#তবুও ভালোবাসি তোমায়
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-৩
কারণ হুট করে আয়ান বলে উঠল
– দেখো আয়রা তোমাকে যত্ন করছি বলে ভেবো না আমি তোমার হয়ে গেছি। একজন ডাক্তার হিসেবে একজন রোগীকে যতটা যত্নের প্রয়োজন ঠিক ততটাই যত্ন করছি। এর বাইরে কিছুই না। তবে তোমাকে আমি ক্ষমা করব না। তোমার জন্য আরশির সাথে আজকে বিয়েটা হলো না। আরশির মন হুটহাট পরিবর্তন হয়ে যায়। এখন আবার তার মনে কী ঝেঁকে বসবে জানি না। মেজাজটা পুরো খারাপ করে দিলে তুমি। তোমাকে এর জন্য প্রতিদান দিতে হবে।
আমি আয়ানের কথা শোনে হতবাক। আমাকে নাকি এর জন্য প্রতিদান দিতে হবে কথাটা শোনে আমি হালকা হেসে বললাম
– আমি নাহয় তোমাকে আমার ভুলের প্রতিদান দিয়ে দেবো।তুমি পারবে তো আমার কষ্টের প্রতিদান দিতে?
– তোমার কষ্টের প্রতিদান মানে?
– তুমি কী জানতে না আমার বাবার টাকা নেই এত।তুমি কী জানতে না আমি মেডিকেলে পড়ি না?তুমি কী জানতে না আমি তোমার জন্য পাগলামি করি? তুমি কী জানতে না তোমার পরিবার সহজে মেনে নিবে না তাদের মানাতে হবে। সব জেনেও আমার সাথে ছলনা করেছিলে কেন? কী দোষটা ছিল আমার? ভালোবাসায় তো কমতি রাখেনি। দিনের পর দিন তোমার অপমান মুখ বুজে সহ্য করেছি। সবকিছু জানার পর এত স্বপ্ন কেন দেখিয়েছিলে? কেন আমার পরিবারকে বলে বিয়ে ভাঙ্গিয়েছিলে? কেন আমার মা কে কথা দিয়ে বলেছিলে যে পরিবার বুঝিয়ে যেভাবে পারো আনবে সময় যেন তোমাকে দেওয়া হয়। আমার পরিবার তো তোমার কথার উপর ভরসা করেছিল। জানতে তো আমার কিছুই নাই তবে তোমাকে তো অন্ধের মতো ভালোবাসতাম। তোমার অবহেলা গুলো আমাকে পাগলামি করতে বাধ্য করেছিল। আজকে কেন এত বড় কষ্ট দিলে। আমার কথা ভাবার সময় পর্যন্ত নেই তোমার। আমাকে দেওয়া কষ্টের প্রতিদান কী তোমার পাওয়া উচিত না? জানো কেমন লাগে? ভেতরটা যদি দেখানো যেত তবে বুঝতে পারতাম। তোমাকে কী আমি যোগ্যতা দেখে ভালোবেসেছিলাম? নাকি তোমার টাকা? তাহলে? তাহলে আজকে কেন এসব বাঁধা হয়ে দাঁড়াল। বিয়ে করবে না ভালো কথা পরিবার পর্যন্ত নিয়ে আমার পরিবারকে অপমান আর ছোট করার কী দরকার ছিল বলবে?
