#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম (লেখিকা)
“৬”
–“দোলা রুদ্রর থেকে হাত ছাড়িয়ে কাবার্ড থেকে আরেকটা কাঁথা বের করে রুদ্রর গায়ের উপর দেয়। রুদ্রর শরীর এত উত্তাপ হয়ে আছে যে, একজন স্বাভাবিক মানুষ হাত দিলে ছোটোখাটো একটা ছ্যাকা খাবে৷ রুদ্র ক্রমশ কেঁপেই চলেছে। দোলা কি করবে ভেবে পাই না। কাউকে ডাকবে না-কি করবে। দোলা একটা পাত্রে সচ্ছ পানি আর একটা কাপড় নিয়ে আপাতত রুদ্রকে জলপট্টি দেয়। দোলা খেয়াল করে যে রুদ্র চাপাস্বরে কিছু একটা বলছে জ্বরের ঘোরে। কথাগুলো অস্পষ্ট হওয়াতে দোলা সেভাবে বুঝতে পারছে না। দোলা মাথাটা রুদ্রর দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় হাল্কা করে। রুদ্র কি বলছে কান পেতে শোনার চেষ্টা। কিন্তু রুদ্রর কথা দোলা ঠিকভাবে শুনতে পাইনা। তাই আরও এগিয়ে যায় রুদ্রর দিকে।
— আমাকে কেনো ছেড়ে গেলে? কেনো এতবড় ধোকা দিলে? আমি খুব খারাপ। সবাইকে কষ্ট দিই। সবাই আমার থেকে দূরে যেতে চাই। রুদ্রর এই অস্পষ্ট কথার কিছুটা দোলার বোধগম্য হয় আর কিছুটা অজানাই রয়ে যায়।
— এইসব কি বলছেন উনি? কে দূরে চলে গেছে? তখনই রুদ্র হুট করে দোলার হাত টেনে ধরে পাশে শুয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। হঠাৎ এমন হবে ভাবতে পারিনি দোলা। রুদ্রর কাজে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় সে। দোলা শিউরে ওঠে রুদ্রর উত্তাপিত নিশ্বাসের ছোঁয়ায়। একে তো জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে তার! এর উপর গরম নিশ্বাস আঁচড়ে পড়ছে। সব মিলিয়ে ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে দোলার মধ্যে। রুদ্র যে শীতের জন্য দোলাকে এত শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে এটা দোলার বুঝতে বাকি নেই।
– উনার এত জ্বর আসলো কিভাবে? এমন ভাবে কাঁপোনি দিয়ে জ্বর আসার কারণ কি বৃষ্টিতে ভেজার জন্য। হতে পারে! নাহ এইভাবে হবে না। উনাকে ওষুধ খাওয়াতে হবে। কিন্তু রুদ্রর থেকে ছাড়া পাবে কিভাবে? এত শক্ত করে চেপে ধরে আছে দোলা নড়াচড়াই করতে পারছে না।
– দোলা রুদ্রকে ডাকার সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া আর উপায় নেই রুদ্রর থেকে ছাড়া পাওয়ার।
— রুদ্র শুনছেন! মৃদু কন্ঠে ডাকে দোলা। এতে রুদ্রর কোনো হেলদোল নেই৷
– রুদ্র! ছাড়ুন আমাকে। আপনার জন্য ওষুধ নিয়ে আসি আমি। আপনার এত জ্বর আসলো কীভাবে? বেশ কয়েকবার ডাকার পর রুদ্রর হুস আসে। আলতো করে চোখ খুলে দেখে দোলাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে সে৷ শরীর খারাপের মধ্যেও যেনো একটু ভালো লাগার ছোঁয়া পাই। নেশা লাগা চোখে তাকিয়ে থাকে। ঠোঁটের কোণে ছোট করে হাসি। দোলা মুগ্ধ চোখে রুদ্রকে দেখছে। রুদ্রর নাকের ডগাটা লাল টকটক করছে৷ দোলা না চাইতেও সেখানে চোখ আঁটকে যাচ্ছে।
