#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Nishi_khatun
#পর্ব_২১
রোহান কে নিয়ে নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে খান বাড়িতে।অরিনের পরিবার চাই রোহান তাদের কোম্পানিতে জয়েন কুরুক।আর রোহান চাইছে নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী কোনো প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করতে।এদিকে অরিন বেচারি পড়েছে মহা বিপদে। না পারছে কিছু বলতে না পারছে সইতে।
অরিন রোহান কে ফোন করে বলে,”দেখো তুমি প্রাইভেট কোম্পানি তে যখন জব করবে তখন আমার বাবার কোম্পানি তে জব করলে সমস্যা কোথায়? ”
রোহান অপরপাশ থেকে বলে,”সমস্যা একটাই!আমি চাইনা শ্বশুরের কোম্পানিতে জব করতে।আমি যতোই তোমাদের কোম্পানিতে জব করি না কেনো!তখন আমার পিছনের মানুষেরা কানাঘুষা নানারকম কথা বলবে।যা আমি একদম শুনতে পারবো না।”..
অরিন বলে, ”লোকেদের তো কাজ একটাই পড়ের পিছনে কথা বলা।তাদের কথায় কান না দিলেই তো পারো তুমি।”
রোহান বলে,”দেখো অরিন আমি কষ্ট করে খেটে খাবো। তখন লোকেরা বলবে দেখো দেখো ঐ জামাই এর মুরোদ নেই তাই শ্বশুরের কোম্পানিতে এসে জুটেছে।কষ্ট করে অন্য কোথাও জব করলে শ্বশুরবাড়ি তে মাথা উচুঁ করে যেতে পারবে।দরকার হলে তুমি লেখাপড়া কমপ্লিট করে তোমাদের কোম্পানিতে জয়েন করিও।আর এই চাকুরী নিয়ে প্লিজ আমার সাথে কথা বলতে এসো না।আমি কখনো শ্বশুরের কোম্পানিতে জব করে টাকা নিতে পারবো না!”
অরিন ফোনটা রেখে মুখে হাত দিয়ে বসে চিন্তায় মগ্ন হয়ে যায়।সত্যি কথায় বলে রোহান! আমাদের কোম্পানিতে জয়েন করলে তাকে পেছনে নানারকম কথা শুনতে হবে।সে বাড়ির জামাই হয়ে কেনো এতো অপমান সহ্য করবে।তার থেকে বরং রোহানের রিজিকের ব্যবস্থা আল্লাহ যেখানে করে রেখেছে সেখানে হবে।আমি কেনো রোহান কে জোড় করে বাবার সম্পত্তিতে ভাগিদার না করি।
তারিফা এসে অরিনের পাশে বসে বলে,”রোহানের রিজিকের ব্যবস্থা যেখানে আল্লাহ করেছেন সেখানে ওর চাকুরী হবে।তুমি আমি চিন্তা করে পেশার হাই না করি।”
অরিন তারিফা কে উদ্দেশ্য করে বলে,”আচ্ছা তুমি সব সময় এতো টেনশন ফ্রি থাকাে কি করে বলবে?তোমাকে এতোদিন ধরে দেখছি তুমি তোমার বাড়ির মানুষের সম্পর্কে কিছুই তো বলো না।তুমি মানুষ না কি কোনো পরি?”
তারিফা একটা অট্টহাসি দিয়ে বলে,”আরে পাগল মেয়ে আমি যদি কোনো পরী হতাম তাহলে কোনোদিন ও তোমার এই ফাজিল ভাইয়ে দ্বিতীয় বিয়ের বউ হাতাম না।তবে আমার পরিবার সম্পর্কে আমি কথা বলতে চাই না।”
অরিন বলে,”কেনো ভাবী!প্রতিটা বাবা মায়ের চিন্তা হয় নিজেদের সন্তানদের নিয়ে।সেখানে তোমার বিয়ে হয়েগেছে তারা কি জানে এই কথা?”
