#ছায়া_হয়ে_থাকবো_পাশে (পর্ব ১৬)
#Humayra_Khan
.
.
.
চারু আহানের কথার কোন উত্তর না দিয়ে আবারও বমি করে দেয় আহানের উপর।
আহানঃ আবারও ( অসহায় মুখ করে)
চারু ঃ আমার কি দোষ??? সবই তো আপনার দোষ। আমি তো বলেছিলাম আমি ডিনার করেছি। তাও আপনি জোড় করে খাইয়ে দিলেন।
আহানঃ আমি তো ভেবেছি তুই মিথ্যা বলছিস
চারু ঃ এতো ভাবেন কেন?? কম কম ভাব্বেন বেশি ভাবলে এমনই হবে আপনার সাথে।
কথাটি বলে জোরে জোরে হাসতে থাকে চারু।
হাসি থামিয়ে-
চারু ঃ আচ্ছা আমি চললাম তাহলে?
আহানঃ চললাম মানে??? আমার পরা জামা চেঞ্জ করে দিবে কে?? সারা রাত কি আমি বমি করা জামা পরে থাকব নাকি??
চারু ঃ থাকলেও প্রবলেম নেই।।আপনাকে এখন অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে।।।
আহানঃ দেখ চারু বেশি কথা না বলে তাড়াতাড়ি করে আমার জামা চেঞ্জ করতে আমাকে হেল্প কর।
এই বমি করা জামা পরে বসে থাকতে থাকতে আমারই বমি আসছে।
চারু ঃ এক শর্তে!!!
আহানঃ কি??
চারু ঃ আপনাকে সুন্দর করে বলতে হবে আমায়।
মিস চারু ম্যাম আপনি অনেক ভালো;অনেক অনেক সুন্দর ;আপনার মতো ভালো মেয়ে আমি কখন ও দেখিনি । প্লিজ আমাকে হেল্প করুন।
রাজি তো? ( ভাব নিয়ে)
আহানঃ ওও আমার সাথে চালাকি দাড়াও গাচ্ছি তোমার সুনামের গান।।।।মনে মনে
ওকে বলছি।
মিস চারু ম্যাম আপনি অনেক শয়তান আপনার মতো ভয়নাক ফেস আমি কখন দেখিনি আপনার মতো দজ্জাল মেয়েও আমি আমার জীবনেও দেখিনি।।
প্লিজ আমাকে হেল্প করুন
এক নিশ্বাস এ কথা গুলো বলে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগল আহান।।।
চারুর দিক এ চোখ পরলে আহান খেয়াল করল চারু ওর দিক এ রাগি দৃশটিতে তাকিয়ে আছে।।।।
আহান ভয়ে ঢোক গিলে-
আমি তো জাস্ট ফান করছিলাম তোমার সাথে।।
মন থেকে বলিনি।।।প্লিজ আমাকে হেল্প কর?
এই অবস্থায় আর কত ক্ষন থাকব বল???
চারু ঃ দিচ্ছি দিচ্ছি।।
তারপর চারু আহানের আলমারি থেকে একটা টি শার্ট বের করে নিল।।
চারু ঃ অই আপনার চোখ বন্ধ করুন।
আহানঃ কি? আমি কেন চোখ বন্ধ করব????
চারু ঃ করবেন নাকি চলে যাব আমি??? (চেচিয়ে)
আহানঃ করছি বাবা এতো চেচামেচি মেচি করছো কেন চড়ই পাখির মতো।
তারপর আহান নিজের চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়।
চারু ঃ ইস আমার এতো লজ্জা লাগছে কেন??
চারু উ হেভ টু ডু ইট। তোর কারনেই বেচারা বমি তে গোসল হয়ে গেছে।।।
তারপর চারু আহানের সামনে এসে আহানের ড্রেস চেঞ্জ করতে নিলে চারুর চুলের থেকে আসা সুভাস আহানকে যেন আরও মাতাল করে তুলছে।।।
আহানঃ উফফ এই সময় টা যদি এই খানেই থেমে যেত।(মনে মনে)
ভুলক্রমে চারুর হাতের নখ লেগে যায় আহানের পিঠে।
আর আহান ব্যথায় চিল্লান দিয়ে উঠে
আহ
চারু সাথে সাথে ওর হাত দ্বারা আহানের মুখ চেপে ধরে।
চারু ঃ এই কি করছেন টা কি। এই ভাবে চেচ্চাছেন কেন??
