#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Nishi_khatun
#পর্ব_৩১
আমার বয়স যখন ৪/ ৫ হবে তখন আমাদের সোনার সংসার টা একটা হঠাৎ করে আসা ঝড়ে ভেঙ্গে যায়।আমি অনেক ছোট ছিলাম এতোটাও বুঝতাম না।
তবে এটা ঠিকি বুঝতাম আম্মু আব্বু কোনো কারণে রাগারাগি হতো।তাদের মাঝে হঠাৎ করে প্রচুর ঝগড়াফসাদ হতে শুরু করে।এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে যায়।এসবের কোনো সমাধান হবার নাম নিষানা চোখে পরছিল না। আমাদের ছোট সুখের ঘরটা তাসের ঘরে পরিণত হতে থাকে।আমার আব্বু আর আগের মতো আমাকে ভালোবাসতো না এটা বুঝতে পারি।
হঠাৎ একদিন আব্বুর সাথে এক আন্টি আমাদের বাসায় আসে।তারপর আম্মুর সাথে কথা কাটাকাটি করে চলে যায়।এরপর আম্মু সেদিন আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব কান্না করে।আমি রাতে আম্মুর কোলের ভেতর ঘুমিয়ে ছিলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আম্মু আমার পাশে শুয়ে আছে।আমি আম্মু কে অনেক ডাক দিতে থাকি আম্মু আর ঘুম থেকে জেগে ওঠে না।বাসার আশেপাশের সবাইকে ডেকে নিয়ে আসি আম্মু অসুস্থ তাই ভেবে।
এরপর সাবাই এসে আমার আম্মুকে হসপিটালে নিয়ে যায়।এই ছোট পিচ্চি অর্ণা সেদিন সারাদিন হসপিটালের করিডোরে বসে ছিলো।আম্মু সুইসাইড করে মারা যায়।
আমি এতো কিছু বুঝি না আম্মু কে কাছে পাবার জন্য প্রচুর বায়না করতে শুরু করে দেয়।আমার বায়না শোনার মতো কেউ ছিলো না।
আমি যে এ শহরে একদম একা আর ছোট বাচ্চা মেয়ে।সেদিকে কারো কোনো খেয়াল ছিলো না।
আমি সারাদিন না খেয়ে লাশের ঘরের সামনে বসে ছিলাম আম্মুর আশায়।সবাই বলছিল আমার আম্মু আর কোনোদিন ও না কি ঘুম থেকে জাগবে না।
আমাকে আমার পরিবারের অন্য সদস্য দের ঠিকানা দিতে বলে।আম্মুর লাভ ম্যারেজ ছিলো তাই নানুবাড়িতে কেউ মেনে নেই নি।তাই নানু বাড়ি বা দাদু বাড়ির কাউকে চিনতাম না।
এমনকি আম্মুর ফোন থেকে আব্বু কে কল করে খবর দেওয়া হয়।কিন্তু সেদিন তিনিও তার দায়িত্ব থেকে পালিয়ে যায়।সে তার নিজের ছোট মেয়েটার কথাটাও ভুলে যায়।মা ছাড়া একা ছোট মেয়েটা কি করে একা থাকাবে?
আমরা যেখানে থাকতাম সেই এলাকার মানুষেরা আম্মুর লাশের দাফনের ব্যবস্থা করে।বাবাকে দাফনের কাজের জন্য আস্তে বলা হলে সে আসবে না জানিয়ে দেয়।
যখন সবাই মাকে সাদা কাপুড়ে মুড়িয়ে খাটিয়াতে রেখে দেয় তখন আমি আম্মু আম্মু করে চিৎকার করে কান্না করি।কিন্তু এই আমাকে আপন করে বুকে টেনে নেওয়ার মতো মানুষের বড্ড বেশি অভাব ছিলো সেদিন।
সবাই ভয় পাচ্ছিল যদি আমাকে তারা আজ আশ্রয় দেয় আর আমি তাদের ঘাড়ে সারাজীবনের জন্য চেপে যায়।তাই কেউ আমাকে ভুল করেও তাদের সাথে বাড়িতে নেয় নি।
মা কে দাফনের জন্য নিয়ে চলে যায়।সেদিন এই পিচ্চিটা এটা বুঝে যায় এপৃথীবতে মা ছাড়া সব অন্ধকার।
মা যতোই খারাপ হোক না কেনো মা সব সময় মা হয়।
মায়ের কোনো জাত হয় না।সবাই মা হয় তবে শুধু নিজের সন্তানের মা। পরের সন্তানের প্রতি সব মা দের জন্য শুধু সহানুভূতি কাজ করে মায়ের মমতা নয়।
মায়ের মমতা শুধু নিজের গর্ভের সন্তানের জন্য।
আম্মু চলে যাবার পর ঐ পিচ্চি মেয়েটা একা সেই বাড়িতে থাকতে শুরু করে।কেউ নেই কোথাও!
