জলপদ্ম পর্ব -৩৫

#জলপদ্ম
#কুরআতুল_আয়েন

|৩৫|
চারপাশ নিস্তব্ধ হয়ে আছে।ফ্যানের গুমগুম আওয়াজটা শুধু বিদ্যমান।মনে হচ্ছে,গভীর রাত।অথচ,সবেমাত্র সাতটা বাজে।লিভিং রুমে সবাই যেনো পাথর হয়ে আছে।মুখের বাকশক্তিই হারিয়ে ফেলেছে।জাহানারা আহমেদ হুট করেই ডুকরে কেঁদে উঠলেন।এই বয়সে এসে এমন একটা খবর যে আদোও শুনতে হবে তা কখনো ভাবতে পারেন নি।ভিতরটায় অদ্ভুত এক অনুভূতি কাজ করছে।তবে,বাহিরে তা বুঝাতে পারছেন না।কাঁদতে গিয়েও বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে।জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন।মনে হচ্ছে দমটা বেরিয়ে আসবে আসবে ভাব।অতিরিক্ত শোকে যা হয় আর কি।রিমঝিম বিধস্ত অবস্থায় ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে।রক্তিমের কথাগুলো বারবার কানে বাজছে।কথাগুলো ভেবেই চোখ দিয়ে অজোরে পানি পড়তে লাগলো।রিমঝিম কল্পনার জগতে ডুব দিলো।যেই কল্পনাতে রয়েছে রক্তিম আর তার স্মৃতিজোড়া।যা এক এক করে চোখের সামনে ভেসে উঠছে।রক্তিমের দুষ্টু মিষ্টি কাহিনী গুলো মনে পড়তেই রিমঝিম একগাল বেঁকিয়ে হেসে উঠলো।তবে,চোখ দিয়ে পানি গড়িয়েই পড়ছে।প্রতিটি মানুষ এখনো রোবট হয়ে থাকলেও সিদ্দিক আহমেদ আছেন খুব চিন্তায়।রক্তিমের অসুস্থতা উনার কাছে বড় কিছু না আসল কথা হচ্ছে তারিনের সাথে রক্তিমের বিয়েটা দিয়ে দেওয়া।না হলে,অনেক কিছু থেকে বাদ পড়ে যাবেন।আগে টাকা তারপর অন্য কিছু।সিদ্দিক আহমেদ দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলেন।জাহানারা আহমেদ একপলক তাকিয়েও কিছু বললেন না।শরীরের শিরায় শিরায় রাগ বিরাজ করছে।দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে বলতে লাগলেন,
‘ছেলেটার এতো বড় অসুখ হওয়ার পরও মুখের মধ্যে কোনো ভাবান্তরই এলো না।শুধু টাকা আর টাকা।একদিন এই টাকার জন্যই সবকিছু হারাতে হবে আমি অভিশাপ দিয়ে দিলাম।’

রিমঝিম আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো।চোখ দুটো আঁটকে আছে রক্তিমের রুমের বন্ধ দরজার দিকে।লেপ্টে যাওয়া কাজল টা চোখ থেকে অবলীলায় মুছে নিলো।গুটিগুটি পা’য়ে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই সাদিক আহমেদ সামনে এগিয়ে এসে দাঁড়ালেন।রিমঝিম বাবাকে দেখে হাতজোড়া ধরে বললো,
‘আমাকে যেতে বলো না রাশিয়ায়।রক্তিম ভাইয়ের পাশে আমাকে এখন খুব প্রয়োজন।আমাকে এখন অনেক কিছুর সাথে লড়াই করতে হবে।’

সাদিক আহমেদ রিমঝিমকে বুকে জড়িয়ে নিলেন।মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছেন।রক্তিমের এমন কিছু একটা হোক সেটা কখনই উনি চান নি।রক্তিমও যে উনার ছেলে।তবে,রিমঝিমকে আজকে অনেক বড় মনে হচ্ছে।উপলব্ধি করতে পারছেন,এই কয়েকদিনে রিমঝিমকে তিনি অনেকটাই কষ্ট দিয়ে ফেলেছেন।নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে।রিমঝিম বাবার বুকে জায়গা পেয়ে কেঁদে দিলো।ভিতরের কান্নাগুলো এখন দমকা হাওয়ার মতো বেরিয়ে আসছে।