কেউ শুনতে পারলে তো মহা বিপদ হয়ে যাবে।
আর আপনার মা চলে আসলে আমাকে এই রুমে দেখলে আমার চোদ্দ গুসটি উদ্ধার করে ছারবে।
চারুর বলা কোন কথাই যেন কান পর্যন্ত পৌছাচ্ছে আহানের।।। অপলক দৃশটিতে তাকিয়ে আছে চারুর দিক এ…
চারু খেয়াল করল আহান ওর কথার কোন উত্তর না দিয়ে বোকার মতো করে চারু দিক এ তাকিয়ে আছে।
চারু ঃএই শয়তানটা এই ভাবে তাকিয়ে আছে কেন আমার দিক????মনে হচ্ছে আমাকে গিলে খাবে তার চোখ দিয়ে।।।
চারুঃ এই যে…….
আহান চারু কথায় কোন রিসপনস না করলে চারু আহানের গাঁ এ একটা চিমটি কেটে দেয়।
চারুর হাতের চিমটি খেয়ে ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে আহান।
আহানঃ উফ (ব্যথার জায়গায় হাত দিয়ে)
এই তুমি এই ভাবে চিমটি দিলে কেন আমাকে??
চারু ঃ আপনি এই ভাবে তাকিয়ে ছিলেন কেন আমার দিক এ???
চারুর প্রশ্ন শুনে আহান ভ্যাবাচেকা খেয়ে –
কই আমি তো তুমার দিক এ তাকাচ্ছিলাম না। আমি তো তোমার পরা কানের দুল গুলো দিক এ তাকিয়ে ছিলাম।।অনেক সুন্দর ভাবছি বিয়ে করলে নিজের বউ কে সেম এই রকম ইয়ারিং জোড়া গিফট করব??
চারু ঃওওওও
আহানঃ উফফ বাবা বাঁচা গেল।।। একটু হলেই ধরা খেয়ে যেতাম
এরপর চারু তাড়াতাড়ি করে আহানের পরা টি শার্ট টা চেঞ্জ করে দিল।।।
হঠাৎ আহান আর চারু কারো গলার শব্দ শুনতে পেল
চারু ঃ আল্লাহ কে আসছে?(ভয়ে)
সাবিনাঃ আহান………
আহানঃ আল্লাহ মা আসছে রুমে মধ্যে তুমি তাড়াতাড়ি পালাও।
চারু ঃ এই আপনি কি পাগল আমি এখন রুম থেকে বের হলে কাকিমা আমাকে দেখে ফেলবে।।
আহানঃ তাহলে কি করবা একটা কাজ কর ঘাটের নিচে গিয়ে লুকাও।
চারু ঃ ওয়াট???ঘাটের নিচে লুকাবো তা আবার আমি।
আহানঃ আচ্ছা ওয়াসরুমে গিয়ে লুকাও।
চারু ঃ আপনি গিয়ে লুকান ওয়াসরুমে??
আহানঃ প্লিজ জান কথা শুনো আমার।??
চারু ঃ অই কে তর জান( কোমড়ে হাত রেখে)
আহানঃ ওও সরি সরি নার্ভাসনেস এর কারনে ভুলে বলে ফেলেছি।।প্লিজ কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি যাও
মা চলে আসছে রুমের মধ্যে
চারু ঃ যাচ্ছি যাচ্ছি।
তারপর চারু দৌড়ে ওয়াসরুমে চলে গেলে।
আহানঃ উফ বাচলাম।
চারু আবার দৌড়ে ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে পরে।
আহানঃ কি হল আবার বেরিয়ে পরলে কেন??
চারুঃ আরে বমি করা শার্ট টা নিয়ে যাই।
কাকিমা দেখলে তো হাজার টা প্রশ্ন করবে।।।
আহানঃ ও হ্যা।
তারপর চারু বমি করা টি শার্ট টা হাতে নিয়ে–
উফফ ইয়াক কি বাজে দুর্গন্ধ।
আহানঃ নিজের বমি স্মেইল নিজেই সইতে পারছনা।
আমি তো কতক্ষন বসে ছিলাম এই টি শার্ট টা পরে।
চারু ঃ হয়েছে টপিক ক্লোস। এই ব্যাপারে আর কোন কথা শুনতে চাইনা।।।
আহান ঃ প্লিজ চারু যাওনা। মা চলে আসবে তো?
