#তি_আমো
পর্ব ৫২
লিখা- Sidratul Muntaz
সময়টা ছিল শীতের মাঝামাঝি।কুয়াশাচ্ছন্ন এক শীতল ভোরে তারিন হাজির হয়েছিল নিহার বিশাল বাংলো বাড়িটায়। দীর্ঘরাত যাত্রার কারণে খুব ক্লান্ত ছিল সে। তাই দুপুর পর্যন্ত বিশ্রামের ঘুম চললো।
দুপুরের দিকে নিহা গরম গরম নাস্তা আর চা নিয়ে যে ঘরে তারিন ঘুমিয়েছিল, সেই ঘরে এলো। জানালার পর্দা সরিয়ে, কাঁথা টেনে, গুঁতো মেরে তারিনের ঘুম ভাঙালো। তারিন বিরক্ত কণ্ঠে বলল,” প্লিজ, একটু ঘুমাতে দে।”
” চটকানা খেলে বুঝবি ঘুম কি জিনিস। এতোদিন পর দেখা হলো আর তিনি ঘুমাচ্ছেন। এই আমার বাড়ি কি তুই ঘুমাতে এসেছিস?”
তারিন চোখ পিটপিট করে আশেপাশে চেয়ে আড়মোড়া ভাঙল। হাই তুলতে তুলতে বলল,” এখন কি সকাল না বিকাল?”
” দুপুর। যা হাত-মুখ ধুঁয়ে আয়। আমরা এখন ব্রাঞ্চ করব।”
” ব্রাঞ্চ কি?”
” ব্রেকফাস্ট আর লাঞ্চ। একসাথে ব্রাঞ্চ।”
তারিন জানালার দিকে তাকালো। রোদ উঠেছে। নরম রোদে ঝলমল করছে সবুজ বাগান। তারিন আয়েশী কণ্ঠে বলল,” তোদের এখানে ভালোই শীত। আর ঘুমাতেও আরাম..”
তারিনের চোখ আবার বুঁজে আসতে নিচ্ছিল। নিহা তাকে সর্বশক্তি দিয়ে একটা ঠেলা মেরে বলল,” আরেকবার ঘুমের কথা উচ্চারণ করবি তো লাথি মেরে খাট থেকে ফেলে দিবো। ওঠ!”
” আহা যাচ্ছি তো। এমন করিস কেন? তোর বাড়ি কিন্তু আর আসব না এমন করলে।”
” ব্ল্যাকমেইল করছিস নাকি তুই আমাকে?”
তারিন হাসতে হাসতে বাথরুমে ঢুকল। একেবারে গোসল সেরে নিল। তারপর ভেজা তোয়ালে মাথায় মুড়িয়ে নিহার সাথে খেতে বসল। পরোটা আর মাংসের ঝোল মুখে নিয়ে বলল,” তোর পুচকি কি করে?”
” ঘুমাচ্ছে।”
” যখনি জানতে চাই কি করে, তুই উত্তর দিস ঘুমাচ্ছে। সারাদিনই কি ঘুমায়?”
নিহা হতাশ কণ্ঠে বলল,” হ্যাঁ।সারারাত জেগে থাকলে তো দিনেই ঘুমাবে তাই না?”
তারিন এই কথা শুনে আফসোস করতে লাগল,” আহারে, তোর তো তাহলে বিরাট কষ্ট। রাতে ঘুমাতেও পারিস না।”
নিহা দায়সারাভাবে বলল,” আমি ঘুমিয়ে যাই। বাপ সামলায় মেয়েকে।”
” বাবাহ, বেচারা সাফিন ভাইকে খাটিয়ে তুই আরামে ঘুমাস, তাই না? মায়া লাগে না?”
” মায়া লাগবে কেন? এই কাজ ও নিজের ইচ্ছেতেই করে। তার শর্ত হলো মেয়েকে যদি সে কোনোভাবে ঘুম পাড়িয়ে ফেলতে পারে তাহলে দিতে হবে।”
তারিন ভ্রু কুচকে বলল,” দিতে হবে মানে? কি দিতে হবে?”
নিহা ইঙ্গিতপূর্ণ কণ্ঠে বলল,” ন্যাকা, তুই বুঝিস না?”
তারিন লজ্জা পেয়ে গেল। বিব্রত কণ্ঠে বলল,” ও আচ্ছা। এবার বুঝেছি।”
নিহা বলল,” কিন্তু মেয়ে ঘুমায় ভোরের দিকে।”
তারিন আগ বাড়িয়ে প্রশ্ন করল,” তাহলে কি ভোরেই…”
” হুম। এতে লাভ আছে। ফজরের নামায মিস হয় না। নামাযের পর শুরু করা যায়। যোহর পর্যন্ত সময় থাকে। ফরজ গোসল করে একদম যোহরের নামায ধরা যায়।”
তারিন এবার না হেসে পারলোই না। চায়ে চুমুক দেওয়া বন্ধ করে খুব জোরে হাসতে লাগল। নিহাও হাসছে। তারপর হঠাৎ সে প্রশ্ন করল,” আচ্ছা, তারিফ ভাইয়া, আন্টি, দাদী, ওরা কেন আসেনি?”
” ওরা আমাদের গেস্ট হাউজে আছে। ভাইয়া তার ভার্সিটির কিছু বন্ধুদের ইনভাইট করেছে। এবার নাকি সবাই নিউ ইয়ার একসাথে সেলিব্রেট করবে। কয়েকজন আগে থেকে বউ-বাচ্চা নিয়ে হাজির। তাদের সাথে দেখা করতেই ভাইয়া, মা, দাদী সেখানে চলে গেছে। আর আমি এখানে এসে গেছি।”
” তোর ভাইয়ার সব বন্ধুদের বিয়ে হয়ে গেছে, তাই না?”
” অবশ্যই। শুধু কি বিয়ে? বাচ্চাও আছে। তাদের মেয়েরাও প্রায় আমার সমান হয়ে গেছে।”
নিহা হেসে উঠল। ঠিক এমন সময় দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করল ঈশান। তারিন দরজায় শব্দ পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই চমকে উঠল। ঈশান নিহার দিকে চেয়ে প্রশ্ন করছিল,” আমার পাওয়ার ব্যাংকটা…”
বাকি শব্দ আর উচ্চারিত হলো না। কারণ ঈশানের কণ্ঠ থেমে এলো যখন সে তারিনকে দেখল। কয়েক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল সবকিছু। থেমে গেল সময়টা। বাতাসে মিশে গেল অস্বস্তি। তারিনের মুখে পরোটা ছিল। সে গিলতে ভুলে গেল। ঈশান ভুলে গেল শ্বাস নিতে। কিছুক্ষণ ভূতগ্রস্তের মতো দাঁড়িয়ে থাকার পর হঠাৎ সে ভারী গলায় বলল,” আরে তারিন, কেমন আছ?”
