চুক্তিহীন বাঁধনে আবদ্ধ পর্ব -০৬ শেষ

#চুক্তিহীন_বাঁধনে_আবদ্ধ(০৬)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
#অন্তিম_পর্ব
(কার্টিসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

শীতের মৌসুম রোধে বসে কাজ করার মজাই আলাদা। শিমু রোদে বসে শীতল পাটি বুনছে। তখন তার ছোট্ট ছেলে শিহাব চিৎকার করে কেঁদে উঠল। কিছুক্ষণ আগেই ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল শিমু। এর মধ্যেই তার ঘুম শেষ হয়ে গেছে। শিমু দৌড়ে গিয়ে কোলে তুলে নিল। আদর করে ওঠোনে নিয়ে এসে বসে শিহাব কে নিয়ে। শিহাব মাকে পেয়ে কান্না ভুলে গিয়ে ফাঁকা মারি দেখিয়ে খলবলিয়ে হাসছে। বাচ্চাদের দাঁত উঠার পূর্বের হাসি গুলো ভীষণ মিষ্টি হয়। যা দেখলেই আদরে ভরে দিতে ইচ্ছে করে। শিমু যখন ছেলেকে যখন আদর করছিল তখন মিনোরা এসে বলল,
–” শিমু দেখ তো এই কাগজ গুলান কোন দরকারি নাকি?
শিমু সকৌতুকে জিজ্ঞাসা করে কোথায় পেয়েছেন খালা? মিনোরা বলল,
–” ঘর দৌর পরিষ্কার করতে যেয়ে পাইছি।

তারপর শিমু শিহাব কে খালার কাছে দিয়ে কাগজ গুলো হাতে নিল। প্রথম কাগজের টুকরো টা খুলে পড়ল,
(১)
আপা ওরা বলছে আমি যদি দুলাভাই কে বিয়ে না করি তবে ওরা দুলাভাই কে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে তোমাকে এ বাড়ি থেকে বের করে দিবে! এখন আমি কি করবো আপা? তোমাকে সারা বাড়ি খুঁজেও পেলাম না। তারপর তোমার শ্বাশুড়ি বললেন, তুমি নাকি তোমার বড় ননাসের বাড়ি গিয়েছো। আমাকে না বলে কেন গেলে আপা?

এতটুকু পড়ে বাকি কাগজ গুলো পড়ার কৌতুহল জেগে ওঠে শিমুর। একটা একটা করে পড়া শুরু করে।
(২)
আপা তুমি যে আমার কোন কথাই শুনতে চাইছো না। তোমার সাথে যে আমার অনেক কথা বলার আছে গো আপা।
(৩)
আপা জানো তোমার শ্বাশুড়ি আম্মা আমাকে কিসব তাবিজ দিয়েছেন! উনার বালিশের নিচে রাখার জন্য! আমি এগুলো নিয়ে পানিতে ফেলে দিয়েছি। তুমি হয়তো এগুলোর কার্যকারিতা নষ্ট করতে পারতে, কিন্তু তুমি তো আমার কোন কথাই শুনতে চাও না।
(৪)
আপা গো আমাকে মাফ করে দিও তোমার সাথে এরকম টা করতে চাইনি কিন্তু তোমার শ্বাশুড়ি আম্মা আর রুমি আপা আমাকে বাধ্য করায়! ভয় দেখিয়ে বলে আমি যদি উনাকে তোমার থেকে দূরে না রাখি তবে তোমাকে এ বাড়ি থেকে বের করে দিবে! তোমার কারণে এ বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছি। সেই তোমাকে এ বাড়ি থেকে বের করে দিতে দেই কি করে বলো তো?
(৫)
আপা তোমার চোখের পানি আমার সহ্য হচ্ছে না গো আপা। আজকে তোমার এই কষ্টের কারণ যে শুধুই আমি। আমি যদি এ বাড়ি থেকে চলেও যাই তবুও তোমার কষ্ট দূর হবে না! সেই আবার উনাকে বিয়ে দিয়ে অন্য কাউকে ঘরে তুলবে।
জানি না কেন জানি ইদানিং উনি কেমন যেন হয়ে গেছেন। উনার আম্মা যাই বলেন তাই শুনে। না হলে বলো উনি তো কখোন‌ই আমার প্রতি দুর্বল ছিলেন না!
(৬)
আজকে জানলাম আমি মা হব! এই মা হ‌ওয়া নিয়েই তোমার সব কষ্ট, না আপা? তাহলে আর কয়েক মাস সবুর করো তোমার সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ। তুমি বিশ্বাস করো আপা এই বাচ্চাকে জন্ম দিয়েই আমি অনেক দূরে চলে যাব! আর কখনো তোমার সংসারে আমার ছায়া ও পড়বে না কথা দিচ্ছি।
(৭)
আপা জানিস মা হ‌ওয়ার মধ্যেও না অন্য রকম সুখ আছে, যা এখন আমি উপলব্ধি করতে পারছি। খুব মায়া হচ্ছে বাচ্চাটার জন্য। আপা বাচ্চাটাকে তোর সন্তানের মতো মানুষ করিস। দেখিস ও যেন তোর আদর্শে মানুষ হয়। ওরে কখনো বুঝতে দিস না যে ওর মা অন্যকেউ! আমার কথা কখনো বলিস না।
(৮)
আপা ইদানিং আমার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না রে। কেন যেন মনে হচ্ছে আমি আর বেশি দিন বাঁচবো না রে! ভারী শরীরটা বয়ে নিতে খুব কষ্ট হয় আপা। আমাকে মাফ করে দিও।
________

