তুমিময় অনুভূতি পর্ব -১৭+১৮+১৯+২০

#তুমিময়_অনুভূতি
#আয়েশা_ইসলাম
পর্বঃ১৭+18+19+20

শরৎকাল শেষ।শীতের আমেজ ম ম করছে বাতাসে।ভোর বেলায় হালকা কুয়াশায় ধোয়ার মতো আবরণ তৈরি করে।দূরের শিউলি ফুল গাছে এখনো অনেক ফুল ফুটে আছে।কিন্তু কুয়াশার জন্যে তা দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না।ঠিক আমার জীবনের মতো।সবটা ধোয়াশা হয়ে আছে।অভ্র ভাইয়ের সাথে আজ একসপ্তাহ হয়ে গেছে কোনো যোগাযোগ করতে পারছি না।শুভ্র ভাইয়ের থেকেও কোনো খবর পাই নি।শুধু শুনেছি যে উনি নাকি কোনো প্রয়োজনে ঢাকা গিয়েছেন।কিন্তু ওনার কি উচিত ছিলো না একটা বার ফোন করে আমার সাথে কথা বলা।এই একসপ্তাহ আমার নির্ঘুম কেটে গেছে।ঠিক মতো ঘুম খাওয়া কিছুই করতে পারছি না।অভ্র ভাই অন্য কাউকে ভালোবাসে এটা ভাবতেই আমার পৃথিবী উলোটপালোট হয়ে যাচ্ছে।আচ্ছা এমন তো নয় অভ্র ভাই ওনার প্রেমিকার কাছে গিয়েছেন?এসব ভেবে ভেবে আমার অবস্থা দিনকে দিন করুন থেকে করুনতম পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।

আমি কোনো সম্মতি না জানালেও বাবা আমার বিয়ের কথা পাকা করে ফেলেছেন প্রায় সেটা বাবা আর ফিরোজ স্যারের কথা শুনেই আমি বুঝতে পারলাম।কিন্তু আমার কিছু করার নেই।কার আশায় আমি বাবাকে কষ্ট দিবো।যার জীবনে আমার কোনো দাম নেই।হাজারের বেশি বার ফোন করা হয়ে গিয়েছে অভ্র ভাইয়ের ফোনে। কিন্তু কোনো লাভ হয় নি।কিন্তু এদিকে মন ও মানছে না।অবশেষে মনের কথাকেই প্রশ্রয় দিয়ে বাবার কাচজে গেলাম ক্ষীণ আশা নিয়ে যে বাবা যেহেতু বলেছে আমি মত না দিলে বাবা বিয়ের কথা এগোবে না।

“বাবা আমার কিছু বলার ছিলো।”

“হ্যাঁ বল।”

“বাবা আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।”

আমার কথা শুনে বাবা যেনো আকাশ থেকে পড়লেন।বাবার খুশি মুখের আদল বদলে মুহুর্তেই রাগী হয়ে গেলো।চোখ মুখ শক্ত করে একটা থাপ্পর লাগিয়ে দিলেন আমার গালে।ছলছল চোখে গালে হাত দিয়ে বাবার দিকে তাকালাম।ব্যাথা পাচ্ছি না আমি।কিন্তু বাবার করা কাজে আজ খুব কষ্ট পেয়েছি।আমার কাজে আঘাত পেয়েছে বাবা সেটা আমি জানি।কিন্তু তাই বলে মারবে বাবা আমাকে।

“তোমাকে কি এই কারনে লেখাপড়া শিখিয়েছি মেঘা?এই কারনে তোমাকে এতো বড় করেছি?যাতে তুমি আমার সম্মান নিয়ে খেলতে পারো।আমি তোমার বিয়ে ফিরোজের ছেলে রাফসানের সাথে আজই পাকা করবো।যাকে ভালোবাসো তাকে আজ এই মুহুর্তেই ভুলে যাও।আগামী সপ্তাহে ঠিক করে আসবো তোমাদের বিয়ে।”

বলে বাবা গটগট করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ ও দিলেন না।এদিকে বাবার চিৎকার শুনে মা আর ভাইয়াও আমার রুমের সামনে চলে এসেছে।বাবা চলে যাওয়ার সাথে সাথে মা আর ভাইয়া আমার কাছে এলেন।

“কি বলছে এসব তোর বাবা মেঘা?কাকে ভালোবাসিস তুই?”

“মায়ের কথার উত্তর দেয়ার জন্যে মায়ের দিকে মাথা তুলে তাকালাম।কিন্তু মায়ের পিছনে দরজায় তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমি।কথা বের হচ্ছে না আমার আর।সব কথা গলায় এসে আটকে যাচ্ছে।এ কাকে দেখছি আমি।অনাকাঙ্ক্ষিত সেই মুখটা দেখে আমার যেনো জীবন ফিরে এলো।উচ্ছ্বসিত হয়ে আমি বলে উঠলাম ” অভ্র ভাই”।

আমার কথা শুনে মা আর ভাইয়াও পিছন ফিরে অভ্র ভাইকে দেখে অবাক চোখে তাকালেন।

“অভ্র তুই?কোথায় থেকে বের হলি তুই বল তো?তোর চিন্তায় সবার কি অবস্থা সে খেয়াল কি তোর আছে।তোরা সবাই স্বার্থপর হয়ে গেছিস অভ্র।”

মায়ের কথা শুনে অভ্র ভাই গম্ভীর মুখে মাকে বললো,

“একটা কাজে গিয়েছিলাম ফুপি।ফোন হারিয়ে গিয়েছিলো তাই আর কাউকে জানাতে পারি নি।এরপর বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার রাস্তায় এক্সিডেন্ট করে হসপিটালে এডমিট ছিলাম ২ দিন।কাল রাতে হসপিটাল থেকে রিলিজ করে দিলে বাসে উঠে সোজা এখানে চলে এলাম।”

অভ্র ভাইয়ের কথা শুনে অভ্র ভাইয়ের দিকে পূর্ণদৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখলাম অভ্র ভাইয়ের হাতে ব্যান্ডেজ কপালে ওয়ানটাইম ব্যান্ডেজ লাগানো।মা অভ্র ভাইয়ার সাথে কথা বলে চলে গেলেন।আর যাওয়ার সময় অভ্র ভাইকে বলে গেলেন যে আমি কাকে ভালোবাসি তা শুনে নিতে।

“অভ্র তুই মেঘাকে ভালোবাসিস?এটা কবে থেকে?তুই তো আগে বলতি তুই একজনকে ভালোবাসিস।তাহলে মেঘা।”

“ভাই তোমাকে সেই মেয়ের নাম কি আমি কখনো আমি বলেছিলাম।বা ছবি কি দেখিয়েছিলাম যে এইটা সেই মেয়ে যাকে আমি ভালোবাসি?”

