তুমিময় অনুভূতি পর্ব -১১+১২+১৩

#তুমিময়_অনুভূতি
#আয়েশা_ইসলাম
পর্বঃ১১+12+13

কলেজের ক্যান্টিনে বসে রাগে ফুসছি আমি।আর এদিকে নিশা আমাকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।কিন্তু আমার রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে।

কলেজে ঢুকে নিশার দৌড়ানি খেয়ে যেই না দৌড় দিয়েছি গেটের দিকে অমনি গিয়ে পড়লাম সোজা একটা ছেলের উপর।ছেলেটা সামলে নিলেও আমি পড়ে গেলাম ছেলেটার সামনে।এদিকে যারা যারা সেখানে ছিলো সবাই হাসতে লাগলো আর আমার সামনের ব্যাক্তিটি আমার দিকে রাগ আর বিরক্তি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।

“স্টুপিড মেয়ে।দেখে চলতে পারেন না?এতো বড় মেয়ে হয়েছেন কিন্তু ম্যানার্স নেই।ছোট বাচ্চার মতো দৌড়াদৌড়ি করছেন?এইসব মেয়েকে কলেজে যে কে ভর্তি করিয়ে নেয় আল্লাহ ভালো জানেন।

ছেলেটার কথায় আমার খুব রাগ লাগলো।আমি তাড়াতাড়ি মাটি থেকে উঠে জামা কাপড়ের ময়লা ঝেড়ে পরিষ্কার করলাম।এরপর লোকটার দিকে একবার তীক্ষ্মদৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখলাম লম্বা মতো ফর্সা একটা ছেলে।একদম টিপটপ হয়ে এসেছে।সাদা একটা শার্ট ইন করে পড়েছে।শার্টের হাতা গুছিয়ে রাখা।আমি কপট রাগ নিয়ে বললাম,

“হাউ ডেয়ার ইউ?পড়ে গেছি আমি।আমি তো আপনাকে কিছু বলি নি।আর আপনি কি শুরু করে দিয়েছেন?আর কলেজে ফ্রেন্ডদের মাঝে এই রকম দৌড়াদৌড়ি, মারামারি হয়েই থাকে।এটা কি আপনি জানেন না?যে ভাবে কথা বলছেন মনে তো হয় না যে কখনো কলেজে গিয়েছেন।”

“হোয়াট ডিড ইউ সে?আমাকে দেখে তোমার অশিক্ষিত মনে হয় মেয়ে?আমাকে দেখে কি ফুটপাতের ছেলে মনে হয়েছে তোমার?আচ্ছা মনে হলেই বা কি।ডোন্ট জাজ এ বুক বাই ইটস কাভার।অবশ্য তোমার মতো থার্ড ক্লাস মেয়ে এসব বুঝবে না।”

বলে ছেলেটা চলে গেলো।এদিকে থার্ড ক্লাস মেয়ে বলায় আমার রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।কিছু বলতে যাচ্ছিলাম আমি কিন্তু নিশা আমাকে বলতে না দিয়ে ক্যান্টিনে নিয়ে এসেছে।

“মেঘা বাদ দে না ইয়ার।ওই ছেলে মনে হয় কলেজে নতুন। বাদ দে।চল ক্লাস শুরু হবে কিছুক্ষন পর।”

“ওই চুপ থাক ইচ্ছে তো করছে তোকে মেরে ওই ফাউল লোকটার উপরের সব রাগ ঝাড়ি।সব দোষ তোর।না তুই আমাকে দৌড়ানি দিতিস।না আমি দৌড় দিতাম।আর না ওই অসভ্য লোকটার সাথে ধাক্কা লাগতো।আর আমি এতো অপমানিত ও হতাম না।হাউ ডেয়ার হি।আমাকে থার্ড ক্লাস বলে আই উইল কিল হিম।দাড়া সামনে পাই আরেকবার ওই ক্যাঙারু টাকে একদম শিক্ষা দিয়ে ছাড়বো।”

“আচ্ছা বোন দিস শিক্ষা।এখন চল ক্লাস আছে।ফিরোজ স্যারের ক্লাস।আর উনি যে তোকে কারনে অকারণে শাস্তি দেয় মনে নেই?শাস্তি পেতে না চাইলে ক্লাসে চল।”

নিশার কথা শুনে আমার মনোযোগ এই মুহুর্তে ক্যাঙারু থেকে সরে ফিরোজ স্যারের দিকে গেলো।এই ফিরোজ স্যার আবার আরেক পেইন।বয়স্ক লোক।বাবার বয়সী তাই কিছু বলতেও পারি না।আবার সহ্য ও করতে পারি না।আরে বাবা আমি কার যে কোন পাকা ধানে মই দেই আমি নিজেও জানি না।কিন্তু সবাই শুধু আমার সাথেই লাগে মাঝে মাঝে মনে হয় এই কলেজ থেকে বের হয়ে যাই।পড়ে আবার মনে হয় না থাক আমি চলে গেলে নিশার কি হবে।

চোখ চোখ বড় বড় করে ফিরোজ স্যারের দিকে তাকিয়ে আছি।কারন ওনার পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন সকালের সেই ছেলেটা।স্যার আবার তাকে আমাদের স্যার আর তার ছেলে হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন।ও ভাই আমারই কেন তাদের সাথেই ঝামেলা হইতে হবে যাদের সাথে ঝামেলা করা আমার জন্যে বিপদজনক।আমি নিশার দিকে কাদো কাদো হয়ে তাকলাম।ওর দৃষ্টিতে ও ভয়।আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

“নিশা এখন কি হবে আমার?না জানি এই ক্যাঙারু এইবার আমার কি করে।এখন আমার কি হবে?”