তারিফা রেগে অরিনের উদ্দেশ্যে বলে,”আমার পরিবারে এমন কেউ নেই যে আমাকে নিয়ে চিন্তা করবে।বাবা মা দু জন স্বার্থপর। তাই তো আজ আমি একলা এপৃথীবতে।কাউকে দরকার নেই এই মেয়ের!এই ঝরা পাতা একাই নিজের পৃথীবি সৃষ্টি করতে পারে।স্বার্থপর পৃথীবিতে আজ আমিও স্বার্থপর।বলে কান্না করতে করতে রুম ছেড়ে বেড়িয়ে যায়।”
তারিফাকে এমন কান্নারত অবস্থায় দেখে আয়াশ অরিনের রুমে এসে বলে,”অরিন তোর সমস্যা আমার সাথে! আমার সাথে যতো খারাপ ব্যবহার করতে ইচ্ছা করে কর না করবো না।তবে তারিফার সাথে কেনো খারাপ ব্যবহার করিশ?আমার ভুলের জন্য ওর সাথে এমন ব্যবহার করিশ না যাতে বেচারি কে কান্নার সাগরে ভাসতে হয়।অর্ণার সাথে বিয়েটা মাএ একটা দূর্ঘটনা ছিলো তার শাস্তি আর কতো কাল ভোগ করবো”
অরিন আয়াশ কে থামিয়ে দিয়ে বলে,”প্লিজ ভাই এতো লেকচার দিও না!ভাবী কে এমন কিছুই বলি নাই যে সে কষ্ট পাবে।আর আমি এতোটা গাধা নয় যে তোমার পাপের শাস্তি তারিফা ভাবী কে দিবো।”
আয়াশ বলে,”তাহলে তারিফার চোখে পানি কেনে?”
অরিন বলে,”বাব্বাহ বউয়ের জন্য দেখি দরদ উতলে পড়ছে।তার পরিবারের কথা জিজ্ঞাস করায় সে ইমোশনাল হয়ে গেছে।আর এতো নাটকের কিছু নেই ভাই!অর্ণা নামের মেয়েটা কে জোড় করে বিয়ে করে এখন বলছো ওটা একটা দূর্ঘটনা ছিলো!তোমার জীবনে তো দেখছি দূর্ঘটনার অভাব নেই।”
আয়াশ রেগে বলে,”অরিন অর্ণার সাথে এমন কোনো অন্যায় কখনো আমি করি নাই।আফসোস আজ যদি অর্ণা বেঁচে থাকতো তাহলে ওকে সবার সামনে এনে আমিই জিজ্ঞাস করতাম কেনো সে আত্মহত্যা করে আমাকে ওর গুনাগার বানিয়ে দিয়েছে।”
অরিন বলে,”ভাই এতো চিৎকার করলেই সত্যি বদলে যাবে না।সত্যি সব সময় আগুনের মতো উত্তপ্ত।সত্যির জয় হবেই একদিন। তুমি তোমার ভুলের শাস্তি ঠিকি পাবে।”
আয়াশ চিৎকার করে ওঠে অর্ণা বলে।আয়াশের চিৎকারে পুরো বাড়ি কেঁপে ওঠে।অরিন ভয়ে কাঁপতে থাকে।তার ভাইয়ের পুরো চেহারা ভয়ঙ্কর রুপে আলোকিত হয়ে আছে।
তারিফা অরিনের রুমে এসে দেখে আয়াশ ভয়ঙ্কর ভাবে রেগে অরিনের দিকে তাকিয়ে আছে।তারিফা তাড়াতাড়ি অরিনের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,”ছোটবোনের সাথে এমন ব্যবহার কখনো গ্রহণ যোগ্য নয়।”
আয়াশ রাগি কন্ঠে বলে,”আজকের পর যদি ভুল করেও ঐ অর্ণার নাম কেউ আমার সামনে নিয়েছে তো তার সাথে আমার সব সম্পর্ক সেখানে সমাপ্ত হয়ে যাবে।কথাটা যেনো কিছু মানুষের মাথায় ঢুকিয়ে রাখে।”
আয়াশ অরিনের রুম থেকে চলে যায়।তারিফা অরিন কে বলে,”যে মেয়ে এপৃথীবতে নেই তার জন্য জীবিত সম্পর্ক গুলো কেনো নষ্ট করছো?তাছাড়া তাকে তুমি দেখো নাই!চেনো না!তাহলে তার জন্য কেনো এতো প্রতিবাদ করো তুমি।”
অরিন কান্না মাখা কন্ঠে বলে,”অর্ণা নামের মেয়েটা তো একটা মেয়ে।আর আমি একটা মেয়ে হয়ে কি ভাবে মেনে নেই এতোবড় অন্যায়। আমি কোনোদিক ও আমার ভাইকে মাফ করতে পারবো না।”
তারিফা আর কিছু না বলে নিজের রুমে চলে যায়।আয়াশ গোছস করে এসে সোফাসেটের উপর বসে চুল মুছতে থাকে।এমন সময় তারিফা এসে আয়াশের পাশে বসে বলে,”আচ্ছা অরিন তো ছোট মানুষ! ওর সাথে কি এমন ব্যবহার করা উচিৎ হয়েছে আপনার?”
