বাইজি কন্যা পর্ব ৩১ ও শেষ

#বাইজি_কন্যা
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_সংখ্যা_৩১
[৪৬]
সকালবেলা নাস্তা করার সময় বমি হয়েছে মুনতাহার। দুপুরবেলাও কিছু খেতে পারলো না৷
সবটা খেয়াল করলো শবনম। তারপর তার স্ত্রীরজের সময়কাল জেনে বিস্মিত হলো! গালে মৃদু থাপ্পড় দিয়ে বললো,
-‘ হেগো মুন এতো বেখেয়ালি কেন তুমি ? শুভসংবাদ বুঝি এলো এবার। সে কোথায়? ‘
শবনমের মুখে এমন বাক্য শুনে লজ্জায় নাকের ডগা রক্তিম হয়ে ওঠলো। মাথা নুয়ে বললো,
-‘ জানিনা। ‘
শবনম খুশিতে আত্মহারা হয়ে মুনতাহা’কে জড়িয়ে ধরলো। বললো,
-‘ তুমি ঘরেই থাকো আমি এখুনি আসছি৷ ‘
মিনিট পাঁচেক পরেই ফিরে এলো শবনম। গর্ভাবস্থা পরীক্ষার কীট এনে মুনতাহার হাতে দিয়ে বললো,
-‘ যাও নিশ্চিত খবর নিয়ে এসো। ‘
মুনতাহা লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে বললো,
-‘ তোমার কাছে ছিলো? আমি ক’দিন ধরেই উনাকে বলছিলাম এনে দেওয়ার জন্য, উনি গায়ে লাগায়নি।’
-‘ হ্যাঁ গো আনাই ছিলো যখনি সন্দেহ হয় তখনি তোমার বড়ো ভাই’কে দিয়ে আনাই। আর প্রতিবারই নিরাশ হই। ‘
কিঞ্চিৎ মন খারাপ হয়ে গেলো মুনতাহার৷ তার মন খারাপ দেখে শবনম বললো,
-‘ এই বোকা মেয়ে তুমি মন খারাপ করছো কেন? যে সুখবর এ বাড়িতে আমি দিতে পারিনি সেটা না হয় তুমিই দিলে। যাও তো যাও আর দেরি করো না, আমার আর তর সইছে না৷ ‘
শবনমের তাগাদায় দুরুদুরু বুকে পরীক্ষা করেই ফেললো মুনতাহা৷ ফলাফল আশানুরূপ হতেই খুশি’তে দু’চোখ বেয়ে অশ্রুপাত শুরু হলো তার। আল্লাহ’কে শুকরিয়া জানিয়ে বিরবির করে বললো,
-‘ ভাবির মতো আমিও ভেবেছিলাম এ বংশে অভিশাপ লেগেছে। যার কারণে তার মতো আমার গর্ভেও সন্তান আসছে না। কিন্তু তুমি প্রমাণ করে দিলে আমি নিরপরাধ, এতো দুঃখের পর একটু সুখের মুখ তুমি আমাকে দেখিয়েছো। হে আল্লাহ লক্ষ,কোটি শুকরিয়া জানাই তোমাকে। ‘
পলাশ বাড়িতে নেই। সেদিন প্রণয়ের হয়ে প্রেরণার কাছে সুপারিশ করেছিলো মুনতাহা, বুঝিয়েছিলো অনেক কিছুই। প্রেরণা বলেছিলো সে ভেবে দেখবে। তার পর কয়েকদিন কেটে গেলো প্রেরণা কিছুই বলেনি। কিন্তু আজ যখন বড়ো বউয়ের মুখে শুনলো মুনতাহা গর্ভবতী। এ বংশের সন্তান জন্ম দেবে সে। তখন আবেগান্বিত হয়ে পড়লো ৷ অরুণারও আবেগ ঘন হলো। দু’জনই মুনতাহার কক্ষে এসে কিছুক্ষণ তার সাথে আহ্লাদ করলো। অরুণা তো ঝরঝর করে কেঁদে দিয়ে বললো,
-‘ বংশের বাতি তো প্রায় নিভু নিভু। এতো জন থেকেও যেনো কেউ নেই৷ মানুষটা চলে গিয়ে সব যেনো অন্ধকার করে দিছে। এবার তোমার কাছেই সে ফিরবে বউ দেইখো। ‘
প্রেরণা বললো,
-‘ আপা দেইখো আমার পলাশের ঘর আলো করে উনিই আসবেন। ‘
দুই শাশুড়ির মন্তব্য শুনে মুনতাহা খুশি হলেও শবনম ঠিক বুঝলো গর্ভবতী হতে না হতেই শুরু হয়ে গেছে নাতী চাই,নাতী চাই। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলো শবনম। প্রেরণা মুনতাহার দু’হাত চেপে ধরে বললো,
-‘ বল মা কি চাস তুই আমার কাছে, আমার কাছে আজ তুই যা চাইবি তাই পাবি। ‘
আহ্লাদে গদগদ হয়ে মুনতাহা বললো,
-‘ আম্মা এই খবর শুনে উনার মধ্যে পরিবর্তন আসলেও আসতে পারে। কিন্তু তার জন্য উনার মাঝে নুর’কে পাওয়া অসম্ভব এই অনুভূতি আনতে হবে। উনি যখন জানবে, উনি বাবা হতে চলেছেন অবশ্যই খুশি হবেন, পাশাপাশি যখন প্রণয় ভাই’য়ের সঙ্গে নুরের বিয়ে হয়ে যাবে তখন উনি নুর থেকে ফিরে আসবেন। আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে উনাকে আঁটকাতে না পারলেও আমার সন্তান’কে দিয়ে ঠিক আঁটকে দেবো। ‘
মুনতাহার কথাগুলো’কে সমর্থন করলো অরুণা৷ প্রেরণা নুর’কে মন থেকে মেনে না নিলেও সবদিক চিন্তা করে মুনতাহা’কে বললো,
-‘ তোকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি মুন। আমার ছেলের জন্য তুই অনেক কষ্ট ভোগ করেছিস৷ শেষ পর্যন্ত যদি এই উপায়ে তুই সুখ পাস তবে তাই হবে। ‘

প্রণয়’কে নিজের কক্ষে তলব করেছিলো প্রেরণা।বাইজি কন্যা’কে জীবনসঙ্গী করার সিদ্ধান্তে মত দিয়েছে সে। কিন্তু এর পেছনের কারণগুলোও উল্লেখ করেছে। সেসব কারণ আমলে নিলো না প্রণয়। শুধু মনে মনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো, মুনতাহার কাছে। মুনতাহা মা হতে চলেছে এই সুখবর বাড়ির প্রতিটি সদস্যের কাছে পৌঁছে গেলো। ভৃত্য’দের থেকে শুরু করে তল্লাটের সবাই জানলো। জমিদার বাড়ি’র এতো দুর্দশার মূহুর্তে নতুন অতিথি আসছে…কেউ দুঃখতে ভরিয়ে দিয়ে চলে যায় আবার কেউ সব দুঃখমোচন করতে ফিরে আসে। রোমানা আর অলিওর পাঁচফোড়ন গৃহে যে ক্ষতের সৃষ্টি করে গেছে তা পূরণ করতেই হয়তো একটি নিষ্পাপ শিশু ভূমিষ্ঠ হবে।
[৪৭]
শাহিনুর জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে৷ যেখান থেকে বাইজি গৃহ,পুকুরঘাট স্পষ্ট দেখা যায়। এ মূহুর্তে সে একধ্যানে চেয়ে আছে পুকুরঘাটে। অল্পস্বল্প স্মৃতি চারণ করছে। সে স্মৃতির এক পর্যায়ে রঙ্গনের উৎফুল্ল চেহেরা ভেসে ওঠলো। রঙ্গনের শুভ্রময় মুখটুকু স্মরণ হওয়ার পরপরই প্রণয়ের শ্যামবর্ণ ভারী চেহেরার আবির্ভাব ঘটলো। অদ্ভুত ভাবেই দু’জনের চেহেরা ক্ষণে ক্ষণে স্বরণ হতে লাগলো৷ প্রণয়ের গভীর,দৃঢ় দৃষ্টি আর রঙ্গনের সাদাসিধে প্রফুল্ল চাহনি। দু’জনকেই সুনিপুণভাবে স্মরণ করতে করতে অন্তঃকোণে প্রশ্ন জাগলো,
-‘ এতো কিছু হয়ে গেলো বাঁশিওয়ালা’কে কেন পাশে পেলাম না? সে কোথায় হারিয়ে গেলো? তার অবর্তমানে তার ডাক্তার ভাই’য়ের বউ হয়ে গেলে সে তো খুব কষ্ট পাবে। সব ভাই মিলে আমার বাঁশিওয়ালা’কেই কেন কষ্ট দেয়? ‘
বুকচিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো শাহিনুরের। সে মূহুর্তে উপস্থিত হলো প্রণয়। পেছনে তার অতি নিকটে দাঁড়িয়ে স’স্বরে বললো,
-‘ নুর একটি সুখবর আছে। ‘
চমকে ওঠলো শাহিনুর। পেছন ঘুরে দেখলো পিরিচে করে চারটে মিষ্টি নিয়ে এসেছে প্রণয়৷ দু’টো মিষ্টিতে দু’টো কাটা চামচ ডাবানো। মিষ্টি থেকে দৃষ্টি তুলে প্রণয়ের দিকে তাকালো। বললো,
-‘ আমি মিষ্টি খাইনা। ‘
-‘ যার মাঝে এতো সুইটনেস রয়েছে তার সুইট খাওয়ার কী প্রয়োজন? ‘
-‘ সুইট কী? ‘
ভ্রুদ্বয় কুঁচকে প্রশ্নটি করলো শাহিনুর। প্রণয় হকচকিয়ে গেলো৷ পরোক্ষণেই মনে পড়লো, শাহিনুর তো পুঁথিগত শিক্ষা গ্রহণ করেনি। বাংলা একটুআধটু বুঝলেও ইংরেজিতে একেবারেই জ্ঞানশূন্য সে। মনে মনে ভীষণ রকম একটি হাসি দিলো। কিন্তু মুখ স্বাভাবিক রাখলো৷ নুরের দিকে অল্প ঝুঁকে গাঢ় চোখে তাকিয়ে দুর্বোধ্য স্বরে বললো,