বলে আমি নখ কামড়াতে লাগলাম।এইটা আমার বদ অভ্যাস। কোনো টেনশন হলে নখ কামড়ানো।স্যার ওনাকে আমাদের ক্লাস নিতে বলে চলে গেলে উনার ছেলে মানে আমাদের নতুন স্যার নিজের পরিচয় দিতে শুরু করলেন।

“হ্যালো এভরিওয়ান।আমি রাফসান সাকিব।আপনাদের হিসাববিজ্ঞান বিষয়ের নতুন লেকচারার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাউন্টিং এ গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি।এখন আপনাদের পরিচয় নেই কি বলেন?আপনারা সবাই এক এক করে নিজের পরিচয় দিন।

বলে ছেলেদের দিক থেকে একেক জনকে নাম বলতে বলছেন।একে একে সবাই নাম বললো।কিন্তু আমি ভয়ে শেষ। শেষে কিনা আমাদেরই লেকচারারের সাথে ঝামেলা করলাম।না জানি উনি আমাকে কি বলেন আবার।ভয়ে ভয়ে আছি।নিশা নাম বলে বসতেই রাফসান সাকিব স্যার আমাকে বললেন,

” মিস আপনি দাড়ান। ”

ওনার কথা শুনে মুখ কাচুমাচু করে করে দাড়িয়ে গেলাম।উনি মনে হয় আমাকে চিনেছেন।তাই আমাকে দেখে ভ্রু কুচকে তাকালেন।কিছু বলতে চেয়েও বললেন না।শুধু জিজ্ঞেস করলেন,

“নাম কি আপনার?”

” জ্বি স্যার মেঘা আফসানা ”

“আচ্ছা বসুন”

বলে উনি বাকি সবার পরিচয় নিলেন।আজ আর ক্লাস হলো না।সবার পরিচয় নিতেই ক্লাস শেষ হয়ে গেলো।কিন্তু একটা জিনিস খেয়াল করলাম যে এই রাফসান স্যার যখনি আমার দিকে তাকাচ্ছেন একটা রাগি লুক দিচ্ছে।হয়তো সকালের করা কাজের জন্যে। ক্লাস শেষ হতেই যেনো হাফ ছেড়ে বাচলাম।তাড়াতাড়ি করে নিশাকে টেনে নিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলাম।

অভ্র ভাইকে দেখি না অনেক দিন।ওনার মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষার কারনে উনি পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।পরীক্ষার মাঝে এতো গ্যাপ থাকার পর ও উনি এতো ব্যস্ত বলার বাহিরে।মামি ফোন করে আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলো যে আমার এসে কয়েকদিন থাকতে হবে।মামা ঢাকা গেছেন।মামার বাসায় এসেই সামনে পেলাম ওনাকে।দরজা খুলে আমাকে দেখে মনে হয় ভুত দেখার মতো চমকে উঠলেন অভ্র ভাই।

“তুই এখানে মেঘ?”

“জ্বি আমি এখানে।”

“কি দরকার?”

“মামার বাসায় আসার জন্যে কি দরকার লাগে অভ্র ভাই।আপনি ও তো আমাদের বাসায় যান আমি কি আপনাকে কখনো জিজ্ঞেস করেছিলাম যে কি দরকারে এসেছেন?মামি ডেকেছিলো তাই এসেছি।এখন ভিতরে যেতে দিবেন কি না চলে যাবো কোনটা?”

আমার কথা শুনে অভ্র ভাই দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে আমাকে ভিতরে যাওয়ার রাস্তা করে দিলেন।আর আমি ওনাকে একটা ভেংচি কেটে চলে গেলাম ভিতরে।মামি আমাকে দেখে রান্নাঘর থেকে হাত মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলেন।

“এসেছিস?মামিকে মনেই পড়ে না।আসার জন্যে ফোন দিয়ে ডেকে নিয়ে আসতে হয়।”

“তা কি করবো মামি।আমি তোমার কাছে আসি সেটা মানুষের পছন্দ না।এলে দরজায় দাঁড় করিয়ে রেখেই কেনো এসেছি সেটা জিজ্ঞেস করা হয়।বাব্বা মনে হয় মানুষের বাসায় এসেছি।অপরিচিত মানুষের বাসায় গেলেও মানুষ ভিতরে এসে বসতে বলে।আর আমাকে ভিতরে আসা তো দুরের কথা দরজায় দাড় করিয়েই জেরা করা হয়।এতো অপমানের পরও কি করে আসি বলো তো।”

আমি কথা গুলো অভ্র ভাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে তুলনামূলক জোরে বললাম মামিকে।আমার কথা শুনে মামি ভ্রু কুচকে বললেন,

