ঝিলের ওপারে পদ্মফুল পর্ব -২২

#ঝিলের_ওপারে_পদ্মফুল
তন্বী ইসলাম -২২

“পদ্ম, একটু এইদিকে আয় তো মা।
আলেয়ার ডাকে পেছন ফিরে তাকালো পদ্ম। ভাঙ্গা চেয়ারের ওখান থেকে মনোযোগ সরে গিয়ে পূর্ণ মনোযোগ গেলো মায়ের দিকে। মা কেন ডাকে? আর সময় নষ্ট না করে মায়ের কাছে চলে গেলো পদ্ম। ভোরের আলো সবে ফুটতে শুরু করেছে। কাজের চাপ রাতের তুলনায় এখন আরো বেড়ে গেছে। উঠোনের মাটি খুড়ে তার তিনপাশে ইট বিছিয়ে তিনটে চুলো বানানো হয়েছে। সে চুলোতেই বিয়ের রান্না করা হবে। রান্নাঘরের ভেতরের চুলোতে বাড়ির বাকিদের জন্য রান্না হচ্ছে। জুবেদাদের ঘরের মানুষজন সহ যত আত্মীয় আছে সবাই আজ এখানেই সকালের খাওয়া খাবে। যদিও আসমা চেয়েছিলো সকালের রান্নাটা তারাই করুক, কিন্তু আলেয়ার কড়া নির্দেশ, আজ যেনো কেউ ব্যক্তিগত হাড়ি চুলোতে না চাপায়। পদ্ম’ও হাত লাগাচ্ছে কাজে। যদিও কাজের চেয়ে অকাজই বেশি করছে সে। কাজ রেখে একটু পর পর বিড়ালের মতো নজর দিচ্ছে মাংসের হাড়িতে। সকলেরই দৃষ্টিতে আসছে সেটা, কিন্তু কেউই কিছু বলছে না। আসমা মুখ টিপে টিপে হাসছে ওর কান্ড দেখে। হাবিবা দু একবার কড়া গলায় বলেছেন, ‘এমনে এমনে সব তরকারি যদি তুই একলাই খাস মাইয়া, তয় আমরা বাকিরা কি খামু?
যদিও হাবিবার মনের কথা ছিলো না এটা, শুধুমাত্র ভাইজির সঙ্গে নিছক মজার ছলেই বলেছেন কথাখানি। উনার কথার প্রতিউত্তরে পদ্ম’ও হেসে হেসে উত্তর দিয়েছে
“বাড়ির আনাচে কানাচে শাক পাতার অভাব নাই ফুফু। তরকারিতে টান পরলে ওগুলা তুইলা আইনা রাইন্ধা দিমু নে।
পদ্ম’র কথা শুনে হাসলো সকলেই।

সকাল থেকে আবারও আশিকের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে পদ্ম’র আশেপাশে। দু একবার পদ্ম’কে এটা ওটা করতে দেখেছে সে। তাতেই হাপিয়ে উঠেছে ছেলেটা। মনে হচ্ছে কাজটা পদ্ম নয়, বরং সে নিজে করছে। এক দৌড়ে চলে গেলো সে মোড়ের সেই মনিহারি দোকানটার কাছে। ফিরে এলো একগাদা চিপস, চানাচুর আর কেক এর প্যাকেট নিয়ে। সাথে কিছু চকলেটও আছে। চুষে খাওয়ার চকলেট।। পদ্ম’র হাতে এনে দিতেই পদ্ম সহ আশেপাশে থাকা বাকিরা হতবাক। আসমার চোখ যেনো কপালে উঠার উপক্রম। সে হাতের কাজ ফেলে উঠে এলো ভাইয়ের কাছে৷ বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো কতক্ষণ। পদ্ম এবার লজ্জা পাচ্ছে বেশ। এ আশিক কি শুরু করে দিয়েছে? আসমা ভাইয়ের মাথায় চাটি দিয়ে বললো
“এখানে কি হচ্ছে আশিক?
আশিক লজ্জামাখা মুখ নিয়ে বোনের দিকে তাকিয়ে মাথা চুলকোতে লাগলো। মৃদু গলায় বললো
“পদ্ম অনেক কাজ করতাছে আপা। বোধহয় অনেক খিদা লাগছে, রান্নাও তো হয় নাই এখনো তাই।
আবারও আশিকের মাথায় চাপড় মেরে আসমা বললো
“কাজ তো আমিও করতাছি আশিক, পদ্ম’র চাইতেও বেশি কাজ। খিদা আমারও লাগছে। কই, আমারে তো কিছু আইন্না দিলি না!
আশিক এবার পূর্ণ নিশ্বাস ছেড়ে বললো
“তোর সাথে পদ্ম’র তুলনা নাকি আপা। ও কতো ছোট, তোর তো কাজ কইরা অভ্যাস আছে।

