#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_২৩
#Writer_Liza_moni
অপ্রত্যাশিত মেসেজ টা দেখে অনু বেশ অবাক হলো। তাকে এমন কথা কে বলতে পারে? কিছুতেই কিছু মাথায় আসছে না তার।অনু মাথা ঘামালো না বিষয় টা নিয়ে।
লক্ষ লক্ষ তারায় ভরা আকাশের মাঝে থালার মতো একটা চাঁদ।তারা গুলো কী সুন্দর মিটি মিটি করে জ্বলছে। চাঁদের আলোয় আলোকিত চারপাশ।
ছাদের দোলনায় বসে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে আর এত সুন্দর একটা মুহূর্ত একা একাই উপভোগ করছে তূর্য। চাঁদের দিকে তাকিয়ে তূর্য একা একাই মুচকি হেসে চাঁদের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো,
কী সুন্দর একটা রোমান্টিক মূহূর্ত।আজ একটা বউ নাই বইলা এক সাথে বসে এত সুন্দর একটা মুহূর্ত উপভোগ করতে পারছি না।
চাঁদ মশাই তুমি তো ভাই এক একাই সবার প্রেম দেখো। আমি যে সিঙ্গেল মরতাছি এইটা কি তুমি দেখো না?
চাঁদ যদি কথা বলতে পারতো তাহলে চাঁদ টা তূর্যর কথার জবাবে বলতো,
তুমি মিয়া অনেক আগেই তো একজনরে নিজের অজান্তেই মন দিয়ে বসে আছো সে দিকে খেয়াল নাই? আবার আমার বিরুদ্ধে আমার কাছেই অভিযোগ করো তুমি সিঙ্গেল সে খবর আমি রাখি না। দিনের বেলায় কিছু না দেখলে ও রাতের বেলায় সব দেখি। একটু আগে যে এক জন রে কিছু একটা পাঠাইছো ঐটা কিন্তু আমি দেখছি।সো নিজেরে সিঙ্গেল দাবি করা বন্ধ করো।
তূর্য আপন মনেই হাসলো।
.
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে অনু ড্রইং রুমে এসে যে এত বড় একটা ঝটকা খাবে তা ভুলে ও ভাবেনি সে। সকাল সাতটা বাজে।এত সকালে মাহির কে এখানে দেখে অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেল অনু।এত সকালে এই লোক এখানে কী করছে?
অনু কে দেখে মাহির বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।মা হয়তো রান্না ঘরে ফুফুর সাথে নাস্তা বানাচ্ছে। মাহির কিছু বলতে যাবে তার আগেই অনু দৌড়ে রান্না ঘরে চলে গেল। এতে মাহির একটু অপমান বোধ করলো।রান্না ঘরে গিয়ে মায়ের উদ্দেশ্যে বললো,
আম্মু মাহির ভাইয়া এখানে কেন?তা ও এত সকালে।
মিসেস আফরোজা কাপে চা ঢালতে ঢালতে বললো,
তোর সাথেই দেখা করতে আসছে।
কিন্তু কেন? আমার সাথে হঠাৎ দেখা করতে আসলো কেনো? উদ্দেশ্যে কী বলো তো তোমার ভাইয়ের ছেলের?
তোকে বিয়ে করতে চায়।
কীহ?এই টা কোনো কথা বললা তুমি?আমাকে বিয়ে করতে চায় মানে কি?
মিসেস আফরোজা অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
আমরা যেদিন এখানে আসবো সেদিন সকালে তোর বড় মামি আর মাহির আসছিল আমাদের বাড়িতে। তোর জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।
মানে কি এই সব এর? তুমি আর আব্বু কিছু বলো নি ওনাদের?
বলেছি।যাকে বলে অপমান করেছি।ওর মা তো রেগে মেগে আগুন হয়ে চলে গেছিল। মাহির হাল না ছেড়ে তোর সাথে দেখা করতে চলে আসছে।
তো আমি কী করবো?
ও কী বলতে চায় তা শুন।দেখ আগে কী বলে।
অনু ভ্রু কুঁচকে আবার ড্রইং রুমের দিকে চলে গেল।অনু কে দেখতে পেয়ে ও মাহির আগ বাড়িয়ে আর কথা বলতে চাইলো না।
অনু নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে মুচকি হেসে বললো,
কেমন আছেন ভাইয়া?
কেমন আছি?তা জেনে কী করবি? আমার কথা বাদ দে। তুই কেমন আছিস?