-‘ সুইট মানে মিষ্টি আর সুইটনেস মানে মিষ্টত্ব। ‘
এটুকু বাক্য বলেই নিজের হাতে থাকা মিষ্টি’তে ইশারা করে বললো,
-‘ এগুলো মিষ্টি। ‘
আর নুরের দিকে আগাগোড়া দৃষ্টিপাত করে বললো,
-‘ আর তুমি পুরোটাই মিষ্টত্ব! ‘
কর্ণকুহরে এমন ভয়াবহ অসভ্য মার্কা বাক্য পৌঁছাতেই সর্বাঙ্গ শিউরে ওঠলো শাহিনুরের৷ খোলা জানালা ঝাপটে কয়েকচ্ছটা শীতল হাওয়া ছুঁয়ে দিলো তার সারা গা’য়ে৷ তার টানাটানা গভীর চোখে একজোড়া দুর্বোধ্য দৃষ্টি ডুবে ছিলো। সে দৃষ্টিতে কিছু একটা পরোখ করবার চেষ্টা করেও বৃথা হলো শাহিনুর। কেন জানি ভীষণ দুর্বল অনুভূত হচ্ছে। ঐ গাঢ় দৃষ্টিতে দীর্ঘ সময় চেয়ে থাকার সাহস হলো না। কেমন যেনো শরীর অসাড় হয়ে যাচ্ছিলো, বক্ষস্থলে কেউ মৃদু আর্তনাদ করছিলো। নিরাশচিত্তে দৃষ্টি সরিয়ে পিছন ঘুরে রুদ্ধশ্বাস ছাড়লো সে। প্রণয়েরও ঘোর কাটলো। বিরবির করে বললো,
-‘ শীট, আরেকটুর জন্য সম্মোহন করতে পারলাম না। ‘
শাহিনুরের শ্বাস-প্রশ্বাসের তীব্র শব্দে বক্ষেঃ শীতল স্রোত বয়ে গেলো প্রণয়ের। মৃদু পায়ে সে একদম জানালার কাছে এসে শাহিনুরের সম্মুখে দাঁড়ালো। বললো,
-‘ মুনতাহা প্র্যাগনেন্ট। সকল’কে মিষ্টি মুখ করানো হচ্ছে। তাই তোমার জন্যও নিয়ে এলাম। ‘
কথা শেষ করার পর পরই আবার বললো,
-‘ মানে মুনতাহা গর্ভবতী। মা হতে চলেছে। আমার ভাই’য়ের সন্তান তার পেটে বুঝছো? ‘
কান গরম হয়ে গেলো শাহিনুরের। নাকের ডগা লালচে আভায় ভরে ওঠলো। প্র্যাগনেন্ট মানে সে জানে। তার মান্নাত বুবুও তো মা হতে যাচ্ছিলো। তখনই শুনেছিলো এই কঠিন শব্দ’টা। বিয়ের পর নারী,পুরুষের মিলন ঘটলে তাদের পবিত্র মিলনে খুশি হয়েই সৃষ্টিকর্তা তাদের সন্তান দান করেন৷ এগুলো সে জানে, সে এতোটাই বোকা নয় যে এসব জানবে না৷ ডাক্তার’টা কতো নির্লজ্জ কীভাবে এসে তাকে এসব বলছে! নত হওয়া দৃষ্টিজোড়া নতই রাখলো শাহিনুর। দু’হাতে শাড়ি খামচে, ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে রইলো। এ দৃশ্য দেখে প্রণয়ের চোখজোড়া বড়ো বড়ো হয়ে গেলো৷ কয়েক পল স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে সামনে থেকে সরে গিয়ে পিরিচটা বেতের টেবিলে রাখলো৷ চিন্তা করলো, ‘ নুর কী কোনভাবে লজ্জা পেলো?’
মুনতাহা প্র্যাগনেন্ট। মানে সে মা হতে চলেছে। প্র্যাগনেন্ট শব্দ’টা মনে মনে উচ্চারণ করতে গিয়েও আঁটকে গেলো শাহিনুর। প্রণয়ের দিকে ফিরে তাকাতেই দেখলো প্রণয় সটান হয়ে দাঁড়িয়ে কী যেনো ভাবছে। তার ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো সে। একদম সামনে গিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো৷ তারপর এক দৃষ্টিতে প্রণয়ের গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবলো,
-‘ বাঁশীওয়ালা যখন জানবে তার ভালোবাসার মানুষটি মা হতে চলেছে। সে কি খুশি হবে? নাকি দুঃখ পাবে? ‘
রঙ্গন খুশি হবে এটা মনে আসতেই বিষাদময় অনুভূতিতে এক চিলতে ভালোলাগায় ছেয়ে গেলো শাহিনুরের। কিন্তু রঙ্গন দুঃখ পাবে এটুকু ভাবতেই বক্ষঃস্থল ব্যথিত হলো। সে ব্যথা স্পষ্ট ফুটে ওঠলো চোখেমুখে। তার ব্যথাহত দৃষ্টিজোড়ায় দৃষ্টি পড়তেই গম্ভীরচিত্তে প্রণয় বললো,
-‘ কী হলো? ‘
শাহিনুর মাথা নত করে ফেললো৷ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
-‘ আমার বাঁশিওয়ালা কোথায় আপনি জানেন? ‘
এমন একটি মুহুর্তে এমন একটি বাক্য শোনার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলো না প্রণয়। শান্ত পুরুষ’কে নিমিষেই অশান্ত করে দেওয়ার অপরিসীম ক্ষমতা একজন নারী’র রয়েছে। তার থেকেও ভয়াবহ ক্ষমতা রয়েছে শাহিনুরের। যে ক্ষমতা ডক্টর প্রণয় চৌধুরী’কে নিমিষেই অগ্নিকুণ্ডে পরিণত করতে পারে, আবার নিমিষেই বরফখণ্ডেও পরিণত করতে পারে। এ মূহুর্তে অগ্নিকুণ্ডে রূপ নিলো প্রণয়। আকস্মাৎ শাহিনুর’কে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের সন্নিকটে নিয়ে এলো। তার পুরুষালি বুকের পাটায় এসে ঠেকলো শাহিনুরের পিঠ। মাথা ঠেকলো তার ডান কাঁধ সইসই। শঙ্কিত হয়ে সরে যেতে উদ্যত হতেই নিজের বাহু দ্বারা শাহিনুরের কোমল,মসৃন গলা চেপে ধরলো। শাহিনুরের মনে হলো রক্তে,মাংসে তৈরি করা বলশালী একটি ছুঁড়ি চেপে ধরা হয়েছে তার গণ্ডস্থলে! ক্রোধে চোখ,মুখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে প্রণয়ের৷ দেহে যেনো দশ পুরুষের শক্তি ভর করেছে তার। শরীরের রক্ত টগবগ করছে। এই মেয়েটা ভালোবাসা বুঝে না এটা ডাহা মিথ্যা কথা বরং অতিরিক্ত বোঝে। এতো আবেগ এতো ভালোবাসা দেখে শরীরে আগুন ধরে গেছে আজ। গণ্ডস্থলে বেশ চাপ প্রয়োগ করে ক্রোধান্বিত হয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললো,
-‘ বাঁশিওয়ালা, বাঁশিওয়ালা,বাঁশিওয়ালা! এই একটা শব্দ আমার অন্তর জ্বালিয়ে দিয়েছে একেবারে। আর একবার এই শব্দ উচ্চারণ করলে একদম শেষ করে দেবো। ‘
কেশে ওঠলো শাহিনুর প্রণয়ের শক্তির সঙ্গে কোনক্রমেই পেরে না ওঠে চাপা কন্ঠে বললো,
-‘ আম্মা গো মরে গেলাম! ‘
এটুকু বাক্য শুনতেই হাত নরম করে ছিঁটকে সরে গেলো প্রণয়৷ ধপ করে মেঝেতে বসে কাশতে শুরু করলো শাহিনুর। দু’হাতের তালু দ্বারা ললাটের সমস্ত ঘাম মুছে নিয়ে হাত ঝাঁকি মারলো প্রণয়। সিনা উঁচু করে জোরে জোরে শ্বাস ছাড়লো আর নিলো৷ হাঁপাচ্ছে শাহিনুর নিজেও। তার দিকে এক পলক চোখ পড়তেই ঝড়ের বেগে সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসলো প্রণয়। রক্ত লাল দৃষ্টি ছুঁড়ে দিয়ে হিংস্র কন্ঠে বললো,
-‘ ভালোবাসা… খুব দরদ বাঁশিওয়ালার জন্য? বন্ধু, পরম বন্ধু? পরম বন্ধু যেদিন শত্রু হয়ে ধরা দেবে সেদিন বুঝবে। চরম মূর্খতার দাম দিতে হবে সেদিন। বাঁশিওয়ালা আমার বাঁশিওয়ালার হ্যাত! ‘
ধমকাতে ধমকাতে আবার ওঠে দাঁড়ালো প্রণয়৷ ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দু-হাত দু’কোমড়ে রেখে বারকয়েক পায়চারি শুরু করলো। শাহিনুরের শরীর’টা মৃদু কাঁপছে। ঠায় বসে চোখ বুজে আছে সে৷ প্রণয় আড়চোখে তাকে একবার দেখে নিয়ে চিৎকার করে বললো,
-‘ মূর্খ তো মূর্খই হয়। এতো রূপ দিয়ে কী হবে? কী হবে? মাথায় তো ঘিলু নেই। ‘
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো শাহিনুর৷ তার চোখ দিয়ে অশ্রু না ঝড়লেও প্রণয় বুঝতে পারলো ব্যাপক ভয় আর ব্যাপক কান্না লুকানোর তীব্র চেষ্টা করছে মেয়েটা। রাগে মাথাটা এবার অবশ লাগলো তার। দু’হাতে নিজের চুলগুলো খামচে ধরে বললো,
-‘ একে নিয়ে কী করবো আমি উফফ!’