তোমাকে দেখলে মা তোমাকে কথা শুনিয়ে দিবে।
আর আমি চাইনা আমার ভালোবা…….
চারু ঃ কি ভালোবা………
আহানঃ কিছুনা আমার মা।।প্লিজ গো।
চারু আহানের কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে টি শার্ট টি নিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়।।
আহানঃ সরি।।।জানি তোমার মোটেও ভালো লাগছেনা এই ভাবে ওয়াসরুমে লুকাতে।।।কিন্তু মা তোমাকে দেখলে অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে কথা শুনিয়ে দিবে তোমাকে।। আর আমি চাইনা আমার ভালোবাসার মানুষ কে কেউ আঘাত করে কথা শুনাক।।। আর এই সময় মাকে হেনডেল করাও সম্ভব না কারন সে অনেক রেগে আছে তোমার উপর।
সাবিনাঃ আহান।
মায়ের ডাক শুনে ধ্যান ভাঙে আহানের।
আহানঃ মা তুমি এই খানে এতো রাতে???
সাবিনাঃ তোর রুমে কোন মেয়ের গলা শুনতে পেলাম একটু আগে।।
আহানঃ নিশ্চয়ই তোমার বউ মার গলা শুনতে পেয়েছো।(হেসে)
সাবিনাঃ কি বউ মা?
আহানঃ আরে মা আমি কি বিয়ে করেছি নাকি যে আমার রুমে কোন মেয়ে মানুষ এর কন্ঠ শুনতে পাবে।
আমি তো জাস্ট মজা করছিলাম তোমার সাথে।
সাবিনাঃ না না। আমি আমার কানে স্পষ্ট শুনেছি কোন মেয়ের গলা।
আহানঃ হায়রে পাশের বাসার বিড়াল কখন থেকে মিঞাও মিঞাও করে যাচ্ছে।।কানের বারো টা বাজিয়ে দিয়েছে আমার।তুমি হয়ত বিড়ালের ডাক শুনে ভুলে কোন মেয়ের গলা ভেবেছো।
আমার রুমে কিভাবে মেয়ে আসবে বল।??
সাবিনা ঃ হয়ত। আমি ভুল শুনেছি। বজ্জাদ বিড়াল আমার ছেলের ঘুম টা ভেঙে দিয়েছে।(আহানের মাথায় হাত রেখে)
চারু ওয়াসরুমে বসে আহান আর ওর মার কথা শুনে বেশ রেগে উঠে।
চারু ঃ আমাকে মানুষ থেকে বিড়াল বানিয়ে দিল এই শয়তান টা।। আমি নাকি বিড়াল??আমি নাকি ওর কানের বারো টা বাজিয়ে দিয়েছি।।
দাঁড়া ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে নেই এক বার। বিড়ালে মতো করেই এমন খামচি মারব তোর মুখে যে তুই নিজের ফেস চিন্ততে ভুল করবি।
আহানঃ আল্লাহ মা কি বলছে এই সব।চারু শুনতে পেলে তো আমাকে মেরে বরতা বানিয়ে দিবে।।(মনে মনে)
আহানঃ মা………………..#ছায়া_হয়ে_থাকবো_পাশে (পর্ব ১৭)
#Humayra_Khan
.
.
.
আহানঃ আল্লাহ মা কি বলছে এসব চারু শুনতে পেলে তো আমাকে ভরতা বানিয়ে দিবে।।(আনমনে)
আহানঃ মা আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।।।তুমিও তোমার রুমে ঘুমাও গিয়ে।(একটা হাম দিয়ে)
সাবিনাঃ আচ্ছা।।।তুই ভালো মতো ঘুমিয়ে পর।।
কথাটি বলে চলে গেল মিসেস সাবিনা আহানের রুম থেকে।।।
মিসেস সাবিনা আহানের রুম থেকে বের হয়ে গেলে আহান বিছানার সাথে মাথাটা হেলান দিয়ে-
উফফ বাবা বাচা গেল।।।
হঠাৎ আহানের কানে পানির আওয়াজ আসলে-
আহানঃ কি রে এতো রাতে কে গোসল করে তা আবার আমার ওয়াশরুমের ভিতরে???
