জলপদ্ম পর্ব -৩৯ ও শেষ

#জলপদ্ম
#কুরআতুল_আয়েন

|৩৯|
চোখ খুলতেই চারপাশ টা অন্ধকার দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেলো রিমঝিম।শরীর ঘেমে একাকার হয়ে আছে।গলাটা ক্রমশই শুকিয়ে আসছে।বোঝার চেষ্টা করছে এতোক্ষণ সে কি স্বপ্ন দেখেছে কিনা।বিছানার পাশে হাত বুলিয়ে জায়গায় টা ফাঁকা অনুভব করতেই রিমঝিম উঠে বসলো।বুকের ভিতর অস্থিরতা কাজ করছে।জোর গলায় বলতে লাগলো,রক্তিম ভাই আপনি কোথায়,আপনাকে খুঁজছি আমি।কয়েকবার ডাকার পরও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে রিমঝিম বাচ্চাদের মতো কেঁদে উঠলো।রিমঝিমের কান্না শুনে বাকিরাও এলো।আবির রিমঝিমের কাছে বসতেই রিমঝিম আবিরের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো।আবির চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছে।তবে,এতোটুকু বুঝতে পারছে রিমঝিম মানসিক দিক দিয়ে খুব দূর্বল হয়ে আছে।রিমঝিমের মাথায় আবিরের হাতের ছোঁয়া পেতেই রিমঝিম কেঁদে উঠলো।ভাঙা ভাঙা গলায় বললো,আবির ভাই আমার ছেলে,আমার আর রক্তিম ভাইয়ের কবর,তোমার সাথে আমার বাবাই।রিমঝিমের কথার আগামাথা কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না আবির।কিছুটা হেসে বললো,’রিমঝিম রে পাগল হয়ে গেছিস নাকি,কিসের তোর আর রক্তিমের কবরের কথা বলছিস।রক্তিম তো ইন্ডিয়াতে আছে।চলে আসবে কয়েকদিনের মধ্যেই।’

‘না আবির ভাই আমি দেখেছি আমার বাবাই তোমার সাথে আমাদের কবরের পাশে এসেছে।আর,তুমি তাকে আমাদের গল্প শোনাচ্ছো।’

আবির হাসলো খানিকটা সময় নিয়ে।তবে ভিতরে ভিতরে ঠিকই পোঁড়াচ্ছে তাকে।রিমঝিমকে কীভাবে সান্ত্বনা দিবে তারও ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।মনের ভিতরে কষ্ট টাকে চাপা দিয়ে রেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বললো,
‘বোকা মেয়ে তুই স্বপ্ন দেখেছিস।তোর আর রক্তিমের কিছুই হবে না দেখিস।সব ঠিক হয়ে যাবে।’

বাকিরাও রিমঝিমকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে চুপ করাতে পারলেও মনের মধ্যে সেই একটু আগের দেখা স্বপ্ন টাই এখনো বিরাজ করছে।তবে,এখন চারপাশ টা অস্পষ্ট লাগছে।চোখের সামনে ভাসছে রক্তিমের চেহারাটা।ইন্ডিয়ায় যাওয়ার আগে একটিবারও রিমঝিমের কাছে এলো না।দূর থেকে বলে গিয়েছিলো আমি চলে যাচ্ছি।তখন খুব অভিমান জমেছিলো,কি হতো যদি একটু এসে রিমঝিমকে জড়িয়ে ধরতো।কপালের চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে একটু চুমু খেলে কিই বা হয়ে যেতো।রিমঝিমও তো কম না,যায় নি একবারও রক্তিমের সাথে কথা বলতে।এখন তো মনে মনে শুধু রক্তিমকে অনুভব করে।কখনো মন শান্ত হয় বা কখনো অস্থিরতায় কাটে।কিন্তু,অভিমান গুলো ঠিকই দলা পাঁকিয়ে জমছে।

