শামীম সাখাওয়াতের সাথে আলোচনার মাধ্যমে পুরোপুরি সিউর হলাম।আর তখনই সুধা মাকে আঁটকে রাখার খবরটি জানতে পারলাম।

কৈশোর কাল থেকে ফুপুমা স্কিটসোফ্রিনিয়া নামক মনোব্যাধিতে ভুগছেন। তিনি বহুবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছেন।অডিটরি হ্যালুসিনেশনের কারণে দাদাভাইকে প্রায় সময় কল্পনা করে বসেন।আমরা যা দেখতে বা শুনতে পাই না।তিনি সেটা শুনতেও দেখতে পান।আপনার জন্মকে ঘিরে প্রায় পাঁচ বছর তিনি বেশ সুস্থই ছিলেন।এরপর আপনার বাবা আপনাকে দূরে সরিয়ে দিলে তার মানসিক বিপর্যয় ঘটে।আপনি হয়ত জানেন আমার দাদা নিজেও মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন।জেনেটিক কারণে ফুপুমা নিজেও সেই রোগের ভুক্তভোগী।সবকিছু মিলিয়ে তার মানসিক অবস্থার দিনদিন অবনতি ঘটে।গত দশ বছরে হিংস্রতার পরিমান কয়েকগুণ বেড়ে যায়।নিজের ব্রেইন দ্বারা নিজেকে কমান্ড করেন।অন্যায়কারীদের চিহ্নিত করে তাদের শাস্তি দেন। বিগত কয়েকমাসে আমি বহুবার বুঝিয়েছি।কিন্তু তিনি নিজ সিদ্ধান্তে অটল।ভেবেছিলাম আপনাকে কাছে পেলে হয়ত তার মনোভাবের পরিবর্তন হবে।কিন্তু আফসোস!কোনোভাবেই বন্দীদের তিনি মুক্ত করবেন না।এমনকি তার অবচেতন মস্তিষ্ক তাকে সারোয়ারকে আঘাত করতে বাধ্য করে।অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে সারোয়ারের মৃত্যু ঘটে।আপনি হয়ত ভাবছেন আমি অহেতুক নিজের ঘাড়ে সব দোষ চাপিয়ে নিয়েছি।বিগত বছরগুলোর মতো সমস্ত ঘটনা চেপে যেতে পারতাম।কিন্তু সবকিছুর একটা কনক্লুশন থাকে।গোডাউন উচ্ছেদের উপসংহারে না হয় আমিই থাকলাম!কীভাবে জানেন?
ফুপুমা আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসে।আপনার কষ্ট তিনি একেবারেই সহ্য করতে পারেন না।এই যে আপনি আমার বিরহে আতর্নাদ করছে।ফুপুমায়ের এই আতর্নাদ সইতে পারার ক্ষমতা নেই!আপনার দিকে তাকিয়ে তার এতো বছরের ভ্রম ভেঙে যাবে।হয়ত তিনি মানসিকভাবে কিছুটা হলেও স্ট্যাবল হওয়ার চেষ্টা করবেন।ভাগ্য সহায়ক হলে তিনি নরমাল লাইফ লিড করতেও পারেন।”