না আছ। আশেপাশে মায়ের গন্ধ না আছে মায়ের ছায়া।আশেপাশে থেকে আন্টিরা এসে খাবার দিয়ে যেতো।তাদের।দেওয়া খাবার যে পিচ্চির গলা দিয়ে নামতো না তারা তা বুঝতো না।
আশেপাশের মানুষেরা ভাবে আমি বাড়িতে একা আছি সেই খবর পেলে হয়তো আমার বাবা আমাকে তার কাছে নিতে ছুটে আসবে।আফসোস সেদিন বাবা তার মেয়ের কথা ভুলে নতুন বউ নিয়ে সংসারে ব্যস্ত থাকে।
তার যে একটা মেয়ে আছে সে মেয়েটা যে এতিম হয়ে গেছে সেদিকে তার কোনো খেয়াল ছিলো না।
ছোট বাচ্চা মেয়ে কি একা একা থাকতে পারে?
নাহ আমিও পারি নাই!সারাদিন আম্মু আম্মু করে কান্না করতাম। বাসায় কাজের মহিলা ছিলো তারা এই সুযোগের সৎ ব্যবহার করে।
আম্মুর সব দামি শাড়ি গহনা চুরি করে নিয়ে যায়।
তারা অযথা আমাকে কেনো লালনপালন করবে?
কেউ তো আমার দায়িত্ব নিবে না।
বাবা যখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তখন আমার দুনিয়াটাও বদলে গেছে।
কাজের মানুষেরা আমাদের বাড়ির কাজ ছেড়ে চলে যায়।
এভাবে আশেপাশের মানুষের সাহায্যে আমার বাড়িতে বেশ কিছুদিন কেটে যাই।
আম্মুর বিরহ-বেদনা সহ্য করতে না পেরে পিচ্চি আমিটা অসুস্থ হয়ে পড়ি।
হঠাৎ করে একদিন এক লোক আমাদের বাসায় আসে।সে এসে দেখে আমি জ্বরের ঘোরে আম্মু আম্মু করে কান্না করছি।সে তাড়াতাড়ি আমাকে হসপিটালে নিয়ে যায়।হসপিটালে একটু সুস্থ হবার পর সে আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব কান্না করে।সে কেনো এভাবে কান্না করছে জানতে চাইলে আমাকে আরো জোড়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,”মা রে আমি তোর হতোভাগা মামা!”
