তুমিময় অনুভূতি পর্ব -১৪+১৫+১৬

#তুমিময়_অনুভূতি
#আয়েশা_ইসলাম
পর্বঃ১৪+15+16

প্রচন্ড গরমে জীবন অতিষ্ট হওয়ার যোগাড়।এতো গরম যে মনে হচ্ছে ক্লাসে কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।ফ্যানের বাতাসও যেনো শরীরে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে।একে তো গরমের জ্বালায় অতিষ্ট তার উপর এই রাফসান স্যার।যবে থেকে কলেজে এসেছে তিবে থেকে এই ব্যাক্তি আমার জীবনটাকে হেল করে দিয়েছে।তার প্রতিটা দিন আমাকে পড়া ধরতেই হবে।কিন্তু এদিকে আমি একটা দিনও পড়া দিতে পারি না।কারন রাফসান সাকিবকে দেখলেই ভয়ে আমি সব পড়া ভুলে যাই।আজও পড়া ধরেছে।কিন্তু আমি পড়া দিতে নি।তাই উনি আমাকে ক্লাসের সকলের সামনে কান ধরিয়েছেন।ওই ব্যাক্তির যে আমার সাথে কিসের শত্রুতা আমি বুঝি না।ক্লাসে তো আরো ৪০/৫০ জন আছে তাদের তো প্রতিদিন পড়া ধরে না।কলেজের মাঠে বসে এইসব নিয়ে আলোচনা করছি আমি আর নিশা। আমাদের আলোচনার মাঝে ইফতি,মিরা,রাব্বি আর মিয়াদ এলো।এরা চারজন ও আমাদের কিন্তু ডিপার্টমেন্ট তবে আমাদের আড্ডা চলে কলেজের মাঠে।রাব্বি এসে আমার মাথায় ঠুসি মেরে বললো,

“কি রে ক্ষেপি কি হয়েছে মন খারাপ কেনো?পেচার মতো মুখ করে আছিস কেনো?”

আমি উত্তর দেয়ার আগেই নিশা পাশ থেকে বললো,

“আর বলিস না রাব্বি রাফসান স্যার মেঘার জীবনটাকে তেজপাতা করে দিচ্ছে।”

বলে প্রথম দিনের ঘটনা সবাইকে বললো ও।এদিকে সব শুনে ওরা চরজন হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।যা দেখে এই মুহুর্তে আমার খুব বিরক্ত লাগছে।আমি রাব্বির পিঠে একটা কিল বসিয়ে দিলাম।

“খুব মজা লাগে তোদের না?আমার কষ্টে তোদের খুব মজা লাগে তাই না?মজা নিস তোরা সবাই।রাব্বি তোর কপালে বউ জুটবে না দেখে নিস।মিরা আজই তোকে ছ্যাকা দিয়ে ব্যাকা করে দিবে।ইফতি আর মিয়াদ বাবা আজীবন তোরা সিঙ্গেল এ মরবি।আমি এটা বলার সাথে সাথে মিয়াদ জোড়ালো প্রতিবাদ করলো।”

“এই দোয়া করিও না বৎস।এমনেই জীবনের ২১ বসন্ত সিঙ্গেল কাটিয়ে দিয়েছি।আর পারবো না।এটা আর সম্ভব না আর মেঘা।প্লিজ বইন এমন দোয়া দিস না।তোর পায়ে পড়ি।”

মিয়াদের কথায় একযোগে সবাই হেসে উঠলাম।এভাবেই একেকবার একেক জনের পিছনে লেগে আড্ডা দিলাম কিছুক্ষন।বাসায় যাওয়ার জন্যে কলেজ থেকে বেড়িয়ে রাস্তায় দাড়ালাম একটা গাছের নিচে।প্রচন্ড রোদের তাপ।যা সহ্যের বাহিরে।রিক্সা অটোর উদ্দেশ্যে এদিক ওদিক তাকাতেই রাস্তার অপর পাশে অভ্র ভাইকে দেখে নিমিষেই ক্লান্ত ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো।উনার একসাইড আমার দিকে।আমি ফোন নিয়ে কল লাগালাম উনাকে।ফোন হাতে নিয়ে ভ্রু কুচকে তাকালেন ফোনের দিকে।এরপর উনি মুচকি হেসে কল রিসিভ করলেন।আমি সালাম দিয়েই বললাম,

“অভ্র ভাই ডানে তাকান।”

আমার কথা শুনে ডান দিকে তাকাতেই উনি আমাকে দেখে “তুই দাড়া আমি আসছি” বলে ফোন কান থেকে নামিয়ে কেটে দিলেন।এরপর বাইক নিয়ে সোজা চলে এলেন আমার সামনে।

“বাসায় যাস নি এখনো?এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস?”

