পর্ব-০৪
#তমিস্র_প্রভা🍁
#লেখিকা-লামিয়া_রহমান_মেঘালা
–এক মিনিট,
–হু কি!
–তোমায় প্রথম আমার কথা শুনতে হবে।
–কি কথা।
–খেতে হবে গোসল করে ফ্রেশ হতে হবে।
ছায়া সব কিছুর মাঝে ভুলেই গেছিল যে ওর ত গত ২ দিন ধরে কিছু খাওয়াই হয় নি
তার উপর পায়ে ক্ষত,
সারা শরীর ই ব্যাথা,
ভীষণ খারাপ অবস্থা,
পরনের কাপড় টাও ছিড়ে গেছে কোথাও কোথাও ।
ছায়া মাথা নাড়ায়,
ছায়াকে একটা কাপড় দেয় নির্ঝর,
সেটা নিয়ে সে ওয়াসরুমে চলে যায়,
এটা ওয়াসরুম না কি?
অন্ধকার আর সব জায়গায় থেকে কেমন ভয়ানক আভা আসছে,
কোথাও লাল বাতি জ্বলা,
ছায়া ভয়ে ভয়ে ফ্রেশ হয়ে কাপড় টা পরে নেয়,
কাপড়ও টা কালো,
ছায়া গোসল শেষে বের হয়,
নির্ঝর ছায়ার দিকে তাকিয়ে আছে এক ধ্যানে,
ভেজা খোলা চুল গুলো দিয়ে টুপ টুপ পানি পড়ছে ফোঁটায় ফোঁটায়,
কালো রঙের জামাটা তার ফর্সা গায়ে মানিয়েছে ভালো,
নির্ঝর ছায়ার কাছে এগিয়ে যায়,
ছায়া ভয়ে পিছিয়ে যায়,
নির্ঝর ছায়ার কোমড় ধরে নিজের কাছে টেনে আনে,
ছায়া ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়,
–,প্রিন্সেস উ লুক বিউটিফুল
ছায়ার ভেতরে কারেন্ট বয়ে যাচ্ছে,
তার উপর নির্ঝর বড্ড ঠান্ডা,
নির্ঝর কে ছায়ার কখনো নর্মান মানুষ মনে হয় না,
এ যেন মস্ত এক দানব,
সুন্দর চোখের আড়ালে বিশাল এক হিংস্র পশু,
ছায়া চোখ খিচে বন্ধ করে নেয়,
নির্ঝর এর কোমল ঠোঁটে স্পর্শ তার চোখের পাতায় অনুভব করে ছায়া,
–বিউটিফুল প্রিন্সেস,
তুমি যখন ভয় পাও তখন তোমায় দেখতে অমাইক লাগে,
নির্ঝর এর প্রতিটা কথা আর কাজে ছায়া কেঁপে উঠছে,
নির্ঝর বাঁকা হেসে ছায়াকে ছেড়ে দুই কদম পিছিয়ে আসে,
–এসো,
ছায়া নির্ঝর কে ফলো করতে থাকে,
নির্ঝর ছায়া কে নিয়ে একটা টেবিলে বসায়,
–খেয়ে নেও,
ছায়া প্লেটে থাকা খাবার গুলো খেয়ে নেয়,
–আমার হয়ে গেছে এবার,
–হুম চলো,
নির্ঝর ছায়ার চোখটা আগে বেঁধে দেয়,
ছায়ার ভয় করছে এবার কি হবে
কিন্তু কিছু বলবার সাহস নেই
কারন এখন ও যদি রেগে যায়,
যায় ছায়াকে না পৌঁছে দেয়,
নির্ঝর বেশ কিছু সময় ড্রাইভ করার পর ছায়ার চোখ খুলে দেয়,
ছায়া দেখতে পায় ওদের বাসার সামনের পরিবেশ টা,
ছায়া ভিশন খুশি হয়ে যায়,
গাড়ির পাশের দরজা টা খুলতে গেলে সেটা লক করে দেয় নির্ঝর,
