টুকরো স্মৃতির অতলে পর্ব -১০

#টুকরো_স্মৃতির_অতলে❤️
#পর্ব_১০
লেখনীতেঃআহানিতা

বিছানায় সটান শুয়ে ছিলাম।ঘুম নেই চোখে তবুও সেভাবেই শুয়ে থাকলাম।তীব্র অস্থিরতা নিয়ে এপাশ ওপাশ হয়ে ঘড়িতে ঘন্টার কাঁটা পাঁচটার ঘরে দেখেই বিস্ময় নিয়ে তাকালাম আমি।এতক্ষন হলো, অথচ আমার চোখে ঘুম আসছে নাহ কেন এখনও?কিসের এত অস্থিরতা আমার যে সবটুকু রাত নির্ঘুম কাঁটিয়ে দিলাম আমি? উঠে দাঁড়িয়ে জানালার কাছে গিয়েই জানালাটা মেলে উঁকি মারলাম সামনের রাস্তায়।নিরব রাস্তা।লোকজন নেই তেমন।ফিনফিনে বাতাস শরীরে লাগতেই মৃদু হেসে সামনে তাকালাম আমি।বেশ কিছুটা সময় সেভাবে থেকেই প্রায় ঘন্টাখানেক পর সরে আসলাম সেখান থেকে।বিছানায় আয়েশ করে বসতেই কানের কাছে মোবাইলের রিংটোনটা বেঁজে উঠল।আমি কপাল কুঁচকে তাকিয়েই কল রিসিভড করলাম।ওপাশ থেকেই মেঘা খুশিতে ছটফটিয়ে বলে উঠল,

‘ কনগ্রাচুলেশন মেহুল।তুই আম্মু হতে চলেছিস।’

আকস্মিক ওর কথা শুনে থম মেরে বসেই রইলাম সেভাবেই।বিষয়টা প্রথমে না বুঝলেও পরক্ষনে বুঝতে পেরেই খুশিতে মুখ চকচক করে বলে উঠলাম,

‘ রিয়েলি?তুই কনসিভ করেছিস মেঘা?আমি ছোট আম্মি হচ্ছি?’

‘ হ্যাঁ।তুই আম্মি হচ্ছিস।কালকেই রিপোর্ট হাতে পেয়েছিলাম কিন্তু তোর মোবাইল অফ ছিল হয়তো।তাই বলতে পারিনি।’

আমি খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম।বিছানা থেকে লাফ মেরে উঠে পড়েই জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।খুশিতে গদগদ করে বললাম,

‘ কনগ্রেস তো আমার তোকে করার কথা।উল্টো তুই আমায় উইশ করলি?যায় হোক তোর বেবি মানে আমার বেবি।সেই হিসেবে আমারও কনগ্রাচুলেশন প্রাপ্য।এনিওয়েজ, কনগ্রাচুলেশন বেবির হবু আম্মু।’

ও হেসেই বলল,

‘ ইয়েস!শত হোক তুই তাহার ছোট আম্মি হবি।কনগ্রাচুলেট তো তোকেও করতে হয়।তাই আগেই করে দিলাম।ভালো নাহ?’

আমি খিলখিলিয়ে হেসে উঠলাম।তারপরই বললাম,

‘ তুই বাসায়ই তো?’

‘ হু।’

‘ ইহান ভাই আছে?’

‘ উনি তো খুশিতে আধপাগল হয়ে কাল থেকেই পাগলামি শুরু করে দিয়েছেন।এখন অবশ্য ঘুমোচ্ছে উনি আ…’

আমি ওকে বাকিটা বলতে না দিয়েই হুলস্থুল করে বলে উঠলাম,

‘ উহ!চুপ কর।উনি আছেন তো?উনাকে আমি আসা পর্যন্ত বেঁধে রাখ। আমি আসছি।এক্ষুনিই আসছি।তোর কতভাবে, কতরকমে, কিভাবে যত্ন নিতে হবে সব কিছুর ব্যাখ্যা দিয়ে আসব। বুঝলি?’

ও হাসল।তারপর বলল,

‘ তুই নাহ সত্যিই পাগল!’

আমি দাঁত কেলিয়ে হেসেই বলে উঠলাম,

‘ ইয়েস আমার বেবির আম্মুটা।আ’ম রিয়েলি পাগল।’

ও হেসেই বলল,

‘ এই কথাটা ইহান বলার কথা। আর তুই তোর বেবির আম্মু বানিয়ে দিলি আমায়?’

