পর্ব ১০+১১
#তুই_যে_শুধুই_আমার [❤You are only mine❤]
#Part_10
#Writer_Tanzin_Islam_Ishika
।
সেইদিনের পর থেকে আরুশের সাথে সায়রার আর কোন দেখা হয় না,, দেখা তহ দূরের কথা কথা পর্যন্ত হয় না,, কেন না সেইদিন এর পর ১ সপ্তাহের মাথায় সে বনানী চলে আসে,, আর সেখান থেকে ১ মাস এর মধ্যে ভিসা আর পাসপোর্ট করে বিদেশে চলে যায়,, যেহেতু ওর চাকরি হয়ে গিয়েছিল আর তাকে বিদেশে ইন্টারসিপ এর জন্য লেটার ছিল তাই সব তারাতারি হয়ে যায়,,,
দেখতে দেখতে ১ বছর কেটে যায়,, এর মধ্যেই আরুশ নিজের নাম প্রতিষ্ঠিত করে ফেলে,, সে একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি পরিচালনা করে,, কিন্তু এইসব এত সহজে হয় নি,, অনেক কঠোর পরিশ্রমের ফলে সে সব অর্জন করতে পেরেছে,,
প্রথমে সে যে টাকা ইনকাম করতো তা দিয়ে কিছু এনজিও তে শেয়ার কিনে নেয়,, সঠিক জায়গায় টাকা ইনভেস্ট করাতে অল্প সময়তেই লাভ হয়,,, আর সেই লাভটা নিজের কোম্পানিতে কাজে লাগিয়ে তা অনেক বড় এক পর্যায়ে নিয়ে আসে,, নিজের নাম একজন সফল বিজন্যাস ম্যান এর তালিকায় লিখে,,,
।
আরুশ সব সময় সায়রা এর খবর রাখতো,, কিন্তু সায়রা এর কাছে আরুশের কোন খবর ছিল না,, এর মধ্যে আরুশ জানতে পারে সায়রার রুহানের সাথে বিয়ে,, তা শুনে আরুশের মাথায় রক্ত উঠে যায়,, কেন না সায়রা শুধু ওর আর কাউরো না,, সায়রা,আরুশের সাথে করেছে তার শাস্তি ওকে আরুশের সাথে থেকে পেতে হবে,,
তাই সে দ্রুত বাংলাদেশে আসার ট্রাই করতে থাকে,, সায়রা এর বিয়ের ঠিক ১ সপ্তাহ আগে সে বাংলাদেশে এসে পরে,, আর তারপরের দিন চলে যায় সায়রার বাসায়,, গিয়ে দেখে সায়রা এক ধ্যানে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে,, আরুশ সায়রার সামনে গিয়ে ওকে দেওয়ালের সাথে বাহু দুটো চেপে ধরে,, সায়রা প্রথমে আরুশকে দেখে হচকিয়ে যায়,, পরে নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পরে,, তা দেখে আরুশ বলে,,
।
“তুই এখনই আমায় সবার সামনে জরিয়ে ধরে কিস করে বলবি,, তুমি শুধু আমায় ভালবাসিস,, আর আমায় বাদে কাউকে বিয়ে করবি না,,”
( বাকি আপনারা জানেন এই,, পরে কি হয়েছিল)
।
।
।
বৃষ্টির ফোটা আরুশের মুখের উপর পরতেই আরুশের ধ্যান ভাংগে,, সে বুঝতে পারে সে এতক্ষণ অতীতের সেই কষ্ট ময় স্মৃতিগুলোর মধ্যে ছিল,,,
আরুশ উঠে যেতে নিলে খেয়াল করে ওর চোখের কোনে পানি,, আরুশ তা দেখে তাচ্ছিল্য এক হাসি হাসে,, আর নিজেকেই বলে,,
।
আরুশঃ দেখ সায়রা তোর দেওয়া কষ্ট গুলো আজ আমার চোখের নোনা জল হয়ে পড়ছে,, বুঝতে পারছিস কত কষ্ট দিয়েছিস তুই আমায়,,
কিভাবে পারলি আমায় এত কষ্ট দিতে,,
আর আমাকে দেখ,, শত চেয়েও তোকে কষ্ট দিতে পারি না,, পারি না তোর মত নিষ্ঠুর হতে,, পারি না তোর মত পাষান হতে,,
।
।
আরুশ নিচে এসে দেখে সায়রা ফ্লোরেই শুয়ে আছে,, তা দেখে আরুশের বুকের ভিতর চিনচিন ব্যথা শুরু হয়,, সে সায়রাকে কোলে তুলে নিয়ে বেডে শুয়ে দেয়,, ফেরি লাইটের আলোতে সায়রা এর মুখ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে,, সায়রা এর চোখ দুটো ভিজা,, চোখের কোনে পানি জমে আছে,, পাপড়ি গুলোর মধ্যেও বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে,, তা দেখে আরুশের ভিতর থেকে এক দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে আসে,,, আর সে সায়রা এর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,,
