তুমিময় অনুভূতি পর্ব -০১

নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্যের হতে দেখা যে কতটা কষ্টের তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। যদিও অভ্র ভাইয়াকে আমি একতরফা ভালোবাসি। কিন্তু এর পরও ভালো তো বাসি।সহ্য করতে না পেরে সেখান থেকে উঠে ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম।

মামাদের আজ আমাদের বাসায় দাওয়াত ছিলো।দাওয়াত এটেন্ড করতেই এসেছিলো মামারা।খাওয়া দাওয়ার পর ড্রয়িং রুমে সবাই বসে ছিলাম তখন চাচ্চু মামাকে নিরা আপু আর অভ্র ভাইয়ার বিয়ের কথা বলে ।কথাটা শুনে মামা মামি মুখ কাচুমাচু করে ফেলে।কিন্তু চাচ্চু আর চাচিকে বেশ উৎফুল্ল দেখলাম।এদিকে আমি বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলাম।মনে হচ্ছিলো যে আমার এই হৃদয়টাকে মনে হয় কেউ ছুরি দিয়ে খন্ড খন্ড করে ফেলছে।তাই সহ্য করতে না পেরে রুমে চলে এলাম।

রুমে দরজা আটকে কান্না করছিলাম।কান্নার মাঝেই অভ্র ভাইয়ার আওয়াজ কানে এলো।ভাইয়া এখানে ছিলেন না।একটা কাজে গিয়েছিলেন।ফিরেছেন হয়তো কিছুক্ষন আগেই।বেশ রেগেই কথা বলছেন উনি।যার ফলে আওয়াজ তুলনামূলক স্বাভাবিকের থেকে বেশি।

“হোয়াট রাবিশ।বাবা তোমার কি মাথা ঠিক আছে। আমি নিরাকে বিয়ে করবো?এসব পাগলের পাল্লায় আমি অভ্র নেই।তোমার যদি নিরাকে এতো পছন্দ হয় তবে তোমার আরেক ছেলে আছে না শুভ্র ওকে বিয়ে দাও নিরার সাথে।আমি এই বিয়ে কোনোমতেই করতে পারবো না।আর এটাই আমার ফাইনাল ডিসিশন।নেক্সট এই বিষয় নিয়ে আমি আর একটা কথাও শুনতে চাই না বাবা।” বলে চুপ করে গেলেন উনি।তবে চাচির কথা কানে ভেসে এলো।

“অভ্র বাবা রাগ করছো কেনো নিরা কি দেখতে অসুন্দর? ওকে বিয়ে করতে তোমার অসুবিধা কোথায়।?”বলতে বলতে তিনি হয়তো দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন যার ফলে তার কন্ঠস্বর আস্তে আস্তে ক্ষীণ হয়ে গেলো। তাতে বুঝলাম অভ্র ভাইয়া চলে গেছেন।আর উনি নিরা আপুকে বিয়ে করতে রাজি নয়। অভ্র ভাইয়ার কথা শুনে আমার কান্না তখনি উধাও হয়ে গিয়ে ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠেছে।তৎক্ষনাৎ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম যে, যে করেই হোক অভ্র ভাইয়াকে নিজের মনের কথা বলে দিবো।এরপর ফ্রেশ হয়ে নিলাম কান্না করার ফলে চোখের লোনা পানিতে মুখ আঠালো হয়ে আছে।তাই ফ্রেশ হয়ে একটু নিজেকে পরিপাটি করছিলাম ঠিক তখনি ফোন বেজে উঠলো।শুভ্র ভাইয়ার কল।কল রিসিভ করতেই শুভ্র ভাইয়ার বাজখাঁই গলা শুনে মেজাজ গরম হয়ে গেলো।

” শুভ্র ভাইয়া তোমার সমস্যা কি বলো তো আমায়।মামি কি জন্মের সময় তোমার মুখে কোনো মধু দেয় নি।যখনই কথা বলবে তখনি এমন কর্কশ ব্যবহার। একদম আমি তোমার সাথে কথা বলবো না।তুমি আমাকে ফোন করবে না ”

বলে ফোন কাটতে যাচ্ছিলাম তখন শুভ্র ভাইয়া করুন স্বরে বললেন,

“মেঘা বোন আমার ফোন কাটিস না।আমি আর তোর সাথে এভাবে কথা বলবো না।তুই তার পরও ফোনটা কাটিস না বোন।”

