#তান্ডবে_ছাড়খার
#পর্ব_৫
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
ভার্সিটির সবাই জেনে গেলো যে নতুন শিক্ষক তাহসান বন্যার প্রেমিক।বন্যার কথার ধরনে বুজে নিলো দুজনের প্রেমের রসায়ন বেশ রমরমা অথচ বন্যা নিজেও জানে তাহসান আর তার মাঝে রাগ্বত দৃষ্টি বিনিময় ছাড়া আর কিছু হয়না প্রেম তো দূর কিন্তু ওই সামান্য এক কথার রেশ ধরে যে সবাই তিল কে তাল বানিয়ে ফেলবে তা কে জানতো!বন্যার অবশ্য খারাপ লাগে না।তাহসানের গম্ভীর চেহারা দেখতে ভালোই লাগে।তাহসানের ক্লাসের সময় সব ছাত্রছাত্রীরা বন্যা আর তাহসানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে যা টের পেয়ে তাহসান বিব্রত বোধ করে।বন্যা এসব লজ্জা টজ্জা পায় না সে পেছনের বেঞ্চে হাত রেখে আয়েশ করে হেলান দিয়ে বসে চুপচাপ তাহসানকে দেখে।পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে তাহসানের গম্ভীর গভীর চোখ বন্যার ছোট ছোট চোখে আবদ্ধ হয়,তাহসান চোখ রাঙ্গায়।একদিন তো বন্যার দিকে তাকিয়ে বলেই ফেললো,
“এই তোমার নাম যেনো কি?”
বন্যা নড়েচড়ে বসে।তাহসানের এমন প্রশ্নে ক্লাসের সবাই অবাকের চূড়ান্ত পার্যায়ে চলে যায়,তাদের জানামতে দুজনে প্রেমিক প্রেমিকা তাহলে তাহসান বন্যার নাম জানবে না কেন?নাকি না জানার ভান ধরছে।মনের প্রশ্নের জ্বালা সইতে না পেরে সামনের বেঞ্চ থেকে এক মেয়ে বললো,
“সেকি স্যার!আপনি ওর নাম জানেন না?”
গম্ভীর তাহসানের গায়ে কথাটা বিষকাটার মতো বিধলো।মেয়েটির দিকে তাকিয়ে কাটাকাটা গলায় বললো,
“ওর নাম জানা কি আমার কাজ?নাকি কোনো বাধ্যতা আছে?ও কি স্পেশাল পারসন যে নাম জানতেই হবে?”
স্যারের এমন কথায় সবার এতোক্ষণের মুখ টিপে হাসি,ফিসফাস কথা সব চুপ হয়ে যায়।মেয়েটি বিব্রত গলায় বললো,
“না মানে স্যার সবাই বলছিলো আপনারা পরিচিত।একে অপরকে..”
মেয়েটির কথা পূর্ণ হবার আগেই তাহসান কড়া গলায় বললো,
“সবাই কি বললো না বললো তা দিয়ে লাভ কি?উল্টাপাল্টা কথা শুনে কাউকে জাজ করার ক্ষমতা তোমাদের নেই।আর আমি তোমাদের একজন শিক্ষক।শিক্ষককে কিভাবে সম্মান করতে হয় তা শিখো।”
এতোদিনের সব রাগ যেনো আজকেই গা ঝাড়া দিয়ে উঠে।রাগে তাহসানের নাকের পাটাতন ফুলে উঠে।মুখের ভেতরে ঠোঁট চেপে ধরে নিজের রাগকে সংবরণ করতে চায় কিন্তু বুকে কেমন খচখচ করে রাগটা বাড়ে কিন্তু কমে না।নিজের রাগকে সামলানো বৃথা তাই সে বন্যার দিকে সুচালোদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
“এই মেয়ে!দাঁড়াও।”
বন্যা এতোক্ষণ তাহসানের কথা মন দিয়ে শুনছিলো।তার সামান্য কথায় বেটা এমন নাজেহাল হবে ভাবতেই পারেনি।সে মনে মনে বেশ খুশী,সেদিন ছাদে কেমন চেপে ধরেছিল।সালা আস্ত খাটাস।উচিত শিক্ষা হয়েছে সবাই মজা করছে কিন্তু এখন গম্ভীর গলায় তাহসানের ডাকে চমকে উঠে।ধীর পায়ে দাঁড়ায়।
তাহসান গম্ভীর গলায় ধমকে বললো,
“এভাবে বসা কে শিখিয়েছে?”