আমি আম্মুর কাছে মামার অনেক গল্প শুনেছি কিন্তু তাকে কখনো দেখি নাই।তাই তাকে প্রথম দেখে আমিও মায়ের গন্ধ খুঁজতে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়।
মামা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”মা রে আমার বোনটা যে এই দুনিয়াতে নেই সে কথা জানতাম না।যদি আগে জানতাম তাহলে এই পিচ্চি জানটুস কে কখনো এভাবে কষ্টের মাঝে থাকতে দিতাম না।রাগ তোর মা’র উপরে ছিলো তুই তো কোনো দোষ করিশ নাই।
এখন তোর ঐ শয়তান বাপ টাও তোকে একা করে দিলো।
আগেই যানতাম ঐ ছেলেটা কখনো আমার বোনের যোগ্য ছিলো না।আমার বোনের মৃত্যুর জন্য শয়তানটা দায়ী। বোনটাকে তো খেয়েছে। কিন্তু নিজের রক্তটাকেও বোঝা মনে করে ফেলে দিয়েছে।তোর আর ঐ বাপের কাছে ফিরে যেতে হবে না।তোকে আমি আমার সাথে করে নিয়ে যাবো।তুই আজ থেকে আমার বোনের আমানত হয়ে থাকবি আমার কাছে।
ভুলে যা তোর ঐ বাপ নামের মানুষটাকে।যে নিজের মেয়ের কষ্টের দিন পাশে থাকে না।তার মতো বাপের দরকার নেই তোর।”
হসপিটালে থেকে ছাড় দেওয়ার পর মামা আমাকে আমারদের বাড়িতে সাথে করে নিয়ে আনে।মামা বাড়িতে এসে আমার সব কিছু গোছগাছ প্যাকিং করে। আমাকে নিয়ে তার নানু বাড়িতে নিয়ে যাবে।
একা একা তো এই স্বার্থপর পৃথীবিতে বেঁচে থাকতে পারবো না।
আমি আমাদের ছোট বাড়ির চারপাশে ঘুরে দেখছিলাম। আম্মু আব্বুর সাথে কাটানো কতো স্মৃতিমাখা সময় এখানে রয়েছে।আমার জন্ম থেকে শুরু করে আম্মুর শেষ বিদায়। বাড়িটাতে আম্মুর গায়ের গন্ধ এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।আমি যেতে চাই না এসব কিছু ছেড়ে।এটা আমার মায়ের কষ্টে তৈরি করা ছোট একটা বাড়ি।
তার বাবার বাড়ি শ্বশুর বাড়ির মানুষেরা যখন তাদের বিয়েটা মেনে নেয় না।তখন তারা সবার থেকে দূরে এসে এই ছোট বাড়িটা তৈরি করে।কিন্তু বাবার পরোকিয়া নামের একটা ভুল সেই সুখের ঘরে আগুন জ্বলিয়ে দেয়। আর আমার পুরো জীবনটা সেই আগুনে ঝলসে যেতে থাকে।
মামা আমাকে কোলে করে বাড়ির গেটে তালা দিয়ে দেয়।আমি মামার কোলে আম্মু আম্মু করে অনেক কান্না করছিলাম।আসলে এই পৃথীবিতে ছোট বাচ্চাদের মা ছাড়া নিশ্বাস নেওয়াটাও খুব কষ্টের।
আমি তো যানতাম না এবাড়ি ছেড়ে যাবার পর আমার জীবনের গল্পটা ঝরা পাতার মতো হবে।
এই দুনিয়াতে যার মা নেই।সেই বোঝে মায়ের কষ্ট কেমন হৃদয় ছোঁয়া।
মামার সাথে তার বাড়িতে যাবার জন্য রওনা দেয়।
মা বাবার উপর অভিমান করে পৃথীবি ছেড়ে চলে যায়।মা খুব স্বার্থপরের মতো কাজ করে।স্বামীর ভুলের জন্য নিজে আত্মহনন করে আর মেয়েটার কথা ভুলে যায়।তার ছোট মেয়েটা কি ভাবে বড় হবে সে চিন্তা সে করে নাই।যদি করতো তাহলে পৃথীবিতে বেঁচে থেকে লড়াই করে আমাকে বড় করতো এমন এতিম রাস্তার মেয়ের ট্যাগ লাগতে দিতো না।