– দেখো আয়রা তুমি চেয়েছিলে বলে রিলেশনে গিয়েছিলাম। তোমার কষ্ট দেখে তোমার প্রতি ক্ষীণ মায়া জন্মেছিল। এর বাইরে কিছুই না। তোমাকে আমি ভালোবাসতেই পারিনি।
– বাহ! আমার কষ্ট দেখে তোমার মায়া হয়েছিল বলে রিলেশনটা এত দূর এনেছিলে তাই না? তাহলে এখনেরটা দেখে মায়া হয় না? আরে মায়া হয়েছিল ভালো কথা আমি তো তোমার প্রতি দুর্বল ছিলাম তুমি আমাকে এত আশ্বাস না দিলেও তো পায়ে পড়ে থাকতাম। এত আশ্বাস কেন দিয়েছিলে বলো? কী দরকার ছিল পরিবার পর্যন্ত গিয়ে আমার স্বপ্নের আকাশটা এত রঙিন করে আমার থেকে দূরে গিয়ে কষ্টটা বাড়িয়ে দিতে। আমি তো ক্ষমা করে দিয়েছি।আমার আত্মা কী পারবে ক্ষমা করতে? উত্তর দাও।
আয়ান আমার কথা শোনে চুপ। কিছুক্ষণ চুপ থেকে তার মুখ থেকে উত্তর আসলো
– আমি আমার জায়গায় ঠিক আছি। এখানে আমার কোনো দোষ নেই।
মনে মনে অট্ট হাসলাম। সে নাকি তার জায়গায় ঠিক আছে। সব দোষ আমার। আমার কষ্টটা কত প্রবল হচ্ছে আমি জানি। সারাদিন চোখের সাথে যুদ্ধ করতে করতে শেষ আমি। আর আজকে এসব শোনতে হচ্ছে। তবুও এ মানুষটার জন্য আমার মন বেহায়ার মতো এত পুড়ে কেন?কেন কষ্টের অনলে আমার চোখগুলো জ্বলে শেষ হয়। এমন কেন হলো প্রশ্নটা যেন বারবার মনে বাজতে লাগল। এর মধ্যেই আরশি আসলো খাবার নিয়ে। আরশি খাবার টা নিয়ে ঠিক আমার পাশে বসলো। আরশি স্যুপ এনেছে। আরশি স্যুপ টা খাওয়াতে নিবে এমন সময় আয়ান বলে উঠল
– আরশি স্যুপে কী চিংড়ি মাছ দেওয়া?
আরশি স্যুপের চামচটা আমার মুখের সামনে ধরে আয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
– হ্যাঁ চিংড়ি মাছ দেওয়া আছে। কেন?
– তাহলে এটা ওকে দিও না। ওর এলার্জি চিংড়ি মাছে। খেলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
আরশি স্যুপের চামচটা আমার মুখ থেকে সরিয়ে বাটিতে রেখে আয়ানের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
– তুমি জানলে কী করে আয়রার চিংড়ি মাছে এলার্জি?
আয়ান আরশির কথা শোনে এবার একটু কাচুমাচু হয়ে গেল। খানিকক্ষণ চুপ থেকে বলল কিছুক্ষণ আগে কথায় কথায় বলল ও। আমি সব কিছু জেনে নিয়েছি আর কী, ওর কিসে সমস্যা হয় আর কিসে হয় না।আরশি হালকা দম ছেড়ে বলল
– ওহ আচ্ছা…. তাই বলো।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
– আচ্ছা চিংড়ি মাছ খেতে হবে না। তুই শুধু স্যুপটা খা।
বলেই আরশি পুনরায় চামচে স্যুপ নিয়ে আমার মুখে ধরল। আমি স্যুপটা মুখে নিয়ে ভাবতে লাগলাম আয়ান এখনো মনে রেখেছে আমার চিংড়ি মাছে এলার্জি আছে। সত্যিই কী আয়ান এখনো আমাকে ভালোবাসে নাকি এটা তার মিথ্যা ছলনা আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে স্যুপটা গিলতে নিলেই গলায় আটকালো। প্রচন্ডরকম হেঁচকি তুলতে লাগলাম। আয়ান আমার হেঁচকি দেখে পাগলের মতো পানি খুঁজা শুরু করল। এক পর্যায়ে পানি নিয়ে অস্থির হয়ে পানির বোতলটা এগিয়ে দিল। আমি হাত থেকে বোতলটা নিয়ে পানি খেয়ে আয়ানের চোখের দিকে তাকালাম। একদম নিষ্পাপ দুটো চোখ। এ চোখের মায়াতেই আমি পড়েছিলাম। আজকে আবার পড়লাম। কেন জানি না এখনো বিশ্বাস করতে পারি না আয়ানের পরিবর্তনটা।এর মধ্যেই আরশি হালকা গলায় বলল
– আয়রা ঠিক আছিস তো?