“না।”

“আকাশ ভাই আমি অনেক আগে থেকে মেঘ কে ভালোবাসি।আর তোমাকে যার কথা এতোদিন বলেছি সেটা মেঘ ভাইয়া।আমি সত্যি মেঘকে ভালোবাসি ভাইয়া”

“আচ্ছা অভ্র বুঝলাম কিন্তু এখন কি করবি।বাবা যে রাফসানের সাথে মেঘার বিয়ে ঠিক করতে গেছে। আর বাবা তো এক কথার মানুষ।বাবা কখনোই তোদের সম্পর্ক মেনে নিবে না অভ্র।”

ভাইয়া আর অভ্র ভাইয়ের কঠা শুনে বুঝতে পারলাম যে ভাইয়ার একটা ভুল ধারনা ছিলো যে অভ্র ভাই অন্য কাউকে ভালোবাসেন।এখন সেটা ক্লিয়ার। কিন্তু সব থেকে বড় সমস্যা তো এখন।আমি ভালোবাসি অভ্র ভাইকে।উনিও আমাকে ভালোবাসেন।কিন্তু এর মাঝে বাবা ওই রাফসান স্যারের সাথে বিয়ে ঠিক করছেন।কিন্তু আমি অভ্র ভাই ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারবো না।ভাইয়া অভ্র ভাইয়ের সাথে কথা বলে রুমে থেকে বেরিয়ে গেলে শুধু আমি আর অভ্র ভাই রইলাম রুমে।

“এই ইডিয়ট খুব বড় ঝামেলা পাকিয়ে ফেলেছিস এখন কি হবে হ্যা?তুই বিয়ে করে ফেল ওই কি যেনো রাফসান টাফসান তাকে।এরপর সংসার কর তার সাথে।”

“কি করতাম আমি আপনি তো ফোন ধরছিলেন না। অনেক ভেবেছি।এরপর বাবাকে বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।একদম আমাকে দোষ দিবেন না আপনি।আপনাকে তক আমার এখন মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে অভ্র ভাই।আপনি জানেন।আপনি অন্য কাউকে ভালোবাসেন শোনার পর থেকে এই একটা সপ্তাহ আমার কিভাবে কেটেছে সেই হিসাব আপনার আছে।আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি আপনি জানেন?”

“জেনে কি করবো।সব ঠিক ছিলো।না তুই এসব ফুপাকে বলতে যেতি আর না এসব ঘটতো এখন এই কয়েকদিনে কি করবো আমি বলতো গর্ধব একটা।”

রেগে গিয়ে অভ্র ভাইয়ের যে হাতে চোট পেয়েছেন সেখানে জোরে মারলাম একটা।আর উনি ব্যাথায় আর্তচিৎকার দিলেন।যা দেখে তাড়াতাড়ি সরে দাড়ালাম আর ভয়ার্ত চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

“লেগেছে অভ্র ভাই।”

কিন্তু উনি আনাকে উত্তর না দিয়ে। আমাকে এসে জড়িয়ে ধরলেন নিজের সাথে শক্ত করে।এতো শক্ত করে ধরেছেন যে মনে হচ্ছে আমি কোথাও চলে যাচ্ছি।

“মেঘ তুই চিন্তা করিস না।কি কএএ ফেলেছিস নিজের অবস্থা দেখেছিস আয়নায়।আমি এসেছি তো এখন সব ঠিক করে দিবো আমি।তোকে একদম স্ট্রেস নিতে হবে না।”

বলে উনি আমার কপালে চুমু দিয়ে চলে গেলেন।

অভ্র ভাইকে ভালোবেসে আমি কোনো ভুল করি নি কোনো।কারন উনি একমাত্র আমাকেই ভালোবাসেন।কি করে আমি ভাবলাম যে উনি অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারেন এটা ভেবেই লজ্জায় নাক কেটে যেতে লাগলো আমার।

এদিকে বাবা সন্ধ্যায় বাসায় এসে জানালেন।নেক্সট শুক্রবার মানে আর ৫ দিন পর বাবা আমার আমার বিয়ে ঠিক করে এসেছেন।ভাইয়া বাবাকে এতো করে বোঝালেন যে ছেলেটা কে সেটা শুনে নিয়ে ডিসিশন নিতে কিন্তু বাবা এককথায় বলে দিলেন যে উনি সেই ছেলের নামটাও শুনতে চান না।অবশেষে ভাইয়াও হাল ছেড়ে দিয়ে আমার রুমে এসে বললেন,

“বাবা কোনোদিন ও এই সম্পর্ক মেনে নিবেন না।আমি বাবাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু বাবা আমার কথা শুনতে নারাজ।এখন বাকিটা কি করবি দেখ।আমি জানি অভ্র তোকে সত্যি খুব ভালোবাসে।আর আমি জানি ভালোবাসা হারানোর কষ্ট কতটা।তাই আমি চেষ্টা করবো তোকে আর অভ্রকে এক করার।”