।
আরুশঃ আমাকে তহ পুড়াছিস নিজের দহনে,, আর নিজেও পুড়ছিস আমার দহনে,, যদি তুই আমায় ধোকা না দিতি তাহলে আজ আমরা কেউই এই দহনে পুড়তাম না,, বরং দুইজনের ভালবাসার রঙে দুইজন দুইজনকে রঙ্গিত করতাম,,
।
এই বলে আরুশ সায়রার কপালে ভালবাসার পরশ একে দেয়,, পরে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে সায়রাকে বুকের সাথে জরিয়ে শুয়ে পরে,, কেন না নিজের এই অশান্ত বুককে যে শান্ত করতে ওর সায়রাকে প্রয়োজন,,
।
।
দেখতে দেখতে কেটে যায় ১৫ দিন,, এই ১৫ দিনে সায়রা আরুশের সাথে তেমন কোন কথাই বলে নি,, আরুশ কিছু জিজ্ঞেস করলে হু হা তে জবাব দিত,, যা আরুশের একদম সহ্য হচ্ছিল না,, তার উপর নিজের মধ্যেই এক অনুশ্চনা কাজ করছিল যে হয়তো নিজের জিদের বসে সায়রা এর সাথে বেশি অন্যায় করে ফেলেছে,, তাকে এইভাবে আপন না করলেও পারতো,,, তার উপর সায়রার এর এমন নীরবতা যেন আরুশকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল,,, একদিন এইসব সহ্য করতে না পেরে বলে উঠে,,,
।
আরুশঃ সায়রা দেখ সরি,, আমি তখন জিদের বসে এমন করেছিলাম,, এমন করাটা ঠিক হয় নি,,
।
সায়রা তখন কিছু না বলে চুপচাপ নিজের চুল আচড়াতে থাকে,, তা দেখে আরুশের মাথা গরম হয়ে যায়,, সে গিয়ে সায়রাকে ঘুরিয়ে নিজের দিকে আনে,, তারপর ওর বাহু দুটো চেপে ধরে বলে,,,
।
আরুশঃ কিছু বলছি আমি তোকে,, কথা বলছিস না কেন,,,
।
সায়রা এক ঝাটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে বলে,,,
।
সায়রাঃ কি বলবো হ্যাঁ কি বলবো,, তুমি যা করছো ঠিকই তহ করছো,, তাহলে আমি বলার কে,,,
।
আরুশঃ সরি বলছি তহ,,,
।
সায়রাঃ তুমি কেন সরি বলছো,,তুমি তো তোমার কাজই করছ যার জন্য তুমি আমায় বিয়ে করেছ,,তুমি তহ আমাকে কষ্ট দিতে,,প্রতিশোধ নিতে,, আঘাত দিতে,,যন্ত্রনা দিতে বিয়ে করছো,, তাই না,, তাহলে সবই তো ঠিকই চলছে তো সরি বলার কোন কারনই দেখছি না,, তুমি তহ তোমার জায়গায় পার্ফেক্টলি রাইট,,
আমি বেচে থাকি মরে,,
।
আর কিছু বলার আগেই আরুশ সায়রা এর ঠোঁট দুটো নিজের ঠোঁটের ভাজে আকড়ে ধরে,,, সায়রাকে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়,,
সায়রা প্রথমে ছুটাছুটি করলেও পরে শান্ত হয়ে যায়,, সে নিজের অজানতেই আরুশের ছোঁয়াতে হারিয়ে যেতে থাকে,, আরুশ প্রায় কিছু সময় পর সরে এসে সায়রা এর কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে ঘন ঘন শ্বাস নিতে থাকে,, সায়রা নিজেও হাপাতে থাকে,, তখন আরুশ শান্ত গলায় বলে,,,
।
আরুশঃ তোকে কষ্ট দিবো,,আঘাত করবো ,যন্ত্রনা দিবো তোর থেকে প্রতিশোধ নিবো কিন্তু তোকে কখনো নিজের থেকে দূরে যেতে দিবো না,,, তোকে নিজের অধিনের বাইরে যেতে দিব না,, তোকে সব সময় নিজের মাঝে আবদ্ধ করে রাখবো,, তুই সারা জীবন আমার পাশে থাকবি আমার বউ হয়ে,,তোমার উপর সব থেকে বেশি অধিকার আমার,, কেন না #তুই_যে_শুধুই_আমার❤
।
সায়রাঃ আর ভালবাসা??