আয়াশ বলে,”একদম অরিনের হয়ে কথা বলতে আসবেন না!আমি এই মূর্হত্বে আর রাগতে চাইছি না।সো প্লিজ এখন আর কোনো কথা বলবেন না।”
তারিফা বুঝতেই পারছে ঝড়ের গতিবেগ তার অনুকূলে নয়।হঠাৎ করে তারিফা টেবিলের উপর একটা বিয়ের কার্ড দেখতে পায়।আয়াশ কে উদ্দেশ্য করে বলে,”আপনাদের কোনো আত্মীয়ার বিয়ে বুঝি?”
আয়াশ বলে,”হ্যাঁ কেনো!”
তারিফা বলে,”স্ব-পরিবারে দাওয়া আছে বুঝি?”
আয়াশ এবারো হ্যা বলে।
তারিফা বলে,”আলহামদুলিল্লাহ্! যাক তাহলে বিয়ের পর প্রথম কোনো বিয়ের দাওয়াত খেতে যাবো।”
আয়াশ তারিফার খুশিতে জল ঢেলে দিয়ে বলে,”এই বিয়েতে বাড়ির কেউ যাবে না।তাই এতো খুশি হবার কিছু নাই।”
মূর্হত্বের মধ্যেই তারিফার মুখের হাসিটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়।তারিফা বলে,”কেনো যাবেন না?”
আয়াশ বলে,”পারিবারিক সমস্যা তোমার এতো জানবার দরকার নাই।নিজের কাজে মন দাও।”
তারিফা আর কিছু না বলে মুখটা গোমরা করে উঠে রুমের বাহিরে চলে যায়।
আয়াশ বসে বসে মুচকি হাসতে থাকে।
আয়াশের হাসির মাঝে গভীর রহস্যের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
আয়াশের হাসির রহস্য আয়াশ নিজেই জানে।
(আজকের পর্বের রিভিউ আশা করবো সবার কাছে থেকে)
‘
‘#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Nishi_khatun
#পর্ব_২২
কথায় আছে মন খারাপের সময় গুলো না কি খুব বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়।তারিফা ভেবেছি হয়তো এই বিয়ের দাওয়াতের উদ্দেশ্য আয়াশদের সব আত্মীয়দের সাথে পরিচিত হতে পারবে। কিন্তু নাহ তার সেই ইচ্ছা আর পূরন হলো না।তারিফা মন খারাপ করে বাড়ির ছাদে চলে আসে।
তারিফা ছাদে এসে অবাক হয়ে যায়।কারণ ছাদর এক কোণায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে নিজের চোখের অশ্রুবিসর্জন দিতে ব্যস্ত অরিন।
চুপচাপ অরিনের পাশে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যাবেলার আকাশের দিকে বলে,”ভোর বেলা পৃথীবির সব অন্ধকার কে দূরে ঠেলে দিয়ে আকাশের বুকে আলোকিত দিনের সূচনা হয়।অন্যদিকে সন্ধ্যাবেলা দিনের আলো গুলোকে কালো আধার গ্রাস করে চারিদিক অন্ধকারে ঢেকে দেয়।”
অরিন চোখের পানি মুছে তারিফা কে উদ্দেশ্য করে বলে,”এসব কথার মানে কি?”