বলে ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেলো।ভাইয়ার এই একটা জিনিস আমাকে বুঝিয়ে দেয় যে ভাইয়া আমাকে কতটা ভালোবাসে। যখনি আমার মন খারাপ থাকে ভাইয়া আমার মাথায় আদুরে ভাবে হাত বুলিয়ে দিবেই।সত্যি ভাইয়াকে আমার ভাই হিসেবে পেয়ে আমি ধন্য।ভালোবাসি ভাইয়া তোমাকে অনেক ভালোবাসি আমি।

(চলবে)
(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

#তুমিময়_অনুভূতি
#আয়েশা_ইসলাম

পর্বঃ১৮

গত ৩ দিন যাবত নানা ভাবে বাবাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছে ভাইয়া।কিন্তু বাবা সেটা আমলে নেয় নি।বাবার এক কথা আমার বিয়ে ওই রাফসানের সাথেই দিবে।কাল গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা।এদিকে আমি টেনশনে মরে যাচ্ছি। অভ্র ভাই ও আমার সাথে তেমন একটা কথা বলছে না।কি যে চলছে ওনার মাথায় সেটা আমার ধারনার বাহিরে।শুধু তার একটাই কথা “ধৈর্য ধরো মেঘ।তোমাকে আমি অন্য কারো হতে দিবো না।এটা মনে রাখবা”।বাবাও আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে।বাসায় বিয়ের তোরজোড় চলছে।কিন্তু এসব আমার একদম ভালো লাগছে না।যেখানে মনে শান্তি নেই সেখানে কোনো কিছু ভালো লাগে না।এই মানসিক অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে সকালে উঠে চুপিচুপি কলেজে চলে গেলাম।সাথে সব বন্ধুদের বললাম কলেজে আসতে।কলেজে এসে রাফসান স্যারের সাথে দেখা।আমাকে দেখে যেনো উনি একটু অবাক হলেন।কিছু বলতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমি তার আগেই বললাম,

“আসসালামু আলাইকুম, স্যার।”

“ওয়ালাইকুম আসসালাম।তুমি কলেজে কেনো মেঘা?”

“কলেজে আসা কি আমার জন্যে নিষেধ নাকি?”

“না তা না। তোমার তো,,”

স্যারের কথা শেষ করতে দিলাম না।তার আগেই আমি বললাম,

“আচ্ছা স্যার আমি আসি আমার বন্ধুরা অপেক্ষা করছে আমার জন্যে।ভালো থাকবেন।”

বলে আমি তাড়াতাড়ি কেটে পড়লাম ওখান থেকে। কারন এখানে বেশিক্ষণ থাকলে এই রাফসান স্যার বিয়ের কথা উঠাবেন।এরপর না জানি আমি কি বলতে কি বলে দেই।আমার জন্যে যদি অভ্র ভাই আর ভাইয়ার প্ল্যান নষ্ট হয়ে যায়।এইবার আমি ভাইয়া আর অভ্র ভাইয়ের উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখছি।যে ওনারা কিছু একটা করবেন।আর যা করবেন তা আমাদের ভালোর জন্যেই করবেন।তবে একটা জিনিসে খুব বিরক্ত হচ্ছি যে বাসায় বিয়ে কলেজে এই রাফসান স্যার।এরা আমাকে শান্তি দিচ্ছে না।এদের থেকে নিস্তার পাবো কি করে আমি?অসহ্য লাগছে আমার সব কিছু।

“কি রে হবু বরকে এতো মিস করছিলি যে বিয়ের আগের দিন কলেজে এসেছিস।আবার এসেই দেখা করছিস।বাহ বাহ বাহ খুব ভালো এতো প্রেম।আহ প্রেম দেখে তো আমার কচুগাছে ফাঁস দিতে ইচ্ছে করছে।”

নাফিসের কথা শুনে রাগী চোখে তাকালাম ওর দিকে।
(কারনবশত রাব্বি নামটাকে নাফিস দেয়া হলো।১৪ পর্বে আমি মেঘার বন্ধুর নাম রাব্বি দিয়েছিলাম।)

“দেখ নাফিস এমনিতেই কিন্তু আমার মন ভালো নেই।আর আজাইরা পেচাল পারিস না।পারলে ভালো কোনো বুদ্ধি দে যাতে এই বিয়েটা ভেস্তে দিতে পারি।”

“দোস্ত তুই তো সত্যি অভ্র ভাইকে ভালোবাসিস।তাহলে এই রাফসান স্যারকে বিয়ের জন্যে রাজি হইছিস কেন বল তো।”

“আমি রাজি সেটা কে বললো তোদের।বাবা শুধু শুনেছে আমি একটা ছেলেকে ভালোবাসি।কে সেটা না শুনেই এইসব ডিসিশন নিয়ে নিয়েছে।সবাই এতো বোঝাতে চেষ্টা করছে কিন্তু বাবা শুনতে নারাজ।এখন আমার সাথে কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছে।”

“দোস্ত তোর বাপ ভিলেনের চরিত্রে কেন অভিনয় করছেন বল তো। তোর বাপ তো এমন ছিলো না।আংকেলকে তো আমরা বেশ ভালোই ভাবতাম।কি সুন্দর ঠান্ডা মাথায় কথা বলেন উনি।কিন্তু এখন তো পূরাই উল্টো ক্যারেক্টার প্লে করতেছে।”

“জানি না।আসলেই বাবার এরকম রুপ সম্পর্কে আমিও জানতান না।মেনে নিতে পারছি না বাবাকে এভাবে।খুব খারাপ লাগছে রে বাবাকে এভাবে দেখে।”

মন খারাপ করে কথাটা বলে মাথা নিচু করে ফেললাম।আমাকে মন খারাপ করতে দেখে নিশা আর মিরা এগিয়ে এসে আমার কাধে হাত রাখে সান্ত্বনা দিতে লাগলো,

“আচ্ছা বাদ দে।যা হবে ভালোর জন্যেই হবে।একদম এসব নিয়ে চিন্তা করবি না।অভ্র ভাই দেখবি ঠিক কিছু না কিছু করবে।”

“হুম সেই ভরসায় বসে আছি।তবে খুব টেনশন হচ্ছে রে।”

