#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_৩
#Writer_Liza_moni
প্রচন্ড ঝড়ের পর প্রকৃতি যেমন শান্ত নীরব থাকে তনুর কথা শুনে অনু ও ঠিক তেমনি শান্ত হয়ে তনুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
ঠিক কেমন রিয়েকশন করা উচিত অনু তা বুঝতে পারছে না।তাকে খুবই শান্ত দেখাচ্ছে।
অনু তনুর কাছে গিয়ে বললো,,
বিয়ে কবে?আর আমাকে কিছু জানায়নি কেন?
সারপ্রাইজ ছিল। শুধু তোর জন্য। অনু আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল ,,
অনেক বড় সারপ্রাইজ দিলিরে। যে সারপ্রাইজের জন্য আমি অপেক্ষায় ছিলাম না ধন্যবাদ।
সামনের মাসেই বিয়ে। তুই একেবারে বিয়ে শেষ হলে তার পর যাবি।
অনু মুচকি হেসে বললো,,
তোর বিয়েতে আমার কত্ত দায়িত্ব পালন করতে হবে।কত আনন্দ হবে। অনেক মজা করবো তোর বিয়েতে। আমার একটা মাত্র বড় আপুর বিয়ে বলে কথা।
অনুর মুখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তনু। তার পর নিজেই হেসে দেয়।
অনু ছাদের রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে তনুর উদ্দেশ্যে বললো,,
তো কত দিনের সম্পর্ক তোদের?
তনু ও অনুর সাথে গিয়ে দাঁড়ালো।পাশ ফিরে এক পলক অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ রাখলো আকাশে। তার পর বললো,,
১ বছর।
বাহ।আর আমি জানতে ও পারলাম না।
তুই তো ঢাকায় ছিলি। কেমনে জানবি?
সেটাই তো। কেমনে জানমু? জানানোর মতো তো কোনো মাধ্যমই নাই।
অনুর কন্ঠে অভিমান স্পষ্ট।তনু ঠোঁট কামড়ে হাসলো।থাক অভিমান করুক।
.
.
বিছানার ঠিক মাঝখানে কোলে বালিশ রেখে গালে হাত দিয়ে ভ্রু কুঁচকে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে অনু।
উপর থেকে ও সবার উপরে রাগ করেছে। কেন তাকে জানানো হয় নি যে তনুর বিয়ে সামনের মাসের পাঁচ তারিখে।আর এক সপ্তাহ বাকি।
অদ্ভুত হলেও সত্য যে,
অনুর তেমন একটা খারাপ লাগছে না।তনু আর মাহিরের বিয়েতে। কেমন জানি খাপছাড়া মনে হচ্ছে তার কাছে।
কিশোরী বয়সের আবেগ কী তাহলে ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে?
অনুইই বনু আমার রাগ করিস না জানু।
আমিই বারন করছি আম্মু আব্বু কে।যেনো তোকে না বলে বিয়ের কথা।
অনু কিছু বললো না। চুপ করে বিছানার চাদরের দিকে চেয়ে রইলো।
খারাপ লাগছে কিছুটা। তবে সেটা কে প্রকাশ করতে চায় না সে।
আগামী কাল মাহির,মাহিমা,তনু আর অনু তোরা শপিং এ যাবি।
আর অনু শোন,,
তনুর বিয়ের গয়না গুলোর সাথে তোর জন্য একটা সিম্পেল ডিজাইনের চারটা চুড়ি বানাতে দিয়েছি। দেখিস তো পছন্দ হয় কিনা তোর।
বাহ বাহ।তলে তলে তো অনেক কিছু করে ফেলছো। অথচ আমি জানি না।
তুই জেনে এমন কি মহান কাজ করে উল্টায় ফেলতি শুনি?
বাড়ির ছোট মেয়ে ছোট মেয়ের মতো থাকবি।এত রাগ জেদ আসে কই থেকে?
