তুই আমার সুরঞ্জনা পর্ব ১৮+১৯

#তুই_আমার_সুরঞ্জনা
Part–18 (বোনাস)
#Arishan_Nur

রাফসার, ফায়ার সার্ভিসের বেস্ট অফিসার কে পাঠানো হয়েছে। সে যথেষ্ট প্রটেকশন নিয়ে তড়িঘড়ি করে দাউদাউ আগুনের মাঝে ঢুকে পড়ল। যদিও বা আগুনের সাথে খেলা করা রাফসারের মতো ফায়ার সার্ভিসের প্রতিটা অফসারের জন্য খুবই সাধারণ ব্যাপার। এ যেন প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার মতো স্বাভাবিক হয়ে গেছে রাফসারের কাছে। আপাতদৃষ্টিতে তার কাছে সাধারণ ব্যাপার হলেও বাস্তবটা কিন্তু অনেক জটিল। এই আগুনে সে কাউকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজে না ও ফিরে আসতে পারে। এতোটা রিস্ক দিয়েও ফায়ার ফাইয়াররা মানুষ কে বাচায়। রাফসার অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র হাতে নিয়ে জ্বলন্ত বিল্ডিংয়ের দিকে আগালো। যত দ্রুত সম্ভব তাকে পাচ তলায় পৌছাতে হবে। কেউ একজন তার অপেক্ষা করছে।

এক মূহুর্তর জন্য ও পিছপা হয়না রাফসার। তার কাজ ই আগুন নেভানো।

বিল্ডিংটার ভেতরে ঢুকতেই রাফসার তীব্র উত্তাপ অনুভব করল। এই বিল্ডিংটাকে এখন জাহান্নামের মতো লাগছে রাফসারের কাছে। সে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র তথা সিলিন্ডার থেকে তরল কার্বন ডাই অক্সাইড স্প্রে করে আগুন নিভিয়ে নিজের পথ বের করে নিতে লাগল।

পনের মিনিটের ব্যবধানে সে পাঁচতলায় উঠে পড়ে। তার জায়গায় অন্য কেউ হলে আরো কিছু টা সময় লাগাত কিন্তু রাফসার বেস্ট ফায়ার ফাইটার আওয়ার্ড পেয়েছে এইবার। এ থেকে বোঝা যায় সে বেশ দক্ষ! তাই সময় ও তুলনামূলক কম নিয়েছে।

পাঁচ তলায় উঠে সে জায়গায় মতো পৌছে গেল। তারপর আবারো স্প্রে ছিটিয়ে নিল। এদিকটায় আগুনের প্রকট অনেক বেশি।

রাফসার দোয়া-দরুদ পড়তে পড়তে ভেতরে ঢুকে পড়ে তাকে ইনফরমেশন দেওয়া হয়েছে যে লোকটা বাথরুমে আটকা পড়েছে। এখন বাথরুম খুজে পেলেই হলো।

রাফসার আগাতে লাগে। চারপাশে আগুনের লাল আভা। দাউদাউ আগুনের সাথে ছাই হয়ে যাওয়া এক কালের স্বপ্ন! যেকোন স্বাভাবিক মানুষ এই সিন দেখলে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যাবে।

রাফসার বাথরুম খুজে পেল। বাথরুমের দরজার এক পাশ পুড়ে গেছে। সে যথাসম্ভব আগুন নিভিয়ে সামনে পা বাড়াতেই থমকে গেল।

একটা লোককে বাথরুমের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেছে সে। আশেপাশে পানি আর পানি তাই আগুন খুব একটা নেই। দরজার এক পাশ যেহুতু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে তাই গেট ভাঙ্গতে হয় নি আর।

রাফসার দেখল কেবল ঝর্ণা থেকেই পানি পড়ছে না। সব কল থেকেই পানি আশেপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাচ্ছে। কলের পানি নরমালি কল থেকে পড়লে নিচে পড়ে যায়। কিন্তু লোকটা কৌশলে মগ, বদনা, শ্যাম্পুর বোতল বালতি এমন ভাবে রেখেছে যেন পানি কল থেকে পড়ে এসবের সাথে ধাক্কা খেয়ে দিক পরিবর্তন করে চারপাশে ছড়িয়ে যাচ্ছে।

রাফসার তাও স্প্রে মারল এবং মনে মনে লোকটার বুদ্ধির প্রশংসা করল।

সে নিচে থাকাকালীন দেখেছে একটা মেয়ে পাগলের মতো কান্না করছে এবং আগুন লাগা সত্ত্বেও বিল্ডিংয়ের ভেতর যেতে চাচ্ছে।

এতে কিছুটা অবাক হয় রাফসার। কারন এতো বছর যাবত সে দেখে এসেছে আগুন লাগলে মানুষ সেই জায়গা থেকে পালায় কিন্তু এই প্রথম দেখল আগুনের কাছে যেতে চায়৷

পরে জানতে পারল। মহিলার হাসবেন্ড বাথরুমে আটকে পড়েছে। তাই এরকম করছে।

মহিলাটাকে দেখে রাফসার মনে মনে ভাবে,কতো ভাগ্যবান তার স্বামী! কপাল করে এমন বউ পেয়েছে। আর এদিকে তার ভাগ্য! একটা হতাশার শ্বাস ফেলে ভেতরে প্রবেশ করে লোকটার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করল।

কিছুক্ষনের মধ্যে বরকতের জ্ঞান ফিরে। সে রাফসারকে দেখেই হালকা গলায় বলে, আমার লিনা কই? ও কি ঠিক আছে? কিছু হয় নি তো ওর?

