জলপদ্ম পর্ব -১২

#জলপদ্ম
#কুরআতুল_আয়েন

|১২|
দক্ষিণ দিকের জানালা টার পাশে দাঁড়িয়ে থাকলে মন খারাপের রেশ অনেকটাই কমে আসে।বলতে গেলে এই জায়গা টা আমার পছন্দের একটি জায়গা।জানালার পর্দা মেলে দিতেই গাছ গাছালিতে ঘেরা সুন্দর একটি মনোমুগ্ধকর পরিবেশ আমার চোখে পড়লো।সারি সারি গাছ গুলোতে পাখিদের আনাগোনা বেশ চলছে।সেই সাথে তাদের কিচিরমিচির আওয়াজ।আমি অপলক দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে আছি।বুকে হাত গুঁজে লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিলাম।প্রকৃতির স্বাদ কিছুটা হলেও অনুভব করতে পারছি।এইভাবে মিনিট দশেক দাঁড়িয়ে থাকার পর ফোনের ম্যাসেজ টোনের শব্দে আমি জানালার বাহিরের পরিবেশ থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম।পাশে রাখা বিদ্যমান মিনি সাইজের ওয়ারড্রবের উপর থেকে ফোন টা নিয়ে দেখলাম আবির ভাইয়ের নাম্বার থেকে বিশাল বড় একটা এসএমএস এসেছে।ম্যাসেজ টা ওপেন করতেই ভেসে উঠলো,
‘রিমঝিম!এইটা আমার অর্ডার না এইটা হলো রক্তিমের অর্ডার।আর,সেটা তোকেই করতে হবে।এটাও আমার কথা না এইটা হলো রক্তিমের কথা।এবার আসি মূল পয়েন্টে!রক্তিম বলেছে কিচেনে গিয়ে নাস্তা টাইপের যা আছে তাই নিয়ে আসতে।সাথে চা,কফিও নিয়ে আসবি।চা হলো এক কাপ।ওই হারামজাদা বাবুর জন্য।ঢং দেখছিস তার!জামাই হতে পারলো না এখনো তার আগেই বাদশার মতো চা’র অর্ডার দিচ্ছে।তনায়ার জন্য কিছু করতে পারছি না!না হলে,কখন যে ওকে আকাশে উঠিয়ে দিতাম।আমাকে তো চিনে নাই আমি হলাম আবির।যাই হোক!আর বাকিদের জন্য নিয়ে আসবি কফি।সাথে একটা বাটিতে করে পপকর্ণও নিয়ে আসবি।টাইম বেশি না মাত্র পাঁচ মিনিট।
বাণীতে~রক্তিম!!টাইপে~আবির!!

ম্যাসেজের করুণ অবস্থা দেখে আমি থতমত খেয়ে গিয়েছি।হাসতে গিয়ে হাসতেও পারছি না আবার কাঁদতে গিয়ে কাঁদতেও পারছি না।তবে,আমার খুব রাগ হচ্ছে রক্তিম ভাইয়ের উপর।কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিতে ইচ্ছা করছে।রাগ যেনো মাথায় চড়ে গিয়ে চুলের আনাচে কানাচে গিয়ে পৌঁছছে।কতক্ষণ পায়চারী করে নাক ফুলিয়ে ম্যাসেজের উত্তরে সুন্দর করে বড় বড় ইটালিক অক্ষরে টাইপ করলাম,

‘পারবো না!এইসবের কিছুই করতে আমি ইচ্ছুক না।যাদের যা খাওয়ার ইচ্ছে তারা নিজেরা তৈরি করে খেয়ে নাও।’

ম্যাসেজ টা পাঠিয়ে বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লাম।পা দুটো নাড়িয়ে নাড়িয়ে দেয়ালে বসা মাছিদের সংখ্যা গুনছিলাম।এরিমধ্যে ভনভন করে আমার ফোন টা ভেজে উঠলো।প্রথমে কিছুটা চমকে গেলেও পরে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়েছি।ফোন টা হাতে নিয়ে দেখি আবির ভাই ফোন করেছে।মুখ ভেঙচি মেরে রিসিভ করে একনাগাড়ে বলতে লাগলাম,