আমি আয়ানের চোখ থেকে আরশির ডাক শোনে সাথে সাথে চোখটা ফিরিয়ে আরশির দিকে তাকিয়ে বললাম
– আমি তোর বিয়েতে এসে বেশ ঝামেলায় ফেলে দিলাম তোকে। আমার জন্য তোদের বিয়েতে ব্যাঘাত ঘটল আজকে। এমনটা হওয়া ঠিক হয়নি। খুব অপরাধবোধ কাজ করছে। অশান্তি লাগছে খুব।
আরশি হালকা হেসে বলল
– আরে না…. তেমন কিছুই হয়নি। বিয়ে আজকে হয়নি ভালোই হয়েছে। আমার ইচ্ছা হচ্ছে আয়ানের সাথে আরও একমাস প্রেম করি। তাই বিয়েটা আমি একমাস পরেই করব। তখন তুই একদম সুস্থ হয়ে আসবি। আর খাওয়া দাওয়া করে আসবি। কেমন?
আরশির কথা শোনে আমি আড়ঁচোখে আয়ানের দিকে তাকালাম। লক্ষ্য করলাম আয়ান বেশ রেগে আছে।আয়ানের রাগটা দেখে মনে বেশ ভয় হলো।ভাবতে লাগলাম আরশির এ মানসিক পরিবর্তনের জন্য আয়ান আমাকেই দায়ী করবে। এসব ভাবতে ভাবতেই আরশি স্যুপ এগিয়ে দিচ্ছিল আর আমি খাচ্ছিলাম। খাওয়া শেষ করে হালকা বিশ্রাম নিলাম। কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম বুঝতে পারলাম না। ঘুম থেকে উঠে খেয়াল করলাম আয়ান বসে আছে আর আরশি নেই। আয়ানকে এবার জিজ্ঞেস করার সাহস হলো না আরশি কোথায়। কিন্তু আয়ান আমাকে জাগতে দেখেই বলল
– তোমার কী শরীর ঠিক হয়েছে? ঠিক হলে বলো একটা রিকশা করে দেই তারপর তুমি বাসায় যাও।আরশির নানু হুট করে অসুস্থ হওয়ার কারণে তাড়াহুড়ো করে সে চলে গেছে আর তোমার মতো আপদকে রেখে গেছে দেখার জন্য।চলে যেতাম একা ফেলে তবে আরশি রাগ করে বসবে তাই বসে রইলাম।শরীর ভালো হলে বলো আমি রিকশার ব্যবস্থা করছি।
শরীরটা বেশ ক্লান্ত। শরীরে যদিও শক্তি পাচ্ছিলাম না তবুও নিজেকে শক্ত করে বিছানা থেকে উঠে বসলাম। আর আয়ানকে বললাম
– আমি ঠিক আছি। তুমি আমার যাওয়ার ব্যবস্থা করো।
আয়ান বিরক্ত গলায় বলল
– সবকিছু ঠিক করে উঠো। আর আমার সাথে চলো।
আমি নিজের সমস্ত জোর খাটিয়ে বেড থেকে উঠে দাঁড়ালাম। আয়ান হেঁটে একটু সামনে গেল আর আমি পেছনে দাঁড়িয়ে আছি। মাথাটা হালকা ঘুরছে যদিও। তবুও হেঁটে সামনের দিকে গেলাম। আয়ানকে হালকা গলায় ডাক দিলাম। আয়ান আমার দিকে ফিরে আমার কাছে এসে হাতটা শক্ত করে ধরে বলল
– নিজেকে সামলে নাও। খারাপ লাগলে রেস্ট নাও।
– আমি যেতে পারব আমাকে রিকশা করে দাও।
আয়ান আমার কথায় উপর ভরসা করে হাসপাতাল থেকে আমার হাত ধরে বের করে রিকশার কাছে গেল। কিন্তু সেখানে গিয়েই বিপত্তিটা ঘটল। কারণ-
(#তবুও ভালোবাসি তোমায়
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-৪
কারণ হুট করেই আমার মাথাটা ঘুরে যায়। আমার মাথাটা ঘুরতেই আমি আয়ানকে শক্ত করে ধরে ফেলি। আয়ান আমাকে এভাবে ঝাঁপটে ধরতে দেখে আমাকে কোনোরকম ছুটিয়ে রাস্তার মধ্যে জোরে একটা থাপ্পর কষিয়ে দেয় গালে।আর বলে উঠে
– আমাকে এভাবে ধরার সাহস কে দিছে তোমায়। নাটক করে গায়ের উপর এলিয়ে না পড়লেই নয় নি?