দরজার পাশে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে রিমঝিম।ঘন্টাখানেক হলো রক্তিমের রুমের বাহিরে এভাবে বসে আছে।কিন্তু,রক্তিম একমুহূর্তের জন্য হলেও দরজাটা খোলছে না।ধাক্কা দিয়েও লাভের লাভ কিছুই হলো না।বরং,রক্তিম গলার স্বর উঁচু করে বলে উঠলো,এখান থেকে চলে যেতে।দরজা সে খুলবে না।রিমঝিমও কম কিসে,জেদ ধরে দরজার বাহিরে বসে আছে।রিমঝিমও দেখতে চায় রক্তিম তাকে কীভাবে এতো অবহেলা করতে পারে।এভাবে বসে থাকতে থাকতে একটা সময় রিমঝিমের চোখ দুটো লেগে আসলো।কয়েকদিন ধরে ঠিকঠাক ঘুম না হওয়াতেই এখানে বসে ঘুমিয়ে পড়লো।দূর থেকে তা ঠিকই চোখে পড়লো জাহানারা আহমেদের।আঁচল দিয়ে চোখের কার্ণিশ টা মুছে নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলেন।প্লেটে খাবার তোলছেন রিমঝিমের জন্য।কারোরই গলা দিয়ে খাবার নামে নি।তবে,রিমঝিমকে জোর করে হলেও খেতে হবে।এই সময়টায় খাওয়া দাওয়ার অবহেলা একদমই করা যাবে না।জাহানারা আহমেদ মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি টানলেন।নিজেই নিজের সাথে বলতে লাগলেন,
‘আজকে আমার খুশি হওয়ার কথা অথচ,আমার ভিতরটা জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে।প্রকাশ করার সঙ্গী টুকুও পাচ্ছি না।’

হাতে প্লেট নিয়ে রিমঝিমের সামনে এসে শব্দহীন ভাবে বসে পড়লেন।অপলক চেয়ে দেখে নিলেন রিমঝিমকে।নিজের হাতে এই মেয়েটাকে আদর-যত্ন করে বড় করেছিলেন।আর,আজকে এই মেয়েটা মা হতে যাচ্ছে।তাও আবার নিজের সন্তানের বংশধর।জাহানারা আহমেদ রিমঝিমকে আলতো গলায় ডেকে তোললেন।রিমঝিম চোখ মেলে তাকাতেই খাবার টা মুখের সামনে ধরলেন।খাবার দেখে রিমঝিম ক্রন্দনরত গলায় বলে উঠলো,
‘আমি খাবো না বড় মা।রক্তিম ভাই এখনো দরজা খুলছেন না কেনো?’

‘তোকে খেতে হবে রিমঝিম।এই সময়ে এইসব করলে তোদের কারোর জন্য ভালো হবে না।আস্তে আস্তে শরীর দূর্বল হয়ে পড়বে।’

‘রক্তিম ভাই তো খায় নি বড়মা।সেই কখন থেকে রুমের ভিতর বসে আছেন।’

‘রক্তিমকে এখন ডেকেও কিছু হবে না রিমঝিম।ভিতরে ভিতরে অনেক গুমোট মেরে রয়েছে।’

‘রক্তিম ভাই আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন কেন বড়মা?উনি কি বুঝতে পারছেন না আমি কতটা কষ্ট পাচ্ছি।আগে তো আমার কষ্ট একটুও সহ্য করতে পারতেন না তাহলে এখন কেনো এমন করছেন?’

