তুমিময় আসক্তি পর্ব -২৫+২৬

#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম (লেখিকা)
“২৫”

– এটা তুমি কি করলে রোজা? ফুপিকে মেরে দিলে? ফুপি তো তোমার হয়ে কাজ করেছে। তাহলে কেনো করলে এমনটা? অবাক হয়ে বিস্ময়ভরা কন্ঠে বলে দোলা। রোজা দোলার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট এলিয়ে হেসে বলে বেইমানের সাথে এমনই করতে হয়। পিপি রুদ্রর খেয়েছে-পড়েছে ওর থেকে সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছে। আর ওর বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র করেছে। বেইমানি করেছে সে তার পরিবারের সাথে। সেখানে থেকে যে আমার সাথেও এমনটা করবে না কখনো তার কি নিশ্চয়তা আছে? যে নিজ স্বার্থ হাসিল করতে আপনজনদের সাথে এমন করতে পারে সেখানে আমি তো কেউ না। তাই আর রিস্ক রাখলাম না। প্রাপ্য সম্মান দিয়ে ফুড়ুৎ কথাটা বলে রোজা শব্দ করে হেসে উঠে। সাথে সামিরও হাসছে৷ সবাই যেনো অবিশ্বাস্য চাহনি বজায় রেখেছে রোজার দিকে।

– তাছাড়া এটা আমার অনেক আগে থেকেই প্ল্যান ছিলো। আমার কাজ শেষ হলে পিপিকে আর দরকার নেই। কারণ সে ওই চৌধুরী বাড়ির রক্ত। আর চৌধুরী বাড়ির কেউ জীবিত থাক এটা আমি চাইনা। দাঁতে দাঁত চেপে বলে রোজা।

— কেনো এমন করছো তুমি? কিসের এতো রাগ তোমার চৌধুরী পরিবারের প্রতি? কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করে দোলা। সবার মধ্যেই এই কৌতুহল। কেনো রোজা এমন খেলায় মেতেছে সেটা এবার জানার সময় এসেছে।
– আমার জানা মতে তোমার বা তোমার পরিবারের সাথে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই বা ছিলো না। তাহলে কেনো করছো তুমি এমন? কিসের প্র/তি/শো/ধ নিচ্ছো আমাদের থেকে? রত্না চৌধুরীর কথায় রোজা বলে শত্রুতা ছিলো না? সত্যি কি ছিলো না? রোজার এমন প্রশ্ন করায় রুদ্র, রত্না চৌধুরী ভ্রু কুচকে তাকায়।

– এই পৃথিবীতে কেউ যদি আমার সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে থাকে সেটা তোমরা। তোমরা সবাই আমার বাবার খু/নি। মে/রে ফেলেছো তোমরা আমার বাবাকে। আমার বাবাই ছিলো আমার সব। আমার আশ্রয় আর সেটা তোমরা কেড়ে নিয়েছো। কি করেছিলো আমার বাবা? অবৈধ পথে পা বাড়িয়েছিলো। কালোবাজারি সাথে যুক্ত হয়েছিলো এটাই তো। কিন্তু তোমরা! নাহ তোমার স্বামী মিস্টার জাহির চৌধুরী কি করলেন। তার প্রাণ প্রিয় বন্ধুকে জেলে পাঠিয়ে দিলেন। যে বন্ধুত্বের দাবী নিয়ে সম্পর্ক চলছিলো সেদিন এক নিমিষে শেষ করে দেয়। রোজার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে কথা গুলো বলতে।

– তোমার ভুল হচ্ছে রোজা৷ তোমার বাবা অনেক খারাপ একটা মানুষ ছিলো যেটা আমরা কেউ জানতাম না। তোমার বাবার জন্য আমাদের কোম্পানি অনেক লসের মুখে পড়ে। যেটা থেকে বেড়িয়ে আসতে অনেক কিছু সাফার করতে হয় আমাদের। তোমার বাবা ইচ্ছে করে কোম্পানিতে দুই-নাম্বার জিনিস ঢুকিয়ে দেয়। তাছাড়া তোমার বাবা রুদ্রর বাবাকে হ/ত্যা করার ষ/ড়/যন্ত্রও করেছিলো। আর তুমি বলছো এইগুলো সামান্য ব্যাপার। তোমার বাবা নির্দোষ ছিলো এত কিছু করেও। শুনো রোজা! তোমার বাবা যা করেছে তার শাস্তি তিনি পেয়েছেন। আর এটাই ছিলো উনার প্রাপ্য। কিন্তু তোমার বাবা যে নিজ থেকে আ/ত্ন/হ/ত্যা করবে এটা ভাবিনি কেউ আমরা। কিন্তু এর জন্য মোটেও আফসোস নেই আমাদের। কারণ যে যেমন কর্ম করবে সে তেমন ফল পাবে এটাই স্বাভাবিক দৃঢ় কন্ঠে বলে রত্না। রত্না চৌধুরীর কথা শেষ হতেই রোজা একটা আঙ্গুল তুলে চিৎকার করে বলে চুপ একটাও বাজে কথা শুনতে চাইনা আমার বাবাকে নিয়ে। রোজার চিৎকারে কেঁপে উঠে রত্না চৌধুরী। রুদ্র রাগী কন্ঠে রোজা বলে উঠে।

