#তুই_আমার_সুরঞ্জনা
Part–2
#Arishan_Nur
প্রমিতি রান্না করা বাদ দিয়ে নিজের রুমে গিয়ে মলম খুজতে লাগে কারন গরম পানি পড়া জায়গাটা খুব জ্বলছে। সহ্য করতে না পেরে সে মলম খুজতে এসেছে।
মলম তো লাগানো হলো না বরং ব্যথা জায়গায় আরো ক্ষত, যন্ত্রণা সইতে হলো তাকে।
কারন তাকে রুমে কিছু খুজতে দেখে আমেনা জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যায় এবং তেড়ে এসে বলে, তোকে না রান্না করতে বললাম?
–আ,,,আসলে,, আমা,,,আমার হাত (ভয় পেয়ে)
উনি দেখলেন প্রমিতির হাত পুড়ে গেছে তারপর ও সেই হাতটা শক্ত করে ধরে বলে, এই সামান্য কারনে তুই এখন মলম নষ্ট করবি? তোকে নিয়ে আর পারি না! কখন যে আপদ বিদায় করব?
প্রমিতি আবারো কেদে দিল। তার হাতটা দগদগে হয়ে আছে। এরই মধ্যে কালচে আস্তরণ পড়ে গেছে৷ সে কেদে দিল ব্যথায় এবং কষ্টে, অপমানে !
—অলক্ষি, অপয়া মেয়ে কোথাকার! আবার এখান দাড়ায় দাড়ায় তামাশা করছিস? বলি নাটক-সিনেমায় কাজ কর, অনেক সুনাম কামাবি। কি একটু লাগছে, তাতেই মহারানী ঢং করা শুরু করছে! বাপের মতো অকর্ম হয়েছিস।
এইসব কটু কথা শুনে বিশেষ করে তার বাবার নামে বাজে কথাটা শুনে প্রমিতি আর থাকতে না পেরে কেদে দিল। আর বাচতে ইচ্ছা করেনা তার। এতোটই তিক্ততা চলে এসেছে তার বেচে থাকার প্রতি!
আচ্ছা আজকে তার নিজের মা বেচে থাকলে কি তাকে এভাবে কথা শুনাত? নাকি আদর করে দিয়ে হাতে মলম লাগিয়ে নিজের পাশে বসিয়ে রাখত। কে জানে?
প্রমিতি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল এবং বলে উঠে, থাক, আর কিছু বলো না বাবার নামে। আমি রান্না করতে যাচ্ছি।
বলে প্রমিতি রান্না করতে গেল। বিয়ে বাড়ি হলেও কোন মেহমান এখন আর নেই ।সবাই কেই বিদায় করা হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। তাই নরমাল রান্না-বান্নাই করা হবে। ভাত আর ছোট মাছের তরকারি। মাছ পরিষ্কার করতে হবে তাকে। কিন্তু এই ফোসকা পড়া হাতে যদি পানি পড়ে তবে আবার জ্বলবে। প্রমিতি বইয়ে পড়েছে, হাত পুড়ে গেলে ডিমের সাদা অংশ দিতে হয়। তাহলে ব্যথা কমে আসে।
তাই সে দেরি না করে ফ্রিজ থেকে একটা ডিম বের করে, ডিমের সাদা অংশ হাতে লাগালো।
ঠিক সেই সময় আমেনা আবারো চলে আসলেন তার উপর নজরদারি করতে । উনি প্রমিতির হাতে একটা ফাটা ডিম দেখে বলে, হায়! হায়! এই মেয়ে একটা ডিম নষ্ট করলো! বলি টাকা কি তোর বাপ এসে দিয়ে যাবে।
প্রমিতি কিছুটা কড়া গলায় বলে, একটা ডিম ই তো। এতো চিল্লাচিল্লি করার কি আছে?
