তবুও তুমি পর্ব -০২

#তবুও তুমি
~পর্বঃ০২~
~লেখায়ঃ ফাহমিদা_মুশাররাত~

চোখে মুখে পানির ছিটে পড়তেই ইশা চোখ মেলে তাকায়। সামনে সিগ্ধ আর সবাই তার দিকে চেয়ে আছে।

“আর ইউ ওকে! শরীর ভালো না লাগলে আপনি ছুটি নিয়ে চলে যেতে পারেন।”(সিগ্ধ)

ইশা কোনো প্রতি উত্তর করলো না। বরং চুপচাপ ক্লাস শেষ করলো। পুরোটা দিন ইশা এভাবেই চুপচাপ ছিল। ইশাকে চুপচাপ থাকতে দেখে রাফিয়ার একদমই ভালো লাগছে না।

“কিরে ইশা তোর কি হয়েছে হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে পড়লি কেন! তোর শরীর ঠিক আছে তো?” (রাফিয়া)

“হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি!” (ইশা)

রাফিয়াকে যে ইশা মিথ্যে কথা বলেছে রাফিয়া সেটা বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে।

“তোর না খিদে পেয়েছে, চল দু’জন মিলে ক্যান্টিনে যাই!” (রাফিয়া)
তারপর দুজন মিলে ক্যান্টিনের দিকে চলে গেল।

★★
অন্যদিকে…..
ক্লাস রুমে এসে সারা রুম জুড়ে সিগ্ধের চোখ একজনকে খুঁজছে। অনেক খোঁজার পর সিগ্ধের চোখ ক্লাসের এক কোণা বরাবর কাঙ্ক্ষিত মানু্ষের সন্ধান পায়। সে আর কেউ নয় ইশা।

সিগ্ধ দেখলো ইশা বসে বসে খাতায় আঁকাজোকা করছে। সিগ্ধ সবার পরিচয় নিচ্ছে ঠিকই কিন্তু তার মনোযোগ শুধুমাত্র ইশার দিকে। মেয়েরা যে তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে এটা যদি ইশার চোখে পড়তো তাহলে হয়তো এতক্ষণে ক্লাস রুমে কুরুক্ষেত্র হয়ে যেত।

সিগ্ধ দেখলো ইশার সামনে পেছনে কোনো মনোযোগই নেই। এতোক্ষণ ধরেও সে একবারের জন্যেও সামনে তাকায় নি। এবার সিগ্ধের রাগ সপ্তম আকাশে চড়ে বসে।

“এই মেয়ে কোনো দিনও শোধরাবার নয়। একে একটা শিক্ষা দিতেই হবে!” মনে মনে সিগ্ধ কথাটি বলেই ইশার দিকে এগিয়ে আসে। যখন সিগ্ধ ইশাকে একটু জোর গলায় কথা বললো ওমনিই ইশা জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে পড়ে যায়।

★★

ক্যান্টিনে আসার পর ইশা খেয়াল করলো দুটি চোখ তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

“এই লোকটা এখানে কি করছে, উফফ একটু শান্তিও পাবো এর জন্য। যেখানে যাবো সেখানেই সে হাজির হবে কোনো না কোনো উপায়ে!” (ইশা মনে মনে কথাটি বলল যাতে করে রাফিয়া কিছু শুনতে না পায়)

ইশা আর রাফিয়া খাওয়া শেষ করে ক্যান্টিন থেকে বেরোতে যাবে ঠিক তখনি সিগ্ধ তাদের দিকে এগিয়ে আসে।

“মিস ইশা! ক্লাস শেষে আপনি একবার আমার সাথে দেখা করবেন!” বলে সিগ্ধ ইশাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সেখান থেকে চলে গেল।

ক্লাস শেষে ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও সিগ্ধের কথা মতো ইশা সিগ্ধের সাথে দেখা করতে গেল। পুরো ক্যাম্পাস খুঁজেও ইশা সিগ্ধের খোঁজ পেল না। অবশেষে লাইব্রেরি রুমে সিগ্ধের দেখা মেলে। সিগ্ধ বসে বসে বই পড়ছিল।
ইশা অনুমতি না নিয়েই লাইব্রেরি রুমে ডুকে পড়লো।

“আমাকে কি জন্যে ডেকেছেন!” (ইশা)
“নিশ্চুপ……..”(সিগ্ধ)
” কি হলো বলছেন না কেন?”(ইশা)
“কি বলবো? কি শুনতে চাও?”(সিগ্ধ বইয়ের মাঝে চোখ রেখেই বললো)

” আপনি কি জন্যে ডেকেছেন সেটাই শুনতে চাচ্ছি! “(ইশা)

” আমি ডাকলাম আর তুমি চলেও এলে বাহ্! এখনো আগের মতোই আছো দেখছি!”(সিগ্ধ)

ইশা কিছু না বলেই চলে আসতে নেয় আর তখনি সিগ্ধ ইশার হাত ধরে পেলে।

“টিচার না বলা পর্যন্ত এক চুল পরিমাণও নড়তে নেই সেটা কি তুমি জানো না?” (সিগ্ধ)