– আমার মায়ের সাথে ভদ্রভাবে কথা বলো।।নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে। অনেক সহ্য করছি তোমার এইসব অন্যায়। তুমি যা করছো সেগুলো তো ঠিক নয় বরং অনেক বাড়াবাড়ি। যেটার জন্য তোমাকে অনুতপ্ত হতে হবে৷ ভুগতে হবে। রুদ্রর কথায় রোজা আবারও মুখে হাসি এনে বলে ও আচ্ছা তাই বুঝি! তা এত ঝাড়ি যে নিচ্ছো কি করবে আমার? এখানে থেকে কেউ বেঁচে ফিরতে পারবে বলে মনে হয় তোমার। এমনি এমনি আজকের আয়োজন করিনি আমি। তোমাদের সবাইকে শেষ করবো আজ। প্রথমে তোমার বাবাকে শেষ করেছি, তারপর নিজ হাতে নিজের সন্তানকে শেষ করেছি যাতে তুমি ভেঙে চুড়ে গুড়িয়ে যাও ভেতর থেকে। কারণ আমি জানতাম ওই সন্তানটা নিয়ে তোমার কত স্বপ্ন ছিলো। তুমি কত আশা নিয়ে ছিলে তুমি। বাচ্চাটা ছিলো তোমার দুর্বলতা। এরপর তোমাকে ছেড়ে এসে একদম চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছি কিন্তু এই দোলা। এই মেয়েটার জন্য আবার সব বদলে যায়। ও তোমার জীবনে এসে সব অন্ধকার সরিয়ে নতুন করে আলোর প্রবেশ ঘটায়। জীবনটা নতুন করে রঙিন করে সাজায়। কিন্তু এখন আর তা হবে না। তোমাকে আমি আবারও ভেঙে পড়া দেখতে চাই। তুমি না পাওয়ার কষ্টে ছটফট করবে আর আমি সেটা দেখতে চাই। তাই আজ আবারও তোমার সামনে তোমার স্বপ্ন তোমার আকাঙ্খা এই নব-সন্তান ” যে একটু একটু করে দোলার গর্ভে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাকে আমি শেষ করে দেবো।

–খবরদার রোজা ভুলেও আমার সন্তানের দিকে হাত বাড়াবে না। আমি বেঁচে থাকতে আমার সন্তানের কোনো ক্ষতি হতে দেবো না। তুমি তো একটা মেয়ে রোজা। তাহলে কিভাবে পারছো এমন কঠিন হতে। কিভাবে একটা নিষ্পাপ সন্তানের মৃত্যু কামনা করছো যেখানে সে এখনো এই দুনিয়ার মুখটাই দেখতে পারলো না। তাকে তুমি প্রতিশোধের খোরাক বানাচ্চো। লজ্জা করে না তোমার। ধিক্কার দিয়ে বলে দোলা।

– শুধুমাত্র সামির তোমায় ভালোবাসে বলে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছি তোমায়। নয়তো অনেক আগেই শেষ করে দিতাম আমি তোমাকে। এই যে এত বড় বড় কথা বলছো এখানে দাঁড়িয়ে সেটা পারতে না। শুধুমাত্র সামিরের জন্য বেঁচে যাচ্ছো তুমি দাঁতে দাঁত বলে রোজা।
— রোজা জাহির আঙ্কেলের যে গাড়িটা যে এক্সিডেন্ট হয়। ওইটা কি তুই করিয়েছিস? হঠাৎ করে বলে উঠে রাজ। রাজের কথায় রোজা ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে স্বাভাবিক ভাবে বলে একটু আগে তো বললাম আমি কথাটা৷ আমি মে/রে/ছি উনাকে প্ল্যান করে। রুদ্রর হাতের মুঠো শক্ত হয়ে আসে। রাজ একটা তপ্ত দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। রত্না চৌধুরী অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে৷ সবাই বিস্মিত হয়ে যায়।
– আসলে রোজা না৷ উনাকে মেরেছি আমি। কিন্তু প্ল্যানটা ছিলো রোজার বেশ গর্বের সাথে বলে সামির।

-আচ্ছা মারার আগে কয়েকটা কথা ক্লিয়ার করে নিই। তোমরা যখন বাঁচবেই না নিশ্চিত সেখানে কিছু সত্য কথা শুনে নাহয় যাও। তাও একটু হলেও শান্তি পাবে আশা করি। রুদ্র শুধু অগ্নিমুর্তি ধারণ করে সবটা দেখছে শুনছে৷