“আরে বাদ দে এতো টেনশন নেয়া।অভ্র ভাই কিছু না কিছু ঠিক করবেন।এসব বাদ দে তো আচ্ছা চল এখন আজ ঘুরবো আমরা ক্লাস করবো না।”

বলে ইফতি আমার হাত টেনে ধরে কলেজের বাহিরে গেলো।সাথে বাকিরাও।এরপর বাকি সময়টা সবাই মিলে ঘুরাঘুরি করে কাটিয়ে বাসায় ফিরলাম।মা বাসায় ঢুকতেই বকাবকি করা শুরু করলো।কিন্তু আমাই সেদিকে কান না দিয়ে সোজা রুমে চলে গেলাম।অভ্র ভাই কলেজে থাকা অবস্থায় ফোন করেছিলেন একবার।বাহিরে আছি শুনে বলেছিলেন বাসায় এসে যেনো ওনাকে ফোন করি।তাই ফ্রেশ হয়ে ফোন করলাম ওনাকে।

“আসসালামু আলাইকুম অভ্র ভাই।”

“ওয়ালাইকুম আসসালাম।বাসায় ফিরেছিস?”

“হুম ফিরেছি।তখন কি যেনো বলতে চেয়েছিলেন।বললেন যে বাসায় যেয়ে ফোন দিতে।”

“হ্যাঁ শোন আমি ফোন দিলে আকাশ ভাইয়ের সাথে আসবি সন্ধ্যায়।”

“আচ্ছা কিন্তু কেনো?”

“আমার উপর ভরসা আছে মেঘ?”

“আছে তো।”

“তাহলে আর একটা প্রশ্ন ও করবি না।এখন খেয়ে রেস্ট নে।আর পারলে ঘুম দে একটা।কোনো টেনশন নিবি না।”

বলে খট করে ফোন কেটে দিলেন অভ্র ভাই।আর আমি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সন্ধ্যায় অভ্র ভাই ফোন করে বললো রেডি হতে।আবার ভাইয়াও আমার রুমে এসে আমাকে রেডি হতে বললো।আমিও ভদ্র মেয়ের মতো রেডি হয়ে ভাইয়ার সাথে চলে গেলাম।অভ্র ভাইদের দেখা যাচ্ছে। বাইক এসে থামলো অভ্র ভাইয়ের সামনে।শুভ্র ভাই,মিরাজ,নাফিস ও আছে এখানে।সবাইকে দেখে বেশ অবাক হলাম আমি।

“সবাই এখানে? কিছু হয়েছে?”

আমার কথা শুনে ভাইয়া হেসে বললো,

“হয় নি এখনো।কিন্তু হবে।পিচ্চি তোর বিয়ে অভ্রের সাথে।”

আমি ভাইয়ার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।কি বলছে এসব ভাইয়া।আমার বিয়ে।

“ভাইয়া বাবা,,”

“চিন্তা করিস না পিচ্চি। বাবাকে আমি সামলে নিবো।আমার কাছে সবার আগে আমার বোনের সুখ।বাক৮ সব চুলোয় যাক।আই ডোন্ট কেয়ার।”

বলে ভাইয়া আমাদের কাজি অফিসের দিকে নিয়ে গেলো।সেখানে সব কিছু ঠিকঠাক করা ছিলো।আমরা যেতেই কাজি আমাদের বিয়ে পড়াতে শুরু করলেন।প্রথমে অভ্র ভাইকে কবুল বলতে বললে উনি কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে কবুল বলে দিলেন।এরপর আমাকে বলতে বললে আমি ভাইয়ার দিকে তাকাকাম।ভাইয়া নিশব্দে আমাকে সম্মতি জানালে আমিও হাসি মুখে কবুল বলে দিলাম।কিন্তু বার বার আমার চোখের সামনে বাবা আর মায়ের মুখটা ভেসে আসছিলো।তৃতীয়বার কবুল বলার আগে আমার গলা ধরে আসছিলো।আটকে যাচ্ছিলো কথা।চোখ বেয়ে পড়তে লাগলো অশ্রু কণা।কিন্তু আমার কিছু করার ছিলো না যে অভ্র ভাইয়ে ছাড়া অন্য কাউকে নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিলো না।কিন্তু বাবাকে কষ্ট দিয়েছি এটাও মেনে নিতে পারছি না।কিন্তু এর থেকেও বড় ধাক্কা খেলাম ভাইয়ার কাজি অফিস থেকে বেরিয়ে।

“অভ্র বাসের টিকেট কেটে রেখেছি।তুই গিয়ে কালেক্ট করে নিস।৯ টায় বাস।”

“ভাইয়া কি বলছো এসব?”

“তোরা এখন ঢাকা চলে যাবি।পিচ্চি বাবা মেনে নিবে না তোদের সম্পর্ক।আরো যদি শোনে বিয়ে করেছিস তাহলে বাবা তোকে মেরে ফেলবে।বাবাকে তো চিনিস না তুই।প্লিজ বোন না করিস না। চলে যা তুই।”

“কিন্তু ভাইয়া…. ”

“চলে যা পিচ্চি।আমি তোর ভালো চাই তোর। তোর সুখ আমার ফার্স্ট প্রায়োরিটি। ”

বলে ভাইয়া চিলে গেলো আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে।এদিকে অভ্র ভাই আমাকে বললেন,

“মেঘ তুমি কি যাবে নাকি তোমাকে তোমার বাবার কাছে দিয়ে আসবো।”

আমি অশ্রুসিক্ত নয়নে অভ্র ভাইয়ের দিকে তাকালাম। শুভ্র ভাই ও আমকে বললেন যে ওনারা সব সামলে নেবেন তাই আমিও আর অমত পোষন না করে চলে গেলাম অভ্র ভাইয়ের সাথে নিজেদের নতুন জীবনের উদ্দেশ্যে।

(চলবে)

(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রি-চেক দেয়া হয়নি।)