প্রথম ম্যাসেজটি পড়া শেষ হতেই চন্দ্ররেখা হাসফাস করতে লাগলো।কান্নার দমকে তার মুখ লাল হয়ে গেছে।চোখের পানিতে মোবাইলের স্ক্রিন ভিজে গেছে।মুখ থুবড়ে বিছানায় পড়ে গেল সে।হাত কাঁপছে।নিজের ভাগ্যের ওপরে ভীষণ করুণা হচ্ছে।বাবা,মা,স্বামী প্রতিটি মানুষ তার থেকে দূরে সরে গেছে।রেখা বিছানায় শুয়ে চুল টেনে ধরলো। মাথা কুটতে লাগলো।নিজেকে তার এই মূহুর্তে অলুক্ষুণে মনে হচ্ছে।অভিশপ্ত সে,তার সংস্পর্শে সব ধ্বংস হয়ে যায়। এমতাবস্থায় নিধি মির্জা হন্তদন্ত হয়ে কামরায় প্রবেশ করলেন।রেখা তার উপস্থিতি টের পেল না।বিছানায় পড়ে রইলো।একটু আগে বজলুর কাছ থেকে সম্পূর্ণ ঘটনা জানতে পেরেছেন নিধি মির্জা।দু’দিন আগে সারোয়ারকে রাগের বশে মাথা আঘাত করেছিলেন তিনি।নিজ উদ্যোগে হসপিটালে এডমিটও করিয়েছিলেন।ডক্টর বলেছিলো সারোয়ার কোমায় চলে গেছে। কিন্তু গতকাল মৃত্যুর ঠিক এক ঘন্টা পূর্বে চৈতন্য ফিরে পেলে,পুলিশ ডেকে নিধি মির্জার বিরুদ্ধে জবানবন্দি দেয় সে।কিন্তু শারাফ কৌশলে সবকিছুর দায়ভার নিজের ওপরে নিয়ে নেয়।সাব ইন্সপেক্টর আকরাম সেই খবর দিতে নিধি মির্জাকে ফোনও করেছিলেন।জিমি,সিমির বিয়ের ব্যস্ততায় নিধি মির্জা সেই ফোনও ধরতে পারেন নি।মেয়ের অবস্থা দেখে তার বুক ধক করে উঠলো।এসব কিছুর জন্য কেবল তিনিই দ্বায়ী!দম বন্ধ লাগলে তার।এগিয়ে এসে রেখা জড়িয়ে ধরতে চাইলেন।

-“ঘৃণা করি আমি,ঘৃণা করি।”

রেখা বিছানায় উপুড় হয়ে চিৎকার করে উঠলো।নিধি মির্জার পা থেমে গেল।বুকে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হলো।ঘৃণা শব্দটি তার হৃদয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে।ধরেই নিলে রেখা তার উদ্দেশ্য কথাটি বলেছে।আস্তে আস্তে পিছু হটে গেলেন।রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন।নিধি মির্জা বেরিয়ে যেতে রেখা উঠে বসলো।মোবাইল হাতে নিয়ে দ্বিতীয় ম্যাসেজটি ওপেন করলো।