হায় হায় চারু ওয়াশরুমের ভিতরে আমি তো ভুলেই গিয়েছি।
কথাটি বলে এক লাফে বিছানা থেকে উঠে পরল আহান।।
ওয়াশরুমের সামনে গিয়ে–
আহানঃ এই চারু দরজা খোল. এতো রাত বে রাতে গোসল করছিস কেন??? ঠান্ডা লেগে যাবে তো।
কথাগুলো আহান খুব আস্তে আস্তে বলছিল যার কারনে কথাগুলো কান পর্যন্ত পৌছাচ্ছিল না চারুর।
চারু কোন রিসপনস না করলে
আহান চারুকে জোড়ে ডাক দিতে যাবে
এর আগেই চারু ওয়াশরুমের দরজা টা খুলে দেয়।
চারু ওয়াশরুমের দরজা খুললে আহান খেয়াল করে চারুর পুরো শরীর পানিতে ভিজে আছে।।
আহানঃ এতোক্ষন ডাকছি আর তুই দরজা টা এখন খুললি?? আর কি ব্যাপার বল তো এতো রাতে গোসল করছিস তা আবার আমার ওয়াসরুমে।
গোসল তো আমার করা দরকার।।
চারু আহানের কথার কোন উত্তর না দিয়ে জোড়ে কান্না করতে শুরু করে দেয় বাচ্চা দের মতো করে।।।
আহানঃ তাড়াতাড়ি করে ওয়াসরুমে ঠুকে চারুর মুখ চেপে ধরে।
আহানঃ কি হয়েছে এই ভাবে কান্না করছি কেন?
কেউ শুনতে পেলে তো কিয়ামত হয়ে যাবে।?
আহান এই ভাবে চারুর মুখ চেপে ধরায় কিছু বলতে পারছেনা চারু
আহান খেয়াল করল চারু কিছু বলতে চাইছে কিন্তু আহান এই ভাবে মুখ চেপে ধরায় কিছু বলতে পারছেনা ও।
আহান তাড়াতাড়ি করে চারুর মুখ থেকে নিজের হাতটা সরিয়ে নিয়ে-
আহানঃ সরি সরি।।।।
চারু জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগল।
চারু ঃ এই ভাবে কেউ কারো মুখ চেপে ধরে।
একটু হলেই তো আমার ধম বন্ধ হয়ে যেত
আহানঃ সরি বলেছি তো।
এখন বল কান্না করছিলি কেন???
চারু ঃ আসলে ভাইয়া ( কান্নার মুখ করে)
আহানঃ কি???(ভ্রু কুচকিয়ে)
চারু ঃ আন্টি রুম থেকে যাওয়ার পর আমি ভাবলাম টি শার্ট টা ধুয়ে দেই।। কিন্তু পানিরকল টা এতো শক্ত ছিল যে ছাড়তে পারছিলাম না।
তাই জোড় দিয়ে কলটা ছাড়তে নিলে ভেঙে যায় আমার হাত থেকে।।।।
কথাটি বলে চারু কাঁদতে লাগে বাচ্চা দের মতো করে।
আহানঃ উফফ এতো সামান্য ব্যাপারের জন্য কাঁদতে হয়??
আহান চারুর কাছে গিয়ে ওর চোখের জলগুলো মুছে দেয়।
ওর মুখে এসে থাকা ভেজা চুল গুল সরিয়ে দিয়ে
তাকিয়ে থাকে ওর দিক এ। চারু ও আহানের চোখ এর দিক এ তাকিয়ে থাকে পলকহিন ভাবে।।
আর কল দিয়ে অনবরত পানি পরতেই থাকে।
সে পানিতে আহান চারু ভিজতে থাকে বেশ কিছুক্ষন ধরে।
হঠাৎ চারুর হাচ্ছি আসলে দুই জন এর ধ্যান ভাঙে।
আর সাথে সাথে চারু আহানের থেকে সরে দাঁড়ায়।
আহান ঃ উফ কি করছিলাম কি আমি??
চারু আমাকে কি ভাববে???
