#জানি_দেখা_হবে ❤
Israt Jahan Tanni ✍
#Part_15
..
মা আকাশের দিকে কিছুটা রাগী চোখে তাকিয়ে বললো..
– এখন কি এই কথাটা বলার জন্য তোকে একটা বউ এনে দিতে হবে?
– এই না না.. একদমই নাহ। এটা কখন বললাম।
– খাবি তুই?
– খাচ্ছি। মুখে ভেংচি কেটে বললো আকাশ…
..
সারাদিন অফিস করে রাত ১১ টায় বাসায় ফিরলো ধ্রুব। দরজার সামনে এসে কখন থেকে কলিংবেল বাজাচ্ছে তো বাজাচ্ছে।
কিন্তু কারো কোনো সাড়া পেলোনা। ধ্রুবর মা শুয়ে ছিলো আর ধ্রুবর বাবা বিছানায় হেলান দিয়ে বসে কি যেনো পরছিলো। কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে ধ্রুবর বাবা ওর মাকে বললো..
– কিগো, ছেলেটা মনে হয় এসেছে, যাও দরজাটা খোলে দিয়ে আসো।
– আমি যাবো কেন? ওর বউ আছে কি করতে?
ধ্রুবর বাবা চোখ থেকে চশমাটা খুলে বেড সাইডের টেবিলের রাখতে রাখতে বললো..
– দেখো, যা হয়েছে সবটাই অন্যায় হয়েছে। খুবই খারাপ হয়েছে। তাই বলে রাগ করে এতো রাতে ছেলেটাকে বাইরে দাড় করিয়ে রাখবে?
– এতোই যদি দরদ থাকে তাহলে তুমি গিয়ে খোলে দাও।
ধ্রুবর বাবা আর কিছু না বলে নিজেই উঠে পা বাড়ালেন দরজাটা খোলে দিতে। পিছন থেকে ধ্রুবর মা বললেন..
– হয়েছে হয়েছে, আর দরদ দেখানোর দরকার নেই। আমিই যাচ্ছি।
.
দরজাটা খোলে দিয়ে চলে আসতে লাগলেন ধ্রুবর মা। ধ্রুব দরজাটা লাগিয়ে বললো..
– এতো রাতে তুমি কেন উঠে আসতে গেলে মা?
– এখন তো আর তারা নামের কোনো প্রাণী এই বাড়িতে নেই, তাই আমাকেই আসতে হয়েছে। বেশ রাগী কন্ঠে বললেন ধ্রুবর মা। মায়ের কথার কোনো প্রতিউত্তর করেনি ধ্রুব। মা নিজের রুমে চলে গেলে ধ্রুব চলে গেলো রুমে।
তুরিন শুয়ে শুয়ে ফোনে কি যেনো করছে। ধ্রুব বললো..
– তুমি সজাগ?
– হ্যাঁ কেন? মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বললো তুরিন।
– কখন থেকে বেল বাজাচ্ছি শুনতে পাও নি?
– পেয়েছি।
– দরজাটা খোলে দিলেনা কেন?
– আজব, আমি কেন খোলতে যাবো দরজা? আমি কি বাসার মেইড নাকি?
তুরিনের কথায় রেগে গেলো ধ্রুব। বললো..
– আমার মা কি তাহলে মেইড? তুমি এখনো সজাগ তাও এতো রাতে মাকে কেন উঠে গিয়ে দরজাটা খোলতে হয়েছে? চেচিয়ে বললো ধ্রুব।
– সেটা তোমার মাকে গিয়েই জিজ্ঞাসা করো। আমার সাথে চেচাতে আসবেনা।
ধ্রুব রেগে গেলো, তাও নিজেকে সংযত রেখে ওয়াশরুমে গেলো ফ্রেশ হতে।
ওয়াশরুম থেকে এসে ভাবলো..আর রাগারাগি করবে না। তাই এসে পিছন থেকে তুরিনকে জড়িয়ে ধরলো ও। তুরিন রাগি গলায় বললো..
– ছাড়ো আমাকে।
– প্লিজ, রাগ করোনা। এমনিতেই সারাটা দিন অফিসে থাকতে হয়। কাজের এতো চাপ তাই এতো রাতেও কাজ করতে হয়। মাথা ঠিক থাকেনা। তাই মুখে যা আসে তাই বলি। তুরিন কিছু বললো না।
ধ্রুব বললো..
– চলো খেয়ে নেই।
তুরিন হেসে দিয়ে বললো..
