#জলপদ্ম
#কুরআতুল_আয়েন
|৩৪|
মাঝরাতের দিকে রক্তিম কাশতে কাশতে ঘুম থেকে উঠে যায়।প্রচন্ড অস্থিরতা নিয়ে চোখ দুটো খোলে তাকালো।আচমকাই সবকিছু অন্ধকার দেখায় রক্তিম প্রথমে কিছুটা ঘাবড়ে গেলো।কপাল বেয়ে সূক্ষ্ম ঘামের রেখা সৃষ্টি হয়েছে।জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে গিয়েও যেনো পারছে না।বারবার শ্বাস আঁটকে আসছে।বুকের উপর রিমঝিম পরম আবেশে ঘুমিয়ে আছে।রক্তিম একপলক দেখে পুনরায় কেশে উঠলো।কাশির আওয়াজ পেয়ে রিমঝিম হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলো।শরীরের উপর ওড়না টা ভালো করে পেঁচিয়ে নিয়ে সাইড বক্সের উপর বিদ্যমান মাঝারি সাইজের ল্যাম্প টা জ্বালিয়ে দিলো।রুম টা এখন বেশ অনেকটায় আলোকিত হয়েছে।রক্তিম কাশতে কাশতে মাথাটা চেপে ধরলো।অতিরিক্ত মাথা ব্যথায় চোখ দুটো যেনো নিভু নিভু হয়ে আসছে।রিমঝিম কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো।রক্তিমের দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই রক্তিম হাত দিয়ে ইশারা করে না বুঝিয়ে বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো।তড়িঘড়ি করেই হাঁটছে।বেসিনের সামনে যেতেই মুখ ভর্তি করে বমি করে দিলো।রক্তিম যেতেই রিমঝিম জামাটা পড়ে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে ধীর গতিতে দাঁড়িয়ে রইলো।অপেক্ষা করছে রক্তিমের জন্য।ওয়াশরুম থেকে শুধুমাত্র পানির আওয়াজ ভেসে আসছে কানে।কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে যখন রক্তিমকে আসতে দেখলো না তখন ধীর গতিতে বিছানার এককোনায় গিয়ে বসে পড়লো।রক্তিমকে নিয়ে বেশ চিন্তায় আছে।আবার যখন মনে পড়লো কাল তার রাশিয়ায় চলে যেতে হবে তখনি বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো।রিমঝিম যখন বুকে অসহনীয় তীব্র ব্যথা অনুভব করছিলো তখন রক্তিমও ওয়াশরুমের দরজা পেরিয়ে বেরিয়ে আসলো।দরজার ক্যাটক্যাট আওয়াজে রিমঝিম ছলছল চোখে সেদিকে তাকালো।রক্তিমকে ক্লান্ত দেখে রিমঝিম আঁতকে উঠে বললো,
‘ঠিক আছেন রক্তিম ভাই।’
রক্তিম মলিন হেসে তাকালো রিমঝিমের দিকে।এতোক্ষণ যে বমি করে এসেছে তা কোনোমতেই রিমঝিমকে জানাতে চায় না।রিমঝিমের শরীরটা আপাতত খারাপ।তাই রক্তিম বললো,
‘তেমন কিছু হয়নি।পেট ব্যথা করছিলো তো,তাই হাই কমোডে বসে একটু ট্রাই চালাচ্ছিলাম।’
রিমঝিম ভ্রুজোড়া কুঁচকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন সময় নিয়ে।কথাটা মোটেও বিশ্বাস হলো না।রক্তিম তা বুঝে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললো,