চারু ঃ আল্লাহ আমি তার দিক এ এই ভাবে তাকিয়ে ছিলাম কেন?? মনে চাইছিল এই ভাবেই তার চোখ এ ডুবে থাকি আমি….
না না চারু এই কি সব বলছিস তুই??
এই চিন্তা ভাবনা মাথায় আনাও ঠিক না তোর জন্য।
(আনমনে)
আহানঃ এই যে ম্যাম।
আহানের কথায় ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসে চারু।।।।
চারু ঃ জ্বি।।।
আহানঃ সরো সামনের থেকে না সরলে আমি কল টা ঠিক করব কিভাবে??
চারু ঃ ওও হ্যা।।
তারপর চারু সরে দাঁড়ালে
আহান ওর প্যান্ট এর পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে ওর ডান হাত টা দিয়েই পানি বন্ধ করার আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে।।।কিন্তু কোন ভাবেই এক হাত ব্যাবহার করে আহান পেরে উঠে না।।
চারু ঃ ভাইয়া সরুন আপনি পারছেননা এক হাত দিয়ে?
আহানঃ তো কি করব বল?? দেখিস না বা হাতে ব্যান্ডেজ করা।।
চারুঃ তাই তো বলছি আপনি সরুন আমি করছি।।
আহান চারুর কথা শুনে জোড়ে জোড়ে হাসতে লাগে।।
চারু ঃ এই খানে হাসির কি হল যে আপনার এতো বেশি হাসি পাচ্ছে??
আহানঃ পারবি তো??( হেসে)
চারু ঃ হ্যা পারব।। এইটা আবার এমন কি কঠিন কাজ??যে পারবনা।
কথাটি বলে চারু আহানের হাত থেকে রুমালটা নিয়ে রুমাল দিয়ে পানি বন্ধ করার চেষ্টা চালাতে থাকে।।।
বার বার চেষ্টা করার পর ও চারুর হাতে আসে শুধু ব্যর্থতা।
আহানঃ হয়েছে চেষ্টা করা।
চারু আহানের কথা শুনে অসহায় দৃশটিতে তাকিয়ে থাকে।।
আহানঃ একটা কাজ করা যায়।। দুই জন মিলে এক সাথে try করার চেষ্টা করি
চারু ঃ গুড আইডিয়া।
তারপর আহান আর চারু এক সাথে মিলে চেষ্টা করতে থাকে।। অনেক চেষ্টা করে পানি বন্ধ করতে সফল হয় তারা।।।।
আহানঃ উফ ফাইনালি বন্ধ হয়েছে।
কথাটি বলে আহান চারু দিক এ তাকিয়ে জোড়ে জোড়ে হাসতে লাগল।
উফ চারু তুমি তো অর্ধেক গোসল হয়ে গিয়েছো
আসো তুমাকে পুরো গোসল করিয়ে দেই।
কথাটি বলে আহান চারু কাছে এসে ওর চুলগুল জোড়ে জোড়ে ঝাপটাতে থাকে যার কারনে আহানের চুলের পানি গুলো এসে চারুর মুখে গিয়ে পরে।
চারু আহান কে থামানোর জন্য ভুলক্রমে আহানের ব্যথার হাত টা ধরে বসে।
চারু ঃ সরি সরি আমি খেয়াল করিনি(কান্নার মুখ করে)।।
আহানঃ ইটস ওকে বাবা। আমি ব্যথা পাইনি।।
চারু ঃ পানিতে আপনার হাতের ব্যান্ডেজ টা ভিজে গেছে আসেন চেঞ্জ করে দেই।।
আহানঃ ওও হ্যা।।
চারু ঃ হুম হ্যা না করে চলেন তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করিয়ে দেই না হলে প্রবলেম হবে।
আহানঃ হ্যা বাবা চল।
তারপর আহান আর চারু ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে পরে।
ফাস্ট এড বক্স টা বের করে আহানকে বিছানায় বসিয়ে ওর সামনে হাটু গেড়ে বসে পরে চারু।।।
আহান শুধু এক পলকে চেয়ে থাকে ওর ভালোবাসার মানুষ টার দিক এ।।
চারু আহানের হাত টা ধরে-
ইস কি অবস্থা হয়েছে হাত টার??