“ভাবছেন হয়ত ম্যাসেজের বদলে চিরকুট কেন দেই নি আপনাকে?স্বামী হিসেবে আপনাকে প্রথম একটা আদেশ করলাম।ম্যাসেজ দুটো পড়া শেষ হতেই সাথে সাথে ডিলেট করে দিবেন। ফুপুমাকে একদমই ভুল বুঝবেন না।তিনি অসুস্থ। সবকিছু অজান্তেই করেছেন।তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ডক্টর দেখবেন। আর রইলো পরিবারের মানুষের কথা?আরিফ তাদের সামলে নিবে।সেই ব্যবস্থা আমি করেই রেখেছি।গোডাউনের ব্যাপারেও কেউ জানবে না।সেই সাথে বন্দি মানুষদের আ্যাসাইলামে পাঠানোর ব্যবস্থাও করে দিয়েছি।তারা সকলে মানসিকভাবে অসুস্থ।দে নিড ট্রিটমেন্ট!
সুধা মাকেও তাদের সাথে পাঠিয়েছি।তাকে দেখতে ইচ্ছে করলে,আরিফকে বলবেন,তাহলেই হবে।একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন বাড়ির কেউ বা বাহিরের কেউ যাতে গোডাউনের ও সুধা মায়ের বিষয়টি জানতে না পারে।ঘুণাক্ষরেও কেউ যেন টের না পায়!এতো বছরের গড়ে তোলা মির্জা ইন্ডাস্ট্রি মূহুর্তেই ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।সেই সাথে ফুপুমায়ের পরিশ্রমও নিঃশেষ হয়ে যাবে।ইন্সপেক্টর মশিউর রহমানের সাথে আমার সবকিছু নিয়ে আগেই ডিল হয়েছে।তিনি এসবের কোনো খবরই বাহিরে লিক করবেন না।বন্দিদের পরিবারকেও সামলে নিবেন।আর একটা কথা,আপনাকে আমি একটা মিথ্যা বলেছি।গতকাল রাতে আপনি যেই কাগজে সই করেছেন,সেখানে ভিন্ন কিছু লিখা ছিলো।সেই গোডাউন আপনারা সজ্ঞানে বহু আগেই আমার নামে করে দিয়েছেন।এর সাথে আপনারা কেউ যুক্ত নন।আপনি হয়ত ভাবছেন আমি কেন এসব করছি!এসবের মাঝে আমার প্রোফিটটা কোথায়?আপনার খুশি আমার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান।সেই সাথে ফুপুমা এ বয়সে কষ্ট পাবে!আমার পক্ষে তা চেয়ে দেখা সম্ভব নয়।ফুপুমাকে গ্রেফতার করা হলে আপনিও সহ্য করতে পারবেন না।এছাড়া ফুপুমাকে প্রত্যক্ষভাবে দোষী মনে হলেও পরোক্ষভাবে তিনি নির্দোষ। বহুকাল যাবত নিজের একটি দুরারোগ্য অসুখ বয়ে বেড়াচ্ছেন।জীবনের দীর্ঘ সময় তিনি একাকী কাটিয়েছেন। আপনাকে এ মূহুর্তে তার পাশে ভীষণ ভাবে প্রয়োজন।সেই সাথে কিন্তু আমার যখন অপেক্ষা করতে হবে!আর একটা অনুরোধ আমাকে দেখার জন্য পুলিশ স্টেশনে কখনোই আসবেন না।আপনার সামনে আমি নিজেকে সামলাতে পারবো না। অনেক কিছু বলেছি,এবার আপনার কথা কিছু বলি!আমার কিছু কনফেশন করার আছে।ছোট থেকেই ফুপুুমায়ের দৃঢ়তা আমাকে সব সময় বেশ আকৃষ্ট করতো।দু’বছর পূর্বে যখন প্রথম আপনার ছবি দেখলাম।ধরেই নিয়েছিলাম,আপনি ফুপুমায়ের প্রতিচ্ছবি!তার মতো দৃঢ়,স্পষ্টভাষী,প্রতিবাদী।রেস্টুরেন্টে সরাসরি দেখে আপনার বাহ্যিক রূপেতে আকৃষ্ট হয়ে পড়লাম।ভীতু,সরলমনা, মায়াবী মেয়েটির নিকট মনের পাশাপাশি আমার সমস্ত সত্তা লিখে দিলাম।এটুকু সময়ের দেখায় ভালোবেসে ফেললাম।আপনার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়েও করে নিলাম।কিন্তু আফসোস!চার মাসের সংসারে আপনার মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দটি শুনতে পেলাম না।চন্দ্রপ্সরা জানেন কি!আপনি ভীষণ সরল।আপনার এই সরলতা আমাকে কাবু করেছে।আমার একান্ত অনুরোধ এই সরলতাটুকু শুধুই আমার জন্য তোলা রাখুন।দুনিয়াকে এবার না হয় কঠোরতার দর্শন করান!নিজেকে দৃঢ়তার এক নতুন রূপে তৈরি করুন।আজ থেকে আপনার একান্ত সংগ্রাম শুরু। আমি জানি আপনি পারবেন।নিধি মির্জার মেয়ে এতো সহজে হার মানে না।
আমার প্রতি আপনার মনে অনুরাগ আছে। ভালোবাসা আছে।যা নিত্য গভীর থেকে গভীরত হচ্ছে!এবং আমি তা অনুভব করি।তবুও এই নির্বোধ হৃদয় যে মানতে চায় না!আপনার মুখনিঃসৃত প্রণয়ের বাণী শুনতে না পারা আক্ষেপে প্রতিনিয়ন হৃস্পন্দনের ছন্দপতন ঘটে।আমি আকুল হয়ে……?