।
আরুশ মুচকি হেসে আর কিছু না বলে সায়রা এর ঠোঁট দুটো আবার নিজের ঠোঁটের ভাজে নিয়ে নেয়,, আর পরম আয়েশে সায়রার ঠোঁট দুটো শুষে নিতে থাকে,, আরুশের এই ভালবাসার স্পর্শে সায়রা বুঝে যায় আরুশের মনের কথা,, সে ভালো করেই জানে আরুশ ওকে নিজের থেকেও বেশি ভালবাসে,, কিন্তু রাগ আর অভিমানের কারণে তা বলতে পারছে না,,তাই সে আর কথা বাড়ায় না কারন তার যা উত্তর পাওয়ার ছিলো তা সে পেয়ে গেছে,,
আরুশ হঠাৎ সায়রাকে পাজাকোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দেয়,, আর সায়রা এর গলায় মুখ গুজে,,,
সেইদিন সায়রাকে আপন করে নেওয়ার পর সায়রার প্রতি ওর নেশা আরও বেরেই চলেছে,, না চাইতেও সে সায়রার কাছে ছুটে চলে যায়,, কেন না এই নেশা থেকে যে মুক্তি পাওয়া বড় দায়,, তাই তহ আজ সে যখন সায়রাকে কাছে পেয়েছে সে আবার সেই নেশায় ডুব দিতে চায়,,
।
।
।
রাত ৩ টা,,
আরুশ সায়রাকে জাপটে ধরে গলায় মুখ গুজে বেঘারে ঘুমাচ্ছে,, যেন কত রাত ঘুমায় নি,,, আর সায়রা পলকহীন ভাবে ওকে দেখেই চলেছে,, এই দেখার যেন কোন শেষ নেই,, সায়রা ভাবছে কত টাই না কষ্ট দিয়েছে সে আরুশকে,, কিন্তু সেই বা কি করতো,, সে বাদ্ধ ছিল এইসব করতে,, এই কথা ভাবতে ভাবতেই তার অতীতের সেই স্মৃতিগুলো সামনে এসে পরে,, আর সায়রা না চাইতেও ডুব দেই সেই ৩ বছর আগের স্মৃতিতে,,
#Part_11
#Writer_Tanzin_Islam_Ishika
।
সায়রা না চাইতেও ডুব দেই সেই ৩ বছর আগের স্মৃতিতে,
।
।
আরুশের সাথে আমার দিন গুলো তখন ভালোই কাটছিল,, নিজের চাইতে বেশি ভালবেসে ফেলেছিলাম ওকে,, ওর জন্য সব কিছু করতে পারতাম,,, ওই যেভাবে বলতো সেই ভাবেই চলতাম,, ওর কথা অনুযায়ী পড়ালেখা ও ঠিক মত করতাম,,
তখন আমি কলেজের সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট,, সামনে ছিল এইচএসসি এর মতো বড় পেরা,, সকলেরই পড়ালেখা ধুমসে চালু,, আমারও একই অবস্থা,, কিন্তু এর মধ্যে কিছু দিন ধরে এক অচেনা নাম্বার থেকে কল আসা শুরু করে,, কিন্তু আমি পাত্তা দিতাম না,, আর কল ধরতামও না,, তার উপর কয়েকদিন ধরে খেয়াল করি একটা ছেলে আমায় ফোলো করে,, আমি যেখানেই যাই সেখানেই সে এসে হাজির,, আস্তে আস্তে আমার ভয় করতে শুরু করে,, এইদিকে আরুশকেও বলতে পারছিলাম,, কেন না ওকে জানালে সোজা মারামারিতে এসে পরবে,, তাই কিছু জানাই নি,,
