পর্ব-১৩
#তমিস্র_প্রভা🍁
#লেখিকা-লামিয়া_রহমান_মেঘালা
শুরু হয় গল্পের পরের অংশ টুকু,
★★★★★
চোখ খুলতে নিজেকে অন্ধকার রুমে নিজেকে আবিষ্কার করে ছায়া,
মাথাটা ভার ভার লাগছে,
অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে,
–নির্ঝর ( চোখ বন্ধ করে)
–নো প্রিন্সেস আপনি নির্ঝর এর নাম নিবেন না,
আপনি এখন আমাদের কাছে নির্ঝর এর নাম নিবেন না,
–কারা আপনারা,
কেন এখানে নিয়ে এসেছেন
ছায়ার কথায় লোকটা অট্টহাসিতে মেতে উঠে,
ছায়া ভয় পেয়ে যায়,
–কি বলছেন আপনি এগুলো
আমায় ছেড়ে দিন প্লিজ,
–নির্ঝর এর থেকে বদলা আমি তোমার থেকে নিবো ছায়া,
— ম মানে,
–ওরে অভিশাপ থেকে মুক্তি দেওয়ার এক মাত্র রাস্তা তুমি ছিলে,
সেই রাস্তা ওকে প্রকৃতি দেখিয়ে দিয়েছে,
তুমি ওর সাথে থাকায় আমার অভিশাপ থেকে ও মুক্তি পেয়েছে,
তাই তোমায় শেষ করে আমি আবার সেই আগের পরিস্থিতি নিয়ে আসবো
কালো কাপড়ে মোড়া লোকটা অট্টহাসিতে মেতে উঠে,
ছায়া ভয়ে পেছতে থাকে,
–ভয় পেও না প্রেন্সেস এখন না তোমায় মারব সময় হলে,
লোকটা চলে যায়,
ছায়া পেটে হাত দিয়ে জড়িয়ে নেয়,
–ইয়া আল্লাহ সাহায্য করো,
আমার বাচ্চা টা,
ছায়া কান্নায় ভেঙে পরে,
ওদিকে,
বাড়িতে এসে ছায়াকে না খুঁজে পেয়ে নির্ঝর প্রতিটা কোনায় কোনায় ছায়াকে খুঁজতে থাকে,
কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না,
–রবি আমার ছায়া,
–সিসিটিভি চেক করলে বোঝা যাবে,
রবি আর নির্ঝর দৌড়ে সিসিটিভি রুমে যায়,
গিয়ে নির্ঝর যা দেখে তাতে ওর পায়ের তলার মাটি সরে যায়,
–ও যদি আমার ছায়ার কিছু করে তাহলে আমি ওকে ছাড়বো না, —
–শান্ত হ নির্ঝর৷
আমি জানি ওরা কোথায় ছায়াকে বন্দি করতে পারে,
–কোথায়,
–পাহাড়ের চুড়ায়, সচ্ছল নদীর পাশে,
তিন আলোর সংমিশ্রণ যেখানে,
সেখানে একটা গুহা আছে,
আমি জানি ওই খানে ওই রাক্ষস টার মৃত্যু ঘটেছিল,
হয়ত ও সেখানে আবার আছে,
–নিয়ে চল,
রবি নির্ঝর কে নিয়ে সেদিকের উদ্দেশ্যে রওনা হয়,
ওদিকে,
ছায়ার শরীর ক্লান্ত,
চোখ নিবু নিবু হয়ে আসছে,
ঘরটা অন্ধকার তার উপর পানি পায়ের তলে
ঠান্ডদ লেগে যাচ্ছে,
ঘরটা বন্দ করে তার মধ্যে পানি ছেড়ে দেওয়া একটু একটু করে পানি ভরবে৷
ধিরে ধিরে ছায়া তলিয়ে মরবে,
পৃথিবীতে দুই রকমের মৃত্যু তে কষ্ট,
এক পানিতে ডুবে দুই আগুনে পুড়ে,