“অনেক্ষন অপেক্ষা করছি রিক্সার জন্যে।এই রোদে হেটে সামনে যেতেও ইচ্ছে করছে না।সামনে গেলেই তো রিক্সা পাওয়া যাবে।”

“হয়েছে আর বলতে হবে না কিছু আপনাকে।উঠে আসেন তাড়াতাড়ি।”

উনি বলতে দেরি নেই আমি লাফিয়ে উঠে পড়লাম ওনার বাইকের পিছনে।

“পাগলি এভাবে উঠলে ব্যাথা পাবি তো।ভালো ভাবে উঠ ইডিয়ট ।”

“আরে সমস্যা নেই।আপনি আছেন তো।আপনি তো আমার হিরো।তাই আপনি এসে আমাকে বাচাবেন পুরাই ফিল্মি স্টাইলে।আমি স্লো-মোশনে পড়বো।আর আপনি বাইক সাইড করে আমাকে ধরবেন।”

বলে আমি হেসে দিলাম।আমার সাথে অভ্র ভাই ও হাসলেন।এরপর বাইক স্টার্ট করলেন।

এই রৌদ্রময় দুপুরে প্রিয় মানুষটার সাথে বাইকে যেতে ভালোই লাগছে।তবে বাসা থেকে কলেজে ১৫/২০ মিনিটের দুরত্বে তাই তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাবো বাসায় ভেবেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো।তাই একটা বুদ্ধি বের করলাম।

“অভ্র ভাই আমার না একটু মার্কেটে যেতে হবে।কিছু কেনা কাটা করতে হবে।”

“তো কি হয়েছে।পরে যাবি।এখন সোজা বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হবি।রোদে যে লাল টমেটো হয়ে আছিস সে খেয়াল কি আছে?এখন মার্কেটে গেলে দেখা যাবে মাথা ঘুরে পড়ে যাবি তখন আমি কি করবো?আবার এটা বলিস না যে হিরোর মতো তোকে কোলে তুলে নিবো।শোন তোর মতো ৬০ কেজির বস্তা আমি কোলে তুলে নিতে পারবো না।বুঝলি।”

“ওই আপনি আমাকে ৬০ কেজির বস্তা কেনো বললেন অভ্র ভাই।আমি মোটেও ৬০ কেজি নয় ৫২ কেজির একটা মেয়েকে ৬০ কেজি বলতে একবার ও কি আপনার বিবেকে বাধলো না অভ্র ভাই?”

“না বাধে নি।তোকে দেখে আমি ভেভেছিলাম ৬০/৬৫ কেজি হবে তোর ওজন।”

“কিহ।আমাকে দেখে আপনার এতো মোটা লাগে অভ্র ভাই।”

বলে আমি আৎকে উঠলাম।কিন্তু প্রতিউত্তরে অভ্র ভাই কিছু বললেন না।আমি এদিকে চিন্তায় পড়ে গেলাম।বাসার সামনে অভ্র ভাই বাইক থামালে আমি উনাকে কিছু না বলে অন্যমনস্ক হয়ে নেমে বাসায় চলে গেলাম।কারন এখন আমার আমার মাথায় এটাই ঘুরছে যে আমাকে কি দেখতে খুব মোটা লাগে?না লাগলে তো অভ্র ভাই বলতো না।ব্যাগ বিছানায় রেখে আয়নার সামনে দাড়ালাম।এদিকে সেদিক ফিরে আয়নায় নিজেকে দেখতে লাগলাম কিন্তু না আমাকে তো মোটা লাগছে না কোনো এঙ্গেল থেকেই।তাহলে অভ্র ভাই আমাকে মোটা কেনো বললো।সেটা ভেবে পাচ্ছি না।উনাকে এই মুহুর্তে আমার চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু মাথা গরমে ভনভন করছে শাওয়ার নেয়া প্রয়োজন।তাই ইচ্ছেটাকে আপাতত পোস্টপন্ড করে শাওয়ার নিতে চলে গেলাম।

“আপনি আমাকে মোটা বললেন কেনো অভ্র ভাই?আমি বাসায় এসে আয়নায় দেখেছি আমাকে মোটেও মোটা লাগে না।আপনি আমাকে কেনো মোটা বললেন।আমি আর আপনার সাথে কথা বলবো না অভ্র ভাই।”