“অভ্র এইসব করেছে তাই না।দাড়া আজ ওর একদিন কি আমার একদিন।ফাজিল ছেলে কোথাকার?মেয়েটা এসেছে কোথায় বাসায় ঢুকতে দিবে বসতে দিবে তা না করে সে নাকি জিজ্ঞেস করে কেনো এসেছে।এ কেমন ছেলে আমি পেটে ধরেছি।”

এদিকে মামি অভ্র ভাইকে বকে যাচ্ছে।আর অভ্র ভাই বিরক্তি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রুমে চলে গেলো।আমি তো মজা নিচ্ছি শুধু।গরম লাগছিলো তাই ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানির বোতল বের করে খাবো এমন সময় কই থেকে যেনো বিদ্যুৎ গতিতে অভ্র ভাই এসে আমার হাত পানির বোতলটা ছো মেরে নিয়ে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,

“রান্নাঘরে পানি আছে গ্লাসে করে নিয়ে খা।ফ্রিজের পানি খেতে হবে না।আমি এখনি ফেলে দিচ্ছি।ঠান্ডা লাগাবে এরপর কষ্ট পাবে।তা তো আর আমি হতে দিতে পারি না তাই না?”

“এহ দরদ উথলে উঠতিছে যেনো আমার উপর।”

বলে আমি ওনার সামনে থেকে চলে গেলাম।শুভ্র ভাই বাসায় নেই তাই বিকেলে মামির সাথে বসে আছি,গল্প করছিলাম।তখন অভ্র ভাই চা চাইলেন।সারাদিন কাজ করে মামি মাত্র একটু বসেছেন তাই মামিকে রেস্ট নিতে বলে আমি ওনার জন্যে চা বানাতে গেলাম।চা নিয়ে যাওয়ার জন্যে পিছনে ফিরতেই দেখি দরজায় হেলান দিয়ে অভ্র ভাই দাঁড়িয়ে আছেন দৃষ্টি আমার দিকে।আমি চায়ের কাপ এগিয়ে দিলে উনি ওটা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলেন।

রাতে খাওয়ার পর শুভ্র ভাই আর আমি বসে আড্ডা দিচ্ছি।অভ্র ভাই টিভিতে খেলা দেখছেন।তখন কথা বলতে বলতে রাফসান স্যারের কথা উঠলো।আমি শুভ্র ভাইকে বলছি সেদিনের ঘটনা।আর শুভ্র ভাই হাসছেন আর আমাকে নিয়ে মজা উড়াচ্ছেন।

“মেঘা বোন তুই শেষ।এই স্যার না জানি তোর কি হাল করে।”

“আমার ও তো সেই ভয় লাগতেছে ভাইয়া।যদি ওই ক্যাঙারু আমার আমার জীবনটা তেজপাতা বানায় তাহলে আমি কলেজ পড়াশোনা ছেড়ে দিবো।”

এদিকে হঠাৎ ধপাস করে একটা শব্দ হওয়ার আমি আত শুভ্র ভাই পাশে তাকিয়ে দেখি অভ্র ভাইয়ের ফোন মেঝেতে পড়ে আছে। ফোনের অবস্থা শেষ।কিভয়েছে বুঝতে না পেরে শুভ্র ভাই আর আমি একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলাম।

(চলবে)

#তুমিময়_অনুভূতি
#আয়েশা_ইসলাম
পর্বঃ১২

অভ্র ভাইয়ের ফোন দেখে আমি আর অভ্র ভাই একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছি। এদিকে দ্যা গ্রেট অভ্র ভাই রেগে টমেটো হয়ে আছে। ওনার পুরো মুখ রাগে লাল হয়ে আছে।হঠাৎ করে উনার রাগের কারন বুঝতে পারছিলাম না।শুভ্র ভাইয়ের চোখ মুখ ভয়ার্ত দেখে আমার কলিজা শুকিয়ে খা খা করছে।মনে হচ্ছে এখনি দমটা ঠুস করে বন্ধ হয়ে আমি মরে যাবো।তখন নিউজ হবে আমাকে নিয়ে।টিভিতে দেখাবে সেই নিউজ। হেড লাইন হবে? “মামাতো ভাইয়ের রাগি মুখ দেখে কলিজা শুকিয়ে দম বন্ধ হয়ে ফুপাতো বোনের মৃত্যু। খবরের কাগজে ছাপা হবে।লক্ষ লক্ষ মানুষ পড়বে একটা ফুটফুটে মেয়ের মৃত্যুর জন্যে আফসোস করবে।কি আর করার যা হবার ততক্ষনে হয়ে যাবে।কিন্তু এখন চিন্তার বিষয় হবে এইটা যে অভ্র ভাইয়ের কি হবে?ওনাকে কি জেলে নিয়ে যাবে?না আমি তো ওনাকে জেলে যেতে দিতে পারি না।আফটার অল আই লাভ হিম।সো ডিসিশন ফাইনাল।আমাকে স্টেটমেন্ট লিখতে হবে আমার মৃত্যুর জন্যে কেউ দায়ী নয়।আশেপাশে চোখ ঘুরিয়ে কাগজ কলম খুজলাম। কিন্তু একি এখানে একটা কাগজ কলম কিচ্ছু নেই।অভ্র ভাইয়ের ধমকে আমার চিন্তাশক্তির অকাল মৃত্যু ঘটলো।