আসমা এবার আঁড়চোখে তাকালো পদ্ম’র দিকে। মেয়েটা সকলের সামনে তার ভাইয়ের এরুপ আচরণে বেশ লজ্জা পাচ্ছে। সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আশিকের দিকে তাকালো। এরপর ফিসফিস করে বললো
“পদ্ম’র আশেপাশে ঘোরা বন্ধ কর আশিক। ওর সিট অলরেডি বুকিং হয়ে গেছে।
বোনের এমন কথায় বেশ আহত হলো আশিক। ফ্যাকাশে মুখ নিয়ে তাকালো পদ্ম’র দিকে। ভাইকে এমন করতে দেখে মুচকি হেসে নিজের কাজে মন দিলো আসমা।।

বেলা প্রায় দশটা ছুইছুই। এখনো অব্দি শাপলা ঘর থেকে বেরোয় নি। আর না কেউ গেছে শাপলার তদারকি করতে। মেয়েটার আজ বিয়ে, অথচ এখন অব্দি কিছু খাওয়া হলো না তার। আসমা আলেয়াকে তাড়া দিয়ে বলল
“চাচী আম্মা, শাপলারে তো এইবার কিছু খাওয়ানি দরকার।
আলেয়া তরিঘরি করে বললো
“আতব চালের ভাত হইয়া গেছে বউ। গোস্তের পাতিল থেইকা একটু তরকারি আর কয়েকটা কুমড়ো ফুলের বড়া নিয়া যাও তো মাওয়াডার কাছে। দেখো কিছু খাওয়াইতে পারো নাকি। কামের চাপে একটাবার মাইয়াডার লগে কথাও কইতে পারি নাই। দুইটা খাইয়া নিক, তার পর দেখি মাইয়াডা কি করে। আসমা খেয়াল করলো আলেয়ার চোখের কোনে বিন্দু পরিমাণ পানি।

আসমা প্লেটে মাংস ভাত আর কয়েকটা বড়া নিয়ে গেলো রুমে। ওদিকের পার্টিশন দেওয়া রুমেই বসে আছে শাপলা। আসমা হাসিমুখে ভাত নিয়ে সেদিকে গেলো, কিন্তু শাপলা সেখানে নেই।৷ ভাতের প্লেটটা বিছানার উপর রেখে নিজেও বসলো বিছানার এক মাথায়। অপেক্ষা করতে লাগলো শাপলার ফিরে আসার। হয়তো বাথরুমে গেছে। অনেক্ষন বসে থাকার পরেও যখন শাপলা এলো না তখন কিছুটা চিন্তিত হলো সে। ভাতের প্লেট রেখেই বাইরে গিয়ে পদ্ম’কে খুজতে লাগলো। পদ্ম নেই আশেপাশে। আসমা ঝিলের পাড় গিয়ে ডাকলো পদ্মকে। ওর ডাক পেয়ে এক দৌড়ে আসমার কাছে এলো পদ্ম। নিশ্বাস নিতে নিতে বললো
“ডাকো কেন ভাবী?
“কি করো এইখানে?
“কমু? লজ্জা কাতর মুখ নিয়ে বললো পদ্ম।
আসমা মুচকি হেসে বললো কও কি কইবা?
পদ্ম আবারও লজ্জায় মাথা নত করলো মৃদু গলায় বললো
“শ্রাবণ ভাইয়ের সাথে কথা কমু তো, তাই এইখানে অপেক্ষা করতাছি।
আসমা খানিক অবাক হয়ে বললো
“কি বলো! এখন তো দশটার বেশি বাজে পদ্ম। শ্রাবণ ভাই তো এতোক্ষণে পরীক্ষার হলে বইসা গেছে। আর তুমি কি দিয়া কথা কইবা? মোবাইল কই?
পদ্ম অবাক হয়ে বললো
“কি কও? দশটার বেশি বাজে?
“হো।
“আমি আরো সেই কখন থেইকা বইসা রইছি। আপা কইছে এইখানে অপেক্ষা করতে। মোবাইল নিয়া আইবো এইখানে যাতে কথা কইতে পারি।
“শাপলা কইছে! কিন্তু শাপলা কই? আমি আরো ঘরে গেলাম ওরে দুইটা ভাত খাওয়াইতে, পাইলাম না। মনে করলাম বাথরুমে গেছে, কিন্তু বাথরুমে গেলেও তো এতো সময় লাগার কথা না।

