#তি_আমো
পর্ব ১৮
লিখা- Sidratul Muntaz
ভাইয়ার ওয়ার্কশপ থেকে বেরিয়ে ঈশান সরাসরি আমার ভার্সিটিতে এলো। আমি ক্লাসে ছিলাম। ঈশানের ম্যাসেজ পেয়ে ক্লাস ছেড়ে বের হতে হলো। ক্যাম্পাসের বাগানে পদ্মপুকুরের পেছনে বসে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল ঈশান। আমি খেয়াল করলাম আশেপাশের অনেক ফ্রেশারস ঈশানকে আঁড়চোখে দেখছে। কেউ কেউ আবার যেতে-আসতে সালামও দিচ্ছে। তারা নিশ্চয়ই ঈশানকে সিনিয়র ভাবছে! ফ্রেশারদের মধ্যে এই ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছি আমি। সুদর্শন সিনিয়র ভাইয়া পেলেই যেচে এসে সালাম দিবে। লোকেশন জিজ্ঞেস করার বাহানায় কথা বলবে। আমি ঈশানের পাশে বসতেই একটি মেয়ে এসে বলল, ” ভাইয়া, চারুকলা ভবনটা কোথায় একটু বলতে পারবেন?”
আমি সপ্রতিভ হেসে বললাম,” তোমার পেছনে।”
মেয়েটা পেছনে ঘুরতেই দেখল চারুকলা ভবন। বেচারীর চেহারা লাল হয়ে গেল। লজ্জিত গলায় বলল,” স্যরি, আমি খেয়াল করিনি।”
মেয়েটি চলে যেতেই আমি ঈশানের দিকে চেয়ে বললাম,” আজকেও আপনি চুল আঁচড়াননি। সব দোষ এই এলোমেলো চুলের। আপনার চুলের দিকে তাকাতে গিয়েই কেউ কিছু খেয়াল করছে না। সবাই হোচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছে।”
ঈশান ভ্রু কুচকে বলল,” পড়ে যাচ্ছে মানে? কোথায় পড়ে যাচ্ছে?”
আমি মসৃণ হেসে বললাম,” আপনার প্রেমে!”
এইটা বলেই আমি মুখে হাত দিয়ে খিলখিল করে হাসলাম। ঈশান বিরক্ত গলায় বলল,” ফাজলামি কোরো না। খুব মজায় আছো, তাই না?”
” মজায় কেন থাকব না? সামনে আমার বিয়ে। আমার তো এখন মজা করারই সময়।”
” বার-বার বিয়ের কথা না বললে হয় না?”
” কেন? আপনার কষ্ট হয়?”
ঈশান জবাব দিল না। দীর্ঘ একটি শ্বাস ছেড়ে বলল,” তুমি কি চাও তারিন? এসব কি হচ্ছে? এমনিতেও তোমাকে আমি হারিয়ে ফেলছি। তাহলে কি লাভ এই মিথ্যার মাঝে আটকে থেকে? আমি ভাইয়াকে সব বলে দিতে চাই।”
আমি গম্ভীর হয়ে বললাম,” কখনও না। ভাইয়া কষ্ট পাবে। আর কখনও আমাকে বিশ্বাস করবে না।”
” কিন্তু সত্যি তো একদিন প্রকাশ হবেই। তখন কষ্ট পাবে না তোমার ভাইয়া? এর চেয়ে ভালো আমরা দু’জন গিয়ে একসাথে বলি!”
” কি বলব?”
” যা যা মিথ্যা বলেছি সব স্বীকার করে ক্ষমা চাইব।”
আমি করুণ কণ্ঠে বললাম,” তারপর কি হবে? ভাইয়া আপনাকে সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি থেকে বের করে দেবে। আর কোনোদিন আমাদের দেখা হবে না।”
ঈশান আমার চেয়েও করুণ কণ্ঠে বলল,” আর কিছুদিন পর তো দেখা এমনিও হবে না!”
আমি অবাক হলাম,” কেন?”
ঈশান বিষাদমাখা বদনে মুচকি হাসল,” ভুলে যাচ্ছো? তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে তারিন।”
আমি বিস্মিত হয়ে বললাম,” আপনি এই বিয়ে আটকাবেন না?”
” কেন আটকাব? তুমি নিজেই তো বিয়ে নিয়ে খুশি। সারাক্ষণ হাসছ, আনন্দে মেতে আছো। আমার কি লাভ তোমার আনন্দ নষ্ট করে?”
” বাহ, সেক্রিফাইস করছেন?”
