জেদ পর্ব -০৪

#জেদ(A Conditional LoveStory)
#পার্ট০৪
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
বেশ ব্যস্ত দিন কাটছে আজকে।বাবা বেশ কয়েকবার কল দিয়েছিল।একবারও ধরতে পারিনি।যখন আমি মিটীং এ বা সবার সাথে প্রোজেক্ট ডিসিকাস করছি ঠিক তখনি বাবা কল দিচ্ছেন।ফোন সাইলেন্ট থাকার কারনে কখন ফোন বেজেছে তারও হুদিশ পাই নি কোন।লাঞ্চ ব্রেকে ফোন হাতে নিয়ে দেখি বাবার ৭টা মিসডকল আর আরদ্ধের ছোট্ট একটা ম্যাসেজ-“কাজ শেষ হলে টেক্সট দিও।“
বাবাকে কল ব্যাক করতে যাব ঠিক তখনই তাহা এসে বলল মিটীং এর সব এরেঞ্জমেন্ট হয়ে গেছে ।সবাই মিটিং রুমে পৌছে গেছে।আমি ফোনটা টেবিলের উপর রেখে মিটীং রুমের দিকে পা বাড়ালাম।
এই প্রোজেক্টটা আমার ড্রিম প্রোজেক্ট।আমার অনেক রাত জাগা শ্রম রয়েছে এই প্রোজেক্টের পেছনে।শুধু আমি না আরদ্ধও বেশ শ্রম দিয়েছে এই প্রোজেক্টে।কখনো কাজের চাপে আমি আরদ্ধের সাথে দেখা করতে গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে গেছি।আরদ্ধের প্রেমালাপের মাঝে আমি তাকে বারবার অফিশিয়াল এটা ওটা জিজ্ঞেস করে বিরক্ত করেছি।আরদ্ধ কখনো তার জন্যে রাগ করেনি।বরং কখনো দ্বিগুন উৎসাহ নিয়ে আমাকে হেল্প করেছে কখনো বা মুগ্ধ চোখে পলকহীন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থীকেছে।কাউকে এতটা ভালোবাসা যায় সেটা হয়তো আরদ্ধকে না দেখলে আমি কোনদিনই বুঝতে পারতাম না।
.
.
অফিসের কাজ শেষ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে এল প্রায়।মাগরীবের নামটা অফিসেই সেরে ফেললাম।প্রোজেক্টের কাজ শেষ ।সাবমিটও করা হয়েছে টাইম মতো।এখন হালকা পাতলা কাজ গোছানো বাকি।কেবিনে ঢুকতেই ফোনটা বেজে উঠল।বাবা ফোন দিয়েছে।কল রিসিভ করে হ্যালো বলতে না বলতেই ওপাশ থেকে বাবার বজ্র কন্ঠ ভেসে আসল
-কোথায় আছো এখনো তুমি?কামাই করা শিখেছ বলে যা ইচ্ছা তাই করবা!বাবা-মা ,ফ্যামিলি সব ভুলে গেছ নাকি তুমি?
এক নাগারে কথাগুলো বলে ফুসছেন বাবা।আমি বেশ কষ্ট পেলাম বাবার কথা শুনে।তবে অবাক হইনি মোটেও।কারন এটা প্রথম বার না।বছরের পর বছর ধরে হয়ে আসছে এটা।আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম
-বাবা আমার অফিসে একটা খুব ইম্পরট্যান্ট কাজ ছিল।আজকে প্রোজেক্ট এর ডেড লাইন ছিল কাজটা আজকের মধ্যে শেষ করতে না পারলে কোম্পানির অনেক বড় লস হয়ে যেত।আমার বাসায় ফিরতে আরও দেরীহবে। এখনো কিছু কাজ বাকি আছে।
-তোমার যা ইচ্ছা কর।
বলেই বাবা খুট করে আমার মুখের উপর ফোনটা কেটে দিল।
আমি ফোনটা পাশে সরিয়ে রেখে কাজে মন দিলাম।সব কিছু গোছাতে আরও আধঘন্টা সময় লাগল।অফিস থেকে বের হয়ে আমি আরেকদফা অবাক হলাম।আরদ্ধ গাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে আছে গাড়িতে হেলান দিয়ে।আমাকে দেখে একটা ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে সে এগিয়ে আসল আমার দিকে।আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম
-কতক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে আছো তুমি এখানে?
-এইতো ঘন্টা খানেক হল।
হাসি মুখে জানালো আরদ্ধ।আরদ্ধের চোখে মুখে বেশ ক্লান্তির ছাপ কিন্তু ঠোটের হাসিটা একদম নির্মল আর সজীব ।
-আমি জানতাম তুমি ম্যাসেজ করতে ভুলে যাবে তাই আমি আগেই চলে এসেছি।এখন তাড়াতাড়ি চিল আমার প্রচুর ক্ষুধা পেয়েছে।
কথাটা বলেই আরদ্ধ আমার হাত ধরে টেনে গাড়ীতে উঠালো।গাড়ী চলতে লাগল নিজ বেগে।
.