আমি তো বিন্দাস আছি। দেখতেই তো পাচ্ছেন।
হুম তা পাচ্ছি।
তোর সাথে দেখা করতে আসার একটা কারণ আছে অনু।
তা আমি বেশ ভালো করেই জানি ভাইয়া। আপনি অকারণে এত দূর থেকে আমার সাথে দেখা করতে আসতেন না।
তো কারণটা কী? বলেন শুনি।
মাহির কি দিয়ে কথা শুরু করবে তা ভেবে পাচ্ছে না।তাই কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল।অনু সোফায় পা তুলে বসে কোলে কুশন রেখে গালে হাত দিয়ে মাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর মাহির বলতে শুরু করলো,
আসলো কথা টা কী ভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছি না। এত দূর থেকে এই পর্যন্ত এসেছি শুধু মাত্র তোর সাথে দেখা করার জন্য। আমি জানি আমি অন্যায় করেছি। তার জন্য শাস্তি ও পাচ্ছি। আমার রাতে ঘুম হয় না অনু।আজ কত গুলো রাত নির্ঘুমে কেটে গেছে আমার। আমার আব্বু ও আমার সাথে আর আগের মত কথা বলে না। আমি এখন বুঝতে পারছি আমার ভুল টা।অনু আমাকে একটা সুযোগ দিবি প্লিজ?
অনু বুঝতে পেরে ও না বুঝার ভান করে বললো
কীসের সুযোগ দিতাম?
আমাকে বিয়ে করবি? আমি তোকে অনেক বেশি ভালোবাসবো। তোর কোনো কিছুর অভাব হবে না।যখন যা চাইবি তাই দিবো।যে সময় যেই বায়না ধরবি তাই পূরণ করবো।তোকে একটু ও কষ্ট দিবো না। আমি তোকে বিয়ে করতে চাই।দেখ তুই যদি রাজি হোস তাহলে ফুফু মনি আর ফুপা সবাই রাজি হবে।
মাহির কথা শুনে অনু একটা হাই তুললো। অনু কে দেখে মাহির বুঝতে পারছে না ও অবাক হলো না কেন? কোনো রিয়েকশন ও নাই।
চা খাবেন ভাইয়া?
আম্মু কে আনতে বলবো? আম্মুর হাতের চা কিন্তু সেই মজার। আপনি তো আগে অনেক বার খেয়েছেন।
অনু?
শুনতেছি বলুন ভাইয়া।
আমি তোকে সিরিয়াস একটা কিছু বলেছি। বিষয়টাকে সিরিয়াসলি নিচ্ছিস না কেন?
অনু মাহিরের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে গলা উঁচু করে বলতে লাগলো,
আম্মু দুই কাপ চা দিও তো।
আমার কথার কী কোনো মূল্যে নেই তোর কাছে অনু?
ওমা এটা কী বললেন মাহির ভাই। আপনার কথার মূল্য থাকবে না কেন?এত সময় তো আপনি লেকচার দিলেন আর আমি বসে বসে তা গিলছি।একটু পর আমি লেকচার দিমু আপনি তা মাথায় ঢুকাই নিবেন। লেকচার দিতে গেলে আমার আবার গলা শুকিয়ে যায়। তাই চা আনতে বললাম।
মিসেস আফরোজা চা নিয়ে আসলেন না।অনুর ফুফুকে দিয়েই পাঠিয়ে দিলেন দুই কাপ চা।
অনু চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে মাহিরের উদ্দেশ্যে বললো,
কি জানি বলছিলেন ভাইয়া?উমম মনে পড়েছে। আমি এখন আবার হুটহাট সব ভুলে যাচ্ছি। কিছু মনে কইরেন না।
জানেন তো মানুষের জীবন টা খুব ছোট। এই জীবনের সময়টা কখন ফুরিয়ে যাবে আপনি আমি কেউই বুঝতে পারবো না। ছোট এই জীবনে আমরা কত শত ভুল করে বসে থাকি তা আমরা নিজেরাও খেয়াল রাখি না।
একটা সময় যা ছিল তা পুরাই আবেগ ছিল।আর সেই আবেগ টা এখন আমার নেই। আমি আপনাকে শুধু একটা কথাই বলবো নিজের ভুল গুলো শুধরে নিতে শিখেন।তনু আপুকে ভালো বাসতেন আপনি। আবার সেই আপনি আমাকে ভালোবাসতে চান? সিরিয়াসলি ভাই? হুদাই এই সব করে সবার কাছে নিজেকে ছোট প্রামন কইরেন না। এই সব বন্ধ করুন।
জীবনটা ছোট। অল্প সময়ের এই জীবনে ভালো কাজ করুন।সৎ পথে চলুন।আর কিউট একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করে ফেলুন যলদি। অনেক দিন হয়ে গেল বিয়ে খাইনা।
তার মানে তুই আমাকে বিয়ে করতে চাস না?তাই তো?