–“বড়মা!”

লাইলির চিৎকারে চন্দ্ররেখার হাত থেকে ফোনটি পড়ে গেল।বাকি ম্যাসেজটুকু আর পড়া হলো না।কিছু না ভেবেই ছুটে গেল সে।সিঁড়ির কাছে যেতেই থমকে দাঁড়ালো চন্দ্ররেখা।পর মূহুর্তে চিৎকার করে উঠলো,

-“মা।”

সিঁড়ির গোড়ায় পড়ে আছেন নিধি মির্জা।সে সময় রেখার কক্ষ থেকে বেরিয়ে তড়িঘড়ি করে নিচে নামতে যেয়ে পা ফসকে সিঁড়ি থেকে পড়ে যান।লাইলি এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে।দোয়া মির্জা মেয়ের মাথা নিজের কোলে তুলে নিয়েছেন।ভাঁজ পড়া শুকনো হাতে কপাল চেপে ধরে রেখেছেন থেকে রক্ত ঝরছে।সেই সাথে তার চোখ থেকে অবিরাম পানি পড়ছে।কার্পেট রক্তে ভিজে যাচ্ছে। চোখ বুজে আছেন নিধি মির্জা। হয়ত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন।রেখার চিৎকারে নওশিন, লুবনা,ইউসুফ, তৃণা মির্জা ছুটে এলেন।সকলের স্তম্ভিত নজর নিধি মির্জার দিকে আঁটকে গেছে।

———-

-“চন্দ্রপ্রভা,সাবধানে!পড়ে যাবে সোনা।”

সাদা লাল রঙের মিশেলের ফ্রক পরিহিত একটি বাচ্চা বাগানের এদিক সেদিক ছুটছে।ছোটখাটো ফুলো ফুলো দেহে রোদের আলো পড়তে কেমন ঝলমলিয়ে উঠছে।গৌরবর্ণে পাতলা চামড়ার যেখানে যেখানে সূর্যের তাপ লাগছে,সেখানটা লাল হয়ে গেছে।ছোট ছোট চুলগুলো কপালের ওপরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।স্নিগ্ধতার রাজকুমারী! মেয়েটি কয়েক সেকেন্ডের জন্য পেছনে ফিরলো।দৌড় জারি রেখে মায়ের দিকে তাকিয়ে জীভ বের করলো।যার অর্থ সে এসব কোনোকিছুর তোয়াক্কা করে না।পড়ে গেলে পড়ে যাবে!দু’তলার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বাচ্চাটির মা উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছে।প্রভা সামনের দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হেঁসে উঠলো।কিছু দূর যেতেই মাঝবয়সী এক নারীর কোলে আছড়ে পড়লো।কানে কানে ফিসফিস করে কিছু বললো।

-“দাদু,দাদু! নানু যাবো।”

মোহিনী মির্জা নাতনির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলেন।লাইলি মোহিনী মির্জা কাছে এগিয়ে এলো।

-“চাচি আম্মা আপনে বইয়া থাকেন।আপনের না হাঁটুতে ব্যথা!আমি নিয়া যাই।”

-“তোর যাওন লাগতো না।এই সময় এতো নড়েচড়ে না।প্রভা মণিরে আমি লইয়া যাই।”

ইউসুফের কথায় লাইলি বেশ বিরক্তবোধ করলো।সবে মাত্র তিন মাস!একটু নড়াচড়াও করতে দেয় না।এই লোকের অতিরিক্ত যত্ন মাঝে মাঝে তার বিষের মতো লাগে।আট মাস আগে লাইলি আর ইউসুফের বিয়ে হয়েছে।লাইলি সন্তানসম্ভবা।ইউসুফ প্রভার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।লাইলি ইউসুফের হাত ঝাড়া দিলো।দাঁত কিড়মিড় দিয়ে বলল,

-“সব কামে ঠোক না গিললে আপনের পেডের ভাত হজম না?”