দিনটা এভাবেই বিষন্নতায় কেটে গেলো রিমঝিমের।রিমঝিমকে একটু হাসানোর কতো কিছুই না করা হলো,কিন্তু রিমঝিম একটুও হাসে নি।চুপচাপ করে বসে ছিলো।আবির,তনায়া,রিমি সবাই অনেক চেষ্টা করেও রিমঝিমের মুখে একটুও হাসি ফুটাতে পারলো না।বিষন্নতা নিয়ে কাটলো আরো কিছুটা দিন।
—–
তীব্র গরমের মধ্যেও রিমঝিম মনমরা হয়ে বসে আছে বারান্দায়।সূর্য তখন মাঝ আকাশে।সূর্যের উত্তাপে মুখ টা লাল হয়ে গিয়েছে।সকাল থেকে রক্তিমকে অনেকবার ফোন দেওয়া হয়েছে।ফলাফল শূন্য এসেছে।ওই স্বপ্ন টা দেখার পর থেকে মন শুধু অস্থিরতায় ভুগছে।মাথাটা হেলিয়ে দিলো চেয়ার টার মধ্যে।আচমকাই ফোন বেজে উঠায় রিমঝিম কিছুটা হকচকিয়ে গেলো।দৌড়ে গিয়ে ধরতে গিয়ে পা’য়ের সাথে পা লেগে ধপাস করে পড়ে গেলো।যার ফলে পেটের মধ্যে অনেকটাই আঘাত লাগে।চোখ বন্ধ করে এক গগণবিদারী চিৎকার দিয়ে উঠলো রিমঝিম।ব্যথায় কিছুক্ষণ কাতরিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়।রিমঝিমের চিৎকার শুনে ততক্ষণে সবাই এসেও পড়েছে।রিমঝিমকে এইভাবে পড়ে থাকতে থেকে আবির আর বাবু তাড়াহুড়ো করে কোলে তোলে নিলো।সবার মুখে ভয় আর দুশ্চিন্তার চাপ।
—–
হাসপাতালের বারান্দার চেয়ার টায় মনমরা হয়ে বসে আছে রক্তিম।কারোর সাথে কথা বলতে তেমন একটা ইচ্ছে করে না।কিন্তু,বুকের ভিতর টা আজকে খুব অস্থিরতা করছে।মন চাইছে রিমঝিমকে একটু দেখার।কিন্তু,চেয়েও যেনো পারছে না।বারবার শুধু একটা কথাই মনে হয়ে উঠে,মায়া বাড়িয়ে লাভ কি।আদোও কি ফিরে পাবে আগের সেই সুখের দিন গুলি।হাতে থাকা ফোনটা এপিঠ ওপিঠ করেও একটিবার ফোন করার সাহস হয়ে উঠলো না।থম মেরে চুপটি করে বসে রইলো।
—-
রিমঝিমের অবস্থা তেমন একটা ভালোর দিকে না।ডেলিভারির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।হাসপাতালের জীর্ণ দেয়ালটায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আবির।বাকিরাও রয়েছে একটু সামনেই।আবির সবার থেকে আরেকটু দূরে সরে আসলো।অনেক ভেবে চিন্তা করে রক্তিমকে ফোন লাগালো।রিমঝিমের এই অবস্থার কথা না জানিয়েও শান্তি পাবে না।তাছাড়া আবিরও দেখতে চায় রক্তিম আর নিজেকে কতোটা লুকিয়ে রাখতে পারে।বড় বড় অসুখ কি মানুষের হতে পারে না তাই বলে আপনজনদের সাথে কথাবার্তা একদম বাদ দিয়ে দিবে,নিজেকে সবার থেকে সরিয়ে আনবে।আবিরের মাঝেমধ্যে অনেকটা রাগই হয়।ঠিক এখনো তার কোনো ব্যতিক্রম হয় নি,অনেকটা রাগ নিয়েই রক্তিমকে ফোন দিয়েছে।অপরপ্রান্তে রিং হচ্ছে কিন্তু অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তিটি কিছুতেই ফোন ধরছে না।আবির পরপর কয়েকবার কল দেওয়া সত্ত্বেও ফলাফল শূন্য পেলো।পুনরায় দিতে গেলেই রিমঝিমের চিৎকারের শব্দ কানে এসে ঠেকলো।ফোন করা বাদ দিয়েই দৌড়ে গেলো সেখানে।সবাই অনেক চিন্তিত মুখ নিয়ে বসে আছে।এভাবেই দুশ্চিন্তার মধ্যে দিয়ে অনেকটা সময় কেটে যায়।