আমি ভাব নিয়ে বললাম,

‘ উহ!বুঝতে হবে না?বেবিটা তো আমারই বল?তুই ওর আম্মু হবি কেবল আর ইহান ভাই ওর আব্বু হবে।আর তো কিছুই নাহ।’

মেঘা হাসল।আমি কল কেঁটে দাঁত ব্রাশ করে এলোমেলো চুলগুলোকে ঠিক সেভাবেই কোনভাবে পেঁচিয়ে মাথা ওড়না দিয়ে ঢেকেই পা বাড়ালাম।আম্মুকে বলে নিচে নেমে রিক্সা নিয়ে রওনা হলাম মেঘার বাসার উদ্দেশ্যে।পনেরো বিশ মিনিটের মাথায় পৌঁছেও গেলাম সেখানে।হুড়মুড় করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠেই কলিংবেল চাপতেই দরজা খুলল মেঘা।আমি আর অপেক্ষা না করেই জটপট জড়িয়ে ধরলাম ওকে।খুশিতে ঝাপটে ধরে বলে উঠলাম,

‘ আ’ম সো এক্সাইটিং দোস্ত।জীবন ফার্স্ট কারো বেবির আম্মি হচ্ছি আমি।অবশ্য এটা হওয়ারই কথা ছিল। কলেজ লাইফ থেকে ডিল করা। তাই না?’

মেঘা দাঁত কেলিয়ে হেসেই বলল,

‘ ইয়েস!আমার বেবির আম্মি তুই।তোর বেবির আম্মি আমি হবো।’

আমি মুচকি হাসলাম। ওর থেকে সরে দাঁড়িয়েই এপাশ ওপাশ তাকিয়ে ইহান ভাইকে না দেখেই ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,

‘ ইহান ভাই কোথায়?আর বাকিরা কোথায়?তোর দেবর?সে কোথায়?’

মেঘা এক হাত দিয়ে মাথায় চাটি মেরেই বলল,

‘ উনি এখন ও ঘুমোচ্ছে।ফেমিলির সবাই বেড়াতে গিয়েছে।ইশান ভার্সিটি ট্যুরে।তা তোর বেঁছে বেঁছে আমার দেবর ইশানের উপরই নজর দিতে হবে হুহ?বেচারা নিষ্পাপ মানুষ!’

আমি খিলখিলিয়ে হাসলাম।তারপরই বললাম,

‘ উহ!নজর না দিয়ে কি থাকা যায়?ইহান ভাইয়ের ভাই বলে কথা।সো হ্যান্ডসাম!’

কথাটা বলে দম ফেলে আবারও বলে উঠলাম,

‘ ইহান ভাই কোন রুমে?’

মেঘা পাশ ফিরে ইশারায় ডান দিকের রুমটা বোঝাতেই দ্রুত গতিতে পা ফেলে ডুকে পড়লাম সেই রুমে।কিন্তু রুমে ডুকেই হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলাম আমি।ইহান ভাই আর অর্কভাই হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছেন নিজেদের মতো।আমি আসমান সমান বিস্ময় নিয়ে তাকিয়েই পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা মেঘাকে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলাম,

‘ ওমাহ!উনি এখানে?ইহান ভাইয়ের সাথে এভাবে ঘুমিয়ে আছেনই বা কেন?’

মেঘা মুখ চেপে হাসল।তারপরই বলল,

‘ বললাম না তোকে পাগল হয়ে গিয়েছে?সেই পাগলামি শেয়ার করতে অর্ক ভাইসহ আরও কয়েকজন বন্ধুকেও ডেকে নিয়েছিলেন।তারপর অবশ্য বাকি সব বন্ধু রাতে খেয়ে চলে গিয়েছেন।অর্কভাইকে উনি যেতে দেননি।তাই দুইজনে একসাথে ঘুমিয়েছিলেন রাতে।’

আমি ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন ছুড়লাম,

‘ মানে? তোকে একা রেখে এভাবে হ্যাংলামো করছেন ইহান ভাই?এটা তো মোটেই উচিত কাজ নয়।উনি তোর প্রতি কেয়ারিং না হয়ে আনন্দে আনন্দিত হয়ে এমন হ্যাংলামো করতে পারেন না নিশ্চয়।’

