জলপদ্ম পর্ব -১১

#জলপদ্ম
#কুরআতুল_আয়েন

|১১|
প্রায় এক সপ্তাহের মতো হলো দাদু বাড়ি থেকে চলে এসেছি।এইবারে অনেকদিন থাকা হলো।আরো বেশ কয়েকটা দিন থাকা হতো তবে,আমার আর রিমির রেজাল্টের দিন ঘনিয়ে এসেছে বলে আর থাকা হয় নি।তাই,বাধ্য হয়েই আগে চলে আসতে হয়েছে।এবার দাদি আর সেজোমা’কেও সাথে করে নিয়ে এসেছি।দাদিকে নিয়ে আসতে অনেক টা বেগ পেতে হয়েছে।আমরা বলার পরও দাদি আসতে রাজি হতে চায় নি তবে,রক্তিম ভাই বলার কিছুক্ষণ পরেই দাদি রাজি হয়ে গিয়েছে।দাদি রাজি হওয়ার পর সে কি ভাব ছিলো রক্তিম ভাইয়ের।এমন একটা এটিটিউট দেখিয়েছিলেন মনে হয় উনি বিশ্ব জয় করে এসেছেন।বারান্দায় বিদ্যমান বেঁতের চেয়ারটায় বসে উপন্যাসের একটা বই এপিঠ ওপিঠ করে দেখছিলাম।কয়েকদিন পর থেকে নতুন বর্ষের ক্লাস শুরু হবে।রেজাল্ট কোনোরকম হয়েছে।রেজাল্ট পেয়ে মা যতটা না চেঁচিয়েছে তার থেকে দ্বিগুণ চেঁচিয়েছেন রক্তিম ভাই।বিশেষ করে ম্যাথের ব্যাপার টা নিয়ে।রক্তিম ভাইয়ের এক কথা আমার মাথায় ম্যাথের আগামাথা কিছুই ঢুকে না।রক্তিম ভাই ভুল কিছু বলেন নি।ম্যাথ জিনিস টা আসলেই আমার মাথা তালগোল পাঁকিয়ে দেয়।দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে উপন্যাসের বইটা পাশের টেবিলের উপর রেখে দিলাম।বাহিরের রোদ টা শরীরে লাগতেই বেশ আরাম পাচ্ছি।মনে হচ্ছে,আর কিছুটা সময় বসে থাকি।তবে,এখন বসে থাকলে চলবে না!দু’দিন হলো গোসল করি না।আজকে অত্যন্ত করতেই হবে।শরীর থেকে কেমন একটা উদ্ভট গন্ধ বের হচ্ছে।নিজের কাছেই নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছে।কোমর টা টানা দিয়ে উঠে পড়লাম।কাবার্ডের কাছে এগিয়ে গিয়ে একটা টি-শার্ট আর ট্রাউজার নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গিয়ে ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দিলাম।পানির কল ছাড়তেই তিন মিনিটেই যেনো বালতি টা অর্ধপূর্ণ হয়ে গিয়েছে।একমগ পানি ঢালতেই শরীর টা কেমন জীবন্ত হয়ে গেলো।গিজার থাকায় এই শীতেও আমি গোসল করা নিয়ে আলসেমি করি।কথাটা মনে পড়তেই নিজেই নিজেকে একগাদা বকে দিলাম।ভালো করে চুল শ্যাম্পু করে গোসল সেরে নিলাম।নিজেকে এখন অনেকটা ফ্রেশ লাগছে।হঠাৎ চোখ পড়লো কাপড়ের দিকে।তাড়াহুড়োর মাঝে টি-শার্টের নিচে পড়ার জিনিস টাই আনতে ভুলে গিয়েছি।এই ভুল টা মাঝেমধ্যেই হয়ে থাকে আমার।তার উপর তাদের সাইজও ছোট লেভেলের।সহজে চোখ পড়ে না।কোনোমতে শরীরটা মুছে টাওয়েল টা পড়ে নিলাম।ওয়াশরুমে বাথরোব টাও নেই।এখন মনে পড়লো আসার সময় দেখেছিলাম বারান্দায় লটকানো ছিলো।তাই বাধ্য হয়ে এইভাবেই বেরিয়ে গেলাম।দরজা খুলে বিছানার মাঝখানে রক্তিম ভাইকে বসে থাকতে দেখে আমি যেনো টাসকি খেলাম।রক্তিম ভাইকে এইখানে একদন্ডও আশা করি নি।ভালো করে তাকিয়ে দেখি রক্তিম ভাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছেন।আমি সাথে সাথে উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে পড়লাম।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,