” উহুম। এটাকে সেক্রিফাইস বলে না। সেক্রিফাইস সেই জিনিসকে করা যায়, যেটা আমাদের নিজের হয়। তুমি তো কখনোই আমার হওনি তারিন।”
আমি চুপ রইলাম। ঈশান ভারী কণ্ঠে বলল,” এক তরফা ভালোবাসায় প্রত্যাশা রাখতে নেই৷ তাই আমিও কোনো প্রত্যাশা রেখে ভালোবাসিনি তোমাকে। ভালোবাসা মানেই তো ভালো রাখা। আমি তোমাকে ভালো রাখতে চেয়েছিলাম যেকোনো মূল্যে। এবার সেটা আমাকে নিয়েও হতে পারে অথবা আমাকে ছাড়াও হতে পারে। আর দূর্ভাগ্যবশত, আমাকে ছাড়াই তুমি যথেষ্ট ভালো আছো। তাই জোরপূর্বক তোমার লাইফে ইন্টারফেয়ার করে তোমার ভালো থাকা নষ্ট করব না আমি। কিন্তু একটা কথা মনে রেখো, আমি শুধু তোমাকেই ভালোবেসেছি। আর সবসময় তোমাকেই ভালোবাসব।”
” দূর থেকে ভালোবাসবেন?”
” আমার দূর্ভাগ্য! তোমাকে দূর থেকেই ভালোবাসই হয়তো আমার ভাগ্য ছিল।”
” আপনি নিজের ভালোবাসা ভুলে চলে যাবেন? শুধু আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে বলে? এতোটা দূর্বল ভালোবাসা আপনার?”
ঈশান হাসল,” তুমি কি চাও তারিন?”
আমি বিব্রত হয়ে বললাম,” আমি আবার কি চাইব?কিছুই চাই না।”
” আমি চলে যাওয়ার পর যদি কখনও সম্ভব হয়, তোমার ভাইয়াকে সত্যিটা বলে দিও। হয়তো তোমার পরিবারের সবাই আমাকে যতটা ভালোবাসে সত্যি জানার পর তার চেয়েও অনেক বেশি ঘৃণা করবে। কিন্তু তুমি তো ঘৃণা করবে না, তাই না? আমাকে মনে রাখবে তো?”
আমি মাথা নিচু করে বললাম,” জানি না।”
” অন্তত সান্ত্বনার জন্য হলেও একবার বলে দাও, যে আমাকে তুমি মনে রাখবে!”
আমি কিছু বললাম না। ঈশান উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল,” যে তোমাকে পাবে তার প্রতি আমার বড্ড ঈর্ষা। তবুও দোয়া করি, সবসময় এভাবে ভালো থেকো। তোমার মুখের ওই মিষ্টি হাসি আমি আর দেখতে পাব না হয়তো। তবুও সবসময় এভাবেই হেসো৷”
” আপনি কি চলে যাচ্ছেন?”
” তুমি চাও আমি থাকি?”
আমি কিছু বললাম না। ঈশান কিছুক্ষণ আমার উত্তরের অপেক্ষা করে চলে গেল। আমি কাঁদতে কাঁদতে নিহার কাছে গেলাম। নিহা ক্যান্টিনে বসে চা খাচ্ছিল। আমি সহসা তাকে জড়িয়ে ধরতেই তার হাতের কাপ পিছলে পড়ে গেল। ওয়ানটাইম কাপ ছিল বলে ভাঙল না। নিহা আশ্চর্য কণ্ঠে প্রশ্ন করল,” তারু কি হয়েছে?”
আমি কাঁদতে লাগলাম। আমার চোখের পানি দেখে নিহা আরও হকচকিয়ে গেল। আমি নিহাকে সবকিছু বিস্তারিত বললাম। নিহা আমার গালে আলতো করে চাপড় দিয়ে বলল,” বোকা! এজন্য এভাবে কাঁদতে হয়? তুই যা ঈশান ভাইয়ের কাছে। বলে দে যে তুইও উনাকে ভালোবাসিস৷ তারপর দ্যাখ উনি কি করে!”
আমি দুইপাশে মাথা নেড়ে বললাম,” আমি পারব না। আমি উনাকে এমনিই অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।”
” তাহলে এখন ভালোবাসার কথা বলে খুশি করে দে!”
” তুই যেভাবে বলছিস, ব্যাপারটা এতোটাও সহজ না।”
” তুই নিজেই কঠিন বানাচ্ছিস।”
আমি অভিযোগ করে বললাম,” উনি যদি আমাকে এতোই ভালোবাসতেন তাহলে চলে কেন যাচ্ছেন আমাকে ছেড়ে?”