তারিফা আগের মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,”আমাদের জীবনটা ঠিক এমন জানো!কখনো সম্পর্ক গুলো মিষ্টি মধুর মতো থাকে।আবার কিছু সময় কালবৈশাখী ঝড়ের হালকা বাতাসে সেই মিষ্টি সম্পর্ক গুলো গাছের পাতার মতো ঝরে পড়ে বিষাক্ত বিষাদের ছোঁয়াতে।”
অরিনের মাথার মধ্যে তারিফার বলা কোনো কথা ঢুকছিল না!তারপর ও সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে তারিফা কথা গুলো মুগ্ধ হয়ে শুনতে থাকে।
তারিফা আবারো বলে,”তোমার সাথে আয়াশের সম্পর্ক মধুর মতো ছিলো! কিন্তু তোমার ভাইয়ের একটা ভুল সিদ্ধান্ত আজ দুই জনের মাঝে বিভেদের প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছ আছে।তুমি ইচ্ছা করলে তোমার ভাইয়ের ভুলের কথা ভুলে আগের মতো সম্পর্কটা ঠিক করতে পারো কিন্তু ঐ যে একটা বিষাক্ত বাতাসে ছোঁয়াতে তোমার মনটা বিষাদের ভরে আছে।সময় নাও!তবুও সম্পর্কের মানদণ্ডটা ঠিক রেখো।সব কিছু যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিও।সব সময় এক পক্ষের কথা শুনে অপরজন কে দোষী ভাবা উচিৎ নয়।একবার ভেবে দেখো একটা ভুল আয়াশ করেছে।তার জন্য তুমি কতো ভুল করছো।নিজেকে নিজের মতো তৈরি করো।যাতে অযথা চোখের পানির বন্যা বানিও না।
তারিফা চুপচাপ চলে যায়।
অরিন সামনে থাকা ফুল গাছের টবে পা দিয়ে একটা লাথি মেড়ে বলে,”উফফ এই মেয়েটা খুব ভেজালে!কখন যে কি কথা বলে কিছুই বুঝি না।কখনো খুব আপন মনে হয়! তো কখনো শএু মনে হয়।ধেত এর জন্য নিজের কলিজায় ছ্যাকা দিয়ে লাভ নেই।”
এমন সময় অরিনের হাতে থাকা ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে।অরিন ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে রোহান কল দিয়েছে।
অরিন ফোন রিসিভ করতেই রোহান অপরপাশ থেকে বলে ওঠে,”আমার একটা বড় প্রাইভেট কোম্পানিতে জব হয়ে গেছে।এখন আর আমাকে নিয়ে তোমার বাড়ির মানুষের সাথে কথা কাটাকাটি করতে হবে না।”
অরিনের আলহামদুলিল্লাহ্ বলার সময় ঠোঁটের কোণায় হাসির রেখা ফুটে ওঠে।
রোহান বলে তারপর বলো,”তোমার দিনকাল কেমন যাচ্ছে?”
অরিন বলে,”ভাইয়ের সাথে নতুন কিছুই না!তবে এই ভাবী কে আমার কেনো জানি ঠিক হজম হয় না।গোলমেলে লাগে।”
রোহান এবার বলে,”কেনো সে কি করেছে?”
অরিন বলে,”কেমন জানি সব কথা বলে যার আগা মাথা কিচ্ছু বুঝি না।”
রোহান বলে,”আরে বাদ দাও ওর কথা! তুমি ঠিকমত লেখাপড়া করো তাতে হবে।তারিফা কে নিয়ে অযথা চিন্তার কিছু নাই।যে যেমন তাকে তেমন থাকাতে দেওয়া উওম।”
_এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে যায়!