মেঘা আমার কথাতে সরু চোখে তাকাল।আমি দু পা বাড়িয়েই বিছানার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।টাউজার আর টিশার্ট পরনে দুজনই।অর্কভাইয়ের পিঠের কাছে টিশার্টটা হালকা সরেছে।কেমন নিষ্পাপ চেহারায় ঘুমিয়ে আছেন উনি।চোখে মুখে অদ্ভুত মায়া যেন। আমি একনজর তাকিয়েই দ্রুত উনার থেকে নজর সরিয়েই ডাকলাম কয়েকবার ইহান ভাইকে।ইহান ভাই বিরক্ত নিয়েই চোখ বন্ধ রেখে বলে উঠল,

‘ মেঘা!কালকে এমনিতেই প্রথম বার বাপ হওয়ার আনন্দে পার্টি টার্টি করতে দিলে নাহ।তোমার কথা ভেবে এক চুমুক ও ড্রিংক করিনি বাপ হওয়ার মতো আনন্দেও।নয়তো আমরা বন্ধুরা সব আনন্দেই ড্রাংক হয়ে চিত হয়ে থাকি।আর তুমি এখন সকাল সকাল ডাকা শুরু করলে?’

আমি কপাল কুঁচকে তাকালাম।ততক্ষনে চোখ মেলে চেয়েছেন অর্ক ভাই।আমাকে দেখেই বোধ হয় হুড়মুড় করে উঠে বসলেন উনি।অবিশ্বাস্য চোখে চেয়ে থেকেই ইহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে দুই কি তিনবার থাপড়ালেন।আমি ঠিক সেভাবেই তাকিয়ে রইলাম।ড্রিংক?প্রথমবার বাপ হওয়ার আনন্দে ড্রিংক করে পার্টি করতে চাওয়া? ওয়াও!আমি কড়া কন্ঠেই বলে উঠলাম,

‘ ইহান ভাই?আমি অন্তত আপনাকে এমন কেয়ারলেস ভাবিনি।যে নিজের ভালোবাসাকে ভালোবেসে গোপণে আগলে রেখেছিল, নিজের করে নিয়েছিল সে এমন কেয়ারলেস কি করে হতে পারে?নিজের সন্তানের অস্তিত্ব টের পাওয়ার আনন্দে ড্রিংক করে পার্টি করতে চাইলেন অবশেষে?গ্রেট!’

ইহান ভাই চোখ মেলে সোজা হয়ে বসলেন।আমার দিকে এক নজর তাকিয়েই মেঘার দিকে তাকালেন।তারপর কিছুটা সময় চুপ থেকেই ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন,

‘ এই রে মেঘা ভেবে কি না কি বলে ফেলেছি।এটা যে ভাবি তা তো বুঝতেই পারিনে।’

উনি ফিসফিসিয়ে বললেও কথাটা আমার কানে আসল ঠিকই।আমি চোখ জোড়া দিয়ে স্থির তাকিয়েই প্রশ্ন ছুড়লাম,

‘ আপনারা ড্রিংক করেন আগে জানতাম নাহ তো?’

ইহান ভাই সরু চোখে তাকালেন অর্ক ভাইয়ের দিকে।ইহান ভাইয়ের দৃষ্টিতে অসহায়তা স্পষ্ট।আর অর্ক ভাই একরাশ ক্ষোভ নিয়েই ক্ষ্রিপ্ত চাহনিতে তাকিয়ে রইলেন ইহান ভাইয়ের দিকে।দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলেন,

‘ আরেহ, ও তো স্বপ্নে ভুলভাল বকে।তুই জানিস না মেহুল?’

আমি স্থির সেভাবেই দাঁড়িয়ে বললাম,

‘ না জানি নাহ।আর আমি এটাও জানি আপনি মিথ্যে বলছেন। আমি আপনাকে এমনটা ভাবিনি অর্কভাই।আপনি ড্রিংক করেন। ‘

আমি কথাটা বলতেই উনি নির্লিপ্ত চাহনিতে তাকিয়েই মৃদু শ্বাস ফেললেন।মেঘা পেঁছন থেকে এগিয়ে আসতে আসতেই বলে উঠলে,

‘ আরেহ মেহুল।তুই যেমনটা ভাবছিস তেমন কিছুই নয়।তুই এত সিরিয়াসলি নিচ্ছিস কেন ব্যাপারটা?’

আমি তীক্ষ্ণ চাহনিকে মেঘার দিকে তাকিয়েই বললাম,

‘সিরিয়াসলি নেওয়ার মতো বিষয় নয় কি এটা?’