” সেটা তো তোর জন্যই চলে যাচ্ছে। তুই নিজেই তো উনাকে বলেছিস যে বিয়েতে তোর মত আছে।”
আমি রেগে বললাম,” তাই বলে উনি আমাকে ছেড়েই চলে যাবে?”
নিহা আমার দুই কাঁধ চেপে ধরে বলল,” কারণ ঈশান ভাইয়া জানে যে জোর করে ভালোবাসা হয় না। তুই কি চাস? উনি রূপকথার রাজপুত্রের মতো সৈন্য-সামন্ত নিয়ে তোর জন্য যুদ্ধে নামুক? তারপর তোকে জয় করে নিয়ে যাক?”
” অবশ্যই! যদি যুদ্ধই না করতে পারেন তাহলে ভালোবেসেছেন কেন?”
নিহা হেসে ফেলে বলল,” যুদ্ধ উনি তখনি করবেন যখন জানবেন যে তুইও উনাকে চাস। যদি তুই নিজেই খুশি না থাকিস তাহলে উনি খামোখা যুদ্ধ কেন করবেন?”
আমি চোখ মুছতে মুছতে বললাম,” সবসময় মুখ ফুটে কেন বলে দিতে হবে? উনি কি বোঝে না আমি উনাকে ভালোবাসি? যদি ভালো না বাসতাম তাহলে কবেই ভাইয়ার কাছে সব বলে দিতাম। মোহনা আন্টিকেও বলে দিতাম। উনি আমাকে এতো জ্বালিয়েছেন, তবুও আমি সব মুখ বুজে কেন সহ্য করেছি? ভালোবাসি বলেই তো! উনি কি এইটুকু বোঝেন না?”
নিহা আমার চিবুক উপরে তুলে বলল,” ঈশান ভাইয়া যদি তোকে কনফেস না করতো তাহলে কি তুই কখনও উনার ভালোবাসা বুঝতে পারতি? সবসময় ভালোবাসা বুঝে নিতে হবে কেন? মাঝে মাঝে মুখ ফুটে বলাটাও অনেক জরুরী।”
” এখন কি মেয়ে হয়ে আমারই উনাকে প্রপোজ করতে হবে?”
নিহা মাথা নেড়ে বলল,” না। উনি তোকে অনেক আগেই প্রপোজ করেছে। তুই শুধু এক্সেপ্ট করবি।”
আমি এবার মুখে হাসি নিয়ে নিহাকে জড়িয়ে ধরলাম। ভেবেছিলাম আজরাতে সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর ঈশানের জন্য কফি বানিয়ে ছাদে যাব। তারপর মনে যা আছে, সবকিছু এক নিশ্বাসে বলে ফেলব। আমার আশায় জল পড়ল। রাতে যখন খেতে বসলাম, তখন শুনতে হলো ঈশান নাকি চলে গেছে। বিকাল থেকেই ঈশানকে কোথাও দেখছিলাম না। আমি ভেবেছিলাম উনি হয়তো বাইরে আছেন কিন্তু একবারেই যে চলে গেছেন এটা ভাবতে পারিনি। ভাইয়া খেতে খেতে বলল,
” ছেলেটা খুব ভালো ছিল। আমি ভেবেছিলাম তার কাছে তোকে বিয়ে দিলে তুইও সুখে থাকবি আর আমরাও নিশ্চিন্ত হবো। কিন্তু সে যে আরও অনেক বড় স্বপ্ন দেখে! এখন বিয়ে-টিয়ে নিয়ে মাথা ঘামানোর সময়টুকুও তার হাতে নেই। বিদেশে স্কলারশীপ পেয়ে কানাডা চলে যাচ্ছে। আজকেই আমাকে জানাতে এলো। আমিও আর বিয়ের ব্যাপারে কিছু বলিনি। যেখানেই যাক, অন্তত ভালো থাকুক।”
আমার খাবার গিলতে তখন খুব কষ্ট হচ্ছে। মায়েরও খুব মনখারাপ। আফসোস করে বলল,” ছেলেটা এভাবে মায়া লাগিয়ে চলে গেল.. খুব খারাপ লাগছে। ছাদের দিকে তাকালেই মনটা ভার হয়ে আসছে। ”
আমি অর্ধেক খাবার খেয়েই প্লেট নিয়ে রান্নাঘরে চলে এলাম। দুইহাতে চোখের পানি মুছে, প্লেট ধুঁয়ে ঘরে চলে এলাম৷ এতো বেশি কান্না পাচ্ছে! ভীষণ অভিমান হচ্ছে। ঈশান চলে গেল অথচ আমার সাথে একটিবার দেখাও করল না? এই তার ভালোবাসা? ইচ্ছে হচ্ছে ফোন করে একশোটা ঝারি দেই। কিন্তু তীব্র আত্মসম্মানের কাছে হার মেনে সেটা করতে ব্যর্থ হলাম। আমি নিহাকে ফোন করলাম। নিহা এসব শুনে বলল,” তুই বোকার মতো না কেঁদে ঈশান ভাইকে ফোন করলেই তো পারিস।”
” ফোন করে আমি কি বলব? আমার কাছে আসুন, আমাকে বিয়ে করুন, আপনাকে ছাড়া আমি মরে যাচ্ছি, এসব বলব?”
