জলপদ্ম পর্ব -২৭

#জলপদ্ম
#কুরআতুল_আয়েন

|২৭|
বিকেলের দিকে রঞ্জন,সুস্মিতা,শিলা,সিফাত সবাই এসেছে।মূল উদ্দেশ্য রিমঝিমকে দেখার।রিমঝিমও যেনো সবাইকে পেয়ে খুশিতে আত্নহারা।সবার সাথে যেনো কথার মেলা খোলে দিয়েছে।সবার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে রক্তিম।পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে রিমিঝিমের দিকে।রিমঝিমের মুখে আগের সেই হাসিটা দেখতে পাচ্ছে।কতদিন বাদে হাসলো এইভাবে রিমঝিম,তার হিসেব রক্তিমের কাছে জানা নেই।রিমঝিমের থেকে হাসি গুলো তো সেই কেঁড়ে নিয়েছিলো।যখন অতীতের কথাগুলো মনে হয় তখন রক্তিম নিজেকে একটা কীট মনে করে।ঘৃণা হয় তার বাবা আর নিজের উপর।মাথা নিচু করে কয়েকবার নিঃশ্বাস ছাড়লো রক্তিম।সময় গুলো যেনো বিষাক্ত হয়ে উঠছে।রিমঝিমের হাসির আওয়াজ টা যেনো তার কাছে নুপুরের মতো ঝনঝন শব্দ করছে।রক্তিম চোখ বন্ধ করে উপলব্ধি করতে লাগলো।ঠোঁটে ফুঁটে উঠেছে ঝিলিক মারা হাসি।আবির সবার সামনেই টইটই করে ঘুরছে।মনে মনে বুদ্ধি করছে কীভাবে শিলার হাত টা একটু ধরবে।এই বুদ্ধি ওই বুদ্ধি করে বেশ অনেক গুলাই বুদ্ধি বের করলো,কিন্তু পরে গিয়ে তা মনমতো টিকলো না।ভয় হচ্ছে!চড়,থাপ্পড় খাওয়ার ভয়।শিলা যা মেয়ে তার কাছে চড়,থাপ্পড় দেওয়া টা কোনো ব্যাপারই না।এক কথায় বা হাতের খেল।আবিরের কাছে শিলাকে বাঘিনীর থেকে কম মনে হয় না।আবির তো প্রায়ই চিন্তায় পড়ে যায়!তার বাচ্চা গুলো না জানি শিলার মতো খাটাশ,আর বাঘিনী হয়।আবির খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো শিলাকে।চশমা টা পাল্টিয়েছে।আগের থেকে এখনের ফ্রেম টা একটু মোটা।তাও!একদম পার্ফেক্ট লাগছে।শিলা আন্দাজ করতে পারছে আবির যে তাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।শিলার খুব রাগ হলো।কারোর জীবনের সাথে সে কিছুতেই জড়াতে পারবে না।কারণ,তার পরিবার আগে থেকেই বিয়ে ঠিক করে রেখেছে।এমনকি কয়েকমাস পর বিয়ের তারিখও পাকাপোক্ত হয়ে যাবে।সবাইকে বলে নি এখন পর্যন্ত।নিজের মধ্যেই আঁটকে রেখেছে।সময় হলেই সবাইকে সারপ্রাইজ দিবে।
🍁🍂
রঞ্জন সুস্মিতার কাঁধে হাত রেখে রিমঝিমকে উদ্দেশ্য করে বললো,’আমি যেনো তোমাকে আমাদের বিয়েতে উপস্থিত পাই রিমঝিম।না হলে কিন্তু,আমি আর সুস্মিতা খুব মন খারাপ করবো।আর,তোমাকে তো আমার ছোট বোন বলেছি তাই না সেই হিসেবে এই দাদার বিয়েতে তোমার উপস্থিতি মাস্ট বি চাই।আর কেউ আসুক বা না আসুক তোমাকে আসতেই হবে।’রিমঝিম হেসে ফেললো।বাতাসের ঝাপটায় চুল গুলো এলোমেলো ভাবে উড়ছে।নাকে,মুখে এসে বাড়ি খাচ্ছে।হাত দিয়ে যেই না সরিয়ে দিচ্ছে তাও অবাধ্যভাবে চুল গুলো তাদের খেল দেখিয়ে যাচ্ছে।রক্তিম এই দৃশ্যটা খুব উপভোগ করছে।ইচ্ছে করছে,প্রেয়সীর অবাধ্য চুল গুলো নিজের হাতের আলতো ছোঁয়ায় সরিয়ে দিতে।ফর্সা তকতকে গাল টায় শব্দ করে একেরপর এক চুমু খেতে।কিন্তু,এখন আর আগের মতো সাহসে কুলায় না।বারংবার মনে হয় এই অধিকার থেকে সে অনেকটাই পিছিয়ে এসেছে।রিমঝিম মুচকি হেসে রঞ্জনের কথার পিঠে বললো,
‘তাহলে!আমি ঠিক সময়েই বাংলাদেশে এসেছি।অবশ্যই।আমি যাবো আপনাদের বিয়েতে রঞ্জন ভাইয়া।সবার মুখে শুনেছি,হিন্দুধর্মের বিয়েতে অনেক মজা হয়।সামনাসামনি কখনো দেখা হয় নি আমার।যেহেতু!একবার সুযোগ এসেছে তাহলে সেটা আর হাতছাড়া করে বোকামি টা একদমই করবো না।’