রাফসার অবাক হয়ে গেল।এমন দুর্যোগের মাঝেও কেউ অন্য কারো কথা ভাবতে পারে? আচ্ছা এই লিনা টা কে? তাই বলে উঠে,লিনা কে?

বরকত নিস্তেস গলায় বলে উঠে, আমার বউ!

বেগুনি জামা পড়া মহিলাটা আপনার বউ?

–হু।

–ঠিক আছে উনি। কিন্তু আপনি নিজে ঠিক নেই। পানি খাবেন?

–নাহ। এইটুকু বলে বরকত অজ্ঞান হয়ে গেল।

রাফসার দেখল বরকতের হাত খানিকটা জ্বলে গেছে। সে সেখানে মলম লাগালো।

এবং তাকে ধরে উঠায়।ঠিক সেই মূহুর্তে ওয়াকিটকি তে রাফসার খবর পেল নিচে সিড়ি দিয়ে নামা যাবে না। সিড়ি সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে।

অগত্যা সে বরকতকে নিয়ে বারান্দায় গেল। নিচ থেকে তাদের লোকরা দাড়িয়ে আছে। সে তার নিজের এবং বরকতের দুই জনের কোমড়ে দুইটা রশি বেধে বারান্দার সাথে বেধে দিল।

তারপর লাফ দিল। নিচে সেভটি দেওয়া আছে। তাই বরকতের কোন সমস্যা হলোনা। কিন্তু হুট করে রাফসারের দড়ি ছিড়ে পড়ায় সে সেভটি কিটের উপর না পড়ে পয়তাল্লিশ ডিগ্রি কোন করে একটু বেকে অন্য দিকে পড়ল যার দরুন হাতে ভীষণ জোড়ে ব্যথা পেল।

অবশেষে রাফসার বরকতকে রক্ষা করবে সক্ষম হলো।

দ্রুত তাদেরকে হাসপাতালে নেওয়া হলো। লিনাও বরকতের পিছে পিছে হাসপাতালে যেতে লাগলো। তার সাথে তাদের প্রতিবেশী ও আছে।

সাধারণ জীবন-যাপনে বিপদেআপদে আত্মীয়ের চেয়ে প্রতিবেশী আগে এগিয়ে আসে।লিনা আর বরকতের ক্ষেত্রেও তাই হলো।

ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করানো হলো। সাথে আরো পেশেন্ট ও আছে। যারা অগ্নি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে।

লিনা হাসপাতালে দাড়িয়ে কান্না করতে লাগলো। তার এক প্রতিবেশী বলে উঠে, আপনার ফ্যামিলি মেমবারদেরকে ইনফর্ম করুন।

এই বিষয়টা মাত্র মাথায় আসল লিনার। কিন্তু তার কাছে ফোন নেই। নাম্বার ও মুখস্ত না। এখন কি করবে?

তাই বলে উঠে, আগে ওর ট্রিটমেন্ট শুরু হোক তারপর ডাক দিব। আমার কাছে ফোন নেই।

লিনা বাকিটা সময় প্রার্থনা করতে করতেই কাটিয়ে দিল। আল্লাহর দরবারে কোটি কোটি শুকরিয়া যে তার বরকতের কিছু হয় নি। পর্ব ১৯+শেষ
#তুই_আমার_সুরঞ্জনা
Part–19
#Arishan_Nur

সকাল সাতটার মধ্যে প্রমিতি উঠে পড়ে। যদিও বা নামাজের পর তারা আর ঘুমায় নি। গল্প করেই কাটিয়েছে। প্রমিতি ফ্রেস হয়ে বাইরে বের হলো। সে দেখল বাসার সবাই উঠে গেছে। দাদি পেপার পড়ছে। আর মা রান্নাঘরে ঢুকবে মাত্র।

শ্বাশড়িমাকে রান্নাঘরে ঢুকতে দেখে প্রমিতি তার কাছে গিয়ে বলে, মা আমি রান্না করব আজকে।

বেগম বলে উঠে, আরে না। তুমি কেন রান্না করবে? শায়লা আছে। ও করবে। তুমি গিয়ে আরো একটু ঘুমাও।

প্রমিতি মাথা নিচু করে বলে, আমাদের বাসায় বিয়ের পরে নতুন বউ সবার জন্য রান্না করে।

–ও তাই নাকি!তাহলে আমাদের জন্য রান্না করো। খেয়ে দেখি আমার ছেলের বউয়ের হাতের রান্না! (এক গাল হেসে)

প্রমিতি খুশিমনে রান্নাঘরে ঢুকে সবার জন্য রান্না করে।

কিছুক্ষন পর নিরব সহ সবাই খেতে বসে।

পরেটা আর পায়েস রান্না করেছে প্রমিতি।

নিরব প্রমিতির হাতের পায়েস খেয়ে তো পুরাই অবাক। এতো মজার রান্না রাধতে পারে প্রমিতি? এমনি নিরবের পায়েস খুব পছন্দ। তার উপর প্রমিতি রান্না করেছে সেই সাথে আবার অনেক মজা হয়েছে। নিরব তো একাই দুই বাটি পায়েস খেয়ে নিল।

বেগম খেয়ে বলে, বাহ। অনেক মজা হয়েছে তো।

দাদি খাওয়ার পর বলে, আমি নিজেই তো এতো মজার রান্না করতে পারি না। আমার নাত বউ তো অনেক গুনী তাহলে।