– দোলা নিজেকে সামলে নিয়ে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে ছাড়ুন আমাকে। আপনার জন্য ওষুধ নিয়ে আসি। অনেক জ্বর আপনার। দোলার কথায় রুদ্র কিছক্ষণ দোলার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে দোলাকে ছেড়ে দিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে ভাঙা গলায় বলে, আমার জন্য কাউকে এত ভাবতে হবে না আর না ব্যস্ত হওয়ার কিছু আছে৷ রুদ্রনীল চৌধুরী নিজেকে সামলাতে পারে আর সে ক্ষমতা তার আছে। রুদ্রর কথায় দোলা ভ্রু কুচকে রাগে দাঁতে দাঁত চেপে নুয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে শরীর খারাপ নিয়ে পড়ে আছে তাও উনার শেরগিরি যাচ্ছে না৷ গন্ডার একটা। দোলা রুদ্রর কথায় পাত্তা না দিয়ে উঠে ওষুধের বক্স থেকে জ্বরের ওষুধ বের করে। গ্লাসে পানি নিতে যাবে তখন দোলা কিছু একটা ভেবে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। রুদ্র এতখন চোখ বন্ধ করে ছিলো। দোলা যেতেই চোখ খুলে তাকায়।
– চলে গেলো? একবার বললাম আর তাতে.. রুদ্র হাসে! যেটা নিজের উপর বিদ্রুপ স্বরুপ কাজ করে। রুদ্রর চোখ জ্বালা করছে সাথে মাথাটা ভনভন করছে৷ সর্দি সাথে জ্বর যেনো পাগল করে দেবে তাকে৷ মাথায় তীব্র যন্ত্রণা শুরু হলে রুদ্রর আবারও চোখ বন্ধ করে ফেলে। কোনো কিছু নিয়ে ভাবার মতো অবস্থায় তার মস্তিষ্ক নেই আপাতত।
– মিনিট পাঁচ যেতেই দোলা ফিরে আসে একটা প্লেটে ডিমের অমলেট নিয়ে। খালিপেটে ওষুধ খাওয়ানো ঠিক হবে না ভেবেই দোলা দুইটা ডিমের অমলেট করে নিয়ে আসে। প্লেটটা খাটের পাশে থাকা টেবিলের উপর রেখে গ্লাসে পানি ঢেলে রুদ্রকে ডাকে৷ দোলার ডাকে রুদ্র ভ্রু কুচকে বিরক্ত নিয়ে তাকায়।
– ওষুধ খেয়ে তারপর ঘুমান৷ দেখবেন ভালো লাগবে জ্বর ছেড়ে গেলে। হাসিমুখে বলে দোলা।
– তোমাকে বললাম না আমাকে নিয়ে না ভাবতে। বিরক্ত করো না আমাকে। যাও এখান থেকে। মাথায় প্রচুর ব্যথা করছে তার উপর তোমার পেইন। রুদ্রর কথায় দোলার খারাপ লাগে না এখন। বরং আরও রেগে যায় সে।
– একদম শেরগিরি দেখাতে আসবেন না এখন। শরীর খারাপ নিয়ে শুয়ে থাকবেন পড়ে মানুষ বলবে কি রুদ্রনীল চৌধুরীর ওয়াইফ তার স্বামীর অসুস্থতায় টেক-কেয়ার করিনি। দেখা যাবে আপনি বাইরে এটা বলে বেড়াতে পারেন। আপনাকে দিয়ে তো আমার একটু বিশ্বাস নেই। দোলার এমন অদ্ভুত কথায় রুদ্র চোখ মুখ কুচকে বলে হোয়াট? আর ইউ ক্রেজি? দোলা বিরক্ত করো না যাও বলছি?
