তুমিময় অনুভূতি পর্ব -০৩

#তুমিময়_অনুভূতি
#আয়েশা_ইসলাম
পর্বঃ৩

সকাল থেকেই শরীরটা খারাপ লাগছে।মনে হচ্ছে জ্বর আসবে। মাথাও ব্যাথা করছে।কিন্তু এরপরও কলেজে গেলাম। কারন আজ ইম্পর্ট্যান্ট একটা ক্লাস আছে।কলেজ এসেই দেখি নিশা মন খারাপ করে বসে আছে।কারন জানতে চাইলে সে জানালো আজ কলেজে আসার পথে সিয়াম ভাইয়া আসতে চেয়েও আসে নি ওর সাথে দেখা করতে।সিয়াম হচ্ছে নিশার বয়ফ্রেন্ড। তাদের মাত্র ৩ মাসের প্রেম কিন্তু এর মাঝে তাদের কমপক্ষে ২০০ বার ব্রেকআপ হয়েছে।সামান্য এদিক ওদিক হলেই নিশা ব্রেকআপ করে।আর তার কিছুক্ষণ পর তার ঘ্যানঘ্যান শুরু হয়ে যাবে।কলেজে থাকলে বার বার বলবে,”দোস্ত আমার কি হবে এইবার।ও আমার সাথে কথা না বললে আমি মরেই যাবো।আর যদি আমি সামনে না থাকি তাহলে ১০০ বার ফোন করে এইসব বলবে।আর ফ্যাচফ্যাচ করে কান্না করবে।যার ফলে ওর ব্রেকআপ হলে আমাকে ফোন বন্ধ করে রাখতে হয়।

“আরে হয়তো ব্যাস্ত ছিলো বা ঘুম থেকে উঠতেই পারে নি ভাইয়া।মন খারাপ করিস না।দেখবি ক্লাস শেষে উনি তোর সামনে এসে হাজির হতে পারে।হতে পারে তোকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্যে উনি আসে নি।এতো নেগেটিভ ভাবিস কেনো?বি পজিটিভ। ”

“রাখ তোর পজিটিভ।বদমাশ একটা ছেলে।ধরতে পারলে সব চুল ছিড়ে দিতাম।দোস্ত বিশ্বাস কর আমি আজ ওর সাথে সিরিয়াসলি ব্রেকআপ করবো।জানিস আমি প্রায় আধাঘন্টা অপেক্ষা করেছি কিন্তু সে আসে নি।”

“লাস্ট ব্রেকআপের সময় ও সেম ডায়লগ দিয়েছিলি মনে আছে না নেই?লজ্জা করে না তোর প্রতিবার এক কথা বলতে?পরে আবার কান্না করবি যে ওর সাথে কথা না বললে আমি মরে যাবো।আজ যদি তুই শুধু সেম কাজ করিস।আই সয়্যার নিশা তোকে কাল আমি যদি ভরা কলেজে কান ধরে উঠবস করাবো।তখন বুঝবি ইডিয়ট। ”

“তুই আমাকে এইভাবে বলতে পারলি মেঘা?তুই না আমার জানু হস?এভাবে আ।আর মান সম্মান নিয়ে টানাটানি করবি তুই?”

নিশা কাদো কাদো হয়ে কথাটা বলে আমার দিকে উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে।নিশার কথা শুনে এখন আমার খুব বলতে ইচ্ছে করছিলো যে বলি ভাই তোর কয়টা জানু?এই না ২ দিন আগে বললি সিয়াম তোর জানু আজ আবার আমাকে বলছিস?সিরিয়াসলি তুই টু ইন ওয়ান। ” কিন্তু ইচ্ছেটাকে গোপন রেখে তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললাম,

“হয়েছে আর কান্না করা লাগবে না।ক্লাস শুরু হবে এখন ক্লাসে মনোযোগ দেয়ার প্রিপারেশন নে।”

ক্লাস থেকে বেরিয়ে অভ্র ভাইয়া আর শুভ্র ভাইকে একসাথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিশাকে বিদায় দিয়ে সেখানে এলাম।আমাকে দেখেই শুভ্র ভাই হাসতে হাসতে বলে উঠলেন,

“পাগলী চলে এসেছে অভ্র”

“শুভ্র ভাই আমি পাগলী হলাম কবে?”

“কাল রাতের পর থেকে।মেঘা তুই বিশ্বাস কর।কাল রাতে তোকে দেখে আমার যা হাসি পাচ্ছিলো তোকে কি বলবো।কিন্তু তুই রাগ হয়ে ছিলি বলে হাসতে পারি নি।”

শুভ্র ভাইয়ের কথা শুনে আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম।কাল রাতে ঘুম থেকে উঠে আমি শুধু ওড়না গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে বেড়িয়েছিলাম।চুল ঠিক করি নি।তাই হয়তো ভাইয়া আমাকে পাগলি বলছে।কিন্তু আমার কিই বা করার ছিলো ক্ষুধায় পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছিলো তাই চুল ঠিক করার কথা মনেই পড়ে নি।

“একটা কথা কি জানেন শুভ্র ভাই।সেলিব্রিটিদের পিছে সমালোচকের অভাব নেই।এসব সমালোচনায় কান দিতে নাই তাদের।”

বলে কিছুটা ভাব নিলাম।কিন্তু আমার কথা শুনে এদিকে গোমড়ামুখো অভ্র ভাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।অভ্র ভাই এভাবেও হাসতে পারে জানা ছিলো না।আমি ভাবতাম আমিই শুধু এভাবে শাকচুন্নির মতো হাহা হোহো করে হাসি।কিন্তু আজ অভ্র ভাই আনার ধারণা ভুল প্রমান করে দিলেন।

