#তনুশ্রী♥
#লেখক:হৃদয় আহমেদ
#পর্ব_১২
ইশয়াখ আস্তে আস্তে হেটে চলে বঠগাছের নিচে। রোধ উঠলেও মাটি স্যাতস্যাতে ভিজে। সেখানে আকাশ পানে তাকানো তনুর দিকে এগোয় ইশয়াখ। হাটার আওয়াজ কানে আসে,দেখেও না কে এসেছে তনু। ইশয়াখ একবার ভদ্রের ন্যায় গলা খাকড়ি দেয়। তবুও ভাবার্থ প্রকাশ পায় না তনুর। অস্তিত্ব বোঝাতে কন্ঠে মিথ্যে বেদনা আনে ইশয়াখ,
– এখানে বসে আছিস যে?
নিষ্চুপ তনু সেইভাবেই রয়। ইশয়াক আবারো বলে,
– তুই এখানে আছিস তবুও যে তূর আসছে না?
গাছের পাতাগুলোর দিকে তাকিয়েই বলে তনু,
– সে ব্যাস্ত!
– কি করে?
মাথা ফিরে তাকায় ইশয়াখের দিকে। ইশয়াখ ফোকলা হেঁসে বলে,
– অবস্থা তো দেখি ভালো না। সেদিন আমার সাথে কাটালে আজ এমন হয়তো হতো না। ‘
– ক্যান? আপনি আম্মা আর আব্বারে বাঁচাইতেন?
– জানি না। তবে আমার স্ত্রী হলে ভালো হতো। সুখী হতে। গ্যারান্টি করে বলি, মরতো না। কেউই মরতো না।’
– দল ভারি করতেন পটাইয়া?
ইশয়াখ চমকে যায়। দলের কথা তনু কিভাবে জানলো? ভয়ার্ত মুখটা কাচুমাচু করে বলে ইশয়াখ,
– বুঝি নাই।
– হঠাৎ এইহানে? কাজ আছে? তূর মানে, উনি ক্যামনে সাহায্য করে আপনাগোর? ‘
ইশয়াখ দ্বিতীয় বারের মতন চমকায়। তনু এতকিছু জানলো কি করে? তূর বলেছে? ইশয়াখ প্রায় তেড়ে মোড়ল বাড়ির অন্দরমহলে প্রবেশ করে। আবারো আকাশপাণে মুখ নিয়ে তাকায় তনু। অশ্রুতে ভিজে ওঠে মুখ।
এ বাড়ির প্রায় সবটা চেনে ইশয়াখ। জুঁইয়ের অপারেশনের সময় তাকে অনেকবার আসতে হয়েছে। কিন্তু কাউকে ছোঁয় নি একবারও। কিন্তু সখ জাগে তনুর বেলায়, তার ইচ্ছে তনুকে কাছে পাওয়ার!
ইশয়াখ সোজা মোড়ল মইনুলের ঘরে প্রবেশ করে। ইশয়াখকে দেখেই মইনুল পালঙ্ক ছেড়ে উঠে দাড়ায়।
– তনু দল সম্পর্কে কিভাবে জানলো? তূর আমাদের হয়েছে এটাই বা কে বলেছে ওকে? ‘
মইনুল হেঁসে বলে,
– জানি না তো। তূর বলেছে কি?
– সেটাতো জানার কথা আপনার। তূর কই?
মইনুল একটু আগে ঘটা সকল কথা বলে দেন। ইশয়াখ রেগে পালঙ্কের কোনায় লাথি মারে। দুজনে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। তূর হন্তদন্ত হয়ে খুজছে তনুকে। কয়েক মুহুর্তে কোথায় গেলো? সবেই তো তাকে রেখে গেল! এর মধ্যেই..?
তূর জানালা দিয়ে একবার আশেপাশে তাকায়। বঠগাছের পাতার ফাঁক থেকেই চোখে পড়ে তনুর শাড়ি। তূর চেয়াল খিচে বাইরে বেরোয়। আর একটুর জন্য ধাক্কা খায় না ইশয়াখের সাথে। তূর ভ্রু কুঁচকে বলে,
– তুই এখানে?