– তুমি কি পাগল হয়ে গেছো নাকি?
ধ্রুব কপাল কুঁচকে বললো..
– মানে?
– কতো রাত হয়েছে দেখেছো? আমি কি এখনো খাওয়ার বাকি আছি?
– খেয়ে নিয়েছো তুমি?
– অনেক আগেই।
– ওহ, তারা আমার আগে কখনোই খেতো না তো। রাতে ২/৩ টা বাজলেও আমার জন্য অপেক্ষায় থাকতো। আমি এসে খেলে তারপর খেতো, কখনো বা খেতোই না। তাই ভাবলাম তুমিও হয়তো আমার আসার অপেক্ষায় না খেয়ে ছিলে। আনমনা হয়ে বললো ধ্রুব।
ধ্রুবর কথায় তুরিন ওর দিকে বাকা দৃষ্টিতে তাকালো। বললো..
– তারার নাম! তাও তোমার মুখে?
তুরিনের কথায় হুশ ফিরলো ধ্রুবর। কিন্তু কিছু বললো না। ডাইনিং এ গিয়ে খাওয়া শুরু করলো ও।
ধ্রুব খাচ্ছে। খেতে খেতে যখন সামনের চেয়ারের দিকে তাকালো.. তখন চমকে গেলো ও। তারা ওর সামনে বসে আছে আর একদৃষ্টিতে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে আছে। ধ্রুব বললো..
– তুমি? তুমি কখন এলে?
তারা কিছু বললো না। ধ্রুব আবারও বললো
– কোথায় গিয়েছিল তুমি? কথা বলছোনা কেন?
কথাটা বলতে বলতেই তারা কোথায় যেনো মিলিয়ে গেলো। ধ্রুব খাওয়া রেখে চারপাশে চোখ বুলাতে লাগলো। হয়তো তারাকে খোজছে। যখন পেলোনা, তখন আশাহত নয়নে প্লেটের দিকে তাকালো। কেন জানি খুব একা লাগছে ধ্রুবর। তারা যখন ছিল তখন তো এমন মনে হতো না। কিভাবেই বা একা মনে হবে, তখন যে তারা সর্বক্ষণ ধ্রুবর পাশে পাশে থেকেছে। কখন কি করবে ,কি লাগবে সেটার খোজ নিয়েছে। কিন্তু তুরিন তো এমন করেনা। কেন করেনা? ওর তো আরও বেশি করার দরকার ছিলো। কারণ এরা ভালোবেসে বিয়ে করছে।
কেন জানি আজ তারার কথা খুব মনে পরছে।
খেতে ইচ্ছে করছে না। প্লেটে হাত ধুয়ে রুমে চলে গেলো ধ্রুব।
.
তুরিন এখনো ফেইসবুকিং করছে । মেয়েটা পারেও এইসব। কতো করে বলেছি, আমি থাকলে আর কিছুই যেনো নাহয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা। ধ্রুব আস্তে আস্তে গিয়ে তুরিনের পাশে শুয়ে খপ করে ফোনটা নিয়ে নিলো। তুরিনের কলিজাটা যেনো নেড়ে উঠলো। এই বুঝি সব দেখে ফেলে ধ্রুব। কিন্তু নাহ, ফোনটা নিয়ে বেড সাইটের টেবিলে রেখে তুরিন কে জড়িয়ে ধরলো ধ্রুব। তুরিন একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললো..
– এতো তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ তোমার?
– একা একা খেতে ইচ্ছা করছিলোনা, তাই চলে এসছি।
– ওহ..
– তুরিন শুনো.
– শুনছি। বলো কি বলবে?
– সারাদিন তো তুমি বাসায় একা থেকে বোর হও, তাই বলছি কি..
– কি? বলো..
– আমরা কি দুজন থেকে তিনজন হতে পারিনা?
তুরিন কপাল কুঁচকে বললো..
– মানে? কি বলবে সোজাসুজি বলো।
– আমার একটা বাবু লাগবে। বুঝেছো এখন?
– অসম্ভব।
ধ্রুব অবাক হয়ে বললো..
– কি বলছো? তুমি মা হতে চাও না?
তুরিন একটা হাসি দিয়ে বললো..
– পাগল নাকি তুমি? আমার এইসবের প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নেই। আর তাছাড়া, বেবী নিলে আমার বডির সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে তো। আমার এতো সুন্দর বডির সুন্দর্য নষ্ট হোক সেটা আমি চাইনা।
তুরিনের কথায় ধ্রুব কি বলবে বুঝতে পারছে না। কোনো মেয়ে কিভাবে এইসব কথা বলতে পারে?