তারিন খুব কষ্টে মাথা নেড়ে বোঝালো, সে ভালো আছে। তারপর আর কারো মুখে কোনো কথা নেই। নিহা বলল,” আপনার পাওয়ার ব্যাংক সাফিন নিয়েছিল। ওর কাছে হয়তো পাবেন। আমি জানি না।”
সাফিনকে বাড়িতে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সে হয়তো বাইরে গেছে। এজন্যই ঈশান এসেছিল নিহার কাছে। কিন্তু আপাতত সেই কথা বলতে ইচ্ছে করল না। সবকিছু কেমন শূন্য স্তম্ভিত লাগছে। পৃথিবীটা যেন থেমে গেছে। সে শুধু মাথা নেড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। যত দ্রুত এখান থেকে বের হতে পারবে ততই যেন তার মঙ্গল! ঈশান বের হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তারিনের হিঁচকি উঠল। নিহা তাকে পানি ঢেলে দিল। তারিন সেই পানি খেয়ে নিজেকে ধাতস্থ করেই ঝটপট প্রশ্ন ছুঁড়ল,” উনি এইখানে কি করছে?”
” কি করবে আবার? তিশার বার্থডেতে এসেছে!”
” উনি যে আসবে এটা তো তুই আমাকে বলিসনি?”
” বললে যদি তুই না আসতি?”
তারিন অসহ্য কণ্ঠে বলল,” দিস ইজ টু মাচ নিহা! তোর বলা উচিৎ ছিল।”
” এমন করছিস কেন তুই? বি নরমাল! তোদের মধ্যে তো আর কিছু নেই। নাকি তুই এখনও ঈশান ভাইকে ভালোবাসিস যে দেখেই এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিস?”
তারিনের চেহারা রক্তবর্ণ হয়ে গেল রাগে। দাঁতে দাঁত পিষে বলল,” ফালতু কথা বলবি না।”
নিহা নিজের মুখে আঙুল চেপে ধরে বলল,” ওকে। সাইলেন্ট।”
” উনি কখন এসেছে?”
” গতকাল রাতে।”
” তাহলে আমি যখন সকালে এলাম, উনাকে দেখলাম না কেন?”
” তখন উনি ঘুমিয়েছিলেন। আর উনিও জানতেন না যে তুই এখানে আছিস। জানলে হয়তো আসতেন না।”
তারিন বড় করে শ্বাস ছেড়ে বলল,” আমার খুবই অকওয়ার্ড লাগছে।”
” সমস্যা নেই। সামনে না গেলেই হলো। আচ্ছা, একটা সত্যি কথা বলতো। তোদের ব্রেকাপটা কেন হয়েছিল?”
তারিন কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে উত্তর দিল,” তুই কিন্তু প্রমিস করেছিলি যে এই বিষয় নিয়ে আমাকে কখনও প্রশ্ন করবি না।”
নিহা মিইয়ে যাওয়া কণ্ঠে বলল,” ওকে। স্যরি।”
তারিন শান্ত হওয়ার চেষ্টা করল। কাজিন মহলে ঈশানের একটা আলাদা ভাবমূর্তি আছে। সবাই তাকে খুব ভালো জানে, শ্রদ্ধাও করে। সেই ভাবমূর্তিটা তারিন নষ্ট করতে চায়নি বলেই কখনও সে ঈশানের সেই মেসেজ, প্রতারণা, এইসব বিষয়ে কাউকে কিছু বলেনি। তারিন নিজেও বিষয়গুলো ভুলতে চায়। সে ঈশানকে কখনোই দোষ দেয় না৷ সে শুধু ধরে নিয়েছে, সবই নিয়তির পরিহাস। আর আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। নিশ্চয়ই এই সব ঘটনার পেছনে কিছু না কিছু ভালো লুকিয়ে আছে।
এদিকে ঈশান ঘর থেকে বের হওয়ার পরেই যেন শ্বাস নিতে পারল। এতোদিন পর তারিনকে হঠাৎ এইভাবে দেখে তার বুকের মধ্যে রীতিমতো ভূ-কম্পন শুরু হয়েছে। এই তীব্র আলোড়ন সামলাতে সে দেয়াল চেপে ধরল। বহুদিন পর তারিনের অবাক হয়ে তাকানো, বিস্ময়ভরা দৃষ্টি, ভেজা স্নিগ্ধ মুখ, কেমন আছ জিজ্ঞেস করার পর কোমল হাসি দিয়ে মাথা নাড়ানো, এসব এখনও চোখে লেগে আছে। ঈশান ভুলতে পারছে না। নিজেকে সামলাতেও পারছে না। তার ভয়ংকর কষ্ট হচ্ছে। যেই কষ্ট ভেতর থেকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে তাকে কয়লা বানিয়ে দিয়েছে এতোকাল, সেই কয়লাতেই যেন আবার নতুন করে আগুন জ্বলে উঠেছে।
সময় যত বাড়ছিল নিহাদের বাড়িতে মেহমানদের ভীড়ও তত বাড়ছিল। আবারও সেই এক উৎসবের আমেজ, সিলেট ভ্রমণ, আনন্দমুখর মিলনায়তন। সন্ধ্যার মধ্যে সবাই উপস্থিত হয়ে গেল। বাড়ির বাইরে মাদুর বিছিয়ে, সামিয়ানা টানিয়ে সবার গল্প-গুজবের ব্যবস্থা করা হলো। জন্মদিন তো কেবল একটি বাহানা। মূল উদ্দেশ্য হলো সবাই এক হওয়া। নিহা একদম পাকা গিন্নীর মতো রান্নাঘরে অতিথিদের জন্য রান্নাবান্না করছিল। মোহনা এসে ফিসফিস করে নিহাকে জিজ্ঞেস করল,” তারিনের সাথে কি ঈশানের দেখা হয়েছে?”
নিহা অতি আনন্দিত হাসি দিয়ে মাথা নাড়ল,” হয়েছে। আজ দুপুরে।”
” কিছু বুঝলে?”
” তারিন একটু রেগে গিয়েছিল। কিন্তু ঈশান ভাই কিছু বলেননি। আমি বুঝতে পারছি না ওদের মধ্যে এখনও কিছু আছে নাকি…”
মোহনা নিহার এক কাঁধে হাত রেখে আশ্বস্ত করে বলল,” আরে আছে, আছে। শুধু আরও কয়েকবার দেখা করাতে হবে।”
” কিন্তু ওরা তো একজন আরেকজনকে কঠিনভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে। ঈশান ভাই বাইরে এলে তারু ভেতরে চলে যাচ্ছে, ঈশান ভাই দক্ষিণে গেলে তারু ছুটে যাচ্ছে উত্তরে। এমন উল্টোদিকে যাওয়ার খেলা খেলতে থাকলে দেখা হবে কিভাবে?”
মোহনা হেসে ফেলে বলল,” এতো অধৈর্য্য হওয়ার কিছু নেই। আমার মনে হয় ওরা যদি কমপক্ষে একঘণ্টা একসঙ্গে বসে কথা বলে তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।”
নিহা চোখ বড় বড় করে বলল,” এটা কি কোনোদিন সম্ভব? দু’জনেই তো ঘাড়ত্যাড়া।”
” অবশ্যই সম্ভব। আমাদের একটা প্ল্যান বের করতে হবে।”
নিহা মেরিনেট করা মুরগির মাংস তেলে ছেড়ে দিল। তারপর খুন্তি দিয়ে নাড়তে লাগল আর ভাবতে লাগল। মোহনাও তার পাশে দাঁড়িয়ে ভাবছে। সাফিনের চাচী পেঁয়াজ কাটতে কাটতে জিজ্ঞেস করলেন,” মাংস বসাবো কিসে, মা? বড় ডেগ লাগবে না? বের করেছো?”