আবির মুখ বেঁকিয়ে রঞ্জনকে বললো,
‘বাপরে!আর কেউ আসুক বা না আসুক রিমঝিমের উপস্থিতি তোর চাই।তাহলে!আমরা না গেলেও চলবে তাই তো।’

রঞ্জন দাঁত কেলিয়ে বললো,
‘তোকে তো লাগবেই আবির।আমার ধুতি ধরার দায়িত্ব টা তুই বহন করবি।এককথায়!ধুতি বহনকারী।’

‘এমাউন্ট টা বল।শুনে ঠিক করে রাজি হচ্ছি।’

‘ধুতি ধরার জন্যও টাকা লাগবে বলিস কি!তুই তো আমার বন্ধু না একটা ডাকাত।ডাকাত বললেও ভুল হবে তুই একটা শয়তান।’

‘ভাই ভেবে দেখ!ধুতির দায়িত্ব আমি নিতে রাজি।তবে,সাবধান টাকা না পেলে কিন্তু ছাঁদনাতলায় ধুতি খুলেও যেতে পারে।পরে কিন্তু আমাকে দোষ দিলে চলবে না।’

‘নিচে লজ্জা নিবারনের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পড়ে নিবো।এমন হলে,এভাবেই যাবো ছাঁদনাতলায়।’

আবির মেয়েদের মতো মুখে হাত গুঁজে বললো,
‘অশ্লীল কোথাকার।লজ্জা শরম দিন দিন লোপ পাচ্ছে।’

সুস্মিতা রঞ্জনকে একদফা কিলো,ঘুষি দিয়ে শান্ত হলো।ক্ষিপ্ত হয়ে বললো,
‘তোদের কথার ধরণ দেখলে বমি আসে।মন চায় একদৌড়ে ছুটে গিয়ে মরুভূমির মাটিতে গিয়ে গড়াগড়ি খাই।’

শিলা চশমাটা ঠিক করে নিয়ে বললো,
‘সহমত।’

আবির পটপট করে বলতে লাগলো,’চশমিশের মুখে কথা ফুঁটেছে।শুনে নিজেকে ধন্য লাগছে।কতোদিন বাদে শুনেছি এই ঝাঁঝালো কণ্ঠ।’