বন্যা কিছু না বলে তাহসানের দিকে তাকিয়ে থাকে।বন্যার নিশ্চুপতায় তাহসানের কাটা গায়ে যেনো লেবু ছিটানোর মতো জ্বলে উঠলো।বন্যার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“হ্যাঁ আমরা সবাই চাইলেই সব করতে পারি,এটা যার যার ব্যক্তিগত ইচ্ছে কিন্তু মেয়েদের জন্য নরম,কোমল কিছু নিয়ম কানুন আছে যা মেনে চললেই মেয়েদের সুন্দর লাগে।বুঝা গেলো? ”
তাহসানের কথার তীর বন্যার বুকে লাগে।কোমল মেয়ে!কতোটা কোমল?যতটা কোমল হলে ছেলেরা খুবলে খেতে পারে ততোটা?সে কোমল হতে চায় না।কোমল হওয়ার কোনো ইচ্ছেই নেই তাই তাহসানের কথার পিঠে কোনো প্রতুত্তর করে না।তাহসান বললো,
“কি বলছি মেয়ে শোন না নাকি?”
বন্যা ভাবলেশহীন ভাবে বললো,
“স্যার,আমার ব্যাপার আমি বুঝে নেবো।”
তাহসান গম্ভীর গলায় বললো,
“তাহলে আমার ব্যাপারে এসব গুজব ছড়ানো ঠিক হয়নি।নাকি এটাও তোমার ব্যাপার?”
বন্যার ইচ্ছে করছে তাহসানের উপর আরো প্রতিশোধ নিতে,কথার তোপে অহংকারী মানুষটার অন্তর ছাড়খার করে দিতে।সে মনের ইচ্ছেই পূরণ করলো,
“না সেটা আমাদের দুজনের ব্যপার।”
বন্যার কথায় সবাই হারানো তাল ফিরে পেল।ফিসফিস হাসিতে ভরে গেলো ক্লাস।বন্যার এমন উত্তরে তাহসান হতভম্ব।বিষ্ময়ে বুকের পাখি ধরিফরিয়ে যায়।গম্ভীর মুখো তাহসানের সবার এই হাসি ঠাট্টার বিব্রত চোখে ঘনঘন পলক ফেলে চুপচাপ বেরিয়ে যায়।সে বেরোনোর পরেই অট্টহাসিতে ক্লাস ভরে উঠে,পেছনের হাসির শব্দ তাহসানের কান এড়ায় না।
পরের দুইদিন বন্যা তাহসানকে ভার্সিটিতে দেখে না।তার কথার রেশ ধরেই কি ভার্সিটিতে আসা বন্ধ করে দিয়েছে?তারপর জানা গেলো তাহসান চাকরি ছেড়ে দিয়েছে।কেনো ছাড়লো?এতো ভালো চাকরি ছাড়ার কারণ কি?কেনো জানি তার ভালো লাগলো না,চাপা অপরাধে দগ্ধ হলো মন।সারাটাদিন মনের কোনে তাহসানের চিন্তা ঘাপটি মেরে বসে থাকলো,ঘুরপাক খেলো একটাই প্রশ্ন তাহসান কি তার জন্যই চাকরি ছাড়লো?বাসায় পৌছেই বন্যা ছাদে যায়।ফোন ঘেটে তাহসানের নাম্বার বের করে কোনো ভাবনাচিন্তা না করেই ফোন দেয়।ফোনের উপাশ থেকে ভেসে আসে গম্ভীর গলার শব্দ,
“হ্যালো!”
বন্যা নিঃশব্দে নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
“স্যার!আমি বন্যা।”
বন্যা খেয়াল করলো তার গলায় কোনো রাগ কিংবা জেদ নেই নমনীয় কোমল হয়ে গেছে গলার স্বর।তাহসান সাথে সাথেই উত্তর দিলো না কিছুক্ষণ পরে বললো,
“হ্যাঁ!কোনো দরকার?”
বন্যা চোখ বন্ধ করে বললো,
“ছাদে আসেন।”
“কেনো?”