চিঠি গুলো বুকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল শিমু। এতো গুলো যে কষ্ট গুলো ছিল আজকে যেন তার তিন গুণ বেড়ে গেল। এ কি যন্ত্রনা সহ্য করা যায় না আর।
শিমুর কান্না দেখে মিনোরা ভানু বিচলিত হয়ে জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে? শিমু কান্না করতে করতে অস্ফুট গলায় সব কিছু বলল। সবকিছু শুনে মিনোরা ভানু মাটিতে বসে পড়লেন। অনুসূচনায় দগ্ধ হতে থাকেন। না জেনে না শুনে মেয়েকে কতোই না অভি’শাপ দিয়েছিলেন তিনি।

বর্তমানে,
শিমু মিনোরা ভানু কে নিয়ে এ বাড়িতে একা বসবাস করছে। শীতল পাটি,মোড়া,পাখা,সাধারণ পাটি এসব ভুনে বিক্রি করে শিমুর সংসার চলে। আর মিনোরার ছোট ছেলে মেয়ে দুটো এতিম খানায় থেকে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। তাই একা শিমু মিনোরা ভানুকে নিজের কাছে নিয়ে এসেছেন।

নাহার বেগম প্যারালাইজড হয়ে রুমির বাড়ি পড়ে আছেন! শিমু গিয়েছিল তাকে নিয়ে আসার জন্য কিন্তু তিনি আসেন নাই। এতো দিনে তিনি তার ভুল বুঝতে পেরেছেন, এখন মৃ’ত্যু ভ’য় তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।
তাছাড়া আজকে বহুদিন হলো কাউসার এর কোন খুঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। কাউসার এখন একজন মানসিক রোগী! এর কারণ তার মায়ের কালো যাদুর প্রভাব! কালো যাদু সাময়িক সময়ের জন্য কাজে আসলেও এক সময় এর বিপরীত প্রতিক্রিয়া করে। যার ফল হয় ভয়া’বহ! যেমনটা হয়েছে কাউসার এর ক্ষেত্রে। তাই এগুলো থেকে সাবধান। আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার বিরুদ্ধে কোনো কাজ ই স্থায়ী হবে না এটা সব সময়ই প্রমাণিত হয়েছে এবং হবে।
জাদু করা কুফরি বিষয়টি কুরআনুল কারিমে সুস্পষ্টভাবে ওঠে এসেছে। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘তারা ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সুলায়মানের রাজত্ব কালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সুলায়মান কুফর করেনি; শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত। তারা উভয়ই (হারুত-মারুত) একথা না বলে কাউকে (জাদু) শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হয়ো না। অতঃপর তারা তাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যা দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া তা দ্বারা কারও অনিষ্ট করতে পারত না। যা তাদের ক্ষতি করে এবং উপকার না করে, তারা তাই শিখে। তারা ভালরূপে জানে যে, যে কেউ জাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোনো অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা নিজেদের বিক্রি করে দিয়েছে। তা খুবই মন্দ; যদি তারা জানত।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১০২)

(গল্পের সমাপ্ত)
______________________________________

নোটঃসত্য ঘটনা
_____________
আমি (লেখিকা) যখন এস.এস.সি. পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা এডমিশন নিয়ে চলে যাই তখন আমার বেস্ট ফ্রেন্ড মলিকে (ছদ্মনাম) ওর খালাতো বোনের বাসায় ঢাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মলিদের আর্থিক অবস্থা খারাপ ছিল তাই ওর খালাতো বোনের বর ওকে একটা গার্মেন্টসে চাকরি দেয়। তো কয়েক মাস পর আমি বাড়িতে আসলে ওর সাথে দেখা হয়। মলি ও বাড়িতে আসে ছুটিতে। তো আমরা দুজনে কথা বলার সময় ওদের ঘর থেকে একটা ছেলেকে যেতে দেখে আমি জিজ্ঞাসা করি, কে এটা? তখন ও বলে ফাতেমা (ওর খালাতো বোন) আপার বর।
তারপর যখন আমি ঢাকায় ফিরে যাই পড়াশোনায় মনোযোগ দেই। তখন একদিন আম্মু কল করে বলল,
–” খবর শুনেছিস?
–” কি খবর?
–” মলিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!
–” কি! কোথায় যেতে পারে?
–” সবাই ধারনা করছে ওর দুলাভাই এর সাথে পালিয়ে গিয়েছে!