উঁচু গলায় বললো অনুর আম্মু।
অনু কাঁদো কাঁদো কন্ঠে তনুর দিকে তাকিয়ে বললো,,
আপুইইই মিসেস আফরোজা আমারে বকা দিছে।
এর বিচার কর।
আমি আজ কে আব্বু আসলে বিচার দিবো তো।যে মিসেস আফরোজা তনু সাহেবার আম্মু আমাকে বকা দিছে।আশুক আজকে আব্বু আমি বলবো তো।
অনুর কথা শুনে মা আর তনু হাসতে হাসতে শেষ। মেয়েটার বড় হলো না। বাচ্চাই রয়ে গেল।
.
.
বেলা প্রায় দশটা হবে।শপিং মলের সামনে দাড়িয়ে আছে অনু,তনু,মাহির,মাহিমা।
সময় যত যাচ্ছে সূর্যের তাপ তত বাড়ছে।অনু ঘেমে নেয়ে একাকার খুব।অস্বস্তি লাগছে তার।
আজ শুধু অনু আর মাহিমার জন্য শপিং করবে। চাইলে তুমিও করতে পারো তনু।
সব খরচ আমার।
তনু অনুর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,,
সুযোগের সদ্ব্যবহার কর অনু।যা যা কিনতে মন চাইবে সব কিনে নিবি।
অনু অবাক হয়ে তাকায় তনুর মুখের দিকে। নিজের হবু বর কে ফকির করার বুদ্ধি দিচ্ছে তার বোন। সিরিয়াসলি আপু?
যা বলছি তা কর।পারলে আমার জন্য ও কিনিস।
তনুর কান্ডে অনু ভ্যাবা চ্যাকা খেয়ে গেছে। প্রথম কোনো বউ বলছে তার বরকে একদম ফকির করে দিতে।
.
.
অনু তেমন কিছুই কিনলো না।যা কিনেছে সব তনুর জন্য।শাড়ি,চুড়ি, জুতা।সব তনুর জন্য পছন্দ করেছে সে।
গয়নার দোকানে গিয়ে মায়ের পছন্দের বানানো চুড়ি দেখে অনুর মন ছুঁয়ে গেছে।হাতে একদম ঠিকঠাক মাপে হয়েছে। মায়ের চয়েস সব সময় সুন্দর।
শপিং করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় ২টা বেজে যায়। বাড়িতে এসে আধা ঘন্টা সময় নিয়ে গোসল করে সতেজ হয়ে যায় অনু। দুপুরের খাবার না খেয়ে বিছানায় শুয়ে বালিশে মাথা রাখতে যাবে এমন সময় অনুর আম্মু এসে বলে,,
এই এখন আর ঘুমাতে হবে না। আমি ভাত আনছি খেয়ে তার পর ঘুমা।
অনু বিরক্ত হয়ে বললো,,
উফফ আম্মু তুমি ও না,,
অনুর আম্মু বিছানায় বসে হাত ধুয়ে ভাত মাখিয়ে অনুর মুখের সামনে ধরতেই অনু হেসে দিলো। হোস্টেলে থাকলে এত যত্ন কেউ করে না।
মায়ের হাতে খাবার খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে মাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বললো
তোমরা আম্মু রা এত্ত ভালো কেন?
মেয়ের কথা শুনে হাসলেন আফরোজা।
.
.