‘এতো বাড়িয়ে বলছেন কেনো আপনি!যেভাবে বলছেন আমি মনে হয় এতোদিন বোবা ছিলাম আর আজকে নতুন কথা বলছি।একটু আগেই তো শুনলেন,যখন আপনাদের বাসার সবার সাথে কুশল বিনিময় করেছি।শুধু তাই নয়,এতোক্ষণ তো আপনার সামনে রিমঝিমের সাথেও কথা বলেছি।তাহলে!ভুল ভাল কথা কেনো বলছেন।’

শিলার কথায় একদফা হাসির রোল হয়ে গেলো।আর,আবির মুখটাকে কাঁচুমাঁচু করে রেখেছে।ইনিয়েবিনিয়ে বললো,
‘আমি তো এইসব বলে তোমাকে পরীক্ষা করছিলাম চশমিশ।চোখের সাথে কানও আবার গেলো নাকি তা বোঝার জন্য।এখন,দেখছি মাথা,চোখ গেলেও কান দুটো এখনো ঠিকই আছে।’

শিলা আর কিছু বললো না।উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে পড়লো।কোনোমতে রাগ টাকে সংবরণ করছে।তবে,আবির নামক ব্যক্তি টির পিঠে যদি দুড়ুমদুড়ুম করে কয়েকটা কিল দিতে পারতো তাহলে মনে শান্তি অনুভব করতো।রিমঝিম আলতো করে হাসলো।ভাবছে!আগের মতো সবাই রয়ে গেছে,শুধু তার সবকিছু উলোটপালোট হয়ে গিয়েছে।না আছে,আগের মতো মনে শান্তি,আর না আছে ভালোবাসার মানুষ টি।রিমঝিম আঁড়চোখে তাকালো রক্তিমের দিকে।তাকিয়েই একটা ঝটকা খেলো।রক্তিম যে তার দিকে নেশালো দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে এখন না তাকালে তো জানতেই পারতো না।হঠাৎ করে লজ্জা এসে ভীড় করলো তার মাঝে।নিজেই নিজেকে শাসিয়ে বললো,কেনো তাকালি রিমঝিম তুই!এখন যদি উল্টো পাল্টা কিছু ভেবে নেয় তাহলে!সুস্মিতা অনেকক্ষণ ধরেই রক্তিম কে খেয়াল করছিলো আর এখন রিমঝিমের চাহনি টাও তার চোখ এঁড়ায় নি।গুটিগুটি পা’য়ে এগিয়ে গেলো রিমঝিমের দিকে।কাঁধ টায় চেপে ধরে বললো,
‘আঁড়চোখে তাকানোর কি আছে রিমঝিম!তোমারই তো মানুষ টা।’

রিমঝিমের মুখটা নিমিষেই চুঁপসে গেলো।আদোও কি রক্তিম তার আছে,এইটা নিয়ে সে যথেষ্ট বিভ্রান্ত৷পরক্ষণেই ভাবলো সম্পর্ক টা আর আগের মতো নেই।সম্পর্ক টা স্বামী-স্ত্রীর হলেও মরীচিকার ফলে তা জং ধরে গিয়েছে।রিমঝিমের বুকটা কেঁপে উঠলো।চোখ দুটো ফেঁটে যাচ্ছে।পানি উঁপচে পড়ার পূর্বমুহূর্ত।কেনো এমন ভাবে কান্নার বেগ আসছে তা তার কাছেও অজানা।এক দৌড়েই ছাঁদ থেকে বেরিয়ে গেলো।কয়েক সিঁড় নামার পর রিমঝিম আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।ডুকরে কেঁদে উঠলো।রিমঝিম চলে যেতেই সবাই কিছুটা অবাক হলো।হঠাৎ করে কি হলো তাই ভাবছে।সুস্মিতার খুব গিল্টি ফিল হচ্ছে।মনে মনে ভাবছে,তার জন্যই রিমঝিম চলে গিয়েছে।কেনো!পুরোনো কাসুন্দি টানতে গিয়েছিলো।রিমঝিমকে সরি বলতে হবে!তবে,সরি বললেই তো আর পুরোনো ক্ষত শুকিয়ে যাবে না।নিজেকে খুব অপরাধী ভাবছে।রক্তিম দ্রুত গতিতে সুস্মিতার দিকে এগিয়ে এলো।ভ্রুঁজোড়া কুঁচকে বললো,
‘কি হয়েছে রিমঝিমের!এইভাবে দৌড়ে চলে গেলো কেনো।’

