তান্ডবে ছাড়খার পর্ব -০৬

#তান্ডবে_ছাড়খার
#পর্ব_৬
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

বন্যার ভয়ার্থ মুখের প্রতিচ্ছবির কথা ভেবে তাহসান হেসে বিছানায় গড়াগড়ি খায়।ইশ!শেষ কবে এমন হেসেছে তার মনে নেই।বন্যার সাথে তখনের মজা করাটায় বন্যা ভ য় পেলেও তাহসান আনন্দ’ই পেয়েছে।বালিশে মাথা রেখে তখনের দৃশ্যটা আবারো মনে পড়ে।

বন্যা কাচুমাচু মুখে অবিশ্বাস্য চাহনী মেলে তাহসানকে দেখছে।এতোদিন অবধি বন্যা তাহসানকে গম্ভীর,চুপচাপ স্বভাবের বলেই জানতো কিন্তু আজকের এই তাহসানের সাথে সে অপরিচিত।তার উল্টাপাল্টা কথায় বন্যার মাথা ঘুরে উঠে।অন্যসময় হলে সে ঠিক প্রতিবাদ করতো বিশ্রী গালি দিয়ে জায়গাটা বরবাদ করে দিতো কিন্তু আজকে বন্যা তার নরম স্বভাবে ফিরে এসেছে চাইলেও কঠিন হতে পারছেনা।তাহসানের লাগামছাড়া কথা শুনে তার ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁকা হয়ে যায়।
“মাথা ঠিক আছে আপনার?”

তাহসান নিজের মাথায় হাত রেখে বললো,
“হ্যাঁ।”

বন্যা তাহসানের চোখের দিকে তাকায় তারপর তাহসানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত পায়ে ছাদ থেকে নেমে যায়।তাহসান বন্যার থমকানো দৃষ্টি দেখে আর পিছু যায়নি।
খালি রুমে তাহসান হো হো করে হেসে উঠে।মেয়েটা উপরে শক্ত খোলস নিয়ে ঘুরলেও তাহসানের কেনো জানি মনে হয় বন্যা ভিষণ নিরম,মিষ্টি একটা মেয়ে।তাহসান এই চাকরিটা তার আম্মুর জোড়াজুড়িতে নিয়েছিলো তার একদম ইচ্ছে করতো না একগাদা ছাত্রছাত্রীকে পড়াতে তার লক্ষ ফরেন ক্যাডার হওয়া কিন্তু চাকরির পাশাপাশি পড়ালেখায় ঠিক মনোযোগ দিতে পারছিল না তাইতো ভেবে চিন্তে চাকরি ছেড়ে পড়ায় মনোযোগ দিয়েছে।এই ব্যাপারটা কাউকে জানায়নি তাই তো কেউ জানেনা এমনকি বন্যাও না।সে চাকরি ছেড়ে দেওয়াতে বন্যা ভেবেছে তার দুষ্টুমির কারণেই বুঝি চাকরি ছেড়েছে তাইতো ফোন করে ছাদে ডেকেছে।এতোদিন বন্যা তাকে খুব জ্বালিয়েছে তাইতো সুযোগ পাওয়াতে বন্যার সাথে দুষ্টুমি করা ছাড়েনি,বন্যার তখনের চেহারা দেখার মতো ছিল।সে চোখ বন্ধ করে চুপচাপ শুয়ে থাকে,চোখে ভাসে ছেলেদের মতো চলাফেরা করা মেয়েটার চেহারাটা,সে যখন কাছে গিয়ে এসব বলছিলো বন্যার তিরতির করে কাঁপা চোখের পাতা,বারবার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজানো খুব সুন্দর লাগছিলো।অতি রুক্ষতার মাঝেও তাহসান বন্যার মায়াবী রূপ দেখে নিয়েছে।তাহসানের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে সে চুপচাপ ঘুমানোর চেষ্টা করে কিন্তু ঘুম আসে না কিছুক্ষণ পরে মনে হলো তার হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বেড়ে গেছে,বারবার ছোট ছোট চোখের অধিকারী মেয়েটার চেহারাটা তার চোখে ভাসছে,হতবিহ্বল চেহারাটাই তার বুকে শুলের মতো ফুটছে।সে নিজের ভাবনায় নিজেই অবাক।নিজেকে ভেতরের সত্বা তিরষ্কার করে বললো,’আশ্চর্য তাহসান,তোর আশেপাশে এতো হাই লেভেলের মেয়ে ঘুরেছে, আর তুই কিনা এমন একটা ছেলে ছেলে দেখতে মেয়েকে নিয়ে ভাবিস?ছিহ!লজ্জাজনক কাজ।”