– আমি আমার কাজ শেষ করে এমনি চলে যাবো। আপনার কাছে থাকার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। কথাটা বলে দোলা মুখ বাঁকায়।
– সেটাই! প্রয়োজন ফুরিয়ে আসলে সবাই-ই দূরে চলে যায়। তুমি কেনো বাদ থাকবে। তুমিও তো আছো সবার মধ্যেই। হঠাৎ রুদ্রর এমন রহস্যময় কথায় দোলা ঘাবড়ে যাওয়া চোখে তাকায়। মনটা বিষন্নতায় ছেয়ে যায়৷ সে মোটেও সেইভাবে কথাটা বলতে চাইনি রুদ্রকে৷ দোলার চোখে পানি চলে আসে আপনাআপনি। কিন্তু কেনো? রুদ্রর এই কথায় তার কি যায় আসে? দোলা নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলে বড্ড বেশি কথা বলেন আপনি৷ যা বলছি তাই করুন তো। আমার কাজ আছে আবার। দোলার কথায় রুদ্র আর কোনো প্রতিবাদ করে না। শরীর খারাপ থাকায় বেশি কথা বলতে একদম ইচ্ছে করছে না তার৷ আর যতখন না সে দোলার কথা শুনবে ততখন দোলা কানের কাছে এইভাবে ঘ্যানঘ্যান করে যাবে৷ তাই রুদ্র বাধ্য ছেলের ন্যায় উঠে বসে৷
— দোলা নিজে হাতে ডিমের অমলেট আর ওষুধ খায়ে দেয় রুদ্রকে। দোলা যতটা সময় রুদ্রকে খায়ে দিয়েছে রুদ্র ততটা সময় দোলার দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে ছিলো। এতে দোলার অস্বস্তি হলেও কিছুটা ভালো লাগাও কাজ করে। রুদ্র আবারও শুয়ে পড়ে। চোখ খুলে থাকা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না আর।
– বেলা প্রায় এগারোটা নাগাদ। রুদ্রর ঘরে রত্না চৌধুরী, জেসমিন চৌধুরী, তানিয়া উপস্থিত হয়৷ রুদ্রর জ্বর এসেছে শোনার পরেই তারা আসেন৷ রত্না চৌধুরী রুদ্রকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে বসে আছে। রুদ্রর এখন কিছুটা ভালো লাগছে৷ তেমন ভাবে জ্বরটাও নেই৷ হয়তো ওষুধ খাওয়ার জন্য সামরিক ছুটি নিয়েছে৷ তবে মাথাটা বেশ ভাড় হয়ে আছে এখনো রুদ্রর।
– আহারে ছেলেটা আমার। হঠাৎ জ্বর কিভাবে বাঁধালি বাবা তুই? অনেক কষ্ট হচ্ছে নিশ্চয় তোর রুদ্র। আচ্ছা কিছু কি খাবি তুই? লজ্জা পাস না রুদ্র৷ পিপির হাতে কিছু খেতে ইচ্ছে করলে বল আমি এখনি তোর জন্য রান্না করে নিয়ে আসছি৷ জেসমিন চৌধুরীর কথায় রুদ্র, রত্না চৌধুরী ,তানিয়া বিরক্ত নিয়ে তাকায়৷ দোলা ঠোঁট চেপে হাসে জেসমিন চৌধুরীর কান্ডে৷ রুদ্র দোলার দিকে তাকিয়ে দেখে দোলা হাসছে তাকে দেখে।
– আমাকে কি তোমার ছোট বাচ্চা মনে হয় পিপি৷ সামান্য শরীর খারাপ হলে তোমায় বলব আমি এটা খাবো ওটা খাবো। আমি ঠিক আছি ওকে। আমার কিছু হয়নি? আর কিছু খাবো না৷ থ্যাংকস। দোলার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে কথাগুলো বলে রুদ্র। দোলার এতে কোনো যায়-আসে না।
– কতটা ঠিক আছিস সে তো দেখতেই পাইছি রুদ্র। সত্যি করে বলতো এত জ্বর আসলো কিভাবে? তুই কি গতরাতে বৃষ্টিতে ভিজেছিস? বিস্মিত চাহনি রেখে বলে রত্না চৌধুরী।
– হ্যাঁ মা ঠিকই বলেছো। উনি কাল রাতে বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফিরেছেন। চট করে বলে উঠে দোলা।
– তুমি কীভাবে জানলে? আমি যতদুর জানি তুমি তো ঘুমাতে ছিলে৷ আই মিন আমি ঘরে এসে তোমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখি! তাহলে তুমি কীভাবে জানলে আমি গতরাতে বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফিরেছি?