#বাইজি_কন্যা
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_সংখ্যা_৩২ (প্রথমাংশ)
[৪৮]
রাত তখন ক’টা বাজে অনুমান করা গেলো না। ঘুমন্ত শাহিনুর’কে পাঁজাকোল করে বিরতিহীন হেঁটে চলেছে প্রণয়। তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে বুকে মুখ গুঁজে তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়ছে মেয়েটা৷ প্রতিটি নিঃশ্বাস একদম প্রণয়ের বুকের মধ্যখানে গিয়ে ঠেকছে। প্রণয় বুঝলো শাহিনুরের ঘুম বেশ গাঢ়৷ একবার গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলে সহজে জেগে ওঠে না৷ গুণে গুণে আর মাত্র চৌদ্দ দিন৷ তারপরই তাদের বিয়ে। অথচ সেইদিন তার রুক্ষ আচরণের স্বীকার হয়ে মেয়েটা কেমন যেনো মিইয়ে গেছে। আগে যাও দু’চারটা কথা বলতো এখন একেবারেই বলে না৷ বিয়েতে অসম্মতি পর্যন্ত দেয় না। হাজারটা কথা বলেও ওর মুখ থেকে একটি বর্ণ বের করা যায় না৷ সারাক্ষণ চুপমেরে বসে থাকে। খাবার দিলে খায়। না দিলে কিছুই বলে না৷ ঘুমানোর সময় নিবিড়ভাবে ঘুমিয়ে পড়ে৷ আগে মাঝেসাঝে প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতো৷ চুপিচুপি দেখতো তাকে। সেদিনের পর আর তাকায়ও না। বড্ড ভয় হচ্ছিল প্রণয়ের, তার নুর মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে না তো? রাগের বশবতী হয়ে বাচ্চা মেয়েটা’কে কঠিন আঘাত করেনিতো? হাজার হোক অল্প বয়স। কতোটুকুই বা বোঝার ক্ষমতা হয়েছে তার? মনের ভিতর অসংখ্য ভয় নিয়েই মান্নাতের সঙ্গে দেখা করে সে। সেদিনের ঘটনা পুরোটা বর্ণনা করে, সবটা শুনে কিঞ্চিৎ রাগান্বিত হয় মান্নাত। কিন্তু প্রকাশ করতে পারেনা৷ শুধু জানায় নুর’কে কিছু সময়ের জন্য তার কাছে ছেড়ে দিতে। প্রণয়ও ঠিক এটাই চাইছিলো। এমন পরিস্থিতি’তে নুরের পাশে একমাত্র মান্নাত’কেই প্রয়োজন। তার সঙ্গ যেহেতু পছন্দই করেনা যার সঙ্গ পেলে মেয়েটা একটু আরাম বোধ করবে তার কাছেই এলো প্রণয়। পাঁচফোড়ন গৃহ থেকে বেরিয়ে সোজা পেছনের রাস্তা ধরলো সে৷ জোছনার মৃদু আলোতে অনায়াসে হেঁটে চলেছে। চারপাশে ঝিঁঝি পোকারা অবিশ্রান্ত ডেকে যাচ্ছে। আকাশে খলখল হাসিতে পূর্ণ চাঁদ ওঠেছে আজ। সেই আলোতে শাহিনুর’কে সন্তর্পণে বক্ষেঃচেপে এগিয়ে গেলো। পুকুরঘাটের সিঁড়িতে বসে আছে মান্নাত বাইজি৷ অপেক্ষা করছে নুরের জন্য। প্রণয় তার সম্মুখে হাজির হতেই বিস্মিত হয়ে গেলো সে৷ বসা থেকে ওঠে বিচলিত কন্ঠে বললো,
-‘ কী হয়েছে নুরে’র? ‘
-‘ কিছু হয়নি মান্নাত। ঘুমে ছিলো তাই জাগানোর প্রয়োজন মনে করিনি এভাবেই নিয়ে এসেছি। ‘
স্বস্তির শ্বাস ত্যাগ করলো মান্নাত। প্রণয় সযত্নে শাহিনুর’কে সিঁড়িতে বসিয়ে মান্নাতকে ইশারা করলো ধরতে৷ মান্নাত পাশে গিয়ে বসে আদুরে হাতে শাহিনুর’কে ধরে নিজের বুকের সঙ্গে মিশিয়ে নিলো। মাথায় আলতো হাত বুলাতে বুলাতে আদুরে স্বরে ডাকলো,
-‘ নুরমনি… ও নুরমনি। ‘
নোনাপানিতে মান্নাতের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে ওঠলো৷ প্রণয় বললো,
-‘ সাবধানে ধরে বসো,আর দ্রুত জাগানোর চেষ্টা করো আমি আশপাশেই আছি। ‘
প্রণয় চলে গেলো। হুহু করে কেঁদে ফেললো মান্নাত। একহাতে শাহিনুরের কাঁধ জড়িয়ে অন্যহাতে গালে আলতো ছুঁয়ে ডাকতে লাগলো। কিছু সময় অতিবাহিত হতেই ঘুম আলগা হলো শাহিনুরের। আলস্য ভণিতায় পিটপিট করে তাকাতেই দেখলো সামনে কয়েক ধাপ সিঁড়ির পরেই পানি। চারপাশে কেমন আবছা আলো। অনুভব করলো সে কারো আদুরে বুক ছুঁয়ে আছে৷ সহসা ঘাড় কাত করে তাকাতেই মান্নাত’কে দেখে ‘বুবু’ বলে ডুঁকরে ওঠলো। এ’কদিনের জমিয়ে রাখা কান্না উগ্রে বেরিয়ে এলো তার। মান্নাত বুকে টেনে নিলো তাকে। আদুরে বুকের সান্নিধ্য পেয়ে সে বাচ্চাদের মতো ফোঁপাতে লাগলো। একসময় কান্না থামিয়ে চোখ বুজে লম্বা করে শ্বাস নিতে শুরু করলো৷ তার মাথায় আর পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে মান্নাত বললো,
-‘ মা মা গন্ধ খুঁজছিস? ‘
-‘ উহুম। ‘
-‘ তাহলে? ‘
-‘ বুবু বুবু গন্ধ পাচ্ছি। ‘
বক্ষঃস্থল মৃদু কেঁপে ওঠলো মান্নাতের। দু-চোখে ভরে ওঠা নোনাপানিগুলো অবিরত গাল বেয়ে পড়তে লাগলো। মাথায় চুমু খেয়ে বললো,
-‘ তুই নাকি ডাক্তার সাহেবের সাথে একেবারেই কথা বলছিস না? ‘
-‘ ডাক্তার খুব খারাপ বুবু, ডাক্তার খুবই ভয়ানক! ‘
এটুকু বলে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রইলো মান্নাত’কে। এক নিঃশ্বাসে প্রণয়ের সম্পর্কে বেশ বদনাম করলো। মান্নাত মৃদু হেসে বললো,
-‘ নুর ডাক্তার সাহেব তোকে ভালোবাসে, খুব ভালোবাসেরে তাই তো তোর মুখে অন্য পুরুষের নাম শুনে অমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। ‘
নুর অভিমানী কন্ঠে বললো,
-‘ আমিও তো বাঁশিওয়ালা’কে ভালোবাসি। বাঁশিওয়ালা যখন অন্য নারী’কে ভালোবাসার কথা বলে আমিতো রাগ করিনা, আমার তো খারাপ লাগে না। ‘
ম্লান হেসে মান্নাত বললো,