শরীর দুর্বল, মাথাটা বেশ ঘুরছে,এর মধ্যে এমন থাপ্পরে যেন চোখটা আরও ঝাঁপসা হয়ে যাচ্ছে। ঝাঁপসা চোখে দেখছিলাম রাস্তার মানুষগুলো আমাদের নাটক দেখছে। শরীরটা এত খারাপ কথাও বলতে পারছিলাম না। আয়ান এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য আমাকে ধরে তাড়াতাড়ি রিকশায় তুলল। ততক্ষণে আমার শরীর কাঁপতে লাগল। মনে হচ্ছে এ অপমান আমার জন্য কেন বরাদ্দ?
কেন জানি না রিকশায় বসে ছয় মাস আগের ঘটনায় ফিরে গেলাম। ছয়মাস আগে আমি আমার রাজকুমার মানে আয়ানের মন জয় করতে নদী হাওর পার হয়ে চলে গেছিলাম তার কাছে। কারণ ছোট বেলায় নানী, দাদীর মুখে শোনেছিলাম এক মহারাজ্যের রাজকুমার এসেছিল রাজকন্যাকে রাক্ষস পুরী থেকে উদ্ধার করার জন্য। সাত সাগর তের নদী পার করে সে রাজকন্যাকে উদ্ধার করে রাজকন্যার মন জয় করে। কিন্তু আমার রাজপুত্র তো আর আসবে না তাই মাহা আবেগ নিয়ে আমি তার কাছে ছুটে গেছিলাম। ভেবেছিলাম সে আমার কোমল মুখটা দেখে বুঝবে আমি তাকে কতটা ভালোবাসি তবে সেদিন যা হয়েছিল সেটা মনে হলেই গা টা শিউরে উঠে।
ভেবেছিলাম আমার রাজপুত্র আমাকে ভালোবাসবে।আমার সকল কষ্টের অবসান ঘটবে।তবে সেদিন কপালে জুটেছিল জুতার আঘাত। সে আঘাত নিয়েই বাসায় ফিরেছিলাম। আঘাতের দাগটা এখনো বুকে লেগে আছে। আর আজকে আয়ানের এ থাপ্পরটা যেন আগের সে কাহিনি টা আবার মনে করিয়ে দিল। বারবার এমন পরিস্থিতির শিকার কেন আমাকে হতে হচ্ছে জানি না। এত অপমান সহ্য করতে পারছি না। মাঝে মাঝে মনে হয় শেষ করে দিই নিজেকে। অশান্তি লাগছে খুব। এক রিকশায় একই সাথে আয়ানের সাথে বসে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যেই রিকশাটা থেমে গেল। বুঝতে পারলাম আমি আমার বাসার সামনে চলে এসেছি। আয়ান রিকশা ওয়ালা মামাকে বলল আমাকে বাসায় দিয়ে আসতে। মামা তখন আয়ানকে বলল
– মামা আপনি দিয়ে আসেন। খালার তো শরীরটা খুব খারাপ। আমি গায়ে হাত দিয়ে নিলে কেউ যদি মন ধরে বসে। আপনিই নিয়ে যান না।
আয়ান তখন মামাকে বলল
– মামা আমার ইমারজেন্সি কাজ আছে। আপনাকে ৫০০ টাকা দিচ্ছি আপনি উনাকে নিয়ে দিয়ে আসুন।
– আরে মামা আপনি বিষয়টারে টাকা দিয়ে দেখতাছেন কেন? আমার টাকা লাগব না আমি এমনিই দিয়ে আসতে পারুম। তবে খালার গায়ে ধরে নিয়ে গেলে খালা যদি মন ধরে বসে। আশেপাশের কেউ যদি মন ধরে বসে তাই বলছিলাম।