তাহসান প্রতিউত্তরে বললো,
“এই ছেলে ছেলে স্বভাবের মেয়েটার মধ্যেই অন্যরকম মিষ্টি একটা মেয়ে আছে,যা সবাই দেখেনা,আমি বোধহয় দেখে ফেলেছি।”

দরজা আটকে বন্যা বিছানায় উঠে আসাম করে কোলে বালিশ নিয়ে গালে হাতের তালু রেখে বালিশে কনুই ঠেকিয়ে বসে।তার মুখে এখনো অবাকের রেশ লেগে আছে।তাহসানের থেকে মোটেই সে এমন কাজ আশা করেনি।তাহসান শিক্ষক মানুষ তাকে ভদ্র মনে করেছিলো কিন্তু সেই আট দশটা পুরুষের মতোই তার আচরন।বন্যার ঠোঁট মৃদু কেঁপে ওঠে তাহসানের এরূপ আচরনে তার মনে পড়ে যায় অতীতের কালো অধ্যায়ের কথা।এসব মনে হলেই বন্যার ঠোঁট অসামান্য কাঁপে,বুকে হাজার মণের কষ্ট চেপে বসে তখন শ্বাস নিতে ভিষণ কষ্ট হয়।বন্যার হাত দিয়ে বুকে চেপে ধরে ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে দেয়।কঠিন মনের বন্যা ছিড়েখুঁড়ে নরম মিষ্টি মনের বন্যা বেরিয়ে আসে।সে তো পুরুষ অপছন্দ করে কিন্তু তার কপালেই কেনো ছেলেরা আসে?তাও এমন ছেলে যারা ভিষণ খারাপ ঠিক তাহসানের মতো।বন্যা ধুপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে ঠোঁট নেড়ে বিরবির করে বললো,
“তাহসান তুমি ভিষণ খারাপ,ঠিক অন্যদের মতো।”

সকালে নাস্তা বানিয়ে রেনু বেগম বন্যাকে ডাকেন কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে অগ্যতা রুমে আসে।বন্যা তখনো ঘুমে,রাতে কান্নাকাটি করে মাথা ধরে গিয়েছিলো তাই ঘুমাতেও দেরী হয়েছে।রেনু বেগম বন্যার কাছে গিয়ে বসে।হাত দিয়ে ঘুমন্ত বন্যার কপালের ছোট ছোট চুল ঠিক করে দেয়।অপলক মেয়ের দিকে তাকিয়ে উনি ভাবেন,বন্যা যথেষ্ট সুন্দরী কিন্তু তাও কখনো কোনো প্রেম করেনা।ছেলেরা এগিয়ে আসেনা নাকি বন্যা আসার সুযোগ দেয় না?তাছাড়া বন্যার যা আচরণ তাতে ছেলেরা কাছে আসতেও বোধহয় ভয় পায়।রেনু বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবে মেয়েটা আর কতোকাল অতীত আঁকড়ে ধরে রাখবে?এতে করে জীবন নষ্ট ছাড়া আর কিছুই হবেনা।কিন্তু বন্যাকে এসব বোঝাবে কে?আগে যাও কথা শুনতো এখন তো উড়নচণ্ডী দশা।না কথা শোনে না শোনার ইচ্ছা আছে।মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে উনার মনে হয় বন্যা কেঁদেছে।চোখের কোনে,এমনকি গালেও কান্নার ছাঁপ স্পষ্ট।বন্যা কাঁদবে কেনো?উনি জানে বন্যা শক্ত মনের মেয়ে তার তো কান্নার কথা না তাহলে?অজানা ভয়ে রেনু বেগমের কলিজা অদৃশ্য হাত দিয়ে খাবলে ধরে।
বন্যা নড়চড় হয়ে শুয়,কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে তার ছোট পুতপুতে চোখ কয়েকবার পলক ঝাপটে খুলে তাকায়,শিয়রে মাকে দেখে মিষ্টি করে হাসে।
“কি দেখো আম্মা?”

রেনু বেগম মেয়েটার রূপে বরাবর মুগ্ধ হয়ে যায়, কি মিষ্টি চেহারা,কি মিষ্টি হাসি! এমন রূপে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায়? বন্যার কথায় শুকনো গলায় হাসার চেষ্টা করে বললো,
“কিছুনা।তুই ঠিক আছিস?”