#তুমিময়_অনুভূতি
#আয়েশা_ইসলাম
পর্বঃ১৯

বাসে অভ্র ভাইয়ের কাধে মাথা দিয়ে বসে আছি।বসে আছি বললে ভুল হবে কান্না করছি।আমার চোখের পানিতে অভ্র ভাইয়ের কাধের শার্ট ভিজে গেছে।কান্নার আওয়াজ হচ্ছে না।কিন্তু বার বার হেচকি উঠছে আমার।অভ্র ভাই আমাকে কিছু বলছে না।উনি শুধু আমাকে আগলে নিচ্ছেন আর চোখের পানি মুছে দিচ্ছে।তবে আমার মাঝে একটা অপরাধবোধ কাজ করছে কেনো আমি এটা করতে গেলাম।আমার উচিত ছিলো ভাইয়া আর অভ্র ভাইয়ের বিরুদ্ধে গিয়ে এটা বলা যে না অভ্র ভাই এখন যেহেতু আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে সেহেতু আমাদের বাসায় গিয়ে সকলের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। তাহলে হয়তো সবাই রাগ করতো কিন্তু বেলাশেষে তারা ঠিকই বুকে টেনে নিতো।কিন্তু এখন আর সেটা সম্ভব না কারন আমরা ঢাকায় প্রায় চলে এসেছি।সারা রাস্তা প্রায় কান্না করার ফলে মাথাটা ধরে আছে।এখন কান্না থামানোর পুরো চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না।বার বার হেচকি উঠেই যাচ্ছে।

“মেঘ এভাবে কাদছো কেনো?দেখো তোমার কান্না দেখে আমার নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।প্লিজ কান্না থামাও।”

অভ্র ভাইয়ের কথা শুনে আমার খুব খারাপ লাগলো।ইস আমার জন্যে যে এই মানুষটা কষ্ট পাচ্ছে সেটা আমি খেয়ালই করি নি

“সরি।আসলে….”

“থাক তোমায় আর সরি বলতে হবে না।এখন কান্না থামাও।তা না হলে মার লাগাবো একদম।কান্না করলে তোমাকে একদম বাজে লাগে মেঘ।”

ওনার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালাম।এমনেই কান্না করছি আমি।আর উনি আমাকে নাকি মার লাগাবেন কান্না করলে।কি আজব মানুষ উনি।আমি অভিমানে মাথাটা ওনার কাধ থেকে তুলে নিলে উনি হেসে আবার আমার মাথাটা ওনার কাধে রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।

নতুন শহরে পা রাখতেই আমার মাঝে একরাশ বিরক্তি এসে ভর করলো।এই শহর বড্ড ব্যাস্ততম। এই শহরে আন্তরিকতা আছে কিন্তু এর থেকে বেশি আছে কোলাহল।যানবাহনের ভীড়।ঢাকায় এই প্রথম এসেছি আমি।এর আগে বেশ কয়েকবার আসার কথা থাকলেও আসা হয়ে ওঠে নি আর।কিন্তু এইবার ফাইনালি এসেই গেলাম।বাস স্ট্যান্ড থেকে আমরা একটা রিক্সা নিয়ে চললাম হোটেল এর দিকে।সাথে ব্যাগ জামা-কাপড় কিছু নেই আমার।আমার ফোনও অভ্র ভাই সুইচড অফ করে নিজের পকেটে রেখে দিয়েছেন।হাতে শুধু আমার সাইড ব্যাগটাই আছে।আর আছে ভাইয়ার দেয়া কিছু টাকা আর আমার টুকটাক কিছু জিনিস যা ব্যাগে সবসময় থাকে।তবে এই মাত্র আমি খেয়াল করলাম অভ্র ভাইয়ের কাছে দুটো ব্যাগ।একটা ট্রাভেল ব্যাগ।আরেকটা লাগেজ।তার মানে এটা ভাইয়াদের আগে থেকে প্ল্যান করা ছিলো যে আমরা পালাচ্ছি।

আমি মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারপাশ দেখায় ব্যস্ত।আমার শহরের সাথে এই শহরের কোনো তুলনা চলে না।দুই শহর দুই স্থানে পার্ফেক্ট।একটা বড় হোটেলের সামনে রিক্সা থামলে আমরা নেমে যাই অভ্র ভাই রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে আমার হাত ধরে ভিতরে নিয়ে প্রবেশ করলেন।রুমে চাবি নিয়ে আমার কাছে এসে আবার আমার হাত ধরে নিয়ে গেলেন আমাদের জন্যে বরাদ্দকৃত রুমে।

মোটামুটি বড়সড় একটা রুম।একটা বেড,আলমারি,ড্রেসিং,আর একটা সোফা রয়েছে শুধু।তবে সব থেকে বড় জিনিস এই রুমটার সাথে একটা বারান্দা আছে যা রুমের কাচের স্বচ্ছ দেয়াল দিয়ে পরিষ্কার দেখতে পারছি।আমি ঘুরে ঘুরে রুমটা দেখছি।

“ফ্রেশ হয়ে এসে রুম দেখো।এখানেই তো আছি আমরা তাই না।আগে ফ্রেশ হও মেঘ।”

অভ্র ভাইয়ের কথায় আমি রুম দেখা বন্ধ করে চুপ করে দাড়িয়ে গেলাম।আমি জামা কাপড় কিছুই নিয়ে আসি নি।এখন ফ্রেশ হয়ে কি পড়বো।এই কাপড় পড়ে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না।ঘামের গা গুলিয়ে যাচ্ছে আমার।আমি করুনভাবে তাকালাম অভ্র ভাইয়ের দিকে।আমাকে এভাবে তাকাতে দেখে উনি ভ্রু কুচকে তাকালেন আমার দিকে।

“দাঁড়িয়ে আছো কেনো?ফ্রেশ হয়ে এসো।”

“আমি তো জামা-কাপড় কিছুই আনি নি।ফ্রেশ হয়ে কি পড়বো।এই কাপড় পড়ে থাকা সম্ভব না আমার।”

আমার কথা শুনে উনি হালকা হাসলেন।এরপর বড় লাগেজটা খুলে আমার দিকে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিলেন।