হঠাৎ একদিন সকালে আরিফুল খান বাড়ির সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,”সবাই নিজেদের লাগেজ গুছিয়ে রাখবে! আমরা বিকালে আমাদের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিবো।”
অরিন বলে ওঠে,”বাবা হঠাৎ গ্রামের বাড়িতে কেনো?সেখানে তো দাদীমা ছাড়া আর কেউ থাকে না।আর তাছাড়া ঐ গ্রামের বাড়িতে যেতে মোটেই ইচ্ছা করে না।”
আরিফুল খান বলে,”রোহানের সাথে কথা হয়েছে সেও যাচ্ছে আমাদের সাথে!এরপরেও যদি অরিন তোমার সমস্যা থাকে তাহলে তুমি এখানে থেকে যেতে পারো।”
রোহানের যাবার কথা শোনার পর অরিনের চেহারার মধ্যে খুশির একটা অন্য রকম আভা প্রকাশ পায়।অরিন কি এতো বোকা যে আর গ্রামের বাড়িতে যাওয়াতে নিষেধ করবে।কতোদিন পর সে সুযোগ পাচ্ছে রোহানের সাথে থাকার।এই সুযোগ মোটেও অরিন হাত ছাড়া করতে চাইছে না।নিজের মনের মানুষের সাথে সময় কাটাতে সবাই ভালোবাসে।অরিন এবার চাইছে সবাই যেনো গ্রামের বাড়িতে যায় এটা।
মমতা খান বলে,”হঠাৎ করে এতো ঐ বাড়িতে যাবার কি দরকার? ”
আরিফুল খান বলে,”আমি সবার কাছে এতো কৈফিয়ত দিতে রাজী না।যখন যেতে বলেছি তখন ইচ্ছা হলে যাবে নয়তো থেকে যাবে।এরপর আর কোনো তর্ক চাইনা।”
তারিফা খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,”আব্বাজান আর কেউ না গেলে সমস্যা নেই!আমি আপনার সাথে গ্রামের বাড়িতে যেতে রাজী।”
আয়াশ তারিফার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, “আমাদের গ্রামের বাড়িতে ভুল আছে।তারা তোমার মতো সুন্দরি মেয়েদের ঘাড় মটকে মেরে দেয়।তুমি কি চাইছো তোমার প্রাণটা বেঘোরে হারাতে?”
তারিফা জোরেশোরে বলে ওঠে,”ভুত বলে কিছু হয় না!আমি মোটেই ভুতে ভয় করিনা! তাই আমাকে বাচ্চা ভেবে এতো ভয় দেখানোর দরকার নেই।”
আয়াশ বলে, “তোমার ইচ্ছা! এরপর ওখানে যাবার পর বলিও না কিন্তু যে আসবাব আগে সাবধান কেনো করি নাই তোমাকে। ”
তারিফা বলে,”পরের কথা পড়ে দেখা যাবে!
এখন আপনার গুজবের গল্প বাদ দিন।”
এরপরে আর কি!সবাই নিজের রুমে চলে যায় ড্রেস গুছিয়ে লাগেজে ঢুকাইতে। অরিন নিজের রুমে এসে আলমারির দরজা খুলে চিন্তায় পড়ে যায়।কোন ড্রেস গুলো সে নিয়ে যাবে।আর গ্রামের বাড়িতে তো যে কোনো ড্রেস পড়ে ঘুরাঘুরি করা যায় না।মার্জিত পোশাক পরতে হবে তাকে।কয়েকটা শাড়ি,কিছু স্টাইলিশ ড্রেস আর নরমাল ব্যবহারের জন্য কয়েকটা থ্রিপিস নিয়ে নেয়।সব কিছুই সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি, জুতা,মেকআপ সব কিছু নিয়ে নেয়।