” তুই যেভাবে কাঁদছিস, মনে তো হচ্ছে আসলেই মরে যাবি।”
আমি রাগী গলায় বললাম,” নিহা ফাজলামি করবি না একদম। আমার পুরো শরীর জ্বলে যাচ্ছে। উনি যদি ছেড়েই যাবে তাহলে কেন এতো ভালোবাসা দেখালো? ”
” মাথা ঠান্ডা কর। রাগারাগি কোনোকিছুর সমাধান না। তাছাড়া তোর কাছে আজ সারাদিন ছিল। তুই উনাকে আরও আগেই কেন ভালোবাসার কথা জানিয়ে দিলি না?”
” আমি ভেবেছিলাম রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে তারপর ছাদে যাব।”
” সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলি?”
” হুম।”
” আহারে! আচ্ছা মনখারাপ করিস না। আমি ঈশান ভাইয়াকে ফোন করে বলছি যেন তোর সাথে দেখা করে। তাহলেই তো হলো!”
আমি চেঁচিয়ে বললাম,” একদম না। এরকম কিছুই করবি না তুই।”
” তাহলে কি করব?”
” জানি না।”
নিহা বিরক্ত হয়ে বলল,” তারু, একটা সলিউশনে তো আসতে হবে!”
আমি ভেবে বললাম,” এমন কিছু করতে হবে যেন আমার লজ্জা না লাগে।”
নিহা আমার কথায় হেসেই খু’ন। আমি ক্ষীপ্ত হয়ে বললাম,” দ্যাখ, একদম হাসবি না।”
” আচ্ছা, তাহলে তুই বরং ঈশান ভাইকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস কর তোকে না জানিয়ে কেন চলে গেল? এইটা করতে তো আর লজ্জা লাগবে না?”
” হ্যাঁ ঠিক বলেছিস। আচ্ছা, আমি তাহলে এখনি ফোন করছি।”
নিহার ফোন কেটেই ঈশানের নাম্বারে ডায়াল করলাম। উত্তেজনায় আমার হাতের আঙুলগুলো কাঁপছে। ঈশান ওই পাশ থেকে যখন গম্ভীর কণ্ঠে বলল,” হ্যালো।” তখন যেন আমার শ্বাস বন্ধ হওয়ার যোগাড়। আমি প্রায় রুদ্ধশ্বাসে বললাম,” আপনি কোথায়?”
” সাফিনের ফ্ল্যাটে আছি। কেন?”
” আমাকে না বলে চলে গেলেন কেন?”
ওই পাশ থেকে কোনো উত্তর এলো না। আমি বললাম,” হ্যালো, শুনতে পাচ্ছেন?”
” হুম, বলো।”
” আমি একটা প্রশ্ন করেছি আপনাকে।”
” এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই।”
” নেই মানে? এতোদিন ধরে আমাদের বাড়িতে থাকলেন, খেলেন, ঘুমালেন আর আমাকে না বলেই চলে গেলেন? এতো সেলফিশ আপনি?”
ঈশান হাসল। ফোন কানে নিয়েও আমি বুঝতে পারলাম, হাসিটা বেদনাদায়ক। সে ঠান্ডা কণ্ঠে বলল,” তোমাকে বিদায় জানাতে এলে আমার যাওয়াটা অসম্ভব হয়ে যেতো, তারিন। ভালোবাসাকে বিদায় জানানো এ পৃথিবীর কঠিনতম কাজগুলোর একটি। যখন কাউকে ভালোবাসবে তখন বুঝবে।”
আমি ফুঁসে উঠে বললাম,” সব ভালোবাসা শুধু আপনার মনেই আছে তাই না? আর আমার মন তো পাথর! আমি তো ভালোবাসতেই জানি না!”
” আরে, আমি এটা কখন বললাম?”
” হয়েছে, আর কথাই বলবেন না আপনি। এই মুহূর্তে বাড়ি আসুন৷”
” কি?”
” কানে শুনতে পান না? আপনাকে বাড়ি আসতে বলেছি।”
” তোমাদের বাড়ি?”