-“না হয় না।তোর না হয় নিজের চিন্তা নাই,কিন্তু আমার ঠিকই চিন্তা আছে।”

-“ইশশ,বুইড়া ব্যাডার কুয়ারা দেহো।”

ব্যস শুরু হয়ে গেল দৈনিকার গৃহযুদ্ধ।মোহিনী মির্জা মাথা নেড়ে শ্বাস ছাড়লেন। নাতনির দিকে তাকিয়ে বললেন,

-“চলো, দাদু আমি তোমাকে নিয়ে যাই।”

প্রভা লক্ষ্মী মেয়ের মাথা দোলালো।মোহিনী মির্জা আড়াই বছরের বাচ্চাটিকে অতি যত্নে কোলে তুলে নিলেন।এতো সময় আউটডোর গার্ডেন টেবিলে বসে ভিডিও কলে দুই মেয়ে আর জায়ের সাথে কথা বলছিলেন।দু’মাস হয়েছে তৃণা মির্জা ও হাফিজ মির্জা ছেলে আর ছেলের বউকে দেখতে কানাডা গিয়েছেন।পনেরো দিন হয়েছে সিমির ছেলে বাবু হয়েছে।জিমি বোনের কাছে রয়েছে।

——–

আলো বাতাস পূর্ণ কক্ষের বিছানার ঠিক মাঝামাঝি শুয়ে আছেন নিধি মির্জা।সেদিন সিঁড়ি থেকে পড়ে যাওয়ায় মাথার একপাশ বাজে ভাবে ড্যামেজ হয়ে যায়।সেই থেকে তিনি শয্যাশায়ী।মুখের এক পাশ বাঁকা হয়ে গেছে। বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেন।মাঝে মাঝে পিটপিট করে তাকান।কথা বন্ধ!শারীরিক যন্ত্রণায় মাঝে মাঝে গুঙিয়ে উঠেন।আগের মতো চেহারায় তেজের লেশমাত্র চিহ্নটুকুও নেই!দীপ্তিমান সেই উজ্জ্বলতা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।মুখে মলিনতার ছাপ!সুন্দর স্বাস্থ্যবান চকচকে গাল গুলো চুপসে গেছে।আশ্চর্যের বিষয় হলো নিধি মির্জা প্যারালাইজড হওয়ার ঠিক দু’দিন পর তাজওয়ার চৌধুরী ইন্তেকাল করেন।

——-

-“নানু মণি। ”

মোহিনী মির্জার কোল থেকে প্রভা বিছানায় এক প্রকার ঝাঁপিয়ে পড়লো।চট করে শুয়ে নিধি মির্জাকে জড়িয়ে ধরলো।বুকে বা’পাশে মাথা রাখলো।মনোযোগ সহকারে হৃদয়ের গতিবেগের শব্দ শুনতে লাগলো। দোয়া মির্জা বিছানার পাশে বসে মেয়ের সারা গায়ে দু’আ পড়ে ফু দিচ্ছিলেন।নিধি মির্জা অসুস্থ হওয়ায় পর থেকে তিনি নির্জীব হয়ে পড়েছেন।চোখের পানি শুকিয়ে গেছে।আগের মতো কথায় কথায় তার কান্না আসে না।হামিদ মির্জাকে ঘরে ঢুকতে দেখে প্রভা লাফিয়ে উঠলো।দু’হাত বাড়িয়ে দিয়ে বাচ্চা সুলভ কন্ঠে বলল,

-“দাদুভাই,কোলে নেও।”