এরপর অর্ণা তার কথা থামিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে দু হাত দিয়ে নিজের চোখের পানি মুছে নেয়।
মায়ের কথা বলার সময় মায়ের প্রতি একরাশ অভিমান কাজ করছিল অর্ণার।অর্ণার বুকের মাঝে মনে হচ্ছে কেউ ছুড়ি দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে রক্ত ঝরিয়ে যাচ্ছে।
সেখান উপস্থিত সব মানুষের চোখেরজল ছলছল করছে।
আয়াশের বুকটা অজানা এক যন্ত্রণায় ছেয়ে যাচ্ছে। এতোটা কষ্ট নিয়ে কিভাবে এতো হাসিখুশি থাকতো মেয়েটা!সত্যি এতোটা কষ্ট সহ্য করে সব অপমান হাসি মুখে সহ্য করার জন্য একটা বড় হৃদয়ে অধিকারী হতে হয়।
আয়াজের চোখ দিয়ে অঝরে পানি পড়ছে।
তার বুকের মাঝেও ব্যাথা অনুভব করতে শুরু করে। আয়াজ
জানে বাবা মা ছাড়া বড় হওয়া কতোটা কষ্টের।
টাকা পয়সা থাকলেও বাবা মার ভালোবাসা কোথায় পাবে।
অর্ণা একটু পানি পান করে নিজের চোখেরজল শাড়ির আচল দিয়ে মুছে আবারো বলতে শুরু করে।
‘#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Nishi_khatun
#পর্ব_৩২
মামার সাথে নানু বাড়িতে আসার পর মামী আমাকে প্রথমেই অপমান করতে শুরু করে দেয়।
আমি এতোটা ছোট আর অবুঝ ছিলাম মামীর কথা গুলো যে অপমান ছিলো তা বুঝতেই পারি নাই।
মামার ছোট একটা সংসার। তার ও একটা মেয়ে ছিলো আমার সমবয়সী হবে।মামীর তখন আবারো বাবু হবে।
মামা মামী কে বলে,”আমার বোনের শেষ চিহ্ন কে আমি কষ্ট করে হলেও বড় করতে চাই।”
মামী মা তখন হয়তো আমার চেহারার মায়াতে পড়ে বলে,”আচ্ছা সমস্যা নেই থাকবে আমারদের সাথে তবে আমি ওকে শিক্ষিত করতে দিবো কিন্তু আমার সব ফরমাশ পূরণ করার পর।”
মামা বুঝতে পারে নিজের ঘরে অশান্তি করে আমাকে সে বড় করতে পারবে না।তাই সেদিন মামীর সব কথা নিরবে মেনে নেয়।
এইভাবে আমি বড় হতে থাকি মামার বাড়িতে।মামীর প্রতিদিনের তিরস্কার শুনতে শুনতে আমি তিক্ত হয়ে যাই।তবুও কথা বলার সাহস ছিলো না।কারণ আমার বাবা যা করেছে তার ফল তো আমাকে ভোগ করতেই হবে।
রাইসা ছোট থেকে একটু বেশি দুষ্টু ছিলো!
ও কোনো ভুল কাজ করলেই দোষটা আমার ঘাড়ে-চাপায় দিতো।মামী নিজের মেয়ের কথা মতো আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতো।
কখনো মারতো কখনো গালি দিতো।
তবে দিন শেষে আমার একটাই শান্তি ছিলো মামা রাতে বাড়িতে এসে আমার কপালে চুমা দিয়ে চুলে হাত বুলিয়ে দিতে থাকতো আর আমি ঘুমের দেশে পাড়ি দিতাম।
এভাবে যখন হাই স্কুলে উঠি তখন থেকে আমার সুমুর সাথে বন্ধুত্ব। মেয়েটা আর সবার থেকে আলাদাভাবে দেখতো আমাকে।আমার সাথে সব সময় ছায়ার মতো থাকতো।
কেউ আমাকে অপমান করলে তার সাথে সুমু ঝগড়া করতো।আমি যে সুমু কে কতোবার বারণ করেছি তা বলার বাহিরে।
এরপর জীবনের গল্পটা বদলে যেতে থাকে।
সময়ের সাথে সাথে আমরা সবাই বড় হতে থাকি।
আমি বুঝতেই পারি নাই যে আমি বড় হয়ে যাচ্ছে। আমার সৌন্দর্যের জন্য আমার আশেপাশের মানুষের জীবনটা বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছিল।
