তুমিময় আসক্তি পর্ব -০৭

#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম (লেখিকা)
“৭”

–” দোলা রেডি হচ্ছে কলেজ যাওয়ার জন্য। রুদ্র তানিয়া আর দোলাকে নামিয়ে দিয়ে অফিস যাবে। দোলার মনটা আজ বেশ ফুরফুরে। ঠোঁটের কোণ থেকে যেনো হাসি এক মুহুর্ত জন্য সরে না। রুদ্রর প্রতি কিঞ্চিৎ পরিমাণ হলেও কৃতঙ্গতা কাজ করছে দোলার মধ্যে। রুদ্র রেডি হয়ে একহাতে একটা ফাইল আরেক হাতে কফির মগ ধরে। খুবই মনোযোগ সহকারে ফাইলটা দেখছে রুদ্র। দোলা রেডি হতে হতে আয়না দিয়ে রুদ্রকে খেয়াল করছে। রুদ্রকে অনেক সুন্দর লাগছে আজ৷ আজ বলে না প্রতিদিনই তার লুক থাকে অসাম। রুদ্র সাদা শার্ট-টিশার্ট ইউজ করে। সাদা শার্ট তার উপর কালো ব্লেজার কটি রুদ্রর কিউটনেস আরো বাড়িয়ে তুলেছে।
— মানুষটাকে দেখে মনে হচ্ছে কত শান্তশিষ্ট। কিন্তু মাঝে মাঝে এতটা হিংস্র হয়ে উঠে যে তার কাছে সব ভালোলাগা ভালোবাসা ফিকে মনে হয়। কেনো এমন করেন উঁনি? উনি তো আমাকে ভালোবাসে! তাহলে আমাকে আঘাত কেনো করেন? কি রহস্য আছে আমাকে সবটা জানতে হবে। মনে মনে ভাবে দোলা।
– আমাকে দেখা শেষ হলে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও৷ অফিসে আমার অনেক কাজ আছে। দোলা যখন আনমনে হয়ে আয়না দিয়ে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে ছিলো তখন রুদ্র বলে উঠে কথাটা ফাইলের দিকে তাকিয়ে থেকেই। রুদ্রর কথায় দোলা হকচকিয়ে উঠে চোখ সরিয়ে নেয়৷ নিজের কাজে লজ্জিত হয় সে।

— আমি যে উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম সেটা উনি দেখলো কীভাবে? উনি তো ফাইলের দিকে তাকিয়ে আছেন৷ ওই গন্ডারটাই দ্বারাই সবই সম্ভব। দোলা এরপর বই গুছিয়ে নেয়। বই নিয়ে দোলা পিছু ঘুরতেই রুদ্রর সাথে ধাক্কা খায়। রুদ্র এত কাছাকাছি এসে দাঁড়ায় যে দোলা খেয়াল করিনি।
–ভার্সিটি যাচ্ছো তোমার ফোকাস টা যেনো পড়াশোনা আর ক্লাসের প্রতি থাকে৷ অন্যদিকে মনোযোগ দেওয়ার একদম চেষ্টা করবে না৷ তাহলে এর পরিনাম কি হবে নিশ্চয় অজানা নেই। কথাটা বলে রুদ্র ব্যাগ হাতে বেরিয়ে আসে৷ দোলা মনোক্ষুণ্ণ হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে রুদ্রর দিকে। এরপর রুদ্র আগে বেরিয়ে আসে দোলা পিছু পিছু।

— আশা,তানিয়া, দোলা ভার্সিটি ক্যাম্পাসে বসে আছে। দুইটা ক্লাস শেষ করে এখন আড্ডা দেওয়ায় মেতেছে তারা৷ সাথে আরও ফ্রেন্ড আছে। হঠাৎ পেছন থেকে একজন দোলার চোখ বেধে দেয় হাত দিয়ে। সবাই কৌতুহলী নিয়ে সে মানুষটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে কিন্তু তানিয়া ভ্রু কুচকে থাকে।

