“বাচ্চাটা নষ্ট করে দাও রিয়াশা! আমি এই বাচ্চার ভার বহন করতে পারব না। মুক্তি চাইছি আমি! সংসার নামক এই মিথ্যে বেড়াজাল থেকে মুক্তি চাইছি আমি! স্বামী হিসেবে এই মুহূর্তে আমি তোমাকেও মুক্তি দিতে চাইছি! কালই তুমি হসপিটালে গিয়ে বাচ্চাটা এবোর্শন করে আসবে রিয়াশা। ইট’স মাই অর্ডার!”
বিয়ের পাঁচ মাসের মাথায় এসে তরুনের মুখ থেকে এসব হৃদয়বিদারক কথা গুলো শুনে ক্ষনিকের জন্য থমকে দাঁড়ালাম আমি! হৃদয়ে যতোটা না রক্তক্ষরণ হচ্ছে তারও অধিক মানুষটির প্রতি ঘৃণা জন্ম নিচ্ছে! বাবা হয়ে তিনি কী করে পারছেন তার সন্তানকে খুন করার কথাটি বলতে? নিজেকে এই সংসার নামক পবিত্র বন্ধন থেকে মুক্ত করার প্রাণনাশক কথাটি বলতে? মাত্র তো পাঁচ মাস চলছে আমাদের সংসার জীবনের! তিন মাস চলছে আমাদের অনাগত সন্তানের! বাবা হিসেবে কী সন্তানের প্রতি তার বিন্দু পরিমান টানও অনুভব হচ্ছে না? একটু খানি দয়া মায়াবোধও কাজ করছে না? এতোটাই নিষ্ঠুর, নির্মম, পাষাণ বাবা তিনি? কম্পিত শরীর নিয়ে আমি চক্ষু জোড়ায় প্রচন্ড রাগ, যন্ত্রণা, ঘৃণা সমেত দরজার চৌকাঠে দাঁড়িয়ে থাকা বিক্ষিপ্ত তরুনের মুখোমুখি দাঁড়ালাম। গর্ভে ডান হাত ঠেকিয়ে কান্নাজড়িত গলায় আমি তরুনের তেজস্ক্রীয় দৃষ্টিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শুধালাম,,
“আপনি আমাদের সন্তানকে এবর্শন করাতে চাইছেন তরুন? যা শুনছি আমি ঠিক শুনছি তো?”
“হ্যাঁ ঠিক শুনছ। যা বলছি আমি একদম ঠিক বলছি! আমি তোমার থেকে মুক্তি চাই। তোমার গর্ভের ঐ সন্তানটির থেকেও মুক্তি চাই।”
“বাবা হয়ে নিজের সন্তানকে খুন করতে চাইছেন আপনি? হ্যাঁ? নিজের সন্তানকে খুন করতে চাইছেন? এতোটাই নিষ্ঠুর, নির্মম, পিশাচ বাবা আপনি? কথাটি বলার সময় কী আপনার পিত্রৃ হৃদয় একবারের জন্যেও কেঁপে ওঠে নি তরুন? সামান্য সাংসারিক কথা কাটা কাটি থেকে আপনি এতো বড় সিদ্ধান্তটি নিতে পারলেন? আমাকে মুক্ত করার কথাটি বলতে পারলেন?”
মুহূর্তের মধ্যেই তরুন নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে উঠলেন! আমার দিকে তেড়ে এসে চোয়াল শক্ত করে জবাবে বললেন,
“হ্যাঁ পারলাম! সিদ্ধান্তটি আমি নিতে পারলাম। কারণ, এই বাচ্চাটিকে আমি চাই না! এই বাচ্চার কারনে সমাজে আমাদের দুর্নাম হতে পারে! তাই সময় থাকতে বাচ্চাটিকে এবর্শন করাতে চাইছি আমি! সমাজে আমার মা-বাবার মান সম্মান অক্ষুন্ন রাখতে চাইছি!”
