তুই যে শুধুই আমার পর্ব ১৯

#তুই_যে_শুধুই_আমার [❤You are only mine❤]
#Part_19
#Writer_Tanzin_Islam_Ishika [Asfiya Islam Jannat]

দেখতে দেখতে ১ সপ্তাহ কেটে যায়,, এই এক সপ্তাহ আরুশ সায়রাকে আরশোলার ভয় দেখিয়ে জ্বালিয়ে মেরেছে,, কি না করতে বলেছে ওকে,, কখনো কিস করো তহ কখনো ঘুম পারিয়ে দাও নাইতো কখনো খাইয়ে দাও,, আবার কখনো শাড়ি পড়ো,,
কিন্তু এর মধ্যে দিয়ে আরুশ তার ভালবাসা প্রতি নিয়ত সায়রাকে বুঝিয়ে গিয়েছে,, এক মিনিটের জন্য সায়রা ওর চোখের আড়াল হলে সে অস্থির হয়ে যায়,, আরুশ সায়রার ছোট থেকে ছোট জিনিসের খেয়াল রাখে,, কোন কিছুর কমতি রাখে না নিজের ভালবাসা সায়রাকে উপলব্ধি করার জন্য,,


রাতে সায়রা বারান্দায় গ্রিলের উপর হাত রেখে দাড়িয়ে আকাশের পানে তাকিয়ে আছে,, আকাশে অজ্রস্রো তারা চিক চিক করছে,, তার মধ্যে এক গোলাকার থালার মত চাঁদ চারদিকে তার স্নিগ্ধ আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে,, আজ সায়রা অন্য কিছু নিয়ে ভাবছে না,, বরং আজ সে শুধু আরুশকে নিয়েই ভাবছে,, ভাবছে বলে ভুল হবে সে এখন আরুশের ভাবনায় মগ্ন,,
হ্যাঁ আরুশ যেন আজ সায়রার অভ্যাসে পরিনত হয়েছে,, আরুশের এইসব পাগলামিতে সে এখন বিরক্তবোধ করে না বরং তার এখন এইসব ভালো লাগে,, ওর বিরক্তকর জিনিস গুলো এখন ভালো লাগাতে পরিনত হয়েছে,, কিন্তু তা সে আরুশকে বুঝতে দেয় নি,,
সায়রা এখন ধীরে ধীরে আরুশকে আপন করে নিচ্ছে,, সে যে আর তার অভিমান ধরে রাখতে পারছে না,, কিভাবেই বা রাখবে,, যাকে আমরা ভালবাসি তার উপর কি কখনো রাগ বা অভিমান করে থাকা যায়,, উহুম যায় না,, কারন ভালবাসার মানুষ যতই কষ্ট দিক না কেনো তার ওপর রাগ করে থাকা যায় না,, আর তাকে কষ্টও দেওয়া যায় না,, তাকে কষ্ট দিলে নিজেকে তার থেকে বেশি কষ্ট অনুভব করতে হয়,, তাই সে এখন ঠিক করেছে আরুশকে আর কষ্ট দিবে না,, চেষ্টা করবে সব ভুলে নতুন জীবন শুরু করার,, কিন্তু সব কি ভোলা এতই সহজ

সায়রা যখন আরুশের ভাবনায় মগ্ন তখন আরুশ বারান্ধায় প্রবেশ করে,, সে এসে সায়রার পাশে দাড়ায়,, আরুশ মুগ্ধ নয়নে সায়রার দিকে তাকিয়ে আছে,, কেন না চাঁদের স্নিগ্ধ আলো এসে সায়রা মুখে পড়ছে,, এতে সায়রার মুখখানি একদম স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে,, অন্যরকম সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে তার চেহারায়,, লম্বা চুল গুলো বাতাসে উড়ছে সব মিলিয়ে আরুশের নেশা ধরিয়ে দিচ্ছে,,
আরুশের ইচ্ছে করছে এখনই তার এই মায়াবতীর মাঝে ডুব দিতে,, কিন্তু আফসোস তা হয়তো এই মুহূর্তে সম্ভব না কেন না সায়রা যে এখনো তাকে ক্ষমা করেনি,, তার উপর যে সে এখনো রেগে আছে,, আর এমনেও আরুশ চায় সায়রা নিজের মন থেকে সব মেনে নিয়ে তাকে আপন করুক তারপর না হয় সে সায়রাকে আবাএ নিজের ভালবাসার রঙ দিয়ে রাঙিতে দিবে,, আপন করে নিয়ে চিরতরের জন্য নিজের বুকে আগলিয়ে রাখবে,,,
আরুশ সায়রার আর একটু কাছে যেয়ে তার পাশ ঘেঁষে দাড়িয়ে আকাশের পানে তাকিয়ে বলে,,
আরুশঃ কি ভাবছো এই অসীম নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে,,