একদিন সেই ছেলেটি আগ বাড়িয়ে কথা বলতে আসে,, আমি ভয়ে সেইদিন দৌড়ে চলে আসি,, তারপর থেকে আমি বায়না ধরি আরুশ যাতে আমায় নিয়ে যায় আর নিয়ে আসে,, আরুশও আমার কথা ফেলতে না পেরে আমায় দিয়ে আসতো আর নিয়ে আসতো,, আরুশ এর সাথে থাকলে কেন জানি নিজেকে অনেক সেফ মনে হতো,, আরুশের সাথে যাওয়া আসার পর আমি আর সেই ছেলেকে দেখি নি,, আমিও আস্তে আস্তে সেই ছেলের কথা ভুলে যাই,, আর পরীক্ষায় মনোযোগ দেই,,
দেখতে দেখতে পরীক্ষা শেষ হয়,, এর প্রায় ৩ মাস পর রেজাল্টও দেয়,, জিপিএ-৫ পাই,, অতঃপর ভালো এক ভারসিটিতে ভর্তি হই,, এর মধ্যে আরুশও চাকরি খুজতে থাকে,, ওর কথা ছিল চাকরি হওয়ার ২-৩ মাস পরেই সে আমায় বিয়ে করবে,, আমি তহ তখন সেই খুশি,, আমাদের ভালোবাসা পূর্নতা পাবে বলে,,, কিন্তু সেই খুশি বেশি দিন টিকলো না,,
একদিন আমি আরুশের বাসায় যাই ওর ফেভারিট মোরগ পোলাও রেধে,, সেখানে গিয়ে আমি সোফায় বসে থাকা ব্যক্তিকে দেখে ভয়ে জমে যাই,, কেন না সোফায় ওই রাস্তার ছেলেটি বসা,, যে নাকি আমায় ফোলো করতো,, আমি কিছু বলার আগে আরুশ এসে পরিচয় করিয়ে দেয় ওই ছেলের নাম রুহান,, আর সে আরুশের ফ্রেন্ড,, আমি তখন মুখে জোরপূর্বক হাসি টেনে হ্যালো বলে এসে পরি,,
এই থেকে শুরু জ্বালা,, রুহান দিন রাত খালি আমায় কল দেওয়া শুরু করে,, বিভিন্ন টাইপের মেসেজিং করে,, আমি প্রতি বার ওর নাম্বার ব্ল্যাক লিস্টে দিয়ে দিতাম,, কিন্তু সে দমবার পাত্র নয়,, সে আবার নতুন সিম দিতে কল আর মেসেজিং করতো,, একদিন সে হুট করে আমার ভারসিটিতে সকলের সামনে প্রাপস করে বসে,, তখন আমার ধৈর্য্যের সকল সীমা পেড়িয়ে যায়,, আর আমি ওকে থাপ্পড় মেরে না করে দেই,, তখন সে আমায় টানতে টানতে গাড়ির সামনে নিয়ে যায়,, কিন্তু গাড়িতে উঠার আগেই আরুশ এসে ওকে আটকায়,, আর ভারসিটির সকলের সামনেই এবলো থেবড়ো মারা শুরু করে,, আমি অনেক কষ্টে আরুশকে থামাই,, আর আরুশ সেইদিন রুহানের সাথে ফ্রেন্ডশিপ শেষ করে আমাকে নিয়ে চলে আসে,, কিন্তু রুহানের সেইদিন ইগো হার্ট হয়,, আর সেটাই হয়ে যায় আমার কাল,,
একদিন ভারসিটি থেকে ফিরছি,, এমন সময় রুহান ওর গাড়ি নিয়ে আমার সামনে এসে দাড়ায়,, রুহান গাড়ি থেকে বের হয়ে এসে আমার সামনে দাড়ায়,,
আমি রুহানকে দেখে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে রুহানের কথায় থমকে দাড়াই,,
।
রুহানঃ আজ আমায় ইগনোর করার ভুল করো না,, তা না হলে তোমার আরুশের জান বাচবে না,,
।
আমি অবাক হয়ে রুহানের দিকে ঘুরে দাড়াই,, আর বলি,,
।
সায়রাঃ মানে,,
।
রুহানঃ মানে যা শুনলে তাই,, এখন কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠো,, কথা আছে,,,
।
সায়রাঃ আমি কোথাও যাব না,,
।