.
সারাদিন কাজ করার কারনে বেশ ক্লান্ত লাগছে।চোখ দুটো জ্বলছে প্রচুর।মাথাটা ধরে এসেছে খুব করে।আরদ্ধ গাড়ীতে বসে আমার হাতে একটা কোল্ড কফি ধরিয়ে দিল।আমার খাওয়া অর্ধেক হতে না হতেই আরদ্ধ আমার হাত থেকে কফিটা কেড়ে নিয়ে নিজ মনে খেতে লাগল।আরদ্ধ সবস্ময় এমনটা করে।ওর জন্যে আমি কখনোই ফুল গ্লাস কফি খেতে পারিনা।
আরদ্ধর খাওয়া শেষ হতেই একটা রেস্টূরেন্টে এসে থামলাম আমরা।আরদ্ধ গাড়ি থেকে নেমেই সোজা দোতালায় চলে গেল।আমি গিয়ে পৌছাতেই জিজ্ঞেস করে বসল
-কি খাবে?
আমি হালকা হেসে ঘার দোলালাম।আরদ্ধ একটা হাসি দিয়ে বলল
-Of Course.
আরদ্ধ অর্ডার দেওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।আমি মুগ্ধ চোখে আরদ্ধের দিকে তাকিয়ে আছি।ছেলেটা এত সুন্দর করে কিভাবে হাসতে পারে!
কন্ট্রাক্ট সাইন করার পর থেকে বেশ কয়েকবার কাজের জন্যে আমাকে আরদ্ধের অফিসে যেতে হয়েছিল।একটেবিলে বসে বেশ কয়েকবার কাজও করেছি।কিন্তু ভুলেও কখনো আমি তাকে ঠোট বাকাতে দেখিনি।যেন হাসি শব্দটার সাথে সে পরিচিত না ।যান্ত্রিকতার আড়লে তার অনুভূতিগুলো যেন একটা বাক্স বন্দী হয়ে আছে।
সাইটের একটা কাজ শেষ করে আরদ্ধের সাথে ফিরছিলাম ।সেদিন আরদ্ধের ড্রাইভার আসেনি।পরে জিজ্ঞেস করে জানতে পারছিলাম সেদিন উনার মেয়ের স্কুলের প্যারেন্টস ডে ছিল।আরদ্ধ জানতে পেরে তাকে লিভ দিয়ে দিয়েছিল ।আরদ্ধের এই ছোট ছোট ব্যাপারগুলো বেশ ভাবাতো আমাকে।আসলেই কি আজকের দিনে এরকম মানুষ পাওয়া যায়!আরদ্ধ চাইলেই মিটীং পিছাতে পারত।কিংবা লিভ নাও দিতে পারত।অথচ সে কোনটাই করেনি।নিজেই ডড়াইভ করে গিয়েছিল শহর বাইরে ৮০ কিলোমিটার দূরে সাইটের কাজে।
.
.
আরদ্ধ স্থির দৃষ্টীতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি অবাক চোখে বললাম
-কি দেখছ?
-তোমাকে।ইনা তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে বেশ স্ট্রেসে আছ।কি হয়েছে বলতো?কোন ঝামেলা?
আরদ্ধের প্রশ্ন শুনে নিমিষেই আমার সকালের আর বাবার সব কথা মনে পরে গেল।মুহুর্তের মধ্যেই একঝাক চিন্তা মাথায় এসে জেকে বসল।আমি আরদ্ধের কথা উড়িয়ে দিয়ে বললাম
– তেমন কিছু না।কাজের চাপ একটু বেশি তাই হয়তো…..
আমার কথা শেষ না হতেই আরদ্ধ বলে উঠল
-ইনা তোমার মনে আছে আমাদের যখন প্রথম কন্ট্রাক্ট সাইন হয়েছিল তোমাদের কোম্পানির প্রেজেন্টেশন তুমি দিয়েছিলে।
-হ্যা মনে আছে।তুমি রোবটের মত বসে আছিলে আমার সামনে।আর সবাই আমার দিকে তাকিয়ে ছিল আর উনি মহাশয় মথা গুজে ছিলেন ফাইলের মধ্যে।তুমি জানো কতটা অকওয়ার্ড লাগছিল আমার সেই মুহুর্তে?