‘রক্তিম ভাই আপনি আমার রুমে কি করছেন?একটা মেয়ের রুমে এইভাবে বসে থাকাটা কিন্তু বেমানান।’

রক্তিম ভাইয়ের খুকখুক করে কাশির আওয়াজের শব্দ শুনতে পাচ্ছি।মিনিট পাঁচেক পর কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

‘তোর যা নেওয়ার তুই নিয়ে যা রিমঝিম।তোর দিকে আমি তাকাতে ইচ্ছুক না।তুই হলি আমার চাচাতো বোন।চাচাতো বোনকে চাচাতো বোনের মতো দেখতে হয়।আমিও সেইরকম বুঝলি।’

রক্তিম ভাইয়ের কথা শুনে আমি চট করে সামনে তাকালাম।ভীষণ বেগে কান্না পাচ্ছে আমার।এই মানুষ টার মতিগতি আমি কিছুই বুঝি না।একবার কাছে আসে তো আরেকবার চাচাতো বোন বানিয়ে দেয়।কিন্তু,আমি যে এখন রক্তিম ভাইয়ের প্রেমে পড়ে প্রায় আধপাগল হয়ে আছি!!আমার প্রেমে পড়ার পরপরই কি রক্তিম ভাইয়ের চাচাতো বোন বলতে হতো।আবেগ যেনো আমাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে।মনে হচ্ছে এখনই চোখ থেকে টুপ টুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে যাবে।

‘কি হলো!এইভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো।এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে যেকোনো মুহূর্তে দেখবি তোর টাওয়েল আর তোর শরীরে নেই।নিচে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে।অলরেডি কিছুটা নিচে নেমে পড়েছে।তোর বুকের সাইজ বুঝা যাচ্ছে।এই বয়সে এতো বড় বুক কীভাবে সামলাস তুই রিমঝিম!কোন ব্র‍্যান্ডের ব্রা পড়িস রে।’

রক্তিম ভাইয়ের কথা শুনে আমার কান একদম গরম হয়ে গিয়েছে।মানুষ টা এইরকম লাগামছাড়া কথা বলে কীভাবে।একটু আগেই তো বললেন,আমি উনার চাচাতো বোন হই,আমার দিকে ফিরেও তাকাবেন না।অথচ,এখন তার ঠিক উল্টো।দাদু বাড়িতে গিয়ে কোনো পেত্নী টেত্নী ধরলো না তো রক্তিম ভাইকে।অবশ্য,ধরতেও পারে না হলে এইরকম কথা কি কোনোদিনও বলতেন!
আমি এখনো আগের ন্যায় থম মেরে দাঁড়িয়ে আছি।সামনে আগানোর গতি পাচ্ছি না।একহাতে টাওয়ালের বাঁধন টাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছি।রক্তিম ভাই বিছানা ছেড়ে উঠে দ্রুত গতিতে কাবার্ডের দিকে এগিয়ে গেলেন।কাবার্ডের দরজা খুলে অনেক খোঁজাখুঁজির পর একটা টসটসে কমলা কালারের ব্রা এনে আমার মুখের সামনে ধরে বললেন,

‘এই কালারেরও পড়িস।চয়েজ তোর ল্যাবেন্ডিস রিমঝিম।’

‘রক্তিম ভাই আপনি দূরে সরুন তো।আর প্লিজ আমার রুম থেকে বেরিয়ে যান।বাসায় অনেক মানুষ জন আছে।কেউ দেখলে খারাপ ভাবতে পারে।’

‘বাসায় কেউ নেই রিমঝিম।তবে,চিন্তার কোনো কারণ নেই আমি তোর উপর হনুমানের মতো ঝাঁপিয়ে পড়বো না।কারণ,তুই আমার চাচাতো বোন।’

‘বাসায় কেউ নেই মানে কোথাও গেলো সবাই।’

‘যে যার কাজে ব্যস্ত।তোর মতো নাকি দু’দিন গোসল না করে শরীর গন্ধ করে বসে থাকবে।আর,গোসলের আগে নিজের আসল জিনিস নিতে ভুলে যাবে।’