“এসব আপনি কী বলছেন তরুন? কীসের দুর্নামের কথা বলছেন আপনি? আমি তো আপনার কথার আগা মাথাই কিছুই বুঝতে পারছি না তরুন। প্লিজ যা বলার ক্লিয়ারলি বলুন।”
“তুমি কিছু বুঝতে পারছ না, না? তুমি বুঝতে পারছ না বিয়ের পর আমাদের মধ্যে কোনো শারীরিক সম্পর্ক হয় নি? বাচ্চাটিও আমার নয়! এই বাচ্চা হলো তোমার পাপের ফল!”
মুহূর্তের মধ্যেই দুনিয়া অন্ধকার হয়ে এলো আমার!শরীর বেয়ে দড়দড়িয়ে ঘাম গড়াতে শুরু করল। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে মৃত্যু নামক যন্ত্রনার মতোই অধিক যন্ত্রনাতুর মনে হতে লাগল। ভুল জায়গায় ভুল কথাটি শুনে কিছু মুহূর্তের জন্য নিজেকে দ্বিখন্ডিত মনে হচ্ছিল! পাল্লা দিয়ে শ্বাস নিশ্বাস ভারী হয়ে উঠতেই আমি দাঁতে দাঁত চেপে তরুনের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,
“নিজের প্রাক্তন প্রেমিকাকে ফিরে পাওয়ার জন্য আপনি আমার বদনাম করতে চাইছেন তাই না তরুন? আমাকে এবং আমার অনাগত সন্তানকে একসাথে মেরে ফেলার প্ল্যানিং করছেন আপনি? কী মনে করেছেন আপনি হুম? কিছু জানি না আমি? কিছু বুঝি না? এতোটাই নির্বোধ, বোকা আমি? বড় আপুর ননদের সাথে যে আপনার প্রেমের সম্পর্ক ছিল বা এখনও চলছে তার খবর রাখি না আমি? আপনি যে আমাকে শুধুমাত্র আপনার পরিবারের কথা ভেবে বিয়ে করেছেন তাও জানি না আমি?”
নিশ্বাস বিহীন মনের সমস্ত জমানো কথা গুলো উগলে আমি ক্ষনিকের মধ্যেই শরীরের সম্পূর্ণ শক্তি হারিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লাম! ভাগ্যিস মেঝেতে মাদুর ছিল। নয়তো আমার অনাগত সন্তানের নির্ঘাত একটা ক্ষতি হয়ে যেত! বুকের কোণে জমাট বাঁধা এক অদৃশ্য যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে আমি আঁখি পল্লব বুজে নিতেই দৃষ্টির সীমানায় আমার শ্বাশুড়ী-মা কে দেখতে পেলাম! হতবিহ্বল দৃষ্টিতে তিনি আঙুল নাচিয়ে যেন কিছু বলছেন আমায়! অদম্য জেদ নিয়ে একই জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা তরুনের বুক চাপড়ে তিনি কিছু একটা বলার চেষ্টা করছেন। দিক বিদিক ঠাওড় করতে না পেরে আমি শেষ বারের মতো তরুনের নিষ্ক্রিয় মুখমন্ডলের দিকে তাকিয়ে অবলীলায় আঁখি পল্লব বুজে নিতে বাধ্য হলাম! এরপর আমার সাথে কী ঘটছে না ঘটছে সবই আমার স্মৃতি ধারণ ক্ষমতার বাইরে ছিল!