বন্যা মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে তার বলতে ইচ্ছে করে ‘আমি ভালো নেই আম্মা,বুকে এতো কষ্ট রেখে ভালো থাকি কি করে বলো?’কিন্তু মুখে খিলখিল হাসি ফুটিয়ে বললো,
“আমিতো সবসময় বিন্দাসই থাকি আম্মা।আজকে এই প্রশ্ন করলে যে?”

রেনু বন্যার গালে হাত রেখে বললো,
“মিথ্যা বলিস আমাকে?”

বন্যা মাথা নাড়িয়ে বললো,
“না।”

“কেঁদেছিস কেনো?”

বন্যা মায়ের প্রশ্নে থমকে যায়।মুখের হাসি মিলিয়ে যায়।তার মা বুঝতে পেরেছে বিধায় আর মিথ্যা বলে ঢাকার চেষ্টা করেনা।আস্তে করে বললো,
“এমনিই।”

রেনু বন্যার চুপসানো মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“তুই তো কাঁদিসনা বন্যা তাহলে?”

বন্যা মায়ের পায়ে মাথা রেখে মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“আমি মেয়েদের মতো চলিনা বলে কি কাঁদতেও মানা আম্মা?”

মেয়ের অসহায় গলা শুনে রেনু বেগম ডুকরে কেঁদে উঠে ফিসফিস করে বললো,
“কোনো মানা নেই মা তুই কাঁদ কেঁদে যদি স্বাভাবিক জীবনে আসা যায় তাহলে কাঁদ।”

পরেরদিন বন্যা ভার্সিটিতে গেলো না।সে ভাবছে তার কারনে তাহসান ভার্সিটির চাকরি ছাড়লো আর সেই ক্ষোভই কি কাল নিলো?এই ভাবনায় অপরাধবোধে বন্যা সারাদিন শুয়ে থাকলো।সন্ধায় তাহিয়া কে পড়াতে গিয়ে ভাবে বন্যা তাহসানের কথা জিজ্ঞেস করবে কিন্তু তাহিয়া যদি উল্টাপাল্টা কিছু ভাবে?এই মেয়ে যেই দুষ্টু দেখা যাবে এই কথা সারা বাসায় মাইক দিয়ে বলে বেড়াবে তারপরেও বন্যা বললো,
“তাহিয়া,স্যার ভার্সিটিতে যাচ্ছে না কেনো?”

তাহিয়া অংক করা থামিয়ে বন্যার দিকে তাকায়।
“সেকি আপু আপনি জানেন না?”

“না।”

“ভাইয়া তো বিসিএস প্রিপ্রারেশন নিচ্ছে ভার্সিটিতে গেলে পড়ায় মনোযোগ দিতে পারে না তাই ইচ্ছে করেই চাকরি ছাড়লো।”

তাহিয়ার বলা কথায় বন্যা চুপসে যায়,মনটা তেতু গলায় খেকিয়ে বলে উঠে,’মিথ্যাবাদী পুরুষ’ মনের বিষাদ ঠেলে দূরে পাঠাতে চায়।কিসের জন্য এতোক্ষণ মন খারাপ করেছিলো?অথচ তার কোনো দোষ নেই।
বন্যা চুপচাপ পড়িয়ে বাসায় চলে আসে।রাত তখন গভীর মোবাইলে টুং করে শব্দ হয়ে জানান দেয় যে মেসেজ এসেছে।অনিচ্ছা স্বত্বেও বন্যা বেডসাইড টেবিল থেকে মোবাইলটা হাতে নেয়।তাহসানের মেসেজ দেখে ভ্রু কুঁচকে মুখের ভাব গম্ভীর হয়ে যায়।তাহসান লিখেছে
‘ছাদে আসবে?’