‘এর সাথে এইটার কি সম্পর্ক রক্তিম ভাই।ভুল তো মানুষের হতেই পারে।’

‘ভুল,একবার হয়।তাই বলে দু’বার বা বারবার না।তবে একটা সত্যি কথা কি তুই কিন্তু বেশ হট রিমঝিম।তোর বিউটি বোন গুলা দেখে আমি লোভ সামলাতে পারছি না।ইচ্ছা করছে বেশখানিকটা সময় নিয়ে চুমু খাই।অন্য কিছু ভাবিস না কিন্তু আমি তোকে চাচাতো বোনই মনে করি।’

রাগে আমার শরীর শিরশির করে উঠলো।রক্তিম ভাইয়ের কথা শেষ হতেই আমি ক্যাটক্যাটানি গলায় বললাম,

‘রাখুন তো আপনার চাচাতো বোনের বাণী।চাচাতো বোনও বলছেন আবার অশ্লীল কথাবার্তাও বলছেন।আপনাকে একমুহূর্তের জন্যও বিশ্বাস নেই রক্তিম ভাই।বেরিয়ে যান আমার রুম থেকে।’

রক্তিম ভাই আমার কথার কোনো প্রত্যুত্তর করলেন না।নেশালো দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।রক্তিম ভাইয়ের এরূপ চাহনি তে আমার বেশ অস্বস্তি হচ্ছে।সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেললাম।রক্তিম ভাইয়ের চোখের দিকে তাকানোর সাহস টুকুও পাচ্ছি না।আচমকাই রক্তিম ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।রক্তিম ভাইয়ের এমন নিশ্চুপ তেড়ে আসায় আমি কিছুটা ঘাবড়ে যাই।আমার হাত দুটো অবশ হয়ে আসছে।রক্তিম ভাইয়ের শরীর থেকে মিষ্টি একটা ঘ্রাণ আসছে।মনে হচ্ছে,এইমাত্র গোসল করে এসেছেন।চুল গুলো ভিজে জুবুথুবু হয়ে আছে।রক্তিম ভাই টাওয়ালের বাঁধন টা খোলে দিলেন।আমি চমকে তাকালাম রক্তিম ভাইয়ের দিকে।রক্তিম ভাইয়ের চোখ জুড়ে এখনো সেই চাহনি বিরাজ করছে।আমি শক্ত করে রক্তিম ভাইকে জড়িয়ে ধরলাম।রক্তিম ভাইও কম কিসে আমাকেও নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়েছেন।হয়তোবা এটারই আশা করছিলেন।আমি আঁটকে আসা কন্ঠে বললাম,

‘রক্তিম ভাই ছাড়বেন না আমাকে।’

রক্তিম ভাই খোঁচা খোঁচা দাড়ি গুলো দিয়ে আমার গলার কাছে স্লাইড করতে লাগলেন।আমার শরীরের কাঁপন আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাচ্ছে।বেশ কিছুক্ষণ পর রক্তিম ভাই কোমর থেকে টাওয়েল টা তোলে আগের মতো শক্ত করে বেঁধে দিলেন।হাতের ভাঁজে কমলা রঙের ব্রা টা ধরিয়ে দিয়ে হিসহিসিয়ে বললেন,

‘সময় হলে সবকিছু ঠিকই আদায় করে নিবো।এখন নিজেকে ঠিক রাখলেও তখন কিন্তু খবর করে ছাড়বো।এখন শুধু একটু বিজ্ঞাপন দেখালাম।যাদে করে,নেক্সট টাইম এই ভুল না হয়।’

কথাটা বলেই রক্তিম ভাই আমাকে টেনে ওয়াশরুমের ভিতর ছিটকে মারলেন।বালতি টা ধরে কোনোমতে নিজেকে সামলিয়েছি।না হলে আমার নাক,মুখের বারোটা বেজে যেতো।পিছনে তাকিয়ে দেখি রক্তিম ভাই আগ্নেয়গিরির লাভার মতো টগবগ করছেন।আমি ঘুরতেই ঠাস করে বাথরুমের দরজা টা লাগিয়ে দিলেন।বজ্রপাতের মতো শব্দ হয়েছে।নির্ঘাত বাথরুমের দরজার কব্জা টা ঢিলে হয়ে গিয়েছে।মা’কে বলে আজকেই মেরামত করাতে হবে।