‘এতো ভাবার মতো কিছু হইনি আমার।চল ঘুমাবি।তোর এখন সম্পূর্ণ ঘুম দরকার।’
রক্তিমের কথায় রিমঝিমের খুব অভিমান হলো।মনেমনে ভাবতে লাগলো,রক্তিম ভাই কীভাবে এতো সহজ হয়ে আছেন।উনি কি জানেন না কাল আমাকে চলে যেতে হবে।নাকি,ভুলে গেছেন!নাকি জেনেও না জানার ভান করে আছেন।যদি তাই হয় তাহলে কেন এত নরমাল মুডে আছেন!রিমঝিম কিছু না বলে শুয়ে পড়লো।রক্তিম এলোমেলো পা’য়ে বিছানার দিকে এগিয়ে গিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে রইলো।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো রিমঝিম উল্টো হয়ে আছে।জামার গলাটা বেশ খানিকটা নিচে নামায় কাঁধের পাশের তিলটা চোখে পড়লো।এক কথায় রক্তিমের দূর্বলতা বলা যায়।রক্তিম হাত বাড়িয়ে রিমঝিমকে জড়িয়ে ধরে তিলটায় পরপর ঠোঁট ছুঁয়ালো।
হঠাৎ এমন হওয়ায় রিমঝিম কিছুটা ভড়কে গেলো।ব্যাপার টা মাথায় বোধগম্য হতেই জামা টা টেনে তোলতে গেলেই রক্তিম হাত দিয়ে আঁটকিয়ে দিলো।বরং,জামার চেইন টা খোলে কোমড় অবধি নামিয়ে ফেললো।রিমঝিম শরীর টা কুঁচকিয়ে শুধু উল্টো ঘুরে শুয়ে আছে।রক্তিমের স্পর্শ গুলো অনুভব করছে।যদি আর না অনুভব করতে পারে সে ভয়ে।রক্তিমের স্পর্শ গুলো গভীর হতেই রিমঝিম নিঃশব্দে কেঁদে দিলো।যা রক্তিম জানলোও না।মনে হচ্ছে,সময়টা এখানেই থেমে যাক।কাল কি হতে যাচ্ছে তা রিমঝিমের বোধগম্য হচ্ছে না।তবে বারংবার মনে শুধু খারাপ ভাবনা চলে আসছে।এসব মন থেকে যতই সরানোর চেষ্টা করছে ততই যেনো তারা আরো জায়গা করে নিচ্ছে।
—
আবির অনেক বেছে বেছে সুন্দর একটা এলবাম কিনে নিলো।এলবামের উপরে সুন্দর করে ফুলের বাগানের ছবি দেওয়া।বাগানের মধ্যিখানটায় একটা দোলনা রয়েছে।দোলনায় বসা মেয়েটি ছেলেটির কাঁধে পরম যত্নে মাথা ঠেকিয়ে রেখেছে।মাঝারি সাইজের এলবাম টা হাতে নিয়ে কয়েকবার উলোটপালোট করে দেখে নিলো আবির।বেশ পছন্দ হয়েছে।দামাদামি করতে একদমই চায় না।যা চাইবে তাই দিয়ে দিবে।কথা মতো দোকানদার যা চেয়েছে তাই দিয়ে দিয়েছে।এলবামটা হাতে নিয়ে বের হয়ে পুনরায় উল্টো ঘুরে দোকানের ভিতর ঢুকে পড়লো।তাড়া দিয়ে বললো,
‘মামা!একটা শপিং ব্যাগ হবে।’
‘শপিং ব্যাগ তো হবে।তবে অনেক বড়।এইটা রাখলে একপাশে ঝুলে থাকবে।তার থেকে ভালো হবে হাতে নেওয়া।আর এলবাম টা তো বেশি বড় না।’
‘তা যাই বলো মামা,আমার একটা শপিং ব্যাগ লাগবেই।সেটা যদি বস্তার মতোও বড় হয় তাহলেও লাগবে।’
