#ঝিলের_ওপারে_পদ্মফুল
তন্বী ইসলাম -১৪
শ্রাবণের আবেশি কথাগুলো পদ্ম’র হৃদয়ে নাড়া দিলো। সে অসহায়চোখে তাকালো শ্রাবণের দিকে। ঠোঁট কাঁপছে তার, যেনো কিছু বলতে চাইছে। শ্রাবণ অপলকভাবে তাকিয়ে আছে পদ্ম’র দিকে। এ যে তার পদ্মফুল, একান্তই তার। শ্রাবণ বললো
“এখনো অভিমান করে আছিস পদ্মফুল?
“হুম। ছোট্র করে উত্তর দিলো পদ্ম। পদ্ম’র উত্তর শুনে হাসলো শ্রাবণ। বললো
“আমার পদ্মফুল আমার উপর অভিমান করেছে, ভাবতেও ভালো লাগছে।
পদ্ম অবাক হলো৷ বিস্ময়ে বললো
“অভিমান করলে কারো ভালো লাগে নাকি!
“অভিমান কি মানুষ সবার উপর করে পাগলি। যার প্রতি ভালোবাসা থাকে, মানুষ তার সাথেই অভিমান করে৷
পদ্ম আকাশপানে তাকালো। ভাবলো, ‘সত্যিই তাই। অভিমানটা সবার উপর আসে না। অভিমান করার জন্যও বিশেষ মানুষ প্রয়োজন’
ভাইয়ের বাড়ি থেকে ফিরে পদ্ম’কে ঘরে না পেয়ে শাপলাকে ডাকলো আলেয়া। শাপলা বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে ফলো করা লোকটাকে নিয়ে ভাবছিলো। এমন সময় মায়ের ডাক পেয়ে হুশ হলো তার।
“শাপলা, পদ্ম কই গেছে?
শাপলার মনে হলো পদ্ম তো শ্রাবণ ভাইয়ের সাথে বসে কথা বলছে। মা যদি দেখে শ্রাবণ ভাইয়ের সাথে একান্তে বসে পদ্ম কথা বলছে তাহলে বেশ বকাঝকা করবেন উনি। শাপলা হুড়মুড় করে বিছানা ছাড়লো। মাকে উদ্দেশ্য করে বললো
“ওরে দিয়া কি করবা আম্মা?
“কিছু করমু না। ঘরে নাই তাই জিগাইলাম।
“ওহ! আমি ডাকতাছি ওরে। দেখি ঝিলের কাছে আছে নাকি।
শাপলা ঘর থেকে বেরোলো পদ্ম’কে ডাকতে। এমন সময় ওর চোখ গেলো শ্রাবণ ভাইয়ের ঘরের দিকে। ওখানে একটা ছেলে একভাবে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি শাপলার দিকে। ছেলেটাকে চিনতে একটুও ভুল হলো না শাপলার। এটা’তো সেই ছেলে, যে সেদিন ওর সাথে অটোতে করে গিয়েছিলো। আজ সকালেও এই ছেলেকেই সে ঝিলের ওপাশের বাড়িটার পেছন দিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলো। শাপলার মনে খটকা লাগলো, এ ছেলে এখানে কি করছে! কখনো কোনোদিন তো এ বাড়ির দিকে এ ছেলেকে দেখা যায় নি। শাপলা লম্বা লম্বা পা ফেলে ছুটলো ঝিলের দিকে। শ্রাবণের ভাই আর পদ্ম এখনো কথা’ই বলে যাচ্ছে। শাপলার রাগ লাগলো, মেয়েটা যানে মা এইসব পছন্দ করেনা, তাও এতো এতো কিসের কথা বলে এরা৷ মায়ের কথা চিন্তা করে হলেও তো এদের একটু নিজেদের সংযত করা উচিৎ।
শাপলা পদ্ম’কে ডাকতে যাবে তার আগেই আশিকের গলা শোনা গেলো। সে হুড়মুড় করে দৌড়ে এসে শ্রাবণকে উদ্দেশ্য করে বললো
“শ্রাবণ ভাই, আপনেরে কেডায় জানি খোঁজতাছে।
শ্রাবণ চমকে তাকালো পেছনে। শাপলা আর আশিক দুজনকে একসাথে দেখে অবাক হলো। শাপলাকে উদ্দেশ্য করে বলেই ফেললো
“তুই এই আশিকের সাথে কি করছিস শাপলা?
“আমি’তো ওর সাথে কিছু করি নাই। শুধু পদ্ম’রেই ডাকতে আসছি আমি।
আশিক হেসে বললো
“পদ্ম’ এইখানেই থাকুক। একটু গল্প করি। আপনে যান শ্রাবণ ভাই।
শ্রাবণ রেগে বললো
“কে আসছে?