কোনোমতে কাপড় পড়ে ভয়ে ভয়ে বাথরুমের দরজা টা খোলে উঁকি দিয়ে দেখি রক্তিম ভাই রুমে নেই।রক্তিম ভাইয়ের দেখা না পেয়ে আমি কিছুটা স্বস্তি পেলাম।স্বস্তির নিঃশ্বাস পেলেও টেবিলের মাথায় কসটেপ দিয়ে আটকানো সাদা কাগজ টা দেখে আমার চোখ দুটো ছোট ছোট হয়ে গিয়েছে।তাতে সবুজ কালারের সাইন পেন দিয়ে হাতির সাইজে বড় বড় করে লিখা রয়েছে,

‘এর শাস্তি আমি খুব শীঘ্রই তোমার উপর থেকে উসুল করে নিবো।ভালোবাসার মানুষকে চোখ ধাঁধালো অবস্থায় দেখেও নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখা খুব কষ্টের।আজকে আমি হারে হারে টের পেয়েছি।’

আমি দ্রুত গতিতে টেবিলের কাছে এগিয়ে গিয়ে কাগজ টা হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলাম।আরো কয়েকবার পড়ে নিয়ে হঠাৎ অনুভব করলাম আমি খুব লজ্জা পাচ্ছি।যা খুব ভালো ভেবেই আমার মধ্যে ঝেঁকে বসেছে।আর কিছু না ভেবে দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বিছানায় উঁপুড় হয়ে শুয়ে পড়লাম।অত্যন্ত কিছুটা সময় কল্পনার রাজ্যে বাস করা উচিত।রক্তিম ভাইয়ের কল্পনার রাজ্য।
————-
অতিরিক্ত কথার আওয়াজে আমার ঘুমের রেশ কেটে গিয়েছে।কিছুক্ষণ থম মেরে শুয়ে রইলাম।কথার আওয়াজ তীব্র থেকে তীব্রতর হতেই চোখ পিটপিট করে তাকালাম।তাকিয়ে দেখি আমার ঘর ভর্তি মানুষজন।আমি তাড়াহুড়ো করে উঠে বসলাম।চোখ কচলে দেখলাম বড়মা আর মা মিলে তনায়া আপুকে একটা জামদানী শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছে।তনায়ার আপুর মুখে মিষ্টি হাসি বিদ্যমান।অদূরে বসে আছে মেজোমা।মাথায় হাত দিয়ে এক দৃষ্টিতে বাহিরে তাকিয়ে আছে আর একটু পর পর শাড়ির আঁচল দিয়ে নাক মুছছে।আমাকে সজাগ হতে দেখে মা বললো,

‘এই ভরদুপুরে কি করে ঘুমাস কে জানে।যা তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে নেয়।ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে।’

আমি আতঙ্কিত হয়ে বললাম,

‘মানে!ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে মানে কি।আমার তো এখনো বিয়ের বয়সও হয় নি।মা তুমি আমাকে এতো আগে বিয়ে দিতে যাচ্ছো কেনো!বললাম তো,এবারে ম্যাথ পরীক্ষায় আমি ভালো নাম্বার তুলে নিয়ে আসবোই।’

মা মনোযোগ দিয়ে তনায়া আপুর শাড়ির কুচিগুলো ঠিক করে দিয়ে বললেন,

‘তোকে বিয়ে দিবো তা কখন বললাম।তোকে বিয়ে দিয়ে আমি বিপদে পড়তে চাই না রিমঝিম।’

‘কেনো এইমাত্রই তো বললে,ছেলেপক্ষ দেখতে আসছে আমি যেনো রেডি হয়ে নেই।’

‘তুই আসলেই গাধি রিমঝিম।তোর বেসিক নলেজ আসলেই দূর্বল।তোর তো বোঝা উচিত ছিলো তনায়াকে যেহেতু শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছি সেহেতু তার জন্যই ছেলেপক্ষ আসবে।তোকে তো শুধু এমনেই বললাম তৈরি হতে।রক্তিম ঠিকই বলে,তুই গাধি।আমার পেট থেকে যে এমন গাধি হবে তা কোনোমতেই জানা ছিলো না।’

আমি অবাক চোখে তাকালাম মা’র দিকে।মনে মনে বিরবির করে বলতে লাগলাম,এমন লজিকের জয় হোক।তবে,আমি কনফিউজড তনায়া আপুকে কে দেখতে আসছে।তনায়া আপুর দিকে তাকিয়ে বোঝা যাচ্ছে তনায়া আপু বেশ খুশি।একটুও মন খারাপের কোনো রেশ নেই।তাহলে কি বাবু ভাইয়া আসছেন।বাবু ভাইয়া আসলে তো আবির ভাই কুরুক্ষেত্র বাজিয়ে দিবে।তাহলে কে হতে পারে!কিউরিওসিটি বাড়ছে বলে মা’কে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম,

‘মা!তনায়া আপুকে কে দেখতে আসছে?’