প্রমিতি মুচকি হাসল ।

★★★
বরকতকে জেনারেল ওয়ার্ডেই রাখা হয়েছে।
বরকতের পাশের বেডে রাখা হয়েছে রাফসার কে। যেহুতু তারা একই সাথে এসেছে তাই বেডের সিরিয়াল নাম্বারও পাশাপাশি। রাফসার চোট পাওয়ায় অজ্ঞান হয়েছে গেছে। বরকত ও আগে থেকেই অজ্ঞান ছিল।

প্রায় সকাল আটটার দিকে বরকতের জ্ঞান ফিরে। কিন্তু রাফসার তখনো অজ্ঞান অবস্থায় শুয়ে আছে বেডে।

লিনা বরকতের পাশে বসে কান্না করেই যাচ্ছে। এমনটা না হলেও পারত! কেন বরকতের সাথেই এমন হলো? তবুও লিনা আল্লাহর কাছে ঋনী যে বরকত জীবিত আছে সেই সাথে সুস্থ ও
আর কিছু চাই না তার।

বরকত চোখ খুলতেই তার পাশে লিনাকে দেখতে পেল। লিনার চোখ-মুখ লাল হয়ে আছে। চোখের ডগায় পানি চিকচিক করছে।

বরকত কিঞ্চিৎ অচেতন অবস্থায় ই হাত বাড়িয়ে লিনার চোখের জল মুছে দিল।

লিনা মাথা নিচু করে একাধারে কাদছিল। হুট করে কারো স্পর্শ পাওয়ায় সে চমকে উঠে সামনে তাকাতেই দেখল বরকত চোখ খুলে আছে। বরকত কে চোখ খুলা অবস্থায় দেখে লিনার জানে প্রান আসল। সে কান্না করতে করতেই বলল, বরকত! তুমি ঠিক আছো?

বরকত হালকা হেসে বলে, হু। তুমি কেমন আছো? কোথাও ব্যথা পেয়েছো? চোখ-মুখ লাল হয়ে আছে কেন?

লিনা অবাকের শেষ সীমায় পৌছে গেল। বরকত নিজেই ঠিক ভাবে কথা বলতে পারছে না অথচ তাকে নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। আচ্ছা, বরকত তাকে এতো ভালোবাসে? কই আগে তো উপলব্ধি করতে পারেনি সে?

লিনা আবার কেদে দিল হুহু করে। তা দেখে বরকত বিচলিত হয়ে উঠে বসতে চাইলে লিনাকে হন্তদন্ত হয়ে থামিয়ে দেয়।

বরকত নিস্তেস গলায় বলে, প্লিজ লিনা, তুমি কেদো না। তোমাকে কাদতে দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়।

একথা শোনামাত্র লিনার বুকটা দুমড়েমুচড়ে যেতে লাগলো। সে নিজেকে কিছুতেই কন্ট্রোল করতে পারছে না। বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসছে। বরকত তাকে এতো ভালোবাসে অথচ সে বিনিময়ে কি দিয়েছে? কেবল অবহেলা? আর তো কিছু ই দেয়নি!

বরকত লিনার হাতটা ধরে বলে, কান্না থামাও লিনা। তোমাকে কাদতে দেখলে আমার কষ্ট হয়। আর আমি ঠিক আছি তো। এইটুকু বলে বরকত থেমে গিয়ে বলে, নাকি আমার চেহারা পুড়ে গেছে?

বরকতের কথা শুনে লিনা আবারো কেদে দিল।

বরকত বলল, কি হলো? বল? সত্যি পুড়ে গেছে আমার চেহারা?

লিনা কিছু বলতে পারছে না। শুধু কেদেই চলেছে।

বরকত তার মুখে হাত দিল। সত্যি বাম গাল ব্যান্ডেজ করা। বরকত চোখ বুজে ফেলে। তার চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। তার যা বোঝার বুঝে গেছে৷ এতোক্ষন পর তার অনুভূতি ফিরে এসেছে। সে বাম গালে প্রচন্ড জ্বালা-পোড়া অনুভব করছে। সেই সাথে ডান হাতেও! এই দুই জায়গা নিশ্চয়ই পুড়ে গেছে৷ চামড়া ঘসে গেছে কি? দগদগে দাগগুলো কি আজীবন বয়ে নিয়ে বেড়াবে সে?

বরকত বলে উঠে, লিনা, ডাক্তার কি বলেছে? আমার চেহারার পোড়া সাইড আর কোন দিন ঠিক হবে না?

লিনা কান্না করতে লাগলো কিছু বললনা।

বরকত চুপ মেরে গেল। হুট করে বলে উঠে, চেহারা দিয়ে আর কি আসে-যায় বল? আর আমি তো এমনি সুন্দর না দেখতে!

লিনা আবারো কাদতে থাকে। আর বলে উঠে, ডাক্তার বলেছে ছয় মাস থেকে পোড়া জায়গায় মেডিসিন লাগাতে। এখন লাগানো যাবে না। আর কে বলেছে যে তোমার চেহারা পড়ে গেছে? সবসময় বেশি বুঝো।

–তুমি কাদছিল তো তাই মনে কু ডেকে উঠল৷

লিনা বরকত কে জড়িয়ে ধরে বলে, সব ঠিক আছে। হালকা পুড়ে গেছে জাস্ট। প্রোপার ট্রিটমেন্ট হলেও সেরে উঠবে।

বরকত লিনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে, ভালোবাসি তোমাকে লিনা! প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না!

লিনা আবারো কেদে দিল এবং বলল, না। কোথাও যাব না আমি।

–কেন?