নিহা চিন্তিত হয়ে বলল,” দশকেজি মাংস রাঁধার মতো ডেগ তো স্টোর-রুমে আছে। বের করা অনেক ঝামেলা। উপরে উঠতে হবে। আচ্ছা দেখছি..”
মোহনা সঙ্গে সঙ্গে চুটকি বাজিয়ে বলল,” আইডিয়া পেয়ে গেছি।”
” কিসের আইডিয়া?”
” আমি তারিনকে পাতিল নামানোর কথা বলে স্টোর-রুমে নিয়ে যাবো। তুমিও ঈশানকে নিয়ে স্টোর-রুমে চলে আসো। তারপর কোনোভাবে দু’জনকে ভেতরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে লক করে দিবো।”
নিহা এই কথা শুনে শুধু হাসতেই লাগল। মোহনা বলল,” হাসলে হবে না৷ কাজটা পারতে হবে।”
” এমন করা গেলে তো দারুণ হতো। কিন্তু ঈশান ভাইকে আমি কি বলে আনব?”
” কিছু একটা বলে নিয়ে আসো। এইটা কোনো ব্যাপার হলো নাকি?”
নিহাকে চিন্তায় ফেলে রেখে মোহনা চলে গেল তারিনকে খুঁজতে। তারিন ড্রয়িংরুমে শরবত বানাচ্ছিল। আরিশা তারিনের সাথে বসে আছে। তার হাতে একটা ফলের বই। সে বিভিন্ন ফলের নাম জিজ্ঞেস করে তারিনকে বিরক্ত করছে। মোহনা বলল,” তারিন, এদিকে আসো। একটা জরুরী কাজ আছে।”
” কি কাজ আন্টি?”
” যেতে যেতে বলি।”
মোহনা তারিনের হাত ধরে স্টোর-রুমে নিয়ে এলো। অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গাটিতে একটা ভ্যাপসা গন্ধ ছড়িয়ে আছে। মোহনা বিসমিকে ডেকে তার ব্যাগ থেকে এয়ার ফ্রেশনার আনাল। তারপর পুরো ঘরে স্প্রে করে দিল। আলো জ্বালানো হলো। তারিন চারদিক দেখতে দেখতে বলল,” আমরা এইখানে কি করব?”
” সানসেটের উপর থেকে বড় পাতিল নামাতে হবে। মাংস রান্নার জন্য। তুমি উপরে উঠতে পারবে না?”
” হ্যাঁ পারব।”
পেছন থেকে বিসমি আগ বাড়িয়ে বলল,” আমি উঠবো ম্যাডাম?”
মোহনা চোখ পাকিয়ে মৃদু ধমক দিল,” তোমাকে উঠতে বলেছি আমি? যাও এখান থেকে। ”
বিসমি মাথা নিচু করে চলে গেল। মোহনা বলল,” ওঠো তারিন।”
” কিভাবে উঠব?”
” দাঁড়াও, আমি টুল দিচ্ছি।”
দু’টো উঁচু সাইজের টুল চেয়ারের উপর রেখে তারিনের উপরে ওঠার ব্যবস্থা করা হলো। তারিন যখন উপরে উঠে গেছে, তখন মোহনা চেয়ার আর টুল সরিয়ে দিল। তারিন ভয়ে চোখ বড় করে বলল,” আমি এবার নামব কিভাবে?”
” নামার দরকার নেই। তুমি ওখানেই থাকো। আমি একটু আসছি।”
” আন্টি প্লিজ, আমাকে এইভাবে রেখে যাবেন না!”
” পাঁচমিনিট।”
মোহনা বের হয়ে নিহাকে খুঁজতে লাগল। এখনও ঈশানকে নিয়ে আসছে না কেন মেয়েটা? একটু পরেই তারা এলো। ঈশান মোহনাকে দেখে ভ্রু কুচকে বলল,” কি হয়েছে মম? এনিথিং সিরিয়াস?”
নিহা বলল,” একটা কাজ করতে হবে ঈশান ভাই। কি কাজ সেটা মোহনা আন্টি বলবে।”
মোহনা ইতস্তত করে বলল,” স্টোর-রুমে একটা জরুরী কাজ আছে।”
” কি জরুরী কাজ?”
মোহনা বেশি কথা না বলে ঈশানকে জোর করে ঠেলে স্টোর-রুমে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা লক করে দিল। ঈশান হতভম্ব হয়ে বলল,” আরে, কি হচ্ছে এসব? তোমরা দরজা খোলো, প্লিজ। আমি কিছু বুঝতে পারছি না।”
উপর থেকে তারিন কথা বলল,” আরে ঈশান, আপনি এখানে কি করছেন?”
ঈশান অবাক হয়ে উপরে তাকাল। মুহূর্তেই তার কাছে পুরো বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে গেল। নিহা আর মোহনা যে ইচ্ছাকৃতই কাজটি করেছে সেটা বুঝতে পেরেই ঈশান বলল,” কিছু না, তুমি উপরে কি করছ?”
” কাজ করছি। হাড়ি-পাতিল নামানোর কাজ।”
” তাহলে ধরে নাও আমি তোমাকে হেল্প করতে এসেছি। তোমার কি কোনো হেল্প লাগবে?”
বাইরে থেকে মোহনা আর নিহা কান পেতে তাদের কথোপকথন শুনছিল আর হাসছিল। তারিন বলল,
” হ্যাঁ। হেল্প তো লাগবে। কিন্তু আপনি দরজা বন্ধ করলেন যে? দরজা খুলে দিন!”
” দরজা তো আমি বন্ধ করিনি। বাইরে থেকে বন্ধ হয়ে গেছে।”
এবার তারিনও সবকিছু বুঝতে পারল। যথেষ্ট অস্বস্তি নিয়ে বলল,” আচ্ছা, তাহলে আপনি চেয়ারগুলো দিন। আমি নিচে নামব।”
ঈশানের হঠাৎ মনে হলো, তারিন নিচে নামতে গেলেই পা পিছলে পড়ে যাওয়ার মতো একটা ঘটনা ঘটবে। তখন ঈশানকেই তারিনকে ধরতে হবে। বাইরে থেকে ফাহিমের গলা শোনা যাচ্ছে,” মোহনা আন্টি, নিহা এখানে কি করছ তোমরা?”