পদ্ম অবাক হয়ে বললো
“আপা ঘরে নাই?
আসমা মাথা নাড়িয়ে জানান দিলো শাপলা ঘরে নেই।
বিস্ময়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো পদ্ম। আসমার দিকে তাকিয়ে বললো
“চলো তো ভাবী, দেখি আপা কই গেছে।
ঘর, ঘরের পেছন দিক, ঝিলের আশপাশ, বাথরুমের চারিপাশে তন্নতন্ন করে খুঁজেও শাপলার কোনো হদিস পেলো না পদ্ম আর আসমা। তাদের দু’জনের মুখেই চিন্তার ছাপ। ব্যর্থ হয়ে সেখান থেকে ফিরে ঘরে এলো পদ্ম আর আসমা। হাবিবা এতোক্ষণ তাদের দুজনকেই খেয়াল করলো, তাদের চিন্তিত মুখের অবয়বও বেশ করে তার চোখে ধরা দিলো।৷ বুঝতে পারলো কিছু একটা ঘটেছে। কিন্তু কি ঘটেছে? কাজের চাপে তেমন একটা মনোযোগও দিতে পারলো না সেদিকে। আলেয়া ঘরে এসে দেখেলো শাপলার বিছানায় শাপলা নেই। পদ্ম আর আসমা বসে আছে সেখানে। সামনেই ভাতের প্লেটটা রাখা। বিস্ময়ে তিনি বললেন
“শাপলারে অহনো খাওয়াও নাই আসমা?
আসমা মাথা নাড়ালো। আলেয়া আবারও বললো
“শাপলা কই?
এবার কি বলবে তারা? পদ্ম তরিঘরি করে বললো
“আপা বাথরুমে গেছে আম্মা।
“ওহ!
আলেয়া চলে যেতে গিয়েও আবার ফিরে আসলেন। আসমার দিকে মুখ করে তাকিয়ে হাহাকার নিয়ে বললেন
“মাইয়াডারে একটু জোর কইরা খাওয়াইও আসমা। হাতের কামডা কইরা আমি আবারও আইতাছি।
আসমা শুকনো মুখে ঢোক গিলে মাথা নাড়ালো।

উনি চলে যাবার পরপরই পদ্ম’র কি যেনো মনে পরে গেলো। উৎকন্ঠা নিয়ে সেই ভাঙ্গা চেয়ারটার দিকে তাকাতেই যেনো আকাশ থেকে পরলো সে। পাগলের মতো ছুটে গেলো চেয়ারটার কাছে। চেয়ারের নিচে, আশেপাশে, ঘরের চতুর্কোনে ছুটোছুটি করতে লাগলো, যেনো কিছু খুজছে। আসমা ছুটে গেলো পদ্ম’র কাছে। পদ্ম’কে শক্ত করে দুহাতে ধরে চাপা স্বরে বলল
“কি করছো পদ্ম? আর এভাবে খুজছোই বা কি?
পদ্ম কান্না মিশ্রিত চোখে তাকালো আসমার দিকে। চোখের কোনে পানি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, বুঝি এখনই কেঁদে দিবে। সমস্ত হতাশা যেনো তার চোখেমুখে হানা দিয়েছে এই মুহূর্তে। আসমা আঁতকে উঠল। উদগ্রীব কন্ঠে বললো
“কি হইছে তোমার পদ্ম? আমারে কও, এমনে পাগলামি কইরো না।
“ভাবী, অঘটন বোধহয় ঘইটা গেছে।
আসমার পিলে চমকে উঠলো। এমনিতেই কিছু একটার সন্দেহ তার বুকে দানা বেধে আছে। এখন কি সেটাই ঘটতে যাচ্ছে নাকি!