‘সামান্য একটা এলবাম নিতে এতো বস্তার মতো বড় শপিং ব্যাগও নিবে।কথাটা খুব অদ্ভুত লাগলো।’
আবির ঠোঁট চেপে মুচকি হাসলো।এমতাবস্থায় বললো,
‘তোমার কাছে সামান্য হলেও আমার কাছে অনেক কিছু।এই এলবামটার কোনো অযত্ন হতে আমি দিবো না।এখানে বন্দী হয়ে থাকবে আমার ভালোবাসার মানুষটির আদুরে মুখখানা।গোলগোল চশমার আঁড়াল ভেদ করে ড্যাবড্যাব করে তার চাহনি টা যে আমার খুব মন কেঁড়েছে।মনে হয়,গালটা একটু টিপে দেই।তাই তো,শপিং ব্যাগে করে নিয়ে যাচ্ছি যাতে রাস্তার ধুলোবালি না পড়ে।’
দোকানদার কিছুক্ষণ অবাক হয়ে চেয়ে রইলো আবিরের দিকে।কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না।আবির কিটকিটে হেসে উঠলো।দোকানদারের চোখের সামনে চুটকি বাজিয়ে বললো,
‘তোমার হারানোর বয়স নেই মামা।আমার হারাতে হবে।তুমি তো বিয়ে সাদী করে একদম পাকাপোক্ত হয়ে গিয়েছো।যদি হারাতে হয় তাহলে নিজের বউয়ের মধ্যে হারাও।দেখবে সুখ পাবে।’
‘তোমার প্রেমিকা অনেক লাকি।কতোটা ভালোবাসো তাকে,,আমার মনে হয় তোমার প্রেমিকাও তোমাকে খুব ভালোবাসে।সুখী হও তোমরা।’
আবির বরাবরে মতো হেসেই যাচ্ছে।তবে,এই হাসির পিছনে লুকিয়ে আছে অনেক কষ্ট,অভিমান।কষ্ট!!হ্যাঁ,কষ্ট!না পাওয়ার কষ্ট।ভালোবাসার মানুষ টিকে না পাওয়ার কষ্ট কেউ সহ্য করতে পারে না।যেমন,আবির!হাজারো কষ্ট গুলো সহ্য করে নিয়ে হাসিখুশি মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে।সবসময়ের মতো নিজের কষ্ট টাকে ধামাচাপা দিয়ে আবির মুখে হাসি টেনেই বললো,
‘ওইরকম কিছুই না মামা।ভালোবাসাটা একতরফা।আমি তাকে ভালোবাসলেও সে আমাকে একটুও ভালোবাসে না।বরং,তার দুচোখের পয়জন আমি।’
আবির কথাটা বলে আর এক মুহূর্তও দাঁড়ায় নি।তড়িঘড়ি করে দোকান থেকে বেরিয়ে পড়লো।তবে ফটো এলবামটা যত্ন করে আগলে রেখেছে।চোখের কার্ণিশে পানি জমে আছে।আবির অবলীলায় চোখের কার্ণিশ থেকে পানিটা মুছে নিয়ে বিরবির করে বলতে লাগলো,
‘হাসি উজ্জ্বল এই আবির ছেলেটাকে কাঁদাচ্ছো তুমি শিলা।তবে,এতেই আমি অনেক খুশি।কেউ তো আমাকে এতো সহজে কাঁদাতে পারতো না তবে তুমি পেরেছো।তোমার দেওয়া এই স্মৃতি টা নিয়ে আমি অনেক টা সময় কাটাতে পারবো।’
—