– আমি রুদ্রকে ইচ্ছে করেই বিয়ে করি। আমার বাবাকে জেলে দেওয়ার পরও আমি এমন একটা ভাব বজায় রাখি যাতে রুদ্রদের সন্দেহ না হয় আমার উপর। তাই আমার বাবার ব্যাপারে কোনো ইন্টারেস্ট দেখায় না। কিন্তু আমার বাবার সাথে যোগাযোগ ছিলো। আর বাবা কোথায় কি করতেন তার সবটাই আমি জানতাম। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো এই যে আমি রুদ্রকে ভালোবাসার যে প্রলোভন টা দেখাতাম। আই মিন আমি যে রুদ্রকে ভালোবাসি এটা সবার সামনে উপস্থাপন করতাম। ওইটা ছিলো শুধুমাত্র লোক দেখানো।।আসলে আমি তো রুদ্রকে কখনো ভালোই বাসিনি। ভালোবাসতাম ওর বাবার টাকা, নাম জোশ আর এত এত সম্পত্তিকে। রুদ্র একমাত্র সন্তান। তাই আঙ্কেলের যা কিছু আছে সব রুদ্রর নামেই হবে৷ যার জন্য আমি আর বাবা এটা ঠিক করি যে রুদ্রর সাথে বিয়ে করবো। ওকে ভালোবাসার কথা বলে। কিন্তু যখন আমার বাবা ধরা পড়ে যায়৷ তাকে জেলে পাঠানো হয় তখনও আমি কিছু করতে পারিনি বাবার জন্য। আমি তখনো অভিনয় করে গিয়েছি ভালোবাসার। কিন্তু কি হলো শেষ পর্যন্ত। আবার বাবা হঠাৎ করে এমন একটা কাজ করবে আমিও ভাবিনি। বাবা কেনো এমন একটা ডিসিশন নিয়েছিলো আমি জানি না। কিন্তু বাবা যে এই অপমান এই অবহেলা মানতে পারিনি এটা আমি বুঝে গিয়েছিলাম। আর এইসবের মূলে ছিলো চৌধুরী পরিবার। তাই আমি আস্তে আস্তে আমার প্ল্যান বদলায়। রুদ্রকে শেষ করে দেওয়ার চিন্তা করি। যার জন্য রুদ্রকে প্রতিটি পদে পদে আমি নিঃশ্বেষ করি। যেদিন আঙ্কেল আর আন্টি একটা কাজের জন্য একসাথে বাইরে যায় সেদিনই আমরা ভেবেছিলাম দুজনকে শেষ করে দেবো। আমি সামিরকে প্ল্যানটা জানালে ও সব ব্যবস্থা করে। আঙ্কেলের গাড়িটা এক্সিডেন্ট করায় এমন ভাবে যাতে কেউ সন্দেহ না করতে পারে। আর হয়েছিলো তাই। কিন্তু ওই এক্সিডেন্টে আঙ্কেল মা/রা যান। বেঁচে যায় আন্টি। এরপর আমি আন্টিকেও মেরে ফেলার চেষ্টা করি কিন্তু পড়ে জানতে পারি আঙ্কেল বেশ কিছু সম্পত্তির মালিকানা করে যান রত্না চৌধুরীর নামে। তাই আর আন্টিকে মারার কথা ভাবিনি। এরপর আমি রুদ্রকে আস্তে আস্তে বিষিয়ে তুলি ওর প্রিয় জিনিস গুলো কেড়ে নিয়ে। ভেবেছিলাম রুদ্র শোক কাটানোর আগেই ওর সব সম্পত্তি আমার নামে করে নেবো। আর এর জন্য আমি পিপির সাথে কথা বলি। তাকে অনেক টাকা আর রুদ্রর সম্পত্তির অর্ধেক দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। আর তাতেই তিনি আমার হয়ে কাজ শুরু করেন। এমনকি পিপি অনেক বার চেষ্টা করে আন্টির থেকে ওইসব সম্পত্তির মালিকানা নেওয়ার । তাই অনেক বার দলিলে সাইন করাতে গিয়েও ব্যর্থ হয় তিনি।

— আমি না অবাক হচ্ছি জানো। এতটা নিচ! এত জঘন্য কাজ কেউ করতে পারে৷ মানুষের মধ্যে প্রতিশোধের নেশা থাকলে সে যে কি ভয়ংকর হয়ে উঠে সেটা তোমাকে না দেখলে জানতাম না। অন্যায় করেছো তোমরা! আবার তোমরাই প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছো। আচ্ছা সব তো শেষ এরপরও কিসের প্রতিশোধ নিতে চাও? আমার তো মনে হয়না কিছু বাকি আছে আর। একটা পরিবারকে দিনের পর দিন শেষ করে দিয়েও তোমরা ক্ষান্ত হতে পারোনি৷ আবারও নতুন করে শুরু করেছো সব কিছু। আমি জানি না তোমাদের ঠিক কি শাস্তি দেওয়া উচিত আর কীভাবে দেওয়া উচিত। তবে তোমাদের সাথে যায় করা হোক না কেনো সেটাই কম করা হবে.। তোমাদের মতো মেয়ের জন্য পুরো মেয়ে-সমাজ লজ্জিত, অবহেলিত, ঠক-প্রতারক ট্যাগ বহন করছে।এই তোমার মতো মেয়েগুলোর জন্য প্রত্যেকটা মেয়ে দোষী হয়ে যায়। একজনের দোষের জন্য সবার অপমান, সমাজ থেকে যথাযথ সম্মানটাও আসে না ছিহ বলে মুখ ফিরিয়ে নেয় দোলা। সবার মধ্যে ঘৃণা বিদ্যমান।

– সামির দোলাকে চুপ করতে বলো। আমার ওকে জাস্ট সহ্য হচ্ছে না। শুধুমাত্র তোমার জন্য কিছু করতে পারছি না আমি৷ নয়তো এতখনে বলে রোজা দোলার দিকে এগিয়ে যেতে নিলে সামির হুংকার ছেড়ে বলে খবরদার রোজা দোলার দিকে যাবিনা। তাহলে কিন্তু তুই তোর কোনো কাজে আমাকে পাশে পাবিনা আর। তোর যা ইচ্ছে ওদের সাথে কর( রুদ্রদের দেখিয়ে বলে) কিন্তু দোলার সাথে কিছু করার কথা ভুলেও ভাবিস না। সামিরের মুখে তুই শুনে রোজা অবাক হয়ে বলে তুমি আমার সাথে এমন বিহেভ কেনো করছো সামির? সামির নিজেকে সামলে নিয়ে বলে সরি রোজা। দেখো দোলাকে আমি ভালোবাসি অনেক। তাই ওর ব্যাপারে কোনো খারাপ কথা আমি সহ্য করতে পারিনা।
রুদ্রর মুখে মুচকি হাসি। কিন্তু এই হাসি এটা শুধুমাত্র রুদ্রই জানে।
— অনেক কথা হয়েছে এবার কাজের কাজটা করি আমরা। সামিরের কথায় রোজা হাসার চেষ্টা করে বলে রুদ্র সাইন করে দাও কাগজটাই।
– করবো না সাইন যা ইচ্ছে করে নাও। রুদ্রর কথার সুর চেঞ্জ সাথে ভাব-ভঙ্গিও অন্য রকম লাগছে। গা ছাড়া ভাব নিয়ে দাঁড়ায় রাজ আর রুদ্র।