মোহনা পাশ কাটানো গলায় বলল,” নাথিং। তুমি যেখানে যাচ্ছিলে সেখানে যাও ফাহিম। এখানে তোমার কাজ নেই।”
তখনি ভেতর থেকে তারিন চেঁচিয়ে উঠল,” ফাহিম ভাই, একটু ভেতরে আসবেন প্লিজ? আমি নামতে পারছি না।”
ফাহিম ত্বরিত বলল,” তারিন ভেতরে আছে নাকি? দেখি, সরো।”
নিহা আর মোহনাকে উপেক্ষা করেই ফাহিম দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ল। ঈশান দাঁড়িয়ে আছে নিচে আর তারিন বসে আছে সানসেটের উপরে। এই দৃশ্য দেখে যারপরনাই বিস্মিত হলো ফাহিম। তারিন অনুরোধ করে বলল,” আমাকে নামতে সাহায্য করুন।”
ফাহিম হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,” এসো। লাফ দাও।”
ঈশান আতঙ্কগ্রস্ত কণ্ঠে নিষেধাজ্ঞা দিল,” এটা রিস্ক হয়ে যাবে। চেয়ার দিচ্ছি আমি।”
ঈশানের কথার মাঝেই তারিন লাফ দিয়ে ফেলল। ফাহিম শক্ত করে তার হাত ধরে রেখেছিল। তারিন আরেকটু হলেই পড়ে যেতে পারতো; ফাহিম তাকে খুব সাবধানে ধরে ফেলল। ঈশান ছুটে যেতে নিয়েও গেল না। কারণ ফাহিমই তারিনের জন্য যথেষ্ট। সেখানে তার যাওয়াটা নিষ্প্রয়োজন! সফলভাবে নিচে নামতে পেরে তারিন আর ফাহিম দু’জনেই হেসে উঠল। মোহনা আর নিহা তখন ভেতরে এসে দাঁড়িয়েছে। তারা সবাই একটু আপত্তি নিয়েই তাকিয়ে আছে তারিন আর ফাহিমের দিকে। ফাহিম সেটা লক্ষ্য করেই লাজুকমুখে বলল,” সবাইকে একটা গুড নিউজ দেওয়া হয়নি। আমরা চেয়েছিলাম সারপ্রাইজ রাখতে।”
নিহা আশঙ্কাজনক কণ্ঠে প্রশ্ন করল,” কি গুড নিউজ?”
ফাহিম তারিনের দিকে চেয়ে অনুমতি চাইল,” বলব?”
তারিন মাথা নিচু করে সম্মতি দিতেই ফাহিম খোশমেজাজে বলল,” উই আর এংগেজড।”
মুহূর্তেই যেন বজ্রপাত ঘটল ঘরটায়। কারো মুখে হাসি ফুটল না। কারণ প্রথমে কেউ বুঝতেই পারল না ব্যাপারটা। নিহার মনে হলো সে ভুল শুনেছে।মোহনা নিশ্চিত হতে আবার প্রশ্ন করল,” কি?”
এবার তারিন কথা বলল,” আমাদের পারিবারিকভাবে এংগেজমেন্ট হয়ে গেছে। কিন্তু কাউকে জানানো হয়নি।”
মোহনা সঙ্গে সঙ্গে তাকালো ঈশানের দিকে। ঈশান চমৎকার করে হেসে বলল,” কংগ্রাচুলেশনস, ফাহিম।”
” থ্যাঙ্কিউ ঈশান ভাইয়া।”
মোহনাও খুব কষ্টে হাসল, বলল,” কংগ্রাচুলেশনস। অনেক হ্যাপি থেকো তোমরা।”
নিহা তারিনের কাছে গিয়ে বলল,” আগে জানাবি না? গাঁধী! তাহলে এতো কষ্ট করতেই হতো না।”
তারিন হেসে বলল,” কষ্ট মানে?”
” কিছু না।”
” আচ্ছা শোন, আমি তো উপরে পাতিল খুঁজে পেলাম না। ওই সাইডে মনে হয় আছে। আবার উঠতে হবে।”
মোহনা বাঁধা দিয়ে বলল,” থাক, লাগবে না। বিসমিকে দিয়ে নামাবো। তুমি যাও।”
তারিন মাথা নেড়ে বলল,” আচ্ছা। ”
তারপর তারিন আর ফাহিম হাত ধরে বের হয়ে গেল ঘর থেকে। ঈশান নিষ্পলক তাকিয়ে রইল তাদের হাতবন্ধনের দিকে। বুকের ভেতরটা কেউ পিষে দিচ্ছিল যেন। মোহনা ঈশানের কাছে গিয়ে কাঁধে হাত রাখল। তার দৃষ্টি অশ্রুপূর্ণ হয়ে এসেছে। ঈশান সন্তর্পণে নিজের আবেগটাকে লুকিয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল,” ওহহো! এখানে কাঁদার কি আছে মম? চিল, ইটস অ্যাবস্যুলুটলি অলরাইট!”
মোহনা ভেজা-সিক্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করল,” আসলেই কি অলরাইট? তোর কষ্ট হচ্ছে না?”
” একদম না!”
মোহনা নিহার দিকে চেয়ে বলল,” তুমি কি এটা আগে জানতে না, নিহা?”
নিহা দুঃখিত কণ্ঠে বলল,” আমি সত্যিই জানতাম না। তারু তো সব কথা বলে। কিন্তু এইটা বলেনি। হয়তো আসলেই সারপ্রাইজ রাখতে চেয়েছিল।”
মোহনা বিষাক্ত একটি দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করল। ঈশান অযথাই হাসল। বলল,” ইটস টোটালি ফাইন, মম। চলো যাই।”
ঈশান মোহনাকে নিয়ে স্টোর-রুম থেকে বের হয়ে গেল। আর নিহা ছুটে গেল তারিনের কাছে।
*এখন আর বলব না শেষ কখন। হুট করেই শেষ পর্ব দিয়ে দিব।*
চলবে#তি_আমো
পর্ব ৫৩
লিখা- Sidratul Muntaz
তারিনের হাত ধরে করিডোর দিয়ে যাওয়ার সময় ফাহিম হঠাৎ বলল,” একটা বলি তারু? যদি কিছু মনে না করো!”
” কি কথা?”
” তোমার ঈশান ভাইয়ের সামনে বেশি না যাওয়াটাই ভালো। ”
তারিন তাকাতেই ফাহিম ঝটপট আরও যুক্ত করল,” আমি জাস্ট বললাম। বাকিটা তোমার ইচ্ছা।”
তারিন এবার খিলখিল করে হেসে উঠল” কেন? আপনার কি ভয় হচ্ছে? ঈশান ভাই আমাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবে?”
ফাহিম মুচকি হাসল। তারিনের চোখে চোখ রেখে বলল,” আর কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না।”
তারিন অবাক হয়ে তাকাল। ফাহিমের মসৃণ দৃষ্টি ভরে উঠেছে আত্মবিশ্বাসে। তারিন বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করল,” এতো বিশ্বাস?”
” হুম।”
কিছুক্ষণ তারা অকারণেই একে-অন্যের দিকে চেয়ে রইল। হুট করেই নিহা এসে উপস্থিত হলো,” তারু, তোর সাথে জরুরী কথা আছে। এদিকে আয়।”
ফাহিম সঙ্গে সঙ্গে তারিনের হাত ছেড়ে দিল। নিহা ফাহিমের দিকে চেয়ে আবেদনসূচক কণ্ঠে বলল,” ওকে একটু নিয়ে গেলাম ফাহিম ভাই।”
ফাহিম পাশ কাটানো গলায় বলল,” যাও। আমাকে জিজ্ঞেস করার কি আছে?”