– রুদ্রর কথায় দোলা ঘাবড়ে যায়।
– এই রে ধরা খেয়ে গেলাম নাকি। আমি তো কাল ঘুমানোর ভান করে ছিলাম উনি যখন আসে। উফফ দোলা কখন কোন কথা কিভাবে বলতে হয় আজো শিখলি না। রুদ্র কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে থাকে দোলার দিকে।
— ঘুমাইতে ছিলাম তাতে কি? আমি তাও দেখতে পাই আমতাআমতা করে বলে দোলা। দোলার কথায় তানিয়া আর রুদ্র হযবরল লুক নিয়ে বলে এএয়!
– শুন রুদ্র তুই সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত ঘর থেকে একদম বের হবিনা৷ আর এটা আমার আদেশ। প্রসঙ্গ বদলে বলে রত্না চৌধুরী। জানিসই তো বৃষ্টির পানি তোর একদম সহ্য হয়না তারপরও যখন ভিজতে গেছিস তখন এটাই তোর শাস্তি।
– আমি কি এখনো ছোট আছি মা? যে তুমি আমাকে শাস্তি দেবে। আমার অফিসে জরুরি কাজ আছে মা। এইভাবে ঘরে বসে থাকলে চলবে না আমার।
হ্যাঁ তুই এখনো ছোট আছিস আমার কাছে আর সারাজীবন তাই থাকবি। সন্তানরা কখনোই বড় হয়না মায়ের কাছে। রত্না চৌধুরী বলে মলিন কন্ঠে।
মামি ঠিকই বলেছে ব্রো! তুমি এই শরীর নিয়ে বাইরে যাবে না৷ সুস্থ হয়ে যা কাজ করার করবে। আপাতত রেস্ট করো। রুদ্র আর কি করবে। মায়ের আদেশ বলে কথা৷ বাচ্চাদের মতো সবটা মাথা পেতে মেনে নেয়।।
— বেশ হয়েছে৷ রাক্ষসটা একদম জব্দ হয়েছে৷ আরো ভেজ গিয়ে বৃষ্টিতে।
— কেটে যায় দুদিন! এই দুদিন জ্বর নিয়ে বেশ ভোগান্তি গেছে রুদ্রর। জ্বর যেনো তার সাথে ভেলকি শুরু করে। এই যায় তো এই হঠাৎ আসে। আর এইভাবে দুদিন রুদ্রকে বিসানায় পড়ে থাকতে হয় তার উপর রত্না চৌধুরীর আদেশ। দোলা যথাযথ কেয়ার করেছে রুদ্রর এই দুদিন। সাথে সুযোগ পেয়ে ইচ্ছে মতো জ্বালিয়েছেও। রুদ্র বেচারা বউয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলো। আজ রুদ্র রেডি হচ্ছে অফিস যাওয়ার জন্য। এই দুদিন রাজই সামলিয়েছে সব। সকাল নয়টা বাজে। দোলা রান্নাঘরে নাস্তার