‘দেখো আবির ভাই!আমাকে বলে কিন্তু লাভের লাভ কিচ্ছুই হবে না।আমি এইসব করতে পারবো না।পারলে,এই কথাটা রক্তিম ভাইকে জানিয়ে দিও।’

‘চড় খেতে না চাইলে যা বলেছি তাই করে নিয়ে আয়।আমার রাগ সম্পর্কে কিন্তু তোর জানা আছে রিমঝিম।’

ফোনের অপাশে রক্তিম ভাইয়ের কণ্ঠ শুনে আমি কিছুটা আঁতকে উঠলাম।অস্পষ্টতা স্বরে বলে উঠলাম,

‘রক্তিম ভাই!’

‘যা যা অর্ডার করেছি তাই নিয়ে আয় রিমঝিম।না হলে কিন্তু খারাপ কিছু হয়ে যাবে।’

‘আমি পারবো না রক্তিম ভাই।’

‘রুমে আসলে কিন্তু ভালো কিছু হবে না।আর আমি এক কথার মানুষ।যা বলি তাই করি।আমার মুখের কথাই যথেষ্ট।হোক সেটা ভালো আর মন্দ।’

আমি তাড়াহুড়ো করে ফোন কেটে দিয়ে রান্নাঘরের দিকে দৌড় লাগালাম।রক্তিম ভাইয়ের কথায় বিশ্বাস নেই।রুমে আসলে আমার যে কুরুক্ষেত্র বাজিয়ে দিবেন তা ঠিকই বুঝতে পারছি।রান্নাঘরে গিয়ে দেখি মা,সেজোমা মিলে মাংস কাটছে।আমি যেতেই সেজোমা বলে উঠলো,

‘কিরে রিমঝিম!এইভাবে রুম থেকে দৌড়ে আসলি কেনো।খাবি কিছু?খিদে পেয়েছে।’

গ্যাস টা চালু করে দিয়ে গরম পানি বসিয়ে দিলাম।ট্রেতে বাহারী রকমের খাবার সাজাতে সাজাতে সেজোমা’র কথার পিঠে বললাম,

‘খেতে আসি নি সেজোমা।খাবার নিয়ে যেতে এসেছি।ছাঁদ থেকে অর্ডার এসেছে খাবার নিয়ে যেতে।’

মা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘তা এতো ভালো কাজ টা কে দিলো রে তোকে।’

‘কে আবার!তোমাদের মধ্যমনি!রক্তিম ভাই।’

মা ঠোঁটে বিস্তর এক হাসি ঝুলিয়ে বললো,

‘যাক!রক্তিম একটা ভালো কাজ করেছে।এইজন্যই তো রক্তিমকে আমি এতো পছন্দ করি।’

মা’র কথা শুনে আমি সরু চোখে তাকালাম মা’র মুখপানে।আর কিছু না বলে ট্রে টা নিয়ে ছাঁদের দিকে এগিয়ে গেলাম।কয়েক সিঁড়ি এগোতেই দেখা হলো বেবি আপুর সাথে।আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে নেকা নেকা কণ্ঠে বললো,

‘রিমঝিম!আমাকে দাও ট্রে টা।রক্তিম ভাইয়া আমাকে পাঠালো ট্রে টা নিয়ে যাওয়ার জন্য।’

বেবি আপুর কথা শুনে আমার পিত্তি জ্বলে উঠলো।সবকিছু আমি বানিয়ে,গুছিয়ে নিয়ে আসলাম আর মাঝপথে এসে কিনা রক্তিম ভাই বেবি আপুকে পাঠালেন।তার উপর বেবি আপুর নেকা নেকা কণ্ঠ শুনে আমার রাগ যেনো আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো।বেবি আপু ট্রে টা নিতে আসলেই আমি দূরে সরে যাই।মুখে মিষ্টি হেসে বললাম,