ভাইয়ার কথা শুনে আমার খুব হাসি পেলো।কিন্তু আমি হাসলাম না।স্বাভাবিক ভাবেই কথা বললাম।আমার মামার ২ ছেলে শুভ্র ভাইয়া আর অভ্র ভাইয়া।দুই জন জমজ কিন্তু দেখতে মোটেও এক রকম না।শুভ্র ভাইয়া সাদা ভুত।মাত্রাতিরিক্ত ফর্সা।যার কারনে সে আমাদের কাজিন মহলে ইংরেজের বংশধর বলে পরিচিত।শুভ্র ভাইয়া একটা ফাজিলের হাড্ডি।যেকোনো আড্ডা মাতিয়ে রাখার একটা ক্ষমতা আছে ভাইয়ার।কিন্তু অপরদিকে অভ্র ভাই।শুভ্র ভাইয়ার মতো না।তার গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের।হাইট মোটামুটি অতি লম্বাও না।আবার অস্বাভাবিক খাটো ও না। সব কিছু ঠিক আছে তবে সমস্যা একটাই অতিরিক্ত রাগি একটা মানুষ।রাগ হলে তিনি কি করেন তা নিজেও জানেন না।শুভ্র ভাইয়ার কথা শুনে আমি নির্বাক,

“মেঘা কি হয়েছে ওবাড়িতে রে?অভ্র এসে দরাম করে দরজা লাগিয়ে দিলো কেনো?সত্যি করে বল তো কি করেছিস তুই?কারন তুই একমাত্র ব্যাক্তি যে সবসময় অভ্রের মেজাজ গরম হওয়ার কারন।”

ওনার কথা শুনে আমি খানিক ঝাঁঝালো ভাবেই শুভ্র ভাইয়াকে বললাম,

“আমার আর কাজ নেই আপনার ভাইকে রাগানো ছাড়া তাই না?আর আপনার ভাই তো একটা একটা জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি। যে যেখানে সেখানে যখন তখন ফেটে পড়ে।যত্তসব। এইসব আজাইরা পেচাল পাড়তে ফোন করেছো?”

“আমার ভাই আগ্নেয়গিরি মানলাম।তাহলে তুই যে তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস তার বেলা?”

“সেটা আমার দোষ নাকি?তোমার ভাইয়ের দোষ।সে যদি এভাবে নিজেকে উপস্থাপন না করতো তাহলে আমি তো আর তার প্রেমে পড়তাম না।তাই না।সো এটা প্রমানিয় যে সব দোষ তোমার ভাইয়ের।”

বলে লজ্জা পেয়ে ফোন কেটে দিলাম।আমার সমস্যা একটা কখন যে শুভ্র ভাইয়াকে আপনি আর কখন তুমি বলি নিজেই বুঝতে পারি না।শুভ্র ভাইয়ার সাথে আনার সম্পর্ক বেশ ভালো।একদম নিজের ভাই বোনের তো।নিজের ভাই নেই বলে শুভ্র ভাইয়াকে নিজের ভাইয়ের মতো দেখি কিন্তু অভ্র ভাইয়াকে কিভাবে যে ভালোবেসে ফেলেছি তা আমি ভেবেও পাই না। অভ্র ভাইয়া মানুষটা কিন্তু খারাপ না।

_________________
ক্লাসে অতিরিক্ত কথা বলার অপরাধে ক্লাসের বাহিরে অবস্থান করছি আমি আর নিশা।যদিও নিশার দোষ নেই।আমিই নিশার সাথে বকবক করছিলাম কিন্তু শাস্তি ভোগ দুজনকেই একসাথে করতে হচ্ছে।তবে এটা নিয়ে আমাদের দুজনের মাঝে কোনোরকম অনুতাপ নেই।বরং ক্লাসের বাহিরে দাঁড়িয়ে আমরা দুজন হাসছিলাম।

“মানুষ কতটা নির্লজ্জ হলে এভাবে ক্লাস থেকে বের করে দিলে হাসতে পারে আমার জানা নেই।মেঘ সত্যি।আজই আমি ফুপিকে ফোন করে জানিয়ে দিবো দাড়া।”