মা স্বাভাবিক ভাবে জবাব দিলেন,

‘বাবু আসছে তার পরিবার নিয়ে।’

আমার হেঁচকি উঠার উপক্রম।ব্যাপার টা আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।এইজন্য তনায়া আপুর মুখে হাসি বিদ্যমান।তবে,আবির ভাই কি জানে না?নাকি না জেনেও চুপ করে আছে।আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই তনায়া আপু আমাকে ইশারায় থামিয়ে দিয়ে আস্বস্ত করলো,

‘আমার সব উত্তর তনায়া আপু দিবে।’
আমিও তনায়া আপুর ইশারা পেয়ে চুপ হয়ে যাই।মা,বড়মা,মেজোমা চলে যেতেই তনায়া আপু দরজা টা বন্ধ করে দিয়ে আমার কাছে এসে বসলো।মুচকি হেসে বললো,

‘শুনবি কীভাবে কি হলো!’

আমি সাথে সাথে মাথা নাড়িয়ে জবাবে বললাম,

‘হ্যাঁ!তনায়া আপু আমি তো সেই কখন থেকে শোনার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছি।কীভাবে কি হলো বলো তো।’

‘বেশি কিছু না!রক্তিম ভাই রাজি করিয়েছে।পার্কের কোন আবুল নামের এক পোলা আবির ভাই কে আমার আর বাবু ভাইয়ের কথা টা বলে দেওয়ায় আবির ভাই অনেকটাই ক্ষেপে যায়।বাসায় এসে মা আর বাবাকে বলে দেয়।মা বাবা আমাকে একগাদা বকে যখন শান্ত হয়ে বসে পড়েছিলো তখন রক্তিম ভাই এসে সবকিছু নিজের হাতে হ্যান্ডেল করে মা আর বাবাকে মানিয়ে নিয়েছে।’

‘মেজোমা আর মেজোবাবাও মেনে নিয়েছে?’

‘না মেনে উপায় আছে বল।রক্তিম ভাইয়ের কথায় মা বাবা একদম নরম হয়ে গিয়েছে।’

‘আর আবির ভাই।’

‘আবির ভাইয়ের কানে কানে গিয়ে শুধু বলেছিলাম শিলা আপুকে বলে দিবো নাকি,ব্যাস!আবির ভাই মুহুর্তেই মোড় ঘুরিয়ে নিয়েছে।আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো তোর আর বাবুর হানিমুনের টিকিট টা আমি কেটে দিবো বোন।সুন্দর একটা ট্রিপ দিয়ে আসবি।তাও,মুখ টা বন্ধ রাখবি।মাঝপথে এসে টোকা দিয়ে নৌকা টা ডুবিয়ে দিস না।তীর গিয়ে উঠার পর ডুবিয়ে দিস।’

‘এতো কিছু হয়ে গেলো আর আমি কিছুই জানি না।আমাকে তোমরা বললেও না তনায়া আপু।’

‘তুই যা ঘুম পাগল হয়েছিস রিমঝিম।এই কয়েকদিনে তো তুই ঘুমিয়ে একদম কাঁত হয়ে গিয়েছিস।তো জানবি কীভাবে বল।’