– রোজা ভ্রু উঁচিয়ে বলে উল্টো আমার সাথেই জেদ করছো। ওকে তাহলে দেখো আমি কি করতে পারি বলে রোজা একজনকে ইশারা করলে সে একটা ঘরে যায়। সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ বাদে সে ফিরেও আসে৷ তবে তার হাতে একটা ইঞ্জেকশন। এটা দেখে সবার মধ্যে কৌতুহল অস্থিরতা দেখা যায়। রোজা আর সামিরের মুখে ডেভিল হাসিটা জ্বলজ্বল করে উঠে।

– কি এটা? উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠে আশা।
– এই ইঞ্জেকশনটা যদি একবার দোলার শরীরে যায় তাহলে কি হবে জানো রুদ্র? প্রশ্নবোধক চাহনি নিয়ে বলে রোজা।
– রুদ্র ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে শুধু। দোলা ঘাবড়ে আছে ভীষণ।
– এই ইঞ্জেকশন একবার দোলার শরীরে প্রবেশ করলে তোমাদের অনাগত সন্তান চির-বিদায় নেবে গর্ভেই। চমকে উঠে সবাই রোজার কথায়৷ কিন্তু রুদ্র সে বেশ স্বাভাবিক ভাবে। তার মধ্যে কোনো ভাবগতি নেই।

– তুই একবার দোলাকে টাচ করে দেখা বাকি রইলো আমার সন্তান। গম্ভীর কন্ঠে বলে রুদ্র। রোজা রেগে গিয়ে বলে বাড়াবাড়িটা তুমি শুরু করলে এবার তার দায়ভারটও তোমার বলে রোজা দোলার দিকে যেতে লাগলে সজল আর তানিয়া আসে হন্তদন্ত হয়ে।

— ওদের দেখে থেমে যায় রোজা। সামির অবাক হয়ে বলে তোমরা এখানে?
– ভালোই তো হলো সামির। তানিয়া এখানে এসে আমাদের কাজটা আরো সহজ করে দিয়েছে। আলাদা করে ওকে আর মারতে যেতে হবে না আমাদের।
– কিন্তু সাথে ওইটা কে? সজলকে উদ্দেশ্য করে বলে রোজা।
– আমাকে দেখে এত খুশি হবে আমি না সত্যি ভাবতে পারিনি রোজা আপু৷ এতটা মিস করছিলে আমায় আগে জানলে আরো আগে চলে আসতাম ওখানে৷ অবশ্য অনেক আগেই এসেছি আমরা আর এসে কি করছিলাম জানো? ফিসফিস কন্ঠে ভ্রু উঁচিয়ে হেয়ালি নিয়ে বলে তানিয়া।

– কি করছিলে? মলিন কন্ঠে বলে সামির।

– এই যে তোমরা এত সুন্দর সুন্দর স্টোরি শুনাচ্ছিলে এদের আই মিন তোমাদের কু-কর্মের কথা গুলো সব এইটাই ভিডিও এন্ড রেকর্ড করছিলাম হাসিমুখে বলে তানিয়া হাতে একটা ক্যামেরা নিয়ে। আঁতকে উঠে তারা। রুদ্র আর রাজের মুখে মুচকি হাসি। তারা যেনো সব আগেই জানতো এইগুলো।

– তোমরা এখানে ঢুকলে কি করে? সামির আমাদের লোকজন কোথায়? ওরা কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমাচ্ছে নাকি উত্তেজিত কন্ঠে রেগে বলে রোজা।

– তোমার লোকজন এতখন উপরে যাওয়ার হাফ-টিকিট কেটে ফেলেছে৷ বাকিটা করবে পুলিশ আসলে। সজল বলে মুচকি হেসে।

– কি হচ্ছে এখানে এইসব। সামির তোমার লোকজন একটাও কাজের না তোমার মতো। এখানে যদি পুলিশ আসে আর প্রমাণ গুলো তাদের হাতে যায় তাহলে কি হবে বুঝতে পারছো? ঘাবড়ে যায় রোজা।

সব দোষ তোমার। কি দরকার ছিলো এতো কথা বলার। সব গুলোকে শেষ করে দিলেই তো হয়ে যেতো। সামির বলে রোজাকে দোষ দিয়ে।
– আগে শেষ করতে পারিনি তো কি এখন করবো। যদি আমরা ম/রি তো এদের সাথে নিয়েই ম/র/বো বলে রোজা রুদ্রর দিকে একটা ব/ন্দু/ক ধরলে পেছন থেকে কয়েকজন লোক এসে সামির, রোজা আর বাড়ির মধ্যে কয়েকজন লোককে ধরে আটক করে। রুদ্র হাসতে শুরু করে। হো হো করে হাসছে৷ রাজের মুখেও প্রাপ্তি হাসি। রুদ্র সামনে এগিয়ে গিয়ে সোফার উপর গা এলিয়ে দিয়ে বসে। এবার যেনো সবাই অবাক হয়ে রুদ্রর কর্মকান্ড দেখছে।

– তোমার কি মনে হয় রোজা? রুদ্রনীল চৌধুরী দুর্বল! কিছু করতে পারবে না। তোমার এখানে এমনি এমনি চলে এসেছি আমি? দ্যা গ্রেট রুদ্রনীল চৌধুরী আমি। টপ বিজনেসম্যানদের মধ্যে একজন। এমনি এমনি হয়নি। এই যে দেখছো এটা (রুদ্র তার মাথা দেখিয়ে বলে) এটার জোরে। বুদ্ধি! বুদ্ধি সবই বুদ্ধির জোরে। তবে তোমার বুদ্ধির তারিফ না করে পারছিনা সত্যি৷ যদিও ওইগুলাকে কু-বুদ্ধি বলে গণ্য করা হয়। রোজা দাঁতে দাঁত চেপে সবটা শুনছে। রাগের চোখ দিয়ে আগুন ঝরে পড়ছে যেনো এমন ভাব।
#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম(লেখিকা)
“২৬”