রক্তিম ফোনে যখন দেখলো আবির ফোন দিয়েছিলো তখনি তার মুখটা কালো হয়ে গিয়েছিলো।ভেবে নিয়েছে আবির রিকোয়েস্ট করবে রিমঝিমের সাথে একটু কথা বলার জন্য।তাই একপ্রকার তাড়াহুড়ো করেই ফোনটা অফ করে দিলো।সাদা বেড টায় শুয়ে পড়লো।একটু পরেই ডক্টর আসবে চেকাপের জন্য।অপারেশনের সময়ও ঘনিয়ে এসেছে।রক্তিমের সাথে আসা রঞ্জন আর সিফাত একটু বাহিরে গিয়েছে।পরিবারের কারোর সাথেই ইন্ডিয়ায় আসতে একদমই ইচ্ছুক ছিলো না রক্তিম।তার এক ভাবনা মিছেমিছি মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই।মুখে মুখে এই কথা বললেও ভিতরে ভিতরে ঠিকই পুঁড়ে যাচ্ছে।অন্ধকার ঘনিয়ে আসতেই তার ভিতর টা অন্যরকম এক ভাবনায় গুমোট হয়ে উঠে।বিষাক্ত হয়ে উঠে সবকিছু।মনখোলে কাঁদতে গিয়ে যেনো পারে না।কোথায় একটা বাঁধা এসে কাজ করে।
—-
অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে রিমঝিম তার সন্তান কে জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছে।জাহানারা আহমেদ বাচ্চা ছেলেটিকে কাঁথা মুড়ি দিয়ে নিজের সাথে চেপে ধরে রেখেছে।রক্তিমকে খুব করে অনুভব করছে।আবির এখনো রক্তিমকে কল দিয়েই যাচ্ছে,,ফোন বন্ধ পেয়ে রাগে সেখান থেকে চলে আসলো।এভাবে দু’দিন কেটে গিয়েছে।রিমঝিম পুরোপুরি সুস্থ নয়।চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে শুয়ে রয়েছে।পাশেই বাবাই ঘুমিয়ে আছে।একটু আগে ফিডিং করিয়েছে।আবির আস্তে আস্তে কেবিনে ঢুকলো,রিমঝিমকে চোখ বন্ধ করে থাকতে দেখে চলে যেতে নিলেই রিমঝিম এমতাবস্থায় বলে উঠলো,
‘এসো আবির ভাই!ঘুমিয়ে নেই আমি।’

আবির মিষ্টি করে হাসলো।কেবিনে ঢুকে প্লাস্টিকের চেয়ারটা কাছে টেনে নিয়ে বসে পড়লো।বাবাইয়ের ছোট ছোট হাতদুটো আঁকড়ে ধরে বললো,

‘কখন ঘুমিয়েছে রে?’

‘তুমি আসার মিনিট দশেক আগে ঘুমিয়েছে।’

‘তোর মতোই দেখতে হয়েছে রে আমাদের বাবাই।’

রিমঝিম প্রাণহীন একটা হাসি দিয়ে আবিরের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

‘রক্তিম ভাই ফোন করেছিলো আবির ভাই?’

আবির ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।মাথাটা নিচু করে রেখেছে।রক্তিমের ফোন বন্ধই আছে।রঞ্জনদের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে শুনেছে ইচ্ছে করেই ফোন বন্ধ করে রেখেছে।কারোর সাথে কথা বলতে চায় না।বরং নিজেকে একা রাখতে চায়।রিমঝিম আবিরের থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে পুনরায় বললো,

‘রক্তিম ভাই একটিবারও ফোন দেয় নি তাই না!’

‘হয়তো চেকাপের জন্য ব্যস্ত ছিলো।দাঁড়া এখন একটা ফোন দিয়ে দেখি।’

‘আমি ছোট না আবির ভাই।যা বলবে তা বুঝে নিবো।রক্তিম ভাই ইচ্ছে করে ফোন দিচ্ছে না,আর তোমরা দিলেও তা ধরছে না।দরকার নেই রক্তিম ভাইকে ফোন করার।’

‘এইমাত্রই বললি তুই ছোট না,অথচ ছোটদের মতো কথা বলছিস।রক্তিম মনের দিক দিয়ে অনেকটা দূর্বল হয়ে আছে।তাই এমন করছে।অভিমান করিস না রিমঝিম।’

দু’চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পড়লো রিমঝিমের।কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে লাগলো,

‘দরকার নেই আমার উনাকে।আমি আমার ছেলে নিয়ে একাই থাকতে পারবো।পারলে এটা উনাকে জানিয়ে দিও।’