‘শুরু থেকে যেহেতু সব আমি করেছি সেহেতু ট্রে টা আমিই নিয়ে যাবো বেবি আপু।তুমি এই বাড়ির অতিথি তাই অতিথির মতো থাকো।অতিথিদের দিয়ে আমরা তেমন কাজ করাই না।’

বেবি আপুকে পাশ কাটিয়ে চলে আসলাম।ছাঁদের দরজার কাছে আসতেই হাসির আওয়াজের ধ্বনি শুনতে পেলাম।ধপাধপ্ পা’য়ে সেদিকে এগিয়ে গেলাম।প্রথমেই চোখ পড়লো রক্তিম ভাইয়ের উপর।আমাকে দেখেও যেনো দেখেন নি এমন ভাব।আমিও কম কিসে!রক্তিম ভাইকে আমিও পাত্তা দিলাম না।ট্রে টা সবার মাঝখানে রেখে রিমির পাশে এসে বসে পড়লাম।আবির ভাই চা’য়ের কাপ টা হাত তোলে নিয়ে লম্বা এক চুমুক দিয়ে পুনরায় মুখে রাখা চা টা কাপে ফেলে দিয়ে আফসোসের স্বরে বলতে লাগলো,

‘আরে এইটা তো চা!আমি ভেবেছি কফি।সন্ধ্যা তো তাই বুঝতে পারি নি।লাইটের আলোয় মনে হলো এইটাই কফি।’

কথাটা বলে মুচকি হাসলো আবির ভাই।বাবু ভাইয়ার দিকে চা’য়ের কাপ টা এগিয়ে দিয়ে বললো,

‘বাবু!এই নে তোর চা।ভুলে আমি একটু চুমুক দিয়ে ফেলেছিলাম।তবে খায় নি।আবার কাপেই ফেলে দিয়েছি।যাই হোক!আমি তোর শালা তুই আমার বোনের জামাই।আমাদের সম্পর্ক টা মধুর হওয়া উচিত তাই না!’

আবির ভাইয়ের কান্ডকারখানা দেখে আমার নাক সিটকে এলো।আবির ভাই যে বাবু ভাইয়া কে জব্দ করার জন্য এই কাজ টা ইচ্ছাকৃত ভাবে করেছে তা আমার কাছে অজানা নয়।তবে,এখন দেখার পালা বাবু ভাইয়া কি করেন!আসলেই কি চা টা নিয়ে খাবেন বাবু ভাইয়া!আমার এসব ভাবনার মাঝেই বাবু ভাইয়া দাঁত কেলিয়ে আবির ভাইয়ের হাত থেকে চা’য়ের কাপ টা নিয়ে নিলেন।চা’য়ে চুমুক দিয়ে থুঁ থুঁ করে আবির ভাইয়ের উপর ফেলে দিয়ে ঠোঁট দুটো মুছে বললেন,

‘তুই চুমুক দেওয়াতে চা টা মিষ্টি থেকে একদম তেঁতো হয়ে গিয়েছে।খাওয়া টাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।তার উপর কেমন একটা উদ্ভট গন্ধ পাচ্ছি চা টা থেকে।’

আবির ভাইয়ের মুখটা চুপসে গিয়েছে।আমার খুব হাসি পাচ্ছে আবির ভাইয়ের মুখের হাবভাব দেখে।তবে এইটা বুঝতে পারছি আবির ভাই আর বাবু ভাইয়ার মধ্যে বেশ জমবে।হয়তোবা কয়েকদিন পর পর আমরা তাদের বিবাদের কিছু লাইভ টেলিকাস্ট দেখতে পারবো।রিমি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা।আর,এদিকে তনায়া আপু খানিকটা রেগে আছে আবির ভাই আর বাবু ভাইয়ার উপর।তনায়া আপু দু’জনের উপর অনেকটাই বিরক্ত হয়েছে তা তনায়া আপুর চোখ মুখেই বলে দিচ্ছে।