” না, এইরাতের বেলা আপনাকে প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে যেতে বলছি আমি।”
” তারিন তোমার কি মাথা ঠিকাছে?”
” ঠিক থাকবে কিভাবে? আপনিই তো সব এলোমেলো করে দিয়েছেন। শুনুন, আমি এক ঘণ্টা অপেক্ষা করব৷ এর মধ্যে যদি না এসেছেন, তাহলে আমি নিজেই ঘর থেকে বের হয়ে আপনার কাছে চলে আসব।”
” ঠিকানা কোথায় পাবে?”
” নিহার থেকে নিব! সাফিন ভাইয়ের ফ্ল্যাট তো! নিহার কাছে নিশ্চয়ই ঠিকানা আছে। দাঁড়ান, আমি এখনি ফোন করছি।”
” থাক, থাক, ফোন করার দরকার নেই। আমি আসছি।”
আমি স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে উচ্চারণ করলাম,” গুড।”
চলবে#তি_আমো
পর্ব ১৯
লিখা- Sidratul Muntaz
ঈশানের সাথে কথা শেষ করে বারান্দায় এলাম। হঠাৎ শুনলাম কারো খিলখিল হাসির শব্দ। ভয়ে বুক ধুকপুক করে উঠল। পেছনে ঘুরতেই দেখলাম বুড়ি। আমি কোমরে হাত গুজে বললাম,” কি সমস্যা তোমার? রাত-বিরাতে আমাকে ভয় দেখাতে এসেছ?”
বুড়ি হাসতে হাসতে আমার কাছে এসে গা ঘেঁষে দাঁড়াল। একটু ঢং করে বলল,” কহন আইব?”
আমি চোরা চোখে চেয়ে প্রশ্ন করলাম,” মানে? কার কথা বলছ?”
” বয়স হইছে বইলা কি বুদ্ধিও কমছে? কানে ছানি পড়ছে? কিছু শুনি না ভাবছোস? তুই যে তারে ফোন কইরা আইতে কইছোস আমি ইশপষ্ট শুনছি উডানে খাড়ায়া খাড়ায়া।”
আমি বিস্ময়ে মুখে হাত ঠেকিয়ে বললাম,” তুমি আমার ঘরেও আড়ি পাততে শুরু করেছ? ছি, ছি!”
বুড়ি খিলখিল করে হেসে তার কাঁধ দিয়ে আমার কাঁধে ঠেলা মেরে বলল,” কস না?”
” কি বলব আজব!” বিরক্তি প্রকাশ করলাম আমি। বুড়ি আহ্লাদী কণ্ঠে বলল,” কহন আইব?”
আমি লজ্জায় অস্থির হয়ে বললাম,” কেউ আসবে না। তুমি এখান থেকে যাও।”
” হ। তুই কইলি আর আমিও বিশ্বাস করলাম। আমি জানি, আইব। তুই কইছোস আর না আয়া থাকতে পারব?”
আমার চেহারা রক্তবর্ণ হয়ে গেল। ক্ষেপে উঠে বললাম,” বুড়ি, তুমি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছ। মা অথবা ভাইয়াকে বলে দিবে না তো?”
বুড়ি কপালে ভাজ ফেলে মুখ গোজ করে বলল,” দুরু যা! কওনের হইলে কি এতোক্ষণে বইয়া থাকতাম? কহনই তো কইয়া দিতাম! আমি তো চাই হেতে আয়ুক। তুই এমন ম্যান্দামারা কাপুড় পিন্দা আছোস কে? বদলা এডি! শাড়ি পিন। তোর জন্মদিনে আমার তারিফ ভাইয়ে একটা নীল শাড়ি দিছিল না? হেইড পিন! তোরে একদম পরীর লাহান লাগব।”
আমি কোনো কথা বললাম না। বুড়ি কিছুক্ষণ মেলা ফ্যাচফ্যাচ করে বেরিয়ে গেল। সে চলে যেতেই আমি আলমারি খুললাম। ঈশানের দেওয়া লাল শাড়িটার কথা মনে পড়ল। আমি শাড়িটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ দেখে আবার রেখে দিলাম। না, শাড়ি আমার পক্ষে পরা সম্ভব নয়। কিন্তু হালকা সাজগোজ তো করতেই পারি। আমি চুল আঁচড়ে চোখে কাজল দিলাম। লিপস্টিক দিতে নিয়েও মুছে ফেললাম। অসম্ভব, ঈশানের জন্য আমি কখনোই সাজতে পারব না। আর যদি কখনও সেজে ফেলি, ভুল করেও তার সামনে যেতে পারব না। সেই কথা মনে এলেও বুকে ভূমিকম্প শুরু হয়। এইতো, এখনও হচ্ছে! আমার হৃৎপিন্ডের উত্তালতা বাড়িয়ে দিয়ে মুঠোফোনটা বেজে উঠল। ঈশানের ম্যাসেজ,” এসে গেছি। কিন্তু সদর দরজা বন্ধ। ঢুকব কি করে?”