আপনার ব্যথা করছে?????
ব্যথা না লাগলেও-
আহানঃ হুম অনেক বেশি ব্যথা করছে (অসহায় মুখ করে)
চারু আহানের কথা শুনে আহানের হাতে ফু দিতে লাগে।
চারু ঃ এখন ভালো লাগছে??
আহানঃ অনেক বেশিই ভালো লাগছে আমার।।
চারু আহানের কথা শুনে ভ্রু কুচকিয়ে ওর দিক এ তাকালে
আহানঃ আরে মানে বলতে চেয়েছিলাম। এখন ব্যথা একটু কম লাগছে(শুকনো একটা হাসি দিয়ে)
চারু আহানের কথা শুনে কিছু না বলে আহানের হাতে মলম লাগিয়ে তাড়াতাড়ি করে ব্যান্ডেজ করে দেয়।
চারু ঃ নেন হয়েছে ব্যান্ডেজ করা।।
কথাটি বলে চারু আহানের রুম থেকে বের হতে নিলে-
আহানঃ ওয়েট চারু
চারু আহানের কথা শুনে থেমে গিয়ে পিছনে ঘুরে তাকায়।।
আহান তোয়ালে টা হাতে নিয়ে চারুর ভিজা চুল গুলো মুছতে নিলে-
চারু ঃ ভাইয়া আমি করে নিব। আপনার কষ্ট করার দরকার নেই।।।
আহানঃ চুপ একদম চুপ
চারু আহানের কথা শুনে মুখে আঙুল দিয়ে রাখে।
তারপর আহান নিজেই ওর এক হাত দিয়ে চারু ভিজা চুল গুলো মুছে দেয়।
আহানঃ হুম এখন তুমি যেতে পার। নিজের রুমে গিয়ে তাড়াতাড়ি করে গিয়ে নিজের জামা টা চেঞ্জ করে নিবে।এই ভিজা কাপড়ে বেশিক্ষন থাকলে তোমার সর্দি লেগে যাবে।
চারু আহানের কথা শুনে মাথা নেড়ে রুম থেকে চলে যেতে নিলে।
আহানঃ চারু….
চারুঃ আবার কি??
আহানঃ………………#ছায়া_হয়ে_থাকবো_পাশে (পর্ব ১৮)
#Humayra_Khan
.
.
.
চারু আহানের কথা শুনে রুম থেকে চলে যেতে নিলে-
আহানঃ চারু…….
চারু আহানের ডাক শুনে পিছনে ঘুরে তাকায়।।।
চারু ঃ আবার কি???
আহানঃ না কিছুনা এমনি…….
চারু ঃ কিছুনা না হলে ডাকলেন কেন পিছন থেকে??
আহানঃ আচ্ছা বাবা আমি অনেক বড় অপরাদ করেছি আপনাকে পিছন থেকে ডেকে৷ প্লিস আমাকে ক্ষমা করুন।
চারু আহানের কথার কোন উত্তর দিতে যাবে এর আগেই চারুর হাচ্ছি আসতে শুরু করে।।
আহানঃ দেখেছো লেগে গেছে তো সর্দি।।।
তাড়াতাড়ি করে রুমে গিয়ে লক্ষি মেয়ের মতো জামাটা চেঞ্জ করে শুয়ে পরো গিয়ে…
চারু ঃ হুম যাচ্ছি।।।
তারপর চারু হাচ্ছি দিতে দিতে রুম থেকে বের হয়ে পরে।।
চারু রুমে গিয়ে তাড়াতাড়ি করে নিজের জামাটা চেঞ্জ করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরে।।।।
হঠাৎ চারুর মোবাইলের রিংটং বেজে উঠে
চারু বিছানা থেকে ফোনটা রিসিভ করে —
চারু ঃ হ্যালো (ঘুমু কন্ঠে)
আহানঃ হ্যালো চারু….
আহান পুরো কথা বলতে যাবে এর আগেই চারু আহানকে থামিয়ে দিয়ে-
চারু ঃ ভাইয়া আমার খুব পিপাসা পেয়েছে আমি আপনাকে পাঁচ মিনিট পরে ফোন দেই।।
কথাটি বলে ফোনটা কেটে দেয় চারু।।
তারপর চারু এক গ্লাস পানি খেয়ে বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পরে।।। আহানকে কল দিতে পুরো পুরি ভুলেই যায় চারু।।।।।।
ওইদিক এ আহান চারুর ফোনের অপেক্ষা করতেই থাকে বোকার মতো করে।।।
আহানঃ উফ পাঁচ মিনিট এর বদলে তো আধা ঘণ্টা হয়ে গেল এখনো কল দিচ্ছেনা কেন??