বাড়ি সাজানোর জন্য ডেকোরেশনের লোকজন চলে এসেছে। আগামী কাল তনুর গাঁয়ে হলুদ।
দূরের আত্মীয়রা সব চলে এসেছেন।অনুর নানুর বাড়ির সবাই আগামীকাল সকালে আসবেন।মাহিরের হলুদের কাজ শেষ হলে। খালামনি দুজন মাহির দের বাড়িতে না গিয়ে অনুদের বাড়িতে চলে আসেন।অনুর ফুফু তিন জন ও সকালে চলে আসে।সব কাজিনরা মিলে তনু কে ঘিরে বসে আছে।
তনুর রুমের আলমারির সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে বুকের কাছে দুই হাত গুজে তনুর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে আরাফাত। তনুর ফুফাতো ভাই।
অনু ছাদে ডেকোরেশন এর লোকদের দেখিয়ে দিচ্ছে ফুল কোন দিকে লাগাবে? রঙিন কাগজ কোন দিকে লাগাবে? মাতব্বরি করছে সে।এক দম স্বাভাবিক ভাবে আছে অনু। হালকা খারাপ লাগা কাজ করলে ও প্রচন্ড খারাপ লাগা তাকে কেন ছুঁতে পারছে না আজ, তা নিয়ে নিজেই অবাক হচ্ছে অনু।
.
.
এই অনুপি,,
মিষ্টি একটা কন্ঠের ডাকে অনু পেছন ফিরে তাকায়।
চার বছরের ছোট্ট পরি কে দেখে মুচকি হেসে পরিকে কোলে নিয়ে মুখে চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিল। কাজিন দলের সব থেকে ছোট্ট সদস্য হলো পরি। পিচ্চির নাম যেমন পরি,, পিচ্চি দেখতেও পরির মতো।
ওলে আমাল পরিটা,,কত দিন পর দেখছি পুচকিটাকে।
পরির গালে আবারো চুমু খেলো অনু।
পরি ও অনুর গালে ছোট্ট ঠোঁটের স্পর্শ করে দিয়ে বললো,,
তুমাতে কত্ত মিস কততি।
ওলে আমাল বাবুনিটা। আমি ও তো তোমাকে কত্ত মিস করছি সোনা।
তনুপির কাতে যাবো।
অনু পরি কে নিয়ে তনুর রুমের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলো। তনুর রুমে এসে দেখে সব গুলো কাজিন তনু কে ঘিরে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে।
বাবারে বাবা।তোরা সবাই মিলে এখানে ঘাপটি মেরে বসে আছিস।আর আমাকে এত্ত এত্ত কাজ করতে হচ্ছে।
অনু পরি কে তনুর কোলে দিয়ে,,
নিজের রুমে চলে গেল। বাড়িতে মেহমান আসলে নিজের রুমটা আর দখলে থাকবে না তার। সকালে মায়ের পিছনে ঘুরতে ঘুরতে একটা তালা জোগাড় করে রেখেছে।
নিজের থাকার ব্যবস্থা নিজেকে করতে হবে। না হলে আর রাতে ঘুমানোর চিন্তা বাদ দিতে হবে।
.
.
.
বিয়ের আমেজ বিরাজ করছে অনুদের বাড়িতে। আত্মীয় স্বজনের জন্য ঘর ভরে গেছে।
ছোট ছোট বাচ্চাদের চিল্লাচিল্লিতে মুখরিত বিয়ে বাড়ি।
হলুদের ছোঁয়া নেওয়ার জন্য তৈরি তনু।
ছাদে সব কাজিনরা মিলে তনুর সাথে ছবি তোলায় ব্যস্ত।
সবার জোড়া জুরিতে শাড়ি পরতে বাধ্য হয় অনু। হলুদ রঙের শাড়ির সাথে হলুদ কাঁচের চুড়ি। হলুদ পাথরের ঝুমকা।খোলা চুল। ছাদের এক কোনায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তনু কে দেখছে।সবার ছবি তোলা শেষ হলে সে তুলবে। তনুর সাথে ছবি।
#তার_শহরের_মায়া ২ 💜
#পার্ট_৪
#Writer_Liza_moni
তনুর সাথে সবার ছবি তোলা শেষ হলে তনু কে হলুদ ছোঁয়াতে যায় বড়রা। চার দিকে বাতাস বইতে শুরু করে। অকাশে ও ঘন কালো মেঘ জমতে শুরু করে। বৃষ্টি পড়বে মনে হয়।
আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তনে বিরক্ত হয় সবাই।
আজকেই বৃষ্টি পড়তে হবে?