ব্যবস্থা করছে সার্ভেন্টের সাথে। রত্না চৌধুরী তার ঘরেই আছে। তানিয়া ড্রয়িং রুমে বসে ফোন চাপে। একটু পর সে ভার্সিটি যাবে। এর মধ্যে আগমন হয় একজনের। কারো উপস্থিতির আভাস পেয়ে তানিয়া ফোন থেকে চোখ তুলে সামনে তাকাতেই মুখে আপনাআপনি হাসি ফুটে উঠে।
– আরে আশা তুমি? ( দোলার ফ্রেন্ড) তানিয়া এত উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে যে দোলা রান্নাঘর থেকে শুনতে পেয়ে ছুটে আসে।
– কেমন আছো তানিয়া? দোলা, তানিয়া, আশা সেম ইয়ার৷ সবাই অনার্স থার্ড ইয়ারে। তবে তানিয়া আলাদা ডিপার্টমেন্টে কিন্তু একই ভার্সিটি। যার ফলে সে আশাকে চিনে। ইনফ্যাক্ট তানিয়া দোলাকেও আগে থেকে জানতো।
– আশা তুই? হাসি মুখে বলে দোলা। দোলাকে দেখে আশা মুখের হাসিটা চওড়া করে বলে তুই নাকি ওইখানে গিয়েছিলি আঙ্কেল বললেন। আমাকে বলিস নাই কেনো একবার? তাহলে তো আমি যেতাম দেখা করতে৷ ভ্রু কুচকে বলে আশা।
– আসলে হুট করে যাওয়া হয়ে গেছে তাই জানাতে পারিনি৷ তুই দাঁড়িয়ে কেনো বস না। নাস্তা করে যাবি কিন্তু।
– না রে দোলা আমি নাস্তা করে বেরিয়েছি বাসা থেকে। তোকে একটা কথা বলার জন্য আসলাম। আশার কথায় দোলা আর তানিয়া আগ্রহ পূর্ণ দৃষ্টি রাখে।
– তুই কি আর কলেজ যাবি না দোলা? দুই মাস হয়ে গেছে তুই কলেজ যাসনা৷ সামনে মাসে আমাদের পরিক্ষা। এসাইনমেন্ট দিয়েছে আর এর মধ্যে তুই ক্লাস মিস দিচ্ছিস৷ কত ইমপোর্টেন্স ক্লাস যাচ্ছে আমাদের বিস্মিত কন্ঠে বলে আশা। আশার কথায় দোলার চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যায়৷ মলিন কন্ঠে বলে না রে আমার আর পড়াশোনা হবে না। ইচ্ছে ছিলো পড়াশোনা করে নিজে কিছু একটা করার। কিন্তু ভাগ্য আমাকে এমন একটা জায়গায় এনে দাঁড় করাবে কে জানতো।
– এটা কেমন কথা দোলা? তুই এত ভালো স্টুডেন্ট আর পড়াশোনা করবি না? আচ্ছা রুদ্র ভাইয়া কি পারমিশন দেয়নি তোকে?