” কি দেখছিস এদিকে ওদিকে?লুক এট মি মেঘ।কলেজে এসব করতে যাস তুই?পড়াশোনার নামে অষ্টরম্ভা আর এইসব মানুষের সাথে ধাক্কা খাওয়া ঝগড়া করা দৌড়াদৌড়ি করা এসব করিস কলেজে।কোনো দিন ওনাকে ক্লাস থেকে বের করে দেয়।কোনো দিন উনি মানুষের সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে গিয়ে ঝগড়া করে।বলি কলেজে কি সিনেমা করতে যাস?অভিনেত্রী বললে তো মাইন্ডে লাগে।কিন্তু কাজ কর্ম তো অভিনেত্রীদের থেকেও সাংঘাতিক।তোকে সত্যিই মেঘ আমি সেরা অভিনেত্রীর এওয়ার্ড দিয়ে দিবো।”

বলে সোফায় একটা লাথি মেরে অভ্র ভাই নিজের রুমে চলে গেলো।অভ্র ভাইয়ের কথা গুলো শুনে আমি আজ আবার অপমানিত হলাম।চোখের পানি বাধ মানতে চাইছে না আজ।যদি জানতাম যে এখানে এলে এভাবে অপমানিত হবো তাহলে কোনো দিনও আমি মেঘা এই বাড়িতে আসতাম না।উনি একটা বার ও দেখলেন না সেখানে আমার কোনো দোষ নেই।না এভাবে আর হয় না।আমি অভ্র ভাইয়ের সামনে আর যাবো না।কান্না করতে করতে আমি দৌড়ে রুমে চলে এলাম এরপর ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে এলাম।এদিকে শুভ্র ভাই নীরব দর্শক।উনি অব্র ভাইয়ের রাগের উপরে কিছু বলতে পারেন না।আমাকে ব্যাগ নিয়ে আসতে দেখে শুভ্র ভাই দৌড়ে এলেন।

“কোথায় যাচ্ছিস মেঘা?একদম পাগলামি করবি না।যা রুমে গিয়ে শুয়ে পড়।”

“শুভ্র ভাই।আমি এখানে আর এক মুহুর্ত ও থাকতে চাই না আমার পথ ছাড়ুন।”

“মেঘা প্লিজ জেদ করিস না।রাগের মাথায় কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া কি ঠিক।আর এখন এতো রাতে তুই একা বাসায় যাবি?মাথা ঠিক আছে তোর?”

“আমার মাথা ঠিক আছে শুভ্র ভাই।আর রেগেও৷ এই আমি।একদম সুস্থ মাথায় আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আমি রিক্সা না পেলে ভাইয়াকে ফোন করর ডেকে নিবো।এরপরও আপনাদের এই বাসায় আর এক মুহুর্ত ও থাকবো না।”

বলে আমি শুভ্র ভাইকে সরিয়ে দিয়ে বেরিয়ে এলাম।

রাত ১০ টা।আমি ফুটপাত দিয়ে আনমনে হেটে চলেছি।গন্তব্যে ফিরতে ইচ্ছে করছে না।রাস্তায় এভাবে হাটতে বেশ ভালো লাগছে চোখ বেয়ে নোনাজল এখনো গড়িয়ে পড়ছে।আফসোস হচ্ছে যে কেনো আমি এই অভ্র ভাইকে ভালোবাসতে গেলাম।ভালোবাসার মানুষকে যে ঘৃণা করা যায় না।কিন্তু আমি তো খুব করে অভ্র ভাইকে ঘৃণা করতে চাই।উনাকে ঘৃণা করা হয়তো আমার পক্ষে সম্ভব না।রাস্তায় একা একটা মেয়েকে দেখলে মানুষ বাজে কমেন্ট করবে এটা স্বাভাবিক।আমাকে করছে তাই এটাও স্বাভাবিক।রাস্তার পাশের কিছু বাজে লোক আমাকে এতো বাজে বাজে কমেন্ট করছে যা শুনে আমার কান মনে হচ্ছে পঁচে যাবে এই সব বাজে কমেন্ট থেকে বাচতে আমি আশে পাশে তাকালাম একটা রিক্সা বা অটোর আশায়।কিন্তু রিক্সা দেখা যাচ্ছে না।যদিও ২/১ টা অটো দেখা যাচ্ছে কিন্তু সেগুলোও মানুষ বোঝাই করা।একটা ফাকা সিট নেই।নিজের উপর এখন আমার খুব রাগ লাগছে।তখন ওদের বাড়ি থেকে বেরিয়েই ভাইয়াকে ফোন করলে এতো বিপদে পড়তে হতো না।ফোন নিয়ে ভাইয়াকে ফোন লাগালাম।কিন্তু একি ভাইয়ার ফোন বন্ধ বলছে।এখন কি করবো আমি ভাবছি তখন কয়েকটা ছেলে এসে আমার পাশে দাড়ালো।তাদের মধ্যে একজন বিশ্রি ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হেসে বললো,

“কি রেট কতো?”