‘রক্তিম ভাইয়া এই নিন আপনার কফি।’

বেবি আপুর দিকে কড়া চোখে তাকালাম।লজ্জামিশ্রিত হাসি টেনে এক কাপ কফি রক্তিম ভাইয়ের দিকে এগিয়ে দিলো।রক্তিম ভাইও বেবি আপুর হাত থেকে কফিটা নিয়ে আরামসে কয়েক চুমুক দিয়ে বললেন,

‘কফি টার যা তা অবস্থা হয়েছে।রিমঝিম তোকে দিয়ে কিছুই হবে না।না হবে পড়াশোনা আর না হবে রান্নাবান্না।তুই তো অকর্মার ঢেঁকি একটা।বেবিকে দেখে কিছু শিখ!সব দিক দিয়ে এক্সপার্ট।যেমন পান খায় তেমন রান্নাও করতে পারে।’

আমি বড়বড় চোখ নিয়ে তাকালাম রক্তিম ভাইয়ের দিকে।আমার হাতের তৈরি কফিও খাবেন আর আমাকেই কথা শুনাবেন।রাগে,দুঃখে চোখ দিয়ে পানি আসার উপক্রম।সামনের থেকে বাবু ভাইয়া কিছুটা চেঁচিয়ে বললেন,

‘দেখতে হবে না কার বোন।আমার বোন তো এইজন্য সবই পারে।’

আবির ভাই কিছুটা জোরালো কণ্ঠে বলে উঠলো,

‘যেভাবে বলছে মনে হচ্ছে কি না কি।সেই তো বাবু বেবিই!!’

আবির ভাইয়ের কথায় রিমি আগের মতো গলা ফাটিয়ে হেসে উঠলো।আমি রিমির দিকে তাকিয়ে তনায়া আপুর দিকে ফিরলাম।তনায়া আপু কটমট চাহনি নিয়ে তাকিয়ে আছে আবির ভাইয়ের দিকে।আবির ভাই তা দেখে জোরপূর্বক মুখে একটা হাসি টানলো।

রক্তিম ভাই একমুঠো পপকর্ণ মুখে দিয়ে বললেন,

‘তোদের দ্বন্দ শেষ হলে আমি একটা কথা বলতে চাই।’

সবাই এবার খুব মনোযোগ দিয়ে রক্তিম ভাইয়ের দিকে তাকালো।আমিও আঁড়চোখে তাকিয়ে আছি রক্তিম ভাইয়ের দিকে।রক্তিম ভাই কিছুটা ভাব নিয়ে বললেন,

‘বাবু আর তনায়ার বিয়ে উপলক্ষে কাল আমার পক্ষ থেকে সবাইকে ট্রিট দিবো।সন্ধ্যায় সবাই রেডি থেকো।’

রক্তিম ভাইয়ের কথা শেষ হতে না হতেই সবাই সজোরে চিল্লিয়ে উঠলো।আমি কিছুক্ষণ বসে উঠে সিঁড়ি ঘরের দিকে পা চালালাম।তার মানে,কাল ওই বেবি আপুও যাবে।বেবি আপু যাওয়া মানে রক্তিম ভাইকে গিলে খাওয়া।ব্যাপার টা আমার কাছে মোটেও ভালো লাগছে না।কয়েক সিঁড়ি নামার পর পিছনে তাকিয়ে দেখি রক্তিম ভাই শিস বাজিয়ে নিচে নামছেন।আমি তাড়াতাড়ি মুখ ফিরিয়ে নিলাম।সামনের দিকে গতি বাড়াতেই রক্তিম ভাই কিছুটা ঠেস দিয়ে বললেন,

‘তুই জেলাস হচ্ছিস রিমঝিম!’