হামিদ মির্জা কোলে নেওয়ার পূর্বে কেউ একজন ছোঁ মেরে চন্দ্রপ্রভাকে কোলে তুলে নিলো।

-“আপনাদের দু’জনকে কতোবার বলেছি,কোমরের ব্যথা নিয়ে প্রভাকে কোলের নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।আপনারা আমার কোনো কথায় শুনতে চান না।”

রেখার কথায় হামিদ মির্জা মুখ ফুলালেন।সাথে সাথে প্রভাকে তার মায়ের কোল থেকে নিজের কোলে নিয়ে নিলেন।আহ্লাদের গলায় বললেন,

-হোক ব্যথা! আমার দাদুভাইকে কোলে নেওয়া থেকে আমাকে কেউ আটকাতে পারবে না।তাই না, দাদুভাই?

প্রভা বুঝলো কি না বোঝা গেলো না কেবল মাথা নাড়ালো।চন্দ্ররেখা মেয়ে দিকে একবার কড়া চোখে তাকালো।অতঃপর শাশুড়ীর দিকে তাকিয়ে বলল,

-“মা!জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেছি, সকালে ইনসুলিন নেওয়া হয়েছিলো আপনার?”

রিনরিনে কন্ঠে মোহিনী মির্জার মন ভরে গেল। পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন।তার চোখ দুটি জুড়িয়ে গেল।আজকের চন্দ্ররেখা পূর্ণপূর্ণ একজন নারী।চন্দ্রপ্রভার মা!চাঁদোয়া মহলের রানী সে!সংসার, পড়াশোনার, অফিসের কাজের পাশাপাশি ঝিল্লিপুরের অসহায় নারীদের জন্যও কাজ করে। বাচ্চা বাচ্চা চেহারার মেয়েটি হুট করে যেন বড় হয়ে গেছে।বদনের নির্মলতা গাম্ভীর্যতায় ঢেকে গেছে।বুদ্ধিদীপ্ত চোখ দুটো ভীষণ শান্ত।মানুষের ভেতরটা চট করেই পড়ে ফেলতে পারে সে।শারাফকে যেদিন যখন গ্রেফতার করা হলো,সবাই ভেবেছিলো রেখা হয়ত সবচেয়ে বেশি ভেঙে পড়বে।সেই সাথে তার মায়ের এক্সিডেন্ট!সে সময়টাতে রেখা একা সবকিছু সামলিয়েছে।মায়ের চিকিৎসা, সেবা যত্ন, মির্জা ইন্ডাস্ট্রির সামলানো।এসবের সাথে যুক্ত হয়েছিলো প্রেগন্যান্সি কমপ্লিকেশন !বাড়ির সকলে তখন শারাফকে নিয়ে উদ্বিগ্ন!বাবার মৃত্যুতে চন্দ্ররেখা কষ্ট পেলেও তা প্রকাশ করে নি।মনের মাঝে চেপে এক হাতে সামলিয়েছে।দীর্ঘ দু’মাস পর শারাফ যেদিন ছাড়া পেয়েছিলো।সেদিন রেখা হাউমাউ করে কেঁদেছিলো।সেটাই ছিলো তার জীবনের অতি কষ্টের শেষ কান্না।

-“মা বললেন না যে?”

মোহিনী মির্জার ধ্যান ভাঙলো। হাসলেন তিনি।মুখে বললেন,

-“আমার ঔষধের চিন্তা তোমার করতে হবে না।এর জন্য আমার প্রভাই যথেষ্ট। আজ সকালে এসে ইনসুলিন ইনসুলিন বলে,,আমার কান ঝালাপালা করে দিয়েছে।তা অফিসে যাচ্ছো?”

চন্দ্ররেখা হাসি দিয়ে মাথা নাড়াল।মেয়ের কপালে চুমু খেলো।তারপর বিছানার পাশে তার মায়ের মাথার কাছে বসলো। কপালে দীর্ঘ চুমা খেলো।মনে মনে বলল,

-“পরম করুণাময় মাকে সুস্থ করে দেও।”

মেয়ের পরশ পেতে নিধি মির্জা গুঙিয়ে উঠলেন।শব্দ করে কিছু বলতে চাইলেন।চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো।

——-

গাড়ির কাছে সাদা শার্ট পরিহিত সুদর্শন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী পুরুষটিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রেখার মনে প্রশান্তি খেলে গেল।নিরদ্বিধায় এগিয়ে গেল ।

-“এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?”