খাওয়া শেষে অভ্র ভাইকে ফোন করে কথাটা বলে আমি ফোন কান থেকে নামাতে নিলেই অভ্র ভাইয়ের গলা ভেসে আসলো কানে।

“তুমি মোটা হলেও আমার।শুকনা হলেও আমার।খাটো হলেও আমার লম্বা হলেও আমারই।সুন্দর হলেও আমার অসুন্দর হলেও আমার।শান্ত হলেও আমার দুরন্ত হলেও আমার।আমার কোনো সমস্যা নেই তাহলে তোমার এতো সমস্যা কেনো বলো তো।শোনো তুমি যা তাতেই তুমি আমার কাছে পার্ফেক্ট।নিজেকে কখনো ছোট মনে করবে না।তুমি আমার এই অভ্রের মেঘ এটা মাথায় রাখবে।”

অভ্র ভাইয়ের কথা শুনে মুহুর্তেই খুশিতে গদগদ হয়ে গেলাম।এই মানুষটার এমন রুপ আছে তা আগে আমার ধারনার বাহিরে ছিলো।এখন এক নতুন অভ্র ভাইকে আনি দেখছি।প্রতিদিন নতুন নতুন রুপে উনি আমার সামনে নিজেকে প্রেজেন্ট করছেন।

“বাহ ভালোই তো রাগ ভাঙাতে পারেন।এই প্রোফেশনে কতদিন?”

“কয়েক হাজার বছর ”

ওনার এমন উদ্ভট উত্তরে আমি হেসে দিলাম।

“হাসছো কেনো মেঘ?”

এতোক্ষণে খেয়াল করলাম উনি আমাকে তুমি তুমি করে কথা বলছেন।

“অভ্র ভাই।আপনি আমাকে তুমি বলছেন?”

“হ্যাঁ বলছি তো।এনি প্রব্লেম?”

“না কোনো প্রব্লেম নেই।”

“কি করছো?”

“বসে আছি।আপনি?”

“আমিও।আচ্ছা এখন রাখছি।ক্ষুধা পেয়েছে প্রচুর।আর তুমি এখন একটু ঘুমাবা।একদম ফোন চালবে না।কথার উনিশ বিশ হলে একদম ১২ বাজিয়ে দিবো তোমার।”

অভ্র ভাইয়ের এমন কেয়ারে আমার বেশ ভালোই লাগছে।আমি আচ্ছা বলে ফোন রেখে নিজের মনে হাসলাম।অভ্র ভাই আমাকে তুমি বলছে কথাটা ভাবতেই আমার কেমন যেনো একটা ফিলিংস হচ্ছে।যা প্রকাশের ভাষা আমার জানা নেই।আমি ফোনে ওনার ছবি বের করে তাতে চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে ঘুমালাম।

(চলবে)

(রি-চেক করা হয় নি ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

#তুমিময়_অনুভূতি
#আয়েশা_ইসলাম
পর্বঃ১৫

মামার বাসায় গিয়ে কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুললেন শুভ্র ভাই।উনি হয়তো কোথাও যাওয়ার জন্যে রেডি হয়েছেন।

“আরে মেঘা কেমন আছিস?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া।তুমি কেমন আছো?কোথাও বেরোচ্ছো নাকি?”

“হ্যা রে।ইন্টারভিউ আছে ১ টায়।”

“ইন্টারভিউ? কেনো?বিসিএস প্রিপারেশন নিচ্ছো না তুমি?তোমার ভাই তো বিসিএস বিসিএস করে আমাকে সেই রকমের ইগনোর করে।”

“আর বলিস না। আমি ও তো প্রিপারেশন নিতাম কিন্তু অনন্যার বাসা থেকে ওকে বিয়ের চাপ দিচ্ছে।এখন একটা জব না পেলে ওর বাসায় প্রোপোজাল পাঠাতে পারবো না।পরে যদি ওর বিয়ে অন্য কারো সাথে হয়ে যায় তাহলে আমার কি হবে।আমি তো পাগল হয়ে যাবো।”

