ডেঞ্জারাস লাভারস পর্ব -০১

ভার্সিটির সবার সামনে থা*প্পড় খেয়ে কাদো কাদো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে পিহু। ভার্সিটিতে প্রথমদিন সিনিয়রেরা র‍্যা-গিং করবে সেটা জানা ছিল। কিন্তু কোন কারণ ছাড়াই এভাবে থা*প্পড় মা*রবে সেটা জানা ছিল না।

পিহুর সব রাগ গিয়ে পড়ছে এখন মাহিন নামের ছেলেটার উপর। এই মাহিনই তাকে অকারণে এভাবে মা*রল। মাহিনকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিহুর বান্ধবী লিপি তাকে টেনে একপাশে নিয়ে গেল। পিহুকে সাবধান করে বলল,
—এখানে বেশি বাহাদুরি দেখাইতে যাইস না বোইন। এটা আমাদের গ্রাম না। এইটা শহরের নামকরা ভার্সিটি। আর যেই মাহিন তোরে থা*প্পড়াইল সে হইল এই ভার্সিটির ছাত্র সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। তার সাথে যদি লাগতে যাইস তাহলে তোর অবস্থা খারাপ করে দিবে।

লিপির কথায় দমে যায় পিহু। নিজের সব রাগ বিসর্জন দিয়ে বলে,
—ঠিক আছে। আমি এবারের মতো চুপ থাকলাম। কিন্তু ভবিষ্যতে যদি আমার সাথে এমন কিছু হয় তাহলে আমার ডেঞ্জারাস রূপ সবাইকে দেখিয়ে দেব। এই পিহু কাউকে বিন্দুমাত্র ভয় করেনা।

হঠাৎ করে মাহিন নামের ছেলেটা পিহুর দিকে এগিয়ে আসে। পিহুর সামনে এসে মাথার চুল ঠিক করে বলে,
—তুমি আমাকে থা*প্পড় মা*রো।

পিহু অবাক হয়ে যায় মাহিনের কথা শুনে। একেই তো এই ছেলে তাকে থা*প্পড় মে*রেছে এখন আবার যেচে থা*প্পড় খেতে এসেছে।

তবে একবার যখন সুযোগ পেয়ে গেছে তখন আর চুপ থাকবে কেন? পিহু ঠা*স করে মাহিনকে একটা থা*প্পড় মে*রে দেয়। মাহিন খুশিতে ইয়াহু বলে ওঠে। মাহিনের এই ব্যবহারে তব্দা খেয়ে যায় পিহু। লিপির কানের কাছে গিয়ে বিড়বিড় করে বলতে থাকে,
—পাগল নাকি ছেলেটা? এভাবে থা*প্পড় খেয়ে আবার নাচছে। একে ছাত্র সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কোন পাগলে বানিয়েছে?

মাহিন পিহুর কানের কাছে এসে বলে,
—তুমি আমার কত বড় উপকার করলে সেটা তুমি নিজেও জানো না। সময় হলে এই উপকারের প্রতিদান আমি অবশ্যই দেব।

পিহু মাহিনকে কিছু বলার আগে সে শিষ বাজাতে বাজাতে চলে যায়। লিপি পিহুকে জিজ্ঞাসা করে,
—সত্যি কইরা বলতো ছেলেটাকে তুই চিনস কিনা? যদি না চিনে থাকিস তাইলে এইরকম কাহিনি তো হওয়ার কথা না।

পিহু অসহায় মুখ করে বলে,
—আমি সত্যি চিনি না।

লিপি কিছু একটা ভেবে বলে,
—আচ্ছা চল। আমি বেশ ভালোই বুঝতে পাইরছি এই মাহিনই তোর ভবিষ্যতের বয়ফ্রেন্ড হইবে। যাই বলিস ছেলেটা দেইখতে কিন্তু মন্দ নয়।

—এ্যা, একটা ছেলে আমায় থা*প্পড় মা*রল আর সে কি না আমার বয়ফ্রেন্ড হবে, জীবনেও না। দেখবি আমি নিজের জন্য খুব সুন্দর একটা বয়ফ্রেন্ড জোগাড় করে নেব। যে হবে শান্ত শিষ্ট ভদ্র লোক।