আরুশের কথায় সায়রা নিজের ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে,, তারপর সে একবার আরুশের দিকে তাকিয়ে আবার আকাশের পানে তাকিয়ে বলে,,
সায়রাঃ কিছু ভাবছি না তা বললে ভুল হবে,, আবার ভাবছি তাও বলতে পারছি না,, আসলে বলতে গেলে আমি জীবনের হিসাব মিলাচ্ছিলাম,, যে বিয়ের পর আমাদের মধ্যে কি ছিল আর এখন কি আছে,, আগে কেমন ছিলাম আর এখন কেমন,, আগে আমার প্রতি তোমার ব্যবহার কেমন ছিল আর এখন কেমন,, জানো এইসব মিলিয়ে শেষে কি পেলাম,,

আরুশঃ কি,,, নিচু স্বরে,,

সায়রাঃ যে আমরা সময়ের স্রোতে অতিবাহিত হয়ে চলেছি,, সময় যে কাউকে থেমে থাকতে দেয় না,, সময় যেমন খারাপ হয় তেমন ভালোও হয়,, তার সাথে সে যে সকলকে পরিবর্তন করতে সক্ষম,, যেমন তোমায় আর আমায় কতটাই না পরিবর্তন করে ফেলেছে,, আজ সত্যি একটা কথা মানতে বাধ্য হচ্ছি,, সকলের জীবনেই সময়ের একটা সময় সব সময় স্মরনীয় হয়ে থাকে,, আর আমার জীবনে সেই সময়টা হলো তোমার সাথে আমার কাটানো সেই সময় গুলো যখন নাকি তোমার আমার মাঝে কোন কিন্তু ছিল না,, কোন অপবাদ ছিল না,, ছিল না কোন থার্ড পারসোন,, ছিল না কোন ভুল বুঝাবুঝি,, কতটা না হাসি খুশি ছিলাম,, দুইজনের জন্য দুইজনের ভালবাসার কোন কমতি ছিল না,, আমি যদি পারতাম না তাহলে সে সময়কে বেধেঁ রাখতাম,, কখনো অতিবাহিত হতেই দিতাম না,,

আরুশঃ সময়কে কখনো বাধাঁ যায় না এটা করার চেষ্টা করা ও বৃথা সময়তো চলমান নদীর ধারার মত তা নিজ গতিতে বয়ে যাবে,, তাই পুরানো সময়কে স্মরণ করে শুধু ভালো লাগা উপলব্ধি করা যায়,, কিন্তু বর্তমান সময়ে তার চেয়ে ভালো স্মৃতি তৈরি করে তাতে সন্তুষ্টি লাভ করা যায়,,

সায়রা এক মুচকি হেসে বলে,,

সায়রাঃ তাই তো সময়ের সাথে সাথে এমন কিছু স্মৃতি তৈরি হয়ে গেল যা সব কিছু অগোছালো করে দিলো কিছু ভয়ংকর স্মৃতি যা মনে করলে আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিতে লাগে,, যা যন্ত্রনা দেয় কষ্ট দেয়,,
আফসোস যদি সময়টাকে বেধেঁ রাখতে পারতাম আর তা পরিবর্তন করতে পারতাম তাহলে নিজের জীবন থেকে সেই ভয়ংকর স্মৃতি গুলো মুছে ফেলতাম,, আর সবসময়ের জন্য শুধু সেই হাসি ময় ভালো স্মৃতি গুলো গুছিয়ে রাখতাম,,

বলেই রুমের দিকে পা বাড়ায় সায়রা,, আরুশ এত সময় ধরে মাথা নিচু করে সব শুনছিলো সায়রার প্রত্যেক টা কথা তাকে আঘাত দিচ্ছিল কেন না তার যে অজানা নয় যে সায়রা কোন ভয়ংকর স্মৃতির কথা বলছে,,
সায়রা সেই রাতের কথা বলছে যেদিন আরুশ সুবাহর উপর হাত তুলেছিলো,,, তার চরিত্র নিয়ে কথা তুলেছিল,, তাকে কিনা চরিত্রহীনা বলেছিল,, বিভিন্নভাবে তাকে নিচু করেছিল,,

আরুশ পিছন থেকে সায়রার হাত আটকিয়ে বলে,,
আরুশঃ পুরোনো স্মৃতি মুছা যাবেনা কিন্তু নতুন স্মৃতি তো গড়া যাবে যা পুরোনো ভয়ংকর স্মৃতি গুলোকে ভুলিয়ে দিবে নতুন করে সব শুরু করতে সাহায্য করবে,, কষ্ট ভুলাতে সাহায্য করবে,, পিছনের অন্ধকার পেরিয়ে নতুন এক আলোয় রাঙিয়ে তুলবে,,
আমাকে কি শেষ বারের মত সুযোগ দেওয়া যায় না,, আরেকবার কি সব ভুলে আমায় ভালবাসা যায় না,,