“হায় কি ভালোবাসা।ইশশ শুভ্র ভাই আপনার ভাইটা কেনো আপনার মতো হয় নি বলেন তো।আপনি আপনার গার্লফ্রেন্ডের জন্যে চাকরি করতে যাচ্ছেন।আর অভ্র ভাই আমার বিয়ে হয়ে গেলেও মনে হয় না উনি খোঁজ করবেন।পরে এসে বলবে যে কংগ্রাচুলেশনস মেঘ।শুভ্র ভাই আপনি কত ভালো।আর আপনার ভাই খাড়ুস একটা।কত ভালো হতো যদি উনি আপনার মতো হতো।”

বলে আমি দুই হাত একসাথে করে কিছু ভাবছি এমন ভাব করলাম।কিন্তু আমার ভাবনার মাঝে কেউ এসে আমার চুল টেনে দিলো।চুলে টান পড়ায় আমি পিছনে ফিরে অভ্র ভাইকে দেখে আমার ভাবনা নিমিষেই উড়ে গেলো।ভয়ার্ত চোখে আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

“অভ্র ভাই আপনি এখানে?”

“হ্যাঁ আমি।কোনো সমস্যা?”

উনি দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বলে আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন।তা দেখে আমি বোকার মতো হেসে বললাম,

“না কোনো সমস্যা নেই।শুভ্র তুই না ইন্টারভিউ দিতে যাবি।এখনো এখানে কি করছিস।যা না হলে দেরি হয়ে যাবে তোর।পড়ে চাকরি ও পাবি না।বিয়েও হবে না।”

অভ্র ভাইয়ের কথা শুনে শুভ্র ভাই দৌড়ে চলে গেলেন নিজের রুমে।রইলাম আমি আর অভ্র ভাই।মামিকে দেখছি না।আমি তাই মামি মামি ডেকে যেই না দুই কদম এগিয়েছি অমনি অভ্র ভাই একহাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরে অপর হাত দিয়ে হাত ধরে টেনে নিয়ে আমাকে ওনার রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা আটকে দিলেন।এদিকে আমি ছাড়া পাওয়ার জন্যে দুই হাত দিয়ে অভ্র ভাইকে মেরে যাচ্ছি কিন্তু উনি ছাড়লেন না।অভ্র ভাই আমাকে ছাড়তেই আমি পেট চেপে ধরে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলাম।

“আপনি মানুষ অভ্র ভাই।এভাবে কেউ কাউকে মুখ চেপে ধরে?এখনি তো দম বন্ধ হয়ে মরে যেতাম।”

“ছাগলের মতো ভ্যা ভ্যা করছিলি তাই মুখ চেপে ধরেছিলাম।তা না হলে তো পাড়া জড়ো করতি।সবাই ভাবতো আমি তোকে মেরে কেটে কি না কি করেছি।”

“সরুন আমি মামির কাছে যাবো।”

“মা অসুস্থ মেঘ।ঘুমাচ্ছে।একদম মাকে উঠাবি না।”

“আমি তো মামির সাথেই দেখা করতে এসেছিলাম।মামি ঘুমাচ্ছে তাহিলে আমি বাসায় চলে যাই।”

“যা কে তোকে আটকে রেখেছে।কাকে শুনাচ্ছিস যে তুই চলে যাবি।”

“অভ্র ভাই আপনি খুব খারাপ।ফোনে কত সুন্দর কথা বলেন।কিন্তু সামনে আসলে আপনি একটা খাড়ুস হয়ে যান।”

“খাড়ুস থেকে মনে পড়লো।তখন শুভ্রকে কি যেনো বলছিলি আমি খাড়ুস।আমি রোমান্টিক না?তো দেখাই আমি রোমান্টিক কি না?কি বলিস?”

ওনার কথা শুনে আমার কলিজা শুকিয়ে গেছে।কি বলছেন এসব উনি।এদিকে উনি এক পা একপা করে আমার দিকে এগিয়ে আমাদের মাঝের দুরত্ব ঘুচিয়ে দিচ্ছেন।আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।

“অভ্র ভাই আমি তো মজা করেছি।প্লিজ আপনি এগোবেন না।”

“না আমি আজ তোকে দেখিয়ে দিবো আমি রোমান্টিক নি না।”

“না প্লিজ অভ্র ভাই।”

বলে আমি পিছাচ্ছি।দরজায় তাকিয়ে দেখি দরজাও বন্ধ।হঠাৎ অভ্র ভাইয়ের বেলকনির দিকে চোখ গেলো বেলকনির দরজা খোলা।আমি দৌড়ে বেলকনিতে গিয়ে দরজা আটকে দিলাম।এদিকে আমার কাজে অভ্র ভাই মনে হয় অবাক হয়ে গেলেন।উনি আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন।