.
ধ্রুব কিছুটা সিরিয়াস ভংগিতে বসে তুরিনের হাতে হাত রেখে বললো…
— কিন্তু বাচ্চা ছাড়া আমরা যে অসম্পূর্ণ থেকে যাবো সোনা। আমাদের ভালোবাসার ফসল হলো বাচ্চা। তুমি কি চাও না আমরা আমাদের ভালোবাসার ফসলে আমাদেরকে পরিপূর্ণ করি?
তুরিন কিছুটা বিরক্ত হয়ে ফোনটা পাশে রেখে ধ্রুবর দিকে না তাকিয়েই বললো..
— উফফফফ, এক কথা বারবার ভালো লাগেনা তোহ। আমার কানের কাছে এভাবে ঘ্যানঘ্যান করোনা৷ বাচ্চার এতো শখ থাকলে কোনো হাসপাতাল বা এতিমখানা থেকে এডপ্ট নিয়ে নিও।
এমন কথা ধ্রুব যেনো দমে গেলো। তুরিনের দিকে কিছুক্ষন অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বললো..
— কিভাবে বলতে পারলে কথাটা?
..
কয়েকদিন পার হয়ে গেলো।
খুব চিন্তিত অবস্থায় তারা বসে আছে। আন্টি কিচেন থেকে এক গ্লাস দুধ নিয়ে এসে তারাকে দিলো। তারা বললো..
– আপনাদের অনেক ঝামেলায় ফেলে দিলাম।
– কি যে বলিস তুই, ঝামেলা কেন হতে যাবে? আমাদের বরং ভালোই লাগছে। আশা বাসায় থাকে না। ওর অভাব টা তুই পুরন করছি।
– মা একদম ঠিক বলেছে। পাশ থেকে সীমা বলতে বলতে এগিয়ে এলো ওদের দিকে।
তারা হেসে বললো..
– আপনারা আমার জন্য অনেক করেছেন। আপনারা আমাকে সাহায্য না করলে কি যে হতো।
– এতো ভাবিস না তো।
– আরেকটা কাজ করে দিবেন আমাকে?
– কি কাজ বল?
– আপনাদের তো অনেক বড় কোম্পানি। আমাকে যদি ওখানে একটা কাজ দিতেন।
– এই অবস্থায় তুই কাজ করবি কিভাবে?
– আমি পারবো। আর ওকে নিয়ে তো সবসময় আপনাদের এখানে থাকতে পারবনা। আমার তো কিছু একটা করতে হবে। পেটের দিকে তাকিয়ে বললো তারা।
আন্টি হেসে দিয়ে বললো।।
– ঠিকআছে, আজ আকাশ আর আহাদ ফিরক.. তারপর কথা বলে দেখবো কি বলে।
তারা একটা কৃতজ্ঞতার হাসি দিলো।
..
রাতে আকাশ আর আহাদ আসলে খাওয়া দাওয়ার পর মা ওদের সাথে কথা বলতে বসে।
– কি বলবে মা? (আহাদ)
– তারা বলছিলো আমাদের অফিসে ওকে একটা জব দেওয়ার জন্য।
– ওর জবের কি প্রয়োজন? আর ওর শরীর ও এখন ভালোনা।
– আমিও সেটাই বলেছিলাম। কিন্তু ওতো ফিউচার নিয়ে টেনশনে আছে।
– তুমি তারাকে ডাকোতো। সীমাকে উদ্দেশ্য করে বললো আহাদ।
সীমা গিয়ে তারাকে নিয়ে আসলো। আকাশ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তারার দিকে। মেয়েরা কন্সিভ করলে নাকি ওদের সৌন্দর্য বাড়ে। তারাকেও বেশ সুন্দর লাগছে আকাশের কাছে।
তারা এসে আকাশের মায়ের পাশে বসলো। আহাদ বললো ..
– বসো এখানে।
– না ঠিকআছে, আপনি বলুন।
– তুমি নাকি জব করতে চাইছো?
– হ্যাঁ। নিচের দিকে তাকিয়ে বললো তারা।
– কিন্তু কেন? এখানে কি তোমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে? অসুবিধা হলে আমাকে বলো।
– এখানে তো আমি অনেক সুখে আছি। অসুবিধা হবে কেন।
– তাহলে জবের চিন্তা মাথা থেকে নামাও। তোমার শরীর এখন সুস্থ না। এখন জব করলে ক্ষতি হতে পারে।
– কিন্তু ..