তাহসান তাকে ছাদে ডাকার কোনো অধিকার রাখে না।আর যখন তখন ছাদে ডাকা নিশ্চই ভালো মানুষের লক্ষন না।তাহসান তাকে মিথ্যে বলেছিলো সেই কথাটা মনে হতেই বন্যা তাহসানকে ফোন দেয়।রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ হয় না বন্যা অপেক্ষা করে ফোন ধরলেই কয়েকটা কথা শুনিয়ে দেবে।

তাহসান মেসেজ করবেনা করবেনা করেও নিজেকে আটকাতে পারেনি।কেমন আকর্ষণ অনুভব করছে বন্যার প্রতি।মনে হচ্ছে এখন বন্যাকে দেখা বাধ্যতামূলক না দেখলে বুকের কাঁপন থামানো যাবে না।বহুবার ভেবেচিন্তে সে বন্যার নাম্বারে মেসেজ পাঠায়।সে ভেবেছিলো মেসেজের উত্তর আসবেনা কিন্তু তাকে ভূল প্রমানিত করে মেসেজ না বরং ফোন এসেছে।তার হাতে ফোন থাকা স্বত্বেও সে সাথে সাথে রিসিভ করেনা,সাথে সাথে ফোন রিসিভ করলে যদি বন্যা তাকে অতিরিক্ত হ্যাংলা ভাবে।তাই একটু পরে রিসিভ করে আদেশের সুরে বললো,
“ছাদে আসো।”

আজকে তাহসানকে কিছু কটু কথা বলার আছে যা সামনাসামনি বললেই ভালো হবে তাই সে তাহসানের কথায় পরিবর্তে কোনো প্রতিবাদ না করে বললো,
“আসছি।”

তাহসান বন্যার সম্মতি আশা করেনি।ফোন পকেটে পুড়ে ছাদের উদেশ্যে বেরিয়ে যায়।

বন্যাকে দেখে তাহসান কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।হালকা নীল টিশার্ট আর সাদা ট্রাউজারে বন্যাকে অন্যরকম লাগছে।সবার কাছে বন্যার চাল চলন হয়তো খারাপ লাগে এতোদিন তাহসানের কাছেও লাগতো কিন্তু এখন কেনো জানি ভালো লাগছে।মনে হচ্ছে বন্যাকে এমন ভাবেই ভালো লাগে,এমন পেন্ট শার্ট পড়াই বন্যার জন্য সৌন্দর্যের।সে ইশারায় নিজের পাশের বেঞ্চ দেখিয়ে বললো,
“এখানে এসে বসো।”
বন্যা অবাক হয়ে তাহসানের কান্ডকারখানা দেখে।এতোটা আদেশের সুরে কথা বলছে কেনো?সে কি এখনো নিজেকে স্যার মনে করে?
“আদেশ করছেন?”

তাহসান হাসে।মিহি গলায় বললো,
“হ্যাঁ।”

তাহসানের গলা যতো মিহি হয় বন্যার গলা ততো চওড়া হয়।
“আমি কোনো মিথ্যুকের কথা শুনতে রাজি না।”

তাহসান অবাক হয়ে বললো,
“আমি মিথ্যুক?”

“হ্যাঁ।আপনি বলেছিলেন আমার জন্য চাকরি ছেড়েছেন অথচ নিজের স্বার্থে নিজের পড়ালেখার জন্য চাকরি ছেড়েছেন।”

বন্যা কথা বলতে বলতে তাহসানের সামনে এসে দাঁড়ায়।তাহসান হেসে বললো,
“সেটা তো মজা করে বলেছি,ভার্সিটিতে আসলেই তুমি আমার প্রেস্টিজ খারাপ করে দিয়েছিলে তাই তোমাকে রাগাতেই এসব বলেছিলাম।”

তাহসানের মুখ দেখে মনে হয় সে সত্যিই বলছে কিন্তু সে মানতে নারাজ।
“তাই বলে এমন বাজে কাজও কি মজার ছলেই বলেছেন?”

“হ্যাঁ।মজা করাই উদেশ্য ছিলো।তুমি যে এতো মাইন্ড করবে ভাবিনি তো।”

বন্যা ফুপিয়ে উঠে।তাহসান তার সাথে মজা করছিলো?না চাইতেও কোমল বন্যার আবির্ভাব হয়ে যায়।পিটপিটে চোখের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।মনটা নিমিষেই অভিমান করে বসে অথচ তাহসানের উপর অভিমান করার কোনো সম্পর্কই তাদের মাঝে নেই।সে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
“মজা করেছেন?আপনার সাথে আর কোনো কথা নেই।কখনো ফোন দিবেন না।”

বন্যা হাতের তালু দিয়ে চোখের পানি মুছে ছাদ থেকে নেমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। তাহসান হতভম্ব চোখে বন্যার কান্নারত মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকে।এই বন্যার সাথে সে অপরিচিত,কঠিন মনের বন্যাকে দেখেই সে অভস্ত।এতোটুকু দুষ্টুমিতে বন্যা কেঁদে ফেললো?বন্যা চলে যেতে চাইলে সে জলদি উঠে সামনে গিয়ে পথ আগলে দাঁড়ায়।
“আরে চলে যাচ্ছো কেনো?”