“এইবার ধরুন দেখি আমাকে কিভাবে পারেন।হুহ।একা একট শিশুকে পেয়ে তার সাথে অত্যাচার করছেন না।আমি আপনার নামে নারী শিশুর মামলা দিবো অভ্র ভাই।”

“আমি তোকে অত্যাচার করেছি মেঘ?আর নারী শিশুর মামলা দিবি মানে?আবার বলছিস তুই শিশু।সিরিয়াসলি মেঘ।বিয়ে হয়ে গেলে তো শিশুর মা হয়ে যেতি।”

“ওহ আমি তো বলেছি যে নারী ও শিশুর।শিশু তো আপনার আমাকে মনে হয় না।তাহলে আমি নারী হয়ে মামলা দিবো”

আমার কথা শুনে অভ্র ভাই হাসলেন।এরপর বললেন,

“আচ্ছা ভাই মাফ চাই আমি তোর কাছে।অফ যা।তোর এইসব অবাঞ্চিত কথা শোনার আমার কোনো ইচ্ছে নেই।”

“আচ্ছা কেউ অবাঞ্চিত কথা বলবে না।আপনি রুমের বাহিরে যান আমি চলে যাচ্ছি আপনার বাসা থেকে।”

“আমার রুমে আমি থাকবো তুই আমাকে বাহিরে যেতে বলার কে?তুই কিভাবে যাবি যা।”

অভ্র ভাইয়ের কথা শুনে আমার এদিকে অবস্থা করুম।আমার ওয়াশরুমে যাওয়া প্রয়োজন কিন্তু এই অভ্র কুভ্রের জন্যে আমি যেতেও পারছি না।আমি করুন সুরে অভ্র ভাইকে বললাম,

“অভ্র ভাই প্লিজ।আমার ওয়াশরুমে যাওয়া অতি প্রয়োজন। প্লিজ অভ্র ভাই।”

আমার কথা শুনে যেন অভ্র ভাই কমেডি শোতে জোকস শুনে জাজ গুলো যেমন হাসে সেভাবে হাসতে লাগলেন।আমার রাগ লাগলেও এই মুহুর্তে রাগ করা যাবে না।তাই শান্ত ভাবেই আবার বললাম।

“অভ্র ভাই প্লিজ।মানবিকতা দেখান একটু।”

আমার কথা মনে হয় কাজে দিলো।উনি আমাকে বললেন,

“আচ্ছা বেরিয়ে আয়।আমি কিছু বলবো না।”

উনার কথা শুনে আমি আমি তড়িৎ গতিতে বেরিয়ে দরজার দিকে যেতে লাগলাম।কিন্তু অভ্র ভাই আমাকে বললেন,

“ওদিকে কই যাস। এই ওয়াশরুমে যা। ”

আমি আর কিছু না বলে ওনার ওয়াশরুমে চলে গেলাম।কারন জানি না গেলে উনি আবার না জানি কি করেন।ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে দেখি অভ্র ভাই ওয়াশরুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আমাকে বেরোতে দেখেই হাত ধরে ফেললেন।

“এইবার কি করবেন মেঘ?”

“অভ্র ভাই প্লিজ। আমি আর বলবো না আপনাকে কিছু।প্লিজ এইবারের মতো ছেড়ে দেন।”

“ছাড়বো?আচ্ছা তাহলে সরি বল আমাকে কান ধরে উঠবস কর।তাহলে ছেড়ে দিবো।”

এই মুহুর্তে আমার কাছে কোনো অপশন নেই।তাই বাধ্য হয়ে ওনাকে সরি বলে কান ধরএ উঠবস করলাম।ফাইনালি উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন।ছাড়া পেয়ে আমি দিলাম এক দৌড়।দৌড়ে চলে গেলাম একদম মামির রুমে।মামির রুমে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাফ ছাড়লাম।

“এভাবে হাপাচ্ছিস কেনো।আর কখন এলি মেঘা?”

মামির কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম।মামির ঘুম ভেঙে গেছে।এখন মামির প্রশ্নের কি উত্তর দিবো।এটা ভেবেই অভ্র ভাইয়ের উপর রাগ উঠে গেলো।সব এই অভ্র ভাইয়ের জন্যে হয়েছে।

“এইতো মামি কিছুক্ষন আগেই এসেছি।তুমি ঘুমাচ্ছিলে তাই তোমাকে জাগাই নি।কখন উঠলা তুমি?”