আবির অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো রিমঝিমের দিকে।নাক ফুলিয়ে কাঁদা আর অভিমান করাটা এখনো গেলো না।আগের রিমঝিমকে দেখে বেশ ভালোই লাগছে আবিরের।
🍂🍁
কেটে গেলো প্রায় তিনটে বছর।আজও রিমঝিমের অভিমান কমে নি।রক্তিম আগের থেকে অনেক টাই সুস্থ আছে।অনেক বিপদ পেরিয়ে অপারেশন সাক্সেস হয়েছিলো।রক্তিমের এখনো মনে পড়ে সেই দিনটার কথা,যেদিন জানতে পেরেছিলো সে ছেলে সন্তানের বাবা হয়েছে।দিনটা ছিলো অপারেশন হওয়ার আগের দিন।সকালে রঞ্জন এসে যখন জোর করে সবার সাথে কথা বলিয়ে দিয়েছিলো তখন চোখ দুটো রিমঝিমকে খুঁজছিলো।কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারি নি ঝিমঝিমকে দেখতে চাওয়ার আকুলতার কথা।জাহানারা আহমেদ ফোন কেটে দিতেই রক্তিমের মন টা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেলো।রঞ্জন বুঝতে পেরে বলেছিলো,
‘কিরে রিমঝিমকে খুঁজছিলি?’

রক্তিম মুখ থমথমে করে জবাব দিয়েছিলো,
‘না!তাকে কেনো খুঁজতে যাবো।’

‘এতো মিথ্যা বলে লাভ কি রক্তিম।আমি কি বুঝি না নাকি।’

‘কি হতো একটু আসলে আমার সামনে।অন্যসময় তো কথা বলার জন্য পাগল হয়ে থাকতো,আজকে তো একটিবারও আসে নি।’

রঞ্জন ঠোঁট চেপে হেসে বলেছিলো,
‘রিমঝিম এখন বেড রেস্টে আছে।চাইলেই আগের মতো দৌড়াদৌড়ি করতে পারবে না।’

‘কেনো কি হয়েছে ওর,ওর প্রেগ্ন্যাসির সবকিছু ঠিকঠাক আছে তো।’

‘তুই কেমন বাবা রে রক্তিম,,তোর ছেলের আজকে নিয়ে চারদিন হলো আর তুই এখনো প্রেগ্ন্যাসির কমপ্লিকেশন নিয়ে পড়ে আছিস।’

সেদিন রক্তিম অনেক কেঁদেছিলো।ছোটবাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে কেঁদেছিলো।নিজেকে যেনো আরো দোষী ভাবতে শুরু করে দিলো।রঞ্জনকে জড়িয়ে ধরে শুধু একটা কথাই বলেছিলো,
‘আমি বাঁচতে চাই রঞ্জন।আমি আমার সন্তানের সাথে থাকতে চাই,,তাকে বাবার আদর দিতে চাই।’

রঞ্জন কথার বিপরীতে বলেছিলো,
‘তুই তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবি রক্তিম।তোর জন্য এতোদিন আমি আমার বউকে ছেড়ে রয়েছি।তোকে তো সুস্থ হতেই হবে!!

কথাগুলো ভেবেই মুচকি হেসে উঠলো রক্তিম।আল্লাহর সহায় ছিলো বলে আজকে সবকিছু ঠিকঠাক আছে।বাহিরের ঝকঝকে পরিবেশ টা দেখতে রক্তিমের বেশ ভালোই লাগছে।কিন্তু সেটা আর বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না।বাবাইয়ের কান্না শুনে দৌড়ে রুমের দিকে যেতে হলো।বাবাইকে কোলে নিতেই রিমঝিম দৌড়ে এসে কোলে নিয়ে নিলো।আরেকহাতে ফিডারটা নিয়ে নড়েচড়ে দেখছে।রক্তিম গলা পরিষ্কার করে বললো,
‘আর কতো রাগ করে থাকবি বল রিমঝিম।মানছি অনেক টা কষ্ট টা দিয়ে ফেলেছি তোকে।’

রিমঝিম সোফায় বসে পড়লো।রক্তিমকে যেনো পাত্তাই দিচ্ছে না।এদিকে বাবাই তাকিয়ে আছে রক্তিমের দিকে।রক্তিম হাত বাড়াতেই বাবাই চলে আসতে নিলেই রিমঝিম চোখ গরম করে তাকালো বাবাইয়ের দিকে।ভয়ের চোটে বাবাই এবার গলা ছেড়ে কেঁদে উঠলো।রক্তিম তাড়াহুড়ো করে বাবাইকে নিজের কোলে নিয়ে নিলো।রিমঝিমের হাত থেকে ফিডারটা টা নিয়ে নিজেও সোফায় বসে পড়লো।রিমঝিমের শরীর ঘেঁষে বসে পুনরায় বললো,
‘আর অভিমান করে থাকিস না রিমঝিম।তোর থেকে এইভাবে দূরে থাকতে আমার একটুও ভালো লাগছে না।ঠিকমতো কথাও বলিস না আমার সাথে।সারাক্ষণ শুধু মুখ গোমড়া করে থাকিস।’