– দোলা ভার্সিটি যাবে এবার পড়াশোনাও শেষ করবে চিন্তা করো না৷ রুক্ষ কন্ঠে বলে রুদ্র। উপর দাঁড়িয়ে এতখন সবটাই শুনতে ছিলো সে৷ তবে রুদ্রর খারাপ লাগছে সেদিন দোলার উপর না জেনে চোটপাট করায়। দোলা সত্যি তার বাবার বাড়ি গিয়েছিলো। আর সে কি না কি ভেবে দোলাকে কতগুলো খারাপ কথা শোনায়।
– রুদ্রর কথায় তানিয়া আশা খুশি হয়। দোলার মুখেও হাসি আসে আনমনে। কিন্তু সেটা দোলা প্রকাশ করে না। মুখটা গম্ভীর রেখে বলে আমি পড়াশোনা করবো না বলেছি যখন তো করবো না। মিস্টার রুদ্রনীল চৌধুরী ভুলে যাচ্ছেন হয়তো পড়াশোনা করতে হলে আমাকে বাইরে যেতে হবে, সবার সাথে মিশতে হবে৷ এমনকি আমার ছেলে বন্ধুরাও কোনো দরকারে আমার সাথে কথা বলতে পারে৷ তখন উনি কি করবেন? আমাকে একগাদা কথা শোনাবে সাথে তাদের অবস্থা খারাপ হবে আমার জন্য। আমি চাইনা আমার জন্য কারো ক্ষতি হোক৷ পড়াশোনা যা করার করেছি আর দরকার নেই৷ কথাটা অনেক কষ্ট নিয়ে বলে দোলা। কান্নায় গলা ধরে আসে তার।
– আমি যখন বলেছি তুমি ভার্সিটি যাবে মানে যাবে। রুদ্রনীল চৌধুরীর ওয়াইফ সামান্য অনার্স টাও পাশ করেনি এটা যদি লোক সমাজে জানাজানি হয় তাহলে সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে৷ আর আমি সেটা একদম চাইনা৷ তাই বাধ্য মেয়ের মতো ভার্সিটি করবে কাল থেকে। তোমাকে পড়াশোনা শেষ হতে হবে এটাই ফাইনাল। রুদ্রর কথায় দোলার মধ্যে প্রশান্তির ছোয়া। একরাশ ভালো লাগা৷ আবারও সে পড়াশোনা করতে পারবে! তার স্বপ্নে এগিয়ে যেতে পারবে ভেবেই অনেক আনন্দ হচ্ছে দোলার। কিন্তু মুখটা সেই আগের ন্যায় করে রেখেছে।
– আর রইলো বাইরে যাওয়া কোনো ছেলের সংস্পর্শে আসা সেটা একই থাকবে। এই নিয়মের কোনো পরিবর্তন নেই। তোমার কাজ ভার্সিটি যাওয়া পড়াশোনা করা আর অন্য কিছুর দরকার নেই তো৷ আমি ছাড়া তোমার জীবনে আর কারো প্রয়োজন নেই এটা মাথায় ভালো করে গেথে রেখো। কথাগুলো বলে রুদ্র গটগটে পায়ে বেরিয়ে যায়৷ রুদ্র যেতেই আশা আর তানিয়া নেচে উঠে। দোলা ঠোঁট বাকিয়ে হাসে ওদের কান্ড দেখে।
উফফ কি যে খুশি লাগছে ভাবি আমার। আমরা একসাথে ভার্সিটি যাবো। সময় কাটাবো। তুমি তো ফ্রি আজ থেকে ভাবি।
– ফ্রি আর হতে পারলাম কই? জানি না কি হবে৷ আগের নিয়মটাই ঠিক ছিলো নাকি পরেরটা ঠিক হবে৷ আমার তো বড্ড ভয় তানি। আমার জন্য না কেউ বিপদে পড়ে যায়।
– এইসব ছাড় তো৷ তুই যে ভার্সিটি যেতে পারছিস এটাই অনেক। তাহলে কাল থেকে দেখা হচ্ছে? আবেগী হয়ে বলে আশা।
– কি নিয়ে এত মাতামাতি হচ্ছে শুনি? রত্না চৌধুরী আসেন হাসি মুখে কথাটা বলতে বলতে।
– মামি জানো! ভাবি আবার ভার্সিটি যাবে কাল থেকে। আর এটা ব্রো বলেছে। উল্লাসিত কন্ঠে বলে তানিয়া৷ জেসমিন সব শুনে রাগে রিরি করে ঘরে চলে যায়। যত সব আদিখ্যেতা।
— বেশ ভালো খবর তো৷ যাক অবশেষে আমার ছেলেটার সুবুদ্ধি হয়েছে৷ হেসে বলেন রত্না চৌধুরী।।কিন্তু দোলা যেনো খুশি হয়েও হতে পারে না।
– চলবে….
– ❌❌কপি করা নিষেধ ❌❌ ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।