আমি কল দিব।। না না ও পরে বিরক্তবোধ করবে আমি কল দিলে।।এর থেকে আমিই ওর ফোন দেওয়ার অপেক্ষা করতে থাকি।।।
একদিক এ চারু শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে। অন্যদিক এ আহান চারুর ফোনের অপেক্ষায় বসে আছে।।
অপেক্ষা করতে করতে আহানও ঘুমিয়ে পরে।।
সকালে বাড়ির দরজায় কেউ নক করলে চারু গিয়ে তাড়াতাড়ি করে দরজাটা খুলে দেয়।।।
সামনে তাকিয়ে দেখে একজন লোক একটা ব্যাগ কাঁদে করে দাঁড়িয়ে আছেন ক্যাবলা মার্কা হাসি দিয়ে।।।
লোকটিঃ ম্যাম আহান স্যার ফোন দিয়েছিল কল ঠিক করার জন্য
চারু ঃওও আচ্ছা ।। ভিতরে আসুন।।
সাবিনা ঃ কে রে চারু??
লোকটিঃ ম্যাম আহান স্যার ডেকে পাঠিয়েছে আমায়।।তার ওয়াসরুমের নাকি কল ভেঙে গেছে।।সেইটা ঠিক করার জন্যই আমাকে আসতে বলেছেন উনি।।।
সাবিনাঃ ওও।।আচ্ছা উপরে যান।উপরেই আহানের রুম।
লোকটি চারুর দিক এ তাকিয়ে-
ম্যাম আমাকে একটু নিয়ে যাবেন স্যার এর রুমে?
চারু ঃ জ্বি চলুন।
সাবিনাঃ এই আপনি কি পাগল ওকে ম্যাম ডাকছেন কেন? ওই কি এই বাড়ির মালকিন নাকি যে ম্যাম বলে ডাকছেন।ওর সাথে আর বাসার চাকরের সাথে কোন পার্থক্য নেই বুঝলেন।
সাবিনার কথা শুনে চারুর চোখে জল এসে পরে কেউ দেখে নেওয়ার আগেই জল গুলো মুছে নেয় ও।
লোকটি চারুর দিক এ তাকিয়ে থাকলে-
সাবিনাঃ ওই চারু শুনতে পাচ্ছিসনা কিছু।
যা এই লোকটাকে আহানের রুমে নিয়ে যা।।সারা দিন বসে বসে খাস একটু তো হাত পা চালা।
চারু ঃ আংকেল আসেন আমার সাথে??
লোকটিঃ হুম চল
তারপর চারু লোকটিকে আহানের রুমের ভিতরে নিয়ে গিয়ে-
চারু ঃ ভাইয়া কল ঠিক করার জন্য লোক এসেছে।। আংকেল ওয়াসরুম টা ঔ দিক।।
কথাটি বলে চারু রুম থেকে বের হতে নিলে-
লোকটি চারুকে পিছন থেকে ডাক দেয়।
লোকটিঃ এই বুয়া……..আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আয়।।।
লোকটির কথা শুনে আহানের রাগ যেন সাত আসমানে পৌছায়।
রাগের মাথায় আহান লোকটির কলার চেপে ধরে
আহানঃ হাউ ডের উ। চারুকে বুয়া বলে ডাকার সাহস হল কিভাবে আপনার??? ঔ জানেন কে??
চারু আহানকে ধরে-
প্লিজ ভাইয়া ইনাকে ছাড়ুন।।
লোকটিঃ হ্যা স্যার আমার কলার ছাড়ুন।আমার কি দোষ আপনার মাই তো বলেছে সে এই বাড়ির বুয়া তাই তো আমি ওকে….