রিমঝিমকে রেডি হতে বলে গেলেন সেলিনা আহমেদ।রাতে তাদের ফ্লাইট।এখান থেকে বিকেলের দিকেই বেরিয়ে যাবেন।এখন যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে বের হতে পারলেই বাঁচেন।আবার,এখন রক্তিমও নেই।এই সুযোগ টা কিছুতেই হাতছাড়া করতে দেন নি সেলিনা আহমেদ আর সাদিক আহমেদ।তাই তো,রিমঝিমকে তাড়া দিচ্ছে রেডি হওয়ার জন্য।রিমঝিম বিছানায় হেলান দিয়ে সামনের সাদা দেয়ালটার দিকে তাকিয়ে রইলো।দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকলেও মন পড়ে আছে অন্য জায়গায়।কীভাবে যাওয়াটা আঁটকাবে তাই ভাবছে।সেই সাথে রক্তিমেরও অপেক্ষা করছে।রক্তিম হাসপাতালে গিয়েছে।ডক্টর ইব্রাহীম সকাল সকাল ফোন দিয়ে রক্তিমকে হাসপাতালে যেতে বলেছেন।রিপোর্ট গুলোর ফলাফল চলে এসেছে।সেই চিন্তায় কতক্ষণ বসে ছিলো রিমঝিম।রক্তিমের কি হয়েছে তা জানা অব্দি নিজের অশান্ত মনকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছিলো না।আবার,এখন থেকেই তাকে রেডি হতে বলায় আরো যেনো দ্বিগুণ বেগে চিন্তা করতে লাগলো।অতিরিক্ত চিন্তার ফলে রিমঝিম মাথাটা এলিয়ে দিলো বালিশের মধ্যে।বাহির থেকে তুমুল বেগে বাতাস আসছে।যার ফলে,জানালায় বিদ্যমান রঙিন পর্দা গুলো হেলছে আর দুলছে।পাশে থাকা ফোনটা হাতে তোলে নিলো।রক্তিমকে ফোন দিলো।রক্তিম ফোন না ধরে কেটে দিয়েছে।রিমঝিম পুনরায় ফোন দিতেই আবারও কেটে দিলো।তাই,ইউটিউবে গিয়ে একটা গান ছেড়ে দিলো।গান শুনতে শুনতে চোখ দুটো লেগে আসতেই সেলিনা আহমেদ রুমে ঢুকে শক্ত গলায় বললেন,
‘এখনো রেডি হচ্ছিস না কেনো তুই।’
রিমঝিম রাগে চোখ দুটো কুঁচকে নিলো।এমতাবস্থায় বললো,
‘প্লিজ মা!জোরজবরদস্তি করবে না একদম ভালো লাগছে না।’
‘ভালো লাগুক বা না লাগুক তোকে যেতেই হবে।’
রিমঝিম কিছু বললো না।চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো।মাথাটা ধরেছে তার।সেলিনা আহমেদ এক কথা,দুই কথা বলে চলে গেলেন।একটু পর এসে আবার খোঁজ করে যাবেন।
—
গোধূলির শেষ আলোয় চারপাশ টা লাল আভা হয়ে আছে।সূর্য টা আস্তে আস্তে করে ডুবে যাচ্ছে।জানালার ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রিমঝিম তাই দেখছিলো।কি সুন্দর দেখতে লাগছে আকাশটাকে।তবে,মনটা বিষন্ন হয়ে আছে।তার একটাই কারণ,রক্তিম সেই যে সকালে বের হয়েছিলো এখনো আসে নি।এমনকি ফোনটাও ধরছে না।ঘড়ির মৃদু আওয়াজ টা বেশ ভারী শুনাচ্ছে।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নিলো সময় টা।বিষন্ন মনটা যেনো আরো বিষিয়ে উঠলো।রিমঝিম অপেক্ষা করতে করতে এবার কেঁদেই দিলো।মনে মনে আওড়াতে লাগলো,
‘কোথায় আপনি রক্তিম ভাই।আমার তো যাওয়ার সময় হয়ে আসছে।যাওয়ার আগে কি একবারও আপনাকে দেখতে পাবো না।আমি কি হেরে গেলাম তার মানে!’