এটা আবার জিজ্ঞেস করতে হয় বোকা ছেলে।
আচ্ছা ঠিক আছে।আসি আমি। ভালো থাক।
যদিওবা আমি জানতাম যে তুই রাজি হবি না।তাও শেষ বারের মতো চেষ্টা তো আমি করেছি।
নাস্তা করে যান ভাইয়া।চা ও তো খাইলেন না।চলে যাচ্ছেন কেন?
থেকে কী হবে?
সেটা ও কথা। আচ্ছা যান তাহলে। আল্লাহ হাফেজ।
মাহির অনুর দিকে তাকিয়ে জোর পূর্বক হেসে চলে গেল। রান্না ঘর থেকে মিসেস আফরোজা হাসতে হাসতে বের হয়ে অনুর কাছে এসে অনুর গাল টিপে দিয়ে বলল,
তুই এত ফাজিল হয়েছিস কবে থেকে শুনি?
আমি কী সব সময় এমন ফাজলামি করি নাকি?মাঝে মাঝে ফাজিল শয়তানে কাতুকুতু দিলে তখন একটু ফাজলামি করি আর কী।এর জন্য তুমি আমাকে ফাজিল বলবা?এটা কিন্তু ঠিক না। ভালো হয়ে যাও আম্মু ভালো হয়ে যাও।
দাঁড়া তুই।
অনু কে আর পায় কে। রুমে চলে গেল সে তৈরি হতে।এখান থেকে এখন ম্যাসে যাবে।আর ম্যাস থেকে রিয়ানার সাথে ভার্সিটি চলে যাবে।
#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_২৪
#Writer_Liza_moni
রিকশার জন্য রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে অনু আর রিয়ানা।একটু আগেই ফুফুর বাড়ি থেকে ম্যাসে আসে অনু। সূর্যের তাপ বলে দিচ্ছে অনেক বেলা হয়ে গেছে।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর একটা খালি রিকশা পায় অনু আর রিয়ানা।
রিকশায় উঠে রিয়ানা অনু কে বলে,
গতকাল তোমার জন্য একজন ম্যাসের সামনে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল।
অনু অবাক হয়ে বললো কে?চেনো তাকে?
হুম। চিনি।
তূর্য নাকি?
রিয়ানা মুচকি হেসে বললো হ্যা।ছেলেটাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছিল।
হঠাৎ আমার জন্য অপেক্ষা করছিল কেন? কোনো দরকার ছিল কী? তোমাকে কিছু বলেনি?
না আমাকে তেমন কিছু বলেনি।
আমি না তোমাকে না জানিয়ে তোমার নাম্বার ছেলেটাকে দিয়ে দিয়েছি।
এটা কোনো কথা বললা? অচেনা একটা ছেলে কে আমার পার্সোনাল ফোন নাম্বার দিয়ে দিলা?
আরে অচেনা না তো। তোমার খুব পরিচিত একজন।
তুমি কি তূর্যর কথা বলছো?
ঠিক ধরেছ। আমি তার কথাই বলছিলাম।
অনু আর কিছু বললো না। একটা ব্যাপার অনুর কাছে জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে।যে গত কাল রাতের আননোন নাম্বার থেকে ম্যাসেজ টা তূর্যই তাকে করেছে। কিন্তু অনু এটা বুঝতে পারছে না তূর্য কী তাকে সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছে?তাও এত অল্প সময়ে। এটা কি তার সত্যিকারর ভালোবাসা?নাকি শুধুই আবেগ?
এই সব হাবি জাবি চিন্তা করতে করতে ভার্সিটি এসে পৌঁছায় তারা।
রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিতে যাবে কিন্তু রিকশা ওয়ালা ভাড়া না নিয়ে বলেন,
আমনে গো ভাড়া ভাইজান দিয়া দেছে আপা।আর ভাড়া দেওনের দরকার নাই।
বলেই রিকশা ওয়ালা চলে গেল।অনু চোখ ছোট ছোট করে তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
এত সময় ধরে তূর্য তাদের পেছনে বাইক নিয়ে আসছে।তা অনু দেখেনি।
ঠিক সেই সময় তূর্য অনুর সামনে বাইক থামায়। আচমকা এত কাছে বাইক থামতে দেখে অনু লাফ দিয়ে উঠে কয়েক পা পিছিয়ে যায়।তা দেখে রিয়ানা মুচকি হেসে বলে,
আমি ক্লাসে যাচ্ছি। তুমি কথা বলে এসো কেমন।
অনু কিছু বললো না।
তূর্য মাথা থেকে হেলমেট টা খুলে অনুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দিয়ে বললো,
কেমন আছেন?