“আপনার ফালতু কথা শোনার সময় আমার হাতে নেই। ” (ইশা)

“আমার বউ হলে তো তাই করতে হবে! তখন কি করবে?”(সিগ্ধ)

” আপনার বউ আমি হলে তো?”(ইশা)

“তাও ঠিক। কিন্তু হতে তো চেয়েছিলে!” (সিগ্ধ)

ইশা আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে যায়।

★★

অতীত……
সিগ্ধ আর ইশা একে অপরকে আগে থেকেই চেনে। ইশা যখন একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তখন ইশার সাথে সিগ্ধের আলাপ হয়। ইশা সিগ্ধের প্রেমে পড়ে যায়। আর অনেকবার সিগ্ধকে এভাবে না হয় ওভাবে বোঝাতে চেষ্টা করে। কিন্তু সিগ্ধ বুঝেও সব না বোঝার ভান করে।

একদিন ইশা কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে সিগ্ধ তার সাথে দেখা করার কথা বলে। ইশা খুব খুশি হয়। আর সে সিগ্ধের কথা মতোই তার সাথে দেখা করতে যায়। সেদিনই ইশার মনে সিগ্ধের জন্য তৈরি হয় একরাশ অভিমান।

সিগ্ধ যখন ইশাকে তার সাথে দেখা করার কথা বলে। তখন ইশা বুঝে হয়তো সিগ্ধও তার জন্য কিছু অনুভব করে যেমনটা ইশা সিগ্ধের জন্য করে থাকে। ইশা সেদিন সিগ্ধকে অবাক করার জন্য সিগ্ধের পছন্দের রং কালো রঙের শাড়ী পড়ে, সাথে ম্যাচিং কানের দুল, হাত ভর্তি চুড়ি, চোখে হালকা কাজল আর হালকা করে একটু লিপস্টিক লাগিয়ে নেয়। আয়নাতে ভালোভাবে পরক করে ইশা বেরিয়ে পড়ে। তার কাঙ্ক্ষিত মানুষের সন্ধানে।

ইশা আধঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যায় সিগ্ধের বলা জায়গায়। সিগ্ধও সেদিন কালো রঙের পাঞ্জাবি পরিধান করে। সিগ্ধের আর ইশার ড্রেস আপ দেখে যে কেউই হয়তো বলে দিতো নিশ্চয়ই এরা স্বামী স্ত্রী কিংবা প্রেমিক প্রেমিকা।

“চলো কোথাও বসে কথা বলি!” (সিগ্ধ)
“হুম চলুন!” (ইশা)

“কিভাবে কথাটা শুরু করবো ভেবে পাচ্ছি না!” (সিগ্ধ)

“জি আপনি বলুন আমি শুনছি!” (ইশা)

“তুমি কি আমাকে সত্যি সত্যিই ভালোবাসো?” (সিগ্ধ)

ইশা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। লজ্জা মিশ্রিত মুখ নিয়ে ইশা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। ইশার এরূপ ফেস দেখে সিগ্ধ তার উত্তর পেয়ে গেছে!
সিগ্ধ মুচকি হেসে বললো,
” উইল ইউ মেরি মি ইশা?”

ইশা সিগ্ধের মুখে এমন কথা শুনে অবাক চোখে একবার সিগ্ধের দিকে তাকিয়ে আবার সিগ্ধের সাথে চোখাচোখি হতেই লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে ফেলে।

সিগ্ধ এবারও তার উত্তর পেয়ে যায়।
সিগ্ধ এবার ইশার দিকে তাকিয়ে বলে,

“কিন্তু আমার পক্ষে তোমাকে নিজের করে নেওয়া কখনোই সম্ভব নয়! তার কারণ আমার পরিবার তোমাকে কখনোই মেনে নেবে না! নিজের বাবা মায়ের পছন্দ মতো একটা ছেলেকে বিয়ে করে নিও জীবনে সুখী হবে। ” (সিগ্ধ)

“কিন্তু আমার তো আপনাকেই চাই!” (ইশা ছলছল নয়নে তাকিয়ে কথাটি বলল)

“আমি কথা একবারেই বলতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করি তাই দ্বিতীয়বার বলতে চাচ্ছি না, বাই ভালো থেকো! আর হ্যাঁ বিয়েতে ইনভাইট করতে ভুলো না যেন! এবার তুমি আসতে পারো!” (সিগ্ধ)

সিগ্ধের কথায় ইশার প্রচন্ড পরিমাণে রাগ হয় আর সিগ্ধের প্রতি এক বুক অভিমান নিয়ে সেদিন সিগ্ধের কাছ থেকে চলে আসে। সেদিন আসার পর ইশা সিদ্ধান্ত নেয় ইশা আর কখনো সিগ্ধের আশে পাশে যাবে না। এজন্য সে সেই কলেজ থেকে বদলি হয়ে অন্য কলেজে এডমিশন নেয়। কিন্তু…………

চলবে……….!

[ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here