আসমা মনে মনে প্রার্থনা করতে লাগলো, তার মন যা বলছে তা যেনো না হয়। নিজের মনকে শক্ত করে আসমা পদ্ম’কে প্রশ্ন করলো
“কিক’ কি অঘটন পদ্ম?
পদ্ম মাথা নোয়ালো। চোখের বাধ ভেঙ্গে পানি বেরিয়ে এসেছে ততক্ষণে। নিরবে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে সে। আসমা সেসব ভ্রুক্ষেপ না করে পদ্ম’কে তাড়া দিলো অঘটনটা কি সেটা জানার জন্য। পদ্ম কাঁদতে কাঁদতে আসমাকে জড়িয়ে ধরে বললো
“গতকাল অনেক রাত পর্যন্ত আপারে দেখছি কি যেনো করছে। গুরুত্ব দেই নাই তখন। সকালে যখন ঘুম ভাংলো দেখলাম চেয়ারের উপর একটা বড় ব্যাগ রাখা। মনে হইতাছিলো অনেক কিছু ভরা হইছে এই ব্যাগে। আমি দেখতে গিয়াও দেখতে পারি নাই। আম্মা ডাকছিলো, পরে ব্যাপারটা ভুইলা গেছিলাম।
“মম মানে? কাঁপা কাঁপা গলায় বললো আসমা। চোখ ততক্ষণে বেরিয়ে আসার উপক্রম তার। পদ্ম আবারও কান্নাজড়িত গলায় বললো
“আপা পলাইয়া যায় নাই তো ভাবী?

“শাপলা পলাইয়া গেছে?

হাবিবার কন্ঠস্বর শুনে আসমা আর পদ্ম দুজনেই ঘাবড়ে গিয়ে দরজার দিকে তাকালো। হাবিবা তখনও সন্দিহান চোখে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। পদ্ম’র চোখমুখ শুকিয়ে গেছে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। ফুফু সবটা শুনে ফেলেছে, এবার কি হবে? সবাই জেনে যাবে তার বোন বিয়ের দিন পালিয়েছে। এলাকায় বদনাম রটবে। আম্মা মুখ দেখাবে কি করে সবার সামনে? আসমা ততক্ষনে হাবিবাকে শান্ত করার জন্য, তাকে বুঝানোর জন্য পা বাড়ালো। কিন্তু তার আগেই যা হবার হয়ে গেলো। মাথা ঘুরিয়ে মেঝেতে পরে গেলেন হাবিবা। মুহুর্তেই চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে জ্ঞান হারালেন তিনি।

বাড়িতে থমথমে ভাব। হাবিবার মাথায় পানি ঢেলে তার জ্ঞান ফেরানো হয়েছে, কিন্তু সজ্ঞানে তিনি তখনও আসেন নি। প্রাণহীন দেহের মতো ঘরের সামনে একটা পাটিতে পা লেপ্টে বসে আছেন তিনি। চোখমুখ দেখে বুঝার উপায় নেই তার দেহে আদৌ প্রাণ আছে কি’না। আলেয়ার চোখমুখ দেখে বুঝায় যাচ্ছে অনেক কান্নাকাটি করেছেন তিনি। এখনো কাঁদছেন। যে মেয়েটা কিছু বলার আগেই বাধ্য মেয়ের মতো সবকিছু করে দিয়েছে সেই মেয়েটা আজ এতো বড় একটা কান্ড ঘটাবে এটা কখনো কল্পনাও করেন নি তিনি।। কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে, তাও কান্না থামছে না। জুবেদা তাকে শান্ত করতে ব্যস্ত। আর আসমা হাবিবাকে হাত পাখা দিয়ে বাতাশ করছে। সেলিমার বাবা আর সেলিম দুজনই মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন চেয়ারে। আজকের দিনে তাদের মেয়ে তাদের মান সম্মান এভাবে খোয়াবে ভাবতেও পারেন নি উনারা। বার বার মনে হচ্ছে, এমনটা তো হবার কথা ছিলো না।। তবে কেন এমন হলো? তাদের মেয়ে তো এমন নয়।