আমার এই কথার পাল্টা উত্তরেই ইহান ভাই মৃদু শ্বাস ফেলে বললেন,

‘ ভাবি সাহেবা আপনি তো ডিরেক্ট আসামীর মতো কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন আমায়।আসলে ঘটনাটা হলো, আমরা আড্ডা, পার্টি যাই দি অর্থ্যাৎ কারো যদি অত্যাধিক কোন খুশির খবর থাকে বা বেশি খুশির কোন সংবাদ থাকে তাহলে মাঝেমধ্যেই সব বন্ধু মিলে আড্ডা দি আর কি।আর সে আড্ডায় হালকা ড্রিংকের ব্যবস্থা থাকে।জাস্ট এটাই।তবে বিশ্বাস করুন ভাবি আমি ধরেও দেখি নাহ।শুধু বন্ধুদের সঙ্গদোষে একটু তাল মিলাতে হয়।আপনি শুধুই ভুল বুঝছেন।’

আমি এবার অর্কভাইয়ের দিকে তাকালাম।ইহান ভাই ছুঁয়ে দেখেন নাহ।বন্ধুদের সঙ্গে তাল মেলান তার মানে অর্কভাই ড্রিংক করেন?অর্কভাই নিশ্চয় এখন বলবে নাহ বন্ধুদের সাথে তাল মিলিয়ে উনি ও হালকা ড্রিংক করেন?আমি ওভাবেই তাকিয়ে থাকতে ইহান ভাই আবারও বলল,

‘ কিন্তু মেঘার কথা ভেবেই সেসব কিছুর ব্যবস্থা করিনি।শুধু বন্ধুদের সাথে অল্প আড্ডা দিয়েছি।তাও তারা রাতে চলে গিয়েছে।এইজন্যই বলে ফেলেছি কথাটা।প্লিজ দয়া করিয়া ভুল বুঝবেন নাহ ভাবি এন্ড শালি সাহেবা।’

আমি একপলক তাকিয়েই হাসার চেষ্টা করলাম।তারপর কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকেই অর্কভাইয়ের দিকে তাকিয়েই বলর উঠলাম,

‘ আপনি তো ড্রিংক করেন তাই নাহ?’

অর্কভাই হাসল।তারপর ভ্রু নাচিয়েই বলে উঠলেন,

‘ তোর কি?’

আমি চুপ করে চেয়ে রইলাম। রাগে মাথা টনটন করে উঠল মুহুর্তে।ক্ষ্রিপ্ত কন্ঠেই বললাম,

‘ কিছুই নাহ।’

কথাটা বলেই সেখান থেকে বেরিয়ে আসলাম কেবল।তারপর মেঘার দিকে তাকিয়েই হালকা কন্ঠে বললাম,

‘ হেই আমার বেবির আম্মু, নিজের খেয়ার রাখবেন।আমি আসছি তবে?’

ইহান ভাই ওই রুম থেকে বেরিয়ে আসতে আসতেই বলে উঠলেন,

‘ ওমাহ ! আমার বউয়ের বেবির আব্বু আমি না হয়ে তুমি হয়ে যাচ্ছো নাকি শালিকা?’

আমি মুচকি হাসলাম।উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম অর্কভাই ও বেরিয়ে আসলেন চোখ ঢলতে ঢলতে।আমি নজর সরিয়েই মুচকি হেসে বললাম,

‘ আব্বু কেন হতে যাব?আম্মি আমি।কয়েকমাস পর তো আম্মি হয়ে যাব।’

আমার কথাটা শুনেই বোধ হয় সঙ্গে সঙ্গে কেঁশে উঠল অর্কভাই।ইহান ভাই চোখ বড়বড় করে অর্কভাইয়ের দিকে সন্দেহী দৃষ্টিতে তাকিয়েই কানের কাছে কিছু ফিসফিসিয়ে বলে উঠেই হু হা করে হেসে উঠল।অর্কভাই আরো জোরে কেঁশে উঠেই আমার দিকে তাকালেন।আমি অবাক হয়ে চেয়েই রইলাম।বোকা চাহনি নিয়ে বললাম,

‘ হাসছেন কেন ইহান ভাই?’

উনি মুচকি হেসেই বললেন,

‘ নাহ, কিছুই নাহ।’

আমি স্বাভাবিক ভাবে তাকিয়েই বলে উঠলাম,

‘ মেঘার সাথে আগে থেকেই বলা আছে ওর বেবির আম্মু আমিও।সেই হিসেবে আপনার আর মেঘার বেবির ছোট আম্মি হবো আমি।কথাটা বলে ফেলা কি অযৌক্তিক ইহান ভাই?এভাবে হাসলেন কেন?’