———————————————————-
জ্ঞান ফিরে আসতেই নিজেকে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ‘আমার বাবার বাড়িতে আবিষ্কার করলাম!’ যন্ত্রণায় জীর্ণ শীর্ণ নেত্র যুগল যেনো কিছুতেই সম্পূর্ণ মেলে ধরতে পারছি না আমি। মনে হচ্ছে যেনো শরীরের সমস্ত ইন্দ্রিয় শক্তি লোপ পেয়ে আমার শরীরটিকে ক্রমাগত দুর্বল করে তুলছে। অত্যধিক যন্ত্রনা শরীরটিকে পাকাপোক্ত ভাবে কাবু করে তুলেছে। দেহের যাবতীয় দুর্বলতাকে যথেষ্ট সামলিয়ে আমি কপালে বাঁ হাত ঠেকিয়ে অর্ধ খোলা দৃষ্টিতে আশেপাশে তাকাতেই হঠাৎ চমকে উঠলাম! টিমটিমে ড্রিম লাইটের আলোয় বেষ্টিত বদ্ধ ঘরে আমি অপ্রত্যাশিতভাবেই বিষন্ন ভঙিতে দাঁড়িয়ে থাকা ‘রাফায়াত ভাইকে’ দেখতে পেলাম! বাবার খুব ঘনিষ্ঠ একজন বন্ধুর ছেলে রাফায়াত ভাই। আঙ্কেলের মৃত্যুর পর থেকে দীর্ঘ ১০ বছর যাবত রাফায়াত ভাই আমাদের বাড়িতে থেকে-খেয়ে, পড়াশোনা করে মানুষ হয়েছেন। অনার্স কমপ্লিট হবার পর ভাইয়া যখন চাকরীর সন্ধানে বিভিন্ন ছোট-বড় অফিসে ঘুরাঘুরি করেও ভালো মানের কোনো চাকরীর ব্যবস্থা করতে পারছিলেন না তখন আমার বাবার একজন কাছের বন্ধুর সুপারিশে তাৎক্ষণিক বাবা রাফায়াত ভাইকে লন্ডন পাঠিয়ে দেন! লন্ডনে বাবার সেই বন্ধুটির একটি ছোট খাটো সেন্ট্রাল হসপিটাল রয়েছেন৷ সেখানে রাফায়াত ভাই এসিস্টেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন৷ সেই যে দীর্ঘ দুই বছর আগে রাফায়াত ভাইয়ার সাথে দেখা হয়েছিল, আজ আবার দীর্ঘ দুই বছর পর অকল্পনীয় ভাবেই এই মানুষটির সাথে দেখা হয়ে গেল! আনন্দে হতবিহ্বল হয়ে আমি চট জলদি শোয়া থেকে ওঠে বসলাম। শরীর এবং মনের সমস্ত যন্ত্রণা ভুলে ম্লান হেসে ভাইয়ার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে বললাম,,
“আরে রাফায়াত ভাই? তুমি?”
বুকে দু’হাত গুজে নিমগ্ন দৃষ্টিতে রাফায়াত ভাই আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। দৃষ্টিতে অপার বেদনার ছাপ ফুটে ওঠেছে লোকটির! যা আমি দূর থেকেই বেশ আন্দাজ করতে পারছি। তবে সেই অব্যক্ত বেদনার কারণ আমি আন্দাজ করতে পারছি না! কখন যে সেই বেদনা বিলীন হয়ে অশ্রু জলে রূপান্তরিত হয়েছে টেরই পেলাম না! রাফায়াত ভাই কাঁদছেন! হ্যাঁ, তিনি নিঃশব্দে কেঁদে চলছেন! মেয়ে মানুষদের মতো তারও চোখের কোটর বেয়ে টুপ করে অশ্রু কণা বেয়ে থুতনী অবধি গড়িয়ে পড়ছে! ছেলেদের এতো সহজে কখনও কাঁদতে দেখি নি আমি! উৎসাহী মন যেনো ক্রমাগত উচাটন হয়ে উঠল। লোকটির কান্নার কারণ জানতে চাইল৷ অতি আশ্চর্যিত হয়ে আমি নিরলস দৃষ্টিতে লোকটির দিকে তাকিয়ে গলা খাঁকিয়ে বললাম,,
“কী হয়েছে রাফায়াত ভাই? তুমি কাঁদছ কেন?”
কান্নাজড়িত মুখমন্ডলেও তিনি ফিক করে হেসে উঠলেন! বুকের পাঁজর থেকে ডান হাতটি উঠিয়ে দু’চোখে লেগে থাকা শেষ অশ্রুকণা গুলো মুছে নাক টেনে বললেন,,
“তোর সুখ দেখে কাঁদছি! কতো সুখে আছিস তুই বল? স্বামী, সংসার, বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে!”