আয়ান আর রিকশা ওয়ালার মামার কথোপকোথন শোনে বেশ অবাক হলাম। একজন হলো শিক্ষিত প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা আর একজন অশিক্ষিত দিনে আনে দিনে খায়। একজন মানবতাকে টাকা দিয়ে বিক্রি করতে চাচ্ছে আরেকজন নিজের মনুষ্যত্ত্বটাকে টাকার কাছে বিক্রি করতে নারাজ। সার্টিফিকেট থাকলেই শিক্ষিত হওয়া যায় না। এটা আয়ান আর মামার কথা শোনেই বুঝলাম। আয়ানের মনটা আজকে টাকা আর যোগ্যতার অহংকারে মুড়িয়ে আছে। তার কাছে মানবিকতা, ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই। আমি নিজেকে সামলে নিয়ে মামাকে বললাম
– মামা আপনি আমার বাবার মতো। আমার বাবার বয়সী। আপনি আমাকে ধরলে কিছুই হবে না। আপনি একটু আমাকে কষ্ট করে গেটের ভেতরে নিয়ে যান বাকিটা আমি যেতে পারব।
মামা আমার কথা শোনে একটা হাসি দিয়ে বলল
– মা গো তোমার মতো আমার একটা মেয়ে আছে। তুমি যে আমারে এভাবে বলছো এটাই খুশি হয়ছি। তুমি আমার কাঁধে ভর করে নামো।
আমি মামার কাঁধে ভর করে নামলাম। আয়ান মামাকে রিকশা ভাড়া দিতে গেলে আয়ানের মুখের উপর বলে দিলাম
– তোমাকে রিকশা ভাড়া দিতে হবে না। মামাকে যে ৫০০ টাকা দিতে চেয়েছিলে ঐটা দিয়ে আরশির জন্য কিছু নিয়ে যেও সে খুশি হবে। আমি মামার ভাড়া দিতে পারব। সে যোগ্যতা আল্লাহ আমাকে দিছেন। ভালো থেকো। কখনো যেন তোমার মুখোমুখি হতে নাহয় দোআ করি।
বলেই মামার সাথে বাসায় আসলাম। মামাকে বাসায় ঢুকে ভাড়া দিতে চাইলে মামা আর ভাড়াটা নেয় নি। হাসি মুখে বলল
– মা আজকে ভাড়াটা নিতে মন চাইতেছে না। তুমি নাহয় অন্য কোনোদিন আমার রিকশায় উঠার সুযোগ হলে ভাড়াটা দিও। আজকে জোর কইরো না। জানি না তোমার মনে কিসের কষ্ট তবে তোমার মুখে তোমার মনের কষ্টটা অনেকটাই ফুটে উঠেছে। জানি না ঐ লোকটায় কে ছিল যে তোমার সাথে এমন নির্দয় আচরণ করল। তবে মা মনে রাইখো আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য। তুমি ভালো থাকো।
বলেই মামা হাসতে হাসতে বের হয়ে গেল। মনে মনে ভাবতে লাগলাম আমি শিক্ষিত কাকে বলব? এ লোকটাকে নাকি আয়ানকে? সত্যি বলতে এখন মানুষের শিক্ষাটা মানুষকে অমানুষ আর অহংকারী করে তুলছে।
যাইহোক ক্লান্ত শরীর নিয়ে শুয়ে পড়লাম। এর মধ্যে আরশি কল দিল। কাঁপা কাঁপা হাতে কলটা ধরে কাঁপা গলায় বললাম
– হ্যালো।
ওপাশ থেকে আরশি অস্থির গলায় বলল
– তোর শরীর কেমন এখন?
– হ্যাঁ ভালোই।
-আয়ান ঠিক মতো পৌঁছে দিয়েছে তো?
– হ্যাঁ আরশি আমি ঠিক মতো এসেছি।তুই এতো চিন্তা করিস না।
– আচ্ছা আয়রা তোর তো রিলেশন ছিল জানতাম। তা ভাইয়া কী করে বললি না তো। এখন কোথায় আছে আর কবে বিয়ে করবি?