-‘ যেদিন সত্যি সত্যি মনেপ্রাণে কোন পুরুষ’কে ভালোবাসবি সেদিন তার আশেপাশে তুই ব্যাতিত অন্য কোন নারী’কেও কল্পনা করতে পারবিনা। যদি করিস ডাক্তারমহাশয়ের মতো তোরও অন্তর জ্বলেপুড়ে খাঁক হয়ে যাবে। ‘
-‘ তাহলে কী আমি বাঁশিওয়ালা’কে ভালোবাসিনা? ‘
-‘ উহুম একটুও না। ‘
অনেক কিছু বোঝালো মান্নাত৷ শারমিন বেঁচে থাকতে প্রণয় যে তার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলো৷ এই সত্যির মাঝে একটু মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বললো, শারমিন তার সঙ্গে প্রণয়ের বিয়ে দিতে চেয়েছিলো৷ এমন কথা শুনে যেনো আকাশ থেকে পড়লো শাহিনুর৷ অবাকান্বিত কন্ঠে বলে ওঠলো,
-‘ আম্মা উনার সাথে আমার বিয়ে দিতে চেয়েছিলো? কিন্তু আম্মা যে বলতো জমিদার বংশের সবাই’কে ঘৃণা করে।’
একটু মিথ্যা বলে যদি নুর’কে সমস্ত বিপদ থেকে রক্ষা করা যায় তাহলে তো ক্ষতি নেই। তাই মান্নাত বললো,
-‘ সখী যখন ডাক্তার সাহেব’কে জানতো না তখন ঘৃণা করতো। যখন ডাক্তারের সম্পর্কে জানলো মানুষ হিসেবে তিনি কতো ভালো বুঝলো তখন আর আপত্তি করেনি৷ রাজি হয়ে গিয়েছিলো। ‘
সব শুনে স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো নুর। মান্নাত বললো,
-‘ আমার একটা কথা রাখবি ? ‘
-‘ বলো… ‘
-‘ আমাকে ছুঁয়ে কথা দে রাখবি? ‘
পুনরায় কেঁদে ফেললো শাহিনুর। মান্নাত’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
-‘ এই দুনিয়ায় এখন তুমি ছাড়া আপন বলে আর তো কাউকে অনুভব করিনা বুবু৷ আমি জানি তুমি যা বলবে আমার ভালোর জন্যই বলবে৷ ঠিক আম্মার মতোন। ‘
-‘ তাহলে ডাক্তারসাহেব’কে বিয়ে করতে রাজি হো নুর৷ বিশ্বাস কর এতেই সবার মঙ্গল হবে। তোর আম্মাও খুশি হবে৷ ‘
নীরব হয়ে গেলো শাহিনুর। ক্ষণকাল চুপ থেকে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। তারপর কতোক্ষণ সময় কেটে গেলো ওরা জানেনা৷ হঠাৎ প্রণয়ের আবির্ভাব ঘটলো। জানালো এবার ফিরতে হবে। শাহিনুর প্রচণ্ড শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো মান্নাত’কে বললো,
-‘ বুবু আমার খুব কষ্ট হয়। ‘
ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করলো মান্নাত। মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
-‘ নুর, মানুষের জন্য দুনিয়া’টা একটা সরাইখানা৷ এখানে কেউ চিরকাল থাকতে পারেনা। তাই যতোকাল থাকা যায় ততোকাল একটু স্বস্তি নিয়ে থাকাটাই শ্রেয়৷ যে স্বস্তিটুকু আমরা পাইনি সে স্বস্তিটুকু তুই পাবি। মনে রাখিস কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা একটু হলেও কঠিন। কিন্তু সুঁচ দিয়ে কাঁটা তোলা খুব সহজ৷ তোর জীবনে সেই সুঁচ এই ডাক্তারসাহেব! ‘

মান্নাত চলে গেলো। শাহিনুর ওঠে দাঁড়াতেই একটি ইটের খন্ড পায়ের তলায় বাজতেই ‘আহ’ সূচক শব্দ করে ওঠলো। আঁতকে ওঠে প্রণয় নিচে চেয়ে দেখলো শাহিনুরের পা খালি। মনে পড়লো আসার সময় কোলে চড়ে এসেছে। যাওয়ার সময় জুতার প্রয়োজন হতে পারে বেমালুম ভুলে গিয়েছিল সে। শাহিনুর পায়ে ব্যথা পেয়ে চোয়াল শক্ত করে রাগি চোখে তাকালো প্রণয়ের দিকে। প্রণয় বেশ বুঝলো যতোদোষ এখন এই ডাক্তারের। তাই কোন কিছু না ভেবে আবারো কোলে তুলে নিলো তাকে। শাহিনুর ছটফটিয়ে ওঠলো। নিচু কন্ঠে বললো,
-‘ কি করছেন, ছাড়ুন আমায় ছিঃ ছিঃ। ‘
তাচ্ছিল্য হেসে হাঁটতে শুরু করলো প্রণয়। বললো,
-‘ হুহ্ আসার সময় এভাবেই এসেছো। এখন ঢং করোনা।’
অভিমানে, ক্রোধে গাল ফোলালো শাহিনুর। সে আশ্চর্য রাগান্বিত রূপ দেখে একগাল হাসলো সে। রাতের মায়াবী আশ্চর্য সৌন্দর্য, হৃদয় আহত করা শাহিনুরের রূপে মুগ্ধ হয়ে হঠাৎ মাঝপথে থেমে গেলো সে৷ একবার শাহিনুরের মুখপানে আবার দূর আকাশপানে তাকালো। চোখ বন্ধ করে লম্বা একটি শ্বাস ছাড়লো। প্রকৃতির মৃদুমন্দ বাতাসে শরীরজুড়ে অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেলো। বক্ষঃস্থলের ঢিপঢিপ আওয়াজ শুনতে পেলো অতি সুক্ষ্মভাবে। অনুভব করলো শাহিনুরের ছোট্ট প্রাণের ধুকপুকানিও৷ একটি নিস্তব্দ রাত৷ চারিদিকে জোৎস্নায় মাখামাখি। আকাশে চাঁদের হাসি। হৃদয়ের অতি নিকটে প্রিয়তমার উষ্ণ নিঃশ্বাস সব মিলেমিশে রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠলো প্রণয়ের মন৷ এক পলক চাঁদের পানে তাকিয়ে আরেক পলক শাহিনুরের দিকে তাকালো। সহসা উচ্চধ্বনি তুলে বলে ওঠলো,
‘ শুন হে আকাশ, শুন হে বাতাস, শুন গো অবুঝ ছোট্ট মন। আমার বোকাসাহসীর কিছু কথা শুনে যাও গো তোমরা। সে বড়োই রূপবতী তার রূপের জাদু’তে করেছে আমার মন চুরি। হয়েছে আমার মনোহারিণী। হরিণাক্ষী দৃষ্টির প্রেমে পড়ে করে নিলাম তাকে হৃদয়াক্ষী। মন বলে দূর আকাশে চন্দ্রের আলো যেনো সে। কাছে যেতে দেয় না মোরে দূরে থাকতে পারিনারে। সে কেন বুঝেনা মোরে, সে কেন বুঝেনারে… এটুকু বলে শাহিনুর’কে কিঞ্চিৎ ঝাঁকিয়ে বলে ওঠলো,
-‘ ওগো মোর প্রিয়দর্শিনী কেন বুঝনা তুমি মোরে?’