আমি উল্টো ঘুরে তাকালাম রক্তিম ভাইয়ের দিকে।রক্তিম ভাই বাঁকা হেসে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।আমি মুখটা বেঁকিয়ে বললাম,

‘মোটেও না।আমি কেনো জেলাস হতে যাবো।’

রক্তিম ভাই মুখে হাসি রেখেই আমার দিকে এগিয়ে আসলেন।কপালে পড়ে থাকা চুল গুলোকে সরিয়ে দিয়ে আমার অতি নিকটে এসে বললেন,

‘তাহলে চলে এলি কেনো?সবাই কি খুশি হয়েছে আর তুই মুখটাকে নিরামিষের মতো করে চলে এলি।কিন্তু কেনো রে রিমঝিম!’

‘আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই এসেছি।আপনি একটু বেশিই বুঝেন রক্তিম ভাই।’

রক্তিম ভাই আমাকে দু’হাতের মাঝে আবদ্ধ করে নিলেন।নাকে নাক ঘষে বললেন,

‘তুই জানিস আমি যা বলেছি তাই ঠিক।কথা ঘুরিয়ে লাভ নেই।’

‘কথায় কথায় এতো কাছে আসবেন না রক্তিম ভাই।’

‘আমি না আসলে আর কে আসবে বল।আমাকে তো আসতেই হবে।এতোটুকুতেই এতো হাঁসফাঁস করলে চলবে!স্ট্রং হতে হবে,কয়েক বছর পর তো আমার বংশবৃদ্ধি ঘটাবো।অত্যন্ত আমাকে সহ্য করার ক্ষমতা রাখতে হবে।’

পিটপিট করে রক্তিম ভাইয়ের দিকে তাকালাম।রক্তিম ভাই আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে পুনরায় বললেন,

‘ভয় পাওয়ার কিছু নেই।আস্তে আস্তে আমিই সব করে নিবো।’

কথাটা বলেই একটা চোখ টিপ মারলেন।আমার চোখ দুটো যেনো কোটর থেকে বেরিয়ে পড়বে।রক্তিম ভাই পকেটে হাত গুঁজে নিচে নেমে পড়লেন।আমি রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছি এখনো।রক্তিম ভাইয়ের বলা শেষের কথা টা আমার মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে।কি উনি আস্তে আস্তে করে নিবেন!!!
—-
সন্ধ্যা সাত টা বাজে এখনো রক্তিম ভাইয়ের কোনো দেখা নেই।সবাই রক্তিম ভাইয়ের কথামতো রেডি হয়ে গিয়েছি।কিন্তু,এখন রক্তিম ভাইয়ের কোনো দেখা পাচ্ছি না।বাগানের দোলনায় আমি আর রিমি চুপ করে বসে আছি।সামনেই দাঁড়িয়ে আছে তনায়া আপু,বাবু ভাইয়া আর বেবি আপু।আবির ভাই এখনো বের হয় নি।তবে,বলেছে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই চলে আসবে।মশার কামড়ে আমার হাত যেনো ফুলে গিয়েছে।রাগে,দোলনা থেকে উঠে আসলাম।আমি উঠাতে রিমিও উঠে গিয়েছে।আমার পিছু পিছু এসে বাসার সামনের রাস্তা টায় গিয়ে দাঁড়ালো।কিছুক্ষণের মধ্যেই আবির ভাই হন্তদন্ত হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আসলো।আমাদেরকে তাড়া দিয়ে বললো,

‘তোরা সবাই গাড়িতে গিয়ে উঠে বস।রক্তিম রেস্টুরেন্টে আছে।তারিন আছে বলে সে আর আসতে পারবে না।আমাকেই নিয়ে আসতে বললো।’