“এখনি উঠলাম।আচ্ছা খেয়েছিস কিছু?”

মামির কথা শুনে বিরবির করে বললাম,

“কি আর খাবো?তোমার ছেলে তো আমাকে এখনি কেস খাইয়ে দিচ্ছিলো।”

“কি রে কিছু বললি?”

“না মামি।খাই নি কিছু।তুমি নেই কে খাবার দিবে বলো।তোমার ছেলেরা তো আর খেতে দিবে না সেটা তো জানোই।”

“আচ্ছা তুই বস আমি খাবার নিয়ে আসছি।”

বলে মামি উঠে চলে গেলেন।আর আমিও মামির পিছনে পিছনে গেলাম।

________

বাসায় এসে ফিরোজ স্যারকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম আমি।ফিরোজ স্যার আমাদের বাসায় কেনো এটা ভেবেই আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।ফিরোজ স্যার কি আমার নামে নালিশ দিতে এসেছে।কিন্তু আমি তো কিছু করি নি তাহলে।কিন্তু বাবা আর স্যারের কথা শুনে তো মনে হচ্ছে তারা একে অপরকে চিনেন।কিন্তু কিভাবে এটাই ভাবছি।

(চলবে)

(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

#তুমিময়_অনুভূতি
#আয়েশা_ইসলাম
পর্বঃ১৬

আমার বিয়ে। তাও রাফসান সাকিবের সাথে।এটা শোনার পর আমার কান দিয়ে গরম হাওয়া ছুটতে শুরু করলো।তার থেকেও বড় কথা হচ্ছে আরো ৩ বছর আগে আমাদের বিয়ে দেয়ার কথা বলেছিলেন ফিরোজ স্যার।কিন্তু বাবা বিয়ে দিতে রাজি ছিলো না বলে বাবা আর স্যারের মনোমালিন্য হয়ে যায়।বাবার কথা ছিলো আপুকে রেখে বাবা আমাকে আগে বিয়ে দিবেন না।কিন্তু স্যার চেয়েছিলেন আমাদের বিয়ে তাড়াতাড়ি হোক।এইবার আমার কাছে ফিরোজ স্যার আর রাফসান স্যারের আমার সাথে রাগি মনোভাবের কারনটা ক্লিয়ার হলো।কিন্তু আমার চিন্তা অন্য। আমি অভ্র ভাইকে পাগলের মতো ভালোবাসি।আর অভ্র ভাই প্রকাশ কম করলে কি হবে উনি যে আমাকে আমার থেকে বেশি ভালোবাসেন সেটা ওনার সেদিনের কাজেই আমি ২০০ ভাগ নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম।এখন আমার বিয়ের কথা উনি জানলে উনার কি রিয়েকশন হবে সেটাই আমি বুঝতে পারছি না।রুমের মধ্যে পায়চারি করছি ঠিক সেই সময় সেখানে বাবার আগমন।

“মেঘা?”

বাবার ডাকে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে বাবার দিকে তাকালাম।আমার চোখে পানি।কান্না করছি না।কিন্তু দুচোখ পানিতে টলমল করছে। বাবাকে আমার আজ অপরাধী মনে হচ্ছে খুব।কি হতো এটা আমাকে আগেই জানালে।তাহলে আমি নিজের অনুভূতি গুলোকে এতোটা প্রশ্রয় দিতাম না।অভ্র ভাইয়ের নিকট নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতাম না।অভ্র ভাইকে তার অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ দিতাম না।এখন আমি ওনাকে কি জবাব দিবো?কি বলবো আমি ওনাকে?

এই যে”অভ্র ভাই আপনি আমাকে ভুলে যান।বাবা আমার অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।আপনার তুমিময় অনুভূতি গুলোকে শেষ করে দিন।মেরে কবর দিয়ে দিন আপনার অনুভূতি গুলো।আমাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পাওয়ার নয়।সেগুলোকে কালো অতীত ভেবে বাক্স বন্দি করে রাখুন।এতো সহজ কি এসব করা?”