আমি লিখলাম,” সদর দরজা দিয়ে ঢোকা যাবে না। আমি ছাদে উঠে মই দিচ্ছি।”
” ওকে।”
আমি যাওয়ার আগে চোখের কাজলটাও মুছে ফেললাম। ঈশান মই বেয়ে ছাদে উঠল। তার শরীর ঘেমে একাকার। আমি অবাক বিস্ময়ে বললাম,” এ কি অবস্থা আপনার?”
ঈশান হাঁপাতে হাঁপাতে জবাব দিল,” মাঝপথে গাড়ির তেল শেষ হয়ে গেছিল। বাকি রাস্তা দৌড়ে এসেছি।”
” দৌড়াতে গেলেন কেন? রিকশা, ট্যাক্সি কি সব পৃথিবী থেকে উধাও হয়ে গেছে?”
” রিকশা পাচ্ছিলাম না। খুঁজতে গেলে দেরি হতো। আর তুমিই তো বলেছিলে একঘণ্টার মধ্যে আসতে হবে। দেখো তো, সময় ঠিকাছে?”
আমি হাত ভাজ করে বললাম,” আপনি পাঁচমিনিট লেইট।”
ঈশান দুইপাশে মাথা নেড়ে বলল,” উহুম। বরং পনেরো মিনিট আগে এসেছি। প্রমাণ চাও? এইতো দেখো, তুমি ফোন করেছিলে এগারোটা ত্রিশে। আর এখন বাজছে বারোটা পনেরো। কয়মিনিট আগে এলাম?”
আমি অন্যদিকে চেয়ে বললাম,” আপনি পাগল। একঘণ্টা সময় দিয়েছি বলে একঘণ্টার মধ্যেই আসতে হবে? পাঁচমিনিট লেইট করলে কি আমি আপনাকে মেরে ফেলতাম?”
” না। কিন্তু যদি তুমি বেরিয়ে যেতে?”
” বেরিয়ে গেলে কি হতো?”
” চিন্তা হতো আমার!”
” পরের বউয়ের জন্য এতো কিসের চিন্তা?”
ঈশান এবার রুষ্ট স্বরে বলল,” পরের বউ হলে এতোরাতে আমাকে ডেকেছ কেন?”
আমি জবাব না দিয়ে ওরনার আঁচল দিয়ে ঈশানের কপালের ঘাম মুছে দিতে লাগলাম। ঈশান এক দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে রইল। আমি প্রশ্ন করলাম,”এভাবে কি দেখছেন?”
ঈশান মোহাচ্ছন্ন কণ্ঠে বলল,” মেয়েরা এতো রহস্যময়ী কেন হয় বলোতো? তাদের মুখ বলে এক কথা অথচ চোখ বলে অন্যকথা।”
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম,” আপনি আমার চোখের ভাষাও পড়তে জানেন নাকি?”
” তোমার চোখের ভাষা আমার চেয়ে ভালো কেউ পড়তে জানে না।”
ঈশানের চেহারায় আত্মবিশ্বাস। আমি বিব্রত হয়ে বললাম,
” তাই? তাহলে বলুন, এখন আমি কি চাইছি?”
ঈশান অন্যদিকে ফিরে মাথা নাড়ল। আমি তার দিকে ঝুঁকে বললাম,” কি? পারবেন না?”
” পারব। কিন্তু তুমি মানবে না।”
” না মানার কি আছে? আপনি বলুন। যদি সত্যি হয় তাহলে নিশ্চয়ই মানব।”
ঈশান খানিকটা ভর্ৎসনার সুরে বলল,” সত্যি বলার সৎসাহস সবার থাকে না।”
আমি আহত স্বরে বললাম,” মানে আপনি বলতে চাইছেন আমার সত্যি বলার সৎসাহস নেই?”
ঈশান আমার দিকে চেয়ে বলল,” তুমি অনেক মিথ্যা বলতে পারো।”
” আপনি আমাকে মিথ্যুক বলছেন?”