রুহানঃ ভেবে বলছো তহ,, কেন না তোমার জানের জান এখন আমার হাতে,, তুমি যদি এখন আমার সাথে না চল তাহলে তোমার আরুশ আর কালকের সূর্যদয় দেখতে পারবে না,,
।
সায়রাঃ এমন ফিল্মি ফিল্মি ডাইলোগ না মেরে কি বলতে চাচ্ছো তা বল,, ভয় হচ্ছে কিন্তু ভয়কে দ্মিয়ে রেখে সাহস জুগিয়ে বললাম,,
।
রুহানঃ ওকে তাহলে শুনো,, তুমি এখন আমার সাথে রিলেশনে না যাও তাহলে আমি তোমার আরুশকে জানে মারতে বাধ্য হবো,, আর তুমি ভালো করেই জানো আরুশকে রাস্তা থেকে সরাতে আমার দুই মিনিট ও লাগবে না,,
।
সায়রাঃ কি যা তা বলছো,, কাপা কাপা গলায়,,
।
রুহানঃ আমি যা তা বলছি তাই না,, ওয়েট,,
এই বলে মোবাইলে কাউকে ভিডিও কল দিল,, তারপর তা সায়রা এর সামনে ধরলো,, সেখানে দেখা যাচ্ছে আরুশ ফরমাল লুকে হাতে ফাইল নিয়ে রাস্তায় রিকশার জন্য দাড়িয়ে আছে,, তখন হাত থেকে ফাইল পড়ে যায়,, আরুশ তা উঠিয়ে কাগজ গুলো ঠিক করতে থাকে,,
আর ওর পিছেই একটা ট্রাক এর মত দাড়িয়ে আছে,, যার ইঞ্জিন চালু,, আর আরুশের পিছেই এক লোক দাড়িয়ে আছে,, কিন্তু আরুশের সেইদিকে খেয়াল নেই,, সে নিজের কাগজ গুলো গুছাতে ব্যস্ত,, তার আশে পাশে কি হচ্ছে তার কোন হুস নেই তার,,
।
রুহানঃ আমার এক ইশারাতে ট্রাকটি চালু হয়ে যাবে,, আর ট্রাকটি কাছে আসতেই আরুশের পিছে থাকা ব্যক্তিটি আরুশকে ধাক্কা দিয়ে সেই ট্রাকটির সামনে ফেলে দিবে,, আর ট্রাক আরুশের উপর দিয়ে চলে যাবে,, আর তোমার আরুশ,,
।
সায়রাঃ কেন করছো এমন,,
।
রুহানঃ গুড কুয়েশ্চন,, তাহলে শুনো,,
তুমি আর আরুশ মিলে আমায় যে সকলের সামনে যে অপমান করসো তার প্রতিশোধ নিতে,, তোমাদের সাহস কিভাবে হয় রুহান চৌধুরীকে অপমান করার,, এখন এর ফল তহ তোমাদের ভুগতেই হবে,, এখন তুমিই বল আমি কি করি,, জানে মেরে ফেলব কি আরুশকে,,
।
সায়রাঃ না তুমি এমন কিছু করবা না,,,
।
রুহানঃ তাই তহ বলতাসি আমার কথা মেনে নাও,, আমি যা যা বলছি তা করো,,, আরুশকে ভুলে যাও আর আমার কাছে চলে আসো,, তুমি নিজেই আরুশকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিবে,, আর ওকে সকলের সামনে ইন্সাল্ট করবে,,, ওকে নিচু করবে,,
।
সায়রাঃ আমি এইসব করতে পারবো না,,
।
রুহানঃ করতে তহ তোমায়,, তা না হলে,,
ভিডিওটে ট্রাকটি চলতে শুরু করে,, আস্তে আস্তে সেই ট্রাকটি আরুশের সামনে এসে পরে,, আর পিছে থাকা লোকটি আরুশকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে থাকে,, কি করব কিছু বুঝতাসি না,, যখন দেখতাসি ট্রাকটি ক্রমশ এগিয়ে আসছে তখন আমি আর কিছু না ভেবে চিল্লিয়ে উঠি,,
।