“এটাতে তোমার জামা আছে এটা পড়ে এসো যাও।”

আমি আর কথা না বলে জামাটা নিয়ে চলে গেলাম ওয়াশরুমে।আমি ফ্রেশ হয়ে এলে অভ্র ভাই ঢুকলেন।খুব ক্লান্ত লাগছিলো।তাই আমি শুয়ে পড়লাম।বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুম এসে ভড় কারলো দুই চোখে।

অভ্র ভাইয়ের ডাকে চোখ মেলে তাকালাম।কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি সেটা মনেই নেই।

“মেঘ উঠে পড়ো।খাবে না?চলো খেয়ে এসে ঘুমিও কাল থেকে কিছুই খাও নি।”

“আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।আপনি খেয়ে আসুন অভ্র ভাই।”

“মেঘ জেদ করিস না অযথা।তুই না খেয়ে কি শরীর খারাপ করার ধান্দায় আছিস?কিন্তু মনে রেখিস সেটা আমি অভ্র হতে দিচ্ছি না এখন তুই আমার সাথে যাবি।তা না হলে একটা মার ও মাটিতে পড়বে না।সব তোর পিঠে পড়বে।”

অভ্র ভাই রেগে গেছেন।সেটা তার মুখ দেখে বুঝতে না পারলেও কথার দ্বারা বুঝেছি।কাল থেকে কি সুন্দর তুমি তুমি করে কথা বলছেন।আর এখন তুই তুকারি করছেন।তাই আমি প্রতিউত্তর না করে ওড়না মাথায় দিয়ে চললাম ওনার সাথে।খেয়ে এসে রুমে প্রবেশ করতেই দেখলাম অভ্র ভাই বাহিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

“কোথাও কি যাচ্ছেন আপনি?”

“হুম।বাসা খুজতে যাচ্ছি।এভাবে হোটেলে তো আর থাকতে পারবো না সারাজীবন। ”

“মানে?সারারাত জার্নি করে এসেছেন।এখিন রেস্ট না করে বাহিরে যাচ্ছেন।রেস্ট নিবেন আগে তারপর যাবেন। আর আপনি একা কেনো যাবেন?আমি একা এখানে থাকতে পারবো না।আপনার সাথে আমি ও যাবো আপনি যেখানেই যান না কেনো?”

“তোমার রেস্ট প্রয়োজন মেঘ।আমার জার্নির অভ্যাস আছে তোমার নেই।তুমি অসুস্থ হয়ে যাবা।”

“না অভ্র ভাই প্লিজ।আপনি আমাকে একা ফেলে যাবেন না।আমি একা থাকতে পারবো না।”

আমার কথা শুনে অভ্র ভাই আর কিছু বললেন না।উনি শার্ট খুলে রেখে বিছানায় এসে বসলেন।আমি বিছানায় বসে ছিলাম।আমাকে নিয়ে শুয়ে পড়লেন।আর বললেন,

“এসেছি তো আমি।এইবার ঘুমাও।আমি ও ঘুমাচ্ছি।বিকেলে একসাথে আমরা বেরোবো। ”

বলে আমার কপালে চুমু একে দিয়ে অভ্র ভাই চোখ বন্ধ করে ফেললেন।আমার চোখেও ঘুম এসে ভড় করেছিলো অনেক আগেই তাই আমি ও ঘুমিয়ে পড়লাম।

ঘুম ভেঙলো অভ্র ভাইয়ের ডাকে।উনাকে বেশ ফ্রেশ লাগছে।ঘুমানোর আগে ওনার চেহারায় ক্লান্তিভভাব লক্ষ্য করেছিলাম।আমাকে চোখ মেলতে দেখে অভ্র ভাই এক অমায়িক হাসি দিলেন।

“উঠে পড়ুন মিসেস। আপনি নাকি আমার সাথে বেরোবেন।তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিন।আর কত ঘুমাবেন।”

উনার কথার প্রতিউত্তরে আমিও হেসে দিয়ে উঠে পড়লাম।ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম ওনার সাথে। সারা বিকেল বেশ কয়েকটা বাসা দেখলাম।অবশেষে শেষ সন্ধ্যায় একটা বাসা পছন্দ করে ভাড়া ঠিক করলাম।দুই রুমের বাসা।দুই জিন মানুষের জন্যে পার্ফেক্ট বাসা।দুইটা রুম কিচেন ড্রয়িং। মোটামুটি ভালোই বাসাটা।আর বাড়ি ওয়ালার ব্যাবহার ও বেশ অময়িক।অভ্র ভাই বাড়িওয়ালাকে বললেন যে আমরা কাল থেকে উঠবো।বাড়িওয়ালা ও বললেন যে যত তাড়াতাড়ি উঠবো তত ভালো।এরপর সেখান থেকে বেরিয়ে কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করে একদম ডিনার করে ফিরলাম হোটেলে।

(চলবে)

#তুমিময়_অনুভূতি
#আয়েশা_ইসলাম
পর্বঃ২০

গভীর রাতে একটা স্বপ্ন দেখে আমার ঘুম ভেঙে গেলো।ঘুম ভাঙতেই আমি ভয়ে দরদর করে ঘামছি আর কাপছি।আমাকে এভাবে চমকে উঠতে দেখে অভ্র ভাইয়ের ও ঘুম ভেঙে গেছে।উনি জিজ্ঞেস করছেন কি হয়েছে কি হয়েছে কিন্তু আমি এই মুহুর্তে কোনো উত্তর দেয়ার অবস্থায় নেই।আমার হাত পা কাপছে শুধু ভয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না আমার কণ্ঠনালী হতে।অবশ হয়ে আসছে পুরো শরীর। কি দেখলাম এসব আমি।