জাহানারা আহমেদ নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছেন।একমুহূর্তেই সবকিছু কেমন ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো।সুন্দর,হাসি উজ্জ্বল পরিবার টা কান্নায় মেতে উঠলো।একদিকে রিমঝিম আর অন্যদিকে রক্তিম।অবশ্য,নিজে মা হয়ে উনিও তো ঠিক নেই।কোনো মা’ই তো পারেন না সন্তানের এমন কঠিন রোগকে মেনে নিতে।তাহলে,উনি কীভাবে পারবেন!তবুও,নিজেকে শক্ত হতে হবে ভেবে এখনো সেইভাবে ভেঙে পড়েন নি।আর পড়লেও তা বাহিরে প্রকাশ করেন না।

তীব্র মাথা ব্যথায় রক্তিম ঘুম থেকে উঠে বসলো।মাথা ব্যথার যন্ত্রণায় রক্তিম রাগে চুল গুলো খাঁমচে ধরে আছে।রাগে,বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।রাতের কথা মনে পড়তেই মনটা বিষিয়ে উঠলো।এই সময়টায় রিমঝিমের সাথে কি খারাপ ব্যবহার টাই না করলো।কিন্তু,এ ছাড়া তো কোনো উপায়ও নেই।রক্তিম চায় না রিমঝিম আর তার সন্তান তার সাথে জড়িয়ে পড়ুক।এই জীবনটা আর আছেই বা কয়দিন।ডাক্তারের ভাষ্যমতে,রক্তিমের ব্রেইন ক্যান্সারে আক্রান্ত সেল গুলো অনেক আগে থেকেই ছড়িয়ে পড়েছে।আস্তে আস্তে এটা এখন গাঢ় হয়েছে।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ট্রিটমেন্ট শুরু করে দিতে হবে।ভালো হবে কিনা তার কোনো নিশ্চিয়তা নেই।তবে আজকে হাসপাতালে যাওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু,রক্তিম মনে মনে পণ করেছে হাসপাতালে যাবেও না আর চিকিৎসাও করাবে না।যে কয়টা দিন বাকি আছে মা’র সাথে কাটিয়ে দিবে।মা’র কথা মনে আসতেই রক্তিম রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো।দরজা খোলে বেশখানিকটা চমকে উঠলো।রিমঝিমকে এখানে মোটেও আশা করে নি।দেখেই মনে হচ্ছে সারারাত এখানেই কাটিয়েছে।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।চোখের কাজল টা লেপ্টে আশপাশ টা কালো হয়ে আছে।মুখশ্রী টা কেমন প্রাণহীন লাগছে।রিমঝিমকে এইরকম বিধস্ত অবস্থায় দেখে রক্তিমের চোখজোড়ায় পানি চলে আসলো।তবে,তা গড়িয়ে পড়ার আগেই একপ্রকার অবলীলায় মুছে নিলো।এখন আর আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লে চলবে না।দুনিয়ার মায়া কাটিয়ে উঠতে শিখতে হবে।তাই,রক্তিম রিমঝিমকে এইভাবে ফেলেই নিচে নেমে আসলো।রিমঝিম টলমল চোখে তাকিয়ে রইলো রক্তিমের যাওয়ার দিকে।শেষ রাতের দিকে একটু ঘুম এসেছিলো চোখে।রক্তিম দরজা খোলার সাথে সাথেই ঘুমটা ভেঙে গিয়েছে।চোখ বুজে ছিলো শুধুমাত্র রক্তিমের অনুভূতি বোঝার জন্য।ভেবেছিলো,তাকে আগলে নিবে।কিন্তু,হিতে যে বিপরীত হবে তা একদন্ডও মাথায় আসে নি।তবে,রিমঝিমও থামবে না।রক্তিমের সাথে লেগেই থাকবে।
নিজের মনকে শক্ত করে রিমঝিম উঠে দাঁড়ালো।রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে সুন্দর একটা জামা পড়ে আসলো।নিচে নেমে গিয়ে দেখলো রক্তিম চুপচাপ সোফায় বসে আছে।রিমঝিমের মনে হচ্ছে তার সামনে একটা প্রাণহীন বস্তু আছে।তবুও সেসব তোয়াক্কা করে রিমঝিম রক্তিমের সামনে দাঁড়ালো।রক্তিম আচমকাই রিমঝিমকে দেখে কিছুটা ভড়কে গেলো।উঠে আসতে নিলেই রিমঝিম হাতটা আঁকড়ে ধরে বললো,
‘রেডি হয়ে আসুন।’

রক্তিম কিছুটা অবাক হলো রিমঝিমের রণচণ্ডী রূপ দেখে।একটু আগেই কিনা নেতিয়ে ছিলো আর এখন ঠিক তার উল্টো।তাই রক্তিম কিছুটা অবাক হয়েই বললো,
‘মানে কেনো?’