প্রণয়ের প্রলাপ শুনে আকস্মাৎ এভাবে ঝাঁকিয়ে দেওয়াতে পড়ে যাওয়ার ভয়ে চোখ,মুখ খিঁচে দু’হাতে প্রণয়ের শার্ট খামচে ধরলো শাহিনুর৷ সুযোগ পেয়ে অতিসন্তর্পণে আরেকটু বুকে চেপে ধরলো প্রণয়। প্রকৃতি যেনো উচ্চরোলে বলতে শুরু করলো,
‘ যাবজ্জীবন হয়ে যাক এ সময়টার…’
#বাইজি_কন্যা
#পর্ব_সংখ্যা_৩২ (শেষাংশ)
[৪৯]
দেখতে দেখতে কেটে গেলো চৌদ্দদিন৷ অলিওরের চল্লিশা শেষে নিকটাত্মীয়’রা পাঁচফোড়ন গৃহেই অবস্থান করলো। প্রণয়ের সিদ্ধান্ত আগামীকালই তার আর নুরের বিয়ের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে৷ তার সিদ্ধান্তে সকলে সায় দিলো। এতে অবশ্য বিরূপ প্রভাব পড়লো পলাশের মনে। মা’য়ের ওপর ভীষণ চোটপাট করে শেষে বড়ো মা’য়ের হাতের থাপ্পড় খেতে হয়েছে তাকে। ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে গৃহ ছেড়ে বেরিয়ে গেছে সে। যাওয়ার আগে অবশ্য মুনতাহা’কে হুমকি দিয়ে গেছে। সে যদি সবার মতো এই বিয়েতে যোগ দেয় তাহলে পেটের সন্তান’টাকে আর দুনিয়ার আলো দেখতে দেবেনা। মুনতাহাও ভয়ে আচ্ছন্ন হয়ে আর কক্ষ ছেড়ে বের হয়নি। এতে অবশ্য কানাঘুষা হচ্ছে। বদনাম হচ্ছে। তার স্বামী নামক পুরুষ’টা কতো ভয়ংকর সবাই জানে। তবুও বদনাম তারই হচ্ছে। কেউ জানেনা এর পেছনে পলাশ রয়েছে। গৃহের সকলে জানলেও আত্মীয়’রা কেউ জানলোও না বুঝলোওনা বদনাম ঠিকই করলো।

কাঙ্ক্ষিত সে মুহুর্ত’টি চলে এলো৷ প্রণয় আর শাহিনুরের বিয়ের দিন আজ। সকাল থেকে বেশ নিয়মকানুন মেনে শাহিনুর’কে গোসল করানো হয়েছে। এতো সব আয়োজন এত কোলাহলে দম বন্ধ লাগছে। তবুও মুখবুঝে সবটা সহ্য করে নিচ্ছে।লোকসমাগমে একের পর এক নিয়ম সম্পন্ন হচ্ছিল আর শাহিনুরের মনের ভিতর ক্ষুদ্রাকারে ঝড় বয়ে যাচ্ছিলো৷ সে ঝড়ের বেগ তীব্রবেগে বাড়িয়ে দিলো এক নিকটাত্মীয়ের বউ। যিনি সম্পর্কে প্রণয়ের ভাবি হয়৷ নাম সুহানা। সে অবাকান্বিত সুরে হঠাৎ বলে ওঠলো,
-‘ ইশ এমন তুলতুলে নরম দেহ ঐ বিশাল দেহ দিয়ে একেবারে পিষে ফেলবে সহ্য করা যায় এসব! ‘
সকলেই হৈহৈ করে হেসে ওঠলো৷ শরীর ঝিমঝিম করে ওঠলো শাহিনুরের। লজ্জায় আরক্ত হলো তার শুভ্র মুখশ্রী। আপনমনে ছিঃ ছিঃ করে ওঠলো সে।
সব শেষে ভাবি’রা মিলে বউ’য়ের সাজে সাজালো তাকে। লাল বেনারসি পরালো, ছোট্ট নরম দেহে শক্ত ভারি ভারি গহনায় ভরিয়ে দিলো। ঠোঁটে খয়েরি রঙের লিপস্টিক লাগিয়ে আবারো সুহানা ভাবি বললো,
-‘ ইশ টসটসে ঠোঁটজোড়ার আজ বুঝি রক্ষা নেই!’
সকলে আবারো খলখলিয়ে হেসে ওঠলো। শাহিনুর ভীষণ বিব্রত বোধ করলো। কেন জানি এমন পরিস্থিতি এমন বাক্যের আঘাত সহ্য করতে পারলো না সে। এমন সময় খবর এলো কাজী এসে গেছে। এবার বিয়ে পড়ানো হবে। এ খবর আসার মিনিট কয়েক পরেই ভাবিরা মিলে একটি লাল সুতি শাড়ি দিয়ে শাহিনুরের সামনে দেয়াল পেতে দিলো। শাড়ির এপাশে শাহিনুর ওপাশে কাজির সঙ্গে পল্লব চৌধুরী এবং প্রণয়ের মামা দাঁড়িয়ে আছে। এমন পরিস্থিতি’তে শাহিনুরের মস্তিষ্ক একে বারেই ফাঁকা হয়ে গেলো৷ ক্ষণকাল পর বরবেশে কক্ষে প্রবেশ করলো প্রণয় চৌধুরী। যার পরনে সোনালি রঙের শেরওয়ানি। মাথায় বরের মুকুট। এক নজরে তাকালে এ মুহুর্তে তাকে তার পূর্ব বংশীয় জমিদারদের মতোই লাগছে। যারা তার মতো সাহেবি পোশাক পরিধান করতো না। বরং বেশভূষায় সব সময় জমিদারিত্ব ফুটিয়ে তুলতো। প্রণয়ের দিকে অপলকে চেয়ে রইলো ভাবি’রা। শবনম বললো,
-‘ মাশাআল্লাহ। ‘

নিয়ম অনুসারে কাজী তার বক্তব্য উপস্থাপন করলো। প্রণয়’কে কবুল বলতে বলা হলো। সে শান্ত কন্ঠে পরপর তিন কবুল পড়লো। সকলেই বলে ওঠলো আলহামদুলিল্লাহ। নিজের কাজ সম্পন্ন করে শাড়ির বেড়ার ওপাশে শাহিনুরের মুখোমুখি বসলো প্রণয়। তাদের মাঝে কেবল একটি শাড়ির দেয়াল। এবার কাজী’কে ইশারা করলো প্রণয়। কাজী আবারো যথার্থ বাণী আওড়িয়ে শাহিনুর’কে কবুল বলতে বললো,
শাহিনুর যেনো দিনদুনিয়া ভুলে চলে গেলো ভিন্নজগৎে। ভাবিরা ধাক্কা দিলো। আশপাশ থেকে সকলেই বলে ওঠলো, কবুল বলো,কবুল বলুন। কিন্তু শাহিনুর অনড়। কতক্ষণ আর চুপ করে থাকবে? চারপাশ থেকে অসংখ্য মানুষ এভাকে চিল্লাচ্ছে। শেষে নিজের আম্মা আর মান্নাত বুবু’কে স্মরণ করে ভাঙা আওয়াজে ‘কবুল ‘ শব্দটুকু উচ্চারণ করলো শাহিনুর। মিহি সে সুরে কবুল শুনে সর্বপ্রথম প্রণয়ের মুখে উচ্চারিত হলো,
-‘ আলহামদুলিল্লাহ। ‘
দ্বিতীয়বার কবুল পড়ার পর যখন একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো শাহিনুর। কোন উপায়েই তৃতীয় কবুল বললো না সে৷ তখন হাত বাড়িয়ে শাড়ি উঁচিয়ে শাহিনুরের সন্নিকটে চলে এলো প্রণয়। লাল টুকটুকে বউ’টি’কে সন্তর্পণে দৃষ্টিপাত করে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
-‘ প্রিয়দর্শিনী, মাত্র তিন বার কবুল বলারই তো ব্যাপার। বলে দিলেই হয়। ‘
তবুও শাহিনুর থম মেরে বসে রইলো৷ প্রণয় আবারও বললো,
-‘ প্রেম এক তরফা হয়েছে বলে বিয়েটাও কি এক তরফা হবে নাকি নুর? এই প্রণয় চৌধুরী’র দিলের রানী হওয়ার জন্য মুখ ফুটে তিনবার কবুল’ই তো বলতে হচ্ছে। বলো নুর দু’বার যখন বলে দিয়েছো, আর একবার বলতে খুব বেশী কষ্ট হবে না। ‘
অনেকক্ষণ সময় নিয়ে তৃতীয় কবুল পড়লো শাহিনুর। বিয়ে সম্পন্ন হলো তাদের। কাজির সঙ্গে বেরিয়ে গেলো প্রণয়। আত্নীয়স্বজনে ভরপুর পাঁচফোড়ন গৃহ। বিয়ে সমাপ্ত। এবার বউ দেখার পালা। শাহিনুর’কে নিয়ে বসানো হলো বৈঠকখানায়। বৈঠকখানায় সর্বপ্রথম শাহিনুর পলাশ’কে দেখতে পেলো৷ কি ভয়ানক তার দৃষ্টিজোড়া। অমন অগ্নিচক্ষু’তে তাকিয়ে হৃদয় কেঁপে ওঠলো তার। এমন সময় প্রণয় এসে বসলো পাশে। শাহিনুর দৃষ্টি নত করে ফেললো। বিয়ের সাজে কপোত-কপোতী’কে দেখে গা জ্বলে ওঠলো পলাশের। অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে ত্যাগ করলো বৈঠকখানা। যা দেখে তাচ্ছিল্যমিশিয়ে হাসলো প্রণয়। শাহিনুরের দিকে একটু ঘেঁষে বললো,
-‘ আমার এক বন্ধু এসেছে কথা বলে আসি। ‘
প্রণয় বৈঠকখানার সাইটে চলে গেলো৷ আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে পরিচয় করানো শুরু হলো শাহিনুর’কে৷ এমন সময় প্রণয়ের এক মামি বললো,
-‘ চেহারা তো মন্দ না কিন্তু বংশ পরিচয় তো নাই! ‘
তাকে তাল মিলিয়ে দূর সম্পর্কের ফুপু বললো,
-‘ ঠিক বলেছো রূপ দেখে পুরুষ মানুষের হুঁশ থাকে না এখানেই প্রমাণিত। বংশের মান সম্মান ডুবিয়ে পুরুষ মানুষ মজা মস্তি করতে পছন্দ করে! ‘
মামি আবার বললো,
-‘ শেষমেশ আমাদের প্রণয় এমন কাজ করবে ভাবতেও পারিনি!’