লিনা গড়গড় করে বলে দিল,আমিও তোমাকে ভালোবাসি!

বরকত যেন নিজেত কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না।এই দিনটার প্রতিক্ষায় সে কতো দিন যে গুনেছে তার নেই হিসাব। আজকে তার মানত পূর্ণ হলো। অবশেষে সে লিনার মন জয় করতে পারল।

কিছুক্ষন সেভাবেই থাকার পর লিনা বলল, তুমি কিছু খাবে?

বরকত বলে, পানি খেলে পারলে ভালো হয়৷

লিনা দ্রুত পানি এনে দিল বরকত কে। বরকত পানিটা খেয়ে দিল৷

ওমনি দেখল, একটা এপ্রোন পড়া মেয়ে বিদ্যুৎ গতিতে ওয়ার্ডে ঢুকে পাগলের মতো কাউকে খুজছে।

বরকত বিষ্মিত হয়ে মেয়েটার দিকে তাকালো। সে ভাবতে লাগলো, মেয়েটার কি হয়েছে? এমন কেন করছে? তাও আবার ডাক্তার মেয়ে।

মেয়েটা ওয়ার্ডে ঢুকে একদম ঐ মাথায় চলে গেল। যার জন্য বরকত তাকে আর দেখতে পেলনা।

সে লিনার হাত ধরে বলে, বাসার কেউ কি কিছু জানে না?

–না।

–জানাও।

–আমার কাছে ফোন নাই।কারো নাম্বার মুখস্ত ও নাই।

–এক কাজ কর,নিরবের ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ দাও। ও সিন করবে।

এই বুদ্ধি লিনার মাথায় আগে আসে নি। বরকত বলায় সে দ্রুত বাইরে গেল। তাদের পাশের বাসার আংকেলের কাছ থেকে ফোন নিয়ে নিরবকে জানাবে।

লিনা যেতেই ওই এপ্রোন পড়া মেয়েটা বরকত আর রাফসারের বেডের মাঝখানে এসে থামলো।

মেয়েটা একবার বরকত কে দেখে নিল তারপর রাফসারের দিকে তাকিয়ে কান্না জুড়ে দিল।

এতে বরকত ভড়কে গেল এবং মেয়েটার উদ্দেশ্য করে বলে, ডাক্তার আপা , কিছু হয়েছে আপনার? আর ইউ ওকে?

মেয়েটা কান্না করতে করতে বলে, ও,,ওর কি হয়েছে?

–সর‍্যি বুঝলাম না। কার কি হবে?

মেয়েটা বরকতের পাশের বেডে অজ্ঞান হয়ে শুয়ে থাকা রাফসারকে দেখিয়ে দেয় এবং কান্না মাখা সুরে বলে, ওর কি হয়েছে?

বরকত রাফসারের দিকে তাকায়। তার আবছা আবছা মনে পড়ে যায়,এই ছেলেটাই তাকে আগুন থেকে বাচিয়েছিল। এই ছেলের কাছ থেকেই সে শুনেছিল লিনা ঠিক আছে। কিন্তু একটা অপরিচিত ছেলের জন্য এই হাসপাতালের ডাক্তার কেন কাদবে?

বরকত বলে উঠে, উনি ফায়ার সার্ভিসের অফিসার৷

মেয়েটা বলে, জানি আমি। কিন্তু কি হয়েছে?

–আমাকে বাচাতে গিয়ে নিজেই আহত হয়েছে।

মেয়েটা বরকতের দিকে তাকালো। বরকত বলল, আমাদের বিল্ডিং এ আগুন লেগে গিয়েছিল। আর আমি বাথরুমে আটকে পড়ে ছিলাম। উনি নিজের জীবনের বাজি নিয়ে আমাকে বাচিয়েছে।

মেয়েটা কিছু না বলে, রাফসারের কাছে গিয়ে রাফসারকে চেক করে বলে, ওর তো হাতের জয়েন্টে লেগেছে।

–তাই নাকি?

–হু। রেডিয়াস নড়ে গেছে৷ প্লাস্টার করে রাখতে হবে পনের-বিশ দিন।

–ওহ।

তারপর মেয়েটা একটা চেয়ার টেনে রাফসারের পাশে পড়ে।

বরকত বলে, আপনি কি এখানকার ডাক্তার?

–হ্যা। আমি এখানকার ই স্টুডেন্ট ছিলাম। তিনআস আগে ডাক্তার হিসেবে জয়েন করেছি।

–এটা কোন হাসপাতাল?

–ঢাকা মেডিকেল।

বরকত বলে, সরকারী হাসপাতাল তো।

–হু।

–তুমি তো অনেক ব্রিলিয়ান্ট একটা মেয়ে।

মেয়েটা মৃদ্যু হেসে চোখের পানি মুছে ফেলে। এই মেধাবি হওয়াটাই কাল হয়ে গেছে তার জন্য ।

ইতিমধ্যে লিনা চলে এলো। লিনা এসেই বলল,নিরব সবাইকে নিয়ে আসছে।

–আচ্ছা। ঠিক আছে। তুমি বসো তো লিনা। এতো চিন্তা করতে হবে না।বসো আমার পাশে।

লিনা চুপচাপ বরকতের পাশে বসে পড়ে।

কিছুক্ষন পর মেয়েটা উঠে চলে যায়। যা বরকতের চোখ এড়ায় না।

তার ই পাচ মিনিট পর রাফসারের জ্ঞান ফিরে। সে চোখ খুলেই সিলিং ফ্যান ঘুরতে দেখে মনে মনে খুশি হয়।

রাফসার কিছুক্ষন সেইভাবে থেকে ঘাড় ঘুরালো এবং বরকতকে দেখে বলে উঠে, আপনি এখন কেমন আছেন?