– কোনো কিন্তু না। কখনো যদি মনে হয় তোমার জবের প্রয়োজন, তখন আমি নিজে তোমাকে জব দিবো। কিন্তু এই অবস্থায় কোনোভাবেই না। তারা কি বলবে বুঝতে পারছে না। আজও যে এতো ভালো মানুষ আছে জানা ছিলোনা ওর।
..
ধ্রুবদের বাসায় তিনটা বাথরুম। একটা ধ্রুবর রুমে এটাচ, আরেকটা ধ্রুবর বাবা মায়ের রুমে এটাচ করা। আরেকটা আছে একদম কর্ণারে, ওটা এক্সট্রা।
ধ্রুবর বাবা ওয়াশরুমে থাকায় ধ্রুবর মা ওই কর্ণারের ওয়াশরুম টায় গেলো। ওয়াশরুম থেকে ফিরে আসার জন্য পিছনে ঘুরে আসতে গিয়েই কি যেনো একটা দেখে দাড়ালো। আস্তে আস্তে ওয়াশরুমের কর্ণারে বক্সটার দিকে এগিয়ে গেলো। ভালোকরে পরখ করে কিছুক্ষন স্টিকটা দেখলো। আচমকাই চোখগুলো খুশিতে জ্বলজ্বল করতে লাগলো। স্টিকটা হাতে নিয়ে তারাতাড়ি করে বাইরে বেরিয়ে এলো ধ্রুবর মা। ধ্রুবকে জোরে জোরে ডাকতে লাগলেন উনি। মায়ের ডাকে রুম থেকে বেরিয়ে এলো ধ্রুব।
– কি হয়েছে মা?
– তোর বউকে ডাক। হাসিমুখে বললেন উনি।
মায়ের মুখের হাসি আর তুরিনকে ডাকার কথা শুনে কিছুটা অবাক হলো ধ্রুব। কারণ তুরিন এই বাসায় আসার পর থেকে তুরিনকে ডাকা তো দুরে থাক, ওর নামটা পর্যন্ত শুনতে পারেনা মা। আর সেই মা কিনা ওকে ডাকতে বলছে তাও হাসিমুখে। ধ্রুব বেশ কৌতূহল নিয়ে বললো..
– কিছু হয়েছে মা? ও এসে কি করবে?
– তোর বউ যে কনসিভ করেছে সেটা আমাকে আর তোর বাবাকে জানাস নি কেন? জানিস তোর বাবা এটা শুনলে কতো খুশি হবে?
মায়ের কথায় ধ্রুব বেশ অবাক হয়ে গেলো। কিছুদিন আগেই বাচ্চার কথা শুনে বাজে রিয়েক্ট করেছিলো তুরিন। আর ও কনসিভ করেছে ভাবতেই পারছেনা ধ্রুব।
– কিরে, কি ভাবছিস?
মায়ের ডাকে হুশ ফিরলো ধ্রুবর। ধ্রুব বললো.
– কে বলেছে তোমাকে মা ও কনসিভ করেছে?
– এই দেখ, প্রেগন্যান্সি স্টিকটাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ও প্রেগন্যান্ট।
.
ধ্রুবর খুশি দেখে কে। ও তারাতাড়ি রুমে চলে গেলো। তুরিন ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে মাথার চুল ঠিক করছিলো। ধ্রুব তুরিনকে পিছন থেকে গিয়ে জরিয়ে ধরলো। তুরিন খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলল…
– উফফফ ছাড়ো তো। সবসময় এইসব ভালো লাগেনা।
– এতো বড় একটা সংবাদ আমার থেকে লুকালে কেন? লজ্জা পাচ্ছিলে বলতে?
তুরিন অবাক হয়ে বললো..
– কিসের সংবাদ?
– এই যে, আমি বাবা হতে যাচ্ছি আর তুমি মা..
– কি সব ফালতু বকছো বলোতো। সবসময় কানের কাছে এইসব নিয়ে ঘ্যানর ঘ্যানর করো কেন বলোতো?
ধ্রুব অবাক হয়ে বললো..
– তুমি কনসিভ করোনি?
– নাহ।
তুরিনের কথায় ধ্রুব কিছুক্ষন থমকে দাড়িয়ে থেকে বাইরে চলে গেলো।
মা এখনো আগের জায়গাতেই দাড়িয়ে আছে।
– কিরে, বউমা এলোনা?