রিমঝিম রেডি হয়ে গিয়েছে।বুকের ভিতর ঢিপঢিপ আওয়াজ করছে।চিল্লিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে ‘রক্তিম ভাই আপনি কোথায়!’কিছুক্ষণ পর লিভিং রুম থেকে রক্তিমের গলার আওয়াজ পেতেই রিমঝিম হুড়মুড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো।দৌড়ে গিয়ে সবার সামনে দিয়েই রক্তিম জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।লিভিং রুমে সবাই ছিলো।অপেক্ষা করছিলো রক্তিমের রিপোর্টের জন্য।সিদ্দিক আহমেদ চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে রইলেন রিমঝিমের দিকে।রক্তিম স্টিলভাবে দাঁড়িয়ে আছে।হাত গুলোও মুঠো করে রেখেছে।রিমঝিম কেঁদেই যাচ্ছে।বুকে মাথা গুঁজে ক্রন্দনরত গলায় বললো,
‘আপনি এতোক্ষণ কোথায় ছিলেন রক্তিম ভাই।আমি অপেক্ষা করেছি আপনার জন্য।আমি আপনাকে ছাড়া কোথাও যাবো না।’
সাদিক আহমেদ রেগে তেড়ে এসে রিমঝিমের গালে একটা চড় বসিয়ে দিলেন।চোয়াল শক্ত করে বললেন,
‘দিনদিন কি লজ্জা লোপ পেয়েছে তোমার।এতোগুলো মানুষের সামনে তুমি কীভাবে ওকে জড়িয়ে ধরতে পারো।তোমার দাদিও রয়েছে এখানে।’
রিমঝিম বাবার কথা যেনো কানেই নিচ্ছে না।ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে রক্তিমের মুখের দিকে।রক্তিম অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে।চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।চুল গুলো উসকোখুসকো হয়ে আছে।রিমঝিম অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে রক্তিমকে।রক্তিমের কোনো রেসপন্স না পেয়ে রিমঝিম পুনরায় বললো,
‘কি হয়েছে আপনার রক্তিম ভাই।এভাবে চুপ করে আছেন কেনো?আমার কথার জবাব দিন।’
সাদিক আহমেদ রেগে গিয়ে সেলিনা আহমেদ কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
‘দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি তামাশা দেখছো নাকি।নিয়ে এসো ওকে।আমাদের বের হতে হবে।’
সেলিনা আহমেদ রিমঝিমের দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই রিমঝিম চিৎকার দিয়ে উঠলো।চুল গুলো খাঁমচে ধরে বললো,
‘আমি কি তোমাদের পুতুল নাকি।তোমরা যেভাবে নাচাচ্ছো আমি সেভাবেই নাচবো।আমার কি মন নেই?আমার কি কষ্ট হয় না।এতোই যদি আমাকে নিয়ে তোমাদের চিন্তা থাকতো তাহলে আমার সুখটা তোমরা আগে দেখতে।কিন্তু,তোমরা তো তা করো নি।তোমরা চাইছো তোমাদের সম্মান যেনো না হানি হয়।আর,এদিক দিয়ে আমি তোমাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চলতে হাঁপিয়ে উঠেছি।একটু শান্তি চাই আমি।’
সেলিনা আহমেদ থেমে গেলেন।তবে,রক্তিমের কোনো পরিবর্তন হলো না।আগের ন্যায় মুখটাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে রেখেছে।তা দেখে রিমঝিম রেগে রক্তিমের কলার টা ধরে বললো,
‘কি হলো!আমার দিকে তাকাচ্ছেন না কেনো।আমি যে এতোগুলো ফোন দিয়েছি ধরার কি একটুও প্রয়োজন মনে করেন নি।আর,এখন আমার দিকে তাকাচ্ছেন এই না।হঠাৎ করে কি হলো আপনার।’
রক্তিম শক্তপোক্ত মুখ করে রিমঝিমের দিকে তাকালেও শান্ত গলায় বললো,
‘ছোটমা,ছোটবাবার সাথে চলে যা রাশিয়ায়।আমি তোর সাথে থাকতে চাই না।’
রিমঝিম পিলে চমকে উঠলো।কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে হেসে উঠলো।হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ দুটো মুছে নিয়ে বললো,
‘মজা করছেন আমার সাথে তাই না রক্তিম ভাই।আমি জানি আপনি মজাই করছেন,না হলে কি আর এই সময়ে আমাকে এইরকম একটা কথা বলতেন।’
জাহানারা আহমেদ এতোক্ষণ নিরব দর্শকের মতো চেয়ে চেয়ে সব দেখছিলেন।রিমঝিমের কথা শুনে তার দিকে এগিয়ে গেলো।হাত টা ধরে বললো,
‘কি হয়েছে তোর রিমঝিম।এমন করছিস কেনো?’