লিপি বাঁকা হেসে বলে,
—তুই যা মেয়ে তোর ভাগ্যে ডেঞ্জারাস লাভারই রয়েছে। চিন্তা করিস না।

পিহু রাগী চোখে লিপির দিকে তাকায়। লিপি পিহুর রাগী চোখ দেখে হাসি থামায়। খানিকটা সাহস করে বলে,
—আমাকে আর ডর দেখানো লাগব না। চল এখন ক্লাসের টাইম হয়ে যাচ্ছে।

পিহু লিপির সাথে ক্লাসের দিকে যেতে থাকে। সবাই হা করে পিহুর দিকে তাকিয়ে ছিল। একটা মেয়ে পিহুকে দেখিয়ে দিয়ে বলে,
—এই মেয়েটার সাহস দেখে আমি শিহরিত। মাহিন ভাইয়ের গায়ে হাত তুলে। আমি হলে তো এতক্ষণে পটল তুলতাম।

—মেয়েটার আর দোষ কি। মাহিন ভাই তো আগে ওকে থা*প্পড় মা*রল। ও সেটার প্রতিশোধ নিয়েছে মাত্র।

এসব কথা শুনতে শুনতে ক্লাস অব্দি যায় পিহু। ক্লাসে প্রবেশ করতেই আস্কারা নামের একটি মেয়ে এসে পিহুর সামনে বসে। পিহুকে চোখ রাঙিয়ে বলে,
—এই মেয়ে তোমার সাহস কি করে হলো আমার মাহিনের গায়ে হাত দেওয়ার। মাহিন শুধু আমার। ওকে শুধু আমি টাচ করব।

পিহু জিজ্ঞাসা করে,
—আপনি কি মাহিনের জিএফ?

—এত বড় সাহস মাহিনের নাম মুখে নিচ্ছ। আমি হলাম আস্কারা খান। মাহিনের একমাত্র বান্ধবী। ও আমি ছাড়া অন্য কোন মেয়ের সাথে মিশে না। তবে ও আমার বয়ফ্রেন্ড না। আর হতে চাইলেও আমি করব না। আমি তো অন্য একজনকে পছন্দ করি…

লিপি আস্কারার সামনে এসে প্রশ্ন করে,
—কারে পছন্দ করেন আপনি?

—তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। আস্কারা খানকে প্রশ্ন করার দুঃসাহস একদম দেখাবে না। আমি বিরাটকে পছন্দ করি। যদিওবা কখনো ওকে নিজের মনের কথা বলতে পারিনি। তবুও আমি জানি বিরাট শুধু আমার।

লিপি কৌতুহল ধরে রাখতে না পেরে প্রশ্ন করে বসে,
—এই বিরাট কেডা?

পিহু লিপিকে ইশারা করে চুপ করতে বলে কিন্তু লিপি সেই ইশারা বুঝতে পারে না। আস্কারা লিপির দিকে রাগী লুক দিয়ে বলে,
—তোমাকে না বললাম আমাকে আর প্রশ্ন করবে না। বিরাটকে চেনো না? এই ভার্সিটি যার নামে কাপে সেই বিরাটকে চেনো না তুমি? আমি কিভাবে বিশ্বাস করি এমন কথা। বিরাট হলো এই ভার্সিটির ছাত্র সংগঠনের সভাপতি। ওকে সবাই যমের মতো ভয় পায়। দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি সুন্দর পার্সোনালিটি। ওর এটিটিউড, কথা বলার স্টাইল সব তোমাকে মুগ্ধ করবে। কিন্তু দেখিও আবার ক্রাশ খাইও না। বিরাট কিন্তু আমার সম্পত্তি।

লিপি বিড়বিড় করে বলে,
—গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল।

আস্কারা লিপির মাথায় টোকা দিয়ে বললে,
—এরকম ফিসফিস করে কি বলছ? যা বলার সামনে বলো। ফিসফিস করে বললে আমি শুনব কিভাবে?