“আমি আর অভ্র ভাই বিয়ে করে বাসায় গিয়েছি।আমাদের সাথে ভাইয়া আর শুভ্র ভাই ও ছিলেন।আপু দরজা খুলে আমাদের বিয়ের কথা শুনে আমাকে জোরে একটা থাপ্পর মেরে দিলো।আর চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিলো।এদিকে বাবা আর মা বেরিয়ে এসে সব শুনে বাবাও আমাকে থাপ্পর মেরে আমাকে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে বললো,সাথে এটাও বললো যে আজ থেকে আমি তাদের সন্তান নই।এদিকে মা আমকে আর অভ্র ভাইকে খুব ভালোবাসতেন।কিন্তু দুই ভালোবাসার মানুষের এরকম কাজ মা সহ্য করতে পারে নি।মা মাথা ঘুরে পড়ে যায়।সাথে সাথে মাকে হসপিটাল নিয়ে যাওয়া হলো কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।ডাক্তার মাকে মৃত বলে জানালেন।”

এটা শোনার পর আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারি নি।স্বপ্নেই কান্না করতে শুরু করেছি।আর বেশ ভয় পাওয়ায় ঘুম ও ভেঙে যায়।

“মেঘ কি হয়েছে?বলো আমাকে?এভাবে উঠলে কেনো।ভয়ের স্বপ্ন দেখেছো কিছু?মেঘ প্লিজ তাকাও আমার দিকে কি হয়েছে বলো আমাকে।এই মেঘ কথা বলছো না কেনো?”

অভ্র ভাই আমাকে নিজের বুকে মিশিয়ে বার বার কথা গুলো বলছেন কিন্তু আমি এখনো কোনো উত্তর দিতে পারছি না।অবশেষে আমার ভিতরের সব কথা কান্না হয়ে বেরিয়ে এলো।আমাকে কাদতে দেখে অভ্র ভাই ভয় পেয়ে গেছে হয়তো ওনার গলার আওয়াজে ভয় স্পষ্ট দেখতে পারছি আমি।

“মেঘ কি হয়েছে বলো প্লিজ।এমন করছো কেনো তুমি।”

অনেক কষ্টে মুখ দিয়ে শুধু একটা আওয়াজ বের হলো,

“অভ্র ভাই মা”

আমার কথা শুনে হয়তো উনি বুঝতে পারলেন যে আমি মাকে নিয়ে কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছি তাই উনি আর কিছু না বলে আমাকে শুধু বললেন,

“ফুপিকে নিয়ে খারাপ স্বপ্ন দেখেছো?”

আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম।ঠোঁট চেপে কান্না থামাতে চাইছি কিন্তু পারছি না।বরং আরো জোরে ভিতর থেকে কান্না বেরিয়ে আসছে।অভ্র ভাই আমাকে আর কিছু বলছেন না।শুধু বুকের সাথে মিশিয়ে রেখেছেন।বেশ কিছুক্ষন এভাবে থাকার পর আমার কান্নার বেগ অনেকটা কমে গেলো।আমার কান্না থামতে দেখে অভ্র ভাই এইবার আমাকে বললেন,

“এখন ঠিক আছো মেঘ?”

“হুম।অভ্র ভাই আমাকে মায়ের সাথে কথা বলিয়ে দিতে পারবেন প্লিজ।আর তা না প্রলে আমালে প্লিজ মায়ের একটা খোজ দিতে পারবেন। আমার বাসার সবার কথা মনে পড়ছে।মাকে নিয়ে খুব খারাপ স্বপ্ন দেখেছি।”

“আচ্ছা দেখি কাল কথা বলিয়ে দিতে পারি কি না।আর দুঃস্বপ্ন কাউকে বলতে হয় না।তবে দোয়া করো আল্লাহর কাছে যেনো যা দেখেছো এমন কিছু না ঘটে।চলো অজু করে এসে দুই রাকাআত নফল নামাজ পড়ে ঘুমাও।”

ওনার কথায় সম্মতি জানিয়ে আমি উঠে অজু করে নামাজ পড়ে নিলাম। আমার সাথে অভ্র ভাই ও নামাজ পড়লেন।এরপর আমাকে জড়িয়ে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে অভ্র ভাইয়ের পিছনে লাগলাম বাসার খবর নেয়ার জন্যে।কিন্তু ওনার কোনো রিয়েকশন দেখতে পারছি না।উনি আমাকে শুধু অপেক্ষা করতে বলছেন।

“কতক্ষণ অপেক্ষা করবো আরো?”

“বাহিরে যাবো তো আমরা তখন গিয়ে কথা বলিয়ে দিবো আকাশ ভাইয়ের সাথে।।”

“বাহিরে কেনো যাবো?আপনি বাসায় যাবেন না?”

“যাবো তো।কিন্তু এখন কিছু কেনাকাটা আছে সেগুলো করে বাসায় উঠতে হবে।”

“কিন্তু এতো টাকা কোথায় পাবেন। এসে থেকে তো অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে।”

“আসার সময় টাকা নিয়ে এসেছিলাম।আবার ব্যাংকে কিছু জমানো টাকা আছে।সেটা উঠাবো।শুভ্র ও নাকি আবার একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করে দিয়েছে। এগুলো হলেই প্রয়োজনীয় কেনাকাটা হয়ে যাবে মিসেস। আর একটা জব হয়েছে তাই পরে থেকে আর সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।”

“আমরা পালিয়ে এসে সবাইকে খুব ঝামেলায় ফেলে দিয়েছি তাই না অভ্র ভাই?”

আমার কথা শুনে উনার রিয়েকশন দেখে আমি কি করবো ভেবে পেলাম না। উনি রাগি চোখে তাকালেন আমার দিকে।এরপর চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললেন,

“হ্যাঁ বোন।ঠিক বলেছেন আমার আপনাকে এখানে নিয়ে আসা ভুল হয়ে গেছে।চলেন বোন আপনাকে আমি বাসায় দিয়ে আসি।তাহলে আর কেউ ঝামেলায় থাকবে না।আর আমার মাথাটাও অভ্র ভাই, অভ্র ভাই করে কেউ খারাপ করবে না।মানুষ নিজের বরকে ভাই ডাকে মেঘ? এখানে কারো সামনে বা বাড়িওয়ালার সামনে এভাবে ভাই ডাকলে সবাই উল্টো পালটা কিছু ভাববে।তখন আর এখানে সংসার করা লাগবে না।জেলের ভিতরে গিয়ে সংসার করবো।কেমন?”