ফুপু বললো,
-‘ একটা বাইজির মেয়ে এ বাড়ির বউ হলো! বাপের পরিচয় নাই এমন বউ ঘরে আনলো প্রণয়। আহারে! ‘

চারপাশ থেকে অগণিত মন্দ ভাষায় মনটা বিষিয়ে ওঠলো শাহিনুরের। আশপাশে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো প্রণয় একটু দূরে দাঁড়িয়ে কারো সঙ্গে কথা বলছে। কথার ফাঁকে তার দিকে তাকাচ্ছেও। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল শাহিনুর। শেষে প্রণয়ের মা প্রেরণা যখন সকলের তালে তাল মিলিয়ে বললো,
-‘ আমার ঘরে আসার কথা জমিদারের বাচ্চা অথচ আসলো এক বাইজির বাচ্চা। ‘
এবার আর সহ্য করতে পারলো না শারমিন বাইজির মেয়ে শাহিনুর। নিভু নিভু প্রদীপ হঠাৎ জ্বলে ওঠলো। জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকা লাল টুকটুকে বধূ যখন এভাবে হঠাৎ জ্বলে ওঠলো। সিনা উঁচু করে সকলের সামনে দাঁড়িয়ে সকলের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো উপস্থিত সকলেই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো। একদিকে শাহিনুরের অপরূপ সৌন্দর্য্য অপরদিকে তেজস্বী দৃষ্টি ভীষণ রকম একটি ধাক্কা লাগলো বুকে। ইতিহাসে এ ঘটনা কি প্রথম ঘটলো? কোন নারীর সৌন্দর্যে অন্য দু’চারজন নারীর হৃদয়ে আঘাত পড়ার ঘটনা! সকলের ধ্যান মগ্ন হলো। শাহিনুরের তীব্র স্বরে বলা কথাগুলো শুনে,
-‘ আমি বাইজি কন্যা, এই কথাটি কখনোই অস্বীকার করিনি, করবোও না। শারমিন বাইজির কন্যা হিসেবে আমি গর্বিত। এখানে উপস্থিত দু’জন ব্যক্তি খুব ভালো করেই জানে আমার পরিচয়। বাইজি কন্যা ছাড়াও এই শাহিনুর শায়লার আরেকটি পরিচয় আছে। সে পরিচয় আপনারা জানতে চান? ‘
শাহিনুর যখন তেজি রূপে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো তখনি তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে প্রণয়। তাই তার মুখে এহেন কথা শুনে বিস্ময়ান্বিত হয়ে আকস্মাৎ শাহিনুরের তেজস্বী মুখশ্রী’তে দৃষ্টিপাত করলো। অনুভব করলো তার হৃৎপিণ্ডে ভয়ানক কম্পন ধরেছে। চারদিকে এতো মানুষ জন, সকলের দৃষ্টি’তেই সীমাহীন বিস্ময়। অগাধ কৌতুহল। আর প্রণয়ের দৃষ্টি’তে আকুলতা, বক্ষঃস্থলে তীব্র উত্তেজনা। সেই উত্তেজনাটুকু দমিয়ে রাখতে না পেরে সকলের সম্মুখেই শাহিনুরের পাশে এসে দাঁড়ালো প্রণয়। নিজের অধিকারের জোরে এ প্রথম স্বস্তি সহকারে শাহিনুরের কোমল হাতটি চেপে ধরলো। এ প্রথম শাহিনুরও প্রণয়ের থেকে নিজের হাতটি ছাড়ানোর চেষ্টা করলো না৷ হালাল স্পর্শটি সাদরে গ্রহণ করে প্রবল দৃঢ়তার সঙ্গে ঘাড় বাঁকিয়ে প্রণয়ের দিকে নির্লিপ্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ৷ ভরসার সহিত হাতটি আবদ্ধ করে নিয়ে প্রণয় বললো,
-‘ আমি জানতে চাই নুর তুমি বলো? ‘
ছোট করে নিঃশ্বাস ছেড়ে প্রণয়ের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে উপস্থিত সকলের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সে।একে একে সকলের দিকে দৃষ্টি বুলিয়ে শেষে তাকালো অরুণা এবং প্রেরণার পানে। তাদের ভয় মিশ্রিত শুঁকনো মুখশ্রী দৃষ্টিগোচর হতেই তাচ্ছিল্যেমাখা একটি হাসি দিয়ে বললো,
-‘ সত্যের জয় নিশ্চিত। শারমিন বাইজির মেয়ে সততার সঙ্গে আজ নিজের সম্মান রক্ষা করবে।’
একে একে বহুবছর পূর্বে শারমিন বাইজির জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা বিবৃতি করলো সে। অলিওর এবং তার মা’য়ের মুখোশ উন্মোচন করলো শাহিনুর শায়লা। শেষে নিজের পূর্ণ পরিচয়ও সকলকে জানালো৷ বাকরুদ্ধ হয়ে ঘৃণার দৃষ্টিতে দুই মা’য়ের দিকে তাকালো প্রণয়৷ দৃঢ় কন্ঠে বললো,
-‘ আপনারা দু’জন এ কোন পাপের ভাগিদার ! ‘
মাথা নত হয়ে গেলো অরুণা,প্রেরণার। পল্লব চৌধুরী সহ উপস্থিত সকলেই বিস্ময়ে কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে গেলো। সকলেই একডাকে বললো,
-‘ তার মানে ও বাইজি কন্যা নয়? সম্পর্কে অলিওরের ভাতিজি ! ‘
[৫০]
পুরো গৃহ নীরবতায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে৷ সকলে কোন শোক পালন করছে বোঝা দায়। সামান্য বাইজি কন্যা, বাইজি কন্যা বলে যারা চিল্লাতো আজকের পর সেই চিল্লানো বন্ধ হয়ে যাওয়ার শোক? নাকি পলাশ চৌধুরী’র সমস্ত আকাঙ্ক্ষায় ভাঁটা পড়ার শোক? কোন শোকে চারদিকে এমন নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে বোধগম্য হলো না৷ শাহিনুর ভেবেছিলো সবার মতোই শোকে জর্জরিত হয়ে প্রণয় ভুলে যাবে আজকের রাতটির কথা৷ কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে শবনম আর জেবা’কে দিয়ে পুষ্পেসজ্জিত কক্ষে নিয়ে এলো শাহিনুর’কে। যার ফলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লো শাহিনুর৷ সেই উদ্বিগ্নতা চারগুণ বেড়ে গেলো শবনম এবং জেবার কথাবার্তা শুনে৷ জেবা বললো,
-‘ শোনো, ফজরের আজানের আগেই গোসল করে নিবা। আমার মতো ভুল করে আবার বকা খেও না। জানো আমি কি করেছিলাম… ‘
শবনম জেবা’কে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বললো,
-‘ নুর প্রণয় এলে দু’জন মিলে দু’রাকাত নফল নামাজ পড়ে নেবে৷ ওখানে এক গ্লাস দুধ আছে নামাজ শেষে প্রণয়’কে দেবে আর একটি পান বানানো আছে ওটা তুমি খাবে৷ ‘
হৃৎস্পন্দন ক্রমাগত বেড়েই চলেছে শাহিনুরের৷ তার মধ্যে শবনমের কথা শুনে পালঙ্কের পাশে টেবিলে থাকা এক গ্লাস দুধ আর পান দেখে ভীষণ কৌতুহলদ্দীপক হলো৷ জড়ানো কন্ঠে বললো,
-‘ আমি পান খাইনা, খেতেও পারিনা৷ ‘
জেবা বললো,
-‘ এটা বললে চলবে না। আমরা সবাই এমন নিয়ম পালন করেছি তোমাকেও করতে হবে। এটা নিয়ম তাইনা আপা৷ ‘
শবনম সম্মতি দিয়ে বললো,
-‘ হ্যাঁ নুর যা বলেছি অবশ্যই মানবে। আমরা এবার আসি। ‘
শাহিনুরের বুকটা ধক করে ওঠলো। সহসা শবনমের একটি হাত চেপে ধরলো। শবনম ফিরে তাকাতেই দেখলো, শাহিনুরের চোখেমুখে ভয়ের ছাপ। নিঃশ্বাসে প্রচণ্ড অস্থিরতা। সবটা বুঝে সে শাহিনুর’কে বুকে টেনে নিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