–দেখো দেখো, মেয়ের মুখে খই ফুটছে। তোর মুখ আমি সুই-সুতা দিয়ে সেলাই করে দিব। অসভ্য মেয়ে জানি কোথাকার। আজকে তোর বিয়ে না হলে আমি তোকে সত্যি বাসা থেকে বের করে দিতাম। আমার খাবে, আমার পড়বে আবার আমাকেই কথা শুনাবে।
–এইসব কিছু আমার বাবার টাকা। আমার বাবার টাকায় কেন বাড়ি। বাবার জমানো টাকা।বাবার টাকায় আপনার চেয়ে আমার বেশি অধিকার আছে।
আমেনা বেশ খেপে গেলেন। উনি হাক ছেড়ে রোহানকে ডাকতে লাগলেন।
প্রমিতি ভয় পেয়ে গেল। যতোই সে বাহাদুর দেখাক না কেন। সে একজন নারী। কিছুটা হলেও দুর্বল। আর এই বাসার দেয়াল গুলোও তার আপন না। প্রমিতি ভয়ে ঢোক গিলল।
রোহান তার খালার কাছে এসে বলে, কি হইসে খালা?
আমেনা কড়া গলায় বলে।,এই মাইয়ার একটা ব্যবস্থা কর বাবা!
রোহান প্রমিতির দিকে মূলত তার শরীরের দিকে তাকিয়ে লোভাতুর দৃষ্টিতে বলল, আজকে রাতেই ব্যবস্থা করব। তুমি চিন্তা করো না।
–রাত হতে দেরি আছে৷ এখনি কিছু কর, বাবা। মেয়ে আমাকে ধমকায়। সাহস কতো।
রোহান শার্টের হাতা গুটিয়ে বলে, ঠিক আছে। তুমি রুমে যাও। আমি দেখছি ব্যাপারটা।
–আচ্ছা।বাবা। আমি বরং রুমে যাই বলে আমেনা রান্নাঘর থেকে চলে গেল।
এদিকে রোহান প্রমিতির দিকে তাকিয়ে বলল, তাইলে এখনি বাসরটা সেরে নিই, কি বলিস?
–খবরদার তুমি আমার কাছে আসা তো দূর, এমন চিন্তা মাথায় ও আনবে না।(কিছুটা ভয় পেয়ে)
রোহান আবারো শয়তানী হাসি হেসে প্রমিতির হাতটা অনেক জোড়ে টান দিল, এতে প্রমিতি রোহানের কিছুটা কাছে চলে আসল।
রোহান প্রমিতির দিকে তাকিয়ে বলে, আজকে তো তোকে আমি আমার করেই ছাড়ব। এতোক্ষন ভেবে ছিলাম বিয়ের পর করব কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আগেই করি ফেলি। শুধু শুরু রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করার কি মানে?
প্রমিতি রোহানকে ধাক্কা মেরে বলে, আমি তোর মতো বেহায়াকে কোনদিন ই বিয়ে করব না!
–এ্যাহ! বললেই হলো। তোকে বিয়ে করতেই হবে।
বলে আবারো প্রমিতির কাছে এসে দাড়ালো।
প্রমিতি এবারো সরে আসতে চাইলে রোহান তাকে খপ করে ধরে ফেলে।বলে, পালাস কোথায়?
–ছাড়ো আমাকে।
–হাহাহা। ছাড়ার জন্য কি ধরেছি নাকি?
প্রমিতি নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছুটাছুটি করতে করতে লাগলো। রোহানও তার সাথে আরেকদফা ধস্তাধস্তি করা শুরু করল৷
তারা দুইজন রান্নাঘরেই ছিল। প্রমিতি গরম পানির হাড়িটা ইচ্ছা করেই রোহানের পায়ে ফেলে দিল।
এতে রোহান চেচিয়ে উঠে এবং কটমট করে প্রমিতির দিকে তাকালো এবং যেই তাকে খপ করে ধরতে ধরবে,ওম্নি বেল বেজে ওঠে।
যেহেতু রোহানের পায়ে গরম পানি পড়েছে তাই রোহান হাটু গেড়ে বসে পড়ে আর প্রমিতি এই সুযোগে দৌড়ে গিয়ে গেট খুলে দিয়ে দেখে পাশের বাসার চাচি।
এই চাচি তাকে খুব আদর করে। প্রমিতি চাচিকে জড়িয়ে ধরে বলে, ভাগিস তুমি এসেছো। নাহলে যে কি হতো!