অনু তূর্যর কথার উত্তর না দিয়ে বললো,
আপনার খবর আছে।
ওম্মা সে কী? আপনি আমার খবর করবেন?তা কয়টার খবর শুনি?
বেশ রসিকতার স্বরে কথাটা বললো তূর্য। তাতে অনু একটু রাগ দেখিয়ে বললো,
আপনি রিকশার ভাড়াটা দিলেন কেন?
বিয়ের পর থেকে তো আমাকেই সব কিছুর খরচ দিতে হবে।তাই আগে থেকেই প্রেকটিস করছি।
তূর্যর সোজা সাপ্টা উত্তর।
পাগল হয়ে গেছেন আপনি?কী সব উল্টা পাল্টা কথা বলতেছেন। আপনার আম্মু কে কী বলবো আপনাকে পাবনার মেন্টাল হসপিটালে রেখে আসতে?
আপনি যদি আমার সাথে যান তাহলে আমি সেখানে যেতে রাজি।যাবেন নাকি? বাসের টিকিট কাটবো?
আপনি আসলেই পাগল হয়ে গেছেন।
তূর্য বিড় বিড় করে বললো
আপনার জন্য মিস পরমানু।
তূর্যর কথা বুঝতে না পেরে অনু চোখ পাকিয়ে বললো,
বিড় বিড় করে আমার নামে কী বলতেছেন আপনি?
তা আপনাকে কেন বলবো?
অনু বিরক্ত হয়ে উঠছে তূর্যর ত্যাড়া কথায়।একটা প্রশ্নের ও ঠিক ভাবে উত্তর দিচ্ছে না সে।
আমি গেলাম। আপনার মত অর্ধ পাগলের সাথে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তর্ক করতে পারবো না। বলেই অনু পেছনে ফিরে হাঁটা ধরলো।
মিস পরমানু শুনুন,,
অনু পেছনে ফিরে বললো কী চাই?
চাই তো অনেক কিছু। কিন্তু আপাতত আপনাকে এটা বলতে চাচ্ছি বিকেলে আপনার ম্যাসের সামনে অপেক্ষা করবো।দয়া করে বিকেলে আপনার মূল্যবান সময় থেকে কিছু টা সময় নিয়ে আমার সাথে দেখা কইরেন।
আমি পারবো না।
আমি কিন্তু অপেক্ষা করবো।
আপনি যা ইচ্ছা করতে থাকুন। আমি গেলাম।
দূর থেকেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অনু আর তূর্য কে কথা বলতে দেখলো মাহির। কিন্তু কী কথা হয়েছে অনু আর তূর্যর মধ্যে তা ঠিক করে শুতে পায়নি। শুধু এইটুকু কথাই তার কান অব্দি পৌঁছে যে, বিকেলে অনু যেনো তূর্যর সাথে দেখা করে।সে অপেক্ষায় থাকবে। মাহির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেল।
.
.
ক্লাসের ভেতরে ঢুকতেই রিফা এসে অনুর মুখের ভেতর একটা চকলেট পুরে দিলো।
কী হয়েছে?এত খুশি খুশি লাগছে কেন তোদের?
আমাদের কেয়ার বিয়ে।
ওহ শুভ কামনা রইলো।তো কার সাথে বিয়ে?
কেন?এত দিন ধরে যার সাথে প্রেম করেছি তার সাথে। তাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে জীবনে ও করতাম না।
ভালোবাসি যাকে বিয়ে ও করবো তাকে।
বেশ ভালো।তা বিয়েটা কবে হচ্ছে শুনি?
সামনের সপ্তাহে।
কেয়া অনুর হাতে একটা বিয়ের কার্ড দিয়ে বললো,
আসবি কিন্তু। না আসলে দেখিস আমি ও তোর বিয়েতে যাবো না।
আচ্ছা বুঝলাম। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করছিস কেন?এক্সাম শেষ করে ও তো বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পারিস।
আমি ও অবশ্য তাই চেয়ে ছিলাম। কিন্তু ওর পরিবার চাচ্ছে সামনের সপ্তাহে বিয়ের কাজ সেরে ফেলতে।
যা ভালো মনে হয় কর। জীবনটা তো তোর। একটা কথা বলি? কিছু মনে করিস না।
কেয়া অভয় দিয়ে বললো আরে না।কী মনে করবো?বল তোর যা ইচ্ছে। আমি কিছু মনে করবো না।
হুঁ। রবি ঠাকুর কী বলে ছিল জানিস?