লোকটা ছায়াকে সব থেকে কষ্টদায়ক মৃত্যু দিতে চায়,
ছায়ার হাত পা বেঁধে তাকে এই রুমের মাঝে বন্দি করে দিয়ে গেছে,
সূর্যের পশ্চিমে অস্ত যাবার তিন প্রহর পর ছায়ার মৃত্যু হবে
সবি প্লান করা,
সময় কাটতে থাকে,
ছায়া দুর্বল হতে থাকে,
ইতোমধ্যে পানি ছায়ার মাজা ছুয়ে গেছে,
–স্টপ ইট প্লিজ আমার বাচ্চা টাকে আমি মারতে চাই না,
আমার বাচ্চা টা ভীষণ প্রয়োজন ওর বাবার জন্য,
দয়া করে আমায় ছেড়ে দিন,
ওপাশ থেকে সেই লোকের হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে,
–আমার কাজি সাধারণ মানুষ কে কষ্ট দেওয়া,
আমার শুখ সহ্য হয় না কারোর,
ছায়দ কন্নায় ভেঙে পরে,
–সব থেকে বাজে মা আমি সোনা,
তোকে বাঁচাতে পারি নি
তোকে তোর বাবাকে দেখাতে পারলাম না মা,
ক্ষমা করে দিস এই বাজে মা টাকে,,
ছায়ার চোখ বন্ধ হয়ে যায়,
সময়ের ব্যবধানে পানি ছায়ার গলা পর্যন্ত পৌঁছে যায়,
ওদিকে
বরি কতো দুর,
মাত্র কিছুক্ষণ,
নির্ঝর আর বরি সেই স্থানে পৌঁছে যায়,
কিন্তু যাবার রাস্তা পাচ্ছে না,
হটাৎ নির্ঝরের মাথায় তিব্র আঘাত অনুভব করে
নির্ঝর তার জ্ঞান হারায়,
চোখ খুলতে নির্ঝর নিজেকে নিজের বাড়িতে আবিষ্কার করে,
হটাৎ সব কিছু মনে পড়তে,
ছায়া বলে চিৎকার করে উঠে
কিন্তু পাশে ছায়াকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে ছায়াকে জড়িয়ে নেয়,
ছায়ার ঘুম ভেঙে যায়,
–ক কি হয়েছে
–কিছু না,
আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,
–কাঁদছো তুমি?
–উহু,
–তাহলে,
–হারিয়ে যাবে না ত কোথাও?
–কোথায় হারাবো তুমি ছাড়া আমি ত শূন্য,
–তুমি যে আমার তমিস্র প্রভা,
ছায়া হেসে দেয়,
হয়ত নির্ঝর কোন বাজে স্বপ্ন দেখেছে,
সময়ের ব্যবধানে,
ছায়ার মাঝে বাড়তে থাকে নির্ঝর এর অংশ
নির্ঝর তার পরিবার নিয়ে শুখি,
সে দিন নির্ঝর সেই মনুষ্য রুপি অর্ধেক রাক্ষস টাকে খুঁজে কালো কুটিরে বন্দি করে,
যে মানুষ এর শুখ দেখতে পারে না তাকে রাক্ষস ই বলা চলে,
ছায়ার সাথে সময় কাটাতে কাটাতে
তারা এখন জঙ্গল ছেড়ে শহরের বাড়িতে বাস করে,
নির্ঝর এর অভিশাপ শেষ হয়,
সে এখন সাধারণ মানুষ এর মতো হয়ে যায়,
তার বয়স টাও বাড়তে থাকে,
ছায়ার বোন ছায়ার কাছে এসেছে৷
ছায়াকে দেখার জন্য,
–কিরে আমার একটা ছেলে হবে না মেয়ে হবে আপু,
–তোর কি ইচ্ছে,
–একটা মেয়ে হলে ভালো হয়,
–নাম কি দিবি?