“আপনের কোনো বন্ধু বোধহয়। ঘটকও হইতে পারে, আমি জানি না।
শ্রাবণ পদ্ম’র দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বললো
“শাপলার সাথে ঘরে যা পদ্মফুল।
“ও এখানে থাকুক না শ্রাবণ ভাই, একটু গল্পই তো করমু বলছি।
শ্রাবণ কপালে ভাজ এনে রাগী চোখে তাকালো আশিকের দিকে। ওর তাকানো দেখে আশিক নিচের দিকে চোখ ফিরিয়ে বললো
“আজকাল ভালো কথার দাম নাই। আচ্ছা, আমি গেলাম। আপনেও আসেন, লোকটা সেই কখন থেকে আপনেরে খোঁজতাছে।
আশিক চলে যাবার পর শ্রাবণ পদ্ম’র হাত ধরে টেনে দাঁড় করালো। এরপর শাপলার দিকে তাকিয়ে মৃদু গলায় বললো
“তোরা ঘরে যা।
প্রায় অনেক্ষন যাবৎ ঘরে বসে সে ছেলেটার সাথে আলাপ করছে শ্রাবণ ভাই। শাপলার মন কেমন যেনো উশখুশ করছে। হঠাৎ এই ছেলেটা এ বাড়ি আসলো কেন, আর শ্রাবণ ভাইয়ের সাথেই তার এতো কিসের কথা? আগে তো কখনো শ্রাবণ ভাইয়ের সাথে এ ছেলেকে দেখে নি সে। শাপলা চাইছে এইসব উদ্ভট চিন্তা মাথা থেকে ঝাড়তে। ওরা যা খুশি তাই করুক, তাতে তার এতো চিন্তা করার কি আছে। কিন্তু শত চেষ্টা করেও চিন্তা মাথা থেকে যাচ্ছে না। উলটো ঝাঁকে ঝাঁকে দুশ্চিন্তা এসে মাথায় ভর করছে। শাপলার হাতে থাকা ফোনটা হঠাৎ কেঁপে উঠলো, ফোনের দিকে তাকিয়েই মৃদু হাসলো সে। দ্বিতীয় বার কোনো চিন্তা ভাবনা না করে ফোনটা রিসিভ করে খুবই সন্তপর্ণে ঝিলের দিকে এগিয়ে গেলো সে।
বিকেলের পরপরই হাতের কাজকর্ম সেড়ে আলেয়ার সাথে কথা বলার জন্য এগিয়ে এলো জুবেদা। রান্নাবান্নার কাজ আসমার উপর ন্যস্ত করেই তিনি এসেছেন। ছেলের বউ আসার পর রান্নার কাজকর্ম করা তিনি প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। আসমাও নিজের মতো করে সংসারের সব কাজ করছে, বেশ আনন্দেই আছে তারা। শাশুড়ির ব্যাপারে তার কোনো অভিযোগ নেই, নেই ছেলের বউ এর প্রতি জুবেদারও তেমন কোনো অভিযোগ। আলেয়া কাঁচা তরকারি কেটে ধুয়ে দিচ্ছেন, আর ওদিকে লাকড়ির আগুনে রান্না করছে শাপলা। রান্নাবান্না কিংবা ঘড়ের কাজের প্রতি পদ্ম’র তেমন রুচি নেই। মা আর বড় বোন থাকতে সে কেন রান্না করবে। যদিও এতে শাপলার কোনো অভিযোগ নেই, মাঝেমধ্যে দুষ্টুমি করে ছোটবোনকে একটু আধটু বলে এই যা। কিন্তু আলেয়ার কাছে ব্যাপারটা ভালো লাগে না। মেয়ে মানুষ হয়ে জন্মানো মানে, ঘরের কাজ করাই লাগবে, আজ তার বোন আছে, দুদিন পর যখন বোনের বিয়ে হয়ে যাবে তখন কোথায় পালাবে? আর পালালেও বিয়ে দেবার পর শশুর বাড়ি গিয়ে কাজে ফাঁকি দেওয়ার কোনো চান্সই নেই। এ নিয়ে মেয়ের প্রতি উনার অভিযোগের কোনো শেষ নেই। এখনও তিনি কাজ করছেন আর পদ্ম’র প্রতি রাগ ঝাড়ছেন। মায়ের এমন রাগান্বিত কথায় শাপলার বড্ড হাসিই পাচ্ছে। ওদিকে মুখ ভাড় করে ঘরে গিয়ে বসে আছে পদ্ম।
বালিশে হেলান দিয়ে বসে একা একাই বিড়বিড় করে মায়ের প্রতি রাগ ঝাড়ছে সে। বলছে
“এখন আমারে এমনে বকো তো, দেখবা বিয়ার পরে তোমাগো বাড়ি আর আসমুই না। তখন কারে বকবা দেইখা নিমু। কথাটা ভেবেই হাসলো পদ্ম। কারণ তার বিয়ে তো অন্য কোথাও নয়, এ বাড়িতেই হবে। ঘুম থেকে উঠার পর থেকে ঘুমোতে যাবার আগ পর্যন্ত মায়ের সাথে তার দেখা হবেই। পদ্ম আবারও হাসলো। নিজের এতো সুন্দর ভাগ্যের কথা ভাবতেই মনের মধ্যে খুশি অনুভব করলো সে।
আলেয়া কে কাজ করতে দেখে ডাকলো জুবেদা।
“আলেয়া, তোর হাতের কাম শেষ হইলে একটু আমার সাথে আয় তো। কথা আছে।
আলেয়া হাতের কাজ রেখে আচলে মুখ মুছতে মুছতে উঠে দাঁড়াবেন। বিস্ময়ে বললেন
“কি কথা আপা?
