ডেঞ্জারাস লাভারস পর্ব -০৩

#ডেঞ্জারাস_লাভারস
#পর্ব_৩
#লেখক_দিগন্ত
পিহু কিছু বলতে যাবে তার আগেই বিরাট এসে তাকে সবার সামনে থেকে টেনে নিয়ে যায়। পিহু নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার বৃথা চেষ্টা করে। একপর্যায়ে পিহু নিজের হার মেনে নেয়। বিরাট পিহুকে একটা যায়গায় নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেয়। পিহু রেগে গিয়ে বলে,
—আমাকে এভাবে এখানে টেনে আনলেন কেন? আমার মান সম্মান নষ্ট করে কি আপনার শান্তি হয়নি? এখন আমাকে মে*রে ফেলতে চান নাকি?

বিরাট এমনিতেই রেগে ছিল। এই রকম সময় পিহুর বলা কথাগুলো তার রাগ আরো বাড়িয়ে দেয়। বিরাট পিহুর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
—আজ শুধুমাত্র তোমার জন্য সবাই আমার দিকে আঙুল তুলছে। আমি তিন বছর ধরে এই ভার্সিটিতে আছি। কখনো কেউ আমাকে কথা শোনানোর মতো কিছু পায়নি। অথচ আজ তোমার জন্য আমাকে শুনতে হচ্ছে আমার চরিত্রে দোষ আছে। তার উপর তুমি আমার দিকেই আঙুল তুলছ!

পিহু কিছু বলতে গিয়ে থেমে যায়। বিরাটের রাগী চেহারা দেখে তার আর কিছু বলার সাহস হয়না। বিরাট রাগী গলায় বলে,
—যা হওয়ার হয়ে গেছে। সেটা এখন আর হাজার চেষ্টা করেও বদলানো যাবে না। এখন একটাই উপায় আছে৷ তোমাকে আমার গার্লফ্রেন্ড হতে হবে। এমনটা করলে তোমার এবং আমার দুজনের সম্মানই রক্ষা পাবে।

বিরাটের প্রস্তাবে পিহু একটুও খুশি হয়না। সে বিরাটের শার্টের কলার ধরে বলতে থাকে,
—আমাকে এরকম একটা প্রস্তাব দেওয়ার দুঃসাহস কোথায় পেলেন? কি ভেবেছেন আপনি? আপনি আমাকে গার্লফ্রেন্ড বানাতে চাইবেন আর আমিও নাচতে নাচতে আপনার গার্লফ্রেন্ড হয়ে যাবো? যদি এমনটা ভেবে থাকেন তাহলে আপনি সম্পূর্ণ ভুল ভেবেছেন। আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড হতে একেবারেই ইচ্ছুক নেই৷ তাই ভালো হবে যদি আপনি আমাকে এরকম কুপ্রস্তাব আর না দেন।

বিরাট পিহুর কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। যেখানে সব মেয়েরা তার সাথে শুধু একটু কথা বলার জন্য সারাদিন লাইন দিয়ে থাকে সেখানে এই মেয়ে তাকে এভাবে রিজেক্ট করছে। ব্যাপারটা একেবারেই হজম হয়না বিরাটের। সে পিহুকে বলে,
—আমি তোমাকে নিজের গার্লফ্রেন্ড বানিয়েই চলব। জাস্ট ওয়েট। তুমি নিজে থেকে আমাকে ভালোবাসবে।

বিরাট কথাটা বলেই চলে যায়। পিহু বিরাটের বলা কথাগুলো ভাবতে থাকে।
_____________________________
পিহু ও লিপি একসাথে আজ কিছু কেনাকাটা করতে এসেছে। কেনাকাটা শেষে যাওয়ার পথে বিরাট একটি স্কুটি নিয়ে এসে তাদের সামনে দাঁড়ায়। বিরাটকে দেখতেই পিহুর পুরো মাথায় রাগ উঠে যায়। পাশ কা°টিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করতেই বিরাট পিহুকে আটকায়। বলে,
—বেশি কথা না বলে চুপচাপ আমার গাড়িতে উঠে পড়ো। যদি নিজের ভালো চাও তাহলে তুমি এমনটাই করবে।

পিহু বিরাটের কোন কথাই গায়ে মাখে না। নিজের মতো চলে যেতে চাচ্ছিল। তখন বিরাট জোরপূর্বক পিহুকে নিজের বাইকে তুলে নেয়। পিহু আটকানোর চেষ্টা করলেও কোন কথা শোনে না। পিহুকে নিয়ে সোজা ভার্সিটিতে যায়। সেখানে গিয়ে নামিয়ে দেয় পিহুকে। পিহু শুধু রাগী লুকে বিরাটের দিকেই তাকিয়ে ছিল। বিরাট পিহুকে নিজের দিকে এভাবে তাকাতে দেখে বাইকে হেলান দিয়ে বলে,
—রাগ করোনা পিহু। আমার গার্লফ্রেন্ড হতে চাইলে এমন অনেক কিছু সহ্য করতে হবে। আমি একটু এরকমই। আমি মানুষটাই ডেঞ্জারাস। তাই আমার ভালোবাসাও ডেঞ্জারাসই হবে। তুমি অভ্যাস করে নাও। সেটাই ভালো হবে তোমার জন্য।

পিহু বিরাটের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
—কে হতে চায় আপনার গার্লফ্রেন্ড? আমি তো চাইনা।

—তুমি চাও বা না চাও তোমাকে আমার গার্লফ্রেন্ড হতেই হবে। জানোই তো কর্তার ইচ্ছাতেই কর্ম।