ফাহিম সামনে হাঁটতে লাগল। সে চলে যাওয়ার পর তারিন বলল,” কোথায় যেতে হবে?”
নিহা আশেপাশে তাকিয়ে একটু দেখে নিয়ে বলল,” থাক, কোথাও যেতে হবে না। এখানে যেহেতু কেউ নেই, তাই এখানেই বলি। তুই এটা কি করলি বলতো?”
” কি করেছি?”
” ফাহিম ভাইয়ের সাথে এংগেজমেন্ট করে ফেললি? কিভাবে হলো, কখন হলো? আমি তো ভাবতেও পারছি না। তুই আর ফাহিম ভাই! ওহ মাই গড!”
তারিন হাসতে হাসতে বলল,” আর কাউকে বলিসনি তো? এনাউন্সমেন্ট আরও পরে করব।”
নিহা বিরস কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,” ঈশান ভাইয়ের কি হবে তারু? তোর কি উনার জন্য একটুও খারাপ লাগে না?”
তারিন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। নিচের দিকে চেয়ে মলিন কণ্ঠে উত্তর দিল,” লাগে। জীবনের প্রথম প্রেম বলে কথা.. খারাপ তো লাগবেই। কিন্তু আমার খারাপ লাগা দিয়ে কার কি যায়-আসে?”
নিহা তারিনের গালে হাত রেখে উদগ্রীব হয়ে বলল,” যায়-আসে তারু! নিশ্চয়ই যায়-আসে! ঈশান ভাই তোকে এখনও ভালোবাসে, তুই কি এটা জানিস?”
তারিন নির্বিকারচিত্তে বলল,” জানি।”
নিহা যেন হতবাক। চোখ বড় করে তাকাল,” জানার পরেও তুই এতো নরমাল কিভাবে আছিস? তোর কি কষ্ট হচ্ছে না?”
” কষ্ট যা পাওয়ার তা আমি অনেক আগেই পেয়ে গেছি। এখন কষ্টটাই অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।”
” মানে? বুঝিয়ে বল না! তোদের প্রবলেমটা কি? কেন সবকিছু এমন হয়ে গেল? ঈশান ভাই কষ্ট পাচ্ছে, তুইও কষ্ট পাচ্ছিস। আবার তুই ফাহিম ভাইকেও বিয়ে করছিস। এসব কি হচ্ছে?”
তারিন ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে বলল,” তুই কিছু জানিস না নিহা। তাই বুঝবিও না।”
নিহা ফ্যালফ্যাল করে তাকাল৷ তারিন চলে যেতে নিলেই সে হাত টেনে ধরল,” থাম, আগে আমাকে বুঝিয়ে বল। কি জানি না আমি? যেটা জানি না, সেটা জানা! তোদের জন্য আমি কিছু করতে চাই৷ আমার এসব ভালো লাগছে না।”
তারিন নিজের সোয়েটারের পকেটে হাত গুঁজে বলল,
” তোর আমার জন্য কিছু করতে হবে না। আমি যথেষ্ট ভালো আছি। নিজের সিদ্ধান্তে খুশি আছি।”
” কিন্তু ঈশান ভাই সুখে নেই। তুই একজনকে কষ্ট দিয়ে অন্য আরেকজনকে বিয়ে করতে পারিস না। তোর জন্য ঈশান ভাইয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যাবে এটা আমি কিভাবে মেনে নিবো? তুই এতো সেলফিশ কেন হয়ে গেলি তারু?”
তারিন আর শান্ত থাকতে পারল না। ক্ষীপ্ত গলায় প্রায় চেঁচিয়ে বলল,” আমি সেলফিশ? আমি? তোর ঈশান ভাইয়ের জীবন আমার জন্য নষ্ট হয়নি। উল্টো সে নিজেই আমার জীবনটা এলোমেলো করে দিয়ে চলে গেছিল। এই সবকিছুর জন্য সে দায়ী। আমি তো শুধু তাকে মাফ করে দিয়েছি। যদিও সে ক্ষমা ডিজার্ভ করে না।”
তারিন কথাগুলো খুব দ্রুত বলতে গিয়ে যেন হাঁপিয়ে উঠল। বড় বড় নিঃশ্বাস ছাড়তে লাগল। নিহা হতভম্বের মতো চেয়ে থেকে খুব কষ্টে ঠোঁট নেড়ে উচ্চারণ করল,” মানে? কি করেছিল ঈশান ভাই?”
তারিন ঠান্ডা কণ্ঠে বলল,” ঈশান আমার সাথে প্রতারণা করেছিল। ভাইয়ার উপর রেগে সে আমার উপর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল। আমাকে সম্পূর্ণ ভেঙে চুরমার করে দিয়ে লন্ডন চলে গেছিল। আমি তো ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাসই হারিয়ে ফেলেছিলাম রে! তারপর ফাহিম ভাইকে পেলাম। তিনি আমার জীবনে না এলে আমার জীবনটা এতো দ্রুত আবার স্বাভাবিক হতো না! এখন আমি আগের চেয়ে অনেক বেটার আছি। ইন ফ্যাক্ট, আমার তার মনে হয় আমি বেস্ট আছি। ”
নিহা অবিশ্বাসের কণ্ঠে বলল,” ঈশান ভাই প্রতারণা করেছিল? কি প্রতারণা করেছিল?”
তারিন পকেট থেকে ফোন বের করে নিহাকে ম্যাসেজটা দেখালো৷ দুই বছর ধরে মেসেজটি খুব যত্নে সংরক্ষণ করে রেখেছে সে। যখনই ঈশানের কথা মনে করে মন আবেগী হয়, তখনি এই মেসেজটি সে দেখে নেয়। সাথে সাথে সব অনুভূতি গায়েব হয়ে যায়। নিহা পুরো মেসেজ পড়ে বোকা বনে গেল। সে সত্যিই ভাবেনি ঈশান এমন কিছু করবে। তার এখন ঈশানের থেকেও বেশি তারিনের জন্য কষ্ট হচ্ছে। এই মেসেজ পড়ে সে নিজেই কেঁদে ফেলছে, তাহলে তারিনের কি অবস্থা হয়েছিল? নিহা ভারী কণ্ঠে বলল,” আমার বিশ্বাস হচ্ছে না তারু। ঈশান ভাই এটা কিভাবে করতে পারল? সে তোকে কত ভালোবাসতো!”
” শুধু ভালোবাসাই সবকিছু না নিহা৷ ভালোবাসার মূল্য দিতেও জানতে হয়।”
” ফাহিম ভাই কি এগুলো জানে?”