রাইসা সুমু অনেক সুন্দরি তবে আমি ওদের সাথে থাকলে সবাই আমাকে বেশি প্রাধান্য দিতো।
তাতে ওদের খুব খারাপ লাগতো তা আমি বুঝতে পারতাম।
মামী মাও বুঝতে পারে আমি এভাবে চলাফেরা করলে সে তার দুই কন্যার কোনোদিন ও বিয়ে দিতে পারবে না।
তাই আমি কলেজে ওঠার সাথে সাথে সে আমাকে বোরখা কিনে দেয়।আমি যেদিক প্রথম বোরখা পড়ি সেদিক মনে মনে যে মামী কে কতো ধন্যবাদ দিয়েছি তা আমার মন আর আল্লাহ জানে।কারণ বোরখার আড়ালে আমার সৌন্দর্য ঢাকা থাকতো।কেউ খারাপ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাত না।
আমি পর্দার সাথে চলাফেরা করতে থাকি।তারপর ও দেখতাম কলেজে স্যার ম্যাডামরা আমাকে বেশি পছন্দ করতো।এমন কি সুমু বা রাইসা যাদের পছন্দ করতো তারা এসে আামাকে প্রপোজ করতো।এটা যে আমার কাল হবে তা সেদিন বুঝতে পারি নাই।সেদিন ওরা দুজনে বলেছিল সমস্যা নেই এমন হতেই পারে।
রাইসা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতো ঠিক আছে তবে আমাকে ভালোবাসতো হয়তো কখনো প্রকাশ করতে পারতো না।তবে রাইমা সবার সামনে আমার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতো।
এরপর ভার্সিটি লাইফের শুরু হয় আমাদের এখানে এসে গন্ডগোল বাধে।হঠাৎ করে সুমু কিছুদিনের জন্য উধাও হয়ে যায়।
যখন ফিরে আসে তখন ওর থেকে জানতে চাইলে বলে,”ওর বাবার বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। সেখানে ওকে নিয়ে একটু সমস্যার সৃষ্টি হয়।”
জানতে চাইলে বলে,”ওহ একজন কে পছন্দ করে আর ওর বিয়ে আরেকজনের সাথে ঠিক হয়েছিল। সেসব নিয়ে একটু ড্রামার সৃষ্টি হয়।তাই সে বাড়ির ছেলের সাথে কোনোদিন ও ওর বিয়ে হবে না।”
এরপর সুমু আগের থেকে অনেকটা বদলে যায়।আমিও বোকার মতো ভাবি হয়তো বড়লোকের মেয়ের সময়ের সাথে নিজেকে একটু বদলে নিচ্ছে। কিন্তু কে জানতো সুমু নিজের সাথে সাথে আমার জীবটা নষ্ট করার প্লানিং করছিল।
হঠাৎ একদিন কলেজের অনুষ্ঠানের শেষে ওদের নতুন ড্রাইভারের সাথে দেখা।
এতো সুন্দর স্মার্ট ছেলেকে দেখে তো আমার প্রথমে ড্রাইভার বলে মনে হচ্ছিল না।কিন্তু বলা তো যায় না হয়তো কোনে সমস্যার জন্য বেচারা জবটা করছিল। এভাবে দিনগুলো কাটছিল হঠাৎ করে বাড়িতে রাইসার বিয়ের জন্য পাগলামি শুরু করে দেয়।
ওর পাগলামি গুলো মামা এক প্রকার বাধ্য হয়ে মেনে নেয়।
এরপর বিয়ের আয়োজন করা হয়।কিন্তু বিয়ের দিন আরো ভেজালের সৃষ্টি হয়।অবশেষে আমার আয়াশের সাথে বিয়ে হয়।
সেদিন ইচ্ছা করলে সুমাইয়া আমাদের বিয়েটা আটকে দিতে পারতো তবে সেই কাজটা ও করে নাই।চুপচাপ আমার জীবনের তামাশা দেখতে থাকে।
এরপর যখন আমাকে সাথে করে আয়াশ রওনা দেয় তখন সে আমাকে সব সত্যি বলে।সে কোনো ড্রাইভার নয়।
আমি অবাক হয়ে জানতে চাই, “তাহলে আপনি কে?”