পারছি না আর পারছি না আমি এসব সহ্য করতে।মাথা ফেটে যাচ্ছে আমার যন্ত্রনায়। সবকিছু কেমন আমার কাছে ঠুনকো হয়ে যাচ্ছে।অন্ধকার হয়ে আসছে চারপাশ।কান্না করতে ইচ্ছে করছে খুব জোরে।যে কান্নার আওয়াজে কেপে উঠবে সেই সবার কলিজা যারা এই মুহুর্তে আমাকে কষ্ট দিচ্ছে ভালোবাসা হারানোর।কিন্তু তাদের সাথে এটা আমি কিভাবে করতে পারি?তারা যে আমার আপনজন,অতি আপনজন।তাদের ২১ বছরের ভালোবাসাকে এতো সহজে কিভাবে ভুলে যাবো নিজের কয়েকদিনের ভালোবাসার জন্য?এতোটা স্বার্থপরতা আমার দ্বারা কি সম্ভব?না এটা সম্ভব না আমার দ্বারা।

বাবার ডাকে ধ্যান ভাঙলো। অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকালাম সেদিকে।

“কিছু বলবে বাবা?”

“কি হয়েছে তোর মা কতক্ষন থেকে ডাকছি?সাড়া দিচ্ছিস না?কি এতো ভাবছিস?”

“হু।সরি বাবা খেয়াল করি নি আমি।আসলে পড়াশোনার এতো চাপ যে আশেপাশের কোনো খেয়াল নেই। ”

“কিন্তু চোখে পানি কেনো?”

“চোখে কিছু চলে গিয়েছে মনে হয় বাবা।”

“ওহ আচ্ছা। এদিকে আয় তো মা।এখানে বস।”

বলে বাবা আমার বিছানার দিকে এগিয়ে গিয়ে বসলেন।আর আমাকে পাশে বসার জন্যে ইশারা করলেন।আমিও বাধ্য মেয়ের মতো বাবার পাশে গিয়ে বসলাম।

“কি বলবে বাবা?”

“দেখা মা।তুই বড় হয়েছিস আর সন্তান বড় হলে বাবা মায়ের চিন্তাও বেড়ে যায়।সব বাবা-মা চায় এ তার ছেলে-মেয়েরা ভালো জায়গায় যাক।ভালো ছেলের হাতে মেয়েটাকে তুলে দিক।বা ভালো মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দিক।সন্তান সুখে থাক ভালো থাক এটাই চায় সব বাবা-মা।আমিও কিন্তু তাদের থেকে অভিন্ন।আমি ও কিন্তু তাদের মতোই চাইবো যে আমার ছেলে বা মেয়েটা ভালো কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে ভালো কাউকে বেছে নেক।বৃষ্টির বিয়ে আমি ভালো ছেলের সাথে দিয়েছি।তাই ওকে নিয়ে আমার আর চিন্তা নেই।এখন আমার সব চিন্তা তোকে নিয়ে।আমার বয়স হয়েছে।কদিন বাচবো না বাচবো?আমি বলছি কি মা আমি একটা ছেলেকে দেখেছি তোর জন্যে।ছেলেটা ভালো।তোদের কলেজে প্রফেসর। যদি ছেলেটার সাথে দেখা করতি।আমি বলছি না যে তাকেই বিয়ে করতে হবে।দেখ আগে।এরপর ধীরে সুস্থে যদি তোর ভালো লাগে তো আমরা বিয়ের কথা বলবো।সবটা তোর মতামতের উপর নির্ভর করছে মা।”

বাবার এমন আবেগ মাখা কথা শুনে আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না।আমি জানি যতই বাবা বলুক সবটা তোর হাতে।কিন্তু আমি জানি আমি রাজি বললেই বাবা খুশি হবে।অন্যথায় তার মন ভেঙে যাবে।এদিকে অভ্র ভাইকেও ভালোবাসি।আমি এই বিয়েতে রাজি হয়ে গেলে যে ওদিকে উনি কষ্ট পাবেন।উনার মন ভেঙে যাবেন।দোটানায় পড়ে গেলাম আমি।আমতা আমতা করে বাবাকে বললাম যে,

“বাবা এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে।আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট না হয় নি এখনো।আর আমার স্বপ্ন বড় কিছু হয়ে তারপর বিয়ের চিন্তা করবো। ”

“পড়াশোনা করতে দিবে তো ওরা। ”

“কিন্তু বাবা….”