– সামির? দোলা বলে মুচকি হেসে। সামির দোলার চোখ থেকে হাত সরিয়ে বাচ্চাদের মতো ফেস করে বলে তুমি কি ভাবে আমাকে বুঝে যাও দোলা। আমি কখনো ফাঁকি দিতে পারিনা তোমাকে। বাই দ্যা ওয়ে এতদিন কোথায় ছিলে শুনি? ভার্সিটি আসোনি কেনো? বিস্মিত চাহনি নিয়ে বলে সামির।
– এতদিন শ্বশুর বাড়ি ছিলো আমাদের দোলারাণি৷ তাই ভার্সিটি আসতে পারেনি৷ কিন্তু এখন থেকে রেগুলার আসবে কিন্তু তুমি কোথায় ছিলে সামির এতদিন? তোমাকেও তো ভার্সিটি দেখিনি দোলার বিয়ের পর থেকে সন্ধিহান চোখে তাকিয়ে বলে আশা।
– তোমার বিয়ে হয়েছে দোলা? অবিশ্বাস্য একটা লুক নিয়ে বলে সামির আশার কথা ইগ্নোর করে।
– হুম আমার বিয়ে হয়েছে। আর সেই জন্য এতদিন ভার্সিটি আসা হয়নি। বেশ হাসি মুখেই বলে দোলা। তানিয়া এখনো ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।

— আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করে নিলে? অভিমানী কন্ঠে বলে সামির৷ দোলার মুখটা মলিন হয়ে আসে। তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে আমি নিজেই জানতাম না আমার জীবনে এমন একটা পরিবর্তন আসবে৷ হুট করে হয়ে গেছে সব কিছু তাই জানাতে পারিনি।
– একলিস্ট বিয়ের পর তো ফোন দিয়ে জানাতে পারতে? সামিরের কথায় দোলা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে৷। এইসব কথা থাক এখন৷ আসো পরিচয় করিয়ে দিই! তানিয়া এটা আমার ফ্রেন্ড সামির আর সামির এটা আমার ননদ তানিয়া আবার ক্লাসমেটও। যদিও আমরা আলাদা বিভাগে আছি।

– দোলার কথায় সামির মুচকি হেসে বলে হাই আইম সামির? তানিয়াও হ্যালো বলে মৃদু হেসে।
– দোলা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। একটু সাইডে আসবে প্লিজ? সামির বলে দোলাকে।
– সামিরের কথায় দোলা একটা ঢোক গিলে এদিক ওদিক তাকায়। এতখনে রুদ্রর কথা মাথায় আসে তার।।
— তোমার কি বলার আছে এখানেই বলো না সামির। আমতাআমতা স্বরে বলে দোলা।
– সবার সামনে বলতে পারবো না বলে তোমায় একা আসতে বলছি৷ প্লিজ পাঁচ মিনিট? অনুরোধ করে সামির৷ দোলা কি করবে বুঝতে পারছে না৷ যদি রুদ্র কোনো ভাবে খবরটা পেয়ে যায় তাহলে আবারও তার উপর অত্যাচার করবে এমনকি সামিরেরও ক্ষতি করার চেষ্টা করবে৷। দোলা জিভ ঠোঁট ভিজিয়ে বলে সরি সামির আমি তোমার সাথে যেতে পারছি না। প্লিজ আমাকে অনুরোধ করো না৷ অসহায়ত্ববোধ দোলার মধ্যে।

– তুমি অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছো দোলা। করুণ কন্ঠস্বর সামিরের।
– দোলা আহত দৃষ্টিতে সামিরের দিকে তাকিয়ে বলে পরিস্থিতি মানুষকে বদলে দেয় ইনফ্যাক্ট বলদে যেতে বাধ্য করে। আমিও তেমন হয়েছি! আর একটা কথা সামির! প্লিজ তুমি যখন তখন আমার সাথে এইভাবে কথা বলতে এসো না৷ আমাদের সম্পর্কটা আগের মতো আর নেই আর কোনোদিন হবেও না৷ কারণ জানতে চেয়েও না৷ শুধু এইটুকু জেনে রাখো আমি বাধা পড়ে গেছি বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে৷ যেটা আমার জন্য আশির্বাদ স্বরুপ না। দোলা চলে আসে সেখানে থেকে।
-দোলা আসতেই সামির মুচকি হাসি দেয় একটা।

— শুনলাম তুই নাকি দোলা ভাবিকে ভার্সিটি যাওয়ার পারমিশন দিয়েছিস? হাস্যজ্বল মুখে কথাটা বলতে বলতে আসে রাজ৷ রুদ্র ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে রাজের দিকে তাকিয়ে আবারও ল্যাপটপে চোখ রাখে।
— যাক এতদিনে তোর সুবুদ্ধি হলো তবে? রুদ্র চোখ পাকিয়ে তাকায় রাজের দিকে৷ রাজ আমতাআমতা করে বলে না মানে! তুই খুব ভালো একটা ডিসিশন নিয়েছিস রুদ্র। দোলা ভাবির সাথে সম্পর্কটা স্বাভাবিক করে নিস এবার তাহলে হবে।
– আজাইরা কথা বাদে যদি কোনো কাজের কথা থাকে তো সেটা বল গম্ভীর কন্ঠে বলে রুদ্র।
– অবশ্যই কাজের কথা বলব তাই তো আসলাম। সামির চৌধুরী আমাদের পেছনে হাতধুয়ে পড়েছে৷ ওর প্রতিটি প্রডাক্ট আমাদের থেকে একটা কম রেটে ছাড়ছে৷ যদি ওর প্রডাক্টের দাম কম হয় তাহলে তো আমাদের প্রডাক্ট বেশি দাম দিয়ে কেউ নিবে না রুদ্র। আমরা খুব বড় লসের মুখে পড়ে যাবো।