“দরকার আছে।”
“আমার সাথে তোমার কি দরকার থাকতে পারে?”
বন্যা চুপচাপ ভাবে আসলে কেনো ডাকছে সে তাহসানকে?
“আসেন না।”
তাহসান কাটাকাটা গলায় বললো,
“পারবো না।”
কট করে মোবাইলের সংযুগ বিচ্ছিন্ন হলে বন্যা কান থেকে ফোনটা নামিয়ে নেয়।সে ভেবে নেয় তাহসান আসবে না,সে তার উপর ভিষণ রেগে আছে।তাছাড়া বন্যা তার সাথে যা যা করেছে তা রাগ করার মতোই।বন্যার এই চিন্তাধারা পাল্টালো কিছুক্ষণ পরেই,তার সকল ভাবনা ভুল প্রমানিত করে তাহসান হেলেদুলে ছাদে উঠে এলো।বন্যার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
“কি ব্যাপার?”
বন্যা সোজা প্রসঙ্গে আসে।
“আপনি চাকরি ছাড়লেন কেনো?”
তাহসান বন্যার।ছোট ছোট চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন দেখছি না কারনটা তুমি নিশ্চয়ই জানো।”
বন্যার ধারনা ঠিক তার জন্যই তাহসান চাকরি ছেড়েছে।অপরাধে দেহমন দুলে উঠে।আমতাআমতা করে বললো,
“আমি সরি।”
তাহসান বন্যার দিকে তখনো তাকিয়ে আছে।
“এসব সরি টরিতে হবে না।”
বন্যার চোখে জিজ্ঞাসা ফুটে উঠে।তাহসান তা টের পায় সে নিজেই বললো,
“তুমি ক্লাসে কি বলেছিলে যেনো?”
বন্যা অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,
“কিছু না।”
“আচ্ছা।এই রাতের বেলা আমাকে ডেকে এনে ইজ্জত লুটেপুটে নেয়ার পায়তারা করছো না তো।”
বন্যা অবিশ্বাস্য চোখে তাহসানের দিকে তাকিয়ে থাকে।অবাক হয়ে বললো,
“ছিহ!কি বলছেন?”
তাহসান যেনো সুযোগ পেলো।
“কি বলছেন মানে কি?বলো যে কি বলছো।তুমিও আমাকে তুমি করেই বলো।”
বন্যা তাহসানের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারে না।
“মানে?”
“মানে বুঝোনা?আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড,ভুলে গেছো।”
তাহসানের এই চরিত্রের সঙ্গে বন্যা অপরিচিত।
“বয়ফ্রেন্ড!কিসের বয়ফ্রেন্ড।”
“কাছে আসো বুঝাই কিসের বয়ফ্রেন্ড।”
“না না আপনি আমার স্যার।”
“কিন্তু সবাই জানে আমি তোমার প্রেমিক।”
বন্যা মাথা নেড়ে বললো,
“সবাই ভুল জানে।”
“তাহলে সেদিন সবার সামনে ব্যাপারটা আরো গাঢ় করলে কেনো?”
বন্যা যেনো আজকে একটুও ঝগড়া করতে পারছেনা বারবার গলা শুকিয়ে আসছে।মাথা নেড়ে সরল গলায় বললো,
“জানি না।”
তাহসান গম্ভীর গলায় বললো,
“এটা অন্যায় করেছো,তোমার উচিত ছিলো সবার ধারনা পাল্টানো।”
বন্যা আস্তে করে বললো,
“ভুল হয়ে গেছে।”
তাহসান মাথা ঝুকিয়ে কাছে আসে।ফিসফিস করে বললো,
“ভুল হতেই পারে সমস্যা নেই।এখন একটা চুমু দিয়ে এই ভুলের সংশোধন করে নাও সোনা।আমি আবার উদার প্রেমিক।ফাস্ট বেবী।ডান গালে দিও,তুমি চাইলে ঠোঁটেও দিতে পারো।মাইন্ড করবো না বললাম না আমি উদার মনের প্রেমিক।”
চলবে……
সবার রেসপন্স এত্তো কম!!!আমি হতাশ।সত্যিই আপনাদের উৎসাহ পেলেই লেখা এগুই,ভালো হয় লেখার মান।প্লিজ সবাই লাইক কমেন্ট আর শেয়ার করে দেন।