–নাম ত ভাইয়া দিবে,
আমার ভাইয়ার পছন্দ টা বেশ পছন্দ হয়,
–বাহ তাই৷
–হ্যাঁ,
হাসি খেলায় দিন কাটে তাঁদের,
দেখাতে দেখতে ছায়ার ডেলিভারি ডেট চলে আসে,
সুস্থ ভাবেই বাচ্চা টা হয়ে যায়,
–কনগ্রাস মিস্টার.চৌধুরী আপনার মেয়ে সন্তান হয়েছে,
–আমার স্ত্রী,
–দু’জন ই সুস্থ আছে,
আপনি গিয়ে দেখা করতে পারেন,
–ওকে,
নির্ঝর কেবিনে চলে যায়,
ছায়ার পাশে মিষ্টি প্রান টা শুয়ে আছে,
নির্ঝর হেসে তার৷ মেয়ে কে কোলে নেয়,
–ঠিক আমার বাবার মতো হয়েছে ছায়া,
ছায়া চোখ খুলে বাবার কোলে মেয়েকে দেখে মৃদু হাসে,
–হুম বাবার সাথে মিলিয়ে ওর নামটা রাখো,
–ওর নাম হবে অরূপা,
★★★
অনেক আলোর ঝলকানিতে গল্পটার শেষ পাতা শেষ হয়,
–এটা আমারি মা বাবা গল্প,
সত্যি,
ইয়া আল্লাহ আমি অরূপ চৌধুরী এর নাতনি,
মা বাবা বলে নি আমায়,
আমায় এখনি বাসায় যেতে হবে,
অরূপা জলদি গাড়তে বসে,
ড্রাইভ করতে থাকে,
বাসায় পৌঁছাতে ১২ টা বেজে যায়,
বাসায় পৌঁছে সার্ভেন্ট কে প্রশ্ন করে,
–মা আসে নি?
–হ্যা ম্যাম এসেছে
আপনাকে না পেয়ে আমাদের বকেছে,
–কোথায় মা,
–উপরে আছে,
অরূপা দৌড়ে উপরে যায়
মাকে জড়িয়ে ধরে,
–আম্মু,
–কোথায় ছিল আমার বাচ্চা মেয়েটা,
–কোথাও ছিলাম না আমার দাদার নাম কি?
–তোমার দাদার নাম কেন শুনছো?
–এমনি বলো আমি অরূপ চৌধুরী এর নাতনি তাইনা?
ছায়া হেসে দেয়,
–আমার মেয়েটার ১৮ বছর হয়ে গেছে তাই না,
–হ্যা, মানে,
— মানে ১২ টা বেজে গেছে,
হ্যাপি বর্থডে অরূপা,
–হ্যাপি বার্থডে মামনি
নির্ঝর কেক হাতে ভেতরে প্রবেশ করে,
— আল্লাহ,
–হ্যাপি বর্থডে আপু,
অরূপার ছোট ভাই রাত
— ধন্যবাদ রাত ধন্যবাদ বাবা,
–তোমার দাদার নাম অরূপ চৌধুরী,
এতো দিন কথাটা লুকিয়ে রাখার কারম ছিল,
তুমি ১৮ বছর না হলে তোমার ভেতর সেই সাহস আসত না সব কিছু ফেস করার,
–হ্যাঁ,
তুমি সেই নারী যে সময়ের আগে দেখতে পারবে,
অরূপা বাবা মাকে জড়িয়ে ধরে,
–আমি তোমাদের অনেক ভালোবাসি,
–আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি বাবু ( ছায়া নির্ঝর দু’জনে)
–হ্যাঁ হ্যাঁ আমায় ত কেউ দেখেও না, (রাত ঠোঁট উল্টে)
–ওহো রে আমার ছোট ভাইটা,
আমি ত সব থেকে বেশি তোমায় ভালোবাসি,
–আর মা বাবা,
–হাহা আমারো,
শুরু হয়ে যায় ওদের জীবনের এক নতুন অধ্যায়,
যেখানে কোন হিংসা নেই,
হিংস্রতা নেই,
আছে শুধু ভালোবাসা,
ছায়া, নির্ঝর, রাত আর অরূপা,
পরিবারে কারোর নজর না লাগুক,
এটাই সত্যি যে সুন্দর ত তারাই যাদের মন সুন্দর,
যারা অন্যের হাসিতে হাসতে জানে না তাদের জন্য কালো কুটির ই ভালো,
হয়ত এবার শেষ হবে সব দুঃখ,
হাসিতে মেতে উঠবে পরিবেশ,
কিন্তু এতো সুন্দর শুখি পরিবারের ভেতর নজর ছিল সেই ছেলেটার,
–হেসে নেও অরূপা যতো খুশি হেসে নেও,
আমার বাবার কষ্টের প্রতিশোধ নিবো আমি,
💖প্রথম অধ্যায় এর সমাপ্তি 💖