” সব জানে। আমি তার কাছে কিছু গোপন করিনি। যেদিন বিয়ের পাকা কথার জন্য উনি আমাদের বাসায় এসেছেন সেদিনই আমি তাকে সবকিছু বলে দিয়েছি। তিনিও তোর মতো প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেনি। তবে একটা ব্যাপার কি জানিস? যা হয়, ভালোর জন্যই হয়। ঈশান আমার সাথে এটা না করলে আমি ফাহিম ভাইকে কখনও চিনতে পারতাম না৷”
নিহা চোখের জল মুছে বলল,” ঈশান ভাই কিন্তু এখনও সত্যি কথাটা জানে না। তারিফ ভাইয়া তো মোহনা আন্টির সাথে কোনো প্রতারণা করেনি! তাহলে ঈশান ভাই কি শুধু শুধুই তোকে শাস্তি দিল না?”
তারিন চোয়াল শক্ত করে বলল,” সে জানলেও বা কি? যদি তার ভুল ভেঙে যায় তাহলে সে কি করবে? বড়জোর আমার কাছে এসে ক্ষমা চাইবে। কিন্তু তুই-ই বল, এতোকিছুর পরেও কি আমার তাকে ক্ষমা করা উচিৎ? কয়েক মুহূর্তের জন্য ধরে নিলাম যে আমার ভাই সত্যি দোষী। কিন্তু সেইজন্য সে আমাকে কেন শাস্তি দিবে? কেন আমাকে ঘৃণা করবে, বল? এটা তো কোনো লজিক হলো না। আমি কেন তাকে ক্ষমা করব? শুধু একটা কারণ দেখা! উত্তর আছে তোর কাছে? ঈশানের মতো মানুষের জন্য কি আমার ফাহিম ভাইকে হেলায় হারানো উচিৎ?তাকে তো আমি কষ্ট দিতে পারব না! আমি নিজেও ঈশানের থেকে কষ্ট পেয়েছি। তাই আমি জানি, কষ্ট পেলে কেমন লাগে! এই একই কষ্ট ফাহিম ভাইকে আমি কোনোদিন পেতে দিব না।”
” তাহলে কি তুই এখন ফাহিম ভাইকেই ভালোবাসিস?”
” ভালোবাসা এতো সহজ না। তবে আমি ফাহিম ভাইকে অসম্ভব পছন্দ করি, তিনি আমাকে ভালোবাসেন। তার এই ভালোবাসাটাকে আমি রেসপেক্ট করি। আর আমার কি মনে হয় জানিস? শুধু এই রেসপেক্ট নিয়েই ফাহিম ভাইয়ের সাথে আমি জনম জনম কাটিয়ে দিতে পারব। কিন্তু ঈশানের সঙ্গে ভালোবাসা নিয়েও এক মুহূর্ত থাকা সম্ভব নয়। সে আমার ভালোবাসার মনটাই ভেঙে দিয়েছে। আর যে জিনিস একবার ভাঙে, তা কখনও জোড়া লাগে না!”
নিহা হঠাৎ তারিনকে জড়িয়ে ধরে ফেলল। রুদ্ধ স্বরে বলল,” তুই খুব ভালো থাকিস, তারু। আমি শুধু এটাই চাই এখন।”
তারিফ মাঝখানে বসেছে। তার আশপাশ জুড়ে বন্ধুরা। নিহা আর সাফিন সবাইকে নাস্তা পরিবেশন করছে। প্রথমে তারিফের এখানে আসার পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু নিহার অনুরোধে আসতে হয়েছে। নিহা বলল,” আমার মেয়ের জন্মদিন আর আপনি আসবেন না, ভাইয়া? এইটা কোনো কথা? অবশ্যই আসতে হবে। আর একা এলে চলবে না। আপনার সব বন্ধুদেরও নিয়ে আসতে হবে।”
তারিফদের গল্প আগ্রহ নিয়ে শুনছে সবাই। ইউনিভার্সিটি জীবনের মজার মজার সব গল্প বলা হচ্ছে। মোহনাকে দেখেই তারিন হাত নেড়ে ডাকল,” মাধবীলতা আন্টি, প্লিজ এদিকে আসুন।”
হঠাৎ পুরনো নাম শুনে চমকিত দৃষ্টিতে তাকালো মোহনা। শুধু কি মোহনা? তারিফসহ তারিফের সকল বন্ধুরাও ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। তারিফের এক বন্ধু সোহেল তো বলেই উঠল,” তুমি এই মাত্র কি বললে তারিন?”
তারিন সবার অবস্থা দেখে একটু নিভে গেল। দুঃখিত কণ্ঠে বলল,” কিছু না। আন্টিকে ডাকছিলাম। উনি আমার আন্টি হয়, মোহনা আন্টি।”
সিদ্দিক বলল,” কিন্তু এর আগে তুমি মাধবীলতা বললে না?”
” কই, না তো!”
” হ্যাঁ বলেছো। আমরা শুনলাম তো।”
সবাই সিদ্দিকের কথায় সম্মত হলো। মোহনা আর তারিফ দু’জনই বিব্রত। তারিন নিজেও বিব্রতবোধ করছে। সে ভেবেছিল এতো ভীড়ের মধ্যে কেউ নামটা খেয়াল করবে না। তাই মুখ ফসকে বলে ফেলেছে। কিন্তু এখন ব্যাপারটা অন্যরকম হয়ে গেল৷ হাসি-আনন্দের গল্প ছেড়ে সবাই এখন তারিফ-মোহনার দুঃখময় প্রেমকাহিনীতে চলে গেল। বন্ধুদের মাঝে একজন এই প্রেমকাহিনীর বিষয়ে জানতো না। তার নাম জহির। সে প্রশ্ন করল,” আচ্ছা, কি ব্যাপার? এই মাধবীলতা কে?”
তারিফ ব্যাপারটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করল,” কেউ না। একটা গান ছিল না, মাধবীলতা আমি.. তুমি কানুনবালা.. ওই গানের কথাই হয়তো বলছে ওরা।”
সোহেল বলল,” একদম না। কথা ঘুরাস কেন? জহির শোন, তারিফ যে এতোবছর বিয়ে করেনি সেটা তো এই মাধবীলতা গানের জন্যই। এতো ইন্টারেস্টিং একটা গানের ইতিহাস, তুই এখনও জানিস না?”