– তুমি এটা কোথায় পেয়েছো মা।
– ওই ওয়াশরুমে। এক্সট্রা ওয়াশরুমটা দেখিয়ে বললেন উনি।
– কিন্তু ওখানে তো তুরিন যায়না।
ধ্রুবর মা খানিকটা চুপ থেকে বললো
– ও কনসিভ করেনি?
– নাহ। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো ধ্রুব।
– তাহলে এটা ওখানে এলো কিভাবে?
ধ্রুব কিছুক্ষন চুপ থেকে কি যেনো ভাবলো হটাৎ বললো..
– ওই ওয়াশরুমটা তো তারা use করতো মা।
মা অবাক হয়ে বললো..
– ও ওখানে যাবে কেন? রুমেই তো তোর ওয়াশরুম আছে।
– আমি ওকে মানা করেছিলাম যেনো আমার কোনো জিনিসে হাত না দেয় আর..
– আর কি? উৎকন্ঠা হয়ে বললেন মা।
– আর আমি ওকে মানা করেছিলাম যেনো আমার ওয়াশরুমে না যায়।
ধ্রুবর মায়ের মাথায় বাজ পরলো। একি বলছে তার ছেলে। কিছুক্ষন চুপ থেকে শান্ত গলায় তখনই ধ্রুব বললো..
– তারা প্রেগন্যান্ট ছিলো, আর আমি জানতেও পারলাম না??
মা ধ্রুবর দিকে তাকালো। ধ্রুবর চোখদুটো ছলছল করছে পানিতে। দেরিতে হলেও এই প্রথম ধ্রুবর চোখে তারার জন্য কিছু দেখতে পাচ্ছে মা।
.#জানি_দেখা_হবে ❤
Israt Jahan Tanni ✍
#Part_16
..
মা ধ্রুবর দিকে তাকালো। ধ্রুবর চোখদুটো ছলছল করছে পানিতে। দেরিতে হলেও এই প্রথম ধ্রুবর চোখে তারার জন্য কিছু দেখতে পাচ্ছে মা।
দিন গড়িয়ে যাচ্ছে। তারা এখনো আকাশদের বাসাতেই আছে। যদিও সে একবার বলেছিলো আলাদা বাসায় ভাড়া থাকতে, কিন্তু আকাশের মা সহ বাকিরা দেয়নি। কিছুদিন আগে আশাও এসেছিলো। তারার সাথে খুব ভাব জমিয়ে গেছে।
..
সন্ধ্যাবেলা,
তারা ছাদের এক কোনায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের কোনে পানি জমে আছে তার। মনে তার হাজারো প্রশ্ন ঘোরপাক খাচ্ছে। সারাটা জীবন কিভাবে পার করবে সে? ওর সন্তান যখন ওর বাবার পরিচয় জানতে চাইবে তখন কি জবাব দিবে নিজের সন্তানকে? জবাব দেওয়ার মতো আদৌ কি কোনো ভাষা থাকবে তখন? ও বাসার মানুষ যদি কখনো এই সন্তানের কথা জানতে পারে, তারা কি মেনে নিবে ওকে? কিভাবে মানবে? ওরা তো জানেই না ওর কথা।
এইরকম হাজার প্রশ্নের ভান্ডার মনের মাঝে চেপে বসে আছে তারা। এরই মাঝে তারা কিছুটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে আপনমনে বললো…
— আমিও যে কি পাগল। যেখানে ওদের সাথে আমার আর কখনো দেখাই হবে না, যেখানে ওরা কখনো আমাকেই মেনে নিবেনা সেখানে আমি যে কি আকাশ পাতাল ভাবছি নাহ। আবারও তাচ্ছিল্য করে হাসলো তারা। তবে শব্দ করলো না।
..
– এই সন্ধ্যাবেলায় এখানে বসে কি করছো?
আকাশের প্রশ্নে ধ্যান ভাংলো তারার। মুচকি হাসি দিয়ে বললো..
– আপনি কখন এলেন?
– মাত্রই। তোমাকে পেলাম না, মা বললো ছাদে আছো। তাই এখানেই চলে এলাম।
– আচ্ছা..
– কি আচ্ছা?
– কিছুনা।
– তুমি কি এতো ভাবো বলোতো?
– কেন? কিছু ভাবিনা তো।
– এই আকাশের চোখ থেকে ফাকি দেওয়া অসম্ভব। তবে আমি জানি তুমি কি ভাবো।
– কি জানেন আপনি?