সায়রাঃ আমি রাজি,, তোমার সকল শর্তে আমি রাজি,,,
এই কথা শুনে রুহানের মুখে এক পৈচাশিক হাসি ফুটে উঠে,, আর রুহান ফোনটা নিয়ে কাকে যেন কি বলে,, আর লোকটি সরে আসে,, আর ট্রাকটিও পাশ কাটিয়ে চলে যায়,,
।
সেইদিনের পর থেকেই সায়রা আরুশকে ইগনোর করা শুরু করে,, আর না চাওয়া স্বত্তেও রুহানের সাথে মিশতে শুরু করে,, আর সেইদিন আরুশ যখন সায়রা এর সাথে দেখা করতে যায়,, তখন রুহান কিভাবে যেন খবর পায় যে আরুশ সায়রা এর সাথে দেখা করতে যাচ্ছে,, তাই সে আগেই সায়রা এর কাছে চলে যায়,, আর সায়রাকে বলে আজ আরুশকে অপমান করতে,, আর এমন ভ্যান করতে যে সে এখন আরুশকে ভালবাসে না,, আর না তাকে চায়,,
সায়রা ভালো করেই জানতো আরুশকে সে যাই বলুক না কেন,, আরুশ বিশ্বাস করবে না,, তাই সে টাকা এর কথা তুলে,, যাতে আরুশ অপমানিত হয় আর নিজ থেকে দূরে চলে যায়,,
তাই সায়রা সেইদিন ওই সকল কথা বলে,,
।
সেইদিনের পর থেকে সায়রা হাসতে ভুলে যায়,, কাউরো সাথে কোন কথা বলতাম না,, চুপচাপ থাকতাম,, ভারসিটিতে মন মরা হয়ে থাকতাম,, মাঝ রাতেই কেদে উঠতাম,, আরুশের শূন্যতা আমায় কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল,, নিজের ভালবাসাকে এইভাবে দূরে সরিয়ে রাখতে পারছিলাম না,, কিন্তু আমি যে নিরুপায়,, তখন ভালো মন্দ বুঝার ক্ষমতা আমার মধ্যে ছিল না,, শুধু একটাই কথাই আমার মাথায় ঘুরঘুর করছিল যে যেভাবেই হোক আমায় আরুশকে বাঁচাতে হবে,, নিজের জীবন দিয়েও আমায় আরুশকে বাঁচাতে হবে,, আজ আমি আরুশকে তহ বাঁচিয়ে ফেলেছি কিন্তু এর বদলে নিজে বাঁচা ভুলে গিয়েছিলাম,, দিন দিন ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছিলাম,, আমার এই অবস্থা দেখে একদিন জান্নাত আমার কাছ থেকে সব জানতে চায়,, আমি কেন আরুশের সাথে এমন করি,, তখন আমি আর না পেরে ওকে জরিয়ে ধরে কাদা শুরু করি,, আর সব খুলে বলি,, এইসব শুনে জান্নাত আমায় শান্তনা দিতে থাকে,, আর আমিও পরে নিজেকে কিছুটা শক্ত করে ফেলি,, আরুশের ভালোর জন্য যে আমায় দূরে থাকতেই হতো,,,
।
প্রায় ১ বছর পর রুহান আমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে,, ভালো প্রস্তাব হওয়ার সকলে রাজি হয়ে যায়,, আমারও রাজি না হয়ে উপায় ছিল না,, কিন্তু আমি মনে মনে ভেবে রেখেছিলাম যে আমি বিয়ের ৩ দিন আগে নিজেকে শেষ করে দিব,, কেন সেইদিনই ওই দিন যেদিন আরুশ আর আমার ভালবাসা গ্রহন করে ছিল,,ওইদিনই আমাদের প্রেমের কাহিনি শুরু হয়েছিল,, তাই আমি সেইদিনই নিজেকে শেষ করে কাহিনিটা সেখানেই শেষ করতে চেয়েছিলাম,, কিন্তু পারলাম না,, তার আগেই আরুশ এসে আমায় নিজের করে নেয়,,