ছায়া নির্ঝর এর দিকে তাকায়,
–তোমার শর্তের কথা ভুলো নি ত প্রিন্সেস।
–না,
–ওকে গুড গার্ল,
যাও,,
নির্ঝর লক খুলে দেয়,
ছায়া সোজা বাসার ভেতর চলে যায়,
নির্ঝর ছায়াকে যতক্ষণ দেখা যায় ততক্ষণ পর্যন্ত দেখেছে,
যখন ছায়া বাসায় ঢুকে যায় তখন নির্ঝর গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে আসে নিজের সেই ভুতুড়ে প্রাসাদে,
★★★
ছায়া কলিংবেল টিপতে তুষা দরজা খুলে দেয়,
–আপুনি (চিৎকার দিয়ে ছায়াকে জড়িয়ে ধরে)
বাসার সবাই চলে আসো তুষার চিৎকার শুনে,
–ছায়া আমার মেয়েটা ( অনুপমা বেগম মেয়েকে জড়িয়ে ধরেন)
ছায়া ভেতরে আসে,
–মারে কোথায় ছিলি তুই কি হয়েছিল।তোর কিছু বল, (আরিফ খান)
–বাবা আসলে,
আমি কলেজ থেকে বান্ধবীদের সাথে পাশের পাহাড়ে গেছিলাম,
–কেন?
–এমনি বাবা ঘুরতে,
কিন্তু ওখান থেকে পাশের জঙ্গলে ঢুকে যাই আমি হারিয়ে গেছিলাম৷
এক বৃদ্ধ মহিলার কুটিরে ছিলাম এই ২ দিন,
উনি আমায় বাঁচিয়ে আবার তোমাদের কাছে ফেরত দিলো,
–আল্লাহ সেই লোকের ভালো করুক,আমি নামাজ পড়ে দিবো তার মানে ( অনুপমা বেগম)
–তোর কোথাও লাগে নি ত আপু তুই ঠিক আছিস ত।
–হুম আমি ঠিক আছি।
(কি করে বলব আমার কাছে মাত্র ২ মাস সময় আছে রাক্ষস টা আমায় নিয়ে যাবে তোমাদের থেকে অনেক দুরে)
–মা,
–হ্যাঁ মা বল,
–আমার মাথা ব্যাথা করছে আমি ঘুমোবো মা,
–ওকে যা গিয়ে রেস্ট নে মা আমি রান্না করছি,
ছায়া মাথা নিচু করে নিজের রুমে চলে যায়,
বালিশে মাথা দিতে ঘুম চলে আসে,
,
–অনুপমা,
–হুম বলো
–আমার না মনে হচ্ছে মেয়েটা মিথ্যা বলেছে, আমাদের
–কি বলছো ছায়ার বাবা ও কখনো আমাদের মিথ্যা বলে নি আমার মেয়ে ওমন না,
–হ্যাঁ আমি জানি কিন্তু ওর সাথে বোধহয় কিছু হয়েছে অনুপমা,
–কি৷ বলছো,
–হ্যাঁ আম্মু আপুর ব্যাবহার আমার ভালো লাগছে না,
–আমি ওর সাথে কথা বলব,
–না এভাবে না ও হয়ত বলতে চাইছে না।
ওকে সময় দি,( ছায়ার বাবা)
–হ্যাঁ আপুর সাথে সময় কাটালে আমি বুঝতে পারবো কি হয়েছে,
ও ত কখনো আমাদের না বলে ঘুরতে যায় না।
–হুম
সবাই দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের কাজে চলে যায়,
,
,
নির্ঝর এর পায়ের শব্দ টা ক্রমশ ছায়ার দিকে এগিয়ে আসছে,
ছায়া অন্ধকারে পিছিয়ে যেতে যেতে দেয়ালে ঠেকে যায়,