সুস্মিতা গাল দুটো ফুলিয়ে বললো,
‘কিছু হয় নি।এমনেই দৌড়ে চলে গিয়েছে।’

রক্তিমের খুব রাগ হলো।রাগে চুল গুলো খাঁমচে ধরে বললো,’মিথ্যা কথা কেনো বলছিস সুস্মিতা।আমি জানি তুই আমাকে সত্যি টা বলবি না।তাই তোর সামনে দাঁড়িয়ে রিমঝিমের কি হয়েছে তা বলতে বলতে মুখে থুঁতু জমিয়ে ফেললেও তুই যে একটা শব্দও সত্যি বলবি না তা আমি আগে থেকেই উপলব্ধি করতে পেরেছি।তোকে আমার চিনা আছে ফাজিলের নানী কোথাকার।’

রক্তিম আর দাঁড়ালো না।ছুটে গেলো সিঁড়ির ঘরের দিকে।এখানে আর একদন্ডও থাকবে না।রিমঝিমের রুমের দিকে একবার উঁকি মেরে দেখে নিবে পরিস্থিতি কেমন।তারপর নিজের রুমে গিয়ে একটা ঘুম দিবে।

বিছানার উপর ধপাস করে বসে পড়লো রক্তিম।রিমঝিমের রুমের সামনে যখনি যাবে তখনি কোথা থেকে রেহানা বেগম চলে এসেছিলেন বলে আর যাওয়া হয় নি।মেজাজ টা তার সপ্তম আকাশ ছুঁইছুঁই করছে।রিমঝিম কি করছে তা একটুও জানতে পারলো না।দাদির জন্য উল্টো ঘুরে আসতে হয়েছে।আর কিছু না ভেবে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো।পা দুটো নাড়াচ্ছে আর সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে।মনে মনে আওড়াচ্ছে,আরেকবার যাবো কি?গেলে যদি আবার ফিরে আসতে হয় কিন্তু,না দেখেও তো শান্তি পাচ্ছি না।মিনিট পাঁচেক সময় নিয়ে রক্তিম শোয়া থেকে উঠে বসলো।কোনোকিছু না ভেবে ছুটলো আবার রিমঝিমের রুমের দিকে।কিন্তু,রিমঝিমের রুমের দরজা বন্ধ দেখে রক্তিম রাগে সেখান থেকে চলে আসতে বাধ্য হয়েছে।নিজের রুমের দরজাটা ঝড়ের বেগে বন্ধ করে দিয়ে উঁপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো।পিঠ ঘেমে একাকার অবস্থা।সেই সাথে চুলকাচ্ছেও প্রচুর।ফ্যানের বাতাস টাও যেনো লাগছে না।এতে রাগ যেনো দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়ে গিয়েছে।শেষমেষ!বিছানা ছেড়ে উঠে,তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