“আয় না আমার সাথে, আইলেই তো জানতে পারবি।।
আলেয়া শাপলার দিকে তাকালেন। বললেন
“ঠিকমতো জাল দিস মা, তরকারি ধুইয়া রাইখা গেলাম। ভাতটা হইয়া গেলে বসাইয়া দিস। দেখি তোর চাচী আমার কেন ডাকতাছে।
মায়ের কথায় কোনো কথা বললো না শাপলা, শুধু হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়ালো।
জুবেদাকে নিয়ে ঘরে চলে গেলো আলেয়া। বিছানার এক মাথার উনাকে নিয়ে বসে বললো
“কি কইবেন আপা? কোনো জরুরি কথা?
জুবেদা একবার দরজা দিয়ে বাইরে উঁকি দিলেন, দেখলেন আশেপাশে কেউ আছে কিনা কিংবা শাপলা ঘরে ঢুকছে কিনা। আশেপাশে তেমন কেউ নেই। শুধু ওপাশের বিছানার উপর শুয়ে আছে পদ্ম।
জুবেদা আলেয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন
“একটু পান দে তো।
আলেয়া পানের বাটা’টা হাতে নিয়ে সেখান থেকে একটা পান নিয়ে ছিড়ে অর্ধেক টা পান সুপারি আর চুনসহ জুবেদার হাতে দিলেন। পানটুকু মুখে পুড়ে তিনি বললেন
“জর্দ্দা নাই?
“আছে।
“দে একটু।
আলেয়া আরেকটা ছোট পট থেকে জর্দ্দা নিয়ে জুবেদার হাতে দিয়ে পানের বাটা’টা দূরে সরিয়ে রাখলেন।
পান চিবোতে চিবোতে জুবেদা ধীরেসুস্থে বললেন
“মাইয়ার বিয়া দিবি না?
“শাপলার কথা কন? অবাক হয়ে বললেন আলেয়া।
“হো।
আলেয়া কিছুক্ষণ বসে রইলেন।। এরপর বললেন
“যদিও মাইয়ার অহনো বিয়ার বয়স হয় নাই, তবুও যদি ভালা কোনো পাত্রের সন্ধ্যান পাই, আর সবকিছু যদি মিলে তাইলে মাইয়ারে দিয়া দিমু।
জুবেদা হেসে বললেন
“একখান ভালা ছেলের খোঁজ পাইছি। ছেলে লেখাপড়াও করতাছে আবার চাকরিও করতাছে। বাড়িতেও অনেক জমাজমি আছে। তোর শাপলারে খুব পছন্দ করছে। যদি তুই রাজি থাকোস আমি আলাপ করতে পারি।
আলেয়া বিস্ময়ে বললেন
“ছেলেডা কেডা?
জুবেদা হেসে বললেন
“তুই চিনোস ছেলেরে। একেবারে স্বর্ণের টুকরা। দেখতেও নায়কের মতন।
“কোন গ্রামের? নাম কি ছেলের?
“আমাগো গ্রামেরই ছেলে। ওইযে ওই পাড়ার ইব্রাহিম ভাই আছে না?
“কোনো ইব্রাহিম ভাই? আমাগো ঝিলের পাড়ে দাঁড়াইয়া যাগো বাড়ি দেখা যায় সেই ইব্রাহিম ভাই?