– তুমি তোমার ওই খলনায়ক কে ভাবো।
– খলনায়ক কে?
– তোমার স্বামী।
স্বামীর কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ থাকলো তারা। আকাশ বললো..
– চাচ্ছিলাম মুড অন করতে, দূর্ভাগ্যবশতঃ হয়ে গেলো মুফ অফ। কি যে করি..
– কিছু করতে হবেনা আপনাকে।
– তুমি কখনো প্রেম করেছো?
আকাশের কথায় হাসলো তারা। বললো..
– তার আর সুযোগ পেলাম কোথায়,, এইসবের আগেই তো বিয়ে হয়ে গেলো। যদিও আমার বিয়েটা একটা দুর্ঘটনা ছিলো।
– শখ আছে প্রেম করার? শখ থাকলে আমার সাথে করতে পারো।
তারা কপাল কুঁচকে তাকালো আকাশের দিকে। আকাশ জোরে হেসে দিয়ে বললো..
– আহ, ভয় পাচ্ছো কেন। প্রেমইতো করবে। আর কিছুতো না।
– আপনি প্রেম করেছেন?
– অনেক।
– অনেক মানে?
– মানে, যাকে যখন ভাললেগেছে প্রপোজ করেছি। যারা এক্সেপ্ট করেছে তাদের সাথেই কিছুদিন প্রেম করেছি। আর যারা এক্সেপ্ট করেনি, তাদের পিছু সহজে ছাড়িনি।
– বাহ, আপনি তো দেখছি সেই প্রেমিক পুরুষ।
– হ্যাঁ ..খুব। প্রেম করতে আমার খুব ভালোলাগে। তবে এখন আর করতে পারিনা। অফিসে যেতে হয়।
.
– খুব দুঃখ?
– এতোদিন দুঃখ ছিলো। তোমাকে দেখে ভেবেছিলাম তোমার সাথেও প্রেম করবো। কিন্তু ..
– কিন্তু কি? আমি বিবাহিত বলে?. আমি প্রেগন্যান্ট বলে?
– আরে নাহ।
– তাহলে?
– ভাবছি, তোমার বাবুটা হয়ে গেলে তারপর প্রেম করবো তোমার সাথে।
আকাশের কথায় কি বলবে কিছু বুঝতে পারছেনা তারা। তবে এটা বেশ বুঝতে পারছে যে ওর মনে কোনো খাদ নেই।
.
তুরিন ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ও চলে যেতেই ধ্রুব ওর ফোনটা হাতে নিলো। ইদানিং তুরিনকে বেশ সন্দেহ হয় ধ্রুবর কাছে। কি করে এতো ফোনে। আর ওর ফোনটা ধ্রুবর কাছ থেকেও বেশ দুরে দুরে রাখে। কেন সেটা বুঝতে পারেনা ধ্রুব। লকটা পর্যন্ত জানা ছিলোনা ধ্রুবর। সেদিন লুকিয়ে দেখেছিলো কিভাবে লক টা খোলতে হয়।
ধ্রুব ফোনের লকটা খোলে গ্যালারিতে ঢুকলো। কিছুই পেলোনা। মেসেজে গিয়েও চেক করলো। সেখানেও কিছু নেই। শেষমেষ মেসেঞ্জারে গিয়েই চোখ আটকে গেলো একটা পার্টিসিপেট এ । আইডিটার নাম “Nmd Tushar Khan”. মেসেজটা ওপেন করতেই বাজ পরলো ধ্রুবর মাথায়। প্রথম থেকে দেখতে লাগলো মেসেজগুলো .. যতোই দেখছে ততোই রক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে ওর। এক এক করে সবগুলো মেসেজ চেক করলো ধ্রুব। ধ্রুবকে যে ঠকানো হচ্ছে সেটা স্পষ্ট বুঝে গেছে ও। একটা মেসেজ দেখে চোখগুলো রক্তবর্ণ হয়ে গেলো ধ্রবর।
।
মেসেজে লেখা আছে,
“খুব শীঘ্রই ধ্রুবদের সমস্ত সম্পদ হাতিয়ে তোমার কাছে চলে আসবো।”
“কিভাবে কি করবে? ”
“উকিলের সাথে আলাপ করেছি। উনাকে বলেছি সমস্ত ডকুমেন্ট তৈরি করতে। খুব শীঘ্রই ডকুমেন্ট গুলো চলে আসবে আমার কাছে। ”
“কিন্তু ডকুমেন্ট হলেই তো হবেনা। সাইন করাতে হবেতো তাতে। ওরা কি সহজে কাজটা করে দিবে?