।
।
🍁
।
।
এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরি খেয়াল নেই,, সকালে ঘুমিয়ে আছি,, এমন সময় মনে হলো আমার মুখের উপরে পানির ফোটা পরছে,, তখন আমি আদো আদো চোখ খুলে দেখি আরুশ আমার উপর ঝুঁকে আছে,, তার মাথা থেকে টিপ টিপ করে পানি চুয়ে চুয়ে আমার মুখের উপর পড়ছে,,
আমি তা দেখে আমি ধরফরিয়ে উঠি,, এতে আমি আরুশের মাথার সাথে ধাম করে বারি খাই,, আমি নিজের কপালে হাত বুলাতে বুলাতে বলি,,
।
সায়রাঃ এমনে কি দেখতাসিলা,,
।
আরুশঃ তোমাকে,, আরুশ এক ঘোরের মধ্যে থেকে কথা টি বলে,,
।
সায়রাঃ মানে,, অবাক হয়ে,,
।
সায়রা এর এমন কথায় আরুশের ঘোর কেটে যায়,, সে বুঝতে পারে সে কি বলছিল,, তাই সে কথা ঘুরানোর জন্য বলে,,
।
আরুশঃ ইয়ে মানে,,ও হ্যাঁ আমি দেখতাসিলাম একটা মানুষ এত কিভাবে ঘুমায়,, এত ঘুম কোথা থেকে আসে তোর,,
।
সায়রাঃ আজিব এখন কি ঘুমাতেও পারবো না,,
।
আরুশঃ হুহ,, কয়টা বাজে জানস,, ১০ টা বাজে,, ১০ টা,, এত ক্ষন বাড়ির বউ কেউ ঘুমায়,,
।
সায়রাঃ কিইইইইই,,, ১০ টা বাজে আর তুমি আমায় এখন ডাকছো,, সরো,, তারাতারি ফ্রেশ হয়ে আমায় নিচে যেতে হবে,,,
।
আরুশঃ তহ যা,, বলে মিটি মিটি হাসতে থাকে,,
আমি হাসি কোন কারন খুজে না পেয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার জামা উলোট পালোট হয়ে আছে,, তা দেখে আমি লজ্জায় শেষ হয়ে যাই,, তার সাথে আমার রাগও উঠছে,, পারলে এই অসভ্যটাকে মেরে গুম করে দেই,, নিজেকে জামা ঠিক করে বলি,,
।
সায়রাঃ ওই তুমি আমার দিকে এমনে তাকিয়ে আছো কেন,,আগে কি মেয়ে দেখো নাই,, অন্য দিকে তাকাও,, লজ্জা শরম বলতে কিছু নেই,,
।
আরুশঃ এহহ তোকে দেখে আমার লজ্জা করবে কেন,,আমি কি অন্যের বউকে দেখতাসি নাকি,, নিজের বউরে দেখতাসি,, নিজের বউকে দেখতে কিসের লজ্জা শুনি,,
।
আমি ছোট ছোট চোখ করে বলি,,
।
সায়রাঃ তুমি কি আদো আমাকে নিজের বউয়ের স্বীকৃতি দিয়েছ,, আদো কি আমায় তোমার বউ মানো??
।
আমার এই রকম প্রশ্নে আরুশ থম থম খেয়ে যায়,, সে কি বলবে বুঝতে পারছিল না,, কেন এর জবাব ওর নিজের কাছেই নেই,, আরুশ কথাটা এরানোর জন্য নিজের মুখে গম্ভীরতা এনে বলে,,
।
আরুশঃ যা ফ্রেশ হয়ে আস,, আমি ডাইনিং এ ওয়েট করছি,,
এই বলে আরুশ হনহনিয়ে চলে যায়,, আর আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকি,, আমার ভিতর থেকে এক দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে আসে,,
।
।
।
#চলবে,,