রিমঝিমের সোজাসাপটা উত্তর,
‘ডক্টরের কাছে যাবো।’

রক্তিম মুহুর্তেই চোখ,মুখ শক্ত করে নিবো।এমতাবস্থায় বললো,
‘আমি কোথাও যাবো না রিমঝিম।সামনে থেকে সর বলছি।’

‘আমিও দেখে নিবো,আপনি ডক্টরের কাছে না গিয়ে থাকুন কীভাবে!’

‘কেনো এতো বিরক্ত করছিস তুই।আমার কিন্তু অসহ্য লাগছে রিমঝিম।’

‘যাই লাগুক আপনার।তাও,আমি আপনাকে নিয়ে ডক্টরের কাছে যাবোই।আর ট্রিটমেন্টও শুরু করাবো।’

‘কি হবে,এখন আর ট্রিটমেন্ট করিয়ে।অনেক আগে থেকেই এই জীবাণু টা ছিলো।এখন আস্তে আস্তে সেটা ছড়িয়েও পড়েছে।ট্রিটমেন্ট করিয়ে লাভের লাভ কিচ্ছুই হবে না।শেষে আমাকে চলে যেতেই হবে।শুধু শুধু টাকা নষ্ট হবে।’

রক্তিমের কথা শুনে রিমঝিম ভিতরে ভিতরে অনেকটা ভেঙে পড়লেও বাহিরে তা প্রকাশ করে নি।বরং,বাহিরে নিজেকে শক্ত রেখেই বললো,
‘জন্ম,মৃত্যু তো আমাদের কারোর হাতে নেই রক্তিম ভাই।সবই আল্লাহর হাতে।তাও,চেষ্টা জিনিসটা তো করতে পারি।তাই বলছি রেডি হয়ে আসুন।’

রিমঝিমকে এমন শক্ত দেখে রক্তিম আরো খানিকটা অবাক হলো।প্যাঁচপ্যাঁচানি বন্ধ হওয়ার পর রিমঝিমের ভালোই রূপ দেখতে পাচ্ছে।তবুও নাছোড়বান্দা হয়ে জবাবে বললো,
‘আমি যাবো না বলেছি তো।বারবার এক কথা নিয়ে ঘ্যাঁনঘ্যাঁন করবি না।’

‘একদম রাগাবেন না আমাকে।যা বলছি তাই করুন।’

রক্তিম কিছু বলতে নিবে তার আগেই রিমঝিম রক্তিমের খুব নিকটে গিয়ে টি-শার্টের কলার টা চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
‘এমন কিছু বলবেন না যাতে আমি নিজেকে শেষ করতে বাধ্য হই।তখন সহ্য করতে পারবেন তো।?’

রক্তিম চোয়াল শক্ত করে তাকালো রিমঝিমের দিকে।মনে হচ্ছে গিলে খাবে।কতক্ষণ এইভাবে চেয়ে থেকে রেডি হতে চলে গেলো।হাঁটছে আর বিরবির করে বলছে,কথা ছিলো যাবো না অথচ শেষমেষ কিনা যেতেই হচ্ছে।বউরা মনে হয় এমনই হয়।নিজের মত করে চলাই যায় না।

ডক্টরের চেম্বারে বসে আছে রক্তিম আর রিমঝিম।রিমঝিমের শরীর টা খুব খারাপ লাগছে।এসির নিচে বসেও ঘামছে।রক্তিম বিষয় টা খেয়াল করে বললো,
‘চল বাহিরে যাবি।এখানে বসে থাকতে হবে না।’

রিমঝিম কোনোমতে জবাবে বললো,
‘আমি ঠিক আছি রক্তিম ভাই।একটু কষ্ট হচ্ছে আর কি।ইব্রাহীম আংকেলের সাথে কথা বলেই যাবো।’

‘এতোটা জেদ ঠিক না রিমঝিম।আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তোর খুব কষ্ট হচ্ছে।’

‘তাও!আমি আংকেলের সাথে কথা বলেই যাবো।’