কিছু বলতে গিয়েও আটকে গেলাম।

“বাবা আমি তোমাকে পরে জানাই এই বিষয়ে।আমার একটু সময় লাগবে।”

“আচ্ছা মা।তুই ধীরে সুস্থে জানাস আমাকে।”

বলে বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন।আর আমি একই ভাবে অশ্রুবিসর্জন দিয়েই চলেছি।

“অভ্র ভাইকে আমি ভালোবাসি ভাইয়া।প্লিজ তুমি বাবাকে বলো যে এখন যেনো আমার বিয়ের কথা না বলে।অভ্র ভাই বিসিএস এ টিকে গেলেই বাসায় প্রস্তাব পাঠাবে মামা-মামীকে দিয়ে।আর বিসিএস না হলে অন্য চাকরির ব্যবস্থা করে বাসায় প্রস্তাব পাঠাবে।”

ভাইয়াকে কথাগুলো একনিশ্বাসে বলে মাথা তুলে তাকালাম ওর দিকে।অনেক্ষন কি করবো ভাবার পর এটা ছাড়া আর কোনো রাস্তা খুজে পাচ্ছিলাম না আমি।অভ্র ভাইকে অগনিত বার ফোন করেছি মেসেজ করেছি।এমনকি অনলাইনেও মেসেজ করেছি কিন্তু ওনার থেকে কোনো রেসপন্স পাচ্ছিলাম না।ফোন বন্ধ ওনার।কি করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না।তাই ভাইয়াকে বললাম কারন আর যাই হোক ভাইয়া আমাকে বুঝবে।আমার কথা শুনে ভাইয়া বিষ্ফোরিত চোখে তাকালো আমার দিকে।মনে হচ্ছে যেনো ভুল কিছু বলে ফেলেছি আমি।

“মেঘা কি বলছিস এসব তুই?তুই অভ্রকে ভালোবাসিস?”

“হ্যাঁ ভাইয়া।আমি ওনাকে অনেক ভালোবাসি।”

“কিন্তু মেঘা বোন আমার বোঝার চেষ্টা কর।সে তোর মামাতো ভাই।এটা বাবা কিছুতেই মেনে নিবে না।”

“প্লিজ ভাইয়া তুমি বাবাকে বুঝাও।আমি জানি তুমি পারবা বাবাকে বুঝাতে।”

“বাবাকে আমি কি বুঝাবো বল তো তুই?আর তাছাড়া মেঘা অভ্র অন্য কাউকে ভালোবাসে এটা কি তুই জানিস না?যেখানে অভ্রই অন্য কাউকে ভালোবাসে সেখানে বাবাকে আমি কি করে তোদের ব্যাপার রাজি করাতে পারি বল তুই আমাকে?”

ভাইয়ার কথা শুনে আমার মাথায় যেনো বাজ পড়লো।কী সব আবল তাবল বকছে ভাইয়া।অভ্র ভাই অন্য কাউকে ভালোবাসে?এটা কি করে সম্ভব?কিন্তু উনি তো আমাকে বলেছেন যে উনি আমাকে ভালোবাসেন।তাহলে কি অভ্র ভাই আমাকে মিথ্যা বলেছেন।কিন্তু উনি আমাকে মিথ্যা কেনো বলবেন?আর ভাইয়া?ভাইয়াই বা কেনো আমাকে মিথ্যা বলবে?কি স্বার্থ ভাইয়ার মিথ্যা বলে?অভ্র ভায়ের কথাটাও তো বিশ্বাস হচ্ছে না।আচ্ছা অভ্র ভাই কি তাহলে আমার সাথে গেম খেলেছে?উনি তো আমাকে ছোট থেকেই শুধু শাসন করার চেষ্টা করেছিলো।রাগ দেখাতো।কিন্তু আমি সেসবে পাত্তা দিতাম না।আরো বেশি করে ওনাকে রাগানোর চেষ্টা করতাম।আরো বেশি করে দুষ্টামি করতাম।তাহলে কি উনি আমার থেকে সেসবের রিভেঞ্জ নেয়ার জন্যে বলেছিলেন উনি আমাকে ভালোবাসেন?এখন রিভেঞ্জ নেয়া হয়ে গেছে তাই উনি আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন?ফোন বন্ধ করে রেখেছেন?

মাথা কাজ করছে না আমার।কি হচ্ছে এসব আমার সাথে?কেনো আমার সাথেই এমন হয়।অভ্র ভাইয়ের সাথে কথা বলা আমার জন্যে অত্যান্ত প্রয়োজন হয়ে গিয়েছে।ওনার সাথে কথা না বলে আমি আর শান্তি পাচ্ছি না।রুমে এসে দরজা আটকে কান্না করছি আর বারবার অভ্র ভাইয়ের নাম্বারে কল দিচ্ছি।কিন্তু বারবার একটাই কথা ভেসে আসছে যে,

আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারটিতে এই মুহুর্তে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না।”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here