–সত্যি তুমি বড় নিষ্ঠুর, নির্লজ্জ, জঘন্য মেয়েমানুষ। যার মধ্যে নেই কোনো মায়াদয়া। একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের কপাল পোড়াতে কিভাবে পারো? তোমার জন্য আমি আমার স্বামী হারিয়েছি, আমার রুদ্রটা তার বাবাকে হারিয়েছে। মিথ্যা ছলনা করে আমার ছেলেটার জীবন নষ্ট করে দিয়েছো। এখন আবার ওর সুখের সংসারে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করেছো। তোমার কখনো ভালো হবে না দেখো। যে অন্যায় তুমি করেছো তার জন্য প্রতিটা মুহূর্তে অনুশোচনায় ভুগবে। ধুকে ধুকে মরবে তুমি আর এটা একটা মায়ের অভিশাপ, একজন স্ত্রীর অভিশাপ। রত্না চৌধুরী কথাটা বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে। ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তার স্বামী এই পৃথিবী ত্যাগ করেছে সত্যি মানতে পারছেন না তিনি।

কেঁদো না মা। তোমার চোখের কান্না দেখে কারো অনুশোচনা নয় বরং আনন্দই হবে। কারণ এটাই তো চেয়েছিলো সে। তাই চোখের পানি ফেলো না। তোমার মুখে আমি হাসি দেখতে চাই মা। সব সময় হাসবে তুমি যাতে করে ওদের দেখে গায়ে জ্বালা ধরে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে রুদ্র রোজার দিকে তাকিয়ে। রোজার মধ্যে কোনো অনুশোচনা বা কোনো অপরাধবোধ নেই আর না আছে কোনো ভাবান্তর। সাবলীল ভাবে দাঁড়িয়ে আছে সে।

– আমার নিজেরই খুব খারাপ লাগছে জানো রোজা! যে আমি তোমার মতো নিচ – জঘন্য মেয়েকে ভালোবেসে ছিলাম। তার জন্য পাগলামি করেছি। পরিবার, বা নিজের কথা ভাবিনি। তোমাকে নিয়েই মত্ত ছিলাম আমি। কিন্তু আমার সে ভালোবাসা যে পুরোটাই মিথ্যা দ্বারা পরিপূর্ণ ছিলো বুঝতে পারিনি। করুণা হচ্ছে খুব। সত্যি আমি বোকা, ষ্টুপিড একটা। তবে আমি এটা ভেবে আনন্দ পাচ্ছি! বলতো পারো স্বস্তি পাচ্ছি যে তুমি সরে গেছো আমার জীবন থেকে। উপর আল্লাহ তোমাকে সরিয়ে দিয়েছে আমার জীবন থেকে। নয়তো আমি তোমাতে আরো আসক্ত হয়ে যেতাম। তোমার সাথে মিশে যেতাম। আর তখন যদি আমাকে ফেলে আসতে তাহলে হয়তো আমার মৃ/ত্যু একমাত্র রাস্তা হতো। আমি এদিক থেকে তোমার কাছে কৃতজ্ঞ যে তুমি আমাকে ছেড়ে এসেছো। নয়তো আমি দোলার মতো মেয়েকে জীবনে পেতামই না। ওর মতো নিষ্পাপ একটা মানুষ আমার জীবনে আসার সুযোগ পেতো না তুমি থাকলে। রুদ্র মলিন কন্ঠে বলে কথা গুলো।

— সব কিছুর যেমন শুরু থাকে! তেমন তার শেষও হয়। তোর পাপের দিন শেষ আজ। যে অন্যায় করেছিস তুই এতদিন। এখন তার শাস্তি ভোগ করার পালা। ক্রোধান্বিত হয়ে বলে রাজ।

– ওদের কথোপকথন শেষ হতেই পুলিশ এসে উপস্থাপন হয় সেখানে। পুলিশ দেখে সামির, রোজা চমকে উঠে। পালানোর কোনো রকম সুযোগ তারা পাইনা। রুদ্র ওদেরসহ প্রমাণ তুলে দেয় পুলিশের হাতে। তানিয়া ওর মায়ের লা/শ ধরে কান্না করছে। দোলা আর আশা তানিয়াকে সামলানোর চেষ্টা করে।

– কেঁদো না তানিয়া। ফুপি যে আমাদের সাথে এমন কাজ করবে সত্যি কল্পনা করিনি। উনি তো আমাদের নিজস্ব মানুষ ছিলো বলো।।যদি উনার সম্পত্তির দরকার হতো সেটা উনাকে বলতে পারতেন। আমার বিশ্বাস উনি কখনোই না করতেন না। দোলা বলে আফসোস নিয়ে।