লিপি ভয়ে ঢোক গিলে বলে,
—বলতেছিলাম আপনার মতো রূপবতী, গুণবতী মেয়েই তো বিরাট ভাইয়ের মতো ছেলেরে ডিজার্ভ করেন।

আস্কারা ভাব দেখিয়ে বলে,
—জানি, জানি সেটা আর বলতে হবে না। এই ভার্সিটিতে আমার মতো মেয়ে আর দুটো খুঁজে পাবা না। আমি হলাম এই ভার্সিটির পরিমনি।

আস্কারার কথাটা শুনে সবাই মুখ টিপে হাসতে থাকে। শুধুমাত্র লিপিই জোরে শব্দ করে হাসে। লিপিকে হাসতে দেখে আস্কারা বলে,
—হাসছ কেন? আমি কি ভুল কিছু বললাম?

লিপি মাথা নাড়িয়ে বলে,
–না।
____________________
মাহিন খুব স্টাইল করে বিরাটের সামনে এসে দাঁড়ায়। বিরাট মাহিনকে দেখে বিরক্ত হয়। মাহিনের নিজের চোখ থেকে সানগ্লাসটা খুলে মাহিনকে বলে,
—আমি বাজি জিতে গেছি। এখন নিজের চেয়ার আমাকে ছেড়ে দাও।

বিরাট হতবাক চাহনিতে বলে,
—কিসের বাজি? আর আমার চেয়ার আমি তোমাকে দিতে যাবো কেন মাহিন।

—ভুলে গেলে তোমার সাথে আমার বাজি ছিল যে, এই ভার্সিটিতে আজ কোন নতুন স্টুডেন্টকে থা-প্পড় মা-রতে হবে। যদি সেই মেয়েটা উলটে আমায় থা-প্পড় মা*রে তাহলে তুমি নিজের গদি আমাকে ছেড়ে দেবে। মানে আমাকে ছাত্র সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক থেকে সভাপতি বানিয়ে দেবে। এখন নিজের কথা রাখো।

বিরাট বাঁকা হেসে বলে,
—যেই ছেলেকে একটা নতুন মেয়েই ভয় করে না সে এই ছাত্র সংগঠনের সভাপতি হবে! হাস্যকর। যাও এখান থেকে। আমার অনেক কাজ আছে। আমাকে বিরক্ত কোরো না।

—এটা কিন্তু ঠিক হলো না মাহিন। তুমি ঠকালে আমায়। এর রিভেঞ্জ আমি নেবোই।

—আই ডোন্ট কেয়ার। তুমি যা করার করো। ইউ নো, বিরাট নিজের কোন কথা রাখে না। ইভেন, আমি তো আজকের কথা কালকেই ভুলে যাই। কাকে কখন কোন কথা দেই নিজেরই মনে থাকে না। কখন তোমার সাথে কি বাজি ধরেছি সেই কথা এখন মনে নেই।

—কাজটা তুমি ঠিক করলে না। ইউ উইল রিগ্রেট ফর দেট।(তোমাকে এরজন্য পস্তাতে হবে)

বিরাট ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে থাকে।

বাইরে এসে মাহিন তার সাঙ্গপাঙ্গদের সাথে কথা বলতে থাকে। মাহিনের এক বন্ধু বলে,
—বিরাটকে ভরসা করাই তোর উচিৎ হয়নি। এখন কি করবি বল। দেখলি তো বিরাট কৌশলে ভার্সিটির সবার সামনে কিভাবে তোর মান সম্মান নষ্ট করে দিল।

—আমি বিরাটের উপর প্রতিশোধ নেব। বিরাট কি ভেবেছে টা কি। যেই মেয়ের হাত দিয়ে আমাকে থা*প্পড় খাইয়ে নিয়েছে সেই মেয়েকে দিয়েই বিরাটের সব মান সম্মান আমি শেষ করে দিব। তোরা শুধু দেখে যা আমি কি কি করি।
(চলবে)
#ডেঞ্জারাস_লাভারস
#পর্ব_১
#লেখক_দিগন্ত
[নতুন গল্প নিয়ে ফিরে এলাম। এই গল্পটি ভার্সিটি রিলেটেড হতে চলেছে। ভালো লাগলে পড়বেন। ধন্যবাদ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here