রিমঝিম রক্তিমের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘কি হয়েছে তা তোমার ছেলের কাছ থেকেই জেনে নাও বড়মা।কেনো আমার সাথে এমন করছেন।কাল অব্দি তো সবকিছু ঠিক ছিলো।তাহলে আজ কেনো আমার দিকে তাকাচ্ছেন না।’
রক্তিম রাগে হাত ঝাড়ি দিয়ে রিমঝিমকে সরিয়ে দিলো।দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
‘কথা শুনতে পাস না আমি তোকে কি বলেছি।বলেছি তো চলে যেতে।আর,আমি তোর সাথে মজাও করছি না।আমাকে দেখে কি তাই মনে হচ্ছে।’
‘বিশ্বাস করি না আমি রক্তিম ভাই।আপনি মিথ্যে কথা বলছেন।’
‘মিথ্যে কেনো বলবো তোকে।আমি যা চাইছি তাই বলছি।’
‘আপনি আমাকে চান না?’
‘না চাই না আমি।’
‘চলে যেতে বলছেন।’
‘হুম’
‘আস্তে বলছেন কেনো?জোরে বলুন।’
‘হ্যাঁ!আমি চলে যেতে বলছি।’
রিমঝিম বাচ্চাদের মতো মুখে হাত গুঁজে কেঁদে উঠলো।রক্তিমের কাছে গিয়ে বললো,
‘কেনো এমন করছেন আপনি আমার সাথে।কাল অব্দি তো সবকিছু ঠিক ছিলো।তাহলে আজ কেনো এমন করছেন।’
‘উফফ!রিমঝিম এক কথা আমার ভালো লাগে না।’
‘আমাদের সন্তানের কি হবে।সে কি তার বাবার আদর পাবে না।’
রিমঝিমের কথা শুনে সবাই অবাক হলো।তবে,সাদিক আহমেদ আর সেলিনা আহমেদের রাগে শরীর শিরশির করে উঠলো।দু’জনে এটার এই ভয় পাচ্ছিলেন।সিদ্দিক আহমেদ এখনো চমকপ্রদ হয়ে আছেন।কিছুক্ষণ এভাবে থেকে পরমুহূর্তেই ভাবলেন,যা হওয়ার তাই হোক।রক্তিমের সাথে তারিনের বিয়ে দিতেই হবে।কতজনেই তো দুটো বিয়ে করছে।রিমঝিম এখনো তাকিয়ে আছে রক্তিমের দিকে।রক্তিম চুপচাপ মাথা নিচু করে আছে।এটার উত্তর তার কাছে নেই।রিমঝিম কিছু বলতে নিলেই রক্তিম শব্দ করে কেঁদে উঠলো।এমতাবস্থায় বলতে লাগলো,
‘একজন ব্রেইন ক্যান্সারের সাথে থেকে তোর জীবনটা নষ্ট করতে হবে না রিমঝিম।আমার সাথে থাকা মানে তোর সুন্দর জীবন টা নষ্ট হয়ে যাওয়া।আমি তা কিছুতেই হতে দিতে পারবো না।তোর জীবনটা সামনে আরো বাকি আছে।তুই আরো ভালো কাউকে পাবি।আমি তোর জন্য না রিমঝিম।শুনতে পাচ্ছিস আমি তোর জন্য না।তাই বলছি চলে যা এখান থেকে রাশিয়ায়।নিজের জীবন টা সুন্দর করে গুছিয়ে নে।’
রিমঝিম সহ বাকি সবাই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।রক্তিম এলোমেলো পা’য়ে সিঁড়ি বেয়ে চলে গেলো।রিমঝিম এখনো আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে।বুকের ভিতর টা কেমন শূন্য শূন্য লাগছে।কাঁদতে গিয়েও যেনো পারছে না।হাত-পা গুলো অসাড় হয়ে আসছে।আর কিছু ভাবতে পারলো না তার আগেই রিমঝিম গলা ফাটিয়ে কেঁদে উঠলো।ফ্লোরে বসে পাপোশ টা খাঁমচে ধরে বললো,
‘আমি হার মানবো না রক্তিম ভাই।আমার আপনাকে লাগবে আর অন্য কাউকে না।আমি আপনার সাথে আছি।আমার,আর আমাদের সন্তানের জন্য হলেও আপনাকে সুস্থ হতে হবে।’
চলবে..
[জলপদ্ম শেষ করার আগেই যে আমি এমন অগোছালো হয়ে যাবো তা ভাবতেই পারি নি।🙂]