উনি তো অনেক কথাই বলছে। তুই কোনটার কথা বলবি শুনি?
যাকে ভালোবাসবে তাকে বিয়ে করবে না।এমন হাজারো বাস্তব কাহিনী আছে যে, একটা মানুষ আরেকটা মানুষ কে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। কিন্তু বিয়ের পর আর সেই ভালোবাসা টা বজায় থাকে না। খুব কম মানুষই আছে যারা ভালোবাসে বিয়ে করে সুখী হয়েছে। আবার এমন ও আছে, ভালোবাসার বিয়ে অথচ ৯-১০ বছর পর বিচ্ছেদ হয়েছে।
কেয়া একটু ভীতু কন্ঠে বললো,
বিয়ের আগেই ভয় দেখাচ্ছিস? দোয়া কর মাইয়া।যেনো আমাদের ভালোবাসাটা মৃত্যুর পর ও বজায় রাখতে পারি। ভীষণ ভালোবাসি যে তারে।
মুখের ভেতর চিপস দিতে দিতে রিফা বলে উঠলো,
তোর এই কথা গুলো শুনে আমার বিয়ে করার শখ মিটে গেছে। আমি আর ও কই ভাবলাম বাড়িতে যাইয়া ওরে কমু বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর জন্য। কিন্তু এখন আর শাহস পাইতাছি না।সেগুড়ে বালি। ধুর ছাই।
অনু হেসে ফেললো।বাদ দে এই বিষয়। আমাকে গতকাল এর নোটগুলো দে তো।
.
.
তূর্যর পরিবারের সবাই মিলে তৈরি হচ্ছে তিয়াস এর জন্য মেয়ে দেখতে যাওয়ার। সবাই তৈরি হয়ে বসে আছে। অথচ তূর্যর এখন ও কোনো খবর নেই।এই দিকে পাত্রীর পরিবারের সবাই অলরেডি রেস্টুরেন্টে চলে গেছে। সেখানেই মিট করবে দুই পরিবার।আর এক সাথে লাঞ্চ।
আম্মু দেখছো ছোট ভাইয়া এখনো আসেনি। দেরি হয়ে যাচ্ছে না।
তাই তো দেখছি।ওকে একটা ফোন করে দেখ কোথায় আছে ও।
উফফ তৃণা। তূর্য কে আবার বাড়িতে আসতে হবে কেন? ওকে কল করে রেস্টুরেন্টের নাম জানিয়ে দাও।ও চলে আসবে সেখানে। আমরা বসে না থেকে চলে গেলেই তো হয়।আর মেয়ে তো আমরা তিয়াস এর জন্য দেখতে যাচ্ছি। তূর্যর জন্য নয়।তিয়াস আমাদের সাথে থাকলেই তো হলো।
হ্যাঁ। আব্বু ঠিক কথা বলেছো। আমি গাড়ি বের করছি। তোমরা আসো। বলেই তিয়াস চলে গেল। মিসেস তৃনা তূর্য কে কল করে জানিয়ে দেন কোথায় যেতে হবে। বাড়ির বড় ছেলের বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে যাবে আর মেয়ে তো সবার পছন্দ করতে হবে।
আর মেয়ের ও তো ছেলে কে পছন্দ হতে হবে।তাই তো তিয়াস দেবদাস লুক ছেড়ে স্মার্ট হয়ে গেছে। তূর্যর মতো বেশি ফর্সা না হলে ও শ্যামলা রঙের তিয়াস কে দেখতে বেশ মায়াবী লাগে। কোঁকড়ানো চুল গুলো যেনো তার সৌন্দর্য আর ও বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে।
সবাই মেয়ে দেখতে গেলে ও তূর্য গেলো না। বাড়িতে ফিরে এসে গোসল করে বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল। মোবাইল হাতে নিয়ে অনু কে একটু জ্বালানোর জন্য একটা ম্যাসেজ লিখে পাঠিয়ে দেয়। বিকেলের অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে সে।
মোবাইল এ ম্যাসেজ আসার শব্দ পেয়ে কৌতূহল নিয়ে অনু তা সিন করে দেখে,
“ভালোবাসবেন?”
বৃষ্টি জোছনায় ভেজা বারান্দায় আপনি আর আমি
এক কাপ চায়ে দু জোড়া ঠোঁটের চুমুক।
চলবে,,,
চলবে,,,