আরশির কথা শোনে আমার বুকে ঝড় বয়ে যেতে লাগল।কান্নায় চোখ ভেসে যাচ্ছিল। গলা দিয়ে কথায় বের হচ্ছিল না। শুধু কাঁদছিলাম। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল। এর মধ্যে পুনরায় আরশি বলে উঠল
– কী রে আয়রা কী হয়েছে তোর? কথা বলছিস না কেন?
আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম
– সেটা তো কবেই শেষ হয়ে গেছে আরশি। তাই আর তোকে কিছু বলে নি।
আরশি অবাক কন্ঠে বলে উঠল
– মানে? কীজন্য এমন হলো। আর ভাইয়ার নাম কী ছিল।
– আরশি পুরনো কথায় না যাই আর। যেটা শেষ হয়ে গেছে সেটা নিয়ে কথা না বলায় উচিত। আমি মানসিক ভাবে প্রস্তুত না আর কী। সে চেয়েছে ছেড়ে চলে গেছে।
– আচ্ছা বাবা… তুই এত কষ্ট পাস না। তোর জীবনেও দেখবি নতুন কেউ আসবে। একদম আয়ানের মতো একজনকে পাবি। আয়ান যেভাবে আমাকে ভালোবাসায় মুড়িয়ে রাখে তোকেও সে মানুষটা ভালোবাসায় মুড়িয়ে রাখবে দেখিস।
আরশির কথা শোনে চোখ দিয়ে জল টপটপ করে পড়তে লাগল। হালকা গলায় জবাব দিলাম
– আরশি আমার শরীরটা ভালো লাগছে না। পরে কথা বলি।
– আচ্ছা ঠিক আছে বিশ্রাম কর। আর শরীর ভালো লাগলেই আমাকে কল দিবি। আমি রাখলাম।
– আচ্ছা।
বলেই কলটা কেটে দিলাম। কলটা কেটে দরজাটা বন্ধ করে পাগলের মতো কাঁদতে লাগলাম। বারবার চিল্লায়ে বলতে লাগলাম
“হে আল্লাহ আমার শখের আর আবদারের জিনিস কি তুমি অন্য কাউকে দিয়ে দিবা। এতদিন দুহাত তুলে তোমার কাছে চেয়েছি আজকে কি সেটা কেড়ে নিবা। কেন আমি তাকে ভুলার চেষ্টাটাও করতে পারি না। কেন আমি বেহায়ার মতো তাকেই চাই। এত কষ্ট দেওয়ার পরও তাকে ভালোবাসি। কী করলে আমি শান্তি পাব। অনেকে খেতে পায় না আর আমি যে রিযিক সামনে নিয়েও গিলতে পারি না। কষ্ট হয় আমার।”
কথাগুলো বলে চিল্লায়ে চিল্লায়ে কাঁদতে লাগলাম। এমন সময় মনে হলো দরকার কী এ জীবন রাখার তাই ডায়রিটা হাতে নিয়ে লিখলাম
-হয়তো বিধাতা তোমার বাঁ পাজর দিয়ে আমায় বানায়নি। তাই হয়তো এত আয়োজনের পরও এক হতে পারেনি। আচ্ছা তবুও কেন তোমার জন্য আমার এত পুড়ে। তবুও কেন তোমার কথা ভেবে আমার চোখ ভিজে আষাঢ়ের মেঘে। আর মুখে ফুটে উঠে কালো মেঘের ছাপ। আমি এখনো আশায় থাকি বড্ড আশায় থাকি তুমি ফিরে আসবে এমন ভেবে। জানি ফিরে আসাটা অনিশ্চিত তবুও যেন বিশ্বাসটা আমার প্রবল। বিশ্বাসটা শুধু কানে গুন্জন তুলে বলে আমার প্রিয় আমারেই হবে। প্রিয় ভালোবাসি তোমায়।
#তবুও ভালোবাসি তোমায়।
বলেই হাতে থাকা উড়নাটা ফ্যানে ঝুলিয়ে দিতেই লক্ষ্য করলাম..
চলবে?
(