“সমস্যা তো একটু হবেই। ধ্রুবর নামে হলে তো সমস্যা হতোনা। ছলে বলে করিয়ে নিতাম। কিন্তু ওর বাবার নামে সবকিছু। সমস্যা নেই। আগে ডকুমেন্ট গুলো আসোক আমার হাতে.. পরে দুধের সাথে কিছু একটা মিশিয়ে সাইন করিয়ে নিবো।
” আচ্ছা সাবধানে সবকিছু করো। সবকিছু যেনো ঠিকঠাকভাবে হয়। ভুলে যেয়োনা, সম্পদগুলি আমার নামে করে দিতে পারলেই তোমাকে গ্রহণ করবো। তা নাহলে আমার জীবনে তোমার কোনো অস্তিত্বই থাকবেনা।
..
ধ্রুব ফোনটা হাতে নিয়েই দাড়িয়ে আছে। যেই তুরিনকে সে এতোটা ভালোবাসে, সে তুরিনই কিনা তার সাথে ভালোবাসার নামে এতো বড় ছলনা করছে? ছিঃ ভাবতেও পারছেনা ধ্রুব। কিভাবে একটা মানুষ এতো জঘন্য হয়।
ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ধ্রুবকে দেখে চমকে গেলো তুরিন। কারণ ওর হাতে যে ওরই ফোনটা। তুরিন বললো..
– তুমি তো অফিসে চলে গেছিলে। আবার ফিরে এলে যে?
– তোমার কোনো সমস্যা করে ফেললাম ফিরে এসে?
– না সমস্যা হবে কেন। ফোন দিয়ে কি করছো তুমি? দাওতো ফোনটা।
– ফোনে কোনো বিশেষ কিছু আছে নাকি? আমি দেখলে সমস্যা?
তুরিন তুতলাতে লাগলো। বললো
– কিক কি থাকবে ফোনে। কিছু নেই তো।
– সত্যিই কিছু নেই?
– কি হয়েছে তোমার আজ? এইসব বলছো কেন?
ধ্রুব গর্জে উঠলো। ফোনের মেসেজটা ওপেন করে ওর সামনে ধরে বললো
– এইসব কি?
তুরিনের মাথায় বাজ পরলো। কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছেনা তুরিন। এতো সাবধানে থাকার পরে ও এভাবে ধরা পরে যাবে ভাবতেও পারেনি তুরিন। এইবার কি বলবে ও।
ধ্রুব আবারও চিৎকার দিয়ে বললো..
– চুপ করে আছো কেন?
– এগুলো তো আমি মজা করছিলাম।
ধ্রুব আচমকায় তুরিনের গালে কতোগুলো থাপ্পড় দিলো। তুরিন জোরে কেদে দিয়ে বললো…
– তুমি আমাকে মারলে??
– হ্যাঁ মেরেছি। আরো মারবো। মারতে মারতে তোকে আমি মেরেই ফেলবো। চেচিয়ে বলতে লাগলো ধ্রুব। ধ্রুবর চিৎকারে মা বাবা তারাতাড়ি এলো ওদের রুমে। বাবা বলতে লাগলো..
– কি হয়েছে তোদের? এভাবে চিল্লাচিল্লি করছিস কেন?
মা বললো..
– কিরে, তুই এই বেলায় বাসায়? অফিস যাসনি? আর চিৎকার করছিস কেন? কি হয়েছে?
ধ্রুব কিছু বলছেনা। তুরিনের দিকে তাকিয়ে মা বললো..
– কিরে, তুরিন কাঁদছে কেন? কি হয়েছে ওর?
ধ্রুব শক্ত গলায় বললো..
– ও আমাকে ঠকিয়েছে মা। ও আমাকে ঠকিয়েছে।
– ঠকিয়েছে মানে? কি হয়েছে? অবাক হয়ে বললো ধ্রুবর বাবা।
ধ্রুব চিৎকার করে বলতে লাগলো..
– ও প্ল্যান করেছে একটা ছেলের সাথে, আমাদের সমস্ত কিছু ছল করে ওর নামে লিখে দিয়ে ওকে বিয়ে করবে।
..
মা অবাক হয়ে গেলো ধ্রুবর কথায়। এমনিতেই তুরিনকে ও সহ্য করতে পারেনা। তারউপর এইসব শুনে মাথায় গরম হয়ে গেলো উনার। বললো
– ধ্রুব এইসব কি বলছে তুরিন?