– যাচ্ছিলি কোথায়?
– তনুকে আনতে! পথ ছাড়।
ইশয়াখ উল্টো এগিয়ে আসে। তূর না চাইতেও ভেতরে ডোকে ঘরের। ইশয়াখ বলে,
– আমাদের কথা তুই তনুকে বলেছিস?
ভ্রু নামিয়ে বলে তূর,
– আমি কিছু বলিনি!
– তাহলে ও যে আমায় বললো…
– তুই তনুর কাছে গেছিলি? নাকি তুই ওকে বাইরে নিয়ে গেছিস? ‘
রেগে বলে তূর। ইশয়াখ হাতে মৃদু তালি বাজিয়ে বলে,
– তো? গেছিলাম! কি করবি? হা হা হা মজা করছিলাম। আসার সময় দেখলাম ভাগিনাটা বসে আছে পথের ফকিরের মতন। তা এভাবেই রাখা হয় নাকি? ‘
– ফাজলামো বন্ধ কর।
বলেই ইশয়াখকে কাটিয়ে বেরোয় তূর। দরজার সামনে যেতেই ইশয়াখ বলে ওঠে,
– কাল রাত আটটার মাধ্যেই তনুকে যেন হসপিটালের বেডে পাই! মনে রাখিস রাত আটটা! ‘
তূর শুনেও না শোনার ভান করে চলে যায়। ইশয়াখ আসায় বাড়ির কোন মেয়ে বউই ঘর থেকে বেরোচ্ছে না। ইশয়াখ মইনুলের ঘরে গিয়ে বৈঠকে বসে!
একগাদা রাগ দেখিয়ে ঘরে আনে তূর তনুকে। নিজ হাতে শাড়ী পাল্টে দেয়। বিছানায় বসিয়ে জিজ্ঞেস করে,
– কি জেনেছো?
তনু তূরের মুখপানে তাকিয়ে থাকে। শ্যামলা বর্নের কানের কিছু অংশ কাটা জায়গাটা বারবার টানে তনুর কাছে। তনু তাকিয়েই রয়! তূর আবারো বলে,
– ইশয়াক কি বললো?
আস্তে করে মাথা ডলে পড়ে তনুর। তূরের বুকে মাথা গুজে নিশ্চুপ থাকে। তূর মাথায় হাত রাখতে চায়, জড়িয়ে আদর করতে চায়। কিন্তু হাত কাঁপছে। বুক ভরা কষ্টতে তার আর হাত ওঠে না। শান্ত স্বরে বলে,
– বলো কি জেনেছো তুমি? কে বলেছে?
– আমি বললে তাকেও হসপিটালে নিয়ে যাবেন? ‘
চমকালেও প্রকাশ করে না তূর। বলে,
– হসপিটালে কি হয়?
– এটাকি আমার জানার কথা?
– আমি জানি না!.
– সত্যিই কি কিছুই জানেন না আফনে? নাকি ভান ধরেন? ‘
– আমি সত্যই জানি না! কে বলেছে এসব কথা তোমায়?
– আমার মন!
– কথা ঘোরাতে পারোনা তুমি! বলো কে বলেছে?
– কথা কইতেই তো পাইতাছি না আর ঘোরাবো? ‘
মাথা তুলে কথাটা বললো তনু। তূরের চোখ বলছে,’ এসব মিথ্যে। যা দেখছো,বুঝছো সব,সবই কোন নাটক যাত্রা! অতলের রহস্য বাকি! বাকি এখনো! আমায় ভুল বুঝোনা। বুঝোনা এই হৃদয়পোড়া ছেলেটার কথা? ‘
তনুর চোখে ঝড়ছে অবিশ্বাস,’ আমিতো চাই আপনারে। আপনিতো প্রথম রাত্তিরেই কইছিলেন এ বিয়া আপনি করতে চান নাই! তাইলে আজ কেন এত জটলা? কোথায় সেই ভগ্নহৃদয় মুখ আপনার? কোথাকার কোন জঙ্গলে হাড়াইছেন? হাতড়াইয়াও তো পাই না! জ্বলছে অগ্নিশিখা বুহে! থামান! নিভান এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি! নিজ মামাকে ঘৃনা হয় আমার! সয়তানের থেকেও অধম সে! ‘
কথাগুলো চোখেচোখেই হয় শুধু। মুখ ফুটে আর বেরোয় না। তনু নিচমুখ নিয়ে রয়। অল্পবয়সী ধবধবে সাদা গালের পাশে কালো কেশের ছোট ছোট চুলগুলো কি অপুর্বই না লাগে! তূর চোখ সরিয়ে মেঝেতে রাখে।
– কিছু প্রশ্নের উত্তর চাই আমার!