সেলিমকে পাঠানো হলো শাপলার বান্ধবী তানিদের বাড়ি। বেশ কিছুক্ষণ পর তানিকে নিয়ে ফিরে এলো সেলিম। ততক্ষণে শাপলার পালিয়ে যাবার ব্যাপারটা পুরো গ্রামে রটে গেছে। সেলিমের বাবার মাথায় হাত, তবুও নিজেকে যথেষ্ট শান্ত করে তানিকে বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে জেরা করলেন তিনি। উত্তরে কলেজের সিনিয়র আকাশ ভাইয়ের সাথে শাপলার দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে এলো। সেলিমের বাবার চোখমুখ শক্ত হয়ে এলো। কড়া গলায় তিনি সে ছেলের বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইলে তানি জানালো সে ছেলের ব্যাপার সে কিছুই জানে না। শুধুমাত্র কলেজে দেখা হয়, এটুকুই। হতাশ হলেন সেলিমের বাবা। খোঁজ লাগালেন সে ছেলেকে পাবার জন্য। শেষে হতাশ হলেন সবাই। ও বাড়ি থেকে একের পর এক কল আসছে। লজ্জায় হাতাশায় ফোন রিসিভ করার সাহস পাচ্ছেন না কেউ। শেষে ও বাড়ি থেকে দুজন লোক এলো। একজন ছেলের চাচা, বাকিজন ছেলের খালু।

বাড়িতে অনেক মেহমান আছে, দাওয়াত দেওয়া হয়েছে পুরো গ্রাম জুরে। এভাবে মান ইজ্জত যাবে তা তাদের কল্পনার বাইরে ছিলো। যে করেই হোক এ বিয়েটা হতেই হবে, এবং তা আজকের মধ্যে। আলেয়ার মাথা কাজ করছে না, বিয়ের চিন্তা মাথা থেকে ঝরে গেছে অনেক আগেই, মেয়ের চিন্তায় অস্থির তিনি। যে করেই হোক মেয়েকে তিনি ফেরত চান ই চান। ওদিকে সেলিমের বাবাকে পাত্রপক্ষের লোক বেশ করে ধরেছে, ও মেয়েকে পাওয়া না গেলেও অন্য কোনো বিবাহযোগ্যা মেয়ে থাকলে যেনো তাদের ছেলের সাথেই বিয়েটা দেওয়া হয়। তখন দুপুর হয়েছে। শাপলাকে খোজার অনেক চেষ্টা চলছে, কিছুতেই কিছু লাভ হচ্ছে না। ছেলের চাচার স্পষ্ট কথা, যে মেয়ে বিয়ের দিন বাড়ি ছেড়েছে তাকে আর তারা বাড়ির বউ করবে না। আবার তাদের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনিও খেলতে দিবে না। আজকের মধ্যেই তাদের ছেলের সাথে এ বাড়ির কিংবা তাদের কোনো আত্মীয়ের মেয়ের সাথেও হলেও বিয়েটা হতে হবে।

অবশেষে সেলিমের বাবা সিন্ধান্ত নিলেন। গম্ভীরমুখে সবাইকে উদ্দেশ্যে করে জোর গলায় বললেন
“বিয়ার তারিখ যখন আইজ, তখন বিয়াটা আইজই হইবো। এক মাইয়া গেছে তো কি হইছে, আরেক মাইয়া তো আছে।
এই বলে বুকভরা আশা নিয়ে পদ্ম’র দিকে তাকালেন তিনি৷ পদ্ম’র গলা শুকিয়ে গেছে চাচার কথা শুনে। চাচা কি বলতে চাইছেন?
সেলিমের বাবা আসমার দিকে তাকিয়ে ভারীমুখে বলে উঠলেন
“পদ্ম’রে সুন্দর কইরা সাজাইয়া দেও আসমা। লোকে যেনো আমাগো মাইয়ার কোনো খুত ধরতে না পারে।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here