বরকত ততোক্ষনে উঠে বসেছে। বেডে হেলান দিয়ে বসে ছিল। রাফসারের কথায় তার দিকে তাকিয়ে বলে, আল্লাহর রহমতে সুস্থ আছি। আপনি?

–ভালো ই আছি। জানেন আপনি অনেক লাকী। আপনার ওয়াইফ আপনাকে অনেক ভালোবাসে।

একথা শুনে বরকত লিনার দিকে তাকালো। লিনা তার দিকেই চেয়ে আছে।

রাফসার বলে, সবাই যেন আপনার মতো একটা ভালোবাসার মানুষ পায়!

এটা শুনে বরকত বলে উঠে, আপনার জন্য একটা ডাক্তারনী কান্না করছিল।

বরকতের কথা শুনে রাফসার বলে উঠে, আমার জন্য?

–হুম। আপনার জন্য ই কান্না করছিল।

রাফসার বলে উঠে, অসম্ভব। আমার জন্য কেন কোন ডাক্তার কাদবে। এরপরে এক দন্ড ভেবে বলে, এটা কি ঢাকা মেডিকেল?

–হ্যা। উনি ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তার। এই মেডিকেলেই পড়েছে।

রাফসার থমকে গেল। সে যার কথা ভাবছে সত্যি কি বরকত সাহেব তার কথা বলছে?

নিরবরা বরকতের কাছে চলে আসে। তেমন সিরিয়াস না জন্য বরকত কে রিলিজ দিল।

নিরব আর বরকত এক গাড়িতে করে রওনা দিল।

গাড়িতে বরকত প্রায় সব কিছু ই নিরবের সাথে শেয়ার করল।

ধানমন্ডির সামনে গাড়ি জ্যামে আটক পড়ল। নিরব গাড়ি থামিয়ে বলে, তোর জন্য খুব চিন্তা হচ্ছিল রে৷

–আরে, বাদ দে তো। আমি খুব খুশি। কারব ফাইলানি লিনা আমাকে ভালোবাসতে পেরেছে৷

এমন সময় নিরবের চোখ গেল একটা কিশোরী মেয়ের দিকে। মেয়েটা কান্না করছে।

সে বরকতকে বলে, মেয়েটা কাদছে কেন?

–কি জানি? চল নেমে দেখি।

–না। না। তুই নামবি না৷

–ধুর। আমার কিছু হয় নি। নাম।

বলে দুইজন ই নেমে গেল।

তারা দেখল মেয়েটাকে দুইটা বখাটে টিজ করছে।

তা দেখে ছেলে দুই টার কাছে নিরব আর বরকত গেল।

নিরব বলল, এসব কি হচ্ছে?

ওদের মধ্যে একটা ছেলে বলে, কিছু ই হচ্ছে না।

নিরব ধমক দিয়ে বলে, তোরা মেয়েটাকে ইভটিজিং করছিলি না?

–কে রে তুই কে? এলাকার নেতা তুই? যা এখান থেকে। ভাগ এখান থেকে।

একথা শুনে বরকত চেতে গিয়ে বলে, তোরা জানিস ও কে? ও হলো নিরব চৌধুরি । ওর গুলশানে ছয়তলা বিল্ডিং আছে। প্রত্যক ফ্লাটে চারটা করে বেডরুম। ভাড়া কতো জানিস? পঞ্চাশ হাজার করে। গুলশানে যাওয়ার সাহস আছে তোদের? আমার ভাইয়ের সেখানে ছয়তলা বিল্ডিং। প্রত্যেক ইউনিটে দুই দুই টা করে ফ্লাট।

নিরব বরকতের দিকে তাকালো এবং বলল, রিল্যাক্স ভাই। পুলিশ কল কর।

Last part (First)

#Arishan_Nur

নিরব ধানমণ্ডি সাতাশ নাম্বার রোড থেকে পুলিশ স্টেশনে কল করল।

পুলিশকে কল করতে দেখে ছেলে দুইটা পালাতে চাইলে নিরব একটার কলার ধরে ফেলে আর বরকত আরেকটা ছেলের হাত ধরে ফেলে।

ছেলে দুই টা মিনতি করে বলে, আমাদের যাইতে দেন। ভুল হয়ে গেছে৷

নিরব ঝাড়ি মেরে বলে, চুপ কর!

–যাইতেন দেন স্যার, ভুল হয়ে গেছে। এইবারের মতো মাফ করেন। আর করব না৷

কিন্তু নিরব বা বরকত কেউই তাদের কথায় পাত্তা দিলনা। মিনিট পনের পর পুলিশ আসলে নিরব তার পরিচয় দিল এবং ছেলে দুইটাকে পুলিশের হাতে তুলে দিল।

একজন পুলিশ অফিসার বলে উঠে, খুব ভালো করেছেন আমাদেরকে কল করে। আজ-কাল এমন হ্যারেসমেন্ট বেড়ে গেছে৷ আপনাদের মতো সবাই সোচ্চার হলে আমাদের অপরাধীদের খুজতে বা ধরতে সুবিধা হবে৷

নিরব মুচকি হেসে বলে, জি। অবশ্যই সবসময় আপনাদের সাহায্য করার চেষ্টা করব৷

পুলিশ অফিসার ওই দুইটা ছেলেকে ধরে জিপে বসিয়ে থানায় নিয়ে গেল।

বরকত আর নিরব মেয়েটার কাছে গিয়ে বলে, একা বাসায় যেতে পারবে নাকি রেখে আসব আমরা?