– আসলে কি জানো ভাবি! লোভ। লোভই মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। তেমন আমার মাকেও তার লোভ, উচ্চাকাঙ্খা শেষ করে দিয়েছে। তার ভেতরের মনষত্ব, ন্যায়-অন্যায় সব লোপ পেয়েছে। যার ফল-স্বরুপ আমার মা আজ এইভাবে মাটিতে লুটিয়ে আছে। কিন্তু আমার কি হবে? মা কেনো একবার আমার কথাটা ভাবলো না। আমি তো কখনো বিলাসিতা চাইনি। একটা ভালো সুন্দর পরিবারই চেয়েছি সব সময়। তাহলে মা কেনো বুঝলো না সেটা তানিয়া হাউমাউ করে কেঁদে উঠে কথাগুলো বলে। রত্না চৌধুরী এগিয়ে এসে তানিয়াকে আগলে নেয় নিজের কাছে। সবার মধ্যে চাপা কষ্ট বিদ্যমান। চোখের মধ্যে টলমল পানি। পুলিশ জেসমিন চৌধুরীকে নিয়ে যায় তার আগে একজন পুলিশ অফিসার রুদ্রর সামনে দাঁড়িয়ে বলে ধন্যবাদ মিস্টার চৌধুরী। আপনারা আজ কতবড় উপকার করলেন বলে বোঝাতে পারবো না। এরা যে শুধু ঠক প্রতারক তাই নয়। নারীপাচারকারীর মতো জঘন্য কাজের সাথে লিপ্ত। শুধুমাত্র তথ্য প্রমাণের অভাবে এদের ধারেকাছে আসতে পারিনি আমরা। গতরাতে বেশ কিছু মেয়েদের পাচার করা হয়। সে-সময় আমাদের পুলিশ বাহিনি তাদের আটক করে সাথে যারা এই কাজে জড়িত তাদেরও আটক করা হয়। আর তাদের মধ্যে থেকেই একজন এদের নাম বলেছে। এর আগে অনেকবার আমরা ধরতে পেরেছি কিন্তু তারা কখনোই মুখ খুলেনি এদের ব্যাপারে। এমন ভাবে ট্রেনিং দেওয়া ছিলো ওদের। ওরা নিজে নিজেই জীবন দিতো তাও এদের নাম প্রকাশ করেনি। কিন্তু গতদিন যাদের ধরা হয় তাদের মধ্যে থেকে একজন জান বাঁচানোর জন্য এদের নাম বলেছে আজ। সবার মধ্যে ঘৃণার পরিমাণটা যেনো বেড়ে যায় ওদের প্রতি। এতটা জঘন্য খারাপ মানুষ ভাবতেও যেনো শরীরে কাটা দিয়ে উঠে। রোজা আর সামির মাথা নিচু করে আছে৷ এতখনে তারা দমে যায় একটু হলেও।

– আশা করি ওদের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করবেন রুদ্র বলে কঠোর গলায়।
জ্বি অবশ্যই। এই বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকুন আপনি। এখন আসি বলে পুলিশ চলে যায় ওদের নিয়ে। রুদ্র দোলার কাছে গিয়ে হাত ধরে বলে তুমি ঠিক আছো দোলা। ওরা তোমার সাথে কিছু করেনি তো? তোমাকে এতো পাকামি কে করতে বলেছে শুনি। যদি কোনো ক্ষতি করে দিতো তোমার তাহলে কি হতো? রুদ্রকে আবারও চিন্তিত দেখায় এতখন বাদে।

– আমি ঠিক আছি রুদ্র৷ চিন্তা করবেন না। এরপর দোলা কিছুক্ষণ দমে থেকে বলে সব প্রমাণ পেয়ে গেছেন নিশ্চয়। আমি যে নির্দোষ এটা তো প্রমানিত এখন মলিন কন্ঠে বলে । রুদ্র মাথা নুয়ে ফেলে। আবারও তার মধ্যে দীর্ঘশ্বাস একটা।

– দোলা তাড়াতাড়ি চল আমার সাথে। মামা তোর জন্য অপেক্ষা করছে। ওদের কথার মাঝে সজল বলে উঠে ব্যস্ত হয়ে। দোলা ভ্রু কুচকে উত্তেজিত চাহনি রেখে বলে বাবা অপেক্ষা করছে মানে? কোথায় বাবা?

– সজল সব খুলে বললে দোলা ভেঙে পড়ে। রাশেদ মিয়ার কাছে যাওয়ার জন্য ছটফট করতে থাকে।

– আমাকে জলদি বাবার কাছে নিয়ে চলো ভাইয়া। তোমরা আমাকে এতখন বলোনি কেনো?
– আঙ্কেল ঠিক আছেন ভাবি। তুমি চিন্তা করো না। বাবা আছেন সেখানে। আমরা আঙ্কেলকে দেখে তবেই এখানে এসেছি তানিয়া বলে।
– আমি বাবার কাছে যাবো। প্লিজ আমাকে নিয়ে চলো তোমরা। রুদ্র সজলকে বলে দোলাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। রুদ্র বাকিদের নিয়ে আসছে। দোলা, আশা আর সজল বেরিয়ে যায় সেখানে থেকে।

– থ্যাংকস ইয়ার। তোর জন্য সব কিছু এত সহজে হলো। আমি না সত্যি কল্পনাও করিনি রোজা এতটা ডেঞ্জারাস হয়ে উঠেছিলো। ওর মধ্যে প্রতিশোধের নেশা এতটা প্রখর।
– আমার সাথে আবার ফর্মালিটি করা হচ্ছে৷ আমি কি তোদের পর কেউ মুখটা ভাড় করে বলে রাজ৷ রুদ্র ফিক করে হেসে দেয় সাথে রত্না চৌধুরী আর তানিয়াও।

– আসলে রাজই তখন বুদ্ধিটা দেয়। রুদ্র মাথা গরম করে বেরিয়ে আসতে চাইলে রাজ বাধা দেয়। সত্যি যদি দোলা রোজার কাছে থাকে। তাহলে এত সহজে ফিরিয়ে নিয়ে আসা যাবে না। যার জন্য রাজ বলে রুদ্রর লোকদের কাজে লাগাতে। তবে ওদের কল্পনাতেও ছিলো না এইগুলো। কেঁচো খুঁজতে যে কেউটে বেরিয়ে আসবে ভাবিনি ওরা।