অভ্র ভাইয়ার আওয়াজ শুনে আমার হাসি গায়েব হয়ে গেলো।চোখ বড়বড় করে পিছনে তাকিয়ে দেখি তিনি দুই হাত বুকের কাছে বেধে আমার দিকে দৃষ্টি তাক করে দাঁড়িয়ে আছে।ওনাকে দেখে আমার হার্টবিট নেড়ে গেলো কিন্তু সেটা মুগ্ধতায় নয় ভয়ে।বাসায় যদি একবার জানাজানি হয়ে যায় যে আমাকে ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছিলো তাহলে মা আমাকে আস্ত রাখবে না।ছোট থেকেই মা পড়াশোনার ব্যাপারে বেশ কড়া।আমাকে ভয় ভয় নিয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে অভ্র ভাইয়া বললেন,

” একি মেঘ তুই ও ভয় পাস।আমার তো জানা ছিলো না। তোর মতো লেডি গুন্ডিও ভয় পায় ভাবা যায়।”

অভ্র ভাইয়ার কথায় বেশ রাগ লাগলো।কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিলে শান্তি লাগতো।কিন্তু আম্মুকে যদি বলে দেয় সেই ভয়ে কিছু বললাম না।এই মুহুর্তে তার জন্যে থাকা অনুভূতি গুলোও ভয়ে সেধিয়ে গেছে পেটের ভিতর।আমাকে চুপ থাকতে দেখে তিনি আবার বললেন,

“মেঘ তোকে কি বোবা ধরলো?কথা বেরোচ্ছে না কেনো যেন তোর মুখ থেকে।”

“অভ্র ভাই আপনি?”

“আমি তো সেই কখন থেকে তোর সামনে দাড়িয়ে আছি।তুই কি মাত্র আমাকে খেয়াল করলি মেঘ।”

ওনার মুখে মেঘ কথাটা শুনে অনার প্রতি থাকা অনুভূতি সমুহ মাথাচারা দিয়ে দিলো।আমার নাম মেঘা।সবাই মেঘা বলেই ডাকে।কিন্তু অভ্র ভাইয়া আর আর বাবা আমাকে মেঘ বলে ডাকে।শুনতে আমার বেশ লাগে।

“না আসলে হয়েছে কি অভ্র ভাই।আমি নিশার সাথে কথা বলছিলাম তখন স্যার ক্লাসে আসে আমি সেটা খেয়াল করিনি।স্যারের চোখে পড়ে যাই।আর এই ফিরোজ স্যার যে আমাকে দুই চোখে সহ্য করতে পারে না সেটা তো সবাই জানে তাই সামান্য অপরাধে এতো বড় শাস্তি।”

আমার কথা অভ্র ভাই বিশ্বাস করলেন কিনা জানি না।কিন্তু তিনি ভ্রু কুচকে তাকালেন আমার দিকে।আমি ইনোসেন্ট ফেন নিজে বললাম,

“সত্যি বলেছি অভ্র ভাই।বিশ্বাস না হলে এই যে নিশাকে জিজ্ঞেস করে দেখুন।”

বলে নিশার দিকে আঙুল তাক করে দেখালাম।অভ্র ভাই সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে আমার দিকেই দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছেন।

“তাহলে এভাবে হাসছিলি কেনো।আর স্যারকে রিকুয়েস্ট করতে পারতি।সরি বলতি।তা না।স্যার ক্লাস থেকে বের হয়ে যেতে বললো তুই ও বেরিয়ে এলি।আর ক্লাস করতে হবে না তাই ভেবে হাসাহাসি করছিলি।ইডিয়ট একটা।” বলে তিনি সেখান থেকে চলে গেলেন।আর আমি বোকার মতো তাকিয়ে আছি।আমি যা বলেছি সত্যিই বলেছি।এই ফিরোজ স্যার কেনো যেনো আমাকে দুই চোখে সহ্য করতে পারেন না।আমি বুঝি না।সেই কলেজের প্রথম দিন থেকেই উনি আমাকে সামান্য ভুলেও ক্ষমা করেন না।

#তুমিময়_অনুভূতি
#আয়েশা_ইসলাম
সুচনা পর্ব

(চলবে)

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here