অর্কভাই কাঁশি থামাল।আমার দিকে তাকিয়েই বলে উঠল,

‘ তুই বেশি কথা বলিস।জেনেও, না জেনেও। সো অযৌক্তিকই হবে তোর কথা।’

‘ আপনার সাথে কথা বলছি নাহ অর্কভাই।মাঝে নাক গলাবেন না।’

উনি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়েই বললেন,

‘ এমন এলোমেলো চুল নিয়ে হাজির হয়েছিস কেন সাত সকালে?তোর এই জঘন্য চেহারা দেখিয়ে সকাল সকাল মানুষকে মেরে টেরে ফেলার প্ল্যান করেছিস নাকি তুই মেহুল?তোর জ্বালা যন্ত্রনায় অতিষ্ট হয়ে সত্যিই মনে হচ্ছে মরে যাব।’

আমি বিরক্তি নিয়ে তাকালাম।তারপরই বললাম,

‘ আপনি বুঝবেন প্রথমবার আম্মি হওয়ার আনন্দ?তাও মেঘার বেবির আম্মি।আনন্দটা কতটুকু জানি নাহ, তবে তার জন্য এলোমেলো চুল নিয়ে হাজির হওয়া কিছুই নয়।’

উনি হু হা করে হেসে উঠলেন।সঙ্গে হেসে উঠলেন ইহান ভাইও।অর্ক ভাই কপাল ঘষতে ঘষতেই হালকা কন্ঠে বলে উঠল,

‘ এতই যখন আনন্দের, তখন নিজেই তো বিয়ে টিয়ে করে নিয়ে আম্মু হয়ে যেতে পারে।শুধু শুধু মানুষজনকে অপেক্ষা করিয়ে মারার প্ল্যান!’

আমি স্তব্ধ হয়ে তাকালাম।ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিয়ে বলে উঠলাম,

‘ মানে? কি বললেন অর্কভাই?’

উনি ভ্রু চুলকে নিয়ে বলে উঠল,

‘ কই নাহ তো।কিছুই নাহ।’

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম।মেঘার থেকেই বিদায় নিয়ে ইহান ভাইকে ওর যত্ন নিতে বলেই পা বাড়ালাম দ্রুত।বাসা থেকে বেরোতেই অর্কভাই আমার পিছুপিছু দৌড়ে আসলেন দ্রুত।ঘুম থেকে উঠে না ধোয়া মুখেও বেশ লাগছিল উনাকে।ফোলা চোখ, খোচা দাঁড়ি আর খাড়া নাক ।আমি একনজর পেছন ফিরে চেয়ে দ্রুত নিচে নামতে লাগলেই উনি মৃদু কন্ঠে বললেন,

‘ এলোমেলো চুলগুলো সুযোগ ফেলে আরো খানিকটা এলোমেলো করে দেব কোন একদিন।তারপর স্থির চাহনি নিক্ষেপ করে চেয়ে থাকব সেই মুখে, অগোছালো চেহারায়।কানের কাছে না হয় গুঁজে দিব কপালে পড়া চুলগুলো।ঐ চেহারাটা ছুঁয়ে দিব উষ্ণতায়।নাহলে যে খুব শীঘ্রই মৃত্যু হবে এই যুবকের।এত দীর্ঘ প্রতীক্ষা কি সে করতে পারে?করা যায় আধো?’

আমি তার বলা প্রথম শব্দটা শুনেই পা থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম ঠিক সেই সিঁড়িটায়।তার সবটুকু কথা সেইখানে দাঁড়িয়েই বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনলাম।সঙ্গে সঙ্গেই অদ্ভুত লাজুকতা ছুঁয়ে গেল আমার শরীর আর মন।মৃদু কম্পন ছুঁয়ে গেল শরীর জুড়ে।ঠিক সেভাবেই কিছুটা সময় তাকিয়ে থেকেই বেশ সাহস জোগাড় করে মাথা ঘুরিয়ে চাইলাম পেঁছন দিকে।উনি নেই।বোধ হয় উঠে পড়েছেন কথাগুলো বলেই।ভাগ্যিস নেই।নয়তো এক্ষুনি চোখাচোখি হলেও বোধ হয় দম বন্ধ হয়ে আসত আমার।

#চলবে….

[কেমন হয়েছে জানাবেন।❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here