তনুর কথায় মাথা তোলে তূর। বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় তূর! তূর উল্টো প্রশ্ন ছোড়ে,
– কে ডুকাচ্ছে এসব তোমার মাথায়?
– কথা ঘোড়ান?
– আমার কথা আমাকেই বলো?
– উত্তর পামু তো?
– কি জানো তুমি?
– অল্পেক্টু কথা!
– কে বলেছে?
তনু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
– নিজের জন্য অপরের প্রাণ আমি নষ্ট করতে চাই না! আসি! ‘
তূর তড়িৎ গতিতে বলে,
– কোথায় যাচ্ছো?
– ইশয়াখের কাছে!
________________
– তুই আইজও যাবি ওই উচু টিলায়?
– নইলে পয়সা পামু কোত্থেকে?
– খানিক আগেই বৃষ্টি হইছে। ছাগলে খাইবো না তো! পেঠ না উঠলে টাকা পাইবি না তো! ‘
মায়ের কথা কানে তোলে না চঞ্চল। প্রেয়সীকে দেখার জন্য তার মন উতলা! সে তবুও বলে,
– মা তুমি শুনো, বাড়িত টাকা নাই! গত দু সপ্তাহ একটাকা বাড়িত আসে নাই। আইজ ছাগল কয়টা মালিকের থেকে নিয়ে টিলায় চড়াই আনি। উনি যাইতে কইছে। ‘
বেড়িয়েই যাচ্ছিলো চঞ্চল। নমিতস পিছু ডাকে,
– পাত্রীপক্ষ আসবে আজ!
– আম্মা তুমি…
– আর কত দিন বাজান? বিয়া সাদি করবি না?
– আর কয়েকদিন শুধু চাই..
– তোর শ্যাষ মনে আছে কবে তুই বলছিস আর কয়দিন দরকার! ‘
– আমি আসি।
চঞ্চল উত্তর না দিয়েই চলে যায়। হা হুতাশ নিয়ে চালিতে বসেন নমিতা বেগম। তার খুব চিন্তা হয় ছেলেটার জন্য। কে জানে, মা বাপ হারা ছেলেটা আর কবে বিয়া করবে!
পাত্রীপক্ষ পঞ্চমবারের মতন ফিরে যায়। চঞ্চল সামনে আসে না! নমিতা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কাজে মন দেয়।
চঞ্চল চড়ুই পাখি পোষে। ধান কুড়াতে আর এখন যাওয়া হয় না। মাঠে কৃষকরা সবে ধান গাড়ছেন। ছোট সবুজ মাঠ এখন ধানে ভর্তি! ধান ক্ষেতের আইলে ঘাস হয়েছে প্রচুর। চঞ্চল ইচ্ছে করেই টিলায় না গিয়ে সেখানে ছাগল নিয়ে যায়। ছাগল ধানগাছ ছাড়া খুটে খুটে খেতে থাকে ঘাস! আর চঞ্চল অপেক্ষা করতে থাকে সেই মেয়েটির।
কিয়ৎক্ষন পর সেই নারীর দেখা মেলে। সতেরো বয়সি নারী সবুজ রঙা শাড়ি পড়ে হেটে আসে ক্ষেতের আইল বেয়ে! চঞ্চল খুশিতে গদগদবচন! আনন্দে চেঁচায়,
– জুঁইইইই! তুমি এইহানে আইসো?
#চলবে…
[বি দ্রঃইশয়াখ তনুর মামা। কাল ভুলে মামাতো বাি লিখা হয়েছিলো]