লোকটি পুরো পুরি কথাটা বলার আগেই আহান চিৎকার দিয়ে –
ইনাফ।।।
আহানঃ আরেকবার ওই শব্দ টা উচ্চারণ করার মতো ভুল মোটেও করবেন না। আপনি আমার বাবার বয়সি।
তাই বয়সের রিস্পেকট করছি।তা না হলে আজ আপনার কি অবস্থা হত সেইটা আমি নিজেও জানিনা।
নাও লিভ ফ্ররোম মাই রুম
লোকটি আহানের রাগ দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়।।।
হুর হুর করে বেরিয়ে পরে বাসা থেকে
চারু ঃ আপনার এতো রাগ করা টা ঠিক হয়নি।।
আহানঃ জানি কিন্ত কি করব বল নিজের ভালোবসার মানুষ টাকে কেউ এই ভাবে ডাকলে কারই বা মাথা ঠিক থাকে।।।আনমনে।
মিসেস সাবিনা আহানের রুমে ভিতরে ঠুকে-
কি রে আহান লোকটি চলে গেলে কেন??
আহানঃ মা তুমি লোকটিকে কি বলেছো??
সাবিনাঃ কি বলেছি???
আহানঃ মা একটা কথা সব সময় মনে রাখবা চারু আমাদের বাসার কোন সার্ভেনট না।ও আমাদের ঘরের একজন সদস্য।।তাই ভুলেও কাউকে বলার চেষ্টা করোনা যে ও আমাদের… থাক বাদ দাও।
আহানের বলা কথা শুনে চারুর চোখ এ জল এসে পরে কিন্তু সেটা কষ্টের না খুশির।। আহান আর মিসেস সাবিনা তা দেখার আগেই নিজের চোখের জল মুছে নেয় চারু।।
তারপর আহান ওর মাকে বিছানায় বসিয়ে তার সামনে হাটু গেড়ে বসে
আহানঃ মা আশা করি তুমি আমার কথা বুঝতে পেরেছো… আর বাসায় যারা কাজ করে তাদেরকেও এখন থেকে বুয়া চাকর এই সব বলে ডাকবেনা।।।
মিসেস সাবিনা আহানের কথা শুনে –
সাবিনাঃ আজ তোর জন্য আমার ছেলে আমাকেই শুনাচ্ছে তাইনা।এর শোধ আমি ঠিকই নিব।।মনে মনে
সাবিনা ঃ আচ্ছা আর ডাকব না (শুকনো একটা হাসি দিয়ে)
কথাটি বলে চলে যায় মিসেস সাবিনা আহানের রুম থেকে।।।
চারুও চলে যায় আহানের রুম থেকে বের হয়ে।।।
চারু আর মিসেস সাবিনা…. রুম থেকে চলে গেলে–
আহান ওর ফোনটা নিয়ে কাউকে কল দেয়।।
ফোনটা রিসিভ হলে-
লোকটিঃস্যার প্লিজ ক্ষমা করবেন..
আহানঃ না আংকেল ক্ষমা তো আমার চাওয়া উচিত আপনার কাছে।।।আসলে আমার প্রচন্ড রাগ এসেছিল যখন আপনি…
লোকটিঃ বুঝতে পেরেছি।। ভালোবাসার মানুষকে কেউ এই ভাবে ডাকলে যে কেউ এমন রিয়েকট করবে।
আহানঃ আপনি কিভাবে বুঝলেন ওকে আমি??
লোকটিঃ তুমাকে দেখলে যে কেউ বলে দিতে পারে তুমি ওকে কতোটা ভালোবাসো।।
আহানঃ শুধু ওই বুঝেনা।।যাই হোক আমার আচরনের জন্য আমাকে নিজের ছেলের মত ভেবে মাফ করে দিবেন আংকেল…
লোকটিঃ মাফ চাইতে হবেনা বাবা।।।আর একটা কথা। মেয়েটা অনেক ভাগ্যবর্তি বর্তমানে তোমার মতো ছেলে পাওয়া অনেক মুশকিল।।।
আহানঃ তাই নাকি?? দোয়া করবেন যাতে আমি আমার ভালোবাসার মানুষটাকে খুব জলদি নিজের করে নিতে পারি।।।
লোকটিঃ হ্যা বাবা অবশ্যই।।
তারপর আহান ওর ফোনটা কেটে দিলে দেখে চারু ওর রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।।
রুমের ভিতরে ঠুকে-
চারুঃ……………..