পিহু এবার আর নিজেকে আটকে রাখতে পারে না। জেদের বশে বিরাটকে বলে দেয়,
—আমি আপনার সাথে বাজি ধরছি। আপনার এমন হাল করব যে আপনি স্বপ্নেও আমাকে নিজের গার্লফ্রেন্ড করতে চাইবেন না। ডেঞ্জারাস শুধু আপনি একা না আমিও অনেক ডেঞ্জারাস। এবার আমার সেই ডেঞ্জারাস রূপটাই দেখাবো সবাইকে।

বিরাট ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে যায়। পিহু রহস্যজনক হেসে বলে,
—আমি নিজের কথা রাখব। খুব শখ আমাকে নিজের গার্লফ্রেন্ড বানানো। মিস্টার বিরাট চৌধুরী পিহু যে কি সেটা এবার আপনি বুঝবেন।

পিহু সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। লিপি উপরে দাঁড়িয়ে ছিল। পিহু বলে দিয়েছে বিরাটকে এদিকে আসতে দেখতেই তাকে যেন ম্যাসেজ কথা বলে দেয়। লিপি ঠিক সেই কাজটাই করতে চাইছে। কিন্তু বিরাটের দেখা এখনো মিলছে না। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়। সবকিছু ছাড়িয়ে আগমন ঘটে বিরাটের। বিরাট ফোনে কারো সাথে মনযোগ দিয়ে কথা বলছিল। কথা বলতে বলতে এদিকেই আসছিল।

বিরাটকে আসতে দেখে নেয় লিপি। পিহুর কথামতো তাকে ম্যাসেজ করে বলে,
—তোর শি°কার এসে গেছে। তুই নিজের কাজে লেগে পড়। অল দ্য বেস্ট।

পিহু ম্যাসেজটা দেখে মুচকি হাসে। নিজের হাতে থাকা তেলটার দিকে তাকিয়ে বলে,
—শুনেছি তেল রান্নার কাজে লাগে। আজ অন্য কাজে লাগবে এই তেল। বিরাট চৌধুরীর…

পুরো কথা সম্পূর্ণ না করে দুষ্টু হাসি দেয় পিহু। তারপর তেলটা নিয়ে গিয়ে সিঁড়িতে ফেলে দিয়ে বলে,
—পা পিছলে আলুর দম(হা হা হা)

পিহু একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। বিরাট মোবাইলে কথা বলছিল। অন্যমনস্ক থাকায় সিঁড়ির দিকে খেয়াল করে না। করলে সিঁড়ির মধ্যে পড়ে থাকা তেল দেখতে পেয়ে যেত।

বিরাট তেলে পা পিছলে পড়ে যায়। পড়ে গিয়ে খুব আঘাত পায় সে। পিহু হাসতে হাসতে সামনে এসে হাত বাড়িয়ে দেয়,
—উফ খুব লেগেছে তাই না? পিহুর বয়ফ্রেন্ড হওয়া তো এত সহজ না। আমার বয়ফ্রেন্ড হতে চাইলে এসবে অভ্যাস করে নিতে হবে বিরাট চৌধুরী।

—তারমানে এটা তোমার কাজ।

বিরাট পিহুর হাতটা ধরার চেষ্টা করলে পিহু হাত সরিয়ে নেয়। বলে,
—পিহুর বয়ফ্রেন্ডকে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। এখন নিজে নিজে উঠে দেখান তো দেখি।

কথাটা বলেই পিহু হাসতে হাসতে চলে যায়। বিরাট অনেক কষ্টে উঠে যায়৷ কোমড়ে অনেক ব্যাথা পেয়েছে বেচারা ছেলেটা। পিহুর উপরে অনেক রাগও হচ্ছে। বিরাট সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে পিহুকে এর উপযুক্ত জবাব সে দেবে৷ পিহুকে যেকোন মূল্যেই নিজের গার্লফ্রেন্ড বানিয়ে উপযুক্ত প্রতিশোধ নেবে।
___________________________
বিরাট নিজের রুম থেকে বাইরে আসার জন্য দরজা খুলতেই উপর থেকে ময়লা পানি তার মাথার উপর এসে পড়ে। বিরাট হতবিহ্বল হয়ে যায়। বুঝতে পারে না এ কি হলো তার সাথে। তখনই তার পিহুর কথা মনে পড়ে। পিহু কাল বিরাটের পিছু নিয়েছিল অগোচরে। যদিও পিহু ভেবেছিল বিরাট হয়তো তাকে দেখেনি। কিন্তু বিরাট পিহুকে দেখেও চুপ করে ছিল। বিরাটের কাছে সবটা পরিস্কার হয়৷ সে বুঝতে পারে, পিহুর হাত রয়েছে এসবের পেছনে। গতকাল পিহুই এসেছিল বিরাটের বাড়িতে। বিরাটের বাড়ি দেখে গেছে। আর আজ সকাল সকাল এই ব্যবস্থা করে গেছে তাকে ভিজিয়ে দেওয়ার। বিরাট এত পরিমাণ রেগে যায় যে তার নিজেকে কন্ট্রোল করা কঠিন হয়ে যায়। নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে,
—পিহু তুমি কি ভেবেছ এত সহজে আমায় জব্দ করতে পারবে? যদি ভেবে থাকো তাহলে ভুলই ভেবেছ। বিরাট চৌধুরীকে চেনো নি তুমি। এইবার চিনতে পারবে। অনেক বেশি করে ফেলেছ তুমি। এবার পালা আমার। আমিও তোমাকে শাস্তি দেব।
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here