তারিফা রুমে এসে চুপচাপ নিজের অল্প কয়েকটা ড্রেস বাহির করছিল। তখন আয়াশ রুমে ঢুকে বলে,”খান বাড়ির নতুন বউ গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে! তার নিজের স্ট্যাটাস অনুযায়ী ড্রেস প্যাকিং করা উচিৎ! গ্রামের বাড়িতে নতুন বউ প্রথম আসলে সারা গ্রামের মানুষেরা বউ দেখতে আসে।নতুন বউকে যদি নতুন না মনে হয় সম্মান তোমার যাবে না।সম্মান যাবে খান বাড়ির।তাই সব কিছু গোছগাছ করার সময় বাড়ির বউ একথা মাথায় রাখবেন ম্যাডাম বলে তাড়াতাড়ি রুমের বাহিরে বেড়িয়ে যায়।”
আয়াশের কথা গুলো মোটেই ফেলে দেওয়ার মতো নয়।তাই তো আবারো নতুন করে নিজের ড্রেস গুলোর পরিবর্তন করে প্যাকিং করে।
তারিফার তো সেই খুশি খুশি লাগছে।সে বিয়ের দাওয়াত খেতে পারে নাই তাতে কি হয়েছে। তার থেকে বড় কিছুর সন্ধান পেয়েছে। সে আয়াশের গ্রামের বাড়িতে যেতে পারছে এটাই বা কম কোন দিক দিয়ে?গ্রামের বাড়িতে আয়াশের দাদীমার সাথে দেখা হবে।গ্রামের সব সহজ সরল মানুষের সাথে মিশতে পারবে।উফফ সব কিছু ভেবেই তারিফা খুব এক্সাইটেড।
আর অন্যদিকে অরিন খুব এক্সাইটেড কারণ সে রোহানের সাথে কিছু পারসোনাল টাইম স্পেন্ড করতে পারবে।
অবশেষে তারা বিকালে একসাথে রওনা দেয়।আয়াশের বাবা মা একটা গাড়িতে যায়।আর একটা গাড়িতে রোহান, অরিন, আয়াশ, তারিফা চারজন একসাথে যায়।সারাপথ রোহান, তারিফা অরিন বকবক করতে থাকে আয়াশ একটা কথাও বলে না!কারণ অরিন আয়াশের গাড়িতে যেতে নারাজ ছিলো!কিন্তু রোহান এসে অরিন কে বোঝায় যে চারজন একসাথে গেলে বেশি মজা হবে।অযথা আলাদা ভাবে যাবার কোনো মানে হয় না।
তাদের সবার যেতে যেতে অনেক রাত হয়ে যায়।রাত প্রায় সারারাত জার্নি করে ভোর রাতে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়।এতো রাত হবার কারণ আশেপাশে কোনো কিছু কেউ দেখতে পারে না।গ্রামের বাড়িতে আসার পর কাজের মানুষেরা তাদের সবাই কে রুম দেখিয়ে দেয়।তারা নিজেদের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়বে।কারণ সবাই খুব টায়ার্ড। কাজের মানুষেরা বলে বুড়িমা এখন ঘুমাচ্ছে। আপনাদের সাথে কাল সকালে তার একবারে কথা হবে রাতে আর দেখা হবে না।পুরোবাড়ি এতোটা অন্ধকার বলার বাহিরে।বাড়ির চারিধারে কোনো আলোর চিহ্ন নেই।কেমন একটা ভুতুড়ে পরিবেশ।
সবাই এতোটা টায়ার্ড যে কোনো কিছুর খেয়াল ছিলো না।চুপচাপ যে যার রুমের দিকে চলে যায়।
যা হবার কাল সকালে হবে,যা দেখার তারা সকালে দেখবে।
অরিনের এতো ক্লান্তির মাঝেও একটা ভালোলাগা কাজ করছিল। সে আজ বহুদিন পর নিজের স্বামীর সাথে একরুমে এক বিছানাতে ঘুমাতে পারছে।এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কিছুই হতে পারে না।অরিন রোহানের বুকের উপর মাথা রেখে গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়।
তারিফা আর আয়াশের রুমে এক্সট্রা কোনো সোফা বা খাট না থাকাতে দু জনকে এক বিছানাতে ঘুমাতে হচ্ছে। অনেক রাত হয়ে গেছে আর খুব ক্লান্ত। তাই তারা আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ে।
‘
‘
‘
চলবে….
‘
চলবে……