আমি হাবলার মতো তাকিয়ে রইলাম তনায়া আপুর দিকে।যাক,একটা জিনিস ভেবে ভালো লাগছে তনায়া আপু আর বাবু ভাইয়ার ভালোবাসা বিয়েতে পরিনতি নিচ্ছে।তবে,আবির ভাইয়ের কান্ডকারখানা শুনে আমার খুব জোরে বলতে ইচ্ছে করছে ঠেলার নাম বাবাজী!!
————
বিয়ের দিনতারিখ খুব তাড়াতাড়িই পাঁকা করে ফেলবেন দু’পরিবারের কথা হয়েছে।কিছুটা দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে আছেন রক্তিম ভাই।বাবু ভাইয়ের বোন বেবি আপু রক্তিম ভাইকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।মনে হচ্ছে,কখনো রক্তিম ভাইকে দেখে নি।অথচ,রাস্তাঘাটে দেখা হলেই রক্তিম ভাইয়ের কাছে আবদার করে এক খিলি পান খাওয়ার জন্য।প্রায়,সময় আমি দেখি রক্তিম ভাই চোখে,মুখে বিরক্তির দৃষ্টি নিয়ে এক খিলি পান কিনে দিচ্ছেন বেবি আপুকে।তখন সহ্য করলেও এখন সহ্য করতে পারছি না।তার উপর রক্তিম ভাই কালো শার্ট,প্যান্ট পড়ে দাঁড়িয়ে আছেন।গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি গুলো যেনো সৌন্দর্য্য আরো ফুটিয়ে তুলেছে।হঠাৎ চোখ পড়লো রক্তিম ভাইয়ের চোখের দিকে।আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রক্তিম ভাই ইশারা করে বুঝিয়ে বললেন,

‘কি হয়েছে।’

আমি মুখ ভেঙচি মেরে সেখান থেকে চলে আসলাম।আসার সময় দেখলাম রক্তিম ভাইও আমার পিছু পিছু আসছেন।রক্তিম ভাইকে আসতে দেখে আমি দ্রুত গতিতে হাঁটতে লাগলাম।তবে,বেশিদূর যেতে পারি নি।তার আগেই রক্তিম ভাই আমাকে আঁটকে দিয়ে বললেন,

‘কি ব্যাপার রিমঝিম?ওইসময় আমাকে চোখ দিয়ে এতো গিলে খাচ্ছিলি কেনো তুই?’

রক্তিম ভাইয়ের কথা শুনে আমার পিত্তিজ্বলে যাওয়ার উপক্রম।তবুও,নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললাম,

‘আমি বেবি আপু নই যে আপনাকে গিলে খাবো রক্তিম ভাই।’

রক্তিম ভাই চুল গুলোয় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,

‘তুই জেলাস রিমঝিম।কেনো বল তো!’

‘মোটেও আমি জেলাস নই।আমি ঠিক আছি রক্তিম ভাই।’

‘দেখলেই বুঝা যায়।ভাবছি বেবির সামনে গিয়ে এক খিলি পান দিয়ে এই লাইন টা বলবো,
“বেবী!হবে কি আমার রানী”
এই কথাটা বললেই দেখবি বেবি আমাকে বাবু বলে জড়িয়ে ধরে কোলে উঠে পড়বে।’

আমি সরু চোখে তাকালাম রক্তিম ভাইয়ের দিকে।রক্তিম ভাই আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে শিস বাজিয়ে সামনের দিকে হাঁটা ধরলেন।কিছুটা দূর এগিয়ে গিয়ে পুনরায় পিছন ফিরে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বললেন,

‘রিমঝিম তোর ওড়না ঠিক কর।তোর বুকের সাইজ দেখিয়ে মানুষকে বেহুশ করাতে যাস না।সবার হার্ট আমার মতো স্ট্রং না।দূর্বল হার্টদের জন্য কিন্তু খুবই বিপজ্জনক।’

রক্তিম ভাইয়ের কথা শেষ হতে না হতেই আমি দৌড়ে রুমে চলে আসলাম।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখি আসলেই আমার ওড়না টা ঠিক নেই।খুব বেসামাল হয়ে আছে।নিজেই নিজেকে শাসিয়ে ওড়না টা ঠিক করে নিলাম।তবে,বেবি আপুকে নিয়ে রক্তিম ভাইয়ের বানানো উক্তি আমার মোটেও পছন্দ হয় নি।আচ্ছা!আমি যদি বলি আমাকে নিয়ে এইরকম উক্তি বানাতে তাহলে কি রক্তিম ভাই বরাবরের মতো বলে উঠবেন,
‘তুই তো গু রিমঝিম।তোকে নিয়ে আমার মনের মধ্যে কিছুই আসে না।গু গু ফ্লেভার দিয়ে তো গন্ধই আসবে এর থেকে বেশি কিছু আসবে না!!’

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here