-‘ ভয় পেও না বোন। আমার ডাক্তার দেবর’টা তোমাকে খুব ভালোবাসে সে তোমায় ভালোবাসায় মুড়িয়ে রাখবে দেখো। প্রথম রাত’তো তাই এমন হচ্ছে আমাদেরও হয়েছে। ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে। আর হ্যাঁ একটুও ভয় পাবে না। মনে রেখো যা হবে এটা প্রতিটা মেয়ের সাথেই হয়। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এটা খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা। ‘
আর সময় ব্যয় করলো না শবনম দ্রুতপায়ে কক্ষ ত্যাগ করলো সে৷ কিন্তু জেবা খানিক সময় পর গেলো। যাওয়ার আগে শাহিনুরের কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললো,
-‘ আমার দেবর’কে বলো রয়ে সয়ে হুম! ‘
শাহিনুর আঁতকে ওঠলো। ভয়ে থরথর করে কাঁপতে শুরু করলো তার হাত,পা। আজ তার সাথে কি হতে পারে কল্পনা করতেই গা শিউরে ওঠছে। অন্তঃকোণে সুক্ষ্ম এক ব্যথা কাজ করছে। হাঁসফাঁস লাগছে খুব৷ কান্না করতে ইচ্ছে করছে,ছুটে চলে যেতে মন চাচ্ছে। আজ বাসর রাত নাকি ভয়ংকর রাত? পুষ্পসজ্জিত বিছানার দিকে তাকিয়ে ভাবলো,
-‘ এটা ফুলশয্যা নাকি মৃত্যুশয্যা? ‘
সারা শরীর অসাড় হয়ে আসলো শাহিনুরের। চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো৷ সে মুহুর্তে প্রণয় কক্ষে এলো। দুপুরে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা স্মরণ করে শাহিনুরের প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধ দৃঢ় থেকেও দৃঢ়তর হলো। নিজের পরিবারের প্রতি ঘৃণা পূর্বেই ছিলো। আজকের পর যা আরো গাঢ় হলো৷ সবচেয়ে বেশী ঘৃণা বোধ করলো নিজের দাদির প্রতি। অনুভব করলো, নারী’রাই নারী’দের বড়ো শত্রু। একজন নারী খুবই নিখুঁত ভাবে আরেকজন নারী’র জীবনে ধ্বংসস্তূপ বয়ে আনতে পারে৷ বক্ষঃস্থলে প্রশান্তি ঠেকলো এই ভেবে, তার দাদির করা ভুলটুকু অজান্তে কিছুটা হলেও শুধরে নিলো সে। ভালোবাসা পবিত্র। আর এই পবিত্র অনুভূতিটুকুর জন্য আজ এতো বড়ো প্রাপ্তি পেলো সে। কিঞ্চিৎ পাপমোচন করলো জমিদার বংশের। প্রণয়ের উপস্থিতি টের পেয়ে অনড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো শাহিনুর। ধীরপায়ে প্রণয় এসে তার পেছনে দাঁড়ালো। মৃদু স্বরে বললো,
-‘ স্নায়বিক অবস্থার তো বেহাল দশা। আমি কিন্তু একদম ঠিক আছি। ‘
কথা শেষ করে শাহিনুরের অতিনিকটে চলে এলো প্রণয়। তার পুরুষালি উত্তপ্ত নিঃশ্বাসগুলো শাহিনুরের ঘাড় ছুঁয়ে মেখে গেলো সর্বাঙ্গে। বাসর রাতে বধূ বেসে ছিপছিপে দেহটির কাঁপাকাঁপি দেখে বুকের ভিতর তুমুল কলহ শুরু হলো। সেই কলহ’কে দমন করে শাহিনুরের কাঁধ ছুঁয়ে নিজের সামনে ঘোরালো। প্রণয়ের স্পর্শ পেয়ে যে ভয়ানক প্রতিক্রিয়া মেয়েটা দেখালো তাতে খুব বেশী কথা বলতে পারলো না সে। শুধু সন্তর্পণে মাথায় হাত রাখলো। যার ফলে শাহিনুরের উদ্বিগ্নতা কিঞ্চিৎ হলেও কমলো। আর প্রণয় রুদ্ধ শ্বাস ছেড়ে নির্নিমেষে তাকিয়ে বললো,
-‘ একটি চুমু খাওয়া ছাড়া আজ তোমাকে আমি কিছুই করবো না নুর৷ সেই একটি চুমুর জন্যই অনুমতি চাইছি। ‘
শাহিনুর ত্বরিতবেগে দু’কদম পিছিয়ে গেলো। তার কাঁধ থেকে প্রণয়ের হাতদুটোও ছেড়ে গেলো। প্রণয় তার সদ্য বিবাহিতা বউ’কে আগাগোড়া দৃষ্টিপাত করে নিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বললো,
-‘ আমি পেশায় একজন ডক্টর বাংলায় যাকে বলে সেবক৷ ডক্টর হিসেবে আমি যেমন মানবদেহ কেটে দু’ভাগ করতে পারি। আবার জোড়া লাগাতেও পারি। আমার চরিত্রের দু’টো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এক, আমি ভীষণ শান্ত এবং স্বাভাবিক। দুই, আমি ভীষণ অশান্ত এবং অস্বাভাবিক। কিন্তু আজ তোমার সামনে শুধু ডক্টর প্রণয় চৌধুরী বা জমিদার পুত্র দাঁড়িয়ে নেই। আজ তোমার অর্ধাঙ্গ দাঁড়িয়ে আছে তোমার সামনে। আর আমার অর্ধাঙ্গিনী হয়ে দাঁড়িয়ে আছো তুমি। এ মুহুর্তে আমি অনুভব করছি আমার অর্ধাঙ্গিনী’র কপালে আমার একটি উষ্ণ চুমুর প্রয়োজন। কিন্তু ভুল করে ফেললাম অনুমতি চেয়ে। আমার খিদে পেলে কি ভাত খাওয়ার জন্য আমি আমার পাকস্থলির কাছে অনুমতি চাইবো? নিশ্চয়ই না। তেমনি আমার অর্ধাঙ্গিনী’র চুমুর প্রয়োজন পড়লে তার কাছেও অনুমতি নেওয়ার দরকার কী? আমার অর্ধেক অঙ্গের প্রতি সব ধরনের অধিকারই রয়েছে আমার। ‘
আচম্বিত দৃষ্টি’তে তাকালো শাহিনুর। প্রণয়ের অধরে দুর্বোধ্য হাসি৷ সে হাসি দেখে শাহিনুর অকপটে জবাব দিলো,
-‘ আমার চুমুর প্রয়োজন নেই। ‘
এগিয়ে এলো প্রণয়। শাহিনুর পিছিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই বলিষ্ঠ হাত বাড়িয়ে কোমড় পেঁচিয়ে সন্নিকটে নিয়ে এলো প্রণয়। পুরু ঠোঁটজোড়া এগিয়ে গাঢ় ভাবে ললাট চুম্বন করলো৷ চোখ মুখ খিঁচে রাখলো শাহিনুর। বাঁকা হেসে প্রণয় বললো,
-‘ অতি আদুরে বাচ্চারা গবেট হয় তারা খেতে চায় না৷ বাবা,মা জোর করে করে খাওয়ায়। আমার কপালে অতি আদুরে বউ জুটেছে। সে জানে তার স্বমীর ভালোবাসার অভাব নেই আর না চুমুর অভাব আছে৷ তাই অহংকারে নিজে থেকে কিছু চাওয়ার প্রয়োজন মনে করে না সে৷ বউ’কে চুমু না খেলে সংসারে অশান্তি বাড়ে। নতুন সংসার আমার কোন প্রকার অশান্তি চাইনা৷ ‘
হকচকিয়ে গেলো শাহিনুর। প্রণয় চোখ বড়ো বড়ো করে ভয় দেখিয়ে বললো,
-‘ সংসারে অশান্তি কমানোর মূলমন্ত্র হচ্ছে বউ’কে চুমু খাওয়া৷ ‘
[৫১]