সারা বিকেল রিমঝিম নিজেকে ঘরবন্দী করেই লাগলো।মাগরিবের আজানের ধ্বনি কানে আসতেই মনোযোগ দিয়ে আজান টা শুনে ওজু করে নামাজ টা পড়ে নিলো।বাহিরে বের হতেই দেখতে পেলো তনায়াকে।আস্তে আস্তে হাঁটছে,সাথে বাবুও আছে।রিমঝিম বেশ খানিকটা সময় নিয়ে তনায়া আর বাবুকে দেখলো।তনায়া মাঝেমধ্যেই পেটে হাত ধরে হাঁটছে।ঠোঁটে মুচকি হাসি।কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে রিমঝিম চলে আসলো।বাগানে একটু হাঁটাহাঁটি করবে।মন ভালো করার এই এক সুযোগ।
দুপুরে কান্নার দমকা টা ভালোই ছিলো।একের পর এক অতীতের স্মৃতি যেনো ভেসে উঠেছিলো।বাসার বাহিরে এসে দেখলো বাগানে সবাই মিলে বসে আড্ডা দিচ্ছে।তাই বাধ্য হয়ে রিমঝিমের উল্টো ঘুরতে হলো।ভাবতে ভাবতে ছাঁদের দিকেই পা বাড়ালো।দোলনায় কিছুটা সময় নিয়ে বসে থাকবে।একাকীত্ব সময় পার করবে।কিন্তু ছাঁদে এসে যখন দেখলো রক্তিম কার্ণিশের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে তখনি সে উল্টো ঘুরে পিছনে হাঁটা ধরলো।বিরক্তির মাত্রা যেনো ছাড়িয়ে গিয়েছে।এতো বড় বাসার কোথাও নিজের মতো সময় কাটানোর কোনো স্পেস পাচ্ছে না।
রক্তিম সিগারেট খাওয়ায় মগ্ন থাকলেও রিমঝিমের উপস্থিতি ঠিকই টের পেয়েছে।পিছন ফিরে রিমঝিমকে চলে যেতে দেখে দৌড়ে গিয়ে হাতটা টেনে ধরলো।
হাতে শীতল ছোঁয়া অনুভব করতেই রিমঝিম কিছুটা কেঁপে উঠলো।রক্তিমের গা’য়ের তীব্র মাতালকরা গন্ধটা পাচ্ছে সেই সাথে সিগারেটেরও গন্ধ ভেসে আসছে।রিমঝিমের খুব রাগ হলো।কি সুন্দর ঘ্রাণ আসছিলো রক্তিমের গা’য়ে থেকে আর এখন,সিগারেটের উদ্ভট গন্ধ পেয়ে মাথাটা যেনো ঝিমঝিম করছে।রক্তিম হাতটা ধরা অবস্থাতেই বললো,
‘আমি চলে যাচ্ছি এখান থেকে।’

রিমঝিম চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো।কতোদিন বাদে কথা বলছে তার সাথে।একটা সময় এই কন্ঠের আওয়াজ শোনার জন্য অধীর আগ্রহে বসে থাকতো।এটা যেনো রিমঝিমের একটা অভ্যাসে ছিলো।আর এখন,সময়ের সাথে সাথে এই অভ্যাস টাও মিহিয়ে গিয়েছে।রিমঝিম দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো!হাত টা রক্তিমের বাঁধন থেকে ছাড়িয়ে আনতে নিলেই রক্তিম আরো শক্ত করে আঁটকে নিলো।পুনরায় আলতো কণ্ঠে বললো,
‘আমি চলে যাচ্ছি তো এখান থেকে।’এবার,রিমঝিমের খুব বিরক্তি লাগছে।সাথেসাথেই উল্টো ঘুরে রক্তিমের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো।মুখটা যতটা সম্ভব কুঁচকে রেখে বললো,
‘তো যান!না করেছে কেউ আপনাকে?শুধু শুধু আমার হাত কেনো ধরে আছেন।ছাঁড়ুন বলছি না হলে আমিই চলে যাবো।’রিমঝিমের ঝাঁঝালো কণ্ঠ শুনে রক্তিম সাথে সাথেই হাত টা ছেড়ে দিলো।তবে,মনে মনে অনেক খুশি হয়েছে।অত্যন্ত,রিমঝিম কথা তো বলেছে।কেউ বলবে!এই মেয়েটাই তার অর্ধাঙ্গিনী।উঁহুহু!কেউই বলবে না।কারণ,আগের মতো সম্পর্ক টা আর স্বাভাবিক নেই।রিমঝিম হাতটা ছাড়া পেয়ে দৌড় দিতে গেলেই রক্তিম আনমনেই,রিমঝিমের ওড়নার কোণা টা ধরে টান দিলো।যার ফলে,গলায় প্যাঁচানো থাকা ওড়না টা অনেকটাই সরে এসেছে রিমঝিমের বুক থেকে।রিমঝিম কটমট চোখে চাহনি নিয়ে তাকালো রক্তিমের দিকে।দাঁত খিঁচিয়ে বললো,
‘অসভ্য কোথাকার।’
রক্তিম বেশ অনুভব করছে রিমঝিমের এরূপ চাহনি।রাগে ঠোঁট দুটো একজায়গায় হয়ে গিয়েছে।কঁপালেও ভাঁজ পড়েছে।রক্তিম টানতে টানতে রিমঝিমকে একদম নিজের কাছে নিয়ে আসলো।প্রাণভরে দেখছে রিমঝিমকে।যতবারই দেখে ততবারই মুগ্ধ হয়।রিমঝিম ওড়না টা ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই রক্তিম ওড়নার কোণা টা নিজের হাতে বেঁধে নিতে নিতে বললো,’দেখি এই বাঁধন থেকে এখন কীভাবে মুক্তি পাও।বাঁধন টাকে দূর্বল লাগলেও মোটেও তা দূর্বল নয়।বুঝে নাও আমার ভালো–