না চাইতেও ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো আমার! কতো যে সুখে আছি তা যদি তুমি জানতে রাফায়াত ভাই! যদি কখনও মুখ ফুটে তোমাকে বলতে পারতাম আমার সুখের কথা গুলো! তখন হয়তো বুঝতে পারতে আমি আদৌতেই কতোটা সুখে আছি! তাৎক্ষণিক মাথা নুঁইয়ে নিলাম আমি। অবাধ্য চোখের জল লুকিয়ে নিতেই রাফায়াত ভাই পুনরায় নমনীয় গলায় শুধালেন,,
“বিয়ে করেছিস কবে? শুনলাম মা ও হতে চলেছিস? কতো বড় হয়ে গেলি বল? এখন একা একাই সংসার জীবন সামলাতে পারছিস! এই রাফায়াতের কোনো প্রয়োজনই পড়ছে না এখন। অথচ একটা সময় এই রাফায়াতকে ছাড়া তুই ওয়াশরুমের দরজা অবধি যেতে ভয় পেতিস! রাত-বিরাতে তোর জন্য ওয়াশরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে কতো যে মশার কাঁমড় খেতে হয়েছে আমার, তার কোনো নির্দিষ্টতা নেই। মনে আছে তো এসব? নাকি ভুলে গেছিস সব? সময়ের বিবর্তনে সব ফিকে হয়ে গেছে? মরে গেছে স্মৃতি? তাজা হয়ে ওঠেছে নতুন দুটো প্রাণ?”
ধীরে ধীরে রাফায়াত ভাইয়ার চোয়াল শক্ত হয়ে আসছে! আঁখি জোড়ায় বেদনার চেয়েও অধিক জেদ প্রস্ফুটিত হচ্ছে। অশ্রুসিক্ত চোখে আমি মাথা উচিঁয়ে রাফায়াত ভাইয়ার দিকে একবার তাকালাম। খেয়াল করে দেখলাম আবারও লোকটির চোখের কোটর বেয়ে অবলীলায় শ্রাবণের জল গড়িয়ে পড়ছে! এই শ্রাবণ তো, এই খরা! এই মুহূর্তে লোকটিকে বুঝে উঠতে পারছি না মোটেও। শত চেষ্টা সত্ত্বেও চোখের জলকে যেনো তিনি কিছুতেই আটকে রাখতে পারছেন না! কেনো জানি না দ্বিতীয় বারের মতো আবারও হৃদয় কেঁপে উঠল আমার! হ্যাঁ, এই মানুষটির প্রতি দ্বিতীয় বারের মতো আবারও হৃদয় কেঁপে উঠল আমার! অজান্তে আমিও চোখের জল ছেড়ে কান্না জড়িত গলায় প্রত্যত্তুরে বললাম,,
“তুমিও তো আমাকে ছাড়া দিব্যি ভালো আছো রাফায়াত ভাই! নিজের কর্মজীবন নিয়ে দারুন ব্যস্ত হয়ে পড়েছ। এতোটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছ যে, আমার সামান্যতম খোঁজ খবর নেওয়ার সময়টুকুও বের করতে পারো নি তুমি! লন্ডন যাওয়ার পর থেকে কখনও চেষ্টা করেছিলে আমার সাথে যোগাযোগ করার? আমার সাথে দু’দন্ড কথা বলার? আমার খোঁজ খবর রাখার?”