–দ দেখুন ক কাছে আ আসবেন না
–আমি আসব না ত কে আসবে ছায়া,
অন্য কেউকে ত আসতে দিবো না আমি,
ছায়ার হাত ধরে বসে নির্ঝর,
–না আমি যাবো না আমি আমি কোথাও যাবো না আমায় ছেড়ে দিন,
ছায়া চিৎকার করে,
–আপু এই আপু,
–না…….( ছায়া চিৎকার দিয়ে উঠে বসে)
বড়ো বড়ো নিশ্বাস নিতে থাকে,
–আপু কি হয়েছে কোথায় যাবি না তুই,
ছায়া তুষা কে দেখে থেমে যায়,
এই শীতেও মেয়েটা পুরো ঘেমে গেছে,
–কি হয়েছে আপু,
–কিছু না তুষা একটা বাজে স্বপ্ন শুধু,
–ওহ,
মা ডাকছে আপু খাবি না,
–হুম খাবো আমায় একটু পানি দে
তুষা ছায়াকে পানি এগিয়ে দেয়
–এই নে,
ছায়া পানি খেয়ে নেয়,
–আপু,
–হুম,
–তোর কি হয়েছে বলবি তুই কি কিছু নিয়ে ভয়ে আছিস?
–না তুষা তুই একটু আন্না কে ফোন করে বল আমায় নোটস দিয়ে যেতে,
–আন্না আপুকে তুই ফোন দে,,
–আমার ফোনটা কোথায় হারিয়ে গেছে,
–কই তোর ফেন ত হারায় নি তোর ফোন বাসায় রেখে গেছিলি সে দিন,
–ওহ,
–হ্যাঁ,
(আপু এমন বিহেব কেন করছে।। আপু কি কিছুর নিয়ে ভীষণ ভয় আর চিন্তায় আছে কিন্তু কি নিয়ে)
–তুষা ছায়া বেরিয়ে এসো খাবার দিয়েছি,
হটাৎ অনুপমা বেগম এর ডাকে ওরা বাইরে চলে আসে,
★★★
নির্ঝর একটা রুমে চলে আসে,
সেখানে দেখা যায় ছায়ার বড়ো বড়ো ছবি এবং নির্ঝর আর ছায়ার বিয়ের ছবি ও,
–এই মেয়েটার জন্য আমার পুরো দুনিয়া পাল্টে গেছে,
আমার জীবনটা অন্ধকার করে দিয়ে গেছে মেয়েটা৷
প্রতিটা ক্ষণে আমার মনে পরে যায় তোমার কথা নাদিয়া,
তুমি আমায় টুকরো করে দিয়ে গেছো,
ভেঙে দিয়ে গেছো,
সবাই আমায় পাঘর হৃদয় এর মানুষ বলে তোমার জন্য শুধুমাত্র তোমার জন্য,
শেষ করে দিয়ে গেছো আমায়,
আমার ভেতরে প্রতিটা অংশে টুকরো করে দিয়ে গেছো,
,
নির্ঝর ফ্লোরে বসে হাটুর ভাজে মাথা দিয়ে কান্না করছে,
ছেলেটা কান্না করে প্রতিদিন ই করে সবার আড়ালে,
কারোর সামনে না,
এতো কঠিন একটা লোকের ভেতর একটা নরম হৃদয় আছে,
সেটা হয়ত কেউ উপলব্ধি করতে পারবে না কখনো,
,
,
পার হাতে থাকে দিন,
ছায়া প্রতি রাতে এমন বাজে বাজে স্বপ্ন দেখে
নির্ঝর প্রতি রাতে ছায়ার স্বপ্নে এসে ওকে টর্চার করে,
ছায়া ডিপ্রেশন ফিল করতে থাকে দিন কি দিন,
সব কিছু কেমন ধোয়াসা হতে থাকে জীবনের সব রং গুলো ধিরে ধিরে ফ্যাকাসে হতে থাকে,
চলবে?