আবির ভাইয়ের কথা কর্ণপাত করেই আমার বুকে একটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলাম।মনে মনে আওড়াতে লাগলাম,তারিন আপুকেও ইনভাইট করেছেন রক্তিম ভাই।চোখ দুটো ঝাঁপসা হয়ে আসলো।আবির ভাইয়ের তাড়া দেওয়ায় আমরা খুব দ্রুত গতিতে গাড়িতে উঠে পড়লাম।সবাই হাসি মজা করলেও আমি চুপ করে বসে আছি।আমার কিছুতেই ভালো লাগছে না।দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলাম।ল্যাম্পপোস্টের আলোতে রাস্তা টাকে অন্যরকম লাগছে।গাছের পাতাগুলোও অন্যরকম হয়ে আছে।সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলাম।
—-
রেস্টুরেন্টে পৌঁছে আমি যেনো আরেকদফা চমকে উঠলাম।চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি রক্তিম ভাই তারিন আপুর সামনে হাতে ফুল নিয়ে হাঁটুগেড়ে বসে আছেন।তারিন আপু অপলক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন রক্তিম ভাইয়ের দিকে।রক্তিম ভাইয়ের ঠোঁটেও মুচকি হাসি।তারিন আপু লজ্জামিশ্রিত এক হাসি টেনে রক্তিম ভাইয়ের হাত থেকে ফুল টা নিয়ে নিলেন।রক্তিম ভাই উঠে দাঁড়াতেই তারিন আপু দৌড়ে গিয়ে রক্তিম ভাইকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
‘আই লাভ ইউ রক্তিম।লাভ ইউ সো মাচ।’

আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা সবাই জোরে হাততালি দিয়ে উঠলো।একেকজন বলে উঠছে,দু’জনকে একসাথে খুব মানিয়েছে।দে আর মেড ফর ইচ আদার।

নিজের চোখের সামনে ভালোবাসার মানুষ টিকে অন্যকারোর সাথে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে আমি যেনো তালগোল পাঁকিয়ে ফেলেছি।গাল বেয়ে অঝোরে পানি পড়ছে।একটা শকড এর মধ্যে রয়েছি আমি।তবে,সবার কোলাহল আমার কানে আসছে।এমনকি,রক্তিম ভাইয়ের মুখের হাসিটাও আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।তাহলে,আমি ভুল ছিলাম!রক্তিম ভাইয়ের মনে আমার জন্য কোনো ভাবনা নেই।আর না পেরে!মুখে হাত গুঁজে কেঁদে উঠলাম।শিলা আপু দূর থেকে আমাকে দেখে বলে উঠলেন,
‘রিমঝিম!!’
শিলা আপুর মুখে আমি ভয়ের ছাপ দেখতে পাচ্ছি।শিলা আপু বলার সাথে সাথেই রক্তিম ভাই আমার দিকে চট করে তাকালেন।অবাক,চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।শিলা আপু দৌড়ে আমার কাছে এসে আমাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলেন।আমি এবার শব্দ করে কেঁদে উঠলাম।নিজেকে শিলা আপুর থেকে ছাড়িয়ে দৌড়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে পড়লাম।পাগলের মতো দৌড়ে যাচ্ছি সামনের দিকে।কিছুটা আগানোর পর স্পষ্ট আমি রক্তিম ভাইয়ের গলার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি।পিছনে তাকিয়ে দেখি রক্তিম ভাই আমার দিকে দৌড়ে আসছেন।রক্তিম ভাইকে আসতে দেখে আমি আরো জোরে দৌড়তে থাকি।হঠাৎ একটা প্রাইভেট কার সামনে চলে আসায় আমি কিছুটা বেসামাল হয়ে পড়ি।যার ফলে দুড়ুম করে প্রাইভেট কারের সাথে লেগে ছিটকে গিয়ে পাশের ফুটপাতের উপরে গিয়ে পড়ি।মাথায় তীব্র আঘাত অনুভব করতেই আমার চোখ দুটো নিভু নিভু হয়ে আসলো।পরক্ষণেই কানের মাঝে এসে ঠেকলো রক্তিম ভাইয়ের কণ্ঠ।রক্তিম ভাই গগণ বিদারী চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন,রিমঝিম!!!!

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here