“হো, তার একমাত্র ছেলে আরহাম। তোর মাইয়ারে দেইখা খুব পছন্দ করছে। বিয়া করবার চায়। আইজ আইছিলো আমাগো ঘরে শ্রাবণের সাথে আর আমার সাথে অনেক্ষন কথা কইছে শাপলার ব্যাপারে। যদি তোরা রাজি থাকোস তাইলে প্রস্তাব নিয়া আইবো কইছে।
আলেয়া যেনো বিস্ময়ে হতবাক। তার মতো এক মধ্যবিত্ত মায়ের মেয়ের কপালে এতো ভালো ছেলে আল্লাহ লিখে রাখছে এইটা বিশ্বাস করতেও তার কষ্ট হচ্ছে। তিনি বিস্ময়ে বলে উঠলেন
“কি কন আপা, এরা অনেক বড়লোক। আমার মাইয়ারে কেমনে ওরা পছন্দ করতে পারে?
“আল্লাহ যদি কপালে ভালো কিছু লিইখা রাখে তাইলে সেইটা একভাবে না একভাবে হইবোই রে আলেয়া। অহন তুই কি কস? এই ছেলের কাছে মেয়ে বিয়া দিবি তো?
আলেয়া খুশির হাসি হাসলো। বললো
“এমন ছেলের কাছে মেয়ে বিয়া দিতে পারা তো ভাগ্যের ব্যাপার আপা। ভাইজানের সাথে আপনে কথা কইয়া দেইখেন। ভাইজান যদি রাজি হয় তাইলে আমার কোনো আপত্তি নাই।
“তোর ভাইজানও রাজি আছে। উনিও তখন ঘরে ছিলো যখন এই ব্যাপারে কথা হইছে।
আলেয়া হেসে বললো
“তাইলে তো ভালোই। ভাইজানরে কইয়েন ওগো সাথে কথা কইতে। যদি সব ঠিকঠাক থাকে তাইলে মাইয়ারে ওই ছেলের কাছেই বিয়া দিমু।।
ওপাশে বিছানার উপর শুয়ে থেকে সব কথাই শুনলো পদ্ম। ঠোঁটের কোনে তার হাসি ফুটলো। বোনের বিয়ে হবে, আনন্দ হবে। তার একটা সুন্দর দুলাভাই হবে ভেবেই নাঁচতে ইচ্ছে করছে তার। পদ্ম এক লাফে বিছানা ছেড়ে নামলো। তার যে মন খারাপ ছিলো বেমালুম ভুলে গিয়ে দৌড়ে চললো রান্নাঘরের দিকে। ওখানে আপা আছে। খুশির খবরটা আপাকে জানাতে হবে তো নাকি। শাপলা মনোযোগ সহকারে রান্না করছে। পদ্ম’র মন ভালো হয়েছে দেখে ভালোই লাগলো তার। হেসে বললো
“যাক, তোর মন অনেক তারাতাড়িই ভালো হয়ে গেছে। ভালোই হইছে, মন খারাপ থাকলে দেখতেও ভাল্লাগে না।
পদ্ম হেসে দুষ্টুমি করে বললো
“মন কি আর এমনি এমনি ভালো হইছে! বিয়ার খবর পাইলে সবার মনই ভালো হয়। তোর মনও ভালো হইবো?
“বিয়ে! কার বিয়ে?
আকস্মিক উৎসাহিত হয়ে শাপলা বলে উঠলো
“চাচি কি শ্রাবণ ভাইয়ের সাথে তোর বিয়ের আলাপ করার জন্য আম্মার ধারে আসছে?
পদ্ম হেসে বললো
“আমার সিরিয়াল তো তখনই আইবো যখন তুই এ বাড়ি ছাইড়া শশুর বাড়ি যাইবি। আগে তো তোকে বিদায় করতে হবে নাকি।
“খামখেয়ালিপনা বাদ দিয়া সোজাসাপটা বল কার বিয়ে।
“তোর বিয়া।
শাপলা হাসলো। বললো
“দিনে দিনে বড় হইতেছিস আর ফাজিল হইতেছিস। ফাইজলামি বাদ দিয়া সত্য করে বল কার বিয়ে?
“কইলাম তো তোমার বিয়া। আমি সত্য কইতাছি আপা, চাচী তোমার বিয়ার আলাপ নিয়াই আম্মার কাছে আইছে। আমি শুয়া থাইকা সব শুনছি।
শাপলার মুখ দেখে কিছুই বুঝা যাচ্ছে না। সে খুশি হয়েছে নাকি হয়নি তাও বুঝা যাচ্ছে না। ঠোঁটের কোনে এখনো তার হাসি। হাসি হাসি মুখ করেই বললো
“তা পাত্রটি কে?
“ওই ওইধারের বাড়িটা আছে না! ওই বাড়ির ছেলে। আজ সকালেই তো আইছিলো আমাগো বাড়ি।
শাপলা হেসে বললো
“ওহ আচ্ছা।
“তুমি খুশি তো আপা?
“খুশি না হবার কি কোনো কারণ আছে?
“একদমই না। ফিক করে হেসে বললো পদ্ম।
চলবে…….