মেয়েটা বলল, আমার বাসা পাশেই৷ আমি যেতে পারব। আর আপনাদের ধন্যবাদ আমাকে সেইভ করার জন্য।

এবারে বরকত বলল,শোন কখনো এমন কোন বিপদে পড়লে মাথা ঠান্ডা রাখবে। কখনোই চুপ থেকে অন্যায়কে প্রশ্রয় দিবে না আর কান্না করে নিজেকে দুর্বল বানাবে না। কান্না করে বা চুপ থাকলে এই শ্রেণির লোকদের সাহস বেড়ে যায়। কিন্তু ওদেরকে জয়ী হতে দেওয়া যাবে না। গট ইট?

মেয়েটা মাথা নেড়ে বলে, হু।

নিরব বলল, শুধু হু বললেই হবে না। আশেপাশে এমন ঘটনা দেখলে চুপ থাকবে না। বরং প্রতিবাদী হবে। আওয়াজ করবে। মনে রাখবে আওয়াজ করলেই প্রতিধ্বনি হবে। এর আগে না। তাই চুপ থাকা সমাধান না৷ এবার সাবধানে বাসায় যাও৷

মেয়েটা আবারো একবার ধন্যবাদ জানিয়ে চলে গেল।

বরকত নিরবের দিকে তাকিয়ে বলে, ছোট একটা মেয়ে, তাও দেখ হ্যারেসমেন্টের শিকার হতে হচ্ছে।আর চারপাশের মানুষের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই৷

নিরব তাচ্ছিল্যের সুরে বলে, যতদিন নিজের কারো সাথে কোন অন্যায় হয় না, ততোদিন পর্যন্ত এই শহরের মানুষ সব দেখেও ঘুমায়।

কথাটা বলতে বলতে নিরব রাস্তায় থাকা একটা ইটে ঢিল মারল।

বরকত গিয়ে গাড়ি তে গিয়ে বসল৷

নিরব ও তার পিছনে পিছনে গিয়ে গাড়িতে বসে গাড়ি চালাতে শুরু করল৷

বরকত কে সীমা খালার বাসায় নিয়ে যাওয়া হলো। কারন লিনা আর বরকত যে বিল্ডিং এ থাকে সেটা এখন আর বসবাসযোগ্য নয়৷ তাই এখন বরকত তার বাবা-মায়ের সাথে থাকবে৷

বরকতকে বাসায় ড্রপ করে কিছুক্ষন তাদের সাথে থেকে নিরব রওনা হলো তার নিজের বাসার উদ্দেশ্য।

বাসায় পৌছে যেই না গাড়ি থেকে নামবে ওমনি নিরবের প্রমিতির সাথে থাকা ব্যাগের কথা মনে হলো। সে গাড়ির পেছন থেকে ব্যাগটা বের করল। কালো রংয়ের৷ মিডিয়াম সাইজের ব্যাগ।

নিরব সেটা হাতে নিল। কিন্তু বাসার ভেতর ঢুকল না। ব্যাগটা হাতে নিয়ে ছাদে গেল। এখনা থেকে যদি প্রমিতির পরিচয় পায়। এর আগে একজন বিশেষজ্ঞর সাথে কথা বলে প্রমিতির চিকিৎসা শুরু করতে হবে৷

★★★

রাফসার বিকেল পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলেই থাকল। তার কোন ফ্যামিলি নেই। এতো বড় শহরে যেখানে প্রায় দুই কোটি মানুষের বসবাস সেখানে সেই বুঝি একমাত্র প্রানী যার কোন আপনজন নেই৷ বড্ড আপনজনহীনতায় ভুগছে সে৷ নাহ, একটু ভুল বলল, ছিল একজন কেউ! তাকে আপন ভাবত না। বরং নিজের শরীরের একটা অংশ ভেবে বসেছিল। কিন্তু সে আর নেই। রাফসার ভেবেছিল ও চলে গেলে আর বুঝি বাঁচবে না সে। কিন্তু এ ধারনা ভুল। ঠিকই তো তিন বছর তার চেহারা না দেখে দিব্যি দিন চলে যাচ্ছে রাফসারের।

রাফসার আশেপাশে তাকালো। বরকত সাহেব কি তবে অতসীর কথা বলছিল? অতসী তো এই মেডিকেলেই পড়ে। না পড়ত৷ এখন পড়া শেষ। রাফসার খবর পেয়েছে যে অতসী এখানেই চাকরি পেয়েছে। কিন্তু যদি আসলেই মেয়েটা অতসী হয়ে থাকে তবে আর কেন দেখা দিল না সে?

রাফসার একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। সে উঠে দাড়ালো। মনস্থির করল যে একবার হলেও অতসীকে খুজে দেখবে। যদি না পায় তবে উড়াল দিবে। আর খুজে পেলেও যে কাছে গিয়ে ধরা দিবে এমনটা মোটেও না! বরং দূর থেকে একবার দেখেই সরে আসবে।

আচ্ছা, অতসী কি এখনো লিপস্টিকের উপর ভেসলিন লাগায়? চুল গুলো কি আজো ঝুটি করে ডান পাশের ঘাড়ের ছেড়ে রাখে? চশমা পড়ে? আচ্ছা ওর কি চশমার পাওয়ার বেড়েছে? ডান চোখে তো মাইনাস ছিল। এখন কি অবস্থা কে জানে?