কথাটা বলতে না বলতেই ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। তনুর কোনো ভাব ভঙ্গিমা বুঝতে পারছে না অনু। বৃষ্টি পড়ে তার সুন্দর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান টা ভেস্তে দিলো।তাতে যেনো মেয়েটার কিচ্ছু আসে যায় না।
মুষলধারে বৃষ্টি পড়া শুরু করলে সবাই ছাদ থেকে বাড়ির ভেতরে চলে আসে।
তনুর রুমের বিছানায় মন খারাপ করে বসে আছে সব কাজিনরা। তনুর গাঁয়ে হলুদ নিয়ে তাদের সবার কত্ত প্লান ছিল।এই বৃষ্টি সব নষ্ট করে দিল।
তনু বেলকনিতে দাঁড়িয়ে চিল মুডে বৃষ্টি বিলাস করছে। বৃষ্টি আসায় তনু যেনো আরো বেশি খুশি হয়েছে।
অনু ভ্রু কুঁচকে তনুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
তুই মন খারাপ না করে এমন চিল মুডে এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি বিলাস করছিস?
তোর হলুদের এত সুন্দর আয়োজন নষ্ট হয়ে গেছে আপু। তোর মন খারাপ হচ্ছে না?
অনুর কথা শুনে তনু হাসে। বেলকনির গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে বৃষ্টির পানি নিয়ে অনুর মুখে ছুড়ে মেরে মুচকি হেসে বললো,,
প্যারা নাই চিল।
হলুদের অনুষ্ঠান নিয়ে আমার তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই। আগামীকাল বিয়েটা ঠিকমতো হলেই হলো।
অনু কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেল। রুমে এসে তনুর জন্য রাখা মেহেদী নিয়ে আবারো চললো তনুর রুমে।হাতে মেহেদী পড়িয়ে দিবে তনু কে।
তানিশা অনুর ফুফাতো বোন আর অনু মিলে তনুর হাতে মেহেদি দিয়ে দিচ্ছে।
এমন সময় আধ ভেজা চুল ঝাড়তে ঝাড়তে তনুর রুমে প্রবেশ করলো আরাফাত।
আরাফাত কে এমন ভিজা দেখে তনু অস্থির কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,,
এই আরাফাত ভাই,,
এমন ভিজলে কী করে? বৃষ্টির পানি তোমাকে সয় না।জ্বর আসবে তো।
তনুর কথা শুনে অনু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তনুর মুখের দিকে। আরাফাত ভাইয়ের বৃষ্টি সয় না?এই কথা শুনে অনু কন্ঠে বিষ্ময় নিয়ে বললো,,
ভাইয়ার সম্পর্কে আমরাই তো এত কিছু জানি না। তুই এত কিছু জানিস আপু?
না জানার মতো কী আছে?বড় ফুফুর কাছে তো অনেক বার শুনেছি।
অনু আর কিছু না বলে মেহেদী লাগানোর দিকে মন দিল।
তনু ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।
.
.