ওদের কথা শুনে আমি সেখান থেকে সরে যেতে নিলে তাদের মধ্যে দুই জন আমার হাত টেনে ধরলো।আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছি কিন্তু ওদের শক্তির কাছে আমি পেরে উঠছি না।আমি এদিকে চিৎকার চেচামেচি করছি কিন্তু রাস্তায় ২ একজন চলাচল করছে।কিন্তু তাদের কেউ এগিয়ে আসছে না।সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।”

“প্লিজ ভাইয়া আমকে ছেড়ে দিন।আপনারা যা ভাবছেন আমি ওমন মেয়ে নই।প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।বাঁচান কেউ প্লিজ আমাকে।আমি হাত জোর করছি।আমাকে যেতে দিন।”

আমাকে টেনে হেচরে নিয়ে যেতে লাগলো লোক গুলো।আমি ওদের সাথে না যাওয়ার জন্যে মাটিতে গড়িয়ে পড়ে নিজেকে আটকে রাখার চেষ্টা করছি।কিন্তু আমার সকল চেষ্টা বৃথা চলে যাচ্ছে একের পর এক।এইবার রাস্তায় কয়েকজনকে এগিয়ে আসতে দেখলাম কিন্তু এই লোকগুলো পিছন থেকে ছোট ছোট ছুড়ির মতো কিছু বের করে দেখিয়ে তাদের ভয় দেখিয়ে পিছনে পাঠিয়ে দিলো।তখন গাড়ির সাইরেনের আওয়াজ কানে এলো।এই আওয়াজ সাধারণত এম্বুলেন্স বা পুলিশের গাড়ির হয়।সাইরেন শুনে লোকগুলো সব পুলিশ ভেবে আমাকে ছেড়ে দিয়ে পালালো।কিন্তু গিয়ে পড়লো পুলিশের গাড়ির সামনে।পুলিশ এসেছে।আমার ধরনা তাহলে ঠিক।এখনো কিছু ভালো মানুষ এই পৃথিবীতে বেচে আছে মরে যায় নি সবাই হৃদয়হীন পাষান নয়।খারাপের ভীড়েও ভালো মানুষ বাস করছে।পুলিশ এসে আমাকে নানান জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করলো।কিন্তু আমি ভয়ে তাদের উত্তর দিলাম না।এরপর আমার বাসায় ফোন করে ইনফর্ম করলো। বাবা আর ভাইয়া এসে পুলিশের সাথে কথা বলে আমাকে বাসায় নিয়ে যায়।

বাসায় এসে আমি কান্না করে চলেছি।আমার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে যে কি হতো আজ আমার যদি সময় মতো পুলিশ না আসতো।আসলেই রাগ মানুষের জীবনে যে ভালো কিছু আসে না আজ আমি তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি।আমার শরীর কাপছে এখনো ওইসব ভেবে।জীবনে আমি এতো ভয় পাই নি কখনো।এসব ভাবতে ভাবতে ঢলে পড়লাম ভাইয়ার কোলে।এরপর কি হয়েছে তা আমার জানা নেই।

চোখ খুলে আমার আশে পাশে সবাইকে দেখে আমি সবার দিকে তাকাচ্ছি।বাবা -মা,ভাইয়া, আপু,রিয়াদ ভাইয়া,চাচি,নিরা আপু।মামি,শুভ্র ভাই।সবাই আছেন শুধু অভ্র ভাই ছাড়া।অভ্র ভাইয়ের কথা ভেবে নিজেই নিজেকে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলাম।যে মানুষটার জীবনে আমার কোনো মুল্য নেই সেই মানুষটা আমি এখনো ভাবছি।আমাকে চোখ খুলতে দেখে আপু এগিয়ে এসে আমার মাথার পাশে বসে পড়লো মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।আর বাকি সবাইও আমার দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে ছিলো।বাবার চোখে পানি, ভাইয়ার চোখেও পানি।সবাই একে একে আমাকে কেমন লাগছে না লাগছে জিজ্ঞেস করে চলে গেলো।শুধু শুভ্র ভাই থেকে গেলেন।

“মেঘা কাজটা তুই ঠিক করিস নি।তুই ভাবতে পারছিস যে কাল কি ঘটতে পারতো?ত্যি বেরিয়ে যাওয়ার পর পরই আমি আর অভ্র তোকে খুজতে বেরিয়েছিলাম।কিন্তু তোকে পাই নি।অভ্র তো পাগল হয়ে যাচ্ছিলো।বার বার আমার কাছে কান্না করছিলো আর বলছিলো