জহির আগ্রহী হয়ে উঠল,” কি ইতিহাস? শুনি তো একটু।”
সোহেল পেছনে ঘুরে মোহনার দিকে চেয়ে বলল,” আপনিও আসুন না আপু। আপনার নামের সাথে যেহেতু মিল আছে, প্রেমকাহিনী আপনারও শোনা দরকার। ”
মোহনা বিনয়ের সঙ্গে নিষেধ করে দিল,” না। আমি এসব শুনতে চাই না।”
সে চলে যেতে নিলেই নিহা গিয়ে থামাল,”আহা, বসো না আন্টি! শুনো একটু! আমারও অনেক ইন্টারেস্টিং লাগছে। আমি শুনলে তোমাকেও শুনতে হবে।”
নিহা জোর করে মোহনাকে এনে আসরে বসালো। নীরা, রেহেনা, সামিয়ারা খুব আগ্রহ নিয়ে বসেছে। সবাই প্রেমকাহিনী শুনতে উদগ্রীব। তারিফ চোখ পাকিয়ে বন্ধুদের হুমকি দিতে লাগল। কিন্তু কেউ তার কথা পাত্তাই দিল না। সোহেল তাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেই গল্প বলতে শুরু করল,
” তারিফের সাথে আমার ফ্রেন্ডশীপ সেই কলেজ লাইফ থেকে। যখন আমরা নতুন ইউনিভার্সিটিতে উঠলাম তখন তারিফ চাকরি পেল একটা কল সেন্টারে। তার ডাকনাম কিন্তু তখন ছিল আশু। আমরাও আশু নামেই ডাকতাম। একদিন একটা মেয়ে মোবাইলের টাকা বেশি কাটার সমস্যা নিয়ে ফোন করেছিল। সেই মেয়ের কণ্ঠ এতো সুন্দর যে তারিফ প্রথম আলাপেই প্রেমে পড়ে গেল৷ সেই মেয়েটিই আমাদের মাধবীলতা…”
সোহেল গল্প বলে যাচ্ছে। সবার দৃষ্টি চকচক করছে। শুধু মোহনা আর তারিফের মুখ শুষ্ক। দু’জনই আবেগ লুকানোর যথাসাধ্য চেষ্টা চালাচ্ছে। এই গল্প শুনে পুরনো স্মৃতিগুলো আবার নতুন করে চোখের সামনে ভেসে উঠছে, উজ্জীবিত হচ্ছে। মোহনা নিতান্তই অনাগ্রহের সাথে এখানে বসেছিল। কিন্তু যখন সোহেল তারিফের বাবার মৃত্যুর কাহিনীটা বলল, তখন খুব হকচকিয়ে মোহনা তাকাল তারিফের দিকে। গল্প শুনে সবার হৃদয় ভারী হয়ে উঠছিল। সোহেল আগ্রহ নিয়ে গল্প বলে যাচ্ছিল,” কি যে কষ্টের দিন ছিল! সিলেটে আমার মামা থাকতো। আমি খবর পেয়ে দ্রুত ছুটে এসেছিলাম। তারপর তারিফকে নিয়ে মামার বাড়ি গেলাম। সেখানে সে অনেকদিন ছিল। মাধবীলতার বাবা খুব অপমান করেছিল তারিফকে। তারা ছিল বিশাল বড়লোক। তারিফ অবশ্য এটা জানতো না। জানলে হয়তো মাধবীলতার সাথে প্রেমটাই করতো না। কারণ অসম প্রেমের পরিণতি কখনও ভালো হয় না। তারিফ আর মাধবীলতার প্রেমের পরিণতিও ভালো ছিল না। মাধবীলতার বিয়ে হয়ে গেল প্রবাসী একজনের সাথে। তারিফ ঢাকায় ফিরে এলো। সে তার পরিবারের সাথেও কয়েক মাস যোগাযোগ বন্ধ রেখেছিল। তারপর বাড়ি ফিরে দেখল তার বাবা মা-রা গেছে। সংসারের অবস্থা বেগতিক। তারিফ প্রেমের আবেগ মুছে ফেলে সংসারের হাল ধরল৷ তারপর নাকি একবার মাধবীলতা এসেছিল তারিফের কাছে। কিন্তু তারিফ দেখা করেনি। মাধবীলতাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল।”
রেহেনা খুব মনখারাপ করে বলল,” আহা! ফিরিয়ে দিল কেন?”
” কারণ তার নিজের থাকারই জায়গা নেই। বাবা মরার পর সংসার নিয়ে পথে বসার মতো অবস্থা। দেউলিয়া অবস্থা। মাধবীলতাকে রাখবে কই? এজন্য বাধ্য হয়েই ফিরিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এখনও সে বিয়ে করেনি। যদিও আমাদের কাছে স্বীকার করে না। তবুও আমরা জানি মাধবীলতার জন্যই সে বিয়ে করেনি।”
তারিফ মুখ ভার করে বলল,” কচু জানিস তোরা। আচ্ছা হয়েছে, এবার চুপ। গল্প শেষ।”
” এখনও শেষ হয়নি। তুই মাধবীলতার স্মৃতি বাঁচাতে বাড়িটা কিভাবে কিনলি সেই গল্প বলব না?”
সবাই উৎসাহী কণ্ঠে একতালে বলল,” জ্বী, জ্বী, বলেন।”
সোহেল আবার বলতে শুরু করল। ঠিক এমন সময় তারিন খেয়াল করল ঈশানও এখানে আছে। সেও বিস্ময় নিয়ে গল্প শুনছে। মোহনা তড়াক করে উঠে দাঁড়ালো। আর সবাইকে উপেক্ষা করে সেখান থেকে চলে গেল। তারিন এই অবস্থা দেখে তারিফের দিকে তাকাল। তারিফও মোহনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল। তারিন ভাইয়ের কাছে গিয়ে কানে কানে বলল,” ভাইয়া, মোহনা আন্টি কাঁদছিল। তুমি কি একটু গিয়ে দেখবে?”
তারিফ চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই তারিন মাথা নিচু করে ফেলল। ভয়ে আবার নিজের জায়গায় এসে বসল। এই নিয়ে আর উচ্চবাচ্যও করল না। মিনিট পাঁচেক পরেই তারিফ সেখান থেকে উঠে গেলে তারিনের ঠোঁটে হাসি ফুটল। সে জানে, তার ভাইয়া এখন মোহনা আন্টির কাছেই যাবে! তারিনও দ্রুত উঠে যেতে চাইল। ঈশান তাকে থামিয়ে বলল,” যেও না তারিন। থাকুক ওরা একা!”
তারিন আগ্রহ দমাতে পারছে না। তীব্র কৌতুহল নিয়ে বলল,” প্লিজ, দূর থেকে দেখব। একটু! আমার খুব এক্সাইটেড লাগছে।”
ঈশান মৃদু হেসে বলল,” আচ্ছা যাও।”
তারিন খুশিতে গদগদ হয়ে ঈশানকেও ধরে বলল,” আপনিও চলুন।”
বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে বকুলফুলের গাছের নিচে মোহনা দাঁড়িয়ে আছে। তারিফকে দেখেই সে ঝটপট দুইহাতে চোখের জল মুছতে লাগল। তারিফ কিছু বলল না। কেবল দাঁড়িয়ে রইল। সে কেন এখানে এসে দাঁড়িয়েছে তা সে নিজেও জানে না। মোহনা হঠাৎ করেই প্রশ্ন করল,” আঙ্কেল কিভাবে মা-রা গেলেন?”
তারিফ প্রশমিত কণ্ঠে উত্তর দিল,” বাবার মৃত্যু শুধু একটা এক্সিডেন্ট। এজন্য তুমি নিজেকে দায়ী ভেবো না।”
ঠিক সতেরো বছর পর ‘তুমি’ ডাকটা শুনে মোহনার হৃদয় ধ্বক করে উঠল। তারিফের দিকে আঁড়চোখে চেয়ে বলল,” আমাকে একবার জানাতে পারতে! আঙ্কেলের ওই সময় মৃত্যু হয়েছিল এটা জানলে আমি তোমাকে সেদিন ভুল বুঝে চলে যেতাম না। যত কষ্টই হোক, তোমার কাছেই থেকে যেতাম।”
তারিফ মুচকি হেসে বলল,” জানি। সেজন্যই তো বলিনি। যে মেয়ে পাগলামি করে সিলেট থেকে পালিয়ে ঢাকা চলে আসতে পারে, সেই মেয়ে ভিখারীর সাথে সংসার করার মতো চূড়ান্ত পাগলামিটা করতে আর বাদ রাখবে কেন?”