বৃষ্টি থেমেছে দশ মিনিট হবে।অনু বাড়ির উঠানে নেমে গেছে ভেজা মাটির ঘ্রাণ নেওয়ার জন্য।
বৃষ্টির পর এই ভেজা মাটির ঘ্রাণ তার এত ভালো লাগে কেন? সেটা অনুর নিজেরি অজানা।
অনু কে বাহিরে দেখে তনু তার রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে চিল্লিয়ে বললো,,
এই অনু,,
আমার ফুলের বাগানে হলুদ গোলাপ গাছে একটা গোলাপ ফুল ফুটেছে।ওটা নিয়ে আয় তো।
অনু মাথা নাড়িয়ে বললো,,
আনছি। অপেক্ষা কর।
বাড়ির ডান পাশে ছোট্ট একটা ফুলের বাগান আছে। ছাদে ও আছে তবে সেটা অনুর।অনুর অনুপস্থিতিতে মা আর তনুই গাছ গুলোর যত্ন করেন।
গাছ থেকে ফুলটা নিয়ে অনু তনুর কাছে চলে গেল।ফুলটা তনুর ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে মায়ের কাছে চলে গেল।
আরেএএএ,,
অনু তো চলেই গেল। আমার হাতে তো মেহেদী।ফুলটা খোঁপায় গুঁজে দিবে কে? তানিশা, মনিষা কাউকেই তো দেখছি না।
রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে এ দিক ও দিক তাকিয়ে দেখছে তনু।যদি কাউকে পাওয়া যায়। এমন সময় আরাফাত কে দেখলো ড্রইং রুমের দিকে যাচ্ছে।
এই আরাফাত রহমান
শুনেন বড় ভাই,,,
আরাফাত তনুর কাছে এসে মুখ মলিন করে বললো
কী হয়েছে ?
তনু ড্রেসিং টেবিলের দিকে ইশারা করে দেখিয়ে বললো,,
ফুলটা খোঁপায় গুঁজে দেন না প্লিজ।
আরাফাত গম্ভীর কণ্ঠে বললো,,
তোমাদের এই সব মেয়েলি কাজ আমার দ্বারা হবে না।অনু, তানিশা, মনিষা,
এদের কাউকে ডেকে বলো।
আপনি বড্ড খারাপ আরাফাত ভাই। অসভ্য লোক।লাগবে না আপনার সাহায্য।
আরাফাত মুখটাকে মলিন করে চলে গেল।
আরাফাতের চলে যাওয়ার দিকে চোখ কটমট করে তাকিয়ে রইলো তনু।
খুব খারাপ লোক।
.
.
.
সেই কখন থেকে মাহির তনু কে ভিডিও করে যাচ্ছে।তনু কল রিসিভ করছে না বরং বার বার কল কেটে দিচ্ছে। মেহেদী শুকিয়ে গেছে। হাত ধুয়ে ও নিয়েছে কিছুক্ষণ আগে।
তনু এখন মাহিরের সাথে কথা বলতে চাইছে না একদম। কল কেটে দেওয়ার সাথে সাথেই আবারও কল করছে মাহির।তনু বিরক্ত হয়ে এক পর্যায় মোবাইল বন্ধ করে দিয়ে শান্তির একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।
.
.
সকাল থেকেই অনু কে এটা ওটা করতেই হচ্ছে।সবাই তৈরি হয়ে গেছে পার্লারে যাওয়ার জন্য।তনুর সাথে পার্লার থেকে সেজে কমিউনিটি সেন্টারে যাবে অনু, তানিশা, মনিষা,পরি,আরো কয়েক জন।
অনু রুমে এসে গোসল করে তৈরি হয়ে চললো গাড়ির দিকে।সবাই অপেক্ষা করছে তার জন্য।
মাহিররা কমিউনিটি সেন্টারে এসে বসে আছে। মাহির খুব খুশি।এত দিনে তনু কে নিজের করে পাবে বলে।
তবে তনুর প্রতি তার একটু অভিমান জমেছে। গতকাল এত বার কল করার পরো কল রিসিভ না করে মোবাইল বন্ধ করে দেওয়ার জন্য।যদি ও সে ঠিক জানে না।আসলে এই কাজটা কে করেছে?