” হ্যাঁ। কিন্তু আমার মিথ্যুক মেয়ে পছন্দ। কারণ তাদের মুখ মিথ্যা বললেও চোখ সবসময় সত্যি বলে।”
আমি রাগব নাকি হাসব বুঝতে পারছি না। ঈশান ব্যস্ত স্বরে বলল,” কেন ডেকেছ দ্রুত বলো। আমাকে যেতে হবে। হাতে সময় বেশি নেই।”
ঈশান হাতের ঘড়ি বের করে সময় দেখল। আমি সাথে সাথে তার হাতটা চেপে ধরে বললাম,” এটাই তো সেই ঘড়ি। অন্ধকারে ডায়াল জ্বলছে। সেদিন পার্টিতে যদি নিহা আপনার ঘড়িটাও খুলে আনতো তাহলে বেশ হতো। সবার সামনে মুখোশ খসে পড়তো।”
ঈশান বিদ্রুপাত্মক ভঙ্গিতে হেসে বলল,” কিছুই হতো না। আমি সবার কাছে সব স্বীকার করে নিতাম। আর তোমাকে প্রপোজ করতাম।”
” মিথ্যা কথা।”
” তুমি নিজেও জানো আমি সত্যি বলছি।”
আমি প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বললাম,” কানাডা কবে যাচ্ছেন?”
” কিছুদিন পরেই। নিহা-সাফিনের বিয়েটা হয়ে যাক।”
” তাহলে আমাদের এখানে থাকলেই পারতেন। চলে যাওয়ার কি প্রয়োজন ছিল?”
” এইখানে থাকলে তোমার বিয়ে হতে দিতাম না আমি।”
আমি হেসে ফেললাম। মুখে হাত ঠেকিয়ে বললাম,” যদি বলি বিয়ে ক্যান্সেল হয়ে গেছে?”
” ফাজলামি কোরো না।”
” আমি সিরিয়াস!”
ঈশান আমার দিকে ঘুরে রাশভারী কণ্ঠে প্রশ্ন করল,” ক্যান্সেল কিভাবে হলো?”
” আমিই ক্যান্সেল করেছি। কারণ পাত্র ‘তি আমো’ শব্দের অর্থ জানে না।”
” তুমি জানো?”
” খুব ভালো করে জানি।”
” তাহলে বলো!”
“আপনাকে কেন বলব? যাকে বলার প্রয়োজন তাকেই বলব।”
এই কথা বলেই আমি হাসতে হাসতে ছাদের অন্য প্রান্তে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। ঈশান আমার হাত ধরে শান্ত কণ্ঠে বলল,” তারিন, তোমার বিয়ে ঠিক হয়নি তাই না? আমাকে মিথ্যা বলেছ?”
আমি মাথা নেড়ে বললাম,” হুম।”
ঈশান বিভ্রান্তি ভরা কণ্ঠে আওড়াল,” তাহলে সেদিন দাদী যে বললেন!”
আমি এবার একটু রাগ নিয়েই উচ্চারণ করলাম,” দাদী ভেবেছিল আপনি বীরপুরুষ। গলা উঁচিয়ে বলবেন, তারিনকে আমি ভালোবাসি। অন্যকারো সঙ্গে ওর বিয়ে হতে দিব না। আমি নিজে বিয়ে করব। কিন্তু আপনি সেটা না করে কাপুরুষের মতো পালিয়ে গেলেন। হুহ!”
ঈশান হাবার মতো হা করে তাকিয়ে রইল। আমি ঈশানের মাথায় গাট্টা মেরে বললাম,” সামান্য এইটুকু বুঝতে পারলেন না যে সবাই আপনাকে এতো ভালোবাসে তারা কেন আপনাকে না জানিয়ে আমার বিয়ে ঠিক করবে? আপনি তো আমাদের পরিবারের অংশই হয়ে উঠেছিলেন। ”
” সত্যি তোমার বিয়ে ঠিক হয়নি?”
” না, হাঁদারাম!”
ঈশান মাথা চুলকে বলল,” তাহলে তো খুব বড় ভুল হয়ে গেছে। তুমি অন্তত সত্যিটা জানাতে পারতে।”
” আমি কেন জানাব? আপনি চলে যেতে চেয়েছেন তাই আমিও যেতে দিয়েছি। যে যেতে চায় তাকে জোর করে আটকে রাখব কেন?”
” তাহলে এখন কেন ডেকে আনলে?”
আমি খুব বিরক্ত হয়ে বললাম,” আচ্ছা, আপনারা পুরুষজাতিটাই কি গাঁধা? কিছুই বোঝেন না? একটু আগেই তো বলছিলেন আমার চোখ দেখে সব বুঝতে পারেন। তাহলে প্রশ্ন করতে করতে মাথা ধরিয়ে দিচ্ছেন কেন? চোখ দেখে নিজেই বুঝে নিন!”