আম্মুর মুখে এ কথা শুনে আমি কিছুতেই বিশ্বাস করলাম না কারণ মলি এরকম মেয়েই না। আমি তো ওর সাথে ছোট বেলা থেকে আছি, আমি ওরে চিনি। ও এরকম করতেই পারে না। আমি ভাবলাম যদি কারো সাথে গিয়েও থাকে তবে অন্য কেউ হবে। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। কয়েক মাস পর ওর বাবা ওর সেই খালাতো বোনের শ্বশুরবাড়ির গ্রামে গিয়ে ওর খুঁজ পায়। সবার ধারণাই ঠিক ও ওর দুলাভাই কে বিয়ে করেছে! তারপর এর প্রায় দেড় দুই বছর পর ও মেয়ে নিয়ে নিজের বাড়ি এসেছে। এখন ওর মেয়ের হয়তো তিন বছর হবে। ও কিন্তু খুব সুখেই আছে স্বামী সন্তান নিয়ে। কিন্তু ওর খালাতো বোন টা? আজো ওর খালাতো বোনের কথা মনে পড়লে আমার কষ্ট হয়। আমরা যখন স্কুলে পড়াশোনা করতাম তখন ও প্রায়ই বলতো, আমার খালাতো বোন আমাদের দুই বোনের জন্য ড্রেস, কসমেটিকস পাঠিয়েছে। আমার প্রশ্ন সেই বোনের সাথে মলি কিভাবে বিশ্বাসঘাত’কতা করতে পারলো?
অনেকের ধারণা ওকে দুষ্টু জ্বীনের ধারা কিছু করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কারণ ওর শ্বাশুড়ি মা জ্বীন সালাম দেন।
এর সত্যতা কতটুকু আমি জানি না।
__________
ঘটনাটা সম্পূর্ণ আমার চোখের সামনের ঘটা। আর তাই এটা থেকে আমি গল্পটা তৈরি করেছি। অথচ কিছু লোকজন বলছে এরকম কোন ঘটনা ঘটে না।আমি তাদের বিব্রত করতে এসব লিখছি হাহ। অথচ বাস্তবটা ছিল আরো নির্মম, তিক্ততায় আচ্ছন্ন। এরকম আরো বহু ঘটনা ঘটে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমি শিমু চরিত্রটা এভাবে সাজানোর কারণ আল্লাহ তা’আলার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য। অথচ কিছু লোকজন পড়ে আছেন আজকের যুগ নিয়ে,নারী অধিকার নিয়ে। অথচ এই নারী অধিকার এবং ছেলেদের সাথে পাল্লা দিয়ে চলাই আমাদের কেয়ামতের দিকে অগ্রসর করছে প্রতিনিয়ত। আপনারা বিভিন্ন হাদীসের ব‌ই পড়লে বুঝতে পারবেন নবী রাসুল গনদের স্ত্রীরা কিভাবে জীবন কাটিয়েছেন। আর তাই তারা জান্নাতের উচ্চ স্থান লাভ করবেন ইনশা আল্লাহ। আর হ্যাঁ অনেকেই বলছেন আমি কালো যাদু কে প্রমোট করছি!অথচ আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি যে এসব খারাপ কাজ, এসবে আল্লাহ তা’আলা নারাজ হন। এগুলো যেন তাদের চোখেই পড়ছে না।
যাই হোক, আমি আপনাদের সাথে তর্কে জড়াতে চাই না। ভালো লাগলে পড়বেন নতুবা পড়বেন না।
চুপ থাকা পরিশ্রমহীন ইবাদত_
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে লোক চুপ থাকলো সে নাজাত (মুক্তি) পেলো।[তিরমিযী-২৫০১]

🌿 সমাপ্ত 🌿

(আসসালামু আলাইকুম।
ভুল গুলো মাফ করবেন আর যারা গল্পটাকে সাপোর্ট+ভালোবাসা দিয়েছেন তাদের “জাযাকুমুল্লাহু খাইরান”।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here