পার্লার থেকে বের হওয়ার সময় তনু কে কোথাও খুঁজে পেলো না অনু। হঠাৎ করেই গায়েব হয়ে গেছে সে।অনু তনুর মোবাইলে কল করে দেখে,,
মোবাইল তার সামনেই রিং হচ্ছে।এই দিকে আব্বু, আম্মু,ফুফুরা সবাই কল করে যাচ্ছে অনু কে।
তনু কে সব জায়গায় খুঁজে ও পায়নি তারা।
অনুর ভয় হতে লাগলো।মাকে ফোন করে বললো,,
তনু কে খুঁজে পাচ্ছে না তারা। তাদের সাথেই ছিল। হঠাৎ করেই লাপাত্তা হয়ে গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে আগে পড়েনি অনুর মা।তনু হঠাৎ করে কোথায় চলে গেল বুঝতে পারছেন না তিনি।
তুই সবাইকে নিয়ে কমিউনিটি সেন্টারে চলে আয়।
অনু মায়ের কথা মতো সেটাই করলো।তনু কে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কথা টা মাহিরের কানে পৌঁছাতে বেশি দেরি হলো না।
কপালে হাত দিয়ে বসে আছে সবাই।তনু হঠাৎ করে কোথায় গায়েব হয়ে গেলো? এমন তো নয় যে তনুর কোনো গোপন প্রেমিক আছে। তার আব্বু আম্মু যত টুকু জানেন,,
মাহির আর তনুর আগে থেকেই প্রেমের সম্পর্ক আছে।
কিন্তু তনু কোথায় চলে গেল? মেয়েটার কোনো বিপদ হলো না তো?
অস্থির হয়ে পায়চারি করছে অনু। চিন্তা হচ্ছে খুব। আব্বু,বড় ফুফা, ছোট ফুফা, ছোট চাচা,বড় মামা সবাই বের হতে যাবেন তনু কে খুঁজতে এমন সময় তনু আরাফাতের হাত ধরে কমিউনিটি সেন্টারের ভেতরে প্রবেশ করে। ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে আছে।
সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তনু আর আরাফাতের দিকে।
অনু তনুর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,,
কোথায় ছিলি আপু?
আজ তোর বিয়ে।আর তুই আরাফাত ভাইয়ের হাত ধরে আছিস কেন?
তনু স্পষ্ট কন্ঠে বললো,,
বিয়ে কার? আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে।
মাহির তনুর কাছে এসে বললো,,
মানে?বিয়ে হয়ে গেছে মানে কি তনু?
মানে খুব সহজ মিস্টার মাহির রেদওয়ান।
আপনি যেমন ডেয়ার নিয়ে আমার বোনের আবেগ নিয়ে গেমস খেলেছেন।ঠিক তেমনি আমি ও ডেয়ার নিয়ে আপনার সাথে গেমস খেলেছি।
তনুর কথা শুনে উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।অনু বিষ্ময়ে কিংকর্তব্য বিমুঢ় হয়ে গেছে।
আপু জানে এই সব? কখনো বুঝতে দেয় নি তো।
মাহির ভাই শুনেন,,
একটু চিটিং বাজি না করলে আপনাকে শিক্ষা দেওয়া হতো না। জানি আপনি আমার মামাতো ভাই। আমার শ্রদ্ধেয় বড় মামার ছেলে। তবুও আপনাকে আপনার কাজের ফল ভোগ করতেই হতো।
তনু অনুর হাত ধরে টান মেরে নিজের কাছে নিয়ে এসে মাহির চোখে চোখ রেখে বললো,,
আমার এই ছোট্ট বোনের মন নিয়ে খেলার জন্যই আপনাকে এমন শাস্তি দিয়েছি আমি।
জানি আপনি ও ভালোবাসেন আমাকে।তাই বুঝবেন কারো মন ভাঙ্গলে কেমন লাগে।
আমি আর আরাফাত আজ সাড়ে চার বছর ধরে একে অপরকে ভালোবাসি। তাকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে বিয়ে করবো?এটা ভুলে ও ভাবিনি আমি।
তনু মাহিরের চোখের দিকে চোখ রেখে বললো,,
আমি আপনাকে কোনো দিন ও ভালোবাসিনি। মাহির ভাই। কোনো দিন ও না।
চলবে,,,, 🍁
(