রাফসার ধীর পায়ে ওয়ার্ডের বাইরে গেল। অনেক মানুষের ভীড়। যে যার মতো ব্যস্ত। রোগীর চেয়ে রোগীর সাথে আসা লোকেদের ভীড় বেশি। রাফসার এই হাসপাতালের রোগীদের দেখে কিছুটা জেলাস ফিল করছে। সে দেখতে পেল একটা মেয়ে অসুস্থ। তাকে তার মা আদর করে খাওয়াচ্ছে। আর মেয়েটার বাবা পাশেই বসে মেয়েকে পাখা বাতাস করছে৷

রাফসার সেদিকটায় খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে অতসীকে খুজতে বের হলো৷

ওয়ার্ড হতে কলিডোরে এসেই সে বুঝতে পারল, কতো বড় বোকার মতো কাজ করেছে। এতো বড় হাসপাতাল! এতো এতো ওয়ার্ড৷ কেবিন, রুম যার কোন হিসাব নেই। আবার কতো তলা বিল্ডিং তা জানে না রাফসার।

হতাশার একটা ছোট দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। সরকারি হাসপাতাল। রিসিভশনে জিজ্ঞাসা করে খুব একটা লাভ হবে না বুঝি!

তাও রিসিভশন গেল রাফসার। সেখান থেকে খবর পেল। ডা.অতসীর ডিউটি টাইম মাত্র শেষ হয়েছে।

রাফসার সময় দেখল, সাড়ে পাঁচটা বাজে। সে হাসপাতালের গেটের সামনে দাড়িয়ে একটা সিগারেট ধরালো।

অতসীর সাথে পরিচয়টা খুব সাদামাটা ভাবেই হয়েছিল৷

ফ্লেক্সিলোড করতে অতসী গিয়েছিল দোকানে। সেই দোকানের সামনে রাফসার দাড়িয়ে দাড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিল। রাফসার নতুন এসেছে এলাকায়।

অতসী তাকে দেখে দোকানদারকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে, আজ-কাল বখাটেদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। দোকানের সামনে মেয়েদের নাম্বার শোনার জন্য ওত পেতে দাড়িয়ে থাকে। আপনি এক কাজ করেন রবির একটা কার্ড দেন।

একথাগুলো রাফসারের কান অব্দি যায়। এতো লজ্জা লাগতে লাগে তার। লজ্জায় কান থেকে ধোয়া বের হতে লাগে তার। আর সিগারেট খাওয়ায় মন দিতে পারেনা সে। ওখানেই সিগারেটের আগুন নিভিয়ে চলে আসে।

পরে জানতে পারে রাফসার যে সাবলেটে উঠেছে সেই বাসার মালিকের একমাত্র কন্যা হলো অতসী। কিন্তু তাও কিভাবে কিভাবে যেন তাদের মধ্যে প্রেমের সূচনা ঘটে যায়। এটার জন্য অবশ্য রাফসারের চেহারা দায়ী। সে কিছুটা বাংলা চলচিত্রের নামকরা গায়ক তাহসানের মতো দেখতে। তখনকার দিনে তাহসান ছিল আইকনিক ক্যারেক্টার। তার জন্য হাজার হাজার মেয়ে পাগল। অতসীও ছিল তার মধ্যে একজন। অতসী প্রায়ই আক্ষেপ করে বলত, মিথিলার জায়গায় যদি আমি হতাম!

রাফসারের সিগারেটের টান দেওয়া থেমে গেল।

সে তার চোখের সামনে অতসীকে দেখতে পেল। সিড়ি থেকে নামছে। হাতে এপ্রোন। চোখে চশমা পড়া। কিন্তু আজকে চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া। আগে তো চুল ছেড়ে দিত না। ইদানিং দেয় নাকি ছেড়ে? নাকি আজকেই দিয়েছে।

রাফসার আস্তে করে সরে এল। যেন তাকে অতসী দেখতে না পায়।

ঢাকা মেডিকেলের গেটের সামনেও রোগী বসা থাকে। মানুষের গিজগিজ গেটের সামনেও। তবুও একটা পিলারের পেছনে দাঁড়িয়ে গেল রাফসার৷

মাথাটা হালকা ঝুকিয়ে অতসীকে দেখতে লাগল। কাউকে ফোন লাগাচ্ছে অতসী।

রাফসার তাকিয়ে আছে অতসীর দিকে। খুব করে গিয়ে অতসীর সামনে ধরা খেতে চাচ্ছে সে। কিন্তু পারছে না৷ পা দুটি যেন আসড় হয়ে গেছে৷

গাড়ি চলে আসল। অতসী গাড়িতে ঢুকে পড়ে। রাফসার তাকে ডাকতে গিয়ে ও ডাকল না।

থ মেরে দাঁড়িয়ে রইল সেখানেই।

অতসী আর তার প্রেম ভালোই চলছিল। কিন্তু বিপত্তি ঘটে যখন অতসীর বাবা এটা জানতে পারে৷ অতসীর বাবা কিছু তেই রাফসার আর অতসীর সম্পর্ক মেনে নিবে না৷ এরই মধ্যে অতসী ঢাকা মেডিকেলে চান্স পেল৷

এই কারনে অতসীর বাবা আরো উঠেপড়ে গেলে যায়, রাফসারের পেছনে। তার ঢাকা মেডিকেল পড়ুয়া মেয়ে কেন একটা সামান্য ফায়ার ব্রিগেডে জব করা ছেলের সাথে প্রেম করবে!