“শুভ্র ভাই। আপনার এই হুতুমপেঁচা ভাই এভাবেও হাসতে পারে।”

কথাটা উপহাস করে অভ্র ভাইকে বললাম।কারন এই অভ্র ভাইকে আমি ভালোবাসলে কি হবে এই ব্যাটা আমার এতো পরিমান মান ইজ্জতের ফালুদা বানিয়েছিলো যা গুনে শেষ করা যাবে না।তাই সামান্য রিভেঞ্জ তো নেয়াই যাই।কথায় আছে এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ আন্ড ওয়ার।এখানে ওয়ার তো নেই।নাহয় লাভ থেকেই একটু রিভেঞ্জ নেই।হিহিহি।

“শোন মেঘ নিজেকে এতোটাও ইম্পর্টেন্স দিস না।আমার হাসির কারন হচ্ছে এটা যে তুই নিজেকে সেলিব্রিটি ভাবিস।বোন তুই কয়টা ফিল্ম,সিরিয়ালে কাজ করেছিস একটু বল তো।আর দ্যা মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট থিং,ম্যাম ক্যান ইউ গিভ মি এ অটোগ্রাফ প্লিজ।”

বলে আমার দিকে হাত এগিয়ে দিলেন।আর শুভ্র ভাই সহ হাসতে শুরু করলেন।এসেছিলাম অভ্র ভাইকে ধন্যবাদ জানাতে।কিন্তু এখানে এসে যে অভ্র ভাইয়ের থেকে অপমানিত হবো তা আমার জানা ছিলো না।আমি তো ইন্টেনশনালি আমার কথা দ্বারা কাউকে হার্ট করি নি।বা কটু কথা বলি নি যে অভ্র ভাই আমাকে অপমান করবেন।আমি তো মজার ছলে শুভ্র ভাইকে বলেছি যে আমি সেলিব্রিটি। অভ্র ভাইয়ের কথা শুনে চোখর কোনে লোনাজল এসে ভীড় জমাচ্ছে।হয়তো টুপ করে এখনি পড়ে যাবে।কিন্তু আমি অভ্র ভাইকে আমার চোখের জল দেখাতে চাই না।তাই তাড়াতাড়ি পিছন ফিরে গেটের দিকে হাটা ধরলাম।উদ্দেশ্য বাসায় যাওয়া।তবে যেতে যেতে কানে এলো তাদের কথা,”অভ্র ওকে এভাবে ইনসাল্ট না করলেও পারতি।জানিস তো ছেলেমানুষ। মজা করে বলেছে।কিন্তু তোর এভাবে ওকে কথাগুলো বলা একদম উচিত হয় নি।”এরপর অভ্র ভাই কি বলেছেন তা আর কানে আসে নি তার আগেই আমি ওনাদের থেকে বেশ দুরে চলে এসেছিলাম।

কান্না পাচ্ছে, প্রচুর কান্না পাচ্ছে আমার অভ্র ভাইয়ের কথা গুলো মনে হতেই। রিক্সা পাচ্ছিলাম না তাই দাঁড়িয়ে আছি।আর চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছি।শরীরটাও আরো খারাপ করেছে।মাথার উপর সূর্যমামা তার সর্বোচ্চ তাপ মনে হচ্ছে ঢেলে দিচ্ছে।রোদের তাপে মাথা গরম হয়ে আছে।কান্নার শব্দ না হলেও চোখ থেকে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে।অবশেষে একটা রিক্সা পেয়ে তাতে উঠে বসলাম।কলিং বেল বাজালে আপু দরজা খুলে আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। আমি সেদিকে লক্ষ্য না করে পাশ কাটিয়ে রুমের দিকে যেতে লাগলাম।আপু পিছন থেকে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করেই যাচ্ছে।কিন্তু আমি সেসবের উত্তর না দিয়ে একদম রুমে চলে গেলাম।ব্যাগটা রেখে হিজাব খুলে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে তার নিচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কান্না করেই যাচ্ছি।আমি এখনো মেনে নিতে পারছি না যে অভ্র ভাই আমাকে এভাবে কথা শুনিয়ে দিবেন।

হাজার মানুষ হাজারটা কথা বললেও গায়ে মাখা স্বভাব আমার নেই।কিন্তু আমার কাছের কেউ।আপন কেউ আমাকে অপমানজনক কিছু বললে আমি সেটা সহজে মেনে নিতে পারি না।আর সেখানে অভ্র ভাই সেই মানুষ যাকে আমি ভালোবাসি।অনেক ভালোবাসি।তার থেকে এতোবড় অপমান আমি কিছুতেই হজম করতে পারছি না।খানিক পর পর তার কথাগুলো মনে হচ্ছে।প্রায় ঘন্টাখানেক শাওয়ার দিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলাম।ঠান্ডা লাগছে প্রচুর।মাথাটাও প্রচন্ড ভাড় হয়ে আছে।মনে হচ্ছে যেন মাথার উপর ৫০ কেজি ওজনের কিছু উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। চোখদুটোও প্রচন্ড জ্বালছে।আর অনুমান করছি লাল ও হয়ে আছে।আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না । তাই তাড়াতাড়ি করে শুয়ে পড়লাম।বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই যেনো ঘুম আসে ভীড় জমালো দুচোখের পাতায়।

(চলবে)

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here