— কেটে যায় দুদিন! রাশেদ মিয়া এখন মোটামুটি সুস্থ আছে। তাকে সকালের দিকেই বাড়ি নিয়ে আসা হয়েছে। সবাই এখন দোলাদের বাড়িতেই আছে। এই দুদিন দোলা বাবার সাথে হসপিটালেই থেকেছে। অনেক ধকল গেছে তার উপর দিয়ে। তারপরও কাউকে কিছু বুঝতে দেয়না সে। বাবার মায়ের সেবা করতে পারা সে-তো বড়ই ভাগ্যের ব্যাপার। সেখানে দোলা তার মাকে হারিয়েছে অনেক আগেই। বাবাই একমাত্র ভরসা তার।

— দোলার বাড়িতে সবাই থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে-বসে আছে। রুদ্র মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে অপরাধীর ন্যায়। সবাই যেনো একটা শকের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দোলা স্বাভাবিক ভাবে আছে।
– এইসব কি বলছিস তুই দোলা মা। এমন সিদ্ধান্ত নিস না তুই দোলা। আমার ছেলেটা এবার সত্যি সত্যি শেষ হয়ে যাবে রত্না চৌধুরী বলেন কাঁদো কাঁদো কন্ঠে। দোলা একটা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলে তাহলে যে আমার নিজের প্রতি অবিচার করা হবে মা। আমি মানছি তোমার ছেলে যেটা করেছে আমার সাথে তার জন্য সম্পুর্ণ দায়ী নয়৷ কিন্তু একবারে নির্দোষও বলা যায় না। উনি ঠকে গিয়েছেন একটা নারীর থেকে। তার মানে এই নয় যে একজন নারীর দায় সবাই বহন করবে। উনার সাথে যা কিছু হয়েছে তাতে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বাস করাটা কষ্টসাধ্য জানি। কিন্তু বিশ্বাস ছাড়া যে কিছু হয়না এটাও তো উনার বোঝা দরকার ছিলো।

– ভাবি! যা হওয়ার তো হয়েছে। প্লিজ তুমি ব্রোকে মাফ করে দাও৷ আমরা সবাই একসাথে থাকতে চাই। আমি তো মাকে হারালাম এখন যদি তুমিও দূরে সরে আসো তাহলে আমি কি নিয়ে থাকবো বলতে পারো? মামি কিভাবে থাকবে তোমাকে ছাড়া। অসহায় কন্ঠস্বর তানিয়া।

– আমি তোমায় বলেছিলাম তানিয়া! আমি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবো। সব সত্যি সামনে নিয়ে আসবো। আর সেদিন যদি জানতে পারি আমি নির্দোষ। কোনো প্রকার দোষ আমার ছিলো না তারপরও আমি অত্যাচারের শিকার হয়েছি সেদিন আমি দূরে সরে আসবো সব কিছু থেকে। আজ সে- সময় এসে গেছে তানিয়া। তোমার ভাইয়া কখনোই বিশ্বাস করতে পারেনি আমায়। হ্যাঁ মানছি উনার ভালোবাসায় কোনো কমতি ছিলো না। কিন্তু ভালোবাসা নামক যে অত্যাচার হয়েছে আমার উপর সেটা আমি মানতে পারিনি আর না এখন পারছি। উনি আমাকে জোর করে বিয়ে করেছেন এতে আমার কোনো অভিযোগ নেই এখন। কারণ উনার ভালোবাসা উনার অতীত সেসব মিটিয়ে দিয়েছে। কিন্তু দিনের পর দিন যে অত্যাচার হয়েছে আমার উপর। আমাকে যে আমার পরিবারের থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছে৷ আমার বাবা ভাই চাইলেও আমার কাছে যেতে পারিনি। আর এই সব কিছু উনার জন্য। আমি সেদিন গুলো মুছতে চাইনা আর না পারছি। আমার সাথে করা অন্যায় গুলো আমি ভুলতে পারছি না৷ যেখানে কোনো দোষ না করে এতটা শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে সেখানে সব কিছু মেনে নেওয়া মানে নিজের সাথে বেইমানি করা। নিজ আত্মার সাথে বেইমানি করা।

– আমি বলছি না উনাকে একবারে ছেড়ে চলে আসবো আমি বা আসতে চাই৷ তবে যতদিন আমার মনে হবে আমার সাথে করা অন্যায়ের শাস্তি আমি উনাকে দিতে পেরেছি। আমার ভেতরটা শান্ত হতে পেরেছে ততদিন আমি উনার সাথে কোনো সম্পর্ক রাখতে চাইনা।

– দোলা আরেকবার ভেবে দেখলে হতো না বোন। আমি জানি তুমি কতটা খারাপ সময় পার করেছো। তোমার সাথে কি কি হয়েছে। কিন্তু রুদ্র কেনো এমন করেছে সবই তো জানো। ও যে ভুল করেছে এটা তো স্বীকার করেছে। তাহলে কেনো পারছো না মাফ করে দিতে। সব কিছু ভুলে যাওনা করুণ কন্ঠে বলে রাজ।

–ভাইয়া প্লিজ আমাকে জোর করবেন না। আমি পারছি না নিজেকে বোঝাতে৷ উনি এক নারীর কাছে ঠকেছেন মানে এই নয় সবাই তার শাস্তি পাবে। উনি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করতেন। আমাকে সব কিছু বলতেন তাহলে আজ হয়তো এইদিনটা আমাদের দেখতে হতো না। আর না আমাকে এত কষ্ট এতো অত্যাচার সহ্য করতে হতো। কিন্তু উনি… দোলা থেমে যায়। রুদ্রর দিকে ঘৃণিত দৃষ্টি আজ আবারও।