সায়রা এইবার পিছে ঘুরে আরুশের দিকে তাকায়,,, আর তাকিয়ে দেখে সে করুন চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে তার দিকে,,চোখে স্পষ্ট অনুতাপ দেখা যাচ্ছে,,
সায়রা যে চেয়েও তার চাহনি কে উপেক্ষা করতে পারছেনা,,

সায়রা আরুশের কোন কথার উত্তর না দিয়ে সে আবার সেই গ্রিলের পাশে হাত দিয়ে আকাশের পানে তাকিয়ে থাকে গভীর ভাবে,, আরুশ বুঝতে বাকি নেই যে সায়রা এই প্রশ্নের উত্তর দিতে চাচ্ছে না,,
তাই আরুশ সায়রাকে কলে করে বারান্ধায় রাখা সোফায় বসে,,সায়রা আরুশের কোল থেকে উঠতে চাইলে আরুশ পিছন থেকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে যাতে সায়রা নরতে না পারে,, সায়রা বেশ ভালো করেই বুঝে গেছে যে সে চাইলেও আরুশের বাহুডোর থেকে ছাড়া পাবেনা তাই এভাবেই বসে থাকা তার জন্য উত্তম তাই সায়রা চুপচাপ আরুশের বুকে হেলান দিয়ে বসে থাকে,, তা দেখে আরুশ গুন গুন করতে করতে বলে,,

🍁ভিতর ও বাহির অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে🍁
🍁ভিতর ও বাহির অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে🍁
🍁ঢেকে রাখে যেমন কুসুম
পাপড়ির আবডালো ফসলের ঘুম🍁
🍁ঢেকে রাখে যেমন কুসুম
পাপড়ির আবডালো ফসলের ঘুম🍁
🍁তেমনি তোমার নিবিড় চলা🍁
🍁তেমনি তোমার নিবিড় চলা
মরনের মূল পথ ধরে🍁
🍁আমার ভিতর ও বাহির অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে🍁
🍁আমার ভিতর ও বাহির অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে🍁

সায়রা এতক্ষন মুগ্ধ হয়ে আরুশের গান শুনছিল,, আরুশের গানের গলা যে মোটামুটি অনেম ভালো তা সায়রাকে মানতেই হবে,, আগেও আরুশ সায়রা জন্য এমনেই গান গাইতো যখন সায়রা মন খারাপ থাকতো বা রাগ করতো,, আরুশের গান শুনে সে কোন মতেই রাগ বা মন খারাপ করে থাকতে পারতো না,,
তার কাছে আরুশের গান গাওয়াটা একটা নেশার মত কাজ করে যা শুনার পর সে দুনিয়াদারি সব ভুলে যায়,,

আরুশ গান শেষ করে সে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে সায়রার দিকে তাকিয়ে থাকে,, চোখ বন্ধ অবস্থায় তাকে কতটাই না মায়াবি লাগছে,, সে হারিয়ে যাচ্ছে সায়রার মাঝে,, নিজেকে আর সংযোত না রাখতে পেরে সে সায়রার ঘাড়ে নিজের মুখ ডুবায় সেখানে আলতো করে নিজের ঠোটেঁর স্পর্শ দিতে লাগে,,, আরুশের স্পর্শে সায়রা আস্তে আস্তে আরুশের মধ্যে ডুবে যেতে থাকে,,
আরুশের ঠোঁটের স্পর্শ গুলো আস্তে আস্তে গভীর হতে লাগে,, আজ সায়রা চেয়েও আরুশ কে বাধাঁ দিতে পারছে না,, পারছে না বলে ভুল হবে,, দিতে চাইছে না,, কেন না সে যে নিজেই তো আরুশের স্পর্শে ডুব দিতে চাচ্ছে,, সায়রার কোন বাধাঁ না পেয়ে আরুশ ধীরে সায়রার ঠোঁট গুলোকে নিজের আয়ত্তে করে নিয়েছে তারপর হুট করে সায়রাকে কোলে করে রুমের দিকে এগোতে লাগে,,আজ না হয় আর একবার তার ভালোবাসাকে ভালোবাসায় বেধেঁ রাখবে নিজের করে নিবে নতুন করে, আগের বার আপন করে নিলেও ছিলো সংষয় প্রতিশোধ কিন্তু এবার না আছে কোন প্রতিশোধ না আছে কোন সংষয় শুধুই রয়েছে তাদের ভালোবাসা,, সায়রার জমানো অভিমানের পাহারটা আজ হয়তো ভেঙে যাবে,, হয়তো নতুন করে শুরু হবে তাদের নতুন জীবনের পথ চলার সূচনা,,



#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here