আয়াশ উওরে বলে, “আমি সুমাইয়ার বাবার বন্ধুর ছেলে।”
আমি আবারো প্রশ্ন করি, ‘”তাহলে ড্রাইভার সেজে এতোদিন থাকার মানে কি?”
আয়াশ বলে,”সুমুর সাথে আমার বিয়ে হবার কথা ছিলো কিন্তু একটু নামের কনফিউশনে সুমু আমার চাচাত ভাইকে ভালোবেসে ফেলে।আমার ভাইটাও সুমুকে খুব পছন্দ করে।কিন্তু সুমুর বাবা আমার ভাইয়ের সাথে তার মেয়ের বিয়ে দিবে না বলে বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়ে চলে আসে।”
আমি সুমুদের বাড়িতে আসলে সুমু বলে,”আমি বাবাকে আপনার ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য রাজি করাবো। তবে আমার একটা শর্ত আছে।আমাদের বাড়িতে আপনার বেশ কিছুদিন থাকতে হবে তাও আমারদের বাড়ির ড্রাইভার হয়ে।আপনার বোন যে আমাকে অপমান করেছিল এটা তার শোধ মনে করেন।”
আয়াশ নিজের ছোট ভাইয়ের খুশির জন্য সুমুর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়।
আসলে যখন আয়াশ দের বাড়িতে সুমুকে নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল তখন অরিন সুমু কে অপমান করে বলে,”তুমি সুন্দর হতে পারো, বড়লোক হতে পারো!তবে তুমি আমার ভাইয়ের বউ হবার যোগ্য নাহ।আমার ভাইয়ের জন্য তো আমি একদম সাধারণ মেয়ে নিয়ে আসবো।যার সৌন্দর্য একদম সাধারণ থাকবে।আর তুমি তো কুটনির বস্তা। এর সাথে ওর কথার প্যাচ লাগিয়ে দাও।তোমাকে তো কোনোদিন ও ভাবী করবো না।দরকার হয় তোমার থেকে বেশি বড়লোকের মেয়ে আসবে ভাবী হয়ে তাও তুমি না।”
সুমুর সেদিন অরিনের কথা গুলো কাটা ঘায়ে নুনেরছিটের মতো লেগেছিল।তার শোধ নিতে সবটা প্লানিং করে আমার সাথে আয়াশের বিয়ে দেয়।
এসবে রাইসা দায়ী ছিলো না তবে তাকেও সুমু বাধ্য করে।তার প্লানিং এ অংশ নিতে।
সুমু চেয়েছিল আমার মতো গরীব মেয়ে এই বাড়ির বউ হয়ে আসুক। তারপর দেখবে অরিনের উচুঁ নাক থাকে কি করে।
কিন্তু আফসোস মাঝপথে আয়াশ আমার থেকে কিছুদিনের সময় চায়।আর আমি হোস্টেলে থাকি।তবে এখানে গল্পটা শেষ হয় নি।গল্পের কাহিনী এখানে এসে নতুন মোড় নেই।আমাদের সুখের মাঝে কেউ নজর দিয়ে বসে।কিন্তু কেনো? সে কি সুমু ছিলো না অন্য কেউ?
আয়াশ চলে যাবার আগে আমাকে বলে,”আমার যদি আসতে দেড়ি হয় তাহলে কষ্ট পাবে না।আমি তোমাকে নিতে ফিরে আসবো।লোকের কথায় কান দিবে না।এতোদিন অপমান সহ্য করেছো। আর কিছুদিন পর না হয় তোমার সব কষ্টের সমাপ্তি হবে।”
এভাবে দিন গুলো ভালোই কেটে যাচ্ছিল।আমি লেখাপড়া কমপ্লিট করে নেই।এরপর চুপচাপ বসে আয়াশের জন্য দিন গুনতে থাকি।
তবে হঠাৎ করে একদিন কিছু কাজে আমি বাহিরে যায়।
সেখান থেকে ফিরে আসতে আমার বেশ রাত হয়ে যায়।
বাসায় ফিরে এসে আমি যা দেখি তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না।
‘
‘
‘
চলবে…..
‘
‘
চলবে….