— রাজের কথায় রুদ্র ভ্রু কুচকে তাকায়। এরপর মুচকি হাসি দিয়ে বলে এটা নিয়ে এত চিন্তার কি আছে। ওর প্রডাক্ট ও বিনা-পয়সায়তেও ছাড়তে পারে! সো হোয়াট?

– কি বলছিস তুই রুদ্র? মানে ভেবে বলছিস কথাটা৷ আমাদের প্রডাক্টের কি হবে তাহলে?
– শুন রাজ! সামির আমাদের সাথে খুব বড় একটা খেলায় মেতেছে যার শুরুটা ও করলেও শেষটা আমি করবো আর ওর পাপের প্রতিটি হিসাবও আমি নিবো। আমি তো অনেক আগেই নিঃস্ব করে দিয়েছি সামিরকে ওর সবচেয়ে মুল্যবান জিনিসটা ছিনিয়ে নিয়ে । এইগুলা আর এমন কি ব্যাপার? চিন্তা করিস না৷ আমি থাকতে কিছু হবে না আমার কোম্পানির। আর উপরে উঠবো আমি! তরতর করে উপরে উঠবে আমার নাম-জোস৷ কথাগুলো বলে রুদ্র ডেভিল হাসি দেয় একটা।

— দোলা মা তোরা কাল কিন্তু ভার্সিটি যেতে পারবি না। রাতে খাওয়ার সময় কথাটা বলেন রত্না চৌধুরী। রত্না চৌধুরীর কথায় দোলা,তানিয়া, রুদ্র কৌতুহলী চোখে তাকায়।
– কেনো মা? কাল কি আছে? রুদ্র প্রশ্ন করে।
– কাল আমরা সবাই দাওয়াতে যাবো। আমার একটা রিলেটিভের মেয়ের বিয়ে। আমাদের সবাইকে যেতে বলেছে সেখানে। স্বাভাবিক ভাবে বলে রত্না চৌধুরী।
– তুমি আর পিপি যাও তাহলে। দোলা কেনো?
-আমরা সবাই যাবো রুদ্র। এমনকি তুইও যাবি আমাদের সাথে৷ আমার খুব কাছের মানুষ তারা। বাড়ি বয়ে দাওয়াত দিয়ে গেছে। সেখানে আমাদের একটা দায়িত্ব আছে কিছুটা রেগে বলেন রত্না চৌধুরী।

-সরি মা আমি যেতে পারবো না। তোমরা যেও সমস্যা নেই৷ আমি সব ব্যবস্থা করে রাখবো। আমার কাল বড় একটা ডিল ফাইলান করার আছে। এটা হাত ছাড়া হলে অনেক বড় লসের মুখে পড়বে আমার কোম্পানি। রুদ্রর কথায় রত্না চৌধুরী কিছুক্ষন দম ধরে থেকে বলে ওকে তাহলে তুমি অফিস যেও। আমরা চলে যাবো। এরপর সবাই আবার খাওয়াতে মনোযোগ দেয়।

— রাত প্রায় এগারোটা। দোলা হাতের কাজগুলো সেরে রুমের দিকে আসে। রুদ্র ডিনার শেষ করে রুমে চলে এসেছে। অফিসের কাজ করছে মুলত। দোলা রুমের সামনে আসতেই কিছু একটা পড়ার শব্দে চমকে উঠে। ভয়ার্ত ফেসে পিছু ফিরে তাকাতেই দেখে তাদের রুমের দুইরুম পর একটা রুম আছে সেখানের সামনে থাকা ফুলদানি হাওয়াতে পড়ে ভেঙে গেছে৷ দোলা স্বস্তির দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেদিকে এগিয়ে যায়। দোলা ফুলদানির ভাঙা অংশ গুলো কুড়াতে গিয়েও থেমে যায়৷ সামনে থাকা রুমটার দিকে নজর যায় দোলার৷ দরজা লক করা। দরজায় ক্রস চিহ্নও দেওয়া। যার অর্থ এই রুমে প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু কেনো? দোলা বেশ কিছুক্ষণ সে রুমের দিকে তাকিয়ে থাকে৷ দোলা এর আগেও একবার এই রুমটা দেখেছিলো৷ তবে সেভাবে খেয়াল করেনি৷ এইদিকটা কোনো দরকার ছাড়া কেউ তেমন আসে না। দোলা যেহেতু এই বাড়িতে নতুন তাই এইদিকটা তার আসা হয়না তেমন। দোলা একজন সার্ভেন্টকে ডাকেন জায়গাটা পরিষ্কার করার জন্য।
– দোলার ডাকে একজন ছুটে আসে সেখানে। ফুলদানির ভাঙা অংশ গুলো কুড়াতে থাকে।
– আচ্ছা মালতি আন্টি! এই রুমটা এইভাবে বন্ধ কেনো? জিজ্ঞেস করে সার্ভেন্টকে। মালতি রুদ্রদের বাড়ির বেশ পুরাতন সার্ভেন্ট। তাই অনেক কিছুই তার জানা থাকতে পারে ভেবে দোলা প্রশ্ন করে।