রক্তিম রাগ দেখিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো।সুযোগ পেলে গালে দু’একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিতো।তার কারণ একটাই,স্বামীর কথা অমান্য করেছে।রিমঝিম রক্তিমের ফোঁসফাঁস দেখে কিছু বললো না।অপেক্ষা করছে ডক্টর ইব্রাহীমের জন্য।ডক্টর ইব্রাহীম ওয়াশরুম থেকে হাত-মুখ ধুয়ে আসলেন।এতোক্ষণ একটা অপারেশন করে এসেছেন।চেয়ার টা টেনে বসে মুচকি হাসলেন।রক্তিম আর রিমঝিমকে উদ্দেশ্য করে বললেন,ভালো আছে কিনা?রক্তিম আর রিমঝিম দু’জনেই জবাবে বললো ভালো আছি।তাদের জবাব শুনে ডক্টর ইব্রাহীম একগাল হেসে বললেন,

‘আমরা মানুষ রা কিন্তু আসলেই ভালো নেই।তবে,মুখে ঠিকই বলি ভালো আছি।মানুষ কিসে সুখী বা কিসে ভালো থাকতে চায় তা তাদের এই অজানা।এই যেমন রক্তিম আর রিমঝিম তোমরা দুজনেই ভালো নেই কিন্তু মুখে ঠিকই বলেছো ভালো আছো।আমি বুঝতে পারছি তোমাদের মনের অবস্থা।তোমাদের দু’জনকেই এখন অনেক শক্ত হতে হবে।ভেঙে পড়লে চলবে না।রক্তিমকে খুব তাড়াতাড়ি কেমোথেরাপি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।সত্যি বলতে ক্যান্সারে আক্রান্ত সেল গুলো আস্তে আস্তে অনেকটা ছড়িয়ে গিয়েছে।’

‘কবে থেকে শুরু হবে রক্তিম ভাইয়ের কেমোথেরাপি।’

‘দু’একদিনের মধ্যেই আমরা তার ব্যবস্থা করে ফেলবো।রক্তিমকে কাল হাসপাতালে এসে ভর্তি হতে হবে।তারপর আমরা আমাদের ট্রিটমেন্ট শুরু করে দিবো।’

বেশ আরো কিছু কথা বলে রক্তিম আর রিমঝিম বেরিয়ে পড়লো।ডক্টরের সাথে কথা বলে রিমঝিমের ক্ষিপ্ত মনটা কিছুটা শান্ত হয়েছে।রক্তিমের কিছু ভালো লাগছে না।বারংবার মনে হচ্ছে কিছুই ঠিক হবে না।লিফটের কাছে আসতেই রিমঝিমের মাথাটা ঘুরে উঠলো।ব্যালেন্স ঠিক রাখতে রক্তিমকে আঁকড়ে ধরলো।রক্তিমও সময়মতো আগলে নিলো রিমঝিমকে।রাগ দেখিয়ে বললো,
‘চল ডক্টরের কাছে।কেনো মাথা ঘুরে গেলো জানতে হবে।’

‘এই সময়ে এমন অনেক কিছুই হয়ে থাকে রক্তিম ভাই।চিন্তার কোনো কারণ নেই।’

‘সকালে খেয়েছিস।সত্যি বলবি!’

রিমঝিম আমতাআমতা করে বললো,
‘না!খাই নি তো।’

‘নিজের খাওয়া-দাওয়া বাদ দিয়ে আমার পিছনে পড়তে কে বলেছে তোকে।এখন এইভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে সামনে হাঁটা ধর।’

‘কোথায় যাবেন রক্তিম ভাই।’

‘ক্যান্টিনে তোকে খাইয়ে নিয়ে বাসায় যাবো।’

‘ক্যান্টিনে না গিয়ে বাসায় গেলেই তো হয়।আমার খিঁধে লাগে নি।’

‘চাপড় না খেতে চাইলে চুপচাপ থাকবি।না হলে আজকে তোর চাপা ব্যথা করে দিবো ফাজিল কোথাকার।’
রক্তিমের ধমক খেয়ে রিমঝিম একদম মিহিয়ে গিয়েছে।চুপচাপ রক্তিমের কথা অনুসরণ করে হাঁটতে লাগলো।রক্তিম একটু পরপর রিমঝিমের দিকে চোখ গরম করে তাকাচ্ছে আর বিরবির করে বকেই যাচ্ছে।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here