– তুমি আমার থেকে দূরে থাকতে চাও তাই তো? আমাকে শাস্তি দিতে চাও। ওকে ফাইন!৷ তুমি দাও শাস্তি আমায়। আমার থেকে দূরে দূরে থাকো সমস্যা নাই। তবে সেটা তো তুমি আমার বাড়ি থেকেও করতে পারো দোলা। তোমাকে থাকতে হবে না আমার সাথে। আমি তোমার আলাদা ঘর সব কিছু ব্যবস্থা করে দেবো৷ তুমি শুধু আমার চোখের সামনে থাকবে। আমি তোমাকে প্রতিদিন দুচোখ ভরে দেখতে চাই। সাথে এটাও দেখতে চাই আমার সন্তান কিভাবে একটু একটু করে বেড়ে উঠে তোমার মধ্যে। আমাকে এইগুলো থেকে বঞ্চিত করো না দোলা। তুমি আমার সাথে কথা বলোনা। আমাকে অবহেলা করো কিন্তু এত বড় শাস্তি দিও না। রুদ্রর মধ্যে তোলপাড় অবস্থা। চাপা আর্তনাদ, অসহায়ত্ব।

— কাছে থেকে ইগ্নোর করা সহজ কথা নয় রুদ্র। মায়া বলে একটা শব্দ আছে। আর এই শব্দটা এতটাই কঠিন একটা শব্দ যে মানুষের জীবনকে সাঁজিয়ে দেয় আর শেষ করেও দেয়। কাছে থেকে আপনাকে উপেক্ষা করার সাধ্যি আমার নেই। আমার স্বামীকে ইগ্নোর করতে পারবো না আমি।।তাহলে যে উপরে যিনি আছেন তিনি আমার প্রতি নারাজ হবেন। তাছাড়া মানুষ তো আমি সাথে একটা মনও আছে। কাছে থেকে মায়ায় ডুবে যেতে সময় লাগবে না। যেটা আমি একদম চাইনা। আর রইলো আপনার সন্তানের কথা। এটা যেমন আমার সন্তান তেমন আপনারও সন্তান। ওর প্রতি আমার যতটুকু অধিকার ঠিক ততটুকু অধিকার আপনারও।। ওর কোনো ব্যাপারে আমি আপনাকে কখনোই বাধা দেবো না। ওর জন্য আপনি উন্মুক্ত সব সময়। আর একটা কথা যেদিন এই সন্তান পৃথিবীতে আসবে সেদিন আমি ওকে আপনার হাতে তুলে দেবো। বিশ্বাস করুন আমি একটুও কার্পণ্য করবো না ওর বিষয়ে। কারণ আমি জানি ও আমার থেকেও আপনার কাছে ভালো থাকবে। একটা সন্তানের জন্য যে আকুতি, যে মায়া মহব্বত থাকে সে সব কিছু আমি দেখেছি আপনার মধ্যে। তাই দয়া করে আপনারা কেউ আমাকে জোর করবেন না আর কোনো বিষয়ে। আমার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাবেন আপনারা সবাই। আর আপনি! আমি এতটুকু আশা তো রাখতেই পারি আপনার উপর। আপনি নিশ্চয় আমার মতামতকে প্রাধান্য দেবেন রুদ্রর দিকে তাকিয়ে বলে দোলা।

রুদ্র আহত চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে দোলার দিকে। চোখের মধ্যে আসতে চাওয়া অশ্রু গুলো যথাসাধ্য লোকানোর চেষ্টা করে বলে আমি তোমার মতামত তোমার চাওয়াকে সম্মান করি দোলা। আমি যে অন্যায় করেছি তার জন্য মাফ সত্যি দুর-সাধ্য। আর আমি যদি এরপরও মাফ চাই তোমার কাছে সেটাও হবে আমার আরেকটা অপরাধ। আমি তোমাকে কখনো ভালো রাখতে পারিনি এটা যেমন সত্য তেমন তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা ছিলো এটাও সত্য। যাই হোক তুমি যখন চাওনা আমার সাথে থাকতে ঠিক আছে। আমি অপেক্ষা করবো তোমার জন্য। যেদিন তোমার মনে হবে আমার কাছে ফিরে যাওয়া দরকার সেদিনটার জন্য আমি অপেক্ষা করবো।তার আগে আমি কখনো তোমার সামনে আসবো না কথা দিলাম। রুদ্র বেরিয়ে যায় কথাগুলো বলে। সবাই হতভম্ব হয়ে আছে। রুদ্র যেতেই দোলার চোখ বেয়ে এক ফোটা পানি নিচে পড়ে।

– বাবা! আমার সিদ্ধান্তে তোমার কোনো আপত্তি নেই তো? তোমার বাধা নেই তো আমাকে নিয়ে? তোমার কি আলাদা ভাবে কিছু বলার আছে এখানে। যদি থেকে থাকে বলতে পারো জিজ্ঞাসু দৃষ্টি রেখে বলে দোলা।

– আমি আর কি বলবো দোলা ‘মা। তোর জীবন তুই ভালো মন্দ সবটা বুঝিস৷ এছাড়া তোর মতামত তোর সিদ্ধান্তের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে। কিন্তু মা আরেকবার ভেবে দেখলে হতো না। একটা অন্যায় হয়ে গেছে সেটা তো… বাবা প্লিজ। আমাকে এইগুলো করতে বলো না তুমি। আমাকে আর দুর্বল করে দিও না আমি নিজের মতো থাকতে চাই। আমার ভেতরের আত্মাকে আমি প্রশান্তি দিতে চাই। নয়তো সারাজীবন ছোট হয়ে থাকবো আমি আমার নিজের কাছে। দোলাও আর দাঁড়ায় না সেখানে ঘরে চলে যায় কান্না করতে করতে। সবাই মনোক্ষুণ্ণ হয়ে সেখানেই বসে থাকে৷ হতাশা, দুঃখ গ্রাস করে সবাইকে।।সব ঠিক হয়েও আবার এলোমেলো হয়ে গেলো। দুজন মানুষ কাছাকাছি এসেও দূরে সরে গেলো পুনরায়।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here