– এইটা তো অনেক আগে থেকে বন্ধ গো মা। কারো আসার অনুমতি নাই এই ঘরে। মাঝে মাঝে শুধু রুদ্র বাবা আসেন। হয়তো রুদ্র বাবার অফিসের দরকারি কোনো কাগজপত্র আছে এই রুমে। তুমি এখানে থেকে যাও দোলা৷। রুদ্র বাবা দেখলে রাগ করবো৷ এই ঘরের সামনে কাউরে খাড়াইতে দেয়না সে। দোলা ভ্রু কুচকে তাকায় ঘরটার দিকে। কি এমন আছে এই রুমে যে এইদিকে কেউ আসতে পারে না। আর যদি অফিসের জিনিস হবে তো এইভাবে সবাইকে নিষেধ করার কি আছে। গন্ডারটাও না এমন একটা ভাব করে যে অনেক গুপ্তধনের মালিক আর তার চাবিকাঠি এখানে আছে৷ সব কিছুতে বেশি বেশি বিরক্ত নিয়ে ভাবে দোলা।

– তুমি এখানে কি করছো? গম্ভীর কন্ঠে বলে রুদ্র। চোখ মুখ জুড়ে তার অস্থিরতা ভাব একটা। দোলা চমকে উঠে রুদ্রর কথায়৷ ভাবনার মাঝে এইভাবে রুদ্র এসে হানা দেবে ভাবিনি সে৷ তাই হঠাৎ রুদ্রর গম্ভীর কথায় ঘাবড়ে যায়। চমকানো চোখে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে নুয়ে পড়া কন্ঠে বলে ওই ফুলদানিটা হঠাৎ হাওয়াতে পড়ে যায়৷ তাই… বাকিটা বলার আগে রুদ্র আগের চেয়ে আরো গাম্ভারিতা কন্ঠে এনে বলে তোমাকে যেনো এই ঘরের আশেপাশে আর না দেখি। যায় হয়ে যাকনা কেনো। ঘরে যাও! রুদ্রর অদ্ভুত আচরণ দোলার মধ্যে কৌতুহল বাড়িয়ে দেয় আরো। সন্ধিহান চোখে তাকায় সে।
– কি আছে এই ঘরের মধ্যে? আর উনি এতটা রেগে বা গেলেন কেনো? আমি তো শুধু ফুলদানিটা তুলতেই এসেছিলাম৷ নাহ কিছু একটা রহস্য আছে এখানে৷ আমাকে তো জানতেই হবে সবটা৷ আমি আবারও আসবো এখানে যখন উনি থাকবেন না৷ আমাকে সবটা খুঁজে বের করতে হবে৷
– কি হলো! কথা কানে যায় না৷ যাও বলছি। ধমক দিয়ে বলে রুদ্র৷ দোলা কেঁপে উঠে। রুদ্রর দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কেটে চলে আসে মনে মনে রুদ্রর গুস্টি উদ্ধার করে।

— পরেরন দিন! দোলা তানিয়া দুজনেই লেহেঙ্গা পড়ে। দোলা শাড়ি পড়তে চেয়েছিলো। কিন্তু তানিয়ার আবদারে লেহেঙ্গা পড়তে হয় তাকে। দোলা মেরুন রঙের একটা লেহেঙ্গা পড়েছে আর তানিয়া কলাপাতা রঙের। দুজনকে অনেক সুন্দর লাগছে দেখতে। দোলা চুলগুলো বড় খোপা করেছে৷ তানিয়া চুল এড়া দিয়ে রাখছে। জেসমিন চৌধুরী, রত্না চৌধুরী আর তানভীর আহমেদ রেডি হয়ে অপেক্ষার করছে দোলা আর তানিয়ার জন্য। দোলার রেডি হওয়া হলেও তানিয়ার যেনো সাঁজগোজ শেষ হয়না।

– তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে তানিয়া এবার তো চলো। নিচে সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। এবার কিন্তু আমরা বকা খাবো দেখো চিন্তিত ফেসে বলে দোলা ।
-এইতো হয়ে এসেছে ভাবি। কাজলটা দিয়ে নিই তাহলে কমপ্লিট। সবকিছু শেষ করে নিচে আসে তারা৷ রুদ্র এখনো অফিসে যায়নি। একটু পরেই সে বেরোবে।
– দোলার দিকে চোখ পড়তেই দৃষ্টি আটকে যায় রুদ্রর । মুগ্ধ চাহনিতে দোলাকে দেখছে । মেরুন রঙটা যেনো বেশ মানিয়েছে দোলাকে। হাল্কা মেকাপে সত্যি খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। রুদ্র যেনো চাইলেও চোখ সরাতে পারছে না দোলার দিক থেকে। যার মায়ায় আবদ্ধ হয়ে গেছে অনেক আগেই যার নেশায় আসক্ত হয়ে আছে তার সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে এটাই স্বাভাবিক। দোলার মধ্যে অস্বস্তি হচ্ছে রুদ্রর এমন অদ্ভুত ভাবে তাকানো দেখে।

– দোলা একটু রুমে আসো তো দরকার আছে৷ হুট করে বলে উঠে রুদ্র৷ এরপর এক সেকেন্ডও সে দাঁড়ায় না ঘরে চলে আসে৷ দোলা বিরক্ত নিয়ে ঠোঁট উল্টোয়।
– মাত্র আসলাম কত কষ্ট করে নিচে আবার আমাকে উপরে যেতে হবে৷ একে তো ভারী লেহেঙ্গা তার উপর সিঁড়ি বয়ে ওঠা৷ এই রাক্ষসটার আবার কি দরকার আমার সাথে।

– দোলা! রুদ্র কি বলছে শুনে আসো যাও৷ আমরা বের হবো তো দেরি হয়ে যাচ্ছে। রত্না চৌধুরীর কথায় দোলা মুখটা মলিন বলে হ্যাঁ মা যাচ্ছি।

– রুদ্র ঘরে এসে অপেক্ষা করছে দোলার আসার। বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে সে। কেনো সে দোলাকে ডাকলো সে নিজেও জানে না। কিন্তু কেনো জানি খুব ইচ্ছে করছে দোলাকে একান্ত কাছ থেকে দেখার।

– দোলা একরাশ বিরক্ত নিয়ে রুমের মধ্যে আসতেই রুদ্র হুট করে দোলার হাত টেনে ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। ভয় পেয়ে যায় দোলা। রুদ্রর হুটহাট কাজ বেশ বিপদে ফেলে দেয় বেচারিকে।

– মাদক চাহনি রুদ্র। ঠোঁট যেনো কিছু বলতে চাই। চোখের মধ্যে অবাধ প্রেম। দোলা থমকে যায় সে চাহনিতে৷ আটকে যায় তারও দৃষ্টি সে প্রেমময় চোখে। দোলার ঠোঁট দুটো রুদ্রকে যেনো খুব করে টানছে৷ নিজেকে কন্ট্রোল করা দায় হয়ে পড়ে রুদ্রর। রুদ্র তার ঠোঁট দুটো দোলার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যেতে নিলে দোলা মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলে কেনো ডেকেছেন। অস্পষ্ট কন্ঠস্বর দোলার৷ ভারী নিশ্বাস ঘনঘন ছাড়ছে। হার্টবিট ক্রমশ ওঠানামা করছে দোলার। রুদ্র থেমে যায় দোলার কথায়। তার মধ্যে আসে অন্য ভাবনা চিন্তা৷ দোলাকে কি বলবে এখন? কেনো ডেকেছে সত্যি তো তার জানা নেই৷ যদি বলে কারণ ছাড়া ডেকেছে তাহলে নিশ্চিয় দোলা হাসবে রুদ্রকে নিয়ে আর নয়তো ভাববে রুদ্রর মাথায় সমস্যা আছে। রুদ্রকে চুপ থাকতে দেখে দোলা আবার বলে কি হলো বলুন? কেনো ডেকেছেন? নিচে সবাই অপেক্ষা করছে আমার জন্য।

— আগামীকাল গল্প দেবো না৷ তাই কেউ অপেক্ষা করবেন না।

চলবে…

– ❌❌কপি করা নিষেধ ❌❌ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here