তাৎক্ষণিক আমার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলেন তিনি! অন্য পাশ ফিরে পুনরায় চোখের জল মুছে কম্পিত গলায় বললেন,,
“তুইও তো কখনো চেষ্টা করিস নি আমার সাথে যোগাযোগ করার! বিয়ের খবরটা পর্যন্ত আমার কাছে পৌঁছাবার! দুই বছর পর যখন তোদের সবাইকে আমি সারপ্রাইজ দিতে এলাম, তখন আমি নিজেই এসে সারপ্রাইজড হয়ে গেলাম! ভাগ্যের কতো নির্মম পরিহাস বল? উপর ওয়ালা সেই ছোট বেলা থেকে কেন জানি না আমার সাথেই ভাগ্যের এই নির্মম খেলা খেলে আসছেন! প্রতি ক্ষেত্রে আমাকে হারিয়ে দিচ্ছেন।”
থমকালাম আমি! ভ্রু যুগল খড়তড়ভাবে কুঁচকে রাফায়াত ভাইয়ার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে বললাম,,
“কিন্তু বাবা তো বলেছিলেন তুমি আমার বিয়ের খবরটা জানতে! আর সময়ের অভাবে তখন আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারো নি!”
ইতোমধ্যেই হন্তদন্ত হয়ে শোবার ঘরের দরজা ঠেলে আমার ছোট বোন ‘রামিশা’ আমার ঘরে প্রবেশ করল! তার এহেন তৎপর ভাব ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে যেনো বাড়িতে নির্ঘাত চোর-ডাকাত পড়েছে! ঘরে প্রবেশ করেই সে বাঁকা দৃষ্টিতে একবার রাফায়াত ভাইয়ার দিকে তাকাল! অন্যদিকে রাফায়াত ভাই চোখের জল মুছে নিতে ব্যস্ত। নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক করতে প্রয়াত প্রায়। সঙ্গে সঙ্গেই রামিশা আবার দৃষ্টি ঘুরিয়ে হাঁপিয়ে ওঠা গলায় আমার দিকে উদ্বেগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,,
“আপু জলদি বসার ঘরে চল। জিজু এসেছেন তোকে ঐ বাড়ি নিয়ে যেতে! বিশ্বাস কর এই প্রথম জিজুকে চিনতে আমার বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। কেমন যেনো বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেছেন তিনি।”
বাতাসের বেগে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালাম আমি! উতলা উদগ্রীব হয়ে রাফায়াত ভাই এবং রামিশাকে দু’হাত দিয়ে সরিয়ে শোবার ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম! শাড়ির কুচি সামলে দ্রুত পায়ে হেঁটে বসার ঘরে প্রবেশ করতেই দেখলাম তরুন সত্যিই বদ্ধ উন্মাদের মতো আমার বাবা-মায়ের সাথে যা নয় তা বলে কুরুচিপূর্ণ আচরণ করছেন! কিছুতেই তিনি আমার বাবা-মায়ের কথা শুনছেন না। তরুনের সাথে অবশ্য আমার শ্বাশুড়ী মা এবং শ্বশুড় আব্বুও আছেন। তারা কেউই তরুনকে আটকে রাখতে পারছে না। মুখ দিয়ে যা আসছে তাই তিনি অনবরত বলে চলছেন! উপায় বুদ্ধি না পেয়ে শরীরের কথা চিন্তা না করেই আমি এক ছুটে তরুনের মুখোমুখি দাঁড়ালাম। আমাকে একটি পলক দেখা মাত্রই তরুন কিছুটা শান্ত হয়ে বাড়ির সকলের সামনে আমায় আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলেন! কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই তিনি বেসামাল ভঙিতে চিৎকার করে বলতে আরম্ভ করলেন,,
“তুমি এখনই, এই মুহূর্তে আমার সাথে আমার বাড়ি ফিরে যাবে রিয়াশা। আমার অনুমতি ছাড়া তুমি এই বাড়িতে আসলে কেন হুম? তুমি জানো না? তোমাকে একটি পলক না দেখলে আমার দিন কাটে না? রাত কাটে না? আমাদের বাচ্চার সাথে কথা না বললে আমার এক দন্ড ঘুম আসে না? আমি এতো কিছু জানি না তুমি এক্ষনি, এই মুহূর্তে আমার সাথে আমার বাড়ি ফিরে যাবে। আমি তোমাকে বাড়ি নিয়ে যেতে এসেছি!”
#চলবে…?
#চেনা_রোদে_বসন্ত
#পর্ব_১
#নিশাত_জাহান_নিশি
(