মোহনাও হেসে প্রশ্ন করল,” তুমি ভিখারী ছিলে বুঝি?”
” ওই সময় আমার অবস্থা ভিখারীর থেকেও খারাপ।”
মোহনা অভিযোগ করল,” তাই বলে আমাকে এতো নিষ্ঠুরভাবে তাড়িয়ে দিবে? একবার দেখাও করতে আসোনি। আমি রেলওয়ে স্টেশন থেকে ফিরে গিয়েছিলাম। তুমি শুধু একজনকে পাঠিয়ে বলে দিলে, আমাকে আর ভালোবাসো না। কিভাবে পারলে এটা?”
” এটা না বললে তুমি যেতে না। আর দেখা করিনি ভয়ে। যদি তোমাকে দেখার পর আর যেতে দিতে ইচ্ছে না হয়? ওই সময় তোমাকে গ্রহণ করলে শুধু কষ্টই পেতে মাধবী। মা, দাদী কেউ তোমার নাম শুনতে পারতো না। কারণ তাদের মনে ধারণা জন্মে গেছিল যে তোমার জন্যই বাবা মা-রা গেছে। ”
” সত্যিই তো আমার জন্য মারা গেছে। যেদিন তুমি সিলেট এসেছিলে সেদিন যদি বাবাকে না পাঠিয়ে আমি নিজে তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসতাম তাহলে হয়তো এসব কিছুই হতো না। বাবাও তোমাকে অপমান করতো না, তোমার এক্সিডেন্টও হতো না আর আঙ্কেলও বেঁচে থাকতো।”
“উহুম। ভাগ্যে যা ছিল সেটাই হতো। এখন এসব ভেবে আফসোস করে কি লাভ বলো?”
” এতোবছর ধরে তোমাকে ভুল বুঝে এসেছি। একবারও কি আমার ভুল ভাঙাতে ইচ্ছে হয়নি তোমার?”
তারিফ মাথা নেড়ে বলল,” হয়েছিল। কিন্তু যতবার ভেবেছি তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করব ততবারই বিবেক থেকে একটা অদৃশ্য বাঁধা এসেছে। তুমি বিবাহিত ছিলে। তোমার সুন্দর সংসার নিয়ে হয়তো সুখেই ছিলে। আমি এসব বলে কেন শুধু শুধু তোমার সুখ নষ্ট করব বলো?”
মোহনা রাগে দাঁত পিষে বলল,”তোমাকে ছাড়া আমি সুখে আছি এটা তুমি ভাবলে কেমন করে? এতোগুলো বছরে এমন কোনো দিন যায়নি যেই দিন তোমার কথা আমার মনে পড়েনি। আমার সংসারটা তো কোনো সংসার ছিল না আশু! শুধু একটা সমঝোতা ছিল। ঈশানের মা হওয়ার জন্যই আমি সেই সংসারে পড়ে ছিলাম। কিন্তু বিশ্বাস করো, তোমার জায়গাটা কখনও কাউকে দিতে পারিনি।”
” আমিও কি পেরেছি? আমি তো তোমাকে ভোলার চেষ্টাও করিনি। তুমি সবসময় আমার পাশে ছিলে। শুধু তোমাকে স্পর্শ করতে পারতাম না। কিন্তু তুমি ছিলে তো.. অনুভবে, কল্পনায়, স্বপ্নে।”
মোহনা মুখে হাত চেপে কান্না সামলালো। প্রশ্ন করল আকুল হয়ে,” কেন এতো ভালোবাসলে বলোতো?”
তারিফ ছলছল দৃষ্টিতে বলল,” জানি না।”
মোহনা বাঁধনছাড়া হয়ে আছড়ে পড়ল তারিফের বুকে। শুরু করল ফুঁপিয়ে কান্না। তারিফ ব্যাকুল কণ্ঠে প্রশ্ন করল,” এখনও কেন এতো কাঁদছো তুমি?”
” এটা আমার আনন্দের কান্না।”
” মানুষ আনন্দে হাসে। তুমি কি আনন্দেও ফুঁপিয়ে কাঁদবে?”
” তুমি চোখের জল মুছে দাও, তাহলে আমি আর কখনও কাঁদবো না।”
তারিফ মোহনার মুখটা তুলে খুব যত্ন করে চোখের জল মুছে দিয়ে বলল,” এবার তাহলে হাসো!”
মোহনা হাসল। ওই হাসি দেখে তারিফও হাসল; সবচেয়ে সুখের হাসি। দূর থেকে তাদের বিস্ময় নিয়ে দেখছিল ঈশান আর তারিন। অচিরেই ঈশানের মুখ ফুটে বের হলো,” ভালোবাসা ভয়ংকর সুন্দর, তাই না?”
তারিন বিবশ কণ্ঠে বলল,” দীর্ঘ অপেক্ষার পর হঠাৎ পেয়ে যাওয়া অতি প্রতীক্ষিত ভালোবাসা আরও বেশি সুন্দর হয়!”
এবার ঈশান তাকাল তারিনের দিকে। তারিন বামহাতে নিজের চোখের জল মুছল। তখন অন্ধকারেও ঝলমল করে উঠল তারিনের অনামিকা আঙুলের ছোট্ট হীরের আংটিটা। যা দেখে ঈশানের অনুভূতিরা টুকরো হয়ে ভেঙে পড়ল অনায়াসে। সুন্দর মুহূর্তটা যেন হঠাৎই ভরে উঠল বিষাক্ত বাতাসে। শ্বাস নিতে আবারও কষ্ট হচ্ছে ঈশানের। বুক ভার হয়ে আসছে। তারিন বলল,” চলুন। আমরা এখন চলে যাই।”
ঈশান অন্যদিকে ঘুরে বলল,” তুমি যাও।”
তারিন কিছু বলতে নিয়েও আর বলল না। সে নীরবে চলে যেতে লাগল। ঈশান পেছন ফিরে দেখল, তারিন সত্যিই চলে যাচ্ছে। কিন্তু ঈশান তো চায় তারিন থেকে যাক। শুধু এখনের জন্য নয়, সারাজীবনের জন্য থেকে যাক! তাছাড়া ঈশান যে ভুল করেছে সেজন্য তারিনের কাছে ক্ষমাও চাওয়া হয়নি। সে যদি ক্ষমা চায়, তাহলে কি তারিন তাকে মাফ করবে? ঈশান ডাকল,” তারিন, শোনো।”
তারিন ঘুরে তাকিয়ে হাসল। ঈশান এক নিশ্বাসে বলে ফেলল,” আই এম স্যরি। প্লিজ কাম ব্যাক!”
চলবে