আজ প্রণয়, নুরের বাসর রাত। এ’দিনটা’কে স্মরণীয় করার জন্য একটি উদ্যেগ নিলো পলাশ। বেশ খোশমেজাজে বাইজি গৃহে প্রবেশ করলো সে৷ হাতে মস্তবড়ো একটি কাপড়ের ব্যাগ৷ তাতে ভারী কিছু রয়েছে বোঝা গেলো৷ নির্দিষ্ট একটি কক্ষে গিয়ে এক ভৃত্য’কে দিয়ে খবর পাঠালো মান্নাত’কে। মান্নাত এলো প্রায় পনেরো মিনিট পর। এতো দেরি হওয়াতে পলাশ রেগে গিয়ে বিশ্রি গালাগাল করলো তাকে। সেসব নীরবে হজম করে নিলো সে। অন্যদিন অল্পস্বল্প জবাব দিলেও আজ একদম নিশ্চুপ রইলো৷ কারণ আজ প্রণয়,নুর বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছে। এ মুহুর্তে নুর রয়েছে প্রণয়ের বাসর ঘরে৷ বহু আকাঙ্ক্ষিত নারী’টি চোখের সামনে ছোট ভাইয়ের বউ হয়ে গেলো! এ দহন সহ্য করার মতো মানুষ পলাশ নয়৷ তবুও সহ্য করতে হবে করুণা হলো খুব। সে করুণা থেকেই নীরবে সব গালিগালাজ হজম করলো। গালাগাল করতে করতেই অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে মান্নাত’কে বিছানায় ছুঁড়ে ফেললো পলাশ। দরজা বন্ধ করে পরনের শার্ট খুলতে খুলতে বিশ্রি গালি দিয়ে বললো,
-‘ ঐ বাইজির মেয়ের কতোবড়ো সাহস, কতো বড়ো সাহস আমার চোখের সামনে আমার ভাই’য়ের নামে কবুল পড়লো, আমার ভাই’য়ের বাসর ঘরে ঢুকলো। ওকে ছিঁড়ে খাওয়ার কথা ছিলো আমার আর ও সুযোগ দিলো আমার ভাই’কে! ‘
কথাগুলো বলতে বলতেই মান্নাতের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো সে৷ একহাতে মান্নাতের চুল খামচে ধরে অন্যহাতে গলা টিপে ধরলো। বললো,
-‘ আমি কেন পারলাম না, আমি কেন পারলাম না। ‘
-‘ তোমার মতো কাপুরুষ আমাকে বিধ্বস্ত করতে পারলেও নুর’কে পারেনি। তোমার পরাজয় দেখে আজ আমি বড়ো শান্তি পাচ্ছি পলাশ। ‘
কাঁটা ঘায়ে যেনো নুনের ছিঁটে দিলো মান্নাত। সহ্য করতে না পেরে ভয়ানক রূপ ধারণ করলো পলাশ। পাগলা কু’কুরের মতো মান্নাত’কে খুবলে খেতে শুরু করলো সে। সারা শরীর’রে জঘন্য ভাবে দাঁত দিয়ে আঁচড় কাটলো৷ তীব্র ক্রোধের সঙ্গে শারীরিক মিলন ঘটালো৷ মান্নাত যখন অসহনীয় হয়ে আর্তনাদ শুরু করলো পলাশ তাকে ছেড়ে দিলো। ঘর্মাক্ত শরীরে পলাশ’কে তখন কি ভয়ানকই না লাগছিলো। আর মান্নাত গলা কাঁটা মুরগির মতো বিছানায় ছটফট করছিলো। কাতরাতে কাতরাতে বলছিলো,
-‘ যতো ক্ষোভ আমার কাছেই কেন পলাশ…এই ক্ষোভ’টা তোমার ঘরের বউ’কে গিয়ে দেখাও। ওওওহ সে তো এখন মা হতে চলেছে তাকে নিশ্চয়ই খুব আদর, সোহাগ দিচ্ছো?’
রক্তিম চোখে এক নজর তাকালো পলাশ। শরীরে ভয়ানক আগুন জ্বলছে তার। এই আগুন থামানোর জন্য বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেলো সে। মান্নাতের কথা শুনে তার ক্ষিপ্ততা বেড়ে গেলো হাজারগুণ। বিছানার তলায় থেকে সেই কাপড়ের ব্যাগটি থেকে একটা বড়ো রশি বের করলো। মান্নাত স্পষ্ট দেখতে পেলো পলাশ রশি দিয়ে তাকে বেঁধে ফেলার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু গা’য়ে বিন্দু শক্তি না পাওয়ায় ওঠতে পারলো না। ন’গ্ন দেহে কাতর স্বরে শুধু বললো,
-‘ আমার সাথে আর কিছু করোনা পলাশ। আমি বাঁচবো না আমি বোধহয় আর বাঁচবো না। ‘
বিনিময়ে পৈশাচিক আনন্দ পেলো পলাশ হু-হা করে হেসে ওঠলো সে। হিংস্র জন্তুর মতো ঘাড় বাঁকিয়ে শরীর নাচিয়ে বিছানার সাথে বেঁধে ফেললো নগ্ন দেহটা’কে। মান্নাত কাতর স্বরে আবারো বললো,
-‘ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে পলাশশ। ‘
পালাশ সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করলোনা। আপন চিত্তে পুরো কক্ষের বাতি নিভিয়ে দিলো। ঘাড় কাত করে পালঙ্কের নিচ থেকে একটি ধারালো তলোয়ার হাতে নিলো। সে তলোয়ারের কতোক্ষণ আবছা আলোতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগলো। মান্নাত উত্তেজিত হয়ে ভীতিকর কন্ঠে ভেঙে ভেঙে বললো,
-‘ ওটা কী পলাশ? ওটা কী? ‘
পলাশ আকস্মাৎ তার স্ত্রীজনেন্দ্রিতে তলোয়ার ঢুকিয়ে দিলো। বিভৎস এক চিৎকার দিলো মান্নাত। হিংস্রতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে গিয়ে অত্যন্ত নৃশংসভাবে অসংখ্যবার একই জায়গায় আঘাত করতে শুরু করলো পলাশ। অথচ দু’বার আঘাতের ফলেই মৃত্যুবরণ করেছে মান্নাত। নরপিশাচ পলাশ প্রাণহীন মান্নাত’কেও ছাড় দিলোনা৷ রক্তাক্ত দেহে কতোশতোবার তলোয়ার চালালো হিসাবের বাইরে। শেষ পর্যন্ত মুখ থেকে বক্ষঃস্থল অবদিও আঘাত করলো। যে আঘাতের ফলে নাক,মুখ এক হয়ে চেহেরা বিকৃত রূপ ধারণ করলো। বুকের দু’অংশ কেটে চৌচির করে ফেললো। যতোক্ষণ না মান্নাতের পুরো দেহ রক্তে রঞ্জিত না হলো ততোক্ষণ থামলোনা নৃশংস পলাশ! যখন থামলো তখন দু’হাতের তালু এক করে মান্নাতের রক্তাক্ত দেহ থেকে রক্ত তুলে নিজের মাথায় ঢাললো। ফোঁস ফোঁস নিঃশ্বাস ছেড়ে অদ্ভুত স্বরে বলে ওঠলো,
-‘ তুই ওকে বাসরশয্যায় পাঠিয়েছিস উপহার সরূপ তোকে আমি মৃত্যুশয্যা দিলাম। সবুর উদ্দিন সব বলেছে আমায় সব!’

শেষ রাত তখন। বাঁশির সুরে ঘুম ভেঙে গেলো শাহিনুরের। শোয়া থেকে সটান বসে পড়লো সে৷ তীব্র বেগে কিছুক্ষণ নিঃশ্বাস ছেড়ে পাশে তাকিয়ে উদাম শরীরে প্রণয়’কে দেখতে পেলো৷ লোকটা বেহায়ার মতো খালি গায়ে শুয়ে আছে ছিঃ! লজ্জিত হয়ে চোখ সরিয়ে নিলো সে৷ ভাবলো তাদের বাসর রাত ছিলো আজ। অথচ সে এই মানুষটার সঙ্গে এক বিছানায় শুঁতেও নারাজ ছিলো। তখনি প্রণয় তাকে ভরসা দিলো। বললো,
-‘ আজকের জন্য শুধু চুমুই প্রয়োজন ছিলো তোমার। আর ছুঁবো না। নিশ্চিন্তে পাশে এসে ঘুমিয়ে পড়ো। যদি কথার হেরফের হয় তাহলে ভয়ংকর ভাবে ছুঁয়ে দিতে পারি! ‘
বাঁধ্যতা বরণ করে পাশে এসে শুয়েছিলো সে। কখন চোখ লেগে গেছে টেরও পায়নি। এতো ভাবনার ভীড়ে আচমকাই বাঁশির সুর’কে স্মরণ হলো। খেয়াল করলো এখন আর সেই সুর শোনা যাচ্ছে না। কিন্তু কোনদিক থেকে সুর আসছিলো তা স্পষ্ট মনে পড়লো। দেরি না করে ছুটে চলে গেলো ভেতরের কক্ষে। দ্রুত জানালা খুলে সুক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো বাইজি গৃহের দিকে। কিন্তু কিছুই দেখতে পেলো না। নিরাশচিত্তে জানালা বন্ধ করতে উদ্যত হতেই চমকে তাকালো। পুকুর সই সই বাইজি গৃহের পশ্চাতে কেউ আছে আর কেউ মাটি খুঁড়ছে। দু’জন আগন্তুক কে সুক্ষ্ম নজরে দেখলো কিন্তু মুখ স্পষ্ট বুঝলো না৷ তারা দুজন লাল কাপড়ে মোড়ানো কিছু মাটিতে পুঁতে ফেললো। সাহসা শাহিনুর অস্ফুটে বললো,
-‘ ওরা কারা? কি পুঁতছে ওরা!’

১ম খন্ডের সমাপ্তি।
®জান্নাতুল নাঈমা

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here