“শুভ্র আমার মেঘ কে তুই যেখান থেকে পারিস এনে দে আমার কাছে।ওর কিছু হয়ে গেলে আমি মরে যাবো।আমি আর কখনো ওকে বকবো না।আগলে রাখবো।মেঘা শুভ্র তোকে ভালোবাসে।পাগলের মতো ভালোবাসে।কিন্তু সে যে তার ফিলিংস এক্সপ্রেস করতে পারে না।সেটা কি তুই জানিস না?কি করলি এটা তুই?তোর কিছু হয়ে গেলে মরে যেতো ছেলেটা।আচ্ছা তুই কি এতো অবুঝ যে এটা বুঝিস না অভ্র তোকে ভালোবাসে?তাহলে কেনো এমনটা করলি?জানিস ইগো জিনিসটা খুব খারাপ।ভালবাসার মাঝে কখনো ইগোকে পুষবি না।ভালোবাসার সার্থকতা কিন্তু একে অপরের পাশে থাকায় না মেঘ।একে অপরকে সম্মান করায়।একে অপরের ভুল ক্ষমা করায়।সময় সবসময় যে আমাকের অনুকূলে থাকবে এমনটা কিন্তু না।অনেক প্রতিকূল সময় আসবে।তখন তোদের একে অপরের হাত শক্ত করে ধরে সামনে এগিয়ে যেতে হবে সব বাধা বিপত্তি পিছনে ফেলে।তোরা এখনি যদি সামান্য একটা বিষয় নিয়ে এতো রিয়েক্ট করিস তাহলে ভবিষ্যতে কিভাবে সারভাইভ করবি তোরা।একে অপরকে বুঝতে শেখ মেঘা।তুই শুধু একটু লক্ষ্য করে দেখ অভ্র তোকে কতটা ভালোবাসে।সবসময় যে ভালোবাসি বললেই ভালোবাসা এক্সপ্রেস করা হয় সেটা কিন্তু না।কখনো কখনো দৃষ্টি ও কথা বলে।অভ্রের জেলাসি কি তোর চোখে পড়ে নি।কাল তুই ওই কাহিনী বলায় সে রাগ করব ফোন ভেঙেছে। কথা গুলো মনে কর।সে শুধু তোকে বকেছে ওই নতুন স্যারের সাথে কথা বলার জন্যে।সে তোকে নিয়ে আমার উপরেও জেলাস সেটা কি তুই জানিস।প্লিজ বোন আর এমন কিছু করিস না যাতে তোদের ক্ষতি হয়।তোর বড় ভাই হিসেবে এটা আমার রিকুয়েষ্ট তোর কাছে।আর ফুপাকে আমি কালকের কথা বলি নি শুধু বলেছি তোর নাকি ওনাদের কথা মনে পড়ছিলো তাই তুই বাসায় আসার জিন্যে জেদ করছিলি।তোমে বাসায় বাহিরে দাড় করিয়ে রেখে আমি বাইকে বের করে এসে দেখি তুই নেই।তুই ও ফুপাদেরকে এটাই বলিস। ”

শুভ্র ভাইয়ের কথা গুলো শুনে আমি কান্না করছি।এটা দুঃখের না প্রাপ্তির কান্না।অভ্র ভাইকে নিজের করে পাওয়ার। কথাগুলো বলে শুভ্র ভাই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে চোখ মুছে দিয়ে চলে গেলেন আমি চোখের পানি মুছতেই দেখলা দরজায় অভ্র ভাই দাঁড়িয়ে করুন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।ওনার চোখে পানি জমে আছে।

(চলবে)

(গল্পের সাথে বাস্তব মেলাবেন না প্লিজ।গল্পকে সাজাতে গিয়ে হয়তো আমি অবাস্তব কিছু লিখেছি।তাই আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।আর রাতে বোনাস পার্ট দিতে পারি।সিওর না।তাই কেউ অপেক্ষা করবেন না।সময় পেলে তবেই বোনাস পার্ট দিবো।আর আপনারা ঠুস করে পড়ে নিবেন।হ্যাপি রিডিং।আর ধন্যবাদ সবাইকে আমার গল্পটাকে এতো ভালোবাসা দেয়ার জন্যে।)

#তুমিময়_অনুভূতি
#আয়েশা_ইসলাম
পর্বঃ১৩
(বোনাস পর্ব)

“ভালোবাসি মেঘ”

কাঙ্খিত সেই একটা শব্দ কানে আসতেই আমি যেনো পাথর হয়ে গেলাম অতি আনন্দে।এখন আমার কি রিয়েক্ট করা উচিত তা আমার জানা নেই।আমি হাসবো নাকি কান্না করবো সেটাও বুঝতে পারছি না।এক কথায় আমি এখন অনুভূতি শুন্য হয়ে শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে অভ্র ভাইকে দেখছি।চেহারার কি অবস্থা করেছেন এই মানুষটা?চুল উশকো খুশকো।চোখ মুখ ফ্যাকাশে হয়ে আছে।ফুল হাতা শার্টের হাতা গুলোর বোতাম খোলা অবস্থায় ছেড়ে দেয়া।অন্য সময় ওনার শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গোছানো থাকে।অভ্র ভাইকে এভাবে দেখে আমার খুব খারাপ লাগছে।উনি রুমের ভিতরে এসে সোজা জানালার পাশে গিয়ে দাড়ালেন। উদাস দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন।আকাশ পানে।

“আমার আকাশে মেঘ জমেছে তোমার আকাশে বৃষ্টি ধীরে ধীরে হয়েই গেলো অবশেষে ভালোবাসার সৃষ্টি
তুমি তুমি তুমি চারপাশে শুধুই তুমি
অনুভুতি কি করে লুকিয়ে রাখবো বলো আমি
আমার সকল রাগ,অভিমান শুধুই তোমার প্রতি।
কারন তুমিই যে আমার তুমিময় অনুভূতি। ”