উনি অতসীকে অনেক বুঝিয়েছিল কিন্তু সম্ভবত অতসী বুঝতে নারাজ ছিল। তাই তো রাফসারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেয় যে রাফসার আরও দুইটা মেয়ের সাথে প্রেম করে৷ ব্যাস, অতসী তাকে এবার ভুল বুঝল। ভাবল রাফসার তাকে ঠকাচ্ছে। কিন্তু এর পেছনের ষড়যন্ত্র টা আর দেখল না।

অতসীর বাবাও তাকে তাদের বাসা থেকে বের করে দেয়। উনি রাফসারের কাছ থেকে ওয়াদা করিয়েছিলেন যার দরুন রাফসার আজকে আর অতসীর এতো কাছে থেকেও সামনে গেল না।

জীবনে মাত্র দুইবার শপথ নিয়েছে সে। প্রথম শপথ ছিলঃ নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে হলেও বিপদে পড়া মানুষ কে বাচাবে আর দ্বিতীয় শপথ হলোঃ অতসীর সামনে আর কোন দিন আসবে না।

দুইটি ওয়াদাই সে রেখেছে আর ভবিষ্যতে রাখবে।

রাফসার সিগারেটে টান মারল এবং ধোয়ার দিকে তাকিয়ে রইল আর মনে মনে বল,চেহারা তাহসানের মতো দেখতে হলেও ভাগ্যটাও কিছুটা একই রকম! দুজনই প্রিয়তমা হারিয়েছি!!!

রাফসার মনে মনে বলতে লাগে,

প্রতিটা দিনই তোমায় দেখার ইচ্ছেটাকে পুড়িয়ে মারি।
প্রতিটা দিন তোমার প্রতি ভালোবাসাগুলোকে বহুদূর পাঠানোর প্রয়াস করি।
আচ্ছা ভালোবাসা কি কেবল কি প্রতরক?

উত্তর জানা নেই তার।

★★★

নিরব প্রায় আধ ঘন্টা ধরে প্রমিতির জিনিস-পত্র গুলো দেখল। সে যা বুঝলো তা হলো প্রমিতির বাবা তাকে খুব খুব ভালোবাসে!

আর প্রমিতির মা নেই এটা বুঝতে পেরেছে নিরব৷

প্রমিতির বাবা কি তার মেয়েকে খুজছেন না? খুজতে পারে।

নিরব ফোন লাগালো তার এক পরিচিত নিউরোলজিস্টকে। উনাকে প্রমিতির ব্যাপারে সব বললেন৷

উনি কিছুক্ষন চুপ থেকে বলতে লাগলেন, এমন হতে পারে। সম্ভাবনা আছে। কিন্তু খুব রেয়ার!

নিরব বলে উঠে, তাহলে ও ভাষা কিভাবে বুঝতে পারল? আর খাবারের স্বাদ এসব কিভাবে বুঝে ফেলে?

–হ্যা উত্তর দিচ্ছি। ব্রেইনের সব স্নায়ু একই কাজ করে না। বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন স্নায়ু দায়ী। সহজভাবে বলি?

–বলেন।

–ভাষা আর স্মৃতি এক স্তরে থাকে না। মানুষের বেইসড মেমরি লোপ পায়না কোন দিন। বেইসড মেমরি হলো জন্মের পর থেকে চার বছর অব্দি যা ঘটে। তাই ভাষা, খাবারের স্বাদ, হাটা-চলা এগুলো কোন দিন ভুলবে না কেউ। অনেকে এটাকে গ্রে ম্যাটার মেমরি বলে। আর এবার সাইন্টিফিক ভাবি বলি, মানুষ স্মৃতিশক্তি হারালে তার কগনিটিভ, মটর স্কিল, একুওয়ারড ফাংশন লস করে যা পুরোপুরি ব্রেইনের লিম্বিক সিস্টমের সাথে সম্পর্কিত। মাতৃভাষা কোন একুয়ারড নলেজ না। তাই ভুলে না। কিন্তু স্মৃতিশক্তি হারালে মানুষ সব ভুলে যায় এটা সঠিক না। তবে কিছু সিরিয়াস রেয়ার কেসে ঘটতে পারে। আমি এমন কোন কেস পাইনি এখনো।

–ও। আচ্ছা। ধন্যবাদ। রাখি তাহলে

–ওকে।

নিরব চিন্তায় পড়ে গেল৷ প্রমিতি কি তার সাথে ছলনা করছে? প্রমিতি কে যে সে ভালোবেসে ফেলেছে। এখন তাকে ছাড়া থাকা যে বড্ড কঠিন!

নিরব আকাশের দিকে তাকালো। আকাশ দেখলেই তার মন মূহুর্তের জন্য ভালো হয়ে যায়৷ কিছু সময়ের জন্য সব চিন্তার অবসান ঘটে।

★★★

এদিকে পুলিশ স্টেশনে ধোলাই খেল রোহান। ধানমণ্ডি ফ্রেন্ডের ম্যাসে উঠেছে সে। তার বন্ধু আরিফ নাকি বিকেল হলে মেয়েদের ইভটিজিং করে। তাই আজকে তাকেও সঙ্গে নিয়ে গেল৷ রোহান অবশ্য ইন্টারেস্টেড ছিল তাই রাজী হয়ে যায়।

যার ফলে মিলল পুলিশের লাথি। আরিফের অবস্থা ভালো না। তাই দ্রুত হাসপাতালে নিল। ধানমন্ডির আশেপাশের হাসপাতালেই নিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here