আমার কথা শুনে হালকা হাসল আরদ্ধ ।
-ইনা আমি জানতাম সেদিন তোমার জব প্রি প্রেজেন্টেশন ছিল।তোমার চাকরি হওয়া না হওয়াটা সম্পূর্ন আমার হাতে ছিল।তোমাদের কোম্পানি মার্কেট রেপুটেশন ভালো হলেও ইন্টার্নাল কিছু মানুষের ধোকাবাজির কারনে রিসেন্ট টাইমে কোম্পানি খুব দ্রুত শেয়ার হারাচ্ছিল।এরক্ম ডুবন্ত মোমেন্টে যেকোন কোম্পানিই তাদের সাঠে ডিল করতে রাজী হচ্ছিল না।আমাদের মিটিংটা অনেক আগেই ফিক্স করা হয়েছিল।তাই কথা রাখতেই অনেকটা আমি সেদিনের মিটীং এটেন্ড করেছিলাম।মিটীং শুরু হওয়ার আগেই আমার পি এ জানাল তোমাদের কোম্পানির ম্যানেজার হঠকারিতা করে মিটীং সেটীংস এ চেঞ্জ করেছে।তারা ইচ্ছে করেই মিটিং এ নতুন ক্যান্ডিডেট কে প্রেজেন্ট করেছিল যাতে কোনভাবে সবকিছু সামাল দেওয়া যায়।দুই কোম্পানি শুধু ফরমালিটী মেইন্টেইন করে চলছিলাম।কিন্তু মাঝখানে ঝামেলা করে বসলে তুমি।
-আমি?কীভাবে?
ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলাম আমি।
-বাইরের কারও হাতে কোম্পানির ইন্টারনাল কোন তথ্য কেউ দিবে না।তারা একপ্রকার জানতো যে এই ডিল সাইন হবে না।তাই তারা তাদের প্রি-প্রিপেয়ারড ডিল ফাইল তোমাকে ধরিয়ে দেয় ।যার পেপার ওয়ার্ক ইনিকমপ্লিট ছিল।কিন্তু তুমি সেই ছোট খাটো ইনিফরমেশন আর নিজের কিছু হোমওয়ার্ক এমনভাবে উপস্থাপন করেছিলে বিলিভ মি ইনা এক মুহুর্তের জন্যে ভেবেছিলাম তোমাকে আমার কোম্পানিতে জব অফার করব।কিন্তু পরে নিজেকে সামলে নিলাম।
ইনা আমি আমার কাজ নিয়ে কতটা সিরিয়াস এটা তোমার অজানা না।এরকম একটা ডুবন্ত কোম্পানির সাথে বিজনেস সাইন করার মত রিস্ক আমি কখনোনৈ নিব না।কিন্তু সেবার নিতে বাধ্য হয়েছিলাম জাস্ট বিকজ অফ ইউ।আমার মাথায় শুধু এতটূকই ছিল যযদি আজকে ডিলটা ফাইনাল না হয় তাহলে তোমাদের কোম্পানি আর কখনোই আর দাড়াতে পারবে না।যদিও তাতে আমার বা আমার কোম্পানির কিছুইআসে যায় না ।কিন্তু আমার মন বার বার বলছিল তোমার মত একটা মেয়ের সাথে কাজ করার সুযোগ ছাড়া বোকামি ছাড়া আর কিছু হবে না।তাই আমি ডীল সাইন করার সময় শর্ত রেখেছিলাম আমার সাথে তোমার কোম্পানির একটাই ব্রিজ হবে আর সেটা হবে।তুমি।Cz I had fallen in love with you at the first sight.
.
.
আরদ্ধের শুরুর কথাগুলোর সাথে আমি পরিচিত হলেও শেষ কথাগুলো শুনে বেশ অবাক হলাম আমি ।আরদ্ধ কখনো আমাকে আগে এসব বলে নি।
আমি কিছু জিজ্ঞেস করতে যাব তার আগেই ওয়েটার খাবার দিয়ে গেল।আমি আর কোণ কথা না বলে খাওয়া শুরু করলাম।
বাসায় পঊছাতে রাত দশটা বেজে গেল।গলির মাথায় আমাকে ড্রপ করে গাড়ী থেকে নেমে দাড়াল।আমি বাই বলে চলে আসব আরদ্ধ পেছন থেকে আমার হাত টেনে ধরল
-ইনা তুমি নিজেকে মিথ্যে বলতে পারবে কিন্তু আমাকে না।তোমার মত একটা সুপার এক্টীভ মেয়ের ফ্যাকাশে চেহারার কারন কখনোই কাজ হতে পারে না।আমি জানি তুমি অন্য কিছু নিয়ে ভাবছ।যদি বলতে না চাও আমি তোমাকে ফোর্স করব না।Take your time.Just remember I love you.
আরদ্ধের কথার জবাবে আমি তার ঠোটে গাঢ় করে একটা চুমু খেলাম।আরদ্ধ দুইহাতে শক্ত করে আমার কোমড় জড়ীয়ে নিল।কথা বলার সময় আরদ্ধের ঠোটগুলো বার বার কাপতে দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি।ঠোট ডুবালাম তার ঠোটের মায়ায়।মাত্র কয়েক সেকেন্ড পরেই সে ঠোট ছেড়ে আমার কপালে ঠোট ছোয়ালো।আমি হালকা হেসে বাসার দিকে পা বাড়ালাম।………
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here