অভ্র ভাই কথাগুলো অতি আবেগী কন্ঠে বললো।ওনার কথা বলার ধরনই আমাকে বলে দিচ্ছে যে উনি আমাকে ঠিক কতটা ভালোবাসেন।আমার নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।অপরাধবোধে আমি অভ্র ভাইকে কিছু বলতে পারছি না।আমি বিছানা ছেড়ে উঠতে নিলে অভ্র ভাই পিছন ফিরে তাকালো।আমাকে উঠতে দেখে আমার কাছে এসে বললেন,

“উঠছিস কেনো মেঘ তুই?আর চোখে পানি কেনো?চোখ মুছে ফেল এখনি।”

“অভ্র ভাই প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন।আমি ভুল করেছি।প্লিজ অভ্র ভাই।”

“আরে পাগলি কাঁদছিস কেনো। রেগে নেই তো আমি তোর উপরে।আর এসব কথা বলিস না।”

এই মুহুর্তে আমার অভ্র ভাইকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু বাসায় থাকার কারনে নিজের ইচ্ছেটাকে মনের মাঝেই দমিয়ে রাখলাম।আপুকে রুমে আসতে দেখে অভ্র ভাই চোখ মুছে আমাকে বললেন,

“উঠে খেয়ে নে।নাহলে আবার মাথা ঘুরে উলটে পড়ে থাকবি।”

“ঠিক বলেছিস অভ্র।মেঘা উঠতো।ফ্রেশ হয়ে আয়। খেয়ে নে একটু।”

“আপু আমি খাবো না।খেতে ইচ্ছে করছে না।”

আমি কথাটা বলে অভ্র ভাইয়ের দিকে তাকাতেই দেখি উনি অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।চোখের ইশারায় বলছে,

“উঠে খেয়ে নে নাহলে তোর একদিন কি আমার একদিন।”

ওনার এমন অগ্নি দৃষ্টি দেখে আমি একটা শুকনো ঢোক গিলে উঠে পড়লাম বিছানা থেকে।ওয়াশরুমে চলে গেলাম কাপড়চোপড় নিয়ে। গোসল করা প্রয়োজন।শরীর কেমন যেনো ম্যাজমেজে হয়ে আছে।গোসল সেরে নিয়ে বেরিয়ে এসে দেখি ভাইয়া, আপু, অভ্র ভাই, শুভ্র ভাই সবাই রুমে বসে আছে।আমি গিয়ে বসতেই আপু আমার দিকে খাবারের প্লেট এগিয়ে দিলো খেয়ে নে।

রাতে অভ্র ভাইরা আমাদের বাসায় থাকবেন।সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছি।বাবা একটু রেগে ছিলেন কিন্তু সেটা শুভ্র ভাই আর অভ্র ভাই ম্যানেজ করে নেয়ায় বাবার রাগটা একটু কমেছে। রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ফোন বেজে উঠলো।ফোন হাতে নিয়ে দেখি অভ্র ভাই কল দিয়েছেন।ফোন রিসিভ করে সালাম দিলাম

“আসসালামু আলাইকুম।”

“ওয়ালাইকুম আসসালাম। তাড়াতাড়ি ছাদের আয় মেঘ।”

বলেই ফোন কেটে দিলেন।এই মানুষটা এমন কেনো বুঝি না।আহা তার কণ্ঠে কত অধিকারবোধ।ইশশ লজ্জা পেয়ে গেলাম।রুমের লাইট বন্ধ করে দিয়ে দরজা আটকে দিয়ে আশে পাশ্র তাকালাম।সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।আমি পা টিপে টিপে ছাদে চলে গেলাম।ছাদের দরজা থেকেই দেখলাম অভ্র ভাই উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে।চাঁদের আলোয় রাতের অন্ধকার ঘুচে গেছে।সবকিছু পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।তবে দিনের থেকে এখন সব কিছুকে আরো মায়াময়ী মনে হচ্ছে।আচ্ছা চাঁদের আলোয় অভ্র ভাইকে দেখতে কেমন লাগবে।তা ভেবেই অভ্র ভাইয়ের মুখটা দেখার জন্যে মন ছটফট করতে লাগলো।আমি ধীর পায়ে অভ্র ভাইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম চাঁদের পানে।এরপর অভ্র ভাইয়ের দিকে।অভ্র ভাইয়ে এই মুহুর্তে আমার পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর পুরুষ বলে মনে হচ্ছে।আচ্ছা ছেলে মানুষের এতো সুন্দর হওয়ার কি খুব প্রয়োজন ছিলো।

“কি দেখছিস এভাবে? এভাবে দেখিস না আমার আবার নজর লেগে যাবে।”

অভ্র ভাইয়ের কথা শুনে হাসলাম।এই মুহুর্তে আয়াব্র আমার তখনের সেই ইচ্ছেটা জেগে উঠলো।ওনাকে জড়িয়ে ধরার ইচ্ছা।এইবার আর ইচ্ছেকে দমিয়ে না রেখে সব লজ্জা ভয় সাইড করে জড়িয়ে ধরলাম ওনাকে।উনি হয়তো এটা এক্সপেক্ট করেন নি।চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে।কিন্তু আমি সেদিকে দৃষ্টিপাত না করে অভিযোগের সুরে অনাকে বললাম