বন্যার চোখে তখনো পানি ধরা গলায় বললো,
“সরেন তো।”

তাহসান ভেজা চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“কাঁদছো কেনো?”

বন্যা নিশ্চুপ হয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।বন্যার নিশ্চুপতা দেখে সে বললো,
“সবটা দুষ্টুমি হিসেবেই করেছিলাম।সত্যি বলছি তোমাকে এভাবে কষ্ট দিতে চাইনি।সত্যি!আমি কিন্তু ছেলে এতো খারাপ না সবার সাথে এতো মিশি ও না কিন্তু তোমার সাথে মিশছি।গম্ভীর স্বভাব ছেড়ে ছেলেমানুষী করছি প্লিজ রাগ করোনা।”

বন্যার মুখ যথারীতি গম্ভীর।বন্যাকে কিছু বলতে না দেখে গম্ভীরমুখো তাহসান এক অভাবনীয় কাজ করে বসলো।দুই কান হাত দিয়ে ধরে ফটাফট পাঁচবার উঠবস করে বললো,
“উঠবস করলাম শাস্তিস্বরূপ।প্লিজ কেঁদো না।আর কখনো এমন কিছু করবো না।এই ফুটফুটে চাঁদের কসম।”

তাহসানের উঠবস আর কসমের ভঙ্গিমা দেখে বন্যা কান্নাচোখেই ফিক করে হেসে দেয়।এক হাত কোমড়ে রেখে আরেক হাত মুখে রেখে হাসি লুকাতে চায়।তাহসান সফল চোখে বন্যার হাসিমাখা মুখের দিকে তাকিয়ে আবারো বললো,
“সরি প্লিজ।”

বন্যা আর রাগ করে থাকতে পারলো না।মাথা নেড়ে বললো,
“আচ্ছা।”

তাহসান পলক না ফেলে বন্যাকে দেখে।তারপর আস্তে করে বললো,
“আমরা কি বন্ধু হতে পারি? ”

বন্যা তাহসানের দিকে তাকায় কিন্তু কিছু বলে না।তাহসান মাথা নেড়ে আবারো সরি বলে।বন্যা মাথা নেড়ে বললো,
“হওয়া যায়।”

ছোট বাচ্চা তার প্রিয় খেলনা পেলে যেমন খুশী হয় বন্যার সম্মতিতে তাহসান এমন খুশী হলো।ঝুপঝুপানো আনন্দে বললো,
“ধন্যবাদ।”

বন্যা বললো,
“কিন্তু শর্ত আছে।”

তাহসান ভ্রু নাচিয়ে বললো,
“কি শর্ত?”

বন্যা একটু থেমে বললো,
“কখনো প্রেমের প্রস্তাব দেয়া যাবেনা।”

তাহসান হাসিমুখে মাথা নেড়ে বললো,
“আচ্ছা ম্যাডাম।আর কিছু?”

“আর কিছু না।এখন বাসায় যাবো।”

“আচ্ছা।গুড নাইট।”

বন্যা কিছু না বলে সিড়ি দিয়ে তরতরিয়ে নিচে নেমে যায় আর ভাবে কি করতে এসেছিলাম আর কি করলাম?পরিস্থিতি মাঝে মাঝে হাতের মুঠোয় থাকে না।

তাহসান তখনো সেখানেই দাঁড়িয়ে চিলেকোঠার দিকে তাকিয়ে আছে।কিছুক্ষণ পরে খুব আস্তে ফিসফিস করে বললো,
“বন্যা!এই বন্যা শুনতে পাচ্ছো?তুমি যে এইমাত্র আমাকে খু ন করে ফেললে সেই খবর নিয়েছো?আমি বোধহয় তান্ডবের বি ষ পান করে ফেলেছি।যেকোনো মুহূর্তে ম রে যেতে পারি,তুমি কি আমাকে এই তান্ডব থেকে বাঁচাবে?”

চলবে…..

2k লাইক আর
1k কমেন্ট হলে পরপর তিনদিন গল্প পাবেন।আশা করি সবাই এই প্রেমের তান্ডব দেখতে আগ্রহী তাহলে ফটাফট কমেন্ট আর লাইক দিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here