তুরিন কাঁদছে। ধ্রুব রেগে গিয়ে বললো..
– কেন আমার সাথে এমন করেছিস? কেন? আর ওই ছেলেটা কে?
তুরিন তবুও কিছু বলছেনা। ধ্রুব এগিয়ে গেলো তুরিনকে মারতে। ভয় পেয়ে গেলো তুরিন। ঢোক গিলতে গিলতে বললো..
– আর মেরোনা প্লিজ। আমি বলছি, সব বলছি।
এক এক করে সব বলতে লাগলো তুরিন
– আমি আর তুষার একে অপরকে ভালোবাসি। তোমার সাথে যখন বিয়েতে দেখা হলো তখন তোমার কথা বলেছিলাম ওর কাছে। ও যখন শুনলো তোমাদের বড় বিজনেস আছে তখন ও আমাকে তোমার সাথে প্রেমের অভিনয় করতে বললো যেনো তোমার কাছ থেকে টাকা হাতাতে পারি। এতোটুকু বলেই কাঁদতে লাগলো তুরিন। ধ্রুব কঠিন গলায় বলল..
– তারপর কি?
– ওর কথায় রাজি হয়ে আমিও তোমার সাথে প্রেমের নাটক করলাম। সবই ঠিক ছিলো, কিন্তু ঝামেলা হলো তখন যখন তোমার আর আমার বিয়ে ঠিক করে দিলো। আমিতো তুষারকে ভালোবাসি, তাই তোমাকে বিয়ে করতে চাইনি। কিন্তু তুষার বললো, তোমাকে বিয়ে করতে। বিয়ের দিন পার্লারে যখন নিয়ে যাচ্ছিলো তখন রাস্তাতেই সুযোগ বুঝে আমি পালিয়ে যাই তুষারের কাছে।
ধ্রুব আর ওর বাবা মা তুরিনের কথায় অবাক হওয়ার চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেলো। ধ্রুব বলতে লাগলো..
– কিন্তু তুমি যে বলেছিলে তারা আর ওর বাবা তোমাকে থ্রেড করেছে বিয়েটা না করার জন্য?
– মিথ্যা বলেছিলাম। যেনো তারা তোমার জীবনে ঠাঁই না পায়। ও অনেক বুদ্ধিমতী। ভয় হচ্ছিলো আমার, ও যদি তোমার ধারে কাছে ঘেঁষে তাহলে আমি আমার উদ্দেশ্য পুরন করতে পারবোনা।
ধ্রুব কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। তারা সম্পুর্ন নির্দোষ। তাও বেচারিকে কতোই কষ্ট না দিয়েছে ধ্রুব। তাও এই বেইমান তুরিনের জন্য।
.
ধ্রুবর বাবা বললো.
– পালিয়েই যখন গিয়েছিলে তাহলে ওর জীবনটা নরক করার জন্য আবার ফিরে আসলে কেন?
তুরিন নিচের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো.
– আমি ভেবেছিলাম তুষারের কাছে গেলে ও আমাকে মেনে নিবে। যতোই হোক ভালোবাসি তো দুজন দুজনকে। কিন্তু নাহ, ও আমাকে ফিরিয়ে দিলো।
পরে দিশেহারা হয়ে মায়ের কাছে ফোন করলাম। তখন শুনলাম তোমার সাথে তারার বিয়ে হয়েছে। এমনিতেই ওকে আমি আর মা সহ্য করতে পারিনা। তারউপর আমার সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো তার সাথে ওর বিয়ে হয়ে গেছে!! মানতে পারছলাম না। তাই মা আর আমি দুজনে প্ল্যান করলাম কিভাবে তোমার জীবনে আসতে পারি। এরমধ্যে তুষারের সাথে আবারও যোগাযোগ হলো আমার। ও বললো.. তোমার সবকিছু যদি ওর নামে করে দিতে পারি, তাহলে ও আমাকে বিয়ে করবে। তাই…
.
তুরিনের সমস্ত কথা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো ধ্রুবর। কি বলছে এই মেয়ে এইসব? কিভাবে পারলো ওর জীবনটা নিয়ে এভাবে ছিনিমিনি খেলতে? বিনাদোষে তারাকেও শাস্তি দিলো ধ্রুব। এর কি আদৌ ক্ষমা পাবে সে?
.
To be Continued ….
To be Continued ……