“আপনি খুব খারাপ অভ্র ভাই। আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছেন আপনি।আপনাকে আমি এমন শাস্তি দিবো না সারাজীবন মনে রাখবেন।”

“দে শাস্তি।কে নিষেধ করেছে তোকে?তোর শাস্তি আমি মাথা পেতে নিবো কোনো রকম কোনো এক্সকিউজ দিবো না।”

“আচ্চা সেটা পরে দেখা যাবে এখন আমি যা যা জিজ্ঞেস করবো তার উত্তর দিবেন।”

“আচ্ছা বল। ”

“আপনি আমাকে কবে থেকে ভালোবাসেন?”

“সেটা বলতে পারবো না।তবে প্রথম অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছিলো যেদিন তুই এলোচুলে ঘুম থেকে উঠে আমার সামনে প্রথম এসেছিলি।”

“কবে?”

“তা হবে হয়তো তুই যখন সিক্স কি সেভেনে পড়িস।”

“এতো আগে থেকে ভালোবাসেন?”

“হুম।”

“তাহলে আমাকে এতদিন এভাবে অপমান করেছেন কেনো?”

“যাতে তুই আমার প্রতি দুর্বল হয়ে নিজের পড়াশোনার ক্ষতি না করিস।”

“আমি ভালোবাসি আপনাকে এটা জেনেও নিজেকে কিভাবে স্বাভাবিক রেখেছিলেন?”

“কতবার তোর সামনে ধরা পড়েছিলাম।কিন্তু সেটা তুই বুঝতেও পারিস নি।”

“এখন কেনো ভালোবাসার কথাটা জানিয়ে দিলেন?”

“তোর যে পাগলামো আমার কন্ট্রোলের বাহিরে চলে যাচ্ছে তাই।”

অভ্র ভাইয়ের কথাগুলো শুনে আমি শুধু অবাক হয়ে যাচ্ছি।কতটা নির্বিকার ভাবে তিনি আমার প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন মনে হচ্ছে আগে থেকে মুখস্থ করে এসেছেন।আমি প্রশ্ন করছি আর উনি ফটাফট উত্তর দিচ্ছেন।আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম

“আমি এগুলো প্রশ্ন করবো তা কি জানতেন?উত্তর গুলো কি মুখস্ত করে এসেছেন।”

আমার কথায় উনি হেসে আমাকে বললেন,

“এগুলো সব মনের কথা তাই তো ভণিতা না করে সব উত্তর তড়িৎ গতিতে দিয়ে দিলাম।”

প্রতিউত্তরে কিছু না বলে ওনার বুকে মাথা দিয়ে চুপ করে থাকলাম।অনুভব করলাম ওনাকে।কিন্তু উনি সেটা বেশিক্ষন করতে দিলেন না।আমাকে সোজা করে দাড় করিয়ে বললেন,

“ভালোবাসি বলেছি বলে এটা ভাববি না মেঘ যে তোর সাত খুন মাফ বুঝলি?আ।ই কিন্তু আগে যেমন ছিলাম এখনো তেমনি আছি।ভুল করলে শাসন মাস্ট।”

“হুহ জানি তো আপনি একটা আস্ত বনমানুষ। ”

“কিহ আমি বন মানুষ?”

“হ্যাঁ তা নয়তো কি।মানুষ নিজের ভালোবাসার মানুষকে কত আদর করে।সব সময় আগলে রাখে।কিন্তু আপনি আমাকে শাসাচ্ছেন সিরিয়াসলি অভ্র ভাই।”

“হ্যাঁ এসব আদিক্ষেতা আমার দ্বারা সম্ভব না। আর আগলে রাখি আমি তোকে।তবে আদর ভালোবাসা এসব বিয়ের পর।এখন তো শুধু শাসন।কারন এখন তুই আমার ফুপাতো বোন।তাই ভাই হিসেবে আমার শাসন করা দ্বায়িত্ব। ”

অনার কথা শুনে আমি দ্রুত অনাকে ছেড়ে দিয়ে দুই কদম পিছিয়ে গেলাম।বলে কি এই লোক।ভালোবাসার কথা বলে এখন আবার বলছে ফুপাতো বোন।ভাই হিসেবে ওনার দ্বায়িত্ব আছে।আমার মাথা ঘুরছে।এই আমি কাকে ভালোবাসি?যে নিজের প্রেমিকাকে বোন পরিচয় দেয়।

“আপনি একটা জঘন্য লোক অভ্র ভাই।আপনার সাথে আমি আর কথা বলবো না।”

বলে অভ্র ভাইকে রেখে আমি হন হন করে ছাদের দরজার দিকে পা বাড়ালাম।দরজায় এসে একবার ওনার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি আবার হুহ বলে চুলগুলো পিছনে দিয়ে নেমে এলাম ছাদ থেকে।

(চলবে)

(রি-চেক করি নি।ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here