‘ভালোবাসার বাঁধন তাই তো!এটাই তো আপনি এখন বলতে চেয়েছিলেন।এটাই যদি আপনার বলার কথা হয়ে থাকে তাহলে শুনুন!আপনার ভালোবাসার বাঁধন আমার কাছে ঠুনকো মনে হয়।হয় না কাঠকে উঁইপোকা খেয়ে জখম করে দেয়!তখন কি ওই কাঠের কোনো মূল্য থাকে!থাকে না তো!ঠিক একই ভাবে আপনার ভালোবাসা টাকেও আমার এই কাঠের বস্তুর মতো মনে হয়।যা আপনি নামক এক বড় উঁইপোকা ইচ্ছে করে জখম করে দিয়েছেন।যা আর,চাইলেও স্বাভাবিক হওয়ার নয়।আমি শুধু একটা কথাই বলবো,আপনি আপনার জীবন নিয়ে সুখী থাকুন রক্তিম ভাই।পারলে,আমাদের ডিভোর্সের কার্যক্রম গুলো শুরু করে দিন।এতে দু’জনেরেই ভালো হবে।’

বুকের ভিতরে তীব্র ব্যথা হচ্ছে রক্তিমের।সেই সাথে মাথাটাও ব্যথায় ফেটে যাচ্ছে।শুধুমাত্র কোনোমতে নিজেকে ঠিক করে রেখেছে।রিমঝিম কথাগুলো বলে উল্টো ঘুরে হাঁটা ধরলো।ঠোঁট কাঁমড়ে শুধু কান্নাটাকে আঁটকে রাখার চেষ্টা করছে।রক্তিমের সামনে কিছুতেই নিজেকে দূর্বল প্রমাণ করতে চায় না।একা থাকার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।সঙ্গীবিহীন জীবন খারাপ না ভালোও বটে।রক্তিম এখনো রিমঝিমের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না রিমঝিম ডিভোর্স চেয়েছে।ভাবছে,রিমঝিম এখনেই উল্টো ঘুরে চিৎকার করে বলবে,আমি ডিভোর্স চাই না রক্তিম ভাই!অভিমানের থেকে বলেছি শুধু।আপনাকে ছাড়া আমি যে খুব একা।বাকি জীবন গুলোও আপনার সাথে কাটাতে চাই।ভাবনা তো ভাবনাই!তেমনেই রক্তিমের ভাবনা টা ভাবনাই থেকে গেলো।রিমঝিম একটিবারের জন্যও পিছন ফিরে তাকায় নি।বরং,নিজেকে মনে মনে প্রস্তুত করে নিচ্ছে সামনের সবকিছুর জন্য।

চলবে..
[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here