রিমঝিম উঠে দাঁড়ালো।ধপাধপ্ পা’য়ে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে বললো,
‘যখন আমি আপনার সাথে একটু কথা বলার জন্য পাগল হয়ে থাকতাম তখন কই ছিলো আপনার এইসব বানোয়াট কথাবার্তা!!তখন তো ঠিকই নিজেকে আমার থেকে আঁড়াল করে নিয়েছিলেন।এখন আমিও তাই করবো।কারণ,মানুষ কে তার নিজের কর্মের ফল দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হয়।’
একপ্রকার হনহনিয়েই চলে গেলো রিমঝিম।অন্যদিকে রক্তিম ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো রিমঝিমের যাওয়ার দিকে।হয়তো তাদের অভিমানের পাল্লা কোনো একদিন শেষ হবে।

#পরিশিষ্ঠঃ পদ্ম ফুলে ভরপুর পুকুরের ঘাটে পা ডুবিয়ে বসে আছে রিমঝিম।সুন্দর সবুজ রঙা একটা জামদানী শাড়ি পড়ে রয়েছে।রক্তিম হাতে পদ্ম ফুলের একটা মালা নিয়ে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসছে রিমঝিমের দিকে।রিমঝিম তা বুঝতে পেরেই মুখ ভেঙচি কেটে সেখান থেকে উঠে আসলো।রক্তিমও কম না,রিমঝিমের পিছু পিছু মালা নিয়ে ছুটতে লাগলো।অভিমান থাকলেও দু’জনের ভালোবাসার কমতি নেই।অভিমানের মধ্যে দিয়েও দু’জন দু’জনের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঠিকই করে যাচ্ছে।
সবাই সবার মতো নিজেদের কে নিয়ে ব্যস্ত আছে।রিমি সিফাতও ভালো আছে বটে।শিলা নাফির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে।তবে মনের কোনো এককোনায় আবিরের জন্য অনুভূতি গুলো রয়েই গিয়েছে।অন্যদিকে আবির পুরোটা সময় বাবাইয়ের সাথে কাটিয়ে দেয়।নিজেকে এভাবেই ব্যস্ত রাখছে।কিন্তু,মন থেকে শিলাকে কিছুতেই ভুলতে পারে নি।ভালো না বাসলেও মানুষ কে তো আর ভুলা যায় না।তবে,আবির হাঁপিয়ে উঠে,পাশের বাসার জোৎস্না আন্টির মেয়ে যে তার পিছনে জোঁকের মতো লেগে থাকে।এমনকি তার জন্য রুমেও থাকা মুশকিল হয়ে উঠেছে,বারান্দা বা জানালা যেদিকেই তাকায় না কেনো কোথা থেকে এসে আবিরকে দেখে চেঁচিয়ে বলে উঠে,’আবির ভাই আমি আপনার বাচ্চার মা হতে চাই।’আর আবির কান চেপে ধরে রুম থেকে দৌড়ে পালিয়ে আসে!!

সমাপ্ত

[

1 COMMENT

  1. ‘জালপদ্ম’ গল্পটা আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। প্রথম থেকে সবটাই খুব সুন্দর ছিলো। একদম মন ছুয়ে গেছে🥰🥰। কিন্তু শেষটা ভালো করে করতে পারেন নাই। অনেক তারাতাড়ি শেষ করছেন। আরেকটু ডিটেলসে করলে ভালো হতো। আক্ষেপ রয়ে গেছে। অনেক গুলো জট ছারানো হয় নাই। যেমন, রক্তিমের বাবার কি হইছিলো, তারিনের কি হইলো ইত্যাদি। আবার রিমঝিম-রক্তিমের অভিমানটা কবে কমবে সেটা দিখে দিলে ভালো হতো। তাই আক্ষেপ রয়ে গেছে। 😢😢

    তাই দয়া করে আরো কয়েকটা পার্ট দিন।এন্ডিং টা সুন্দর নাহলে গল্প পড়তে ভালো লাগে না।
    আর রিমঝিম-রক্তিমের সুন্দর সংসার সুন্দর জীবন পড়তে চাই। 🙏🙏

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here