-“আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সুন্দরীর জন্য।”

শারাফের সোজাসাপটা উত্তর। রেখার গাল গরম হয়ে গেল।লজ্জা লুকাতে চটপট করে বলল,

-“গাড়ি তো ছিলোই।আপনি চলে গেলেই পারতেন। শুধু শুধু এতোক্ষণ অপেক্ষা করলেন?”

-“আপনি তো জানেন না,স্বামী স্ত্রী একসাথে, একই গাড়ি, একই সময়, একাকী যাতায়াত করলে তাদের মধ্যে ভালোবাসা বাড়ে।”

স্বামীর অদ্ভুত বচন ভঙ্গিমাতে রেখা খিলখিলয়ে হেঁসে উঠলো।শারাফ বিমোহিত চোখে পূর্ণযৌবনা রমনীর আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।

——–

-“আচ্ছা চন্দ্রপ্রভার জন্য নতুন ভাই বোন আনলে কেমন হয়?”

কয়েক সেকেন্ড কেটে গেলো। রেখার নিরুত্তর।শারাফ রেখার দিকে তাকালো।সে এক দৃষ্টিতে গভীর ধ্যানে কিছু একটা দেখছে।চোখে ভীষণ ক্ষোভ।চোয়াল শক্ত।জ্বলজ্বলে চাহনি। রেখার দৃষ্টি বরাবর শারাফ তাকালো।একজন অতিশয় ভারী দেহের পেটমোটা লোক আনুমানিক বারো বছরের একটি ছেলেকে বেধড়ক মারধর করছে।রাস্তার মানুষজন দেখেও যেনো দেখছে না।আচমকা চন্দ্ররেখা সোজা হয়ে বসলো। গাড়ির দরজার হাতলে হাত রাখলো।উদ্দেশ্য বের হওয়ায়।মোক্ষম সময়ে জ্যাম ছেড়ে গেলো।এতো সময় তারা জ্যামে আটকে ছিলো।পেছনের গাড়ি থাকার কারণে জন্য শারাফ সামনের দিকে গাড়ি টান মারলো।রেখা রেগে গাড়ির ড্যাশবোর্ডে বারি মারলো।কয়েক মিনিট গাড়ির মধ্যে পিনপতন নীরবতা।

-“আমাদের চন্দ্রপ্রভার একটা ছন্নছাড়া জীবন হোক,এটা আমি কখনোই চাইবো না।”

শারাফের কন্ঠের প্রগাঢ়তায় রেখার ভেতরটা শুকিয়ে গেল।নয়ন জোড়ায় জ্বলে থাকা আগুন নিমিষেই নিভে গেল।রেখা চাপা শ্বাস ছেড়ে শারাফের বাহুতে মুখ গুঁজে দিলো।ইদানীং তার কিছু একটা হয়েছে,কোথাও কোনো অন্যায় বা জুলুম দেখলে শরীর নিশপিশ করে।জুলুমকারীকে কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি দেওয়ার প্রয়াস জাগে।মন থেকে প্রতিবাদ জেগে উঠে।রেখা আর কিছু ভাবলো না। চোখ বুজে পাশের মানুষটির দেহের সাথে মিশে রইলো।শারাফ ড্রাইভিং এর ফাঁকে রেখাকে আলতোভাবে জড়িয়ে ধরলো। কপালে ঠোঁট বুলালো।এদিকে রেখার বন্ধ চোখের পাতায় অজস্র তারার মেলে জ্বলতে থাকা রক্তিম এক সুধানিধির ছবি ভেসে উঠলো।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here