আমার কথা শুনে ঈশান ধীরপায়ে কাছে এসে আমাকে নিজের দিকে ঘোরাল৷ আমি দ্বিগুণ বিরক্ত হয়ে বললাম,” কি?” ঈশান জবাব না দিয়ে তার ঠোঁট আমার ঠোঁটের উপর চেপে ধরল। তার বামহাত ডেবে গেল আমার কোমরে। অন্যহাত দিয়ে চেপে ধরল আমার ঘাড়। আমি বরফের মতো ফ্রীজড হয়ে রইলাম। কিছুক্ষণ পর আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। শ্বাস আটকে আসতে লাগল। আমি ছটফট করতে লাগলাম। ঈশান আমাকে ছেড়ে দিতেই আমি ছিটকে দূরে সরে গেলাম। বড় বড় শ্বাস ফেলতে লাগলাম। ঈশান দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আমি মাথা নিচু করে আড়ষ্ট কণ্ঠে জানতে চাইলাম,” এটা কি করলেন আপনি?”
” তোমার চোখ যা বলেছে তাই তো করলাম।”
” ছি, ছি, আমার চোখ বুঝি এই কথা বলেছে?”
ঈশান আমার দিকে ফিরে হতাশ সুরে বলল,” আগেই বলেছিলাম, মানবে না।”
আমি রেগে-মেগে কিছু বলতে নিব, তখনি ভাইয়ার ঘরের দরজা খোলার শব্দ কানে এলো। আমি ছাদের প্রান্তে গিয়ে নিচে উঁকি দিলাম। ভাইয়া আসছে! আমি ঈশানের দিকে চেয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে বললাম,” পালান, আপনি পালান।”
” পালাব কেন?”
” আরে, ভাইয়া ছাদে আসছে।”
ঈশান বিপদগ্রস্ত কণ্ঠে বলল,” হঠাৎ ছাদে কেন?”
” আমি জানি না। এখন কি হবে? হায় আল্লাহ!”
আমি দুশ্চিন্তায় কপাল চেপে ধরলাম। ঈশান আমার হাত ধরে টেনে চিলেকোঠার ঘরে ঢুকে গেল। ভাইয়া ততক্ষণে ছাদে চলে এসেছে। আমি আর ঈশান দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে রইলাম। বুকের ভেতর দামামা বাজছে। ভাইয়া ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলতে বলতে এদিকেই আসছে। আমি আশংকাগ্রস্ত হয়ে বললাম,” ভাইয়া আমাদের দেখে ফেললে অনেক বড় সমস্যা হয়ে যাবে।”
ঈশান আমার কানের কাছে মুখ এনে বিড়বিড় করে বলল,” তোমার ভাইয়া এই রাতের বেলা এখানে কেন এসেছে।”
আমিও একইভাবে ঈশানের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম,” সেটা আমি কিভাবে বলব?”
” মনে হয় তোমার ভাইয়া আমাকে মিস করছে। তাই আমার ঘর দেখতে এসেছে।”
” ইশ! কি ভাবনা! ভাইয়া যদি এই ঘরে ঢোকে তাহলে খবর আছে।”
” খবর আছে কেন?”
” কেন আপনি জানেন না?”
” উহুম।”
ঈশানের সাথে এভাবে কানে কানে কথা বলতে আমার বেশ লাগছিল৷ আমার ধারণা ঈশানেরও ভালো লাগছিল৷ তাই প্রয়োজন ছাড়াই আমরা কথা বলছিলাম। হঠাৎ ভাইয়া চিলেকোঠার দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমি অনুভব করলাম, হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ঈশান মূর্তির মতো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ এক চুলও নড়ছি না। নিশ্বাস নেওয়াও বন্ধ। কারণ দরজা যদি একটু নড়ে তাহলেই ভাইয়া সন্দেহ করবে। একদম চোখমুখ খিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ উপলব্ধি করলাম, দরজাটা সামনে থেকে সরে যাচ্ছে। অর্থাৎ ভাইয়া দরজা টেনে নিচ্ছে। আমি আর ঈশান চোখাচোখি করলাম। ভাইয়া দরজায় তালা লাগিয়ে দিচ্ছে। আমি জোরে চেঁচাতে চাইলাম। ঈশান সঙ্গে সঙ্গে আমার মুখ চেপে ধরে বলল,” শব্দ কোরো না।”
” আমাদের আটকে দিয়ে গেল যে!”
” ধরা পড়ার চেয়ে আটকে থাকা ভালো না?”
আমি হতাশ কণ্ঠে বললাম,” কিন্তু আমরা এখন বের হবো কিভাবে?”
ঈশান আমার চেয়েও দ্বিগুণ হতাশ কণ্ঠে বলল,” সেটা তো আমিও জানি না!”