ওনার কথার মানে বুঝতে পেরে আমি বেশ লজ্জা পেলাম।আসলেই তো নিজের বরকে মানুষ ভাই ডাকে?কিন্তু অভ্যাস তো এভাবে চেঞ্জ ও করা যায় না সহজে।কিন্তু আমাকে চেঞ্জ করতে হবে।

“সরি।আসলে অভ্যাস হয়ে গেছে তো তাই এসে যায়।”

“অভ্যাস চেঞ্জ করো মেঘ।বরকে এভাবে ভাই ডাকলে পরে মা ডাক শুনতে পারবে না।”

ওনার কথা শুনে বিষম খেলাম আমি।কি বলছেন উনি এসব। মুখে কিছু আটকায় না ওনার। কথা বাড়ানোর আগে আমি কেটে পড়লাম সেখান থেকে।ওয়াশরুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হয়ে এসে ওনার সাথে বেরিয়ে পড়লাম বাহিরে।

“আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।কেমন আছো?”

“ওয়ালাইকুম আসসালাম পিচ্চি।আমি ভালো আছি।তোরা কেমন আছিস?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া।বাসার সবাই কেমন আছে?বাবা,মা,বাকি সবাই।বাবা আমার উপর খুব রেগে আছে তাই না ভাইয়া?”

“সবাই ভালো আছে পিচ্চি।আর বাবা একটু রেগে আছে। কিন্তু কিছুদিন পর দেখবি বাবড় রাগ কমে গেলে তোকে নিজে ডেকে নিবে।”

“ভাইয়া তোমাদের সবাইকে খুব মিস করছি।”

“আমিও মিস করছি বোন।কিন্তু তোর ভালোর জন্যে এটা করতে আমি বাধ্য হয়েছি।”

এভাবে কিছুক্ষন ভাইয়ার সাথে কথা বলে অভ্র ভাইকে ফোন দিলাম উনি কথা বলে ফোনটা রেখে দিলেন।অবশেষে আজ একটু শান্তি লাগছে বাসায় সব ঠিক আছে এটা জেনে।কিন্তু একটা জিনিস শুনে আমার খুব কষ্ট লাগলো যে মাকে চাচি মানে নিরা আপুর মা বাজে ভাবে অপমান করেছে।যে মা তার মেয়েকে ভালো শিক্ষা দিতে পারে নি।তাই মেয়ে পালিয়ে গেছে।কিন্তু কি করার ছিলো আমার।আমি তো এই বিয়ে করতে চাই নি।সবসময় শুধু অভ্রকেই চেয়েছিলাম আমি।বাসায় কেউ আমাদের খোজার জন্যে পুলিশে কমপ্লেন করে নি।ভাইয়া আর শুভ্র ভাই সেটা করতে দেয় নি।

সারাদিন বাসার জন্যে কেনাকাটা করে বেশ ক্লান্ত আমি।ওনার ও একই অবস্থা।কিন্তু কিছু করার নেই।সব কিছু একটু একটু করে গুছিয়ে না নিলে হবে না।পড়ে বাকি কেনাকাটা করলে তখিন আরো ঝামেলা হয়ে যাবে।এদিকে আবার ২ দিন পর থেকে অভ্র ভাইয়ের অফিসে জয়েন।তাই বেশ ব্যাস্ততায় কাটছে দিন।সারাদিন কাজ করার পর রাতের বেলায় ক্লান্তি নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই অভ্র আমাকে উঠে বসালেন।আমি ভ্রু কুচকে তাকালে উনি ওনার বিশ্বজয়ী হাসি দিয়ে আমাকে বললেন,

“মাথা ধরেছে জানি তো।এসো মাথায় তেল মেসেজ করে দেই।দেখবে আরাম লাগবে।”

বলে আমার মাথায় তেল মেসেজ করতে লাগলো।আমিও চোখ বন্ধ করে আছি।আসলেই বেশ আরাম লাগছে।এই মানুষটা সত্যি অসাধারণ একজন মানুষ।সব দিকে খেয়াল ওনার।কিন্তু আমি ওনার ভালো খারাপের খেয়াল রাখতে পারছি না।ওনাকে দেখেই বোঝা যায় যে উনি কতটা ক্লান্ত।কিন্তু সেটা আমাকে বুঝতে না দিয়ে সবসময় আমার সাথে আমাকে হেল্প করে চলেছেন।

“আমি বউ হিসেবে একদম ভালো না।তাই না?”

আমার কথা শুনে উনি আমার মাথায় তেল দেয়া বন্ধ করে আমাকে ঘুরিয়ে তাকালেন ওনার দিকে।চোখে মুখে বিষ্ময় ওনার।হয়তো আমি এমন কিছু বলবো সেটা উনি কল্পনা করতে পারেন নি।

“কি বলছো এসব মেঘ?তুমি আমার বউ হিসেবে পার্ফেক্ট। তোমার স্থানে অন্য কেউ আমার কাম্য কখনো ছিলো না।আর না ভবিষ্যতে হবে।আমার সাথে শুধু তোমার নামই যায়।অভ্র-মেঘ, অভ্রের সাথে অন্য কারো নাম যায় না।”

আমার কথাটা উনি এতো সিরিয়াসলি নিবেন সেটা ভাবি নি।আমি বললাম কি আর উনি বুঝলো কি।এই লোকটা আমাকে এতো ভালোবাসে কেনো এটা বুঝে পাই না আমি।ওনার ভালোবাসার কাছে আমার ভালোবাসা ঠুনকো একদম।আচ্ছা এতো ভালোবাসা কি আমার প্রাপ্য?আমি কি আদৌও যোগ্য।এসব ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে অভ্রকে বললাম শুয়ে পড়তে।আর আমিও ওর বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম।

(চলবে)

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here