উনি প্রমিতিকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, তোদের বাসা থেকে চিল্লাচিল্লির আওয়াজ পাচ্ছিলাম তাই চলে এলাম।
–ভালো করেছো। প্লিজ আর যেও না। (কাদো কাদো হয়ে প্রমিতি)
–না। বিকেল পর্যন্ত থাকব। তোকে মেহেদী লাগিয়এ দিব৷
প্রমিতি মুখ কালো করে বলে, আমি আমার হাতে মেহেদী পড়ব না।
চাচি হেসে বলে, রোহানের নাম তোর হাতে লিখব না। আয় ভেতরে আয়।
প্রমিতি চাচিকে নিয়ে ভেতরে ঢুকল। আমেনা আবারো বের হলো। এবং পাশের বাসার ভাবিকে দেখে মুখ কালো করে বলে, কি হয়েছে, ভাবি?
–কি আবার হবে? প্রমিতি কে মেহেদী পড়াতে আসলাম। এরপর প্রমিতির দিকে তাকিয়ে বলে, আয় মা, তোর দুই হাত মেহেদী দিয়ে রাঙ্গিয়ে দিই।
প্রমিতি মৃদ্যু হেসে তার নিজের রুমে গিয়ে বসল
চাচি এসে মেহেদীর টিউব বের করতে লাগলো।
প্রমিতি আস্তে করতে বলল, কিন্তু আমি তো রোহানকে বিয়ে করব না। তাহলে ওর নামে মেহেদী পড়লে কি আমাকে ওকেই বিয়ে করতে হবে?
চাচি ভ্রু কুচকে বলে।,মেহেদী আবার কারো নামে পড়ে নাকি বোকা মেয়ে। বাঙ্গালী বউ রা মেহেদী পড়ে সাজসজ্জার জন্য। বুঝলি?আর বিয়ে কার সাথে হবে, তোর জোড়া কে হবে, এটা স্বয়ং আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না রে পাগলি। মেহেদী পড়লেই তোকে রোহানকেই বিয়ে করতে হবে এমন কোন কথা নাই।
–হুম। বুঝলাম। (মাথা নেড়ে বলে প্রমিতি)
–সব প্লান ঠিক আছে তো?
–হ্যা।
–রোহান কি তোকে নিয়ে যাবে।পার্লারে ?
–হুম।
–থাকবে ওখানে?
–হ্যা।
চাচি বলল, তাহলে পালাবি কেমনে?
–পার্লারে আমার এক ফ্রেন্ড আছে। ও ম্যানেজ করবে।
চাচি বললো, কিভাবে শুনি।
–আমার ফ্রেন্ড রোহানকে বললে পার্লারের ভেতরে ছেলেদের প্রবেশ নিষেধ। তাই রোহানকে ঢুকতে দিবে না। রোহান গেটের সামনে আমার জন্য অপেক্ষা করবে আর আমি পেছনের গেট দিয়ে পালাবো।
চাচি বলল, প্লান তো ভালোই বানিয়েছিস। কিন্তু পালাবি কোথায়?
–ঢাকায় যাব। তারপর গান ধরাবো, ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে,,,,,ওরে ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে।
চাচি হেসে দিয়ে বলে, টাকা আছে তোর কাছে?
–হুম। আছে। পাচ হাজার। তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করো না। জাস্ট মাকে সামলে রাখো।
–আচ্ছা। তুই প্লিজ এই নরক থেকে পালা রে মা।
–চিন্তা করো না চাচি। আমাকে এবার আর আটকাতে পারবে না। আমি গেলে তুমি প্রিয়র একটু খেয়াল রাখবে।
–আচ্ছা।
প্রমিতি জানালার দিকে তাকালো। তার হাতে চাচি মেহেদী পড়িয়ে দিচ্ছে। সে শুনেছে বিয়ের মেহেদী যার নামে পড়ানো হয় তার সাথেই বিয়ে হয়। এই মেহেদী তো রোহানের নামে পড়ানো হচ্ছে না